বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩৮

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩৮
shanta moni

সকাল ৭ টা, রোদ ঘুম থেকে অনেক আগেই উঠেছে, নিজের রুমে জামা কাপড় গুছিয়ে ছিলো এতোক্ষণ। তিন দিনের ট্রুর অল্প কিছু জামা কাপড় নিয়েছে। সাথে রুহির জামা কাপড় গুছিয়ে, সব কাজ শেষ করে, রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। রুহির রুমে কাছে, রুহি রুমে ডুকে দেখে, রুহি বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে, রোদ রুহিকে দেখেই আনমনে হাঁসে। আস্তে করে কয় একবার রুহিকে ডাকে রুহি হুম বলে, আমার ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়। রোদ রুহির কানের কাছে মুখ নিয়ে জোড়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে…
রোদ: এই রুহি বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। তাড়াতাড়ি উঠে যাহ, আমাদের পালাতে হবে।
রুহি ঘুমের মধ্যে লাফ দিয়ে উঠে, দৌড়াতে থাকে আর বলতে থাকে…
রুহি: রোদ তাড়াতাড়ি চল, পালা ডাকাত পড়েছে, তাড়াতাড়ি
রুহিকে এমন করতে দেখে রোদ হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছে…

রোদের এমন অট্টহাসিতে রুহি আস্তে চোখ খুলে তাকায়, সামনে তাকাতেই দেখে রোদ হাঁসছে, রুহি নিজের দিকে খেয়াল করতে দেখে, সে গায়ে একটা পাতলা কম্বল জাড়ানো, আর এখন তো সকাল হয়ে গেছে। এখন ডাকাত আসলো কোথা থেকে, রুহি রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে,,
রুহি: এই রোদ, তুই আমাকে এতো সকাল সকাল ডাকলি কেনো হ্যা। আমার এতো সুন্দর ঘুম’ নষ্ট কেনো করলি হ্যা…
রোদ রুহি দিকে এগিয়ে এসে, রুহি সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে…
রোদ: অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে, তার জন্য এতো সকাল সকাল ডেকেছি। আমার প্রিয় ননদী…
রুহি মন খারাপ করে বলে উঠে…
রুহি: হইছে আমার কোনো সারপ্রাইজ লাগবে না। যাও এখান থেকে ঘুমাবো আমি…
রোদ: খবরটা’ শুনলে তোর চোখের ঘুম পালিয়ে যাবে। এখন বল শুনবি কিনা..
রুহি: ওকে বলো, কি এমন খবর, শুনলে চোখের ঘুম পালিয়ে যাবে। বলো বলো…
রোদ হেঁসে বলে উঠে..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রোদ: আমরা ট্রুরে যাবো। শুভ্র ভাই অনুমতি দিয়েছে। আর সব কিছু ঠিকঠাক করে এসেছে।
রুহি প্রথমে অবাক হলেও, পড়ে দৌড়ে এসে রোদ জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,
রুহি: ইউ আর জিনিয়ার্স ভাবিজী,, এই না হলে ভাবি আমার। ইশশ কতো যে খুঁশি লাগছে, ইচ্ছে করছে লুঙ্গি ডান্স দেই।
রুহি রোদকে ছেড়ে,, বলে উঠে..
রুহি: ভাবি আমি একটু লুঙ্গি ডান্স দেই..
এতো খুশি আর নিজের মধ্যে চেপে রাখতে পারছিনা।
রোদ ভ্রু কুচকে তাকায় রুহির দিকে, রুহিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…
রোদ: এখন তুই এখানে বসে লুঙ্গি ডান্স দে, তোকে আর ট্রুরে যেতে হবে না।
রুহি রোদের দিকে ফিরে তাকায়,,
রোদ রুহিকে তাকাতে দেখে, বলে উঠে

রোদ: ৯:০০ টা সময় কলেজ উপস্থিত থাকতে বলছে। এখন প্রায় আট’টা বেজে আসছে। তুই তোর লুঙ্গি ডান্স ট্রুর থেকে এসে দিস। এখন প্লিজ রেডি হয়ে, কিছু খেয়ে আমাদের বেড় হতে হবে।
রুহি রোদের কথা শুনে দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়। রোদ এইদিকে নিলাকেও রেডি হয়ে থাকতে বলেছে। নিলা তো বেজায় খুশি,
রুহি, রোদ, নিলা, এক ড্রেস পড়েছে। হালকা গোলাপি রঙের গাউন, সাথে ম্যাচিং হিজাব। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তিন জনকে।

সকাল ৯:০০ টা,,চারদিকে সূর্য মামা তার আলো ছড়াচ্ছে, রোদ, রুহি নিলা দাঁড়িয়ে আছে। বাসের সামনে, রুহি নিলা সেলফি তোলা নিয়ে ব্যস্ত তাদের দুজনকে দেখলেই বোঝা যায়। তার ঠিক কতোটা খুঁশি। রোদ আশে পাশে চোখ বোলাচ্ছে। পাশে আরো অনেক সিনিয়র জুনিয়র স্টুডেন্ট, রোদ কিছুক্ষণ ধরে খেয়াল করছে, কিছু লোক কেমন করে যেনো দেখছে, প্রথমে বিষয়’টা পাত্তা না দিলেও, কিন্তু একই ভাবে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে। কেমন যেনো সন্দেহ হয় রোদের। এইভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে। আর সে তো শালীন পোশাক পড়েছে। মুখও মাস্ক দিয়ে ডাকা,
এই সব চিন্তা করেছিল রোদ। এমন সময় পিছন থেকে কেউ বলে উঠে.

❝এই যে মিস শুনছেন..!
রোদ সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকায়..
পিছনে একটা ছেলে দাঁড়ানো। শ্যামবর্ন গায়ের রঙ, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা,
হাঁসি হাঁসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,
ছেলেটি হটাৎ বলে উঠে,,
“মিস আমাকে একটু সাইড দিবেন প্লিজ,,
রোদ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা সম্মতি দিয়ে সরে যায়। আসে পাশে অনেক মানুষের ভিড়।
রোদ আর সেই দিকে পাত্তা দেইনা। রুহি নিলার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এইদিকে শুভ্র অফিসের একটা জরুরি কাজে, দেশের বাহিরে যেতে হবে। কিছু দিনের জন্য, এই চার, পাঁচ দিন, লাগবে।
শুভ্রের ফ্লাইট দুপুর ২টা, অফিসে বসে অফিসের বিষয় কথা বলেছিল। টিকিট কাটাও শেষ। কেনো জানি মনটা সায় দিচ্ছে না যেতে। অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে।

মনটা অশান্ত লাগছে,, মাথার চুল গুলো শক্ত হতে চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে। ঘড়ির দিকে তাকায়, ঘড়ির কাটা ১১:০০ টা দিকে,,এখন হয়তো রোদের বাস ছেড়ে দিয়েছে। শুভ্র হাতে ফোন নিয়ে রোদকে কল দেয়। রোদ বাসে হেলান দিয়ে বসে ছিল। পাশে নিলা বসা,
ফোন ব্যাগের ভেতর শব্দ হতেই, সাথে সাথে চেপে ধরে দুই হাত দিয়ে, রুহি নিলা কেউ জানে না। শুভ্র ফোন দিছে রোদকে, জানলে হয়তো, কতো কথা বলতো, তাকে নিয়ে মজা উড়াতো। তাই রোদ বলেনি। কল বাজতে বাজতে কেটে যায়। রোদ তাড়াতাড়ি ফোন সাইলেন্ট করে। পুনরায় আবার ফোনে কল ভেঁসে উঠে, ফোন শুভ্র নামটা জল জল করছে, রোদের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে, মনে মনে বলে উঠে,,
“এই লোক কেনো কল করছে এখন, আশে পাশে মানুষের কথা ভেসে আসছে। বাসে স্পট মিউজিক বাজছে, কল বাজতে বাজতে আবার কল কেটে যায়।

কল ধরবে কি ধরবে না, করতে করতে চার,পাঁচ বার কল বাজতে বাজতে কেটে যায়।
এইদিকে শুভ্র রাগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে উঠে…
শুভ্র: বিয়াদব মেয়ে, কতো বার বলেছি,কল দিলে সাথে সাথে ধরতে কিন্তু এই বিয়াদব মেয়ের কাজ হচ্ছে, তেরামি করা,,,
শুভ্র রেগে রুহি ফোনে কল দেয়। কল বাজতেই রুহি সাথে সাথে কল রিসিভ করে। কল রিসিভ করতেই শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,,
শুভ্র: রোদ কই,,রুহি,,

রুহি রোদের এক সিট সামনেই বসে ছিলো। রুহি পিছনে তাকিয়ে বলে উঠে…
রুহি: ভাইয়া রোদ তো,বসে আছে,,
শুভ্র অপর পাশ থেকে পুনরায় বলে উঠে,,
শুভ্র:রোদের কাছে ফোন,টা দে তো,,ফাস্ট
রুহি নিজের সিট থেকে উঠে রোদের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে..
রুহি: এই নে কথা বলবে,,
রোদ ভ্রু কুচকে তাকায় রুহির দিকে,
রুহি কোনো কিছু না বলেই, রোদের কাছে ফোন দিয়ে নিজের সিটে বসে পড়ে,
রোদ ফোন কানে কাছে নিয়ে হ্যালো বলতেই শুভ্র রেগে ফোনের অপর পাশ থেকে বলে উঠে..
শুভ্র: এই তোকে ফোন দিয়েছি, কিসের জন্য হ্যা..
রোদ চুপ করে আছে,,

শুভ্র রোদকে চুপ থাকতে দেখে আরো রেগে গিয়ে বলে উঠে,,
শুভ্র: কি হলো কথা বলছিস, না কেনো।
রোদ এখনো চুপ করেই,আছে, আসলে সে ভয় অস্থিতে কথা বলতে পারছে না।
শুভ্র ফোনের অপর পাশ থেকে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে।
রোদ ফোনের অপর পাশ থেকে, শুভ্রের নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে। বাস চলছে তার আপন গতিতে,
শুভ্র শান্ত হয়ে, ফোনের অপর পাশ থেকে বলে উঠে,,
শুভ্র: বউ বউ,
শুভ্রের এমন নেশালো কন্ঠে বউ ডাক শুনে পুড়ো শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে রোদ নিজেকে স্বাভাবিক করে শান্ত কন্ঠে বলে উঠে…
রোদ: জ্বী ভাইয়া বলুন..?
শুভ্রের ধমিয়ে রাখা রাগ যেনো দাউ দাউ করে আরো আবার বেড়ে যায়।
রাগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে উঠে,,,

শুভ্র: এই বে*ডি আমি তোর ভাই না, বিয়ে করা এক মাত্র ভা***** লাগি বুঝেছিস।
রোদ শুভ্রের এমন কথায় থতমত খেয়ে যায়। শুভ্র রেগে ফোন কেটে দেয়। এই মেয়ের সাথে কথা বললে আমার মেজাজ খারাপ করে দিবে। শুভ্র ফোন কেটে বিড়বিড় করে বলে উঠে,,
‘বা*লের জীবন ছেহ, বউ ছুয়ার আগেই সেন্সলেস কথা বলার আগেই ভাইয়া ভাইয়া করে।
এইদিকে রোদ ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। বাস ঢাকা পেরিয়ে রাঙামাটি দিকে চলছে। রাঙামাটি পৌঁছাতে হয়তো, ৮/৯ ঘন্টা লাগবে। রোদের এই প্রথম দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া।
অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
দুপুর একটা বাস একটা হোটেল সামনে থামে৷ সবাই দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে
আবার বাস নিজ গন্তব্য চলে। রুহি নিলা রোদকে যে ফোন দিয়েছে শুভ্র সেই বিষয়টা যেনে রোদকে বার বার লজ্জা দিচ্ছে,,নিলা হেঁসে বলে উঠে,,,

নীলা: তলে তলে ট্যাম্পু চালাও মনু তোমরা,, আর আমরা বললে হরতাল হ্যা..
রুহি নীলার কথায় সায় জানায়, রোদের কান দিয়ে গরম দোয়া বেড় হচ্ছে,, রোদ জানালা পাশে বাড়িরের দিকে তাকায়।
মনে মনে ভাবতে থাকে..
রোদ: আচ্ছা চোখের সামনে যা দেখছে, তা কি সব সময় সত্যি হয়। হয়না সত্যি, ওরা সবাই মনে করছে শুভ্র ভাইয়ের সাথে আমার সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।
আচ্ছা আসলেই কি সব ঠিক হয়েছে।
না কিছুই ঠিক হয়নি।
মন বলছে শুভ্রের করা প্রতিটা আঘাত মাফ করে কাছে টেনে নিতে, আর মস্তিষ্ক বলছে। নাহ রোদ যে মানুষ’টা তোকে এতো আঘাত দিছে, তাকে এতো সহজে মাফ করে দিস না। ভুলে যাস না৷ সাত বছর প্রতিটা অভিশপ্ত রাতের কথা।
এমন হাজারো চিন্তা করেছিল রোদ। বাহিরের দিকে তাকিয়ে। রুহি নীলা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
এমন সময় ফোনে টুং করে শব্দ ভেসে আসে। রোদ ফোনের দিকে তাকায়, ফোনের স্কিনে শুভ্রের নাম্বার থেকে মেসেজ।

মেসেজ ওপেন করতেই, জল জল করে উঠে, শুভ্রের লেখা মেসেজ,,
শুভ্র: অশান্ত মনটা শান্ত করতে পারছি না বউ।আমার প্রচুর ভিটামিন অভাব হচ্ছে বউ। শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বার বার। মনটা শুধু বউ বউ করছে। এ কেমন যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না। ভয়ংকর কিছু করতে ইচ্ছে হচ্ছে পাখি। খুব করে ইচ্ছে করছে একটু ছুঁয়ে দিতে।
শুভ্রের এমন মেসেজ রোদের সর্ব অঙ্গে শিহরণ বয়ে যায়। ফোনটা অফ করে তাড়াতাড়ি ব্যাগে ভিতর ভরে নেয়।
এইদিকে শুভ্র এয়ারপোর্টে, কোনো ভাবেই তার যেতে ইচ্ছে করছেনা। ভিষন অস্থির লাগছে, বড্ড মনে পড়ছে তার ছোট ফুল’টাকে শুভ্র মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়। বিদেশ থেকে নিজের কাজ শেষ করে ফিরেই, রোদকে নিজের করে নিবে।
‘রোদকে নিজের আদর ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু ভুলিয়ে দিব। সে আর তার বউ ছাড়া থাকতে পারবেনা। তারপর যদি রোদ না মানে তো জোর করে হলেও নিজের কাছে রাগবে। এতো বছরের জমিয়ে রাখা, আদর ভালোবাসা সব দিবে। বউ সহ্য করতে না পারলে দরকার হলে হার*বাল খাওয়াবে। তারপর তার বউ চাই। এই সব চিন্তা করেছিল শুভ্র,

জরুরি কাজ না হলেও কখনোই যেতো না। কিন্তু এখন যেতেই হচ্ছে। এর জন্য প্রচুর বিরক্ত শুভ্র।
রাত আটটা কিছুক্ষণ আগেই সবাই রাঙামাটি পৌঁছায়, সবাই রিচর্ডে উঠেছে।
সবাই খুব ক্লান্ত, রেস্ট নিচ্ছে নিজ নিজ রুমে। রোদ রুহি নিলা, এক রুমে আছে।
রাত ১০:০০ টা বাজতে সবার ডাক আসে। রাতের ডিনারের জন্য আপাতত এখন সবাই খাবার খেয়ে রেস্ট নিবে। কালকে সকালে ঘুরাঘুরি। সবাই রাতে খাবার খেয়ে নিজ নিজ রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রোদ সারাদিনে ক্লান্ত থাকায়,তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়।
সকাল ৭টা রোদ এখনো ঘুমাচ্ছে রুহি নীলা কিছুক্ষণ আগে উঠছে। রোদকে ডাকছে রোদ গভীর ঘুমে, নীলা রোদকে ধাক্কা দিতেই রোদ চোখ খুলে পিটপিট করে তাকায়। সামনে রুহি নীলাকে রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসে। নীলা রেগে গিয়ে বলে উঠে,,
নীলা: কিরে রাতে আর কতো ঘুমাবি। কতোক্ষন ধরে ডেকে ডাকছি মহারানি কোনো হুস নেই। মনে হচ্ছে জামাই নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।

রুহি নিলাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে
রুহি: রোদের তো জামাই আছে, আমাদের তো একটা বয়ফ্রেন্ড ও নেই। যে তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখবো সারারাত।
যাই হোক বাদ দে,, ভাবিজী তাড়াতাড়ি রেডি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আসো। ডাকছে সবাইকে।
রোদ তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে, কালো রঙের গাউন পড়ে সাথে কালো হিজাব নিকাব পড়ে, সুন্দর মতো পরিপাটি হয়ে বেড়িয়ে আসে। রুহি নিলা বলে উঠে,,,
মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে,,
তারপর তিনজনে মিলে বাহিরে চলে যায়। কলেজ বি, পি সাথে সিনিয়র ভাই, সিনিয়র আপু অনেকই আছে। সাথে স্যার ম্যাম। সবাই বের হতেই রোদের দিকে কেমন করে যেনো, তাকিয়ে আছে। রোদ নিজের পোশাকের দিকে তাকায় সে তো ঠিকঠাক আছে। তাহলে এভাবে দেখার কি আছে। এই সবে পাত্তা না দিয়ে রিচর্ডের পাশে হোটেল সবাই সকালে নাস্তা করে নেয়। সবার উদ্দেশ্য এখন পাহাড় দেখতে যাওয়া। শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী সবাই এক সাথে, রুহি নীলা রোদ একসাথে হাঁটছে, চারদিকে কি সুন্দর মনোরম দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর। যা মুখের ভাষায় প্রকাশ করলে কম হবে।

সারাদিন ঘুরতে ঘুরতে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়৷ সকাল পেরিয়ে দুপুর হতে চললো।
সূর্য তখন তখন পাহাড়ের পিঠ ছুঁয়ে নামছে। রাঙামাটি আঁকাবাকা পাহাড়ি পথ, চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সবুজে জঙ্গর, একপাশে গভীর খাদ, অন্য পাশে গাছের শারি শারি লাইন, চারদিকে প্রকৃতি সৌন্দর্য। অনেকটা ঘুরাঘুরি করে সবাই অনেকটা ক্লান্ত, সবাই রেস্ট নিয়ে
রিচর্ডে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু কয় একজন স্যার এবং কলেজ বি,পি সিদ্ধান্ত নেয়। যে এখন আশ পাশ থেকে পাহাড়ি কোনো হোলেট থেকেই দুপুরের খাবার খেয়ে। রেস্ট নিয়ে আবার ঘুরে ফিরে একসাথে রিচর্ডে ফিরবে। তা না হলে এখন গিয়ে এখানে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই এই সিদ্ধান্ত সবাই সেই সিদ্ধান্ত সহমত পোষন করে। সবাই দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে। রেস্ট নিয়ে ঘুরতে বেড় হয়।
রুহি নীলা ফটো তুলা নিয়ে ব্যস্ত কেউ কেউ ভিডিও করছে। রোদ আশে পাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। পাহাড়ের চুড়া থেকে ঝড়না পানি পড়ছে। চারদিকটা যেনো রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশ। অনেটা ঘোরাঘুরি করতে করতে সন্ধ্যা নেমে আসে। সবাই তারা দেই,, রিচর্ডে ফিরে যাওয়ার। রোদ রুহি একসাথে আছে৷
অনেক মানুষ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে।

মানুষ ভিড় হওয়াতে রোদ কিছুটা পিছে পড়ে যায়। চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। গা জম জম করা পরিবেশ।
রুহি নীলাকে দৌড়ে গিয়ে ধরতে গিয়ে কিছু একটা পা বেজে পড়ে যায়। সাথে সাথে পাশে থাকা শক্ত কিছুতে আঘাত পায়৷ মাথা থেকে গল গল করে রক্ত পড়ছে। রোদ নিজের ভারসম্য আর ঠিক রাখতে পারেনা। সেই যায়গা সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়। এইদিকে রুহি নিলা এখনো খেয়াল আসেনি। রোদ যে তাদের সাথে নেই৷ একঘন্টা পথ হেটে আসে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। সবাইকে গাড়িতে তুলে, এমন সময় নীলা খেয়াল করে রোদ পাশে নেই। আশে পাশে খোঁজে কিন্তু কোথাও পায়,না। রুহিও খুঁজছে, স্যার ম্যাম সবাইকে জানাতেই সবার মধ্যে একরকম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মানুষের ভিড়ে খুঁজে দেখে। কিন্তু কোথাও রোদ নেই। রুহির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। সারাদিন তো চোখে চোখে রেখে। তার ভাইয়া বার বার বলেছিলো রোদকে যেনো নিজের কাছ থেকে না ছাড়ে,,যার জন্য সারাক্ষণ রোদকে নিজের কাছে কাছে রেখে ছিল। কিন্তু রোদ কোথায়। রুহি ভয়ে কেঁদে চলেছে, নীলা শান্ত করতে পারছেনা। রুহি নীলা আবার সেই পাহাড়ি জঙ্গলে দিকে যেতে নেয়৷ কিন্তু স্যার ম্যাডাম সবাই নিষেধ করে। কারন রাতের বেলা এই যায়গা নিরাপদ নয়। রুহি নিলা কোনো ভাবেই রোদকে ছাড়া যেতে চাই না। এক রকম জোর করেই গাড়িতে করে রিচর্ডে নিয়ে আসে। সবাই অনেকটা চিন্তিত হটাৎ মেয়েটা উদাও কি করে হলো৷ রুহি শুভ্রকে অনেক বার কল করে। কিন্তু শুভ্রের ফোন বন্ধ বলছে।

শুভ্র বলেছিল। সে কয়েক দিনের জন্য দেশের বাহিরে যাবে। ফিরতে তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে। রুহি এইটা ভেবেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে। সবাই এখন রিচর্ডে রুহি নিলা কান্না করেই যাচ্ছে। রোদ নতুন ফোনের নাম্বার নেই, যে কল করবে। বাড়িতে কাউকে জানায়নি। হেনা বেগম হার্টের রোগী যদি জানেন তাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। স্যার ম্যাম কেউ রাতে এমন ভয়ানক যায়গা রাতে এতো রিক্স নিয়ে যেতে চায় না। দিনের বেলা যতটা সুন্দর রাতের বেলা ততটাই ভয়ানক। তাই সবাই সকাল অবধি অপেক্ষা করছে। সকাল হলেই সবাই খুঁজতে বের হবে৷
শুভ্র দীর্ঘ ৬ ঘন্টা জার্নি করে বিদেশের মাটিতে, এখন নিজ রুমে রেস্ট নিচ্ছে।
মনটা খুব অশান্ত লাগছে। কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছে না।
নিজের বন্ধ করে রাখা ফোন অন করতেই,রুহির অনেক গুলো কল দেখতে পায়। চিন্তিত হয়ে সাথে সাথে কল ব্যাক করে, কিন্তু বন্ধ বলছে, রোদের নাম্বারে কল দিতে বন্ধ বলছে। শুভ্রের কপালে চিন্তার ভাজ,,
রুহি নিলা সারা রাত একটুর জন্য ঘুমাইনি। কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা। এইদিকে যে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে। ফোন বন্ধ হয়ে আছে। খেয়াল নেই, রুহি নীলা কারো।

সকাল হতেই, রিচর্ড থেকে বেড় হয়। রুহি নিলা সাথে কয় একজন বড় ভাই, ও স্যার ম্যাম। রুহি ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। হাত পা কাঁপছে, বার বার দোয়া করছে, রোদের যেনো কিছু না হয়। এইদিকে শুভ্র দেশে নেই। কি থেকে কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। বাড়ির কাউকে ভয়ে জানাতে পারছেনা।
রুহি নীলা সবাই মিলে রোদকে পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছে।কিন্তু কোথাও রোদের ছিটেফোঁটা নেই।
হটাৎ নীলা চোখ যায়। পাথরে লেগে থাকা রক্তের উপর সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠে। পাশে রোদের পড়ে থাকা জুতা। নিচে অনেক বড় খাদ,, ভয়ে সবাই কেঁপে উঠে,,হু হু করে কেঁদে উঠে রুহি।
সবাই এটাই ভাবছে হয়তো পাথরের সাথে মাথায় আঘাত পেয়ে এই খাদে পড়ে গেছে। কলেজ শিক্ষক পুলিশকে খবর দেই। রুহি সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সবার ধারনা এটাই পাহাড়ের এতো বড় খাদ থেকে পড়লে বেঁচে থাকা সম্ভব না।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩৭

দুপুর দুইটা কাছাকাছি শুভ্র রুহিকে ফোন করেই যাচ্ছে, কিন্তু ফোন বার বার বন্ধ বলছে। রুহি অবস্থা খুবই খারাপ নীলা রুহির ব্যাগ থেকে, ফোন হাতে নিয়ে থেকে ফোন অফ, সাথে সাথে ফোন অন করে।
ফোন স্কিনে তাকাতেই, ভাইয়া নামটা ভেসে উঠে,, নীলা সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে কানের কাছে ধরে।
ওপাশ থেকে শুভ্র ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠে,,
শুভ্র: রুহি ঠিক আছিস তোরা। আর আমার রোদ কই,,,
নীলা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here