প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২১
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
আবিরের এ্যাপার্টমেন্টটা সাধারণই।এ্যপার্টমেন্টে দুই দুটো রুম৷এখানে এলিনা, উইলি ওদের বাইরেও তার এক পরিচিত বন্ধুও আছে।যার সাথে তার পরিচিতি কয়েক বছে আগেরই। এবং তার সাথে কথা বলেই আগে থেকে সব গুঁছিয়ে নিতে আবিরের সহজই হলো বেশ। আবির মূলত ছুটিকে তৈরি হতে বলেছিল নিজের এ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই।এমনকি এখন এসেছিল ও সে জন্য। কিন্তু ছুটি তখনও তৈরি হয়নি। আবির যে রূপে নিজের প্রিয়তমা নারীকে নিজের করে নিবে ভেবেছিল সে রূপে মেয়েটা মোটেও তৈরি হয়নি। উল্টো ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে কেঁদে যাচ্ছে। আবির এক পর্যায়ে ছোটশ্বাস ফেলেই বলে,
“ তৈরি হবি নাকি হবি না? এভাবেই ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থেকে কান্না করবি? আর কতক্ষন ছুটি? ”
ছুটি তখনও ফ্যালফ্যাল করে তাকায়৷ অস্ফুট কন্ঠে বলে,
” আমার অনেক কান্না পাচ্ছে আবির ভা…”
আবির চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাল যেন। মুহুর্তেই গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,
“ ভাই বলবি না। থা’পড়ে দাঁত ফেলে দিব এখন।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছুটি ফের ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।আবির ভাই বলাটা তো তার অভ্যাস। বিয়ের পরও যার ফলে সে এই অভ্যাসটা বদলাতে পারেনি। এমনকি এখনও তার মুখে আবির ভাই সম্বোধনটাই আসে বারবার।ছুটি উত্তর দেয়,
“ আপনাকে কি কিছুটা সময় জড়িয়ে ধরতে পারি? আপনাকে অনুভব করতে পারি কিছুটা সময়? ”
আবির সরু দৃষ্টিতে তাকায়। ভ্রুজোড়া শিথিল হয়ে আসে। মনে মনে অনুরোধটা শুনে প্রশান্তি মিললেও উপরে তাকে দেখাল বেশ গম্ভীর, কঠিন। শুধাল,
“পারবি না বললে কি তুই এমনভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবি? ”
ছুটি ওভাবেই জড়িয়ে ধরে মানুষটাকে। দুই হাত দিয়ে আবিরের পিঠ আঁকড়ে ধরে। মাথাটা রাখে আবিরের বুকে। হৃদস্পন্দন শুনে পুরুষটার। অনুভব হয় এই পুরুষটা তার! কেবল তার ! ছুটি সেভাবে হৃদস্পন্দন শুনতে মনোযোগী হয়েই উত্তর দিল,
“ আপনাকে বহুদিন আমি জড়িয়ে ধরিনি। বহুদিন আপনার বুকে মাথা রাখিনি। আপনি না বললেও আমি এখন আপনার নিষেধ মানতে ইচ্ছুক নই। ”
“ বাহ! এভাবে জড়িয়ে ধরে আমায় পাগল করতে চাইছিস নাকি? ”
ছুটি মুখ তুলে তাকায়। কিছুক্ষন চুপ থেকে শান্তস্বরে শুধায়,
“ আপনি নিজেও জানেন না আপনি আমার কতোটা মানসিক শান্তির কারণ। আপনি যেমন আমার মানসিক শার্তি বিনষ্ট করতে পারেন ঠিক তেমন ভাবেই মানসিক শান্তি অর্জনেও আপনিই একমাত্র অবলম্বন আমার। ”
আবির এবারে কিঞ্চিৎ হাসল। মাথা নোয়াল কিছুটা। ছুটির চুলে একটা আলতে চুমু দিয়ে বলে,
“ বোকাপাখি? আমি তোর মানসিক শান্তি কখনোই বিনষ্ট করতে চাইনি। কখনোই না। আমি চেয়েছিলাম তুই সবসময়ই উচ্ছল, হাসিখুশি থাক। ”
রাহা পাঁচ মিনিট তো দূর। পুরো আদঘন্টারও বেশি সময় যাবৎ সে বৃষ্টিতেই স্থির দাঁড়িয়ে ভিজছে। দুই হাত বাড়িয়ে রাখা মেয়েটার। রোহান অতি বিরক্তি নিয়েই নিচে এল। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ এই মেয়ের আসার নাম নেই? এই ভেবেই সে নিচে নামল। অথচ নেমেও যখন রাহাকে বৃষ্টিতেই ভিজতে দেখতে পেল তখন সে ছোটশ্বাস ফেলে। আচমকায় দুই পা বাড়িয়ে এই বৃষ্টির মধ্যে গিয়েই দাঁড়াল রাহার সামনে। ভারী আওয়াজে বলে উঠল,
“ পাঁচ মিনিট শেষ হয়েছে নবনী। ”
রাহা হুট করেই চোশ খুলে তাকায়। এতক্ষন চোখ বুঝেই হাত বাড়িয়ে দাঁড়ানো ছিল সে। সে সামনের পুরুষটার দিকে তাকায়। আবছা অন্ধকারে পুরুষটার অবয়ব চিনতে পেরে সে ভ্রু কুঁচকায়। পাঁচ মিনিট? পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে? বলে সে,
“ তো? ”
রোহান গম্ভীর মুখ করে তাকায়। এই মেয়েটা তাকে অবহেলা করছে? নাকি একটু বেশিই এটিটিউড দেখাচ্ছে? গম্ভীর স্বরে বলে সে,
“পাঁচ মিনিট কি বৃষ্টিতে ভেজার জন্য যথেষ্ট নয়?”
রাহা মুহুর্তেই ছটফট স্বরে উত্তর করে,
“ মোটেই নয়। পাঁচ মিনিট কোন সময়ই নয় মিঃ রোহান ফারাবী। ”
রোহানের চোয়াল অল্প শক্ত হয়ে এল যেন। বুকে দুই হাত গুঁজে কঠিন কন্ঠে বলে,
“ তাহলে কি সারারাত ভিজবে নবনী? ”
রাহা মুহুর্তেই হেসে উত্তর করল,
“ সারারাত? খারাপ হয় না তো সারারাত ভিজলে। ”
রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠে তার। বলে উঠে,
“ নবনী..”
রাহা তাকায়। রোহানের দৃষ্টিতে যেন অদৃশ্য রাগ। রাহা শুরু থেকে খেয়াল করছেে।এই লোক শুধু শুধুই তার উপর রাগ ঝাড়তেছে।শুধু শুধুই রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। অথচ রাহা কিছু করেনি। রাহারও রাগ জমে যেন। মুহুর্তেই শুধাল,
“কি হয়েছে? ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন? ”
রোহান পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,
“ যাবে কিনা এখনি?”
“ যাব না এখনি। কি করবেন? ”
রোহানের রাগ এবার দৃঢ় হয় যেন। যে রোহান তাকে আনতে অতটুকু গেল, বৃষ্টিতে ভিজে তাকে নিতে আসল রাহার কি উচিত না তার সাথে যাওয়া? অথচ এই মেয়ে ত্যাড়ামো দেখাচ্ছেে।যাবে না বলছে। রোহান ফোঁসফোঁস করতে চায় যেন।শক্তস্বরে বলে,
“ নিয়ে যাব।”
“ কিভাবে?”
রাহার প্রশ্নটা করতে দেরি হলো কিন্তু রোহানের রাহাকে কোলে তুলতে দেরি হলো না।অতঃপর পা বাড়ায় সে নিজ গন্তব্যে। এক বৃষ্টিময় অন্ধকারে এমন এক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় রাহার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
সিয়ার চোখে পানি। আজও বৃষ্টি বাইরে। আজও মুষলধারে বর্ষণ! সিয়া জানালার ধারে বসে থাকে। আজ টানা কয়েক মাস সে তার প্রিয় পুরুষটির দর্শন পায় নি। আজ কয়েকটা মাস হলো পুরুষটি তাকে ক্রমশ বুঝাচ্ছে তার ভুলে যাওয়া উচিত ঐ পুরুষটিকে। অথচ সিয়া ভুলতে পারে না। সিয়া ভুলতে চায় ও না। সিয়ার বুক ভারী হয়ে আসে। দীর্ঘশ্বাসরা বুকে জমা হয়ে আসে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে মেয়েটার। সিয়া হাতে কলম নেয়। ডায়েরীটা হাতে তুলে লিখতে লাগে,
আজ ভীষণ বর্ষণ সাদ ভাই। আষাঢ়ের বৃষ্টিমুখর রাত। আমি ও কিন্তু আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম কোন এক আষাঢ়ে সাদ ভাই। চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। পরণে একটা কালো রং এর ফতুয়া টাইপ শার্ট আর কালো প্যান্ট। বৃষ্টিতে ভিজে চিপচিপে অবস্থায় আপনার তখন নাজেহাল অবস্থা যেন।তবুও চোখের দৃষ্টিতে যেন কতকালের অপেক্ষা! সেদিন বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ো থাকার মাঝেই হুট করেই পাশ দিয়ে চলে গেল একটা গাড়ি। আপনার গায়ে তখন কাঁদার আস্তরণ! ইশশ! কি চুপসানো মুখটা আপনার।একটুও বিরক্তি নেই সেই মুখটায়। গাড়িটার প্রতি একটু বিরূপ মনোভব ও দেখতে পেলাম না। অথচ কি খারাপ অবস্থা। আমার সেই প্রথমই মনে হলো এই ছেলেটা পৃথিবীর সবচাইতে নিষ্পাপ ছেলে। এই ছেলেটা সত্যিই পৃথিবীতে থাকা এক শুদ্ধ মনের মানুষ।
আপনি রোজ আসতেন, রোজ দাঁড়াতেন আমাদের বাসার সামনে। তাকিয়ে কি দেখতেন তা আমি জানতাম না।তবে আমার আপনাকে দেখতে ভালো লাগত।আপনার যেমন রোজ রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকাটা অভ্যাস ছিল? তেমনই আপনাকে আড়াল থেকে অবলোকন করা, আড়াল থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছিল ক্রমশ। আমি ক্রমশ আপনার সরলতায় ডুব দিচ্ছিলাম। হারিয়ে যাচ্ছিলাম আপনার মায়ার গভীরতায়। আপনি বোধহয় বুঝতেও পারেননি আপনাকে আড়াল থেকে একটা মেয়ে কতোটা চোখে চোখে রাখত। কতোটা কষ্ট হতো তার যখন চুপচাপ সব মেনে নিতেন আপনি নিরীহ চাহনিতে। কতোটা খুশি হতো সে যখন আপনার মুখে হাসি ফুটত। সাদ ভাই? পড়ানোর উদ্দেশ্যে হলেও যখন আমি আপনার সান্নিধ্য পেলাম আমি তখন আমি আড়াল থেকে পর্যবেক্ষণ করাটা বাদ দিলাম। অনুভূতির সজীবতায় নিজেকে একটু সাহসী ভেবে এবার শুরু করলাম সামনাসামনিই অবলোকন করা৷ সম্ভবত আপনি বিষয়টা বুঝে ফেলেছেন তখনই।
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২০
আচ্ছা? আমার কি খুব বেশিই অন্যায় হয়েছে আপনার মায়াতে গা ভাসানো? খুব বেশি অন্যায় করেছি আপনাকে ভালোবেসে? কেন এত অবহেলা সাদ ভাই? আমি তো বিনিময়ে ভালোবাসা চাই নি। আমি চাই নি তো আপনার কাছে অনুভূতির মূল্য। তবুও কেন এতোটা এড়িয়ে চলেন? আমার যে কষ্ট হয়৷ কী ভীষণ যন্ত্রনায় আমি ছটফট করি! দম বন্ধ হয়ে আসে ।অথচ শ্বাসরুদ্ধকর সে কষ্টের মুহুর্তে ও আমি প্রত্যাশা রাখি পরমুহুর্তে যদি আপনার দেখা পাই একটাবার,যদি একটাবার আপনার কন্ঠস্বর শুনতে পাই!