প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ৩
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
রাত আটটা। স্বচ্ছ সাধারণ সন্ধ্যার পরপরই চলে আসে বাসায়। বাকি সময়টা অফিস কার বাবাই সামলায়।অথচ আজ ফিরেনি দেখে সুহা এই নিয়ে তিনবার স্বচ্ছকে কল দিয়েছে। কল তোলা হয়নি। বোধহয় অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত আছে। মনকে এই বলে মানালেও পরমুহুর্তেই রাগে ফুসে উঠে সে। স্বচ্ছ এতই ব্যস্ত যে তার কল তুলল না? এতই ব্যস্ত? সুহা মুখচোখ লাল করে ফোন বন্ধ করে ছুড়ে ফেলল একপাশে। তারপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। হাত গেল পেটের উপর। ঠিক তখনই পেটের ভেতরে চুপটি করে থাকা ক্ষুধে বাচ্চাটা নিজের নড় চড় দ্বারা বুঝাল নিজের উপস্থিতি। সুহার পেটে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। তবুও হেসে পেটে হাত দিয়ে তা অনুভবের চেষ্টা চালায়। বিড়বিড় করে বলে,
“ এই মেয়ে? তোর বাপ এসে যখন আম্মুজান আম্মুজান করবে তখন একদমই সাড়া দিতে পারবি না। মনে থাকবে?”
কথাটা বলা মাত্রই তার একমাত্র মেয়ে যে কিনা এখনো জম্মই নেয়ি সে মায়ের বিরোধীতা করেই নাকি অন্য অর্থে কিজানি তবে নড়চড় বন্ধ করে দিল। সুহা ভ্রু কুঁচকাল। বলল,
“ওমনি নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল? বাপের সামনে বলেছি, এখন না তো। ”
এবারও শান্ত। সুহা ভেবেচিন্তা বলে,
“আচ্ছা তুই কার মতো হবি?ঐ আধপাগল লোকটার মতো হবি ? নাকি আমার মতো? এই যে এত কষ্ট করে তোকে সামলাচ্ছি এখন, তখন বাপের পক্ষে চলে যাবি না তো পরে? ”
স্বচ্ছ দরজায় দাঁড়িয়ে হাসছিল সুহার কথা শুনে। ফোনটা ধরেরি মূলত এই কারণেই যে সে বাসায় চলে এসেছে৷ তখন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল সে। এটুকু অভিযোগে সে তার মেয়েকে তার সামনে রেসপন্স করতে নিষেধ করে দিচ্ছে? সাংঘাতিক। স্বচ্ছ হাসে। বুকে হাত গুঁজে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ বাপের পক্ষে গেলে কি তোমার খুব মন খারাপ হবে সুহাসিনী? ”
সুহা ঘাড় ফিরিয়ে চাইল। স্বচ্ছকে দেখে উঠে বসে বলল,
“ মন খারাপ হবে কেন? তবে আমার বিশ্বাস আমার মেয়ে আমার ভক্তই হবে। ”
স্বচ্ছ মানল না। বরং রুমে এসে শার্ট টাই খুলতে খুলতে হেসে বলল,
“ মেয়েরা অধিকাংশ সময় বাবাভক্ত হয় সুহাসিনী। ”
সুহা না করে বলল,
” আমার মেয়ে মা ভক্ত হবে। ”
স্বচ্ছ এবার এগিয়ে আসে। হেসে ফের বলে,
“ আমার মনে হয় সে আপনার মতোই কিউট হবে এবং বাপের ভক্ত হবে সুহাসিনী। ”
কথাটা বলেই ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে সে।অতঃপর খাটের কিনারায় বসে থাকা সুহার জামাটা প্রতিদিনের মতো উপর করে নিঃশব্দে চুমু বসায় পেটের চামড়ায়। ঠিক তখনই আবারও নড়চড়ের জানান পেল ছোট্ট বাচ্চাটার। সুহার পেটের চামড়ায় বুঝা গেলে আবছা ছাপ। স্বচ্ছ তা দেখে পুণরায় হাসে। আবারও ঠোঁট এগিয়ে চুমু বসিয়ে আদুরে স্বরে বলে,
“ কি? তাই না আম্মুজান? বাবার ভক্ত হবে তো তাই না? ”
সুহা খুবই বিরক্ত এমন ভাব করে বলল,
“ এক্ষুনিই, এই মাত্রই আমি ওকে বললাম যাতে বাবা আসলে সাড়া না দেয়। আর ও? বেইমানি করে আপনার কথা শোনা মাত্রই সাড়া দিয়ে দিল? বিশ্বাসঘাতক। ”
স্বচ্ছ স্বশব্দে হেসে উঠে এবার। সুহার পেটের সাথে নিজের কানটা স্পর্শ করিয়ে বলে উঠে,
“ এই থেকে কি বুঝলে? আমার আম্মুটা কার পক্ষ নিবে?”
সুহা মুখ ফুলিয়ে উত্তর করল,
“আমারই। ”
“ উহু, না সুহাসিনী।আমার মন বলছে সে পক্ষ নিবে। ”
সুহা মুখ কুঁচকায়। বলে,
” ভালো। তাহলে আপনারা দুজনেই দুজনের পক্ষ নিয়েই থাকবেন, আমি থাকব না। ”
স্বচ্ছ মুখ উপর করে তাকায় এবারে। দুই হাতে সুহার কোমড় জড়িয়ে বসে থেকে মুখ উপর করে তাকিয়ে বলে,
“ আপনাকেও থাকতে হবে জনাবা। আপনি না থাকলে আমি অসম্পূর্ণ। ”
“ মিথ্যে বলছেন না যে গ্যারান্টি কি? ”
স্বচ্ছ গম্ভীর স্বরে উত্তর করে,
“ তুমি জানো এটা সত্য। এবং তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না বলেই বাবার বিজন্যাসে হাত দিয়ে দেশে থেকে গেছি। শুধু আবিরের খোঁজ নিতে দুবার বাইরে গিয়েছিলাম তাও এক সপ্তাহ করে ট্রিপের মেয়াদ ছিল। ”
সুহা সত্যিই জানে এটা সত্য। স্বচ্ছ তাকে ভালোবাসে। তবুও মুখ কুঁচকে বলে,
“ আমি যদি না থাকি তখন আবার নিজেকে সম্পূর্ণ করতে আরেকটা বিয়ে করে ফেলবেন না তো? ”
স্বচ্ছর মুখটা কালো হয়ে এল। গম্ভীর দেখাল চোখমুখ। সবসময় থাকবে না থাকবে বলে কি বুঝায় ও? সত্যিই থাকবে না এটা? স্বচ্ছ মেনে নিবে এটা? এই যে স্বচ্ছ এত যত্ন করে রাখে এই মেয়েটাকে, এত কেয়ারফুল থাকে সবসময়, এত এত প্রার্থনা, বিধাতা বুঝি তার পাশে থাকবে না? স্বচ্ছ ছোটশ্বাস ফেলে। শান্ত স্বরে বলে,
“ রোজ রোজ কথাটা মনে করিয়ে কি বুঝাতে চাও?আমায় ভয় দেখাও তাই না? আর এই যে আরেকটা বিয়ে করব এই কথাটা মাথায় ডুকিয়ে কি ভাবছো? তুমি না থাকলে আমি দু সেকেন্ডেই অন্য নারী ঘরে তুলব? ”
“ তুলতেই পারেন। ”
স্বচ্ছ রাগ হয় এই পর্যায়ে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“ তুললে সেটা এখনও তুলতে পারি। ”
সুহা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সাহস কত? বলে,
“ আমার বর্তমানে কি করে? ”
“ কত মেয়েই তো আমায় পছন্দ করে। ওখান থেকে একজনকে চুজ করলাম নাহয়। ”
সুহা বাহবা দিয়ে বলে উঠল,
“ বাহ! আগে থেকেই প্ল্যান করা আছে তাহলে।বউ খুঁজতে আর সমস্যা হবে না বলুন? যায় হোক শুনে খুশি হলাম। ”
এই বাহবা টা যে আসলে সুহা কোন পর্যায়ে গিয়ে বলেছে তা বুঝে উঠেই স্বচ্ছ হতাশ হলো। নিজের রাগকে শীতল করে ডাকে,
“ সুহাসিনী?”
“ বলুন জনাব। ”
স্বচ্ছ হাসে। ঝুঁকে গিয়ে সুহার কপালে চুমু বসিয়ে বলে উঠে,
“ জনাব কেবল তার জনাবাকেই ভালোবাসেন। বিশ্বাস করুন,সে না থাকলে জনাব অচল। সে না থাকলে জনাব নিজেও বেঁচে থাকবে কিনা সন্দেহ। এবং আমি জানি, জনাবা কার জনাবকে ছেড়ে কোথাও যাবে না৷ ”
.
ছুটি যখন কথা বলছিল হুট করেই খেয়াল করল ফিহার ফোনে কল রানিং আছে। পাঁচ মিনিট একুশ সেকেন্ড। এবং এখনও রানিং। ফিহা কি খেয়াল করেনি নাকি? ছুটি ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমার ফোনে কল রানিং আছে ফিহা।ভুলে রিসিভড করে ফেলেছো নাকি?”
আকস্মিক ধরা পড়ে যাওয়ায় ফিহা তোতলায়।নাটক করে বলে,
“ হ্ হ্যাঁ?হু হু।ভুলে রিসিভড করে ফেলেছি বোধহয়। আননোন নাম্বার। তুমি কি একটু কথা বলে দেখবে আপু? কে তা তো চিনি না।”
ছুটি বিস্ময় নিয়ে বলে,
“ আমি? আমি কেন? ”
ফিহা চালাকি করে বলল,
“ আমি একটু ওয়াশরুমে যাব। ততক্ষন একটু দেখোতো কে এই লোাক? ”
কথাটা বলেই ফোনটা ছুটির হাতে দিয়ে চলে গেল ফিহা। ছুটি বিস্ময়ে থ হয়ে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে ডাকে,
“ ফিহা? ”
ফিহার উত্তর,
“ আসছি আসছি, তুমি ততক্ষন একটু ফোনটা রাখো আপু। ”
ছুটি সেভাবেই ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর অনেকটা ক্ষন কেঁটে গেল নিরবতায়। কলের ওপাশের মানুষটাও নিরব, এদিকে ছুটিও হতবিহ্বল নজরে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনের দিকে। তারপর অনেকটা ক্ষণ নিরবতা ভেঙ্গে সর্বপ্রথম ওপাশ থেকেই গলা ঝাড়ল কোন পুরুষ। ছুটি কান খাড়া করে শুনল। কেন জানি না তার কাছে পরিচিত লাগে। ওপাশের মানুষটা যেন তার পরিচিত কোন মানুষই। এটা ভেবে বুক ধড়ফড় করে তার। হৃদস্পন্দন বাড়ে। সে আবারও কান খাড়া করে থাকতেই শুনতে পায় নিঃশ্বাসের আওয়াজ।ছুটি তীব্র বেগে চলতে থাকা হৃদস্পন্দন নিয়েই এবার কাঁপা স্বরে শুধাল,
“ আবির ভাই? ”
ওপাশ থেকে উত্তর আসে না আর। অন্য কেউ হলে নিশ্চয় উত্তর দিত এতক্ষনে? ছুটি যেন নিশ্চিত হয় এটা আবিরই। বলে উঠে,
“ আবির ভাই? কথা বলেন না কেন আমার সাথে? প্রথম কয়েকমাস তো ঠিক ছিল। ওখানে ফিরে গিয়েও আপনি রোজ খোঁজ নিতেন। এরপর? এরপর আমার দোষটা কি ছিল আবির ভাই? কেন আমার প্রতি আপনার করুণ ব্যবহার? ”
ওপাশ থেকে মুহুর্তেই কেউ কল রেখে দির। ছুটি কথাগুলো বলতে বলতেই চোখ টলমল করছি ।এবারে কেঁদেই ফেলে। ফিহা ছুটে এসে ছুটিকে এই অবস্থায় দেখে বলে উঠে,
“আপু? কি হয়েছে আপু? তুমি কান্না করছো কেন? ”
ছুটি অভিযোগ করে বলল,
“ তোমরা সবাই খারাপ ফিহা৷ সবাই। এটা আবির ভাই ছিল। তুমি নিশ্চয় জানতে তাই না? তবুও বললে আননোন নাম্বার। ”
ফিহা শান্তস্বরে জানায়,
“ তুমি কথা বলেছো ভাইয়ার সাথে? ”
“ সে বলেনি ফিহা৷ ”
ফিহা ফের বলল,
“ বলেনি? তাহলে কি করে চিনলে? ”
“ ওটা আবির ভাই-ই ছিল। ”
ফিহা ছোটশ্বাস টানে। ছুটিকে আগলে নিতে নিতে বলে,
” হয়তো খুব শীঘ্রই কথা বলবে আপু, কথা বলেনি বলে কষ্ট পেও না। ”
রোহানের মা রাহার জন্য কিছু খাবার পাঠিয়েছে।মূলত সে খাবার দিতেই রোহান রাহার ভার্সিটিতে এসেছিল। এসে যখন দেখল রাহা অনেকগুলো ছেলের সাথে এক ক্লাসে বসে রিহার্সাল করছে তখনই মেজাজ খারাপ হলো যেন। তার বউ যে মেয়েটা সে মেয়েটাকে কেন অনেকগুলো ছেলের সাথে মিশতে হবে? রোহান খুব বুঝে শুনেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছিল। প্রথমত সুহার সাথে অনেকাংশে মিল আছে এই মেয়েটার। চেহারা, চোখ, গান গাওয়া, মারপিট, চঞ্চলতা আর অনেক মিল। এদিকে থেকে এই মেয়েটার প্রতি তার কোন এক সময়ে হলেও অনুভূতি জম্মানোর সম্ভবানা প্রবল।দ্বিতীয় কারণ সুহার সামনে সুন্দর একটা সংসার প্রেজেন্টে করে দেখানো। এটা জেদ নয়। সুহার প্রতি তার অনুভূতি এই কয়েকমাসে অনেকটাই স্থির হয়ে এসেছে।মানিয়ে নিয়েছে। তবে আজকাল লজ্জা হয় নিজের করা পাগলামো গুলো ভাবলে। সুহার সামনে নিজের এই ব্যাক্তিত্বহীনতা মানতে না পেরেই রাহাকে বিয়ে করেছে সে। অথচ এখন মনে হচ্ছে সে রাহা সম্পর্কে খোঁজ কম নিয়েছে। অনেকটা সময় যাবৎ এসব ভেবে চিন্তে যখন রাহার সাথে সাক্ষাৎ হলে তখনই খাবার গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ এতগুলো ছেলেপেলে নিয়ে কিসের গান গাইছিলে? সুন্দর হচ্ছিল ওসব হাবিজাবি গান? শুনতেই তো বিচ্ছিরি লাগছিল আমার। ”
রাহা ভ্রু বাঁকায়। বলে,
“ তো আমি কি বলেছিলাম আপনাকে শুনতে?
এই মেয়ের কথাগুলোই কেমন জানি। রোহানের রাগ লাগে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” আম্মু খাবার পাঠিয়েছে, দিতে তো হতোই। দিতে এসে দেখি এই বিশ্রী দশা। ”
রোহান যেভাবে বিশ্রী দশা বলছে যেন কি খারাপ কাজ করে ফেলেছে সে। রাহা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ বিশ্রী দশার কি দেখেছেন? আমি কি কোন ছেলের কোলে উঠে বসে ছিলাম? ”
রোহান খুবই বিরক্ত এমন ভঙ্গিতে বলে,
“ তার চেয়েও জঘন্য। ”
“ কি জঘন্য? ”
“ যে সম্পর্কে আমার স্ত্রী তার এতগুলো ছেলেফ্রেন্ড থাকাটা। আমি এটা পছন্দ করি না নবনী৷ ”
কাটকাট স্বরে কথা গুলো শুনে রাহা দীর্ঘশ্বাস টানে। এমনভাবে বলছে যেন সত্যি কারের স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক তাদের। বলে,
” পছন্দ না করলেও তো কিছু করার নেই৷ আমাদের মাঝে আগেই চুক্তি হয়েছে যার যার লাইফে যা ইচ্ছে তাই ঘটে যাক আমরা নাক গলাব না। ”
রোহান কঠিন স্বরে জানাল,
“ নাক না গলালেও এটাই মাথায় রাখতে হবে যে ছেলেদের সাথে অতিরিক্ত মেলামেশা করাটা আমার পছন্দের নয়। করবে না। ”
“ আগেই বলেছেন কেউ কারোর জীবনে অধিকার দেখাতে পারবে না। ”
রোহান তা অস্বীকার করে মুহুর্তেই বলল,
“ অধিকার দেখানোর অধিকারও আমার আছে নবনী। ”
রাহা কোমড়ে হাত রাখে। জেদ নিয়ে বলে,
“তাহলে আমারও অধিকার আছে। তাই না?”
“হয়তো। ”
“ কিন্তু আমি অধিকার দেখাব না। কারণ আমি জানি আপনি কি কি শর্ত দিয়েছিলেন।”
রোহান বুকে হাত গুঁজে বলে উঠে,
“ এটা নতুন শর্ত, ছেলেদের সাথে মেশা যাবে না। ”
রাহা রাগে নাক ফুলিয়ে বলে উঠে,
“ ছেলেদের সাথে মিশলেই কি আমি খারাপ কিছু করে ফেলছি নাকি? আজব কথা! ”
রোহান বিরক্ত গলায় বলল,
“ আজব হলেও মাথায় রাখবে।”
কথাটা বলেই গটগট পায়ে চলে গেল সে। রাহা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকে। কি আশ্চর্য! বিয়ের রাতে অমন রূপ দেখিয়ে এখন আবার অধিকার দেখাতে আসছে?আশ্চর্য!
সাদের হাতে সিয়ার মোটা ফিজিক্স বইটাই। সামনেই পরীক্ষার মেয়েটার। অথচ মেয়েটার মাঝে সিরিয়াসন্যাসের এইটুকু ছিটেফোটারও দেখা নেই। সাদ খুবই বিরক্ত যেন এই নিয়ে। এই যে এখন যে ম্যাথটা করতে দিল তা পুরোপুরি না সম্পূর্ণ করেই সিয়া উচ্ছাস নিয়ে তাকায়। হুট করেই রলে,
“ আপনার সিগারেটের কি অবস্থা সাদ ভাই?”
সাদ বিরক্ত নিয়ে তাকায়। পরমুহুর্তেই জিজ্ঞেস করে,
“ কিসের কি অবস্থা? ”
সিয় উত্তরটা দিবে কি দিবে না বুঝে উঠে না। পরে আবার কথা ঘুরিয়ে বোকা বোকা স্বরে বলে,
“ এই যে রোজ এত কষ্ট করে আমায় পড়াতে আসেন? কষ্ট হয় না আপনার? ”
সাদ দীর্ঘশ্বাস টানে এইবার বলে,
” দুনিয়ার চরম মূল্যবান জিনিস কি জানো ইনসিয়া? টাকা। টাকার জন্য মানুষ সব করতে পারে। আমি নাহয় একটু কষ্টই করলাম। ”
সিয়া মুহুর্তেই আবার বলে,
“ আপনি কি জানেন আপনার মুখটায় হাজার মায়া লেখা আছে সাদ ভাই? আপনার মুখটায় তাকালেই মনে হয় আপনার হাজারটা কষ্ট! ”
সাত হাসে সিয়ার কথা শুনে। কোন কোন সময় মেয়েটা এমনভাবে কথা বলে যেন মেয়েটা একটা বাচ্চা এখনো। সাত হেসে বলে,
“ একটু আধটু কষ্ট তো সবার জীবনেই থাকে। মানিয়ে নিতে হয়। ”
সিয়া কাজ শেষ করে হেসে খাতা এগিয়ে দিল। পরমুহুর্তেই আবার কি বুঝে বলে উঠল,
“ আপনার কাছে সিগারেট এত মজাদার বস্তু কি করে মনে হলো সাদ ভাই? আমি টেস্ট করে দেখেছি। আসলে একটুও টেস্ট নেই। উল্টো কাঁশতে কাঁশতে আমার দমবন্ধ হয়ে গেছিল। ”
সাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বিস্ময়ের শীর্ষে পৌঁছে বলে,
“ কি টেস্ট করেছিলে? ”
সিয়া বেশ উচ্ছাস নিয়েই উত্তর করল,,
“ সিগারেট। ”
সাদ বিশ্বাম করে না যেন। বলে,
“ মজা করছো? ”
সিয়া প্রমাণ দেখাতে ড্রয়ার থেকে সিগারেটের অংশটুকু দেখিয়ে বলে উঠল,,
“ না, সত্যিই! এই যে বাকি অর্ধেক”
সাদ বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকল। স্তব্ধ ঠেকছে পরিবেশ। চোখেমুখে বিস্ময়। এই মেয়ে সত্যিই সিগারেট টেস্ট করেছে তা আবার গর্ব করে বলছেও? সাদের মেজাজ খারাপ লাগে। উঠে দাঁড়িয়ে এক ধমকে বলে উঠে,
” কালকে দুপুরে টানা তিনঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে ইনসিয়া। এটা শাস্তি তোমার।এবং, আমি আগামী দুই সপ্তাহ তোমায় পড়াতে আসব না। এটাও শাস্তি। আর হ্যাঁ, আমায় কোন কল, ম্যাসেজ করতে যাতে না দেখি তোমায়। ”
কথাটুকু এক নিঃশ্বাসে বলেই পা বাড়াল সাদ। মেজাজ খারাপ লাগছে হুট করেই। ইচ্ছে হচ্ছে এই মেয়েটার দুই গালেেদুটো থাপ্পড় বসাতে। সাদ খারাপ হওয়া মেজাজ নিয়ে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই দেখা হলো সুহার সাথে। সুহা তাকায়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ সাদ? ভালো আছিস? ”
সাদ রাগ লুকিয়ে হেসে বলে,
“তোর বোনকে না পেয়ে দেবদাস হয়ে ঘুরব নাকি?”
সুহা সাদের উপর রেগে আছে। একই সাথে রাহার বিয়েটা নিয়ে স্বচ্ছর প্রতিও সে অসন্তুষ্ট। যখন সাদকে বলে রাজি করানো গেল না তখন ভেবেছিল অন্তত স্বচ্ছ হলেও বিয়েটা আটকাবে। পরে সুযোগ এলে সাদ আর রাহার একটা গতি করা যেত। অথচ তেমন কিছু করার আর সুযোগই থাকল না। বিয়েটা সত্যি সত্যিই হয়ে গেল।
“আমি জানি তুই ভালো নেই, নিজের খারাপ থাকাটা কিন্তু তুই নিজেই বেঁছে নিলি সাদ। কি হতো একটাবার পরিচয়টা আমরা দিলে?”
সাদ হেসে বলে,
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২
“ অনেককিছুই হতো। ঘুরিফিরে প্রত্যাখানই পেতাম।বেকার যে এখনো আমি। অপরদিকে তোর ভয়াবহ দাদাজানের সাথে লড়ার সাহসও নেই যে। ”
“ তাই বলে এতকাল ভালোবেসে তাকে অন্য কারোর হতে দিয়ে দিলি? ”
সাদ এবারে ছোটশ্বাস টানে। বলে,
“ সামর্থ্য না থাকলে হাত বাড়াতে নেই সুহা।”
ব্যাস। এটুকু বলে আর দাঁড়াল না সে। সমস্ত প্রশ্নের জবাবা বোধহয় এই একটা বাক্যই। সমস্ত না পাওয়ার উত্তর ও বোধহয় এই একটা বাক্যই!