বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১২

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১২
shanta moni

রোদ বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে রুমের ভিতরে ছিলো। আর বেড় হয়নি। দুপুরের রাতের খাবার রুমে বসেই খেয়েছে।
শুভ্রের এই রকম রাগ অস্তিরতা মানে সে বুঝতে পারছে না। কেমন যেনো সব কিছু এলোমেলো লাগছে। রাত তখন ১২:০০ কি ১২:৩০ হবে ছাদে দাড়িয়ে আছে সে। তার সাথে কি হচ্ছে নিজেই বুঝতে পারছে না। কি করবে আর কেনোই বা এই রকম হচ্ছে। এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিন্তু সে কোনে উত্তর খুঁজে পায় না।

হটাৎ পিছন থেকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুভ্রকে। শুভ্র পেছন ফিরে তাকায় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ সময় লাগে কি হয়েছে বুজতে। যখনি বুজতে পারে রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে।
শুভ্র: টিনা তুই এখানে এতো রাতে কি করছিস।
টিনা থতমত খেয়ে যায়। তাঁরপর বলে।
টিনা: আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। শুভ্র ভাই।
শুভ্রের ভ্রু কুচকে তাকায় এতো রাতে কি এমন কথা বলবে।
টিনা: আমি তোমাকে ভালোবাসি শুভ্র ভাই। I love you.. বলেই শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে। শুভ্র রেগে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে ঠাসসসসসস করে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড়ের তাল সামলাতে না পেড়ে টিনা নিচে পড়ে যায়।
শুভ্র রাগে কটমট করতে করতে বলে।
শুভ্র: তোকে আমি নিজের বোনের চোখে দেখছি। সব সময় আর তুই এই সব আজে বাজে কথা বলছিস। সাহস কি করে হয়। এই সব বলতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

টিনা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র আবার বলে উঠে
শুভ্র: Next টাইম যদি দেখি এই সব বলতে তো জানে মেরে দিব।
শুভ্র ছাদ থেকে নিচে চলে যায়।
টিনার ঘুম আসছিল না। তাই সে পানি খেতে আসছিলো ড্রয়িং দিকে রুমে হটাৎ দেখে শুভ্র ছাদের দিকে যায়। আর সেই সুযোগে আসছিল। ভালোবাসার কথা বলতে কিন্তু যে থাপ্পড় মেরেছে। জীবনে আর সামনে যাওয়ার সাহস পাবে না।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ে রোদ নামাজ পড়ে রুমেই বসে আছে।
হেনা বেগম শুভ্রের রুমে আসে। শুভ্র ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে অফিস যাবে। হটাৎ হেনা বেগম কে আয়নার ভিতর থেকে দেখে দাঁড়িয়ে আছে।

শুভ্র হেনা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে
শুভ্র: কিছু বলবে দাদি
হেনা বেগম বলেন: আমার নাতির কি সময় আছে আমার কথা শুনার, সে তো এখন বড় হয়ে গেছে।
শুভ্র মুচকি হাঁসে তাঁরপর হেনা বেগম কে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, কে বলেছে আমার সুইটহার্ট কথা আমি শুনি না, বলে তো দেখো
হেনা বেগম বলেন: শুভ্র দাদু ভাই তুই রোদের বিয়েটা হতে দিস না। তোর বাবা এই সব রাগ করে করতে আছে। তুই এই ভাবে সব ভুলে যাস না,
শুভ্রের হাত আগলা হয়ে আসে, শুভ্র পিছন ঘুরে বলে,
শুভ্র: অসম্ভব দাদি, আমি পারবো না, তোমরা সব ভুলে গেলেও, আমি কিছু ভুলিনি। সো ওই মেয়েকে আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না,

বলেই শুভ্র রুম থেকে বেরিয়ে যায়,
হেনা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন,, আল্লাহ কাছে দোয়া করেন যেনো সব ঠিক হয়ে যায়।
তিনদিন পর
এই তিন দিনে রোদকে এটা বারের জন্য শুভ্র দেখেনি। শুভ্রের অস্থিরতা যেনো আরো বেড়েছে রোদ বাসা থেকে বেড় হয়নি। এমন কি নিজের রুম থেকেও না। বিয়ের শপিং করার জন্য আকাশের পরিবার রোদকে নিয়ে যেতে চাইছিলো। কিন্তু সে যায়নি। কেনো যেনো এই দুনিয়া তার কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে।
অনেক কষ্টে নিজেকে বুঝিয়েছে। যে ওই মানুষ টা তার নয়। তাই সে তার আশা আর করবে না।
আচ্ছা একতরফা ভালোবাসা গুলো কেনো এমন হয়। একজন পাগলের মতো ভালোবাসে। আর একজন অবহেলা করে। যারা আমাদের চায়না। আমরা কেনো জানি তাদের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ি। আর সেইটা হয় আমাদের জীবনের সব থেকে বড় ভুল।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বসে আছে রোদ, পর্লারের লোক আসছে রোদকে সাজাতে, রোদকে দেখে মনে হচ্ছে সে একটা পুতুল যে যেই রকম ইচ্ছে নাচাচ্ছে।
রোদ শুভ্র আর তার ছোট বেলার এক সাথে ফটো হাতে নিয়ে কাঁদছে, আচ্ছা সত্যি কি আপনাকে আমি হারিয়ে ফেলবো। আপনি কখনোই বুঝবেন আমার ব্যাথা। আচ্ছা এই রকম নিষ্ঠুর ভাবে কেনো বদলে গেলেন। কথা ছিলো তো আপনি সারা জীবন আমার পাশে থাকবেন। তাহলে মাঝ পথে এসে কেনো আমার হাত ছেড়ে দিলেন। আমার ভুলটা কোথায় কি এমন ভুল করে ছিলাম। যে এতো বড়ো শাস্তি দিলেন আমায়। আমি কিভাবে মেনে নিব। আপনার যায়গা অন্য পুরুষকে যেখানে আমি নিজেই আপনার বউ হতে চেয়েছিলাম।
আমার না অনেক কষ্ট হচ্ছে শুভ্র ভাই। বুকটা খালি খালি লাগছে কালকের পড় আর আপনার রোদ আর আপনার থাকবে না। অন্য কারো দখলে চলে যাবে।
ফটো বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে রোদ।
চোখের পানি মুছে গলার স্বর শক্ত করে বলে

রোদ: আপনি যদি এতো নিষ্ঠুর হতে পারেন তো আমিও পারবো। আর নিজেকে দুর্বল করবো না।
আজকে পর থেকে আপনি নতুন এক রোদকে দেখবেন। বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় রোদ। ফটো রেখে দিয়ে। ফ্রেশ হয়ে আসে। পর্লারের লোকজন এসে গেছে। রোদকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে চলে যায়। গায়ে হলুদের শাড়ি সাথে কাঁচা গাঁদা ফুলের সাজ। যেনো মনে হচ্ছে কোনো হুরপরি।
রোদকে ছাদে এনে স্টেজে বসানো হয়। একে একে সবাই হলুদ দিচ্ছে। রোদের কিছু একটা মনে পড়তেই হেনা বেগম কে মিথ্যা বলে যে সে ওয়াশরুম যাবে। মিথ্যা বলে নিচে চলে আসে একটা রুমের সামনে দাঁড়ায়। রুমের দরজা হালকা চাপানো ছিলো। দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।

বেলকনিতে
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্র।
রোদ আস্তে করে ডাক দেয়।
রোদ: শুভ্র ভাই।
শুভ্র৷ কিছুটা চমকে যায়। এতো বছর পর চিরো চেনা কন্ঠের ডাক শুনে সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকায়।
রোদ দাড়িয়ে আছে। শুভ্র কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করে না। সে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে কেমন করে যেনো দেখছে।
রোদ শুভ্রের কাছে এসে হাত দিয়ে তুরি বাজায় তাঁরপর বলে
রোদ: কি করছেন ভাইয়া। বাড়িতে বিয়ে আর আপনি রুমে বসে আছেন। চলুন ছাদে চলুন বিয়ে দেখবেন না। বাড়ি থেকে এতো বড় আপদ বিদায় হচ্ছে।

রোদের কথা শুনেই শুভ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
রেগে গিয়ে রোদকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তাঁরপর বলে।
শু়ভ্র: তোর সাহস কি করে হলো আমার রুমে আসার হ্যা”
রোদ: রুমে তো পায়ে হেঁটে হেঁটে আসছি। তাতে আবার সাহস লাগবে কেনো।
শুভ্রের মেজাজ যেনো আরো খারাপ হয়ে যায়।
শুভ্র: বাহ মুখে দেখছি ভুলি ফুটছে। তা এতো উন্নতি কার কাছ থেকে হলো।
রোদ নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো।
রোদ: আমার হবু জামাই কাছ থেকে সমস্যা আপনার ছাড়ুন আমাকে আর যেতে দিন।
শুভ্র রোদের গাল চেপে ধরে আর বলে।
শুভ্র: ওই মুখে অন্য কারো নাম নিবি তো। জানে মেরে দিব।
রোদ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে ব্যাথায়। তাঁরপর বলে

রোদ: তো দাড়িয়ে কেনো আছেন। মেরে ফেলুন না। সব সময় বলেন মেরে ফেলবেন মেরে ফেলবেন। তো এখনো কিসের এতো অপেক্ষা মেরে ফেলুন না। আমার গল্প এইখানে শেষ করে দিন। আর এই ভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
শুভ্রের বুকের ভিতর ধক করে উঠে। হাত আগলা হয়ে আসে। রোদ কাঁদছে হটাৎ রোদ একটা কাজ করে বসে। শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে শুভ্র কিছুটা ঘাবড়ে যায়। রোদ কিছু বলে না, ধাক্কা দিয়ে শুভ্রকে ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় রোদ।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১১

আজকে রোদের বিয়ে লাল শাড়িতে বউ সাজে স্টেজে বসে আছে রোদ। ঠোঁট চেপে কান্না আটকাচ্ছে রোদ।
শুভ্র কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে। আকাশকে কবুল বলতে বল্লে আকাশ সাথে সাথে কবুল বলে দেয়। কিন্তু রোদ কিছুই বলছে না। অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে। শুভ্রের যেনো মনে হচ্ছে তার কলিজা কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই পাশ থেকে বার বার বলছে কবুল বলতে। রোদ তাঁরপর চোখ বন্ধ করে তিন বার কবুল বলে দেয়। কাজি সাহেব বলেন বিয়ে সম্পর্ন হয়ে গেছে। আপনরা এখন স্বামী স্ত্রী। শুভ্র জোরে চিৎকার দেয়।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here