বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪০

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪০
shanta moni

‘রোমান কোনো কিছুই ভাবতে পারেনা। সত্যি যদি রোদের লাশ হয়। তাহলে কি হবে, শুভ্রকে কি করে সামলাবে রোমানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, বার বার দোয়া করছেন আল্লাহ যেনো খাদে থাকা লাশটা রোদের না হয়। এইদিকে হেনা বেগম চলে এসেছে হোটেল থেকে, সাথে নিলয়, রুহি নীলা হোটেল আছে, রুহির গায়ে প্রচন্ড জ্বর নিলয় ওষুদ কিনে দিয়ে নীলাকে রেখে আসছে, রুহির কাছে, অতিরিক্ত ভয় এতো ভয় সক্ট নিতে পারেনি। যার জন্য হয়তো এমন জ্বর এসছে। নীলা রুহির পাশে বেডের উপর বসা। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে, আল্লাহ কাছে বার বার বলছে রোদের যেনো কিছু না হয়। রোদকে যেনো সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।
এইদিকে হেনা বেগম শুভ্রের কাছে এসে দাঁড়ায় দুইদিনে কি হাল হয়েছে তার নাতির আল্লাহ যেনো তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়। শুভ্রকে কিছু বলতে গিয়েও বললেনা। এখন কিছু বললে আবার পাগলামি শুরু করেছে। নিলয় যায় রোমানের কাছে রোমানকে উদ্দেশ্য করে বলে…!

নিলয়: ভাইয়া রোদের কোনো খোঁজ পেয়ে..?
নিলয়ের দিকে তাকায় রোমান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,
রোমান: খাদের নিচে একটা মেয়ে লাশ পেয়েছে নিলয়। খুব বিধস্ত অবস্থা, চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। পুড়ো ফেইজ থেতলে গেছে।
নিলয় চোখে পানি, নিলয় একবার শুভ্রের দিকে তাকায়,
আচ্ছা সত্যি যদি রোদের লাশ ওইটা হয়,তাহলে তার শুভ্র ভাইয়ের কি হবে।
আল্লাহর কাছে বার বার বলছে আল্লাহ রোদের লাশ যেনো না হয়। রোমান হেনা বেগমের কাছে গিয়ে সবটা বলে হেনা বেগম চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়।
রোমান নিলয় সাথে সাথে ধরে ফেলে। পাশে তাবু টানানো সেখানেই নিয়ে যান হেনা বেগমকে৷ খাদ থেকে লাশ নিয়ে উপরে এসেছে, রোমান শুভ্রের কাছে যায়৷ শুভ্র সেই একই অবস্থায় বসে আছে, চারদিকে কি হচ্ছে তার কোনো হুস নেই। রোমান শুভ্রের কাছে গিয়ে আস্তে করে কয় একবার ডাকে,শুভ্রের কোনো হেলদোল নেই। রোমান শুভ্রের কাঁদে হাত রেখে বলে,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রোমান: এই শুভ্র,,
শুভ্র আস্তে করে পিছন ফিরে তাকায়, রোমানকে দেখে বলে,,,
শুভ্র: আমার রোদ কোথায়…?
রোমান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,
রোমান: খাদের নিচ থেকে একটা লাশ পেয়েছে, খুব বাজে অবস্থা দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবে দেখে মনে হচ্ছে আগে রেফ করা হয়েছে তারপর খাদ থেকে কেউ ফেলে দিয়েছে। চেহারা থেতলে গেছে,, সবাই বলছে ও,, টা নাকি রোদ,,,

শুভ্র সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায় দৌড়ে যায়। লাশ যেই দিকে রাখা,, সাদা কাপর দিয়ে লাশটা ডাকা পাশে আর্মি পুলিশ দাঁড়ানো। শুভ্র গিয়ে লাশের পাশে বসে পড়ে,,কোনো কথায় মুখ দিয়ে বলতে পারছেনা। মনে হচ্ছে কেউ শক্ত করে গলা চেপে ধরে আছে। নিশ্বাস আটকে আছে, হেনা বেগমের কিছুক্ষণ হলো সেন্স ফিরে৷ নিলয় কোনো ভাবেই হেনা বেগমকে ধরে রাখতে পারছেনা। বাহিরে কি বলছে কিসের লাশ কার লাশ পেয়েছে। হেনা বেগম নিলয়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তাবু থেকে বাহিরে বেড়িয়ে আসে একরকম দৌড়ে, শুভ্র পাথরের মূর্তি মতো বসে আছে। চোখ দিয়ে পানির স্রেত বইছে,,আসে পাশে কারো দিকে কোনো খেয়াল নেই। হেনা বেগম সামনে তাকাতেই দেখে সাদা কাপড় নিয়ে ঢেকে রাখা একটা লাশ। হেনা বেগম কাছে গিয়ে মুখের কাপর সরাতে নেয়। এমন সময় একজন মহিলা পুলিশ অফিসার তাকে সাথে সাথে বাঁধা দেয়। হেনা বেগমকে থামিয়ে বলে উঠে…

‘প্লিজ ম্যাম মুখের কাপড় টা তুলবেনা। চেহারা দেখে ভয় পেতে পারেন। খুবই ভয়ানক ভাবে মুখ থেতলে আছে। হেনা বেগম চিৎকার করে বসে পড়েন।
শুভ্র পুলিশের কথা শুনে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়,,কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,
শুভ্র: কি হয়েছে আমার রোদের ও কি কথা বলবে না।
মহিলা পুলিশ অফিসার আস্তে করে বলে উঠে,,
“স্যার উনি আর বেঁচে নেই। তবে ওনার শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে আগে খুব বাজে ভাবে ধর্ষন করেছে। তারপর মুখ থেতলে দিয়েছে,,পরে গভীর খাদে ফেলে দিছে।
তবে আমাদের মনে হচ্ছে এইটা মিস রোদের লাশ,সব কিছু প্রমান তাই বলছে,,বাকিটা ফরেনসিক রিপোর্ট আসলে একে বারে সিওর হবো।
শুভ্রের কথা গুলো বিশ্বাস হচ্ছে না।

কোথায় আছেনা,অতি শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়। শুভ্রের অবস্থা এখন তাই, হেনা বেগম পাশে মাটিতে বসে আছে। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। মনে মনে একটা কথায় ভাবছে শেষ মেষ তার মেয়ের মতোই ভাগ্য নিয়ে জন্ম নিলে এই হতভাগি,, সুখের মুখটা দেখতে পারলো না। শুভ্র হেনা বেগমের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,,
শুভ্র: দাদি প্লিজ ওকে তুমি উঠতে বলো,,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দাদি প্লিজ উঠতে বলো,,আমি সত্যি সত্যি প্রমিস করছি, আর কখনো মারবো না। কষ্ট দিবনা। প্লিজ দাদি উঠতে বলো রোদকে।এই ভাবে চলে যেতে পারেনা রোদ,,আমি মরে যাব দাদি একে বারে মরে যাব,,প্লিজ তুমি বললে শুনবে রোদ। আমার উপর রেগে আছে,,তো তাই উঠছেনা। তুমি বললে ঠিকই উঠবে কথা বলবে আমার সাথে।

হেনা বেগম শুভ্রের এমন পাগলামো দেখে জোরে শব্দ করে কেঁদে উঠে,, হেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
হেনা বেগম: উঠবে না রোদ মরে গেছে চলে গেছে আমাদের কাছ থেকে,,
শুভ্র জোরে জোরে শ্বাস ফেলে,, চিৎকার করে বলে,,
শুভ্র: নাহ আমার ছোট্ট ফুলের কিচ্ছু হতে পারেনা। আমি ডাকলে ঠিকই উঠে যাবে।
শুভ্র কথা গুলো বলে সামনে থাকা নিস্তেজ দেহটা দিকে তাকায়,, পাশে পড়ে থাকা হাত নিজের কাছে এনে চুমু খেয়ে অঝোরে কেঁদে উঠে বলে,
শুভ্র: এই রোদ প্লিজ উঠ না। আর একটা বার ফিরে আয় আমার কাছে আমি সত্যি বলছি, আর তোকে কষ্ট দিবনা। আমি তোকে যতগুলো থাপ্পড় মেরেছি তুই আমাকে তার থেকে বেশি থাপ্পড় মারিস। আমি কিচ্ছু বলবো না। একটা বার ফিরে আয়, কথা বল,

শুভ্র একটু থেমে আবার বলে
শুভ্র: ওরা সবাই বলছে তুই নাকি মরে গেছিস আর নাকি কথা বলবি না, এটা তো মিথ্যা আমি জানি তুই কথা বলবি, আমার ছোট্ট ফুল তুই,,আমার ছোট্ট পরি
প্লিজ আমাকে একা করে দিয়ে চলে যাস না জান।
শুভ্রের এমন কান্না আর পাগলামো দেখে, আসে পাশে সবার চোখে পানি, একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে এমন পাগলামো করতে পারে।

রুহি নিলা খবর শুনে এসে পড়েছে হোটেল থেকে। রুহির অবস্থা খুব খারাপ, ঠিক মতো হাটতে পারছে না। রোমান অসুস্থ শরীর নিয়ে আসতে বারন করেছিলো একবার কিন্তু রুহি কান্না দেখে গাড়ি পাঠিয়ে দেয় সাথে সাথে, রুহিকে নিলা এক হাত ধরে নিয়ে আসছে কিছু দূর আসতে, শুনতে পাই শুভ্রের চিৎকার আর কান্নার শব্দ। নীলাকে ছেড়ে একরকম দৌড়ে এসে দাঁড়ায়,, শুভ্র রোদের হাত ধরে কি সব বলে যাচ্ছে।
রুহি কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে, রোমান এসে রুহিকে ধরে রুহির পুড়ো শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, একদিকে শরীরে প্রচন্ড জ্বর,, রুহি সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ি করছে। বার বার একটা কথায় বলে, আমার জন্য সব হয়েছে। আমি খেয়াল রাখতে পারিনি।

এইদিকে শুভ্র রোদের হাত ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। শুভ্র রোদের হাত ছেড়ে দুই বাহু দুই দিক থেকে ধরে বলে উঠে,,,,
শুভ্র: এই রোদ রোদ উঠ,, জান প্লিজ Plz come back my life plz,,,
শুভ্র এমন করাতে লাশের শরীর থেকে সাদা কাপরটা সরে যায়। সবাই মুখের এমন বিধস্ত অবস্থা দেখে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। নীলা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন ভয়ংকর ভাবে মুখ থেতলে যাওয়া দেখে প্রথমে ভয় পেলেও পড়ে চিৎকার করে বলে উঠে,,,,
নীলা: এটা আমাদের রোদ না,,,
নীলা একটা চিৎকারে সবাই কিছু মূহুর্তে মধ্যে থেমে যায়। শুভ্রের হাত থেমে যায়। রুহি রোমানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নীলার দিকে তাকায় পড়ে তাকায় সামনে থাকা লাশের দিকে ভয়ে চিৎকার করে উঠে,,নীলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,,,,

নীলা: এটা আমাদের রোদ না,,এটা রোদ হতেই পারে না। রোদের গায়ে কালো গাউন আর কালো হিজাব ছিলো। এটা অন্য কেউ মনে হবে। আর এই মেয়ের চুল গুলো ছোট ছোট,, এটা কোনো ভাবেই রোদ হতে পারে না।
সবাই খেয়াল করে দেখলো সত্যি তো তাই। শুভ্রের চোখে মুখে আশার আলো দেখা গেলো। হাত ছেড়ে দেয় সাথে সাথে, বিড়বিড় করে বলে,,
শুভ্র: এটা আমার রোদ না, আমার রোদ তাহলে বেঁচে আছে।
হেনা বেগম বিচলিত হয়ে বলে উঠে,,
হেনা বেগম: রোদের ডান হাতে একটা জন্ম দাগ আছে,,সেইটা দেখলে বুঝা যাবে সব।
শুভ্র দ্রুতে ডান হাত উল্টে পাল্টে চেক করে, কিন্তু কোথাও কোনো জন্ম দাগ নেই। শুভ্র জোরে শ্বাস ফেলে৷ আল্লাহ তার দিকে মুখ তুলে তাকিছেন। তার রোদ বেঁচে আছে৷ হেনা বেগম রুহি নীলা সবার চোখে মুখে খুঁশির ঝলক। কিন্তু এই মেয়েটা রোদ না হলে রোদ কোথায়।

রোদ কি ঠিক আছে। পুলিশ অফিসার লাশ নিয়ে চলে যায়৷ এখন এই লাশ কার তার তদন্ত করে বেড় করতে হবে। শুভ্র মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। হেনা বেগম বার বার শুকরিয়া আদায় করছেন আল্লাহ কাছে যে তার নাতনি নয়৷ এই মেয়েটি তবে এখনো চিন্তা মুক্ত হয়নি৷ যতক্ষণ তার রোদ সুস্থ অবস্থায় না, পাচ্ছে ততক্ষণে চিন্তা মুক্ত হতে পারবে না। শুভ্র বসা থেকে উঠে নিলয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
শুভ্র: দাদি রুহি নীলাকে নিয়ে পাশে ফার্ম হাউস আছে সেখানে যা। সেইভ যায়গা রাখ। বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড, বাড়িয়ে দে। রুহি ডাক্তার দেখা যা,,,

হেনা বেগম বিচলিত হয়ে কিছু বলতে যাবে। শুভ্র হেনা বেগমকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে,,
শুভ্র: দাদি এই যায়গা তোমাদের কারো জন্য সেইভ নয়। প্লিজ তোমরা এখান থেকে সেইভ যায়গা যাও। আমি কথা দিচ্ছি আজকে রাতের মধ্যে রোদকে নিয়ে ফিরবো আমি।
হেনা বেগম শুভ্রের কথায় ভরসা পায়। নীলা রুহি হেনা বেগম চলে যায়, নিলয়ের সাথে,,
শুভ্র গলা ছেড়ে রবিনকে ডাকে,,রবিন এসে মাথা নিচু করে দাড়ায়,,শুভ্র বলে,
শুভ্র: আসে পাশে যতগুলো হসপিটাল ক্লিনিক আছে৷ সব গুলাতে লোক পাঠা সব হসপিটাল তন্নতন্ন করে খুঁজ, পাশে যত জঙ্গল পাহাড়ি এলাকা আছে। যত গুলো বাড়ি আছে,পাহাড়ি এলাকায় প্রতিটা বাড়িতে গিয়ে গিয়ে খোঁজ কর।
রবিন: জ্বী স্যার,,,

শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,,
আকাশ পাতাল এক করে হলেও, তোমাকে আমার চাই মানে চাই,
শুভ্র এই টুকু ভালো করে বুঝে গেছে, তার বউ তার প্রান ভোমরা,, আর যাই হোক বউকে সে আর নিজের কাছ থেকে দূড়ে রাখবেনা। এই দুই দিনে এতটুকু বুঝে গেছে সে। এখন তার যে করেই হোক বউকে খুঁজে বেড় করতে হবে।
`শুভ্র লোক নিয়ে আসে পাশে জঙ্গল তন্নতন্ন করে খুঁজে,,রাঙামাটি প্রতিটা হসপিটাল ক্লিনিক সব যায়গা খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু রোদের কোনো খবর পাইনি। শুভ্র খুঁজতে খুঁজতে রাত প্রায় ৯:০০ টা কাছাকাছি,, ক্লান্ত শরীর নিয়ে একটা গাছের সিকরে বসে, আসে পাশে বর্ডিগার্ড গুলো দাঁড়ানো।

রাত ১২:০০ টা ঘড়ে চারদিকে নিস্তব্ধতা আশে পাশে গাড়ো অন্ধকার, অন্ধকারে কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। রোদ আড়মোরা ভেঙে উঠতে নিবে। কিন্তু নিজেকে শক্ত কিছুর বাঁধনে আটকা পায়। কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বুঝতে পারে। তার হাত শক্ত করে বাঁধা আছে। অজানা ভয়ে রোদ কেঁপে ওঠে,, নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই,মাথায় প্রচন্ড ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে,, মাথা ব্যাথার কথা মনে পড়তেই সেদিন রাতের ঘটে যাওয়া কথা মনে পড়ে। আসে পাশে চোখ ভুলায় কিন্তু সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রোদ জোরে চিৎকার করে রুহি নিলা ওদের ডাকতে থাকে, কিন্তু কারো সারা শব্দ পাচ্ছে না। কাধে নিজের ব্যাগটা এখনো আছে, রোদ আশে পাশে কারো সারা শব্দ না পেয়ে ভয়ে হু হু করে কেঁদে দেয়। মুখ থেকে নিকাব’টা আগলা হয়ে গেছে। হিজাবটা খুলে যাবে, এমন উপক্রম, রোদ জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলে,,

রোদ: প্লিজ আমাকে বাঁচান, কেউ আছেন, রুহি নিলা তোরা কোথায় প্লিজ আমাকে বাঁচা।
রোদের এমন চিৎকার শুনে, পাশে থাকা দরজা শব্দ করে খুলে যায়। হাতে আগুনের মশাল নিয়ে একজন লোক ঘরে ভিতরে ডুকে,,আপছা আলোতে রোদের সামনে দিকে কিছু মেয়ের দিকে চোখ পড়ে,,মাটিতে হাত পা বেঁধে রেখেছে। রোদ মেয়ে গুলোকে দেখে ভয়ে আরো সিঁটিয়ে যায়। আপছা আলোয় পাশে থাকা লোকটাকে দেখে রোদ আরো ভয় পেয়ে যায়৷ দেখে মনে হচ্ছে পাহাড়ি জঙ্গলি,,রোদ কাঁদতে কাঁদতে বলে
রোদ: আমাকে যেতে দিন, প্লিজ আমি বাড়ি যাব।
পাশে থাকা লোকটি বিরক্ত হয়ে বলে,,
‘হেই ফুরি চুপ একদম চুপ, চেচালে মেরে ফেলবো।

রোদ আরো জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে, কোনো ভাবেই পাশে থাকা লোকটি রোদকে থামাতে পারেনা। রোদের এমন চিৎকার আরো কয়েকজন লোক আসে হাতে আগুনের মশাল নিয়ে।
তার মধ্যে এই লোকদের মধ্যে একজন বড় লিডার, দুলতে দুলতে আসে, এসে খুব বাজে ভাষায় বলে,,,
“কি হইছে রে, এই রকম কোন ছেরি চিৎকার করছে,?
পাশ থেকে একজন লোক বলে উঠে,,
সরদার দুইদিন আগে যে মেয়ে’টাকে জঙ্গলে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়ে ছিলাম। সেই মেয়েটা জ্ঞান ফিরছে,,এখন চিৎকার করছে,থামাতে পারছিনা।
পাশে থাকা সরদার রোদের সামনে এসে ডুলতে ডুলতে বলে উঠে,,,
‘এই ছেরি চুপ থাক, তা না হলে, ওই যে পাশে যে মেয়ে গুলো দেখছিস। তাদের মত অবস্থা হবে।
রোদ আরো জোরে চিৎকার করে বলে,
রোদ: ছেড়ে দিন আমায়, আমাকে যেতে দিন।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বিরক্ততে চ শব্দ করে, সামনে তাকায়,
রোদের মুখ থেকে নিকাব সরে গেছে।

রোদের দিকে লোক’টা লালসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, রোদ এমন দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। নিজের মুখ ডাকার চেষ্টা করে, কিন্তু হাত বাঁধা থাকায় মুখ ডাকতে সফল হয় না। সামনে থাকা লোক গুলো এতোক্ষণ ভালো করে খেয়াল করনি রোদকে, কিন্তু এখন মসালে মৃদ আলোতে, রোদের হলুদ ফর্সা মুখটা জ্বল জ্বল করছে। সবাই লালসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে।
রোদ ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্য দিকে,
সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটি বিচ্ছিরি ভাবে হাঁসে রোদের দিকে লালসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,
‘খাশা মা*** তো দেখছি, আমার জীবনে এমন সুন্দর ছে*রি দেখিনি।
লোকটা রোদের দিকে এগিয়ে রোদের গালে হাত দিতে যাবে এমন সময় রোদ একটা কান্ড করে বসে,,
থু থু মারে সামনে থাকা লোকটা দিকে,
রোদ রেগে গিয়ে বলে

রোদ: ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবেনা।
সামনে থাকা লোকটা রেগে গিয়ে এক হাত দিয়ে মুখে থু থু মুছে, রোদের হিজাবের উপর দিয়ে চুল চেঁপে ধরে,রাগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে,,,
“শা*লি তোর তেজ অনেক তাই না,,আজকে দেখবো তোর তেজ কতো খানি।
লোকটা চেচিয়ে বলে উঠে,,
‘আজকে সবাই মিলে, এই শালির তেজ কতো দেখবো। আমার গায়ে থু থু মারা,,
তোকে আজ শেষ করে ফেলবো।
সারা রাত তুই এখানে সব পুরুষের মনোরঞ্জন করবি। সকাল হলে অন্য মেয়েদের সাথে তোকে বিদেশ চালান করে দিব। তারপর দেখবো তেজ কই থাকে,,
লোকটা কথা গুলো বলেই, রোদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে, বলে উঠে,
‘শালিকে আমার পাঠা,,তারপর একে একে সবাই শালির তেজ শেষ করবো।
কথা গুলো বলেই লোকটা চলে যায়।
পাশে থাকা সাঙ্গ পাঙ্গ সবাই খুব বিচ্ছিরি ভাবে হাঁসতে থাকে, লালসা দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে,,
রোদের এবার যেনো ভয়টা আর দ্বিগুণ বেয়ে যায়। ইজ্জত হারানো ভয়ে, হু হু করে কেঁদে দেয়। আজকে কি তাহলে তার গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগবে।

পাশে থাকা একটা লোকটা রোদের হাত ধরে দাঁড় করাতে নেয়। রোদ সাথে সাথে ছিঁটকে দূরে সরে যায়। লোকটি রেগে রোদের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রোদ গালে হাত দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে,, লোকটি রোদের হাত ধরে টানতে টানতে কুরে ঘর থেকে বের করে, একটা ঘরে সামনে নিয়ে যায়। চারপাশ’টা অন্ধকার নিস্তব্ধতা একরকম ভুতুড়ে পরিবেশ। রোদ নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করে কিন্তু হাত বাঁধা থাকায়, আর একজন পুরুষের শক্তির কাছে সে একটা মেয়ে কিছুই নাহ। কাধে থাকা ব্যাগটি পড়ে যায়, পথ মধ্যেই রোদের কান্না আর চিৎকার জন্য কেউ খেয়াল করে না।

রোদকে একটা রুমের ভিতর ডুকিয়ে সামনে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
রোদ ভিতর থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে, আর
বাহিরে লোক গুলো পৈচাসিক হাঁসি দিচ্ছে, মনে হচ্ছে এমন কাজ তাদের নিত্য দিনে,রোদ কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে দরজা সামনে, ঘরটা ভিতরে একটা ছোট চকি,,আর পাশে কি সব বোতল রাখা, কেমন যেনো বাজে গন্ধ ভেসে আসছে,, মুখ ভরে ভমি পাচ্ছে রোদের।
একটা লোক বলে উঠে,
এই সরদার এসে গেছে, দরজা সামনে থেকে সর। সরদারকে দেখে সবার মুখে হাঁসি, লোকটা হাতে একটা মদের বোতল, মদের বোতলে চুমুক দিতে দিতে, দরজা সামনে এসে দাঁড়ায়। পেছন ফিরে সবার উদ্দেশ্য তাকিয়ে বলে,,
‘তোরা এখান থেকে যাহ এখন, এই ছে*রি তেজ তো আমি আজ রাতেই শেষ করবো। আমার কাজ শেষ হলে তোদের ডাকবো, এখন যাহ,,
সবাই সরদারের কথায় সায় জানিয়ে হাঁসতে হাঁসতে চলে যায়। আজ এই ঘর থেকে একটা মেয়ে চিৎকার শুনবে আর শান্তিতে মস্তি করবে।

দরজা খোলার শব্দ পেয়ে, রোদ খাটের এক কোনে গুটিসুটি মেরে দাঁড়ায়, লোকটা রুমের ভিতরে ডুকে দরজা আটকে রোদের দিকে লালসা দৃষ্টিতে তাকায়,,পৈচাসিত হাঁসি দেয়। তারপর বলে,,
‘এই নোংরা হাত দিয়ে অনেক মেয়ে সতীত্ব হরন করেছি। কিন্তু তোর মতো আগুন সুন্দরী দেখিনি কখনো,,আজকে তোর সব তেজ আমি একে একে শেষ করবো।
রোদ ভয়ে আরো সিটিঁয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
রোদ: ওই নোংরা হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবেনা প্লিজ, আমাকে যেতে দিন। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
রোদের কান্না দেখে লোকটা আরো শব্দ করে হেঁসে উঠে,,,হাঁসতে হাঁসতে বলে,
মা**গি তুই আমার মুখে থু থু দিছোস। আজকে তোর সব তেজ আমি শেষ করবো। সারা রাত এখানে যত গুলো পুরুষ আছে,,সব গুলো তোর সাথে মস্তি করবে।
লোকটা কথা গুলো বলেই মদ বোতলে চুমুক দিয়ে ডলতে ডলতে এগিয়ে আসে,,
রোদ বার বার আল্লাহকে ডাকছে আর বলছে,
আল্লাহ আপনি আমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচান মাবুদ,,আল্লাহ এই নোংরা পুরুষের স্পর্শ আমার শরীরে লাগতে দিয়েন না। আমার সতীত্ব রক্ষা করুন।

লোকটা হাঁসতে হাঁসতে রোদের দিকে এগোতে এগোতে বলে,,
আল্লাহ আজ তোকে বাঁচাতে পারবে না।
রোদ কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে,,
চিৎকার করে বলে উঠে,,
আমার স্বামী ব্যতিত অন্য পুরুষের স্পর্শ আমার শরীরে লাগতে দিয়েন না,,মাবুদ
আমাকে মৃত্যু দিন।
হে আল্লাহ মাটি ফাক করুন আমি মাটির নিচে ডুকে যাই,,তারপর এতো বড় পাপ কাজ হতে দিয়েন না। আমার ইজ্জত হেফাজত করুন আল্লাহ।

রোদের প্রতিটা চিৎকার যেনো,পুড়ো আকাম জমিন কেঁপে উঠছে,,,
এইদিকে শুভ্র শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বুকের বা পাশে চিন চিন করে ব্যাথা উঠছে, পাগলের মতো এখনো খুঁজে যাচ্ছে রোদকে, শুভ্র হটাৎ মাটিতে বসে পড়ে,,
রোমান সাথে সাথে শুভ্রের কাছে যায় তুলতে, শুভ্র জোরে জোরে শ্বাস ফেলে,
বলে

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৩৯

শুভ্র: আমার রোদ ঠিক নেই রোমান, আমার বুকের বাম পাশে অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে,
শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,
হে আল্লাহ আপনি আমার রোদকে সেইভ করুন। আমার রোদের কোনো ক্ষতি কইরেন না।
হটাৎ শুভ্র কারো চিৎকার শব্দ পায়।
সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়……..

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here