বাতাস বলে দেয় পর্ব ২১

বাতাস বলে দেয় পর্ব ২১
ফারহানা কবীর মানাল

সকালের রোদ তীব্র হয়ে উঠেছে। মিষ্টি ভাবটা আর নেই। ঘড়িতে দশটা উনিশ। নাইমা ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় শুয়ে আছে। খানিকক্ষণ আগেই তার ঘুম ভেঙেছে। ভোর রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিল। সামান্য সময় ঘুমিয়ে তার ক্লান্তি দূর হয়নি। এখনও ক্রমাগত হাই তুলছে। সে বালিশ জড়িয়ে ধরল। ঠিক করল আরও একটু সময় ঘুমিয়ে নেবে। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। দরজার কড়া নড়ে উঠল। হাবিব বলল, “নাইমা, তুই কি জেগে আছিস? ভেতরে আসব?”

সে বিছানায় উঠে বসল। গায়ে মাথায় ওড়না জড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ ভাইয়া, এসো।”
হাবিব হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভেতর ঢুকল। খাটে বসতে বসতে উত্তেজিত গলায় বলল, “শহিদুল আলম ধরা পড়েছেন। খুলনায় এক হোটেলে ছিল। সকাল আটটার দিকে গ্রে’ফ’তা’র হয়েছে।”
“তিনি কি কিছু স্বীকার করেছেন?”
“না, এখনও কিছু স্বীকার করেননি। দারোগা সাহেব আবার সবাইকে থানায় ডেকেছেন। শুনেছি নদীর পাড়ের ওই বাড়ি রেট দিয়েছেন। সেখানেও তল্লাশি চলছে।”
“এটা তো বেশ ভালো খবর। আমাদেরকে কখন যেতে বলেছেন?”
“দুপুরের পরে। আমি অফিসে যাব। খবরটা তোকে জানিয়ে রাখলাম।”
“ঠিক আছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হাবিব বেরিয়ে গেল। তার চলনে ব্যস্ততার ছাপ স্পষ্ট। নাইমা লম্বা হাই তুলে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল। তার খুব ঘুম পাচ্ছে। চোখ মেলে রাখতে পারছে না।
থানার পরিবেশ বেশ গরম। শহিদুল আলম খানিকক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি করে থেমে গিয়েছেন। নানা ধরনের হু’ম’কি দিয়েছেন। দারোগা সাহেব তার কথা গায়ে মাখেননি। এক কানে শুনে অন্য কানে বের করে দিয়েছেন।
তানজিলা বলল, “ইনানের আব্বু কখন ছাড়া পাবে?”
আরিফ আঁড়চোখে তার দিকে তাকাল। তার দৃষ্টিতে কোমলতা মেশানো। দারোগা সাহেব বললেন, “আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে খুব দ্রুত।”
শহিদুল আলম বললেন, “বিনা কারণে আমাকে এমন হেনস্তা করার মানে কি? জানেন আপনাদের জন্য আমার কত লাখ টাকা লস হয়ে গেল?”
দারোগা সাহেব অল্প হাসলেন৷ বরফ শীতল কণ্ঠে বললেন, “বিনা কারণে আপনাকে এখানে আনা হয়নি৷ এ কথা আপনিও খুব ভালো করে বুঝতে পারছেন। অযথা নাটক করবেন না।”

“কি বলতে চাইছেন?”
“নদীর পাশের পুরনো বাড়িটা আপনারই তো নাকি?”
“বাড়িটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি। তবে ওখানে খুব বেশি যাওয়া হয় না৷ বহুদিন ধরে খালি পড়ে আছে। ভেবেছি ভাড়া দিয়ে দেব।”
“বাড়ির ভেতরে কি চলে সে কথা আপনার জানা নেই?”
শহিদুল যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বিস্মিত গলায় বললেন, “বাড়ির ভেতরে কি চলে? ওই বাড়ি তো তালা দেওয়া। ছয় মাসের বেশি হয়ে গেছে ওদিকে পা গলাইনি। কেউ কি আমার বাড়ি দখল করে নিয়েছে?”
“দখল? হ্যাঁ, তা নিয়েছে বটে। বাড়িটা রীতিমতো আপনার হাতছাড়া হয়ে গিয়েছি। ওই বাড়ি এখন জু’য়া’রি আর মা’দ’ক ব্যসায়ীদের দখলে। তারা সেখানে তাদের অভয়ারণ্য তৈরি করেছে।”
শহিদুলের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল। হামজা বলল, “আপনার বাড়িতে এতকিছু হচ্ছে আর আপনি কিছুই জানেন না?”

শহিদুল বললেন, “সত্যিই আমি এসবের কিছুই জানি না। ওহ! তাহলে এজন্যই আমাকে ডেকেছেন? কিন্তু ধরে আনলেন কেন? ভালোভাবে বললেই তো আমি চলে আসতাম।”
দারোগা সাহেব বললেন, “আপনার অভিনয়ে নাম লেখানো উচিত ছিল। আপনি বেশ দক্ষ। নির্দিধায় অভিনয় করেন। আপনার চেলা-চামুন্ডাদেরও একটু প্রশিক্ষণ দিতে পারতেন। তাহলে আজ এমন ভরাডুবি হতো না।”
“এ কথা কেন বলছেন?”
দারোগা সাহেব চোখ-মুখ শক্ত করে ফেললেন। কঠিন গলায় বলল, “আপনার বাড়িতে বিপুল পরিমাণে ই’য়া’বা, কো’কে’ন এবং আ’ফি’ম পাওয়া গিয়েছে। এর বাইরেও অনেক অবৈধ সরঞ্জাম পাওয়া গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বাড়ির একপাশে আপনি নকল শ্যাম্পু, সাবান তৈরির কারখানা খুলে বসেছেন। এসবের জন্য আপনার বেশ ভালো শা’স্তি হবে।”

“বিশ্বাস করুন। আমি এসবের কিছু জানি না। আমাকে ফাঁ’সা’নো হয়েছে। আমার অনেক শত্রু আছে। ওরাই আমাকে ফাঁ’সি’য়ে’ছে।”
“সে না হয় বুঝলাম। মাসখানেক আগে আপনার অফিসের একজন কর্মচারী খু’ন হয়েছে। তার ব্যাপারে কি বলতে চাইবেন?”
“সুরভির কথা বলছেন? ভদ্রমহিলা বেশ দক্ষ এবং অসহায়। স্বামী সন্তান নেই। সিমার সুপারিশে আমি তাকে চাকরি দিয়েছিলাম। মাস চারেক কাজ করার পর এই অঘটন ঘটলো। এ ব্যাপারে আমার কিছুই বলার নেই। আগেও আপনাদের একই কথা বলেছি।”
“আসলেই বলার নেই?”
শহিদুল মাথা দোলালো। নাইমা বলল, “যদি বলি এ-সবকিছু আপনার পরিকল্পনা– তাহলে কি বলবেন?”
শহিদুল বললেন, “মেয়ে তোমাকে ঠিক চিনলাম না। তবুও বলছি– আমি বেশ ভালো মানের একজন ব্যবসায়ী। আমার প্রতিষ্ঠানে পঞ্চাশের অধিক লোক কাজ করে। সম্পত্তির পরিমাণ কোটি টাকার উপরে৷ আমি কেন এসব খু’ন-খা’রা’বিতে জড়িয়ে নিজের হাত ময়লা করব?”
“হয়তো নিজের সম্পত্তি বাঁচাতেই খু’ন করেছেন। বিপক্ষের সত্যি আড়াল করতে আমরা যা খুশি করতে পারি। আর সেই সত্যি যদি পতনের কারণ হয় তাহলে তো কথাই নেই।”
“কি বলতে চাইছ তুমি?”

নাইমা বলল, “আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন কি-না জানি না। তবে আমি আপনাকে বেশ ভালোই চিনেছি। সাদা শার্ট এবং মাস্কের আড়াল না থাকলেও আপনার মুখ পরিচিত মনে হচ্ছে।”
“এ কথার মানে কি?”
নাইমা তার দিকে একটু এগিয়ে গেল। নরম গলায় বলল, “আমি কি আপনার হাত দুটো দেখতে পারি?”
শহিদুল রাগী চোখে তার দিকে তাকালেন। এমনভাবে তাকালেন যেন তাকে ভস্ম করে দেবেন। রোহান এগিয়ে এসে শহিদুলের হাত ধরল। শার্টের হাতা গুটিয়ে দিয়ে বলল, “ডান হাতে দু’টো লম্বা দাগ দেখা যাচ্ছে। ক্ষ’ত গভীর না হলেও দাগ মুছে যায়নি।”
নাইমা বলল, “বস, আমার চোখ বেশ ভালো। কি বলেন?”

দারোগা সাহেব হাসলেন। সহজ গলায় বললেন, “শহিদুল সাহেব, আপনি ধ’রা পড়ে গিয়েছেন। ওই বাড়িতে যারা কাজ করত তারা সবাই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তারা এটাও বলেছে যে আপনিই সু’র’ভিকে খু’ন করেছেন। আপনার পোষা শেয়াল মোহনও একই কথা বলেছে। পালানোর উপায় নেই।”
শহিদুল আলম মোহনের দিকে তাকালেন। মোহন না সূচক মাথা দোলালো। দারোগা সাহেব বললেন, “এখন মাথা দুলিয়ে আর কোন লাভ হবে না। সত্যিটা বলে দিলে শা’স্তি কিছু কম পেতে পারেন।”
শহিদুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ারে বসে পড়লেন। ইশারায় পানি চাইলেন। একজন কনস্টেবল তাকে পানি এনে দিলো। তিনি এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি পান করলেন। ভিজ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললেন, “বছরখানেক আগে থেকে আমি এসবের ব্যবসা শুরু করি। সেবার বিদেশ থেকে ফেরার সময় প্লেনে আমার এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়। উনি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে সব ঠিকই চলছিল। প্রথম দিকে খুব ভালো লাভ পাই। ব্যবসা বাড়াতে এই প্রফেশনের একজনের কাজ থেকে দু’কোটি টাকা ধার করি। কথা ছিল ছয় মাসের মধ্যে দশ শতাংশ লাভে উনার সব টাকা ফেরত দেব।”

নাইমা বলল, “অ’বৈ’ধ ব্যবসা বাড়ানোর কথা বলছেন? কিন্তু আপনার বৈধ ব্যবসাও তো বেশ ভালো চলছিল। সেখান থেকেই তো টাকা ইনভেস্ট করতে পারতেন। খামোখা ধার করতে গেলেন কেন?
“আমার ব্যবসাটি রেজিস্টার্ড ও করদাতা। আয়কর বিভাগ বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়। দুই কোটি টাকা গায়েব হওয়া একটি গুরুতর আর্থিক অস্বাভাবিকতা। যদি এর কোনো বৈধ ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা না থাকে, তাহলে সরকার বা প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করতে হতো। এসব ঝামেলায় জড়াতে চাইনি।”
দারোগা সাহেব বললেন, “আপনি বলতে থাকুন। সবকিছুর উত্তর না মেলা পর্যন্ত থামবেন না।”
“যে মাল অর্ডার দিয়েছিলাম। সেগুলো বিক্রি করতে পারলে দ্বিগুণ লাভ হতো৷ কিন্তু সে-সব আমার হাতে পৌঁছায়নি৷ বর্ডার পার করার আগেই ধরা পড়ে যায়। কোথাও আমার নাম ছিল না বিধায় তখন কোন মা’ম’লা হয়নি।”
শহিদুল চুপ করে গেলেন। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “মাল হাতে না আসায় লসে পড়ে যাই। আবার এদিকের ব্যবসাও একটু বসে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে সব সামলে নেব। পাওনাদারকে বুঝিয়ে বলি। কিন্তু তিনি আমার কথা মানতে রাজি হলেন না। ভদ্রলোক সামান্য পুলিশি ঝামেলায় পড়ে গিয়েছেন। বড়সড় কিছু হওয়ার আগে টাকা নিয়ে দেশ ছাড়বেন। আমাকে রীতিমতো হু’ম’কি দিতে থাকেন। উপায় না পেয়ে আমার অন্য পরিকল্পনা শুরু করতে হয়।”

মোহন, সুমি এবং আরিফ তিনজনেই মাথা নিচু করে আছে। কোন কথা বলছে না। বাকিরাও চুপচাপ শুনছে৷ তাদের চোখ-মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে৷ শহিদুল আলমের কিছু হলে তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে তারা তাদের কর্মসংস্থান হারাবে। খুব বেশি চিন্তার জন্য এতটুকু কারণই যথেষ্ট।
দারোগা সাহেব বললেন, “হাঁপিয়ে উঠলে আরও এক গ্লাস পানি পান করুন। তারপর কথা শেষ করুন। এভাবে বসে থাকার সময় নেই।”
শহিদুল বললেন, “মাস ছয়েক আগে ঢাকার একটা শপিংমলে সুরভির সাথে পরিচয় হয়েছিল। ভুল করে আমাদের জিনিস বদলে যায়। সে বেশ মিশুক স্বভাবের। ভালো কথাবার্তা বলে। পরিচয় হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ রেখেছিলাম। ঠিক করলাম টাকা জোগাড় করতে ওকে ব্যবহার করব। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে এই শহরের আসে। এই কাজে ভাগ্য আমার সহায় ছিল। জানতে পারি সিমা তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। তাই সুরভিকে সীমার সাহায্য নিতে বলি।

সুরভি সিমার কাছে গিয়ে চাকরির কথা বলে। হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে। সিমা কিছু বুঝতে পারে না। সহজভাবেই নেয়। আমাকে বলে– তার এক আত্মীয় খুব অসহায়। কাজ জানে। যদি তার কিছু ব্যবস্থা করা যায়। আমি সুরভির চাকরি পাকা করে দিই।
এরপর শুরু হয় আসল কাজ,
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সুরভি অফিসের সবাইকে লোভনীয় ব্যবসার লোভ দেখায়। মুখরোচক গল্প শোনায় এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে দু-একজন বাদে সবাই ওর ফাঁ’দে পা দেয়। বাড়ির দলিলপত্র বন্দক রেখেও টাকা দেয়।
কথা ছিল টাকা যা উঠবে সুরভি সেখান থেকে সাত শতাংশ পাবে। ভাগাভাগি নিয়ে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না।”
হামজা বলল, “সমস্যা না থাকলে আপনি সুরভিকে সরিয়ে দিতেন না। কি এমন হয়েছিল যে খু’ন করতে হলো?”
“কথা অনুযায়ী সুরভি সবার টাকা কালেকশন করে আমায় পৌঁছে দিতে আসে। ওই বাড়িতেই ওকে ডেকেছিলাম। এখানেই চরম ভুল করে বসি। সেখানের যাওয়ার..”

“যেখানে যাওয়ার পর?”
“সবকিছু তার কাছে ধরা পড়ে যায়। সে ই’য়া’বা এবং কো’কেন দেখে ফেলেছিল। কিছু অ’স্ত্রও দেখেছিল। এরপর থেকে সে আমাকে ব্লা’ক’মে’ল করতে শুরু করে। মোট টাকার পঞ্চাশ শতাংশ দাবী করে বসে। সেই সাথে এই ব্যবসা থেকেও লাভের অংশ চায়। এত টাকা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে সুরভিকে সরানোর পরিকল্পনা করি। মোহন আগে থেকেই আমার ব্যবসার ব্যাপারে জানত। ওদিক থেকেও মোটা টাকা রোজগার করত।”
“সুরভির খু’নের জন্য কাকে ফাঁ’সা’তে চেয়েছিলেন?”
“আরিফকে!”

আরিফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শহিদুলের দিকে তাকাল। শহিদুল বললেন, “টাকা মা’র হয়ে যাওয়ার পর বাকিদের চেয়ে আরিফ বেশি চিন্তায় থাকত। তাই ওকে এই কাজে ব্যবহার করা সহজ ছিল। ঠিক করলাম আরিফের সাথে সু’র’ভির অ’বৈ’ধ সম্পর্ক দেখিয়ে সবকিছু ব্যবস্থা করে ফেলব। সুরভিকেও আরিফের ঘনিষ্ঠ হতে বললাম। সুরভি অনেক চেষ্টা করেছিল। তবে আরিফ কখনো এ পথে পা বাড়ায়নি। তাই মোহনকে বলে আরিফের শার্টের মতো একটা শার্ট আনিয়েছিলাম। আরিফ যে পারফিউম ব্যবহার করে, সেই একই পারফিউম শার্টে মাখিয়ে শার্টটা সুরভির বাথরুমে রেখে দিতে বলি।
এই কাজে আমি সবাইকে ব্যবহার করেছি।
সুমিকে দিয়ে আরিফের বউয়ের মনে স’ন্দে’হ ঢালতে চেয়েছি।
তারপর সুরভিকেও কাজে লাগিয়েছি।”

তানজিলা অদ্ভুত দৃষ্টিতে শহিদুলের দিকে তাকাল। তার চোখে ঘৃ’ণা এবং ক্রো’ধ স্পষ্ট। যেন এই মুহূর্তে তাকে ভ’স্ম করে ফেলবে। নাইমা বলল, “সুরভিকে কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন? সুমিকেই বা কি বলেছেন?”
“সুরভি আগে থেকে আমার সাথে কাজ করত। তাকে দিয়ে কাজ করানো সহজ ছিল। আর সুমিকে প্রমোশনের লোভ দেখিয়ে ছিলাম। বলেছিলাম– সামনের মাসে একজনকে প্রমোশন দেব। সে এবং আরিফ বেশ ভালো করছে। এরপর সুরভিই বাকি কাজ করে দিয়েছে।”
“খু’নটা কিভাবে করলেন? কে সাহায্য করেছে?”
“একজন লোক ভাড়া করেছিলাম। মকবুল সাহেব এ ব্যাপারে বেশ সাহায্য করেছে।”

নাইমা বলল, “আরিফ ভাই কেন সুরভির খু’নের দুই সপ্তাহ আগে থেকে ছু’রি ছোড়ার প্রাকটিস করছিলেন? তাছাড়া উনি সেদিন তানজিলা আপুকে সুরভির বাসায় যেতে নিষেধ করেছিলেন। ব্যাপারটা কি শুধুই কাকতালীয়?”
“একদমই না। আমিই আরিফকে একটা প্রতিযোগিতার ব্যাপারে বলেছিলাম। বলেছিলাম ঢাকায় খুব বড় একটা সার্কাস হবে। সেখানে ছু’রি ছোড়ার প্রতিযোগিতা আছে। জিততে পারলে লাখ দশেক টাকা পাওয়া যাবে। আমি জানতাম– এতটুকু শুনলেই আরিফ নতুন করে প্রাকটিস শুরু করবে। কারণ তার টাকার খুব দরকার। টাকা না পেলে না খেয়ে ম’র’বে।

আমি ওকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলাম– তুমি তো ভালো খেলোয়াড়, আমাদের এখানে জিতেছিলে। প্র্যাকটিস করো। আমি তোমার নাম লিখিয়ে দেব। আরিফ তখন নিজের মানসিক চাপ ভুলতে ছু’রি ছোড়াকে একধরনের থেরাপির মতো নিয়েছিল। আমি জানতাম, এভাবে ওর হাতে ছু’রি থাকলে সেটা আমার কাজে লাগবে।
সুরভির বাসার ব্যাপারটাও অনেকটা এমন। কথায় কথায় বলেছিলাম– সুরভি বাসায় ছেলে নিয়ে অ’নৈ’তি’ক কাজ করে। বেশিরভাগ সময় ওসব ছেলে তার বাসায় থাকে। খুব তাড়াতাড়ি সুরভিকে চাকরি থেকে বের করে দেব।
কোন পুরুষই চাইবে না তার মা-বোন এমন কোথাও যাক সেখানে তাদের সম্মানহানি হতে পারে।”
আরিফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। দারোগা সাহেব বললেন, “আরিফ সাহেব, আপনি এসব কথা আমাদের কাছে কেন লুকালেন? বললে তো আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম।”

বাতাস বলে দেয় পর্ব ২০

আরিফ শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল। থানার পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। সবাই চুপ করে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। দেখে মনে হচ্ছে তারা সবাই স্থির হয়ে গিয়েছে। নিঃশ্বাসও নিচ্ছে না।

বাতাস বলে দেয় শেষ পর্ব