বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩
রানী আমিনা

সন্ধ্যা নেমে গেছে……
রেড জোনের ভেতর শার্লট ও ফাতমা কে হাত পা সহ সমস্ত শরীর বেধে ফেলে রাখা হয়েছে মাটিতে। দুজনের কোমরে শক্ত করে দড়ি বেধে লম্বা দড়িটা বেধে দেওয়া হয়েছে একটা গাছের সাথে, যেন চাইলেও ওরা উঠে দৌড়ে পালিয়ে যেতে না পারে৷
ফল চুরির শাস্তি হিসেবে আগামী চব্বিশ ঘন্টা ওদের দুজনকে এখানেই থাকতে হবে এভাবে। সার্ভাইভ করতে পারলে চব্বিশ ঘন্টা পর এসে ওদেরকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সেইফজোনে।
আর ব্যর্থ হলে কোনো জংলী পশুর রাতের খাবারে পরিণত হবে ওরা!

ব্রায়ান বসে আছে ওদের দুজনের পাশে। চোখে মুখে ওর সতর্ক দৃষ্টি, কিন্তু সেই সতর্কতাকে ছাপিয়ে ওর চোখে ফুটে উঠেছে আতঙ্ক! কখন না জানি কোন দিক থেকে কোন হিংস্র প্রাণি আক্রমণ করে বসে ওদের ওপর!
চোখে মুখে ওর ভয়ানক ক্রোধ। সামান্য ফলচুরির জন্য ওর বোনকে ইচ্ছে করেই ওরা এমন শাস্তি দিয়েছে। এতদিনের সমস্ত রাগ থিয়োডর এভাবেই মিটিয়ে নিতে চাইলো? এতটুকু মায়া হলোনা ওর!
শার্লট কি ওরও বোনের মতো ছিলোনা? ওর যত শত্রুতা সবই তো ব্রায়ানের সাথে, তবে শার্লটের ওপর ও কিসের আক্রোশ মেটাতে এমন শাস্তি দিলো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শার্লট ফাতমা দুজনেই পড়ে আছে মাটিতে, সোজা হতেও অপারগ। শার্লটকে কয়েকবার উঠিয়ে বসিয়ে দিতে গেছে ব্রায়ান, কিন্তু বাধন গুলো এতই শক্ত যে শার্লট নিজের শরীর ভাজ করে বসতে পর্যন্ত পারছেনা!
ফাতমা চুপচাপ পড়ে আছে এক কোণায়, চোখ থেকে লোনা পানির ফোয়ারা নেমেছে ওর। আজই বোধ হয় এই দুনিয়ায় ওদের শেষ দিন।
সন্ধ্যা পেরিয়ে এখন সবকিছু আঁধারে ছেয়ে গেছে, এই অভিশপ্ত জঙ্গলের ভেতরে আজ রাতটা ওরা কিভাবে কাটাবে? কখন আবার বেলা উঠবে? কখন আবার ওরা সেইফজোনে ফিরে যাবে সুস্থ সবল ভাবে? এসব চিন্তাতে ভার হয়ে উঠছে ওদের মস্তিষ্ক।
কিন্তু তিনজনের সূর্যের আলো দেখার এই তীব্র অপেক্ষার ভেতরেই জঙ্গলের অদূরে শোনা গেলো কোনো নেকড়ের হিংস্র ক্রন্দনধ্বনি!

কেঁপে উঠলো শার্লট, চমকে তিনজনেই তাকালো নেকড়ের হিংস্র ধ্বনির উৎসের দিকে।
শার্লটের ভীতসন্ত্রস্ত কাঁপুনি স্পষ্ট চোখে বাধলো ব্রায়ানের। বোনের কাছাকাছি এগিয়ে এসে বসে এক হাতে শক্ত করে আগলে নিলো। শুকনো ঢোক গিলে বোনকে সাহস জোগাতে বলে উঠলো,
“ভয় পাস না, আমি আছি তো সাথে! কিচ্ছু হবেনা তোদের।”
কিন্তু ওর গলায় স্পষ্ট ভীতির উপস্থিতি টের পেলো শার্লট। ভাইয়ের এই অসহায়ত্বে চোখ ভিজে এলো ওর, ঠোঁট ভেঙে কেঁদে উঠে ও বলল,
“তুমি মাঞ্জারে ফিরে যাও ভাইয়া, নইলে আমাদের সাথে সাথে তুমিও মরবে! ফিরে যাও, আমার কথা শুনো!
কপালে মৃত্যু লেখা থাকলে আমরা আজ মরবো, কিন্তু আমাদের জন্য তুমি নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিওনা ভাইয়া! ফিরে যাও তুমি, কথা শুনো আমার!”

ভীষণ কান্না পেলো ব্রায়ানের। কান্নাটুকু গিলে ফেলে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওরা শুনতে পেলো জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে আসা এক ক্ষীণ ধাতব ঝনঝন শব্দ। একই সময়ে বেশ ভারী কোনো বস্তুকে মাটিতে হিচড়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার শব্দের সাথে সাথে কয়েকজনের কন্ঠস্বর।
চমকে তাকালো ওরা জঙ্গলের গভীরের পানে। কারা জানি এসেছে সেদিকে, নিজেদের ভেতরে উচ্চস্বরে কথা বলা আর হাসাহাসি করছে তারা।
কৌতুহলী দৃষ্টিতে ব্রায়ান তাকালো সেদিকে, কান খাড়া করে রইলো কিছু শুনতে পাওয়ার আশায়। কিন্তু শব্দগুচ্ছ গুলো ক্রমে ক্রমে মিলিয়ে গেলো জঙ্গলের গভীরের দিকে।
জায়গাটা আবারও হয়ে উঠলো নিরব, ঝিঝি পোকার তীব্র শব্দ হতে শুরু করলো চারদিক থেকে।
কিছু মুহুর্ত পরেই অদূরে, ঘন জঙ্গলের আড়ালে শোনা গেলো শুকনো পাতার ক্ষীণ মর্মর ধ্বনি, যেন কারা ধীর পায়ে, সন্তর্পণে হেটে আসছে ওদেরই দিকে।

পদশব্দ গুলো যে কোনো ক্ষুধার্ত মাংসাশী প্রাণীর ঝাকের সেটা বুঝতে বাকি রইলোনা কারো। আতঙ্কিত ব্রায়ান তাই আরও এগিয়ে এলো শার্লটের দিকে। বোনকে দুহাতে মাটি থেকে উঠিয়ে নিজের বুকের ভেতর নিয়ে চেপে ধরলো, ভীতসন্ত্রস্ত সতর্ক দৃষ্টি তখনো বড়বড় হয়ে চেয়ে রইলো ওদের চারপাশে ঘিরে ধরা অন্ধকারের দিকে।

মাটিতে টেনে হিচড়ে কোকোকে নিয়ে আসা হয়েছে লাইফট্রির সামনে। সাথে করে ওরা নিয়ে এসেছে একটা ইলেকট্রিক চেয়ার।
লিডার গার্ডটির আদেশে একজন গার্ড ইলেকট্রিক চেয়ারটি সময় নিয়ে সেট করলো লাইফট্রির ঠিক
ধাতব হাতলওয়ালা চেয়ারটির গায়ে মোটা মোটা স্ট্র্যাপ আর ধাতব তার জড়ানো। চেয়ারটির ঠিক ওপরে ঝুলছে ভারী হেলমেটের মতো দেখতে একটা ডিভাইস, যেটা সোজা মাথার ওপরে বসানোর জন্য তৈরি।
মেটালিক চেইনে বন্দি কোকোকে টানতে টানতে নিয়ে এসে বসানো হলো চেয়ারের ওপর। দৃঢ় হাতজোড়া টেনে দুটো মোটা মোটা চামড়ার বেল্ট দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হলো হাতলের সাথে, পা দুটো আটকানো হলো স্টিলের বেল্টে।
বুকের ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে পিঠ জুড়ে বড় একটা স্ট্র্যাপ কষে বেঁধে দিলো চেয়ারের সাথে যেন শরীর এক ইঞ্চিও নড়তে না পারে। আর এবার কোকোর গায়ে থাকা মেটালিক চেইনটা দিয়ে ওর পুরো শরীরটাই ঘুরিয়ে পেচিয়ে বেধে দেওয়া হলো চেয়ারের সাথে।

হাতপা ছুড়ে নিজেকে সেখান থেকে ছাড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকলো কোকো, কিন্তু ব্যর্থ হলো বরাবরের মতোই। কোনো ভাবেই নিজেকে ওই চেয়ার থেকে ও উঠিয়ে নিয়ে আসতে পারলোনা!
চোখে ওর ভেসে উঠলো আতঙ্ক—কিন্তু মুখের মধ্যে লেগে রইলো অদ্ভুত এক জেদ, যেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে ভাঙবে না, লড়াই জারি রাখবে।
সম্পুর্ন রূপে বাধা হয়ে গেলে একজন গার্ড এগিয়ে এসে কোকোর মাথা গলিয়ে পরিয়ে দিলো ধাতব হেলমেটটা। কোকো সজোরে মাথা নেড়ে বাধা দিতে চাইলো, কিন্তু কাজ হলো না।
হেলমেটের তারগুলো চলে গেছে ওপরের দিকে, যেখানে একটু আগেই অ্যারেঞ্জ করা এক বিশাল সুইচবোর্ডে মিটিমিটি করে লাল রঙা আলো জ্বলছে।

গার্ডটি সুইচবোর্ডে থাকা একটি মাত্র ভারী সুইচের দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো লিডারের আদেশের অপেক্ষায়। আদেশ টা পাওয়া মাত্রই সুইচ নামিয়ে দিবে সে।
লিও কাঞ্জি, হাইনা সহ বাকি বাচ্চাদেরকে হাটু মুড়িয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো পাশেই। কোকোর এমন অবস্থা দেখে বুক ফাটছে ওদের, কিন্তু কিছুই করার নেই, কিছুই না! কিন্তু এই ইলেকট্রিক শকে যে কোকো মরে যাবে! তখন কি করবে ওরা? কোকো যে ওদের ভাই, বড় ভাই!
শেহজাদী, হিজ ম্যাজেস্টি সকলেই চলে যাওয়ার পর এই কোকো ভাইজানই তো ওদেরকে আগলে রেখেছে সমস্ত কিছু থেকে। আজ তাকেই এইভাবে চোখের সামনে মরতে ওরা কিভাবে দেখবে!
লিও কয়েকবার আশেপাশে তাকিয়ে হাটুতে ভর দিয়ে তড়িতে এগিয়ে গেলো লিডারের দিকে, লিডার গার্ডটির পায়ের কাছে পড়ে হাত জোড় করে অনুনয়ের সুরে বলে উঠলো,

“এবারের মতো কোকো ভাইজান কে ছেড়ে দিন, সে আর কখনোই আপনাদের কোনো কাজে বাধা দিবেনা। এবারের মতো ছেড়ে দিন ভাইজানকে!
শাস্তি আরও অনেক ভাবেই দেওয়া যাবে, আপনি যা শাস্তি দিবেন আমরা মাথা পেতে নেবো সকলেই। ইলেকট্রিক শক দিলে মরে যাবে ও, ছেড়ে দিন ওকে এবারের মতো!”
লিওকে এভাবে অনুনয় করতে দেখে চেয়ারে বসে নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকা কোকো ওকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত পিষে তীর্যক গলায় বলে উঠলো,
“একদমই ওই কুকু**রের বাচ্চার সামনে নত হবিনা লিও। আমি মরলে মরবো, তবুও এই মানুষরূপী শুক**রের সামনে মাথা নোয়াবি না! পারলে সবগুলোকে জ*বা/ই দিয়ে দিবি!”
বলেই নিজের হিংস্র দৃষ্টি ফেললো ও লিডার গার্ডটির ওপর। লিডার ওর এমন স্পর্ধা দেখে তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো একবার, বলল,

“শেহজাদী তোকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন, তাইনা? মরার পর তার সাথে দেখা করা যেন তোর তাড়াতাড়ি হয় তাই এখানে নিয়ে এসেছি। কম সময়েই দেখা করতে পারবি, সময় বাঁচিয়ে দিলাম তোর৷ দেখেছিস আমি কত মানবিক? উহু মানবিক নয়, জানোয়ারিক।”
বলেই হা হা করে হাসলো সে, পরমুহূর্তেই পাশে থাকা কাউকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে উঠলো,
“একে কিছুক্ষণ পর পর হাই ভোলেটেজের শক দিবি। এ কিন্তু সহজে মরবেনা, তাই ওর যন্ত্রণাও খুব এনজয়েবল হবে। খানিক সময় পর পর অল্প অল্প করে শক দিবি ওকে, সারা রাত ধরে শক দিবি। তবে রাত পোহানোর আগেই যেন এই দুনিয়ে থেকে দূর হয়ে যায়। সকালের আলো দেখার সৌভাগ্য যেন ওর না হয়!”

লিডার গার্ডটি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে চলে গেলো অন্যদিকে। বাকিরা রয়ে গেলো সেখানেই।
কোকোকে শক দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হলো। বাচ্চাগুলোকে সেখানে সারিবদ্ধ ভাবে হাটু মুড়িয়ে বসিয়ে রাখলো গার্ডরা। লিডারের এমনই আদেশ, যেন কোকোকে দেওয়া শাস্তির দৃশ্য দেখে তারা একটু হলেও ওয়্যেল ম্যানার্ড হয়!
ঝড়ো নিঃশ্বাস ফেললো কোকো, নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো আসন্ন যন্ত্রণার জন্য! ঘামে ভিজে উঠলো ওর কপাল, আর পরের মুহূর্তেই ক্লিক শব্দে সুইচটা নামানোর সাথে সাথেই শরীরটা ভীষণ জোর কেঁপে উঠলো কোকোর। বিদ্যুতের ঝলক ছড়িয়ে পড়লো সারা শরীরে! মুখ থেকে বেরিয়ে এলো চাপা হিংস্র গর্জন!
প্রথমে এক মুহূর্তের জন্য হিমশীতল অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো ওর সমস্ত শরীর, আর তার পরমুহূর্তেই শরীরের সমস্ত রক্ত টগবগিয়ে ফুটতে শুরু করলো যেন!

ভীষণ যন্ত্রণায় দাঁত খিচে গেলো কোকোর! আঙুলগুলো মুঠো পাকিয়ে গেলো, সমস্ত শরীর খিঁচিয়ে উঠলো! হাত-পা একসাথে তীব্র বেগে ছুড়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলো কোকো। কিন্তু স্ট্র্যাপগুলো এতটাই শক্ত যে সে নড়তে পর্যন্ত পারলোনা।
বিদ্যুতের ভীষণ ঝটকায় মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো এক অদ্ভুত দমবন্ধ গর্জন, যেন শরীরের প্রতিটা স্নায়ু জ্বলে উঠছে ওর!
ধাতব চেয়ারের পেছনে উঠলো স্পার্ক, মুহুর্তেই পোড়া মাংসের গন্ধে ভরে গেলো চারপাশ! চোখজোড়া উলটে গেলো মুহূর্তেই, নিঃশ্বাস হয়ে উঠলো অনিয়মিত। বিদ্যুতের ভীষণ ধাক্কা ছিন্নভিন্ন করে ফেলার উপক্রম করলো কোকোর বিশাল দেহটিকে।

সুইচ বন্ধ হলো সেই মুহুর্তে। কোকোর শরীরটা বিদ্যুতের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেয়ে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে মাথাটা ঢোলে পড়লো একপাশে। বাতাসে ঘুর্ণি পাকিয়ে উঠলো পোড়া চামড়ার গন্ধ, শরীর থেকে উড়তে শুরু করলো ধোঁয়া।
গার্ডের কয়েকজন একে একে এগিয়ে এলো তখন, একজন হাত বাড়িয়ে কোকোর হাতের নাড়ি স্পন্দন পরীক্ষা করলো। এখনো চলছে, ক্ষীণ ভাবে৷ পাশ থেকে অন্য আর একজন গার্ড ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
“ভোল্টেজ বেশি হয়ে গেছে, এরকম দিলে আরেকবার সুইচ টিপলেই কেচ্ছা খতম হয়ে যাবে। এবার থেকে অল্প অল্প দিবো।”

কোকো শ্বাস নিচ্ছে তখনো, খুব ধীরে, অস্থিরভাবে। বিদ্যুৎ যেন শরীরের সমস্ত শক্তি শুষে নিয়েছে তার। কিন্তু তাতে একফোটাও কমেনি তার চোখের গভীরের জ্বলন্ত আগুন!
মাথা থেকে ধাতব হেলমেটটা খুলে ফেললো গার্ডগুলো, ধোঁয়া উড়তে লাগলো কোকোর মাথা থেকে। শরীরের অনেকাংশ ঝলসে গেছে তার, সেগুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান।
বাকি বাচ্চাগুলো কোকোর এমন অবস্থা দেখে দমবন্ধ হয়ে পড়ে রইলো, আল্পফাদ জোভি দুজনেই চোখ খিচে বন্ধ করে পড়ে আছে! এই দৃশ্য দেখার মতো সাহস ওদের নেই!
ওদের সকলের হাতে বাধা বিশেষ ধাতব শেকল, ওরা কোনোভাবেই নিজেদের অ্যানিম্যাল ফর্মে আসতে পারবেনা। আর প্রচন্ড চেষ্টার পর কোনোভাবে আসতে পারলেও ওদের গলা, কোমরে বাধা মেটালিক চেইনে কাটা পড়বে ওদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ!

বাধ্য হয়ে তাই অথর্বের মতোন বসে রইলো ওরা। ক্রোধে পরিপূর্ণ বাষ্প জমা চোখে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ওদের!
কোকো নিভু নিভু চোখে কোনোরকমে একবার তাকালো সামনের দিকে। কোকোর এমন দৃষ্টি লক্ষ্য করে একজন গার্ড বাকি বাচ্চাদের উদ্দ্যেশ্যে তাচ্ছিল্যভরে বলে উঠলো,
“দেখেছো তো! এখন থেকে যে-ই বেশি পাকনামি করবে তাকেই সোজা এখানে নিয়ে এসে জাহান্নামের দরজায় আছাড় মেরে ফেলা হবে।”
বলে হিহি করে হাসলো সে। বাচ্চারা জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। গার্ডগুলো এবার সেখানের দুজন গার্ডকে কিছুক্ষণ পর পর শক দেওয়ার জন্য কোকোর কাছে রেখে, বাকি বাচ্চাদেরকে নিয়ে এগোলো আবার ফার্ম হাউজের দিকে। বেয়াদবি করার জন্য আজ এদের বিশ্রাম নেয়ার সুযোগটুকু আর দেওয়া হবে না। সারা রাত ননস্টপ কাজ করতে হবে৷

রেড জোনের ভেতর সুশীতল পরিবেশ, আকাশে গাঢ় কালো মেঘের উপস্থিতির কারণে আরও অন্ধকার হয়ে এসেছে চারপাশ।
আসপাশটা স্তব্ধ, ঝিঝি পোকা গুলোও যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছে এই মুহুর্তে। শুধুমাত্র নেকড়ের করুণ ক্রন্দনধ্বনি ও হায়েনার নিষ্ঠুর হাসি ব্যাতিত আর কোনো শব্দই কর্ণগোচর হচ্ছে না কারো! 🦅
ব্রায়ানের হাতে একটা মোটাসোটা ভারী গাছের ডাল, মাটিতে পড়ে থাকা শার্লট আর ফাতমাকে আগলে দাঁড়িয়ে সতর্ক দৃষ্টিতে সে নজর রাখছে চারপাশে।

অদূরেই জঙ্গলের গভীরে, গাছের আড়ালের গাঢ় অন্ধকারে এক ঝাক নেকড়ে আর হায়েনা তাদের লক্ষ্য করে দাঁড়িয়ে। অন্ধকারের ভেতরেও জ্বলজ্বল করে উঠছে তাদের শিকারী চোখের অদৃশ্য তীব্রতা, যেন মুহূর্তেই ছুটে আসবে, কামড় বসিয়ে দেবে গলার নলিতে তারপর টেনে হিচড়ে নিয়ে যাবে জঙ্গলের গহীনে!
শক্তিশালী নেকড়ে গুলো কিছুক্ষণ পরপর ঝোপঝাড় পেরিয়ে ঠিক করে নিচ্ছে নিজেদের অবস্থান। শোনা যাচ্ছে শুকনো পাতার ওপর তাদের পা ফেলানোর মর্মর ধ্বনি!
শার্লট আর ফাতমাকে আগলে দাঁড়ানো ব্রায়ান বার বার হাতের লাঠিটা উচিয়ে এগিয়ে গিয়ে এদিক সেদিক দেখে আসছে যেন ওদের চারপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়ানো জন্তুর পাল গুলো ওদেরকে আক্রমণ না করে বসে!
চোখে ওর ভয়, ভীষণ ভয়! কিন্তু মুখের ওপর ফুটে আছে দৃঢ়তা। নিজেকে প্রচন্ড চেষ্টায় সামলে রাখতে চাইছে ও। ও ভয় পেলে যে ওর বোনটাও ভয় পাবে!

আত্মবিশ্বাসী এক নির্ভীক যোদ্ধার ন্যায় ও দাঁড়িয়ে আছে।এক মুহূর্তের জন্যও যদি আজ আত্মবিশ্বাস হারায়, তবে আজ হয়তো বোনটাকে নিয়ে আর বেঁচে ফিরতে পারবেনা। পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা জঙলি পশুগুলোর অদৃশ্য অবয়বকে চ্যালেঞ্জ করে হাতের লাঠিটা মুঠির ভেতর আরও শক্ত করে ধরলো ব্রায়ান, এটাই ওর অস্ত্র; জীবনের শেষ আশ্রয়।
জন্তু গুলোর পায়ের আওয়াজ দৃঢ় হলো হঠাৎই! বুক কাঁপলো ব্রায়ানের, ঢোক গিলোলো একটা শুকনো। পেছনে মাটিতে একে অপরের কাছ ঘেঁষে পড়ে থাকা শার্লট আর ফাতমা ভয়ে কেঁদে উঠলো, কিন্তু শব্দ হলো না সে কান্নায়, শুধু শোনা গেলো চাপা গোঙ্গানির শব্দ!

অন্ধকারের ভেতর শব্দ তুলে নেকড়ে আর হায়েনার ঝাঁক এগিয়ে আসছে ওদের দিকে, ক্রমশ তীক্ষ্ণ হচ্ছে তাদের পা চালানোর আওয়াজ।
ব্রায়ান প্রস্তুত করে নিলো নিজেকে। বুক ভরে দম নিয়ে হাতের লাঠিটা উঁচু করে ধরলো। এক ঝাঁক পশু, আর তাদের বিপরীতে শুধু একটিমাত্র মানুষ; দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে, অগ্নিমুখী!
আজ শুধু একটিমাত্র ভুল— আর তারপরেই চলে আসবে এ পৃথিবী থেকে তাদের চিরবিদায় নেওয়ার পালা……

নিকষ কালো অন্ধকার রাত। মেঘেরা ভারী হয়ে কালো ছায়ার মতো জমে আছে আকাশে, যেন খুব সখ্যতার চোটে একে অপরকে ভিড়িয়ে বসে আছে তারা।
চাঁদের আলো হারিয়ে গেছে দূরে কোথাও! তার স্থলে কেবলই অন্ধকার আর মেঘের অস্বস্তিকর প্রলেপ।
বাতাসে টানটান উত্তেজনা— সে মাঝে মাঝে একেবারে থেমে জিড়িয়ে নিচ্ছে, তারপর আবার মৃদু ঝড়ো হাওয়ায় ছলকে দিচ্ছে গাছের শাখাগুলোকে। কিসের এক অশনি সংকেত দিয়ে যেন বার বার সে ঘুরে ফিরে চলেছে রেড জোনের ভেতর দিয়ে।

কোকো এখনো বসা ইলেকট্রিক চেয়ারের ওপর, চামড়া পোড়া গন্ধে ভারী হয়ে গেছে বাতাস। বিন্দুমাত্র শক্তিটুকু অবশিষ্ট নেই তার শরীরে, ভীষণ ক্লান্ত মাথাটা হেলে আছে একদিকে।
আরও কয়েকবার মাইল্ড শক দেওয়া হয়েছে তাকে, কিন্তু কুমিরের প্রাণ কিনা! মরতে চাইছেনা।
গার্ড দুটো মাটিতে বসে সিগারেট টানছে। মধ্যরাত পার হতে আর কয়েক মিনিট। বারোটা পার হলেই আর একটা শক দিবে ওরা কোকোকে। সময় ভাগ করে করে জিড়িয়ে জিড়িয়ে শক দিচ্ছে ওরা, মজা লাগছে ওদের ভীষণ!
কোকো হুশে নেই, ওর সাব কন্সাস মাইন্ড এখন ঘুরে চলেছে অতীতে। সেখানে দেখা যাচ্ছে একটি মুখ— শ্বেত শুভ্র, ভীষণ সুন্দর, অপরূপ একটি চেহারা। হাসছে নারীটি ঝলমলিয়ে, তার হাসির সুমিষ্ট ঝংকার কানে বেজে চলেছে কোকোর।

হাত বাড়িয়ে একবার ছুয়ে দিলো সে কোকোর ঝাকড়া চুলের গুচ্ছ, এলোমেলো করে দিলো পরিপাটি করে রাখা চুলগুলো।
শিশুর মতো হেসে উঠলো কোকো, মায়ের অতি আদুরে স্পর্শে সে ছোট্ট বালকটির ন্যায় খুশি হলো, ঝিলিক দিয়ে উঠলো চোখ জোড়া।
ইলেকট্রিক চেয়ারে বসা কোকোর মুখেও অবচেতনে ফুটে উঠলো হাসি, ক্ষীণ হাসি। মায়ের অদৃশ্য ছোয়া যেন শান্ত করলো ওকে, প্রশমিত করে দিলো ওর বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ সমস্ত ক্ষতের যন্ত্রণা!
শুভ্র রমণীটি কোকোর মুখখানা নিজের দুহাতের ভেতর নিয়ে উচু করে ধরে ভ্রু তুলে অত্যন্ত আদুরে ভঙ্গিতে শুধোলো,
“কষ্ট হচ্ছে অনেক?”
কোকোর হাসি মুখখানায় নিমিষেই ভিড়লো আধার, ঠোঁট ফুলে উঠলো, চোখের কোণে জমলো বারি। ফুপিয়ে উঠে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল,

“খুব যন্ত্রণা হচ্ছে আম্মা! আমাকে আপনার কাছে নিয়ে চলুননা, আমি এখানে থাকবোনা। আপনি আবার আমাকে মুখে তুলে ভাজা মাছ খাওয়াবেন, আমি আপনার কোলে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে মাছ খাবো।
কাল থেকে আমি কিচ্ছু খাইনি আম্মা, আপনার পেটুক বাচ্চাকে ওরা এক ফোটা পানিও খেতে দেয়নি আম্মা। আমাকে নিয়ে চলুন আপনার কাছে, আমি পেট ভরে খাবো!”
ওর শিশুর ন্যায় অভিমানে ফুলে ওঠা ঠোঁট জোড়াতে হাত বুলিয়ে দিয়ে সফেদ চুলের মনোমুগ্ধকর মেয়েটি রিনরিনে কন্ঠে বলে উঠলো,

“এই তো, আর একটু ধৈর্য ধরো, এখুনি তুমি আমার কাছে চলে আসবে। তখন তোমার আম্মা অনেক অনেক রান্না করবেত তোমার জন্য। তুমি অনেক অনেক খেয়ো, পেট ভরে খেয়ো, কেমন?”
কোকো সুবোধ বালকটির ন্যায় সোৎসাহে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো, তখনি শ্বেতশুভ্র মেয়েটি ছেড়ে দিলো ওকে নিজের আলিঙ্গন থেকে, তারপর কোকোর নিকট থেকে ধীরে ধীরে হেটে চলে যেতে থাকলো পেছন দিকে, অনেক দূরে, ভীষণ ধোঁয়াসার ভেতর৷
আতঙ্কিত হলো কোকো, ভড়কানো গলায় ডাকলো দুবার,
“ আম্মা, আম্মা……!”

শুনলোনা তার আম্মা, চোখের আড়াল হয়ে গেলো মুহুর্তেই! ইলেকট্রিক চেয়ারে বসা কোকো অস্থির হয়ে উঠলো, ছটফট করে উঠে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো নিজেকে। ওর আম্মা যে চলে যাচ্ছে, আটকাতে হবে এবার ওর আম্মাকে, নইলে যে আর কখনোই ফিরে পাবেনা!
গার্ড দুটো কোকোর এমন অস্থিরতায় সচকিত হয়ে উঠলো, মাটি থেকে উঠে এগিয়ে এলো ওরা কি হচ্ছে বোঝার জন্য৷ ওরা এগিয়ে আসা মাত্রই ছটফট করতে থাকা কোকো ঝট করে চোখ খুলে ফেললো হঠাৎ! তারপর আতঙ্কিত হয়ে তড়িতে একবার চারদিকে তাকিয়ে কাঙ্ক্ষিত রমণীটিকে খোঁজার প্রচেষ্টায় ভীষণ আর্তনাদে, চিৎকার করে ডেকে উঠলো,
“আম্মা….. আম্মা…..!”
আর ঠিক সেই মুহুর্তেই কেঁপে উঠলো শিরো মিদোরির মাটি…

দেমিয়ান প্রাসাদের রয়্যাল ফ্লোরে নিজের কামরায় টেবিলের সামনে বসে আছে ইলহান, মাথার ওপর ঝুলে আছে স্ফটিকের স্বর্ণাভ দ্যুতি ছড়ানো ঝাড়বাতি। আলোর প্রতিফলনে ওর দীর্ঘ ছায়াটা আরও দীর্ঘ হয়ে পড়ছে টেবিলের ওপর। সামনে ছড়ানো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।
ইলহানের কপালে ভাঁজ, ভ্রু কুঁচকে গেছে গভীর মনোযোগে। আঙুলের মাথায় কলমের ঢাকনা, সেটাকে অবচেতন মনে ঠোঁটের কাছে নিয়ে যাচ্ছে বারবার।

একবার ঝুঁকে দেখছে কাগজের ওপর, পরক্ষণেই আবার হেলে যাচ্ছে পেছনে। চোখে ক্লান্তি, কিন্তু দৃষ্টি তীক্ষ্ণ, যেন সামনে থাকা কাগজ সমূহের ওপর ছাপানো প্রতিটি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অর্থগুলো বুঝতে চাইছে।
বা হাতের আঙুলগুলো কয়েকবার চিন্তায় ভাজ পড়া কপালের ওপর দিয়ে বয়ে নিয়ে গেলো, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উলটে দিলো পৃষ্ঠাটা। এসব কাগজ পত্রের ঝামেলা ওর আর ভালো লাগছেনা। ওর দুই মিনিটের ছোট ভাইটা কিভাবে সারাদিন এসব কাজ সামলাতো ওর মাথায় আসেনা!

ওর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কেঁপে উঠলো মেঝে, মাথার ওপর থাকা ঝাড়বাতিটা দুলে উঠে ইলহানের লম্বা ছায়াটার স্থান পরিবর্তন করে দিতে থাকলো বারংবার। চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো ইলহান। ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?
কিন্তু কিয়ৎক্ষণ বাদেই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো সবকিছু, শান্ত হয়ে এলো শিরো মিদোরির মাটি। বার কয়েক দুলে স্থীর হয়ে গেলো মাথার ওপর থাকা ঝাড়বাতিটা।
ইলহান কিছুক্ষণ নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে অতঃপর চিন্তিত চোখে তাকিয়ে পা চালিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে।
ইযান আতঙ্কে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, বিস্ফোরিত চোখ ওর নিচের দিকে, কাঁপা-কাঁপি লেগে গেছে ওর!
ইলহান এগিয়ে এসে শুধালো,
“ইযান, ঠিক আছো তুমি?”

ইযান ছেলেটা ইলহানের কথা শোনা মাত্রই হুশে ফিরলো যেন, বড় বড় দিম নিতে নিতে রেলিং এর কাছ থেকে ধীরে ধীরে সরে এসে ও ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে, ইলহান কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো ইযানের দিকে৷
ইযান কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলে উঠলো,
“ইয়োর ম্যাজেস্টি, আর একটু হলে আজরাইলের কোলের ভেতরে গিয়ে পড়ছিলাম! আমি ছিলাম রেলিঙের কাছে, হঠাৎ ভূমিকম্প হওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে আমি পড়েই যাচ্ছিলাম আর একটু হলে। ভাগ্য ভালো সময় মতো রলিং টা ধরতে পেরেছিলাম, নইলে আজ নিচে পড়ে ভর্তা হতাম আমি!”
বলে আরও দুবার বড় বড় দম ফেললো ইযান। ইলহান ইযানের দিকে কিছুক্ষণ হতাশ চোখে তাকিয়ে থেকে অতঃপর কামরায় ফিরে যেতে যেতে বলল,
“কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা খোঁজ নাও৷”
ইলহান ভেতরে যেতে না যেতেই বাইরে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি, সেই সাথে বিকট শব্দে মেঘের গর্জন। ইলহান ঘাড় ঘুরিয়ে একবার বাইরে তাকিয়ে আবার ঢুকে গেলো কামরায়।

রেড জোনের ভেতর ঝুম বৃষ্টিতে সয়লাব হয়ে উঠেছে চারদিক। মুহুর্তেই মেঘের গর্জনে ছেয়ে গেছে শিরো মিদোরি। বিদ্যুতের চমকে ক্ষণে ক্ষণে আলোকিত হয়ে উঠছে রেড জোনের সমস্তটা!
গার্ড দুটো কোকোকে স্থীর করার জন্য ওকে আরও ভালোভাবে বাধছিলো। কিন্তু হঠাৎ ভূমিকম্প আর ঝুম বৃষ্টিতে ওদের সে কাজে বাঁধা পড়ে। দুজন দ্রুত গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো অদূরেরই একটি গাছের তলে। কিন্তু তাতেও কোনো বিশেষ লাভ হয়নি। ঝড়ো বাতাসে গাছের ডালপালা ভীষণ গতিতে একে বেকে দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে ওদের।

এতক্ষণ ধরে হুশহীন থাকা কোকো হঠাৎ বৃষ্টিতে সম্বিত ফিরে পেলো। ক্ষতবিক্ষত দুর্বল শরীর নিয়ে ও চেষ্টা করলো একবার উঠে দাড়ানোর, কিন্তু শরীরটা যে আটকানো লোহার শেকল দিয়ে!
নড়েচড়ে উঠে কয়েকবার চেষ্টা করলো ছাড়ানোর, কিন্তু শরীরের ক্ষতগুলোর প্রচন্ড যন্ত্রণায় হাল ছেড়ে দিয়ে বসে পড়লো আবার, শরীর ভেজালো বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে; জ্বালাপোড়া গুলো যেন একটু প্রশমিত হয়!
ওর অবচেতন মন হঠাৎই স্মরণ করলো আজ এপ্রিলের বাইশ তারিখ, রাত বারোটা পেরোলেই ওর আম্মার জন্মদিন৷
বুক ভরে সম নিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালো কোকো, চোখ বুজে নিলো। আজ হয়তো এ জীবনের শেষ দিন, এই যন্ত্রণা সহ্য করার মতো শক্তি ওর শরীরে আর অবশিষ্ট নেই। আর হয়তো কিছু মুহুর্ত!
বৃষ্টির বড় বড় ফোটা এসে ঝুপঝাপ করে পড়লো ওর মুখের ওপর, ভিজিয়ে দিলো মুখখানা, ধুয়ে নিয়ে গেলো অশ্রুফোটা গুলোকে। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো কোকোর ঠোঁটের কোণে।

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২

সেই মুহুর্তেই দূরবর্তী অ্যানিম্যাল টাউনের বিশাল ঘড়ির ক্ষীণ ঢং ঢং শব্দ জানান দিলো পরবর্তী দিনের সূচনার।
বড় করে একটা শ্বাস ছাড়লো কোকো, তারপর চোখ বুজে রেখেই বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
“হ্যাপি বার্থডে আম্মা…!”
কোকোর উইশ শেষ হতে না হতেই ওর সম্মুখে অন্ধকারের ভেতরে দন্ডায়মান বিশাল, অতিপ্রাকৃতিক, হাজার বছর ধরে দন্ডায়মান বৃক্ষটি সহসায় নড়ে উঠলো সম্পুর্ন অপ্রত্যাশিতভাবে……

বাদশাহ নামা তৃতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here