বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১০
shanta moni
শুভ্র সেই দুপুরেই বাড়িতে এসেছে, রুম থেকে বের হয়নি। মনটা কেমন যেনো অস্থির লাগতে ছিলো৷ কিন্তু কেনো এমন লাগছে,জানা নেই তার, তাই সে সিগারেট খেতে খেতে ছাদে যায়,,ছাদে রোদকে একটা ছেলের সাথে ওই ভাবে দেখে যেনো হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে, পড়ে।
রোদ শাড়ি পড়েছে,শাড়ি পড়ে ভালো মতন হাটতে পারছে না, শাড়িতে পেচিয়ে যখন পড়ে নিতে যাবে তখন আকাশ রোদকে ধরে ফেলে। আর সেই অবস্থায়, শুভ্র রোদকে দেখে ফেলে,যে রোদকে একটা ছেলে জড়িয়ে আছে, রাগে কিছু ভেবে পায় না, শুভ্র নিজের রুমে চলে যায়,এসে দেয়ালে ঘুষি দিতে থাকে। সে কোনো ভাবেই যেনো নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। ইচ্ছে করছে রোদকে সহ ওই ছেলেটাকেও মেরে ফেলতে। শুভ্র দেয়ালে ঘুষি দিতে দিতে বলে,,
শুভ্র: এই মেয়েটার জন্য কেনো আমার এতো রাগ হচ্ছে। ও জাহান্নামে যাক। তাতে আমার কিছু না কিচ্ছু না।
এইদিকে রোদ আকাশকে দূরে সরিয়ে দিয়ে। দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশ মুচকি হাঁসে আর মনে মনে বলে, আগের জন্মে হয়তো, কোনো ভালো কাজ করেছিলাম। তাই এই জন্মে এতো সুন্দর বউ পাচ্ছি।চাঁদের গায়ে খুদ আছে। কিন্তু এই জান্নাতের হুর পরির গায়ে কোনো খুদ নেই,,মনে হচ্ছে আল্লাহ খুব যত্ন করে বানিয়েছে।
আকাশ এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। রোদের দিকে
রোদের কেমন যেনো বিরক্ত লাগছে, এই ভাবে তাকিয়ে আছে কেনো এই লোক, মাথায় কি সমস্যা
আস্তে করে কাশ দেয় রোদ, আকাশের ধ্যান ভাঙে আন মনে বলে উঠে।
আকাশ: আপনি সত্যি অনেক সুন্দর রোদ।
রোদ মাথা নিচু করে আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আকাশ আবার বলে উঠে,আমি এই বিয়েতে রাজি, আপনার কোনো আপত্তি নেই তো, রোদ কিছু বলে না, ঠোঁট কাঁপছে নিজের কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করছে, বুকের ভিতর যেনো ঝড় বইছে,,আকাশ আর কিছু বলে না, সে ভেবে নেয়, রোদ হয়তো লজ্জা পাচ্ছে, তক্ষুনি নিলা আসে রোদ আর আকাশ কে ডাকতে, দুজনে নিচে চলে যায়।
আকাশের পাশাপাশি বসায় দুজনকে, আকাশের আম্মু একটা আংটি বের করে দেয়,আকাশ কে, আকাশ রোদের হাতে আংটি পড়িয়ে দেয়, ডায়মন্ড আংটি যেনো রোদের ফর্সা হাতে জ্বল জ্বল করছে।
এই সব কিছু উপরে দাঁড়িয়ে দেখেছিলো শুভ্র। কেনো জানি তার ভিষন রাগ হচ্ছে।
রোদ নিজের রুমে চলে আসে। আর পাত্র পক্ষ বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে যায়।সামনের সপ্তাহে রোদ আর আকাশের বিয়ে। এর মধ্যে বিয়ের শপিং তাঁরপর যা যা লাগে সব ঠিকঠাক করতে হবে। আরাফ চৌধুরী ভিষণ খুশি, কারন সে এই মেয়েটাকে এই নরক থেকে বের করতে পারবে। মেয়েটা একটু সুখের দেখা পাবে।
রোদ রুমে এসে কাঁদছে, নিলা রোদের কাছে যায়, রোদ নিলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
রোদ: নিলা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি তাকে ছাড়া অন্য কারো কিভাবে হবো। আমাকে একটু ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো।
নিলা রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
নিলা: কাঁদিস না রোদ, নিজেকে শক্ত কর, সে যদি তোকে ছাড়া থাকতে পারে, তাহলে তুই কেনো পারবি না, ভুলে যা সব মনে করবি সব একটা দুঃস্বপ্ন।
নিলার কথা শুনেও রোদ নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। নিলা রোদের মুখ তুলে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে।
নিলা: জানু প্লিজ এই ভাবে কাঁদিস না, তোর কান্না দেখে আমারো কাঁন্না পাচ্ছে, প্লিজ
আর শোন আকাশ ভাইয়াকে দেখে মনে হলো। সে খুবই ভালো ছেলে আর তোকেও সুখে রাখবে।
রোদ কিছু বলছে না, শুধু ফুপিয়ে যাচ্ছে। নিলা আবার বলে,
নিলা: সন্ধ্যা হয়ে, আসছে জানু, আমি এখন বাসায় যাই, আর প্লিজ কান্না করিস না।
নিলা রোদের রুম থেকে বের হয়ে, সামনে হাঁটছে এমন সময় কেউ হাত ধরে টেনে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে, নিলা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সামনে নিলয় দেখে রাগে কট মট করতে করতে বলে।
নিলা: এই অসভ্য লোক আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেনো, ছাড়ুন বলছি, নইলে কিন্তু চিৎকার করবো।
নিলয় কেমন করে যেনো নিলার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাঁরপর বলে,
নিলয়: তো বারন কে করছে, করো তুমি চিৎকার।
নিলা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ভয়ে ভয়ে নিলা জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।
নিলার ঠোঁট থর থর করে কাঁপছে নিলয়ের ঘোর লেগে যায়৷ ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়, নিলার ঠোঁটে। নিলা কিছুটা সময় লাগে কি হচ্ছে বুঝতে, যখন বুঝতে পারে কি হচ্ছে। তখনি নিলয়কে জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে, ঠাসসসস করে থাপ্পড় মারে নিলার চোখে পানি, নিলা দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। নিলয় কিছুটা সময় লাগে বুঝতে কি হচ্ছে। যখন বুঝতে পারে, সে ঘোরে বসে কি করে ফেলেছে, তখনি নিজের মাথা চেপে ধরে,আর বলতে থাকে,
নিলয়: ছিহ নিলয় তুই এটা, কি করে পারলি,ছিহ
এতোটা নিচে কি করে নামলি, তোকে কি নিলা মাফ করবে, বলেই রাগে দেয়ালে ঘুষি দিতে থাকে,
অয়নের কোনো খোঁজ সেদিন যে বাসা থেকে বের হয়েছে। তাঁরপর আর ফেরেনি,
রাত:১২:৩০
রোদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে,আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
রোদ: আমাদের বিচ্ছেদটা ছিলো। অনাঙ্ক্ষিত, আপনাকে কেন্দ্র করে আমি যে জগৎ সাজিয়ে গুছিয়ে গড়ে তুলে ছিলাম একটু একটু করে।হটাৎ একটা ঝড়ে সেই জগৎ ভেঙে চুড়ে চুড়মার হয়ে গেলো।আমি সব কিছু চুপচাপ দেখে গেলাম। সমুদ্রের নেয় তীরে ডোবা মানুষ অনেকক্ষন সাঁতার কাটার পর যখন কুলের দেখা না পেয়ে। শেষ মেষ নিয়তিকে মেনে নেয়৷সাধরে গ্রহন করে মৃত্যুে। তেমন আমরো যেনো কিছুই করার নেই।আমিও অসহায়ের মতো গ্রহন করে ছিলাম। নিষ্ঠুরতম বিচ্ছেদকে। আমার বুকের বা পাশটা ফাকা হয়ে গেলো। করুন শূন্যতা হাড়কাপা শীতের মতো হু হু করে কাঁপতে থাকলো সব সময়। তুমি নাই, এমন একটা দুঃসংবাদ আমি মেনে নিতে পারছিলাম না কিছুতেই, কেনো নাই, এটা তো কথা ছিলো না,
এই শব্দের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি নিজের বার বার ভুলত্রুটি খুঁজেছি,নিজের অজান্তেই অপরাধী কাট গড়ার নিজে দাঁড় করিয়েছি বার বার,
প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে বার বার মনে হয়েছে। তুমি ফিরবে হ্যা তোমাকে ফিরতে হবে। হ্যা ফিরেছো তুমি কিন্তু আমি যাকে ভালোবেসেছি, সে না অন্য কেউ, খুব অচেনা হয়ে গেলে তুমি, আমি ভাবতাম তোমার অভাব আমাকে যেমন করে পোড়ায়। তেমনি হয়তো আমার অভাবও তোমাকে এমর করে পোড়ায়। যে তোমাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি, যে তোমাকে আমি ভালোবেসেছি,সেই তুমি আজ খুব অচেনা হয়ে গেলে। আচ্ছা এত রিদয়হীন কেউ হয়। এতো নিষ্ঠুর একটা মানুষকে আমি ভালোবাসলাম কি করে? হাজার টা কাটার পথ মারিয়ে আমি যে দুয়ারে দাঁড়াতে চেয়েছি, সেখানে আমার অপেক্ষায় কেউ ছিলোই না। কে জানতো হাজার টা বাড়িয়ে দেওয়া হাত ফিরিয়ে দিয়ে, আমি যে হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। সেই হাতটা সবার আগে আমার হাত ছেড়ে দিবে। আচ্ছা কিভাবে সব কিছু ভুলে গেলেন। কিভাবে এতোটা নিষ্ঠুর হলেন। আমি তো আপনাকে খুব বেশি ভালোবেসেছি। আপনার আমার এই বিচ্ছেদ কেনো হলো। কি দোষ করেছিলাম আমি, যে এতোটা ঘৃণা করেন আমায়।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে।
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৯
দুপুর :১১:০০
একটা কফিশপে বসে পিটিং করছিলো শুভ্র।
হটাৎ কারো হাঁসির শব্দ পায়। সামনে তাকাতেই ভ্রু কুচকে তাকায় শুভ্র, রোদ বসে আসে সামনে৷ লোকটাকে দেখতে পারছে না, রোদকে অন্য কারো সাথে এইভাবে বসে থাকতে দেখে, রেগে গিয়ে জোরে থাপ্পড় বসায় রোদের গালে,,আসে পাশে সবাই তাকিয়ে আছে, শুভ্র রাগে যেনো শরীর জ্বলে যাচ্ছে!