বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৯

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৯
shanta moni

“হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ছুটে আসে শুভ্র’
শুভ্রের হাত পা থর থর করে কাঁপছে’ নিজের প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় যেনো চারদিক থেকে তাকে ঘিরে ধরেছে।
কিছুক্ষণ আগে রোমানের ফোনে কল দিয়ে কানে ধরতেই ভেসে আসে। রুহির কান্না মিশ্রিত কন্ঠে কিছু কথা।
রুহি: ভাইয়া রোদের অবস্থা খুব খারাপ’ রোদ হসপিটালে আছে। ডক্টর বলেছে রোদকে বাঁচাতে পারবে কিনা ঠিক বলতে পারছে না,ভাইয়া তুমি কোথায় সিটি হসপিটালে চলে আসো তাড়াতাড়ি আমার খুব ভয় করছে ভাইয়া।
শুভ্র আর কিছু বলতে পারে না।

হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে আসে হসপিটালের উদ্দেশ্য। একঘন্টা পথ ১৫ মিনিট এসে পড়ে। হসপিটালের ডুকে রোদের খোঁজ করে। কেবিনের দিকে ছুঁটে যায়। হেনা বেগমের অবস্থা খুবই খারাপ। রুহি কাঁদছে নিলা হেনা বেগমকে ধরে বসে আছে করিডোরে। রুহি শুভ্রকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই। শুভ্রের চোখ অসম্ভব লাল। চেহারা ফেকাসে, সাদা শার্টে রক্ত লেগে আছে। চুল গুলো অগোছালো’ হাতে রক্ত শুকিয়ে গেছে। রোমান নিলয় শুভ্রকে এই অবস্থায় দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। যে ছেলে সব সময় পরিপাটি চলতে পছন্দ করে’ তার এই হাল হলো কি করে। রুহি কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুহি: ভাইয়া রোদ কথা বলছে না’ অনেক রক্ত বেড় হইছে রোদের ভাইয়া তুমি রোদকে ঠিক করে দাও। ডক্টর বেড়িয়ে আসে। রোমান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় ডক্টর কাছে। রোমান বিচিলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে’
রোমান: ডক্টর রোদের এখন কি অবস্থা?
ডক্টর মুখে চিন্তার ছাপ কিছুটা হতাশা নিয়ে বলে উঠে
ডক্টর: মিস্টার রোমান অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। তবে যতক্ষণ জ্ঞান না ফিরে ততক্ষণে কিছুই বলতে পারছি না। রোগী নিজ থেকেই কোনো রেসপন্স করছে না। আমার যতটুকু সম্ভব মনে হচ্ছে রোগী নিজেই বাঁচার ইচ্ছে ছেড়ে দিয়েছেন। যার জন্য কোনো রেসপন্স করছে না। ২৪ ঘন্টা মধ্যে যদি জ্ঞান না ফিরে তো রোগীকে আর বাঁচানো যাবে না। মাথার আঘাতটা অনেক গভীর, অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই প্লিজ আপনারা সবাই আল্লাহ ডাকুন। আমাদের হাতে যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি। বাকিটা আল্লাহ হাতে।

কথা গুলো বলেই ডক্টর চলে যায়।
শুভ্র ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে।
শুভ্রের মনে পড়ে যায়। রোদের প্রতি করা নিজের বাজে ব্যবহার’ অত্যাচারের কথা।
বুকের বাম পাশে চিন চিন করে ব্যাথা শুরু হয়েছে। কিছু একটা হারানোর ভয়ে শুভ্রের হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে।
শুভ্র দৌড়ে কেবিনে ডুকতে যায়। তখন ডক্টর এসে শুভ্রের সামনে দাঁড়ায়’ ডক্টর শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে।
ডক্টর : মিস্টার শুভ এখন I CU ভিতরে কারো যাওয়ার অনুমতি নেই। প্লিজ আপনি এখান থেকে সরে যান। রোগী সমস্যা হলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না।
শুভ্র রাগে ডক্টর কর্লাট চেঁপে ধরে দাঁত কটমট করে বলে।
শুভ্র: কখন থেকে বলে যাচ্ছিস। বাঁচবে না, বাঁচানো যাবে না, এই তোদের কি বাল ফালাইতে রাখছি হ্যা। এখনো আমার বউ জ্ঞান কেনো ফিরলো না।

ডাক্তারি না করে বসে বসে মুড়ি খা। আমাকে আমার বউয়ের কাছে যেতে দে।
হেনা বেগম এতোক্ষণ শুভ্রকে খেয়াল করেনি। সবাই কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রোমান তাড়াতাড়ি এসে শুভ্রের কাছ থেকে ডাক্তারকে ছাড়াতে নেই। কিন্তু কোনো ভাবেই শুভ্রের সাথে পেরে উঠে না। ডক্টর তো ভয়ে শেষ। কারন সে ভালো করেই চিনে এই শুভ্র চৌধুরীকে বাংলাদেশের টপ বিজনেস ম্যান। এবং অনেক ক্ষমতাবান লোক। অনেক বদমেজাজি। আসে পাশে লোকরা তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ ভিডিও করছে। নিলয় গিয়ে সবাই ধমক দিয়ে মানুষের ভীড় সরিয়ে দেয়। হেনা বেগম আর সহ্য করতে পারে না। শুভ্র পুড়ো হসপিটালে ভাংচুর শুরু করে দিয়েছে।
শুভ্র ডক্টরকে মেরে বেহাল অবস্থা করে ফেলেছে। হেনা বেগম শুভ্রের কাছে গিয়ে ঠাসসসসসস ঠাসসসসস করে দুটো থাপ্পর বসিয়ে দেয়। শুভ্র ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। পাশে ডক্টর নার্স সবাই ভয়ে কাঁপছে পাশের ডক্টর সবাই নিয়ে যাই। শুভ্র হেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে। শুভ্রের এমন কান্নায় সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। হেনা বেগম কিছুটা অবাক হন। কেউ এই শুভ্রকে চিনতে পারছে না। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। শুভ্র কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে।

শুভ্র: দাদি ওদের সবাই বলোনা, রোদের কাছে আমায় যেতে দিতে। দাদি প্লিজ, আমার পাখিটার কিছু হলে আমি মরে যাবো’ একে বারে মরে যাবো । আমার রোদকে চাই দাদি রোদ আমার চাই।
সবাই অবাক শুভ্রের এমন পাগলামো দেখে’ হেনা বেগম শুভ্রকে কি বলে শান্তনা দিবে। সে তো নিজেই ভয়ে আছে’ শুভ্রকে সামলানো অনেকটা বিপদজনক হয়ে উঠেছে। রোমান শুভ্রের পিছন থেকে এসে ঘাড়ে ইনজেকশন পুস করে দেয়। কয়েক মিনিট যেতেই শুভ্র শান্ত হয়ে যাই। শুভ্রকে নিয়ে কেবিনে শুয়ে দেই।
অয়ন দূর থেকে সব কিছুই দেখছিল। রোদের জন্য অয়নের কষ্ট হচ্ছে। শুভ্রের এমন পাগলামো করার হটাৎ কেউ বুঝতে পারছেনা। হেনা বেগম মনে মনে শুভ্রের বদলে যাওয়াতে খুশি হলেও রোদের এই অবস্থা জন্য ভিষন ভয় হচ্ছে। যদি রোদের কিছু একটা হয়ে যায়। শুভ্রকে কি করবে। রোদের কথা মনে আসতেই হেনা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠে। আল্লাহ যেনো তার রোদকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়।

হেনা বেগম মনে পড়ে যায়। রোদের সেই রক্ত মাখা মুখ।
মাঝ রাতে হটাৎ ঘুম ভেঙে যায়’ রোদের
বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় ঘড়ির দিকে তাকায় রাত ২:৩০ পানি খেতে নেয়। পানির বোতলে পানি না পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়। শরীর প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়। রোদ ধীর পায়ে হেঁটে যায়। ড্রয়িং রুমের দিকে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে নিবে এমন সময় পিছন থেকে কারো জোড়ে ধাক্কায় নিচে পড়ে যায়। চিৎকার দেওয়ার সময় যেনো পায়না।
ভোর সকাল ৪:৩০ বাড়ির কাজের মেয়ে হটাৎ চোখ পড়ে রোদের ফ্লোরে পড়ে থাকা নিথর শরীরের দিকে। মাথা ফেটে রক্ত পুড়ো ড্রয়িং রুম লাল হয়ে আছে। জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। হেনা বেগম রুহি অয়ন রোমান সবাই নিচে জুঁটে আসে। সবাই রোদকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যায়৷ শুভ্রকে সবাই ফোন দিচ্ছে কিন্তু কেউ ফোনে পাচ্ছে না।

বর্তমান
চার ঘন্টা পড় শুভ্র চোখ খুলে তাকায় পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। নিজেকে বেডে শুয়ে থাকতে দেখে, কপাল কুচকে ফেলে কিছু একটা মনে আসতেই, তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়। হাতের ব্যান্ডেজ করানো। হাতের ক্যানোলা একটানে ছিড়ে ফেলে দেয়। নার্স ডক্টর আটকাতে চেয়েও পারে না।
শুভ্র গিয়ে রোদের কাছে যেতে নেয়। রোদকে ICU তে রাখা হয়েছে। ডক্টর আটকাতে যায়। রোমান ডক্টর থামিয়ে দিয়ে বলে।

রোমান: ডক্টর প্লিজ শুভ্রকে যেতে দিন। তা না হলে এর বিপরীত কিছু ঘটে যাবে।
ডক্টর আর কিছু বলে না। রোদের কেবিন থেকে নার্স সবাই বেড় হয়ে আসে।
শুভ্র কেবিনের দরজা খুলে রোদের দিকে তাকায়। রোদের মাথায় ব্যান্ডেজ করা। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। শুভ্রের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে। শুভ্র রোদের পাশে বসে এক ধ্যানে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র রোদের একহাত নিজের হাতের মুঠে নিয়ে আলতো চুমু খায়। শুভ্রের চোখের পানিতে রোদের হাত ভিজে যাচ্ছে। শুভ্র অসহায় কন্ঠে বলে উঠে।
শুভ্র: এই রোদ, ওঠ না প্লিজ, আমার নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। প্লিজ এমন করিস না। আর কষ্ট দিব না, তোকে সত্যি বলছি প্লিজ।
শুভ্রের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
শুভ্র পুনরায় আবার বলে উঠে

শুভ্র: এই পাখি ওঠ না প্লিজ’ একটু রেসপন্স কর। ভিষন ভয় লাগছে আমার। আর কখনো তোকে কষ্ট দিব না। প্লিজ দেখ আমার সত্যি সত্যি কিন্তু কষ্ট হচ্ছে। এই রোদ।
রোদের কোনো সারা শব্দ নেই। শুভ্রের মনে হচ্ছে তার কলিজাটা কেউ ছিড়ে নিচ্ছে। নিজেকে এতোটা অসহায় কখনো মনে করেনি। কেনো তার বউ উঠছে না।
শুভ্র: বউ এই বউ, অনেক অনেক সরি বউ প্লিজ একটু কথা বল। আমি তোকে কষ্ট দিছি। তার প্রতিশোধ নিচ্ছিস। এমন করিস না, প্লিজ বউ। আমি তো তোকে মেরেছি। তুইও আমাকে মার, একে বারে মেরে ফেল। তাঁরপর একটু কথা বল বউ।
রোদের কোনো রেসপন্স করে না।
রোদকে রেসপন্স করতে না দেখে, শুভ্র রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে। পুড়ো শরীর রাগে জ্বলছে যাচ্ছে। শুভ্র রাগে কটমট করতে করতে বলে উঠে।

শুভ্র: এই টুকু ৪০০ গ্রামের বাচ্চা আমাকে জালাস না। খুব মরার সখ হয়েছে তোর। কতোবার সরি বলছি তাতেও হচ্ছে না। ওকে মরবি না তুই, মর যাহ, আগে আমি মরবো তাঁরপর তুই মরিস গিয়ে যাহ।
শুভ্র কথা শেষ করেই বন্দুক বেড় করে নিজের মাথায় তাক করে।
শুভ্র বন্দুক নিজের মাথায় তাক করে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে।
শুভ্র: মরার সখ হয়েছে তাই না। আচ্ছা ঠিক আছে, মর তুই, আমিও নিজেকে শেষ করে দিলাম এখানে,
হেনা বেগম বাহিরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন। শুভ্রকে হাতে বন্দুক দেখে হেনা বেগম রোমান ডক্তর হন্তদন্ত হয়ে কেবিনের ভিতর ডুকে। রোদ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। রোদকে ডক্টর এই রকম অবস্থা দেখে। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে।

ডক্টর : রোগী রেসপন্স করছে। আপনারা সবাই কেবিনের বাহিরে যান প্লিজ।
শুভ্রকে জোর করে হেনা বেগম রোমান কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে যায়।
শুভ্র হেনা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। হেনা বেগমকে শুভ্র বলে উঠে।
শুভ্র: আমি আমার ছোট্ট ফুলের খেয়াল রাখতে পারিনি দাদি৷ খুব কষ্ট দিয়েছি আমি আমার ছোট্ট বউটাকে। দাদি আমার বুকটা খালি খালি লাগছে, আমার পরিটার কিছু হলে আমি মরে যাবো দাদি মরে যাবো।
হেনা বেগম শুভ্রের মাথায় হাত ভুলিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলে।

একমাস পর আজকে রোদকে বাসায় নিয়ে যাবে। আরাফ চৌধুরী এসেছেন। রোদের পুরোপুরি সুস্থ হতে একমাস মতো লেগে যায়৷ সেইদিন রাতেই রোদের জ্ঞান ফিরে। রোদের জ্ঞান ফিরার পর থেকে শুভ্রকে দেখেনি রোদ’ শুভ্র এই একমাস আড়াল থেকে রোদের খেয়াল রেখেছে। রোদ রাতে ঘুমালে সারা রাত রোদের পাশে বসে থেকেছে শুভ্র। এই একটা মাসে শুভ্র রাতে একদিনের জন্য ঘুমাইনি৷ সারারাত রোদের পাশেই ছিল৷ আবার সকাল হবার আগেই রোদের কাছ থেকে বেড়িয়ে গেছে।
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে শুভ্রের, তার পরিটা কি তাকে মাফ করে নিজের কাছে টানবে নাকি দূরে সরিয়ে দিবে।
সকাল ১০:০০

হসপিটাল থেকে রোদকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসে সবাই। রোদের অসুস্থ হওয়ার খবর শুনে আরাফ চৌধুরী দেশে চলে আসেন। হাঁসি বেগম ১৫ দিন পর আসেন। এসেই শুনে রোদের এই অবস্থা মনে মনে অনেকটা খুশিও হয়।
নিলা রুহি মিলে রোদকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। ঠিকমত শুয়ে দিয়ে রুহি রোদের জন্য খাবার আনতে রোদের রুম থেকে বেড়িয়ে, নিচে আসতে নেয়। এমন সময় রোমান এসে সামনে দাঁড়ায়।
রুহি ভ্রু কুচকে রোমানের দিকে তাকায়,
রোমান মুচকি হেঁসে রুহিকে বলে উঠে।
রোমান: কোথায় যাচ্ছো রুহি?
রুহি; জাহান্নামে যাচ্ছি, যাবেন।
রোমান: তোমার সাথে আমি জাহান্নামে যেতেও রাজি ”
রুহি রাগে ফুসতে থাকে ”

রোমান রুহিকে রাগতে দেখে ঠোঁট কাঁমড়ে হাঁসে। কিছু একটা ভেবে রুহির হাত ধরে টেনে কিছুটা আড়ালে নিয়ে আসে। রুহি রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে, তখনি রোমান রুহির মুখ চেঁপে ধরে’ বলে উঠে
রোমান: I love you রুহি!
রুহি রোমানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রেগে চলে যেতে যেতে বলে উঠে,
রুহি: এই সব মজা আমার সাথে করবেন না” রোমান ভাই, এই গুলো আমার একদম পছন্দ না।
রোমান বোকা বনে যায়। সে কতোটা সিরিয়াস হয়ে এই মেয়েকে প্রপোজ করলো। আর এই মেয়ে কিনা, মজা মনে হলো। নিজের কপালে হাত দেয় রোমান।
মনে মনে বলে উঠে
রোমান: জীবনে প্রথম কাউকে প্রপোজ করলি। এতো সিরিয়াস হয়ে সেও কিনা মজা মনে করলো ছেহ” বালের কপাল।

রুহি রোদের জন্য খাবার বানাতে বানাতে মনে মনে বলে উঠে,
রুহি: কালো মেয়েদের কখনো কোনো সুন্দর পুরুষ ভালোবাসতে পারে না। আর আমার কাছে মনে হয়, রোমান ভাই আমার সাথে মজা করছে ব্যাস তা ছাড়া কিছুই না। আমার মতো একটা কালো মেয়েকে রোমান ভাইয়ের মতো একজন সুর্দশন পুরুষ কখনো ভালোবাসতে পারে না। এগুলো নেহাতি অন্যায়। আর তাঁর মতো একজন সুন্দর পুরুষের পাশে, একজন রমনীকেই মানাবে। আমার মতো কালিকে না।
বড্ড অভিমান নিয়ে কথা গুলো মনে মনে বলে রুহি।
রোমান ভাই হচ্ছে আকাশের চাঁদ আর চাঁদের পাশে যদি আমার মতো কালো পেত্নী দাঁড়ায় তাহলে সেটা চাঁদের অনেক বড় কলঙ্ক মনে হবে।

রুহি রোমানের ভাবনা মাথা থেকে জেরে ফেলে। রোদের জন্য খাবার নিয়ে উপরে যায়। রুহিকে আসতে দেখে নীলা যায় অন্য রুমে ফ্রেশ হতে।
আগের মতো আর নিলয়ের সাথে ঝগড়া হয় না’ নীলার আগে নিলয় গায়ে পড়ে এসে ঝগড়া করতো। কিন্তু এখন কেমন যেনো নীলাকে দেখলে এরিয়ে যায়। নীলাকে নিলয়ের এরিয়ে যাওয়ার কারন সে নিজে হলেও কেনো যানি মানতে পারছে না। নিজেই নিলয়কে বারন করেছে তার সাথে যেনো কথা না বলে,তাহলে সে কখনোই আর এই বাড়িতে আসবে না।

কিছুদিন আগে নিলয় নিলা প্রপোজ করে আর নিলা অনেক রেগে যায়। এবং নিলয়কে অনেক কথা শুনায়। নিলয় নীলার এমন ব্যবহারে অনেকটা কষ্ট পেয়েছে। এতো হাঁসি খুঁশি একটা ছেলে হটাৎ কারেই একে বারে চুপচাপ হয়ে গেছে। তা বাড়ির কারো নজরে পড়েনি।রোদের অসুস্থতার জন্য নিলয়ের এমন পরিবর্তন অন্য কেউ খেয়াল না করলেও নিলা ঠিকই খেয়াল করেছে। নিলয় নিলা এখন সব বিষয় এরিয়ে যায়৷ নিলা কেমন যানি বুকের ভিতর চিন চিন করে ব্যাথা করছে। নিলা নিলয়ের সাথে একদিন ঝগড়া না করলে, অশান্তি লাগে নিলা আর কোনো কিছুই ভাবতে পারেনা। সে ভালো করেই বুঝে গেছে। এই হাদারাম কে সে ভালোবেসে ফেলেছে। নিলা নিলয়ের রুমে গিয়ে কোনো কিছু না ভেবেই ডুকে পড়ে। নিলয় শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চুল মুছতে ছিল। কোমড়ে দোয়ালে পেঁচানো। নিলা হুট করে নিলয়কে জড়িয়ে ধরে। নিলয় প্রথমে অবাক হয়। তবে নিলাকে দেখে খুশিতে গদ গদ হয়ে যায়। নিলা নিলয়কে ছাড়তেই নিলয় পাথরের মূর্তি মত দাঁড়িয়ে আছে। হাতে কোমড়ের তোয়ালে ধরা”
নীলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নীলয়ের দিকে।

নিলয় উরাদূড়া নাচতে থাকে। এই দিকে তার তোয়ালে ফ্লোরে পড়ে আছে। সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই।
নিলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে নিজের চোখে হাত রেখে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। নীলার চিৎকারে হুস আসে নিলয়ের নিজের দিকে তাকিয়ে, তাড়াতাড়ি তোয়ালে পেচিয়ে ওয়াশরুমে দৌড়ে দেয়৷ আর নিলা রুমের বাহিরে।
নিলয় আফসোস করে বলে উঠে
নিলয়: হে আল্লাহ খুশি তো দিলা। কিন্তু মানসম্মান সহিসালামত রাখতে পারলে না। এই মাইয়ার সামনে আসলেই কেনো আমার সব খুলে যায়।
নিলা ভিষন লজ্জা লাগছে, আসলেই এই নিলয়ের বাচ্চাটা মানুষ হবেনা। গাঁধাই থেকে যাবে।

এইদিকে
রিয়ার গালে ঠাসসস ঠাসসস করে থাপ্পড় দেয়” হাঁসি বেগম রাগী চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে।
হাঁসি বেগম : তোমার এই বোকামির জন্য আমরা সব হারাতাম। রোদের কিছু হয়ে গেলে। এই বিষয় সম্পতি সব কিছু অনাত আশ্রমে চলে যেতো।
রিয়া রাগে ফুসতে ফুসতে বলে।
রিয়া: রোদকে যতদিন আমি মারতে না পারবো। ততদিনে আমার শান্তি নেই।
হাঁসি বেগম শান্ত কন্ঠে বলে উঠে
হাঁসি বেগম : মাথা ঠান্ডা করে সব কিছু করতে হবে রিয়া। একবার যদি কেউ জানতে পারে তো আমরা শেষ। তাই আর কোনো বোকামি করবে না। রোদ আমাদের বড় হাতিয়ার, রোদের কিছু হলে আমরা সব হারাবো।
হাঁসি বেগম কিছুক্ষণ থেমে আবার রিয়াকে বলে উঠে,
হাঁসি বেগম : সবার সামনে নরর্মাল থাকবে। কেউ যেনো কিছু বুঝতে না পারে ওকে।
রিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি জানায়।

মাঝরাতে হটাৎ ঘুম ভেঙে যায় রোদের।
মনে হচ্ছে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, বুকে ভারি কিছু অনুভব করে রোদ।
বিছানা থেকে উঠতে নেয়। কিন্তু কেউ তাকে আষ্ঠে পিষ্টে জড়িয়ে আছে।
রোদের চোখে এখনো ঘুম ঘুম ভাব
মোচড়া মুচড়ি করতে থাকে।
হটাৎ কারো ঘুম জড়ানো কন্ঠ ভেসে আসে।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৮

প্লিজ বউ ডিস্টার্ব করিস না। বড্ড ক্লান্ত আমি’ একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে।
রোদের পুড়ো শরীর শিউরে ওঠে,
মনে হচ্ছে তাকে কোনো সাপ পেচিয়ে ধরে আছে।
রোদের চোখে ঘুম থাকায় সেও ধীরে ধীরে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।
সকাল : ৭:০০ টা

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here