প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল পর্ব ৪১+৪২

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল পর্ব ৪১+৪২
Nabila Ishq

অবিবাহিত জোয়ান মেয়ে ঘরে থাকলে, তার জন্য সম্বন্ধ আসা স্বাভাবিক।বিয়ের প্রস্তাব আসবেই। তবে একই দিনে, একইসাথে, একই সময় দুটো পরিবারের আগমন ঘটবে পাত্রপক্ষ হিসেবে এটা নেহাতি মস্করা! এইযে দুটো পরিবার তার চোখের সামনে রয়েছে। মোস্তফা সাহেব সোফায় টানটান হয়ে বসে আছেন৷ উত্তেজনায় বিবেকহীন হয়ে পড়েছেন। একমাত্র ছেলে সহ প্রানপ্রিয় ভাইদের পানে ঘনঘন তাকাচ্ছেন। চোখেচোখে কথা বলছেন নতুন কপোত-কপোতীদের মতো।

সামনের সোফায় স্যুট-কোটে অয়ন বসে আছে। গলায় টাই বাঁধা। হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গাল, থুতনি জুড়ে। চুলগুলো পেছনে জেল দিয়ে স্যাট করা। নিত্যদিনের মতো কপালে পড়ে নয়। ফর্সা বাম হাতে হাতঘড়ি ঝুলে আছে। লম্বাচওড়ায় সে পাশে বসা তার বাবাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে বছর আগেই৷ আজ আর তাকে বাচ্চা অয়ন লাগছে না। বরং গম্ভীর এবং গোপনীয়তা বুকপকেটে লুকিয়ে রাখে তেমন পুরুষ মানুষ লাগছে। অয়নের পাশে বসা সৈকত সাহেব মুড়ামুড়ি করছেন। স্ত্রী তার সামনেই দাঁড়িয়ে টিফিনবাক্স হাতে। বারংবার চোখাচোখি করতে চাচ্ছে। হয়তো জিজ্ঞেস করতে চাইবে, এভাবে আসার কারণ! কিন্তু সৈকত সাহেবের কাছে আপাতত কোনো প্রশ্নের জবাব নেই। আর না আছে চোখাচোখি করার মতো সাহস। ঘরে গিয়ে কী জবাব দিবেন স্ত্রীকে সেটাও ভাববার বিষয়! ছেলে, স্ত্রী তো তাকে মধ্যখানে ফেলে গিলে ফেলবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অপরদিকে মোস্তফা সাহেবের বন্ধু আশরাফুল সাহেব নিরুদ্দেশের সাগরে বহমান। তিনি পরম যত্নে হেসে চলেছেন। নিজের সামনে বসা অজানা গেস্ট নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। নিজের বড়ো ছেলে মুবিনের প্রশংসা সমানে করছেন। ছেলে কতদূর পর্যন্ত পড়েছে! ডিগ্রি কোন সাবজেক্ট নিয়ে করেছে! কোন খেলায় পুরষ্কার পেয়েছে! হেসে দুলে নিজেদের সম্পত্তির বর্ননাও করলেন। সুইজারল্যান্ডে তাদের অবস্থা কেমন! সেখানকার বিজনেস কতদূর এগিয়েছে এসব!

অন্যদিকে সৈকত সাহেব কবুতরের ন্যায় বসে। কোনো গুনগান ছেলের হয়ে করলেন না! তার সুদর্শন ছেলে একাই সেখানে সটান মেরে বসে, সকলের আঁড়চোখ গুলো কেঁড়ে নিয়েছে অনিচ্ছায়!
তিনি চুপচাপ বসে আছেন। আঁড়চোখে মোস্তফা সাহেবের দিক তাকাচ্ছেন। মোস্তফা সাহেব আগে থেকে তাদের আসার কারণ না জানলে, বুঝতেই পারতেন না এরা তার মেয়ের হাত চাইতে এসেছে! এতটুকু ছেলে আর মুখের অবস্থা দেখ! বুকের পাটা দেখ! আরে এই বয়সে মোস্তফা সাহেব ছোট প্যান্ট পড়ে, পকেটে ধুলাবালি ঢুকিয়ে ঘুরেছেন। বাবার ভয়ে, প্যান্ট ভিজিয়ে রাস্তায় দৌড়েছেন। পিতামাতার মাইরের ভয়ে দাদা-দাদীর পেছনে লুকিয়ে ফিরেছেন। আর আজকালকার জেনারেশনে ছেলেপেলে ভয় পাবে কী! এরা ভয় পাইয়ে মেরে ফেলবে বাবা-মা!

মাস খানেক পূর্বের কথা। মোস্তফা সাহেব বাগানে বসে ছিলেন। আবহাওয়া ঠান্ডা। খুব আরাম করে বসে চা পান করছিলেন। মনমেজাজ বড্ড ভালো। তার আগেই ভালো প্রফিট করেছে কোম্পানি। ছেলে বিজনেসে পুনরায় হাত দিয়েছে, প্রফিট তো করবেই! অত্যন্ত খুশি মনেই পরিবেশ উপভোগ করছিলেন। তখনই উপস্থিত হলো তার ছেলে। তন্ময় কফির মগ হাতে এসেছে। বাবার পাশে বসেছে। দুজনের মধ্যে নিরবতা। একজন আরেকজনের দিক শুধুই আঁড়চোখে দেখছে। সরাসরি নয়! আর নাইবা সেধে কথা বলছে আগ বাড়িয়ে! একসময় মোস্তফা সাহেব গম্ভীরমুখে শুধালেন, হয়েছে কী! তন্ময় খুব সাবলীল গলায় বলেছিল, ‘তোমার বুকের ব্যথাটা আছে এখন?’

মোস্তফা সাহেবের মুখের গম্ভীরতা বেড়ে গেল হাজার গুনে। তৎক্ষণাৎ বুঝে ফেললেন ছেলে তার বুকের ব্যথাটা নির্ঘাত বাড়াতে এসেছে। মৃদু ভয়ে তিনি আর প্রশ্ন করলেন না। নিঃশব্দে অতিবাহিত করলেন কিছু সময়। তন্ময় জবাব না পেয়ে আর কথা বাড়াচ্ছে না। চুপচাপ কফিতে চুমুক বসাচ্ছে। অধৈর্য মোস্তফা সাহেব একসময় তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলেন, ‘বুকের ব্যথা ট্যথা নেই। বুড়ো হয়নি বুঝলে। এখনো তরতাজা মজবুত আছি। এসব দু’টাকার কথা আমার বুকের ব্যথা বাড়ানোর ক্ষমতা রাখেনা।’

পরপরই তন্ময় স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠেছিল,’শাবিহা একটা ছেলেকে ভালোবাসে। ছেলেটা ওর বয়সে ছোট হয়। বছর খানেকের প্রেম তাদের। সম্পর্ক গভীর। ছেলেটা পাশের বাড়ির অয়ন!’
নিস্তব্ধতা চারপাশে। টু-শব্দ শোনা গেল না। মোস্তফা সাহেব স্তব্ধ, বিমুঢ়। চাহনি শুন্যে পরিনত হয়েছে। অস্পষ্ট স্বরে ‘কী!’ বলে উঠেছিলেন। অবাস্তবিক, অমানবিক ছেলে পুনরায় কথাগুলো বলে দিল নির্বিকার ভঙ্গিতে। মোস্তফা সাহেব শক্ত করে বুকটা ধরে রেখেছেন। একটামাত্র ছেলে প্রেমে পড়েছে বলে তার দুনিয়া উথাল-পাতাল করে দিল। এখন মেয়েটা কী তার ছোট্ট জীবনে ঝড় তুলবে?

মুবিনকে অয়ন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল। দেখল বলা যায়না। চোখ রাঙিয়ে দেখল বলতে হয়! মাথা থেকে পা অবদি দেখেছে। ঠিক কোথায় সাহস সঞ্চয় করে তার রমনীকে বিয়ে করতে আসছে, সেটাই মুলত দেখতে চাচ্ছে! অয়নের এমন চোখ রাঙানো অনেকক্ষণ যাবত দেখেও না দেখবার ভান করে যাচ্ছে মুবিন। কিন্তু আপাতত আর পারছে না। সেও তাকাল। তার থেকেও লম্বাচওড়া এবং বয়সে ছোটো ছেলেটাকে দেখে নিল। মুবিন উচ্চতা নিয়ে বড্ড ডিপ্রেশনে থাকে। নিজের থেকে লম্বাচওড়া পুরুষ সামনে দাঁড়ালে তার ইগোতে লাগে। আজ লাগতে লাগতে ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবারের সব পুরুষ লম্বাচওড়া। এতটা লম্বা হবার কারণ কী! কি খায় এঁরা!

ড্রয়িংরুমে থমথমে পরিবেশ। এতক্ষণ যাবত একতরফা কথা বলেছেন আশরাফুল সাহেব। একপর্যায়ে তার কথা ফুরিয়ে গেল। তিনিই থামলেন। কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে সেটার আঁচ করতে পারলেন। ওহী সাহেব কথা এগোনোর সুরে নতুনভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করলেন। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলো। আশরাফুল সাহেব বিনয়ী সুরে বললেন, ‘কই শাবিহা? দেখি একটু ওঁকে! কতো ছোট দেখে গিয়েছিলাম।’

অয়নের মুখশ্রী আরও গম্ভীর হলো। সে হাতের কনুই দ্বারা বাবাকে গুঁতো দিল। চোখের ইশারায় কথা বলতে বলল। সৈকত সাহেব হালকা কাশলেন। তবে এমতাবস্থায় কথা বাড়ানোর মতো বিবেক পেলেন না। ছেলেটাকে কতো করে বোঝালেন, পাত্রপক্ষ শাবিহাকে দেখে যাক। তারপর নাহয় তারা গিয়ে প্রস্তাব রাখবে। দেখে গেলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না! কিন্তু কে শুনে কার কথা! ছেলের মতে শাবিহাকে সেই পাত্রপক্ষ হিসেবে দেখবে। অন্যকেউ নয়! অবশ্য সৈকত সাহেব রাজি হোননি প্রথমে। ছেলে থেকে ছেলের বউয়ের বয়স বেশি, ব্যাপারটা ঠিক তার মানাচ্ছে না! একটুখানি ছেলে তার! এতটুকু ছেলে এখনই বিয়ে করবে, আবার মেয়ে বয়সে বড়ো! এটা কোন বাবামা মেনে নিবে? কিন্তু তিনি মানতে বাধ্য হলেন। প্রথমে ছেলে লোভ দেখাল। এইযে অয়ন তার বিজনেস সামলানোর দায়িত্ব নিবে বলল। শেয়ারের প্রফিট দিয়ে নতুন প্রজেক্ট শুরু করার ওয়াদা করলো। চিটাগং আধা বিল্ডিংয়ের কাজে হাত দেবার, প্রতিশ্রুতি ও দিয়েছে! এসব বড়সড় লোভে পড়ে তিনি নড়েচড়ে গিয়েছিলেন কিছুটা ঠিকই, তবুও মানেননি।

পরক্ষণেই ছেলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলো। সৈকত সাহেব ছেলের একতরফা প্রেমের কাহিনি শুনে, বড়ো কষ্ট অনুভব করলেন। এবং ভাবলেন বয়স একটি সংখ্যা মাত্র। ছেলের সুখ বড়ো সুখ।আর শাবিহা তাদের সামনে বড়ো হয়েছে। মেয়েটা কেমন তারা ভালোভাবে জানেন। বয়সের ডিফারেন্স অতটা বোঝার মতো নয়। কিন্তু এখন সমস্যা অন্য যায়গায়। মোস্তফা শাহজাহান কী আদোও মেয়ে দিতে রাজি হবেন?
মোস্তফা সাহেব হাসলেন। ভেতর থেকে ঠেলে বের করা হাসি টুকু ঠোঁটে লেপ্টে রাখলেন। তিনি মাথা দুলিয়ে স্ত্রীকে মেয়ে আনার ইশারা করবেন প্রায়! অয়ন হুট করে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে গিয়ে আবারো বসে পড়লো। পরিপাটি করে বসে মোস্তফা সাহেবের দিক তাকাল। দৃষ্টি প্রখর তার। তবে কন্ঠ নরম।

‘আমাদের কিছু কথা ছিলো।’
মোস্তফা সাহেব কাঠকাঠ গলায় বললেন, ‘পড়ে। এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।’
লতা বেগম আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না আর। ছেলেকে বকতে বকতে সামনে অগ্রসর হলেন। এখনই কান ধরে বাদরটাকে ঘরে নিবেন। মানইজ্জত এই ছেলে আর রাখবে না মনে হচ্ছে। অয়ন দাঁড়ালো। কান ধরার পূর্বেই মায়ের হাত ধরলো। বিরক্ত সুরে বলল, ‘এটা কান ধরার যায়গা না মা। পাত্রী দেখতে এসে ছেলের কান ধরলে মানইজ্জত কই রইলো? দেখি বসো৷’
‘পাত্রি! এই অয়নের বাবা! হচ্ছে কী!’

মোস্তফা সাহেবকে আশ্চর্যের সীমানায় পৌঁছে দিতে অয়ন বলল, ‘আমি শাবিহাকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।’
শাবিহা দীপ্তর কথাবার্তা শুনে দৌড়ে এসেছে। শাড়ি পরিহিত তার হঠাৎ আগমনে সকলের নজর ঘুরেছে। অপ্রস্তুত শাবিহা চমকে অয়নের দিক তাকিয়ে। শক্তপোক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে। শাবিহাকে এমন সাজগোজে দেখে মুখশ্রী গম্ভীর হলো। কপাল কুঁচকে গেল। এমন সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে এলে ত, সাথেসাথে বিয়ে হয়ে যেতো। অয়নের ইচ্ছে করছে টি-টেবিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে। কই অয়নের জন্য তো এভাবে সাজগোজ করেনি। অয়ন চোখ ফিরিয়ে রাখল। শাবিহার পানে তাকাল না। ইতোমধ্যে আশরাফুল সাহেব দাঁড়িয়ে পড়েছেন। কন্ঠে ভদ্রতা নেই আপাতত, ‘এগুলো কীসব হচ্ছে মোস্তফা?’

মুবিনের চোখমুখ উজ্জ্বল। সে উতলা চোখে শাবিহাকে দেখছে। আঁড়চোখে বাবাকে টেনে সোফায় বসালো। নিজেও পাশে বসে ফিসফিস করে বলল,’সিনক্রিয়েট করো না। মেয়ে আমার খুব পছন্দ হয়েছে বাবা!’
আশরাফুল সাহেব রাগ নিয়ন্ত্রণ করলেন। অপেক্ষায় রইলেন ব্যাখার৷ মোস্তফা সাহেবের ব্যাখ্যার পূর্বে অয়ন পুনরায় বলল, ‘আমাদের গভীর সম্পর্ক! সাগরের থেকেও গভীর। এই সম্পর্কে বিয়ে মাস্ট। নাহলে পাপ লাগবে।’

স্তব্ধ আশরাফুল সাহেব দাঁড়িয়ে পড়লেন। ছিঃ ছিঃ করতে বেড়িয়ে গেলেন। বাধ্যতামূলক ছেলে স্ত্রী টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। যাওয়ার পূর্বে মোস্তফা সাহেবকে কথা শোনাতে ভুললেন না। সৈকত সাহেব ছেলের সামনে দাঁড়ালেন। তার এই ছেলেটা এখন নিশ্চিত মাইর খাবে। ভয়ে তিনি ছেলের সামনে দাঁড়ালেন। নিজে ছেলেকে একটা চড় দেন না। সেই ছেলেকে চোখের সামনে অন্যকেউ মারলে তিনি সহ্য করতে পারবেন না৷ একদম নয়! তিনি ছেলের হয়ে মাফ চাইলেন। বিয়ের প্রস্তাব রাখলেন। দুজনের প্রেমের বিষয়টি খোলাখুলি বললেন। ওহী সাহেব বোঝার সুরে বললেন, ‘ভাইয়ের মনমেজাজ খারাপ। আমরা একদিন ডেট ফিক্সড করে কথা বলবো।’

সৈকত সাহেব রাজি হলেন। অয়ন হুড়মুড়িয়ে বেড়িয়ে গেল৷ লতা বেগম ছেলের পিছু ছুটলেন। যতক্ষণ না ছেলের কান টেনে লাল করবেন, তার শান্তি নেই। সৈকত সাহেব যাবার আগে আরেকবার মাফ চাইলেন। তারা যেতেই মোস্তফা সাহেব দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। পেছনে জবেদা বেগম ছুটলেন। শাবিহা সিঁড়ির মাথায় বসে পড়েছে। অঝোরে কান্না করছে। অরু, রুবি তাকে দুপাশ হতে ধরে রেখেছে।

বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বজ্রপাত তুমুল। বাতাস ছেড়েছে হয়তো। বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে বেলকনি থেকে।
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে দুটো পঁয়তল্লিশে। শাহজাহান বাড়ি নিস্তব্ধতায় ঘেরা। ঘন্টা খানেক আগেই সকলে ঘুমোতে গিয়েছে। সকলেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়তো। অরু বিছানায় গড়াগড়ি করছে। পরপর উঠে বসলো। বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে বেরোল। তার ঘুম না আসার মুল কারণ রসমালাই। রসমালাই খাওয়ার জন্য হৃদয় ব্যকুল হয়ে আছে। যেহেতু পরিস্থিতি কিছুটা মিটমাট হয়েছে এখন রসমালাই খাওয়া যায়। বিড়াল ছানার মতো অন্ধকারে হাতড়ে এসেছে পাকঘরে। ফ্রিজ খুলেছে। কিন্তু রসমালাই নেই! শেষ!

অরু ফ্রিজ উলটপালট করে রসমালাই খুঁজল।কোথাও নেই! আশ্চর্য! সে তো সন্ধ্যায় দেখল ফ্রিজ ভর্তি রসমালাই। কষ্টে অরুর চোখ ভিজে উঠার উপক্রম। সবাই জানে তার রসমালাই পছন্দ। অথচ কেউ তারজন্য একটা পিস রাখল না। দুঃখে কষ্টে ফ্রিজ আটকে ঘুরতেই মুখ চেপে ধরলো।এখনই চিৎকার করতে যাচ্ছিল। তন্ময় সামনে দাঁড়িয়ে। ঘুমন্ত মুখমণ্ডল। ছোট চোখ জোড়া লাল ঘুমের অভাবে। উষ্কখুষ্ক চুলে অবস্থা। তার হাতে খালি পানির বোতল। সে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল নিতে এসেছে নিশ্চয়ই। অরু বুকে থু থু ছিটিয়ে শ্বাস ফেললো। ফ্রিজের সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো। তন্ময় অরুকে ভালোভাবে দেখে নিল। ভোঁতা মুখ দেখে জিগ্যেস করলো, ‘কি হয়েছে?’

তন্ময়ের কন্ঠ ভাঙা এবং গভীর। তার ঘুমন্ত স্বর এই নিস্তব্ধ আঁধারে কাঁটা গায়ে নুনের ছিটে যেমন। অরু হাসফাস করে সরে উঠল। ইনিয়েবিনিয়ে বলল, ‘কিছুনা।’
‘খিদে পেয়েছে?’
অরু বিড়বিড় করে ভেঙাল, ‘খিদে পেয়েছে! অ্যাহ! খিদে পেলে যেমন রান্না করে খাওয়াবে!’
তন্ময় প্রশ্ন করলো, ‘কি খেতে ইচ্ছে করছে?’
অরু পাপড়ি ঝাপটাল। খুব মিনমিন করে অভিমানী সুরে বলল, ‘রসমালাই।’

তন্ময় ফুলহাতা খানা কনুই পর্যন্ত তুলে, রান্নাঘরের বাতি জ্বালালো। শব্দহীন ভঙ্গিতে সেলফোন বের করে ইউটিউব ঢুকলো। রসমালাই বানানোর রেসিপি ফলো করে, একটি ভিডিও ছেড়েছে। উপকরণ গুলো নোট করে নিয়েছে। সেগুলো খুঁজে সামনে রাখছে। দুধ বের করে বসিয়ে দিল চুলায়। অরু বিষ্ময়ের চুড়ান্তে। সে মোটেও এমন রিয়েকশন তন্ময় থেকে আশা করেনি। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। ভীতিকর কদমে তন্ময়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। কম্পিত গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কি করছেন!’
‘রসমালাই বানাবো।’
‘আপনি রসমালাই বানাতে জানেন?’
‘না। রেসিপি ফলো করবো।’
‘দরকার নেই। চলুন!’

তন্ময় শুনল না। আনাড়ি হাতে রান্নাঘরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অরু নিজ মনে তাকিয়ে রইলো। তন্ময়ের হাতের আঙুল গুলো লম্বা। নিমিষেই সবকিছু আঙুলের ফাঁকে নিয়ে ফেলছে। শক্তপোক্ত গম্ভীর মুখশ্রী তার। যেমন পৃথিবীর কোনো কিছুর ধার সে ধারে না। অথচ সেই ধার না ধারা মানুষটা অরুর এক কথায়, রসমালাই বানাতে ব্যস্ত। তাও এই বৃষ্টির নামের মাঝরাতে। এতো ভালোলাগা সে কই রাখবে? খুশিতে অরু মুখমণ্ডল জ্বলজ্বল করছে। কিছুটা উঁচু হয়ে হুট করে ব্যস্ত শেফ তন্ময়ের গালে চুমু খেয়ে বসলো। তন্ময়ের ব্যস্ত হাত জোড়া থেমে গেল। স্তব্ধ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরপর আবারো কাজে ব্যস্ত হলো। প্রতিক্রিয়া দেখাল না কোনো। অরু সাহস পেলো। খিলখিলিয়ে হেসে অপরপ্রান্তে চলে এলো। হাস্যজ্বল চেহারা দেখিয়ে বলল,’আমাকে বলুন কি করতে হবে। আমিও সাহায্য করব।’

ভিনেগার দে।’
অরু এগিয়ে দিল। আকাশ সমান আগ্রহ নিয়ে তন্ময়ের রসমালাই বানানো দেখছে। সঙ্গে এটাসেটা এগিয়ে দিচ্ছে। একসময় জিজ্ঞেস করলো, ‘অয়ন ভাইয়াকে কি মেনে নিবে চাচ্চু?’
‘দেখা যাক।’
‘আজ তো সে রাজার ন্যায় এসেছে তাই না? কতটা সুদর্শন লাগছিল দেখেছিলেন? বেশ বড়ো বড়ো ভাব রেখেছে চারপাশে। মনেই হয়নি সে অনার্সের স্টুডেন্ট। শাবিহা আপু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলো ভাইয়ার দিক।’

‘ওহ।’
‘আপনার কি তাকে শাবিহা আপুর জন্য উত্তম মনে হলো?’
‘ছোটো এখনো ও।’
‘কোথায় ছোটো! আচ্ছা আজ আপনি তাদের ব্যাপারে কিছু কেন বললেন না!’
‘প্রয়োজন পড়লো না।’
‘চাচ্চু আপনার কথা শুনবে! বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই বুঝবে।’
তন্ময় একটা ইম্পর্ট্যান্ট পার্টে আছে। মনোযোগ সব সেখানে। অরুর কথায় ধ্যান দিল না। অরু মুখ বন্ধ করে ফেললো। এক নজরে তন্ময়কে দেখছে। আরেকটা চুমু কি দিবে তন্ময়ের বাম গালে? না থাক! অরুর ভীষণ লজ্জা লাগে। সে খুব আবেশে তন্ময়ের চারপাশে ঘুরঘুর করছে।

রসমালাই হতে ঘন্টা খানেক সময় লাগলো। ঝটপট বানানো। তন্ময় সুন্দর ভাবে সার্ভ করেছে। অরু তক্ষুনি খেল না। রসমালাইয়ের প্লেট ধরে নিজের রুমে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তন্ময়কে ভুলে গেল। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে! প্রবল বৃষ্টি। বেলকনি সামনে দাঁড়ালো রসমালাইয়ের প্লেট সহ। একটি ছবি তুললো। তারপর গপ করে একটা মুখে পুড়ে ফেললো। মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল। মজাদার! প্রথম ট্রায়ালে এতটা দুর্দান্ত বানাবে অরু ভাবতেই পারেনি। চার পাঁচটা মুখে দিয়ে ঘুরে তাকাল। তন্ময় এসেছে।

অরু কিছুটা অবাক হলো বটে। সচরাচর তন্ময় তার রুমে আসেনা। হাতেগোনা কয়েকবার এসেছে। অরু পুনরায় খাওয়ায় মনোযোগী হলো। খেতে নিয়ে বৃষ্টি দেখছে। তন্ময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সম্পুর্ন প্লেট খালি করে তবেই অরু তন্ময়ের অস্তিত্ব খেয়াল করলো। আঁড়চোখে তন্ময়কে দেখে নিয়ে বৃষ্টির দিক তাকাল। বুকটা ধুক করে উঠলো হুট করে। অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করছে সে। বৃষ্টির সেই রাতের অনুভূতি তাকে পুনরায় ঝেঁকে ধরেছে। অরু থরথর করে কেঁপে উঠলো। সে তো এখন বৃষ্টিকেই ভয় পাচ্ছে। তন্ময়কে ঝুকতে দেখে অরু চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে ফেললো। তন্ময়ের কন্ঠের স্বর অস্পষ্ট গভীর, ‘বৃষ্টি হচ্ছে অরু। আজ ইলেকট্রিসিটি গেলে মন্দ হয়না, তাই না?’

থাই গ্লাসের মধ্যে সরু লাইনে বৃষ্টির রেখা বইছে। সেখানে ছোপ ছোপ বৃষ্টির ছাপ স্পষ্ট। গভীর রাতে অস্পষ্ট বৃষ্টির মধুর শব্দ কানে ভেসে আসছে। বাতাস বইছে তুমুল। বাতাস উড়াতে ব্যস্ত পর্দা। সাদা পর্দাদের এলোমেলো খেলা চলছে যেনো। অরুর হাতের বাটি ফাঁকা। রসমালাই সে খেয়ে ফেলেছে আধঘন্টা হলো। আরও খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নেই তো! তন্ময় হাতেগোনা কিছু বানিয়েছে। সবই একাই খেয়ে নিয়েছে। কিঞ্চিৎ লজ্জা নিয়ে পেছনে আঁড়চোখে তাকাল। তন্ময় এখনো তার পিঠ ছুইছুই হয়ে দাঁড়িয়ে। একমনে বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে। কী এমন ভাবছে মানুষটা! অরু খালি বাটি নাড়িয়ে বলল,’আপনাকে সাধতে ভুলে গেলাম তো। একাই খেয়ে নিয়েছি।’
তন্ময় একইভাবে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলো,’ভালো লেগেছে?’

‘ভিষণ।’
‘পেট ভরেছে?’
অরুর চোখমুখে না ফুটে উঠল। মুখ ফুটে সে বলতেই নিচ্ছিল না। পূর্বেই শব্দ করে ঢেকুর তুলে ফেললো। ঢেকুর তুলে হাসফাস করে সরে গেল। এদিকসেদিক লোকাতে চাইল। থমথমে নিঃশব্দ পরিবেশে শব্দময় হাসি শোনা গেল। গম্ভীর, গভীর হাসির স্বর। তন্ময়ের হাসির শব্দে অরু ভীষণ লজ্জায় পড়লো। হতভম্ব হয়ে গেল। ঢেকুর আসার সময় আর পেল না। একটু পড়ে আসত। তন্ময় গেলে নাহয় আসত! তখন হাজারবার আসলেও তো কোনো ক্ষতি ছিলো না। ভোঁতা মুখ নিয়ে অরু তন্ময়ের হাসি দেখার সাহস পেলো না।

অন্যদিকে খুব ব্যস্ত পায়ে তন্ময় দরজার দিক অগ্রসর হলো। অরু ভেবে নিল, তন্ময় এবার চলে যাবে। রাত কম তো হলোনা। ঘন্টাখানেক ধরে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখেছে। অরুর এবার ঘুম ধরেছে। চোখজোড়া বুজে আসতে চাইছে। পা’জোড়া ও ব্যথায় ঝিম মেরে গেছে। আর এভাবেও বৃষ্টির দিনগুলো তার বড্ড প্রিয় কি-না! এদিনে ঘুমোতে আরাম লাগে। পেট ভর্তি থাকলে তো কথাই নেই। দরজা বন্ধ হবার শব্দে চমকে ঘুরে তাকাল। তন্ময় দরজা বন্ধ করেছে। অরু স্তব্ধ এবং বিমুঢ়! কপালের মধ্যস্থান কুঁচকে গেল রীতিমতো। ধীরগতি অনুসরণ করে তন্ময় ফিরে আসলো। বৃষ্টি তখনো প্রখর। তন্ময় হাতঘড়ি খুলছে।

খুলে টেবিলের পাশে রাখল। ভাড় ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসল। অরু এতটাই তাজ্জব বনে গেল যে প্রশ্ন করতে ভুলে গিয়েছে। তন্ময়কে দেখে মনে হচ্ছে সে এখানেই শোবার প্রিপারেশন করছে। অরু অবাকের চুড়ান্তে। মোস্তফা সাহেব বারংবার বলেছে সেপারেট থাকতে। পাশাপাশি রুমের বিচ্ছেদ পর্যন্ত ঘটিয়েছে। ভয়ে অরুর গলা শুকিয়ে গেল। তন্ময় যদি এই রুমে ঘুমোয় এবং সেটা মোস্তফা সাহেবের কানে যায়, তাহলে তোলপাড় হবে! আর সেইবা কীভাবে বেরোবে। দরজা তো বন্ধ! অরু ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘আমি কিন্তু শাবিহা আপুর রুমে যেতে পারব না। বড়ো চাচ্চু খুব রেগে যাবে।’
তন্ময় চুলগুলো কপাল থেকে উঠিয়ে বলল, ‘এদিকে আয়।’
‘হু?’
‘কোথাও যাবিনা। এখানেই ঘুমোবি।’
‘তাহলে আপনি?’
‘আমিও।’

অরু আশ্চর্যের শেষ প্রান্তে। তন্ময় উঠে দাঁড়ালো। কয়েক পায়ের ধাপে এসে অরুর হাত চেপে ধরলো। টেনে বিছানায় বসিয়ে দিল। সে অন্যপাশে গিয়ে লাইটস ওফ করার সুইচ টিপে দিল। আঁধারে তলিয়ে গেল সব৷ ঘুটঘুটে অন্ধকার। তন্ময় বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়েছে। অরুকে যেভাবে বসিয়েছে সে সেভাবেই বসে। নড়চড় না দেখে পরপরই হালকা টেনে শুইয়ে দিল। অরু চাপাস্বরে চিৎকার করে উঠলো। ভয়ে সে গুটিয়ে গিয়েছে। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। তন্ময় তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে। মুখটা অরুর রেশমি চুলে গুঁজে দিয়ে দিব্বি শান্ত হয়ে গিয়েছে। কোনো নড়চড়, সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না তার থেকে৷ তবুও অরুর সর্বাঙ্গ জুড়ে শিহরণ বয়ে চলেছে। ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে হৃদয়। পেটে স্পষ্ট তন্ময়ের হাতের স্পর্শ অনুভব করছে। অনুভব করছে নিশ্বাসের মেলা। কম্পিত গলায় কিছু বলতে চাওয়া অরু বেশ কিছুক্ষন থমকে রইল। মস্তিষ্ক সম্পুর্ন ফাঁকা তার।ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছেনা! শুনতে পেল তন্ময়ের গলা, ‘এভাবে শক্ত হয়ে আছিস কেন! শরীর ছাড়!’

‘আ..আপনি নিজের রুমে যাচ্ছেন না কেন!’
‘ঘুরে তাকা।’
‘না একদম না। আপনি জবাব দেন। কেউ দেখলে কী ভাববে! বড়ো চাচ্চু তো খুব রাগবেন।’
‘আমি দেখে নিব।’
অরু ভেঙাতে চাইল। তবে পেটে থাকা হাতের স্পর্শ গভীর হতেই, কথা গলায় আটকে গেল। থরথর করে কেঁপে, উঠতে চাইল বিছানা থেকে। সেসময় তন্ময় তাকে পাজাকোলে তুলে, ঘুরিয়ে নিয়েছে। মুখোমুখি ভাবে। অরু চোখজোড়া জাপ্টে বন্ধ করে রেখেছে। তন্ময় তার বন্ধ চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বসলো। অরু মুচড়ে উঠলো সাপের মতো। তন্ময় ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘ঘুমাতে দে। নড়চড় করবি না।’
‘নিজের রুমে যান তাহলে। আমি নড়চড় করবোই।’
‘আমার যা করতে ইচ্ছে হচ্ছে, করে ফেলি?’

অরুর নড়ানড়ি থেমে গেল আচমকা। শান্ত হয়ে গেল তন্ময়ের বাহুতে থাকা মেয়েটা। তন্ময়ের ঠোঁটের কোণে স্মিথ হাসি। সে অরুর মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে চোখ বুজল। ভয়ে অরু জড়সড় ভাবে তন্ময়ের বাহুতে শুয়ে থাকলো। কোনোপ্রকার শব্দ বা নড়চড় করার বা মুচড়ে উঠার সাহস পেলো না। সময় অতিবাহিত হচ্ছে অথচ অরুর ঘুম আসছে না। অপরদিকে তন্ময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অরু একধ্যানে তাকিয়ে রয়েছে তন্ময়ের ঘুমন্ত মুখশ্রীর পানে। খুব আলগোছে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিল উঁচু নাকটা। পরপর গাল। আদুরে ভাবে তন্ময়ের চাপদাড়ি’তে আঙুল ঘোরালো। কপাল, চোখ ও ছুঁয়ে দিল। শুধু ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে পারলো না। তার বেশ লজ্জা লাগছে। নজর যেতেই লজ্জাবোধ চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে। ছুঁয়ে দেওয়া খুব দূরের বিষয়। একসময় অরু পরিবারের কথা ভুলে বসলো। আরামসে তন্ময়ের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। ঘুমের ঘোরে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। অস্পষ্ট স্বরে গুঙিয়েছে কয়েকবার।

লতা বেগম নিজের কথায় ঠায়। তিনি এই বিয়ে মানবেন না। অদ্ভুত! দু’একমাস বা বছর খানেকের ব্যবধান নয়, চারবছরের ব্যবধান। এতবড় মেয়ে তিনি কীভাবে নিজের ছেলের জন্য আনবেন। কেমন দেখাবে এটা! লতা বেগম চোখ মুখ বিকৃত করে বসলেন। অয়ন রাগারাগি করে রাতের আঁধারে বেরিয়ে গিয়েছে। কল করা হয়েছে তাকে কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। লতা বেগম ছেলের জন্য চিন্তিত তবে তিনি এই বিয়েতে একদম মত দিবেন না।
সৈকত সাহেবকেও সমানে ঝেড়েছেন। ইচ্ছেমতো বকেছেন। হন্তদন্ত গলায় লতা বেগম বললেন,
‘মানুষ কি বলবে! আমার ছেলে হাসাহাসির পাত্র হয়ে উঠবে। ছেলেটা নিজের ভালো বুঝে এখনো? কতো বা বয়স ওর! প্রাপ্তবয়স্ক হলে দেখবে, এই বিয়ের উপর চরম বিরক্ত হবে। তখন আমার ডিসিশনকেই সম্মতি জানাবে। এসব আবেগ! বছর খানেকের সংসার করেই, মন উঠিয়ে ফেলবে। না, না এটা হয়না।’

‘সংসার তুমি করবে না। ছেলে করবে। এতো ভেবো না।’
‘আশ্চর্য! ছেলে করবে দেখেই ভাবছি। আমার ছেলের ভালোমন্দ আমি দেখবো না।’
‘তুমি শান্ত হও।’
সৈকত সাহেব হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ালেন। বড়বড় পা ফেলে চলে গেলেন। তার নিজের ও মন শাঁয় দিচ্ছে না। মুলত ছেলের কারণে রাজি হয়েছেন। সংসার ছেলে করবে, অবশ্যই তার পছন্দ অনুসারে। তাই তিনি অমত করেননি। অপরদিকে শাবিহা তাদের চেনাজানা। গুণবতী মেয়ে!

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল পর্ব ৩৯+৪০

বয়সে একটু বড় হলেই বা কী! কিন্তু এতসব তার স্ত্রী বুঝবে না। তাকে এখন বোঝানো আর না বোঝানো এক! সৈকত সাহেব ভেবে রেখেছেন তিনি এই বিষয়ে পড়ে কথা বলবেন। স্ত্রীর মাথা ঠান্ডা হোক! পকেট হাতড়ে সেলফোন বের করলেন। ছেলেকে কল করলেন আবারো। সুইচডওফ বলছে পুনরায়। চিন্তিত হয়ে পড়লেন। গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এতো রাতে ছেলেটা গেল কই, দেখতে হবে ত।

প্রেয়সীর হৃদয় ব্যাকুল পর্ব ৪৩+৪৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here