বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২১
ইশরাত জাহান
রাত গভীর হয়ে এসেছে।দিজার সাথে গল্প করে নিজ থেকে ঘরে আসে শোভা।এসে দেখতে পায় এখনো দরজা লাগানো।শোভা কড়া নারে।দর্শনের কোনো সাড়াশব্দ নেই।শোভা আশেপাশে তাকিয়ে ডাক দিলো,“দরজা খুলুন।”
দর্শন খুলল না বরং সে ব্যালকনিতে বসে আছে।শোভা দরজা ধাক্কাচ্ছে এটা তার কর্ণে পৌঁছায়নি।অনেকক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কানোর পর অতিষ্ঠ হয়ে শোভা বসে পড়ে মেঝেতে।দরজায় হেলান দিয়ে আছে।মনটা খারাপ হয়ে গেলো।ঢাকায় যাওয়ার জন্য ব্যাগ এখনো গোছানো হয়নি।দর্শন দরজা না খুললে ভিতরে যেতেই তো পারছে না।শোভার আর ইচ্ছা করছে না এই বিষয়ে কাউকে বিরক্ত করতে।অনেক হয়েছে লোকজন জানানো।তাকে নিয়ে সবাই পড়ে থাকলে হবেনা।এবার তাকেও কিছু করতে হবে কিন্তু কিই বা করতে পারবে?মাঝে মাঝে মন চায় এই জীবন শেষ করে দিতে।কিন্তু শেষ করতে চাইলেই শেষ করা যায়না।শোভা হাঁটুতে মাথা গুঁজে ওখানেই বসে রইলো।মনে মনে বলল,“আমি এই দিনগুলো ভুলব না।অনেক হয়েছে নিজের অধিকার চাওয়া।এবার আমি আমার আত্মসমান খুজবো।”
চোখের পানি মুছলো শোভা।কান্নায় বুকের মাঝখানে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।ঠোঁট কামড়ে আছে কান্না করে দিবে তাই।কেউ দেখার নেই তাকে।এই একাকীত্ব অনুভব তাকে করতে হবে কোনোদিন ভাবেনি।সে তো একাই কিন্তু এই একার মাঝেও এভাবে অসহায় কোনোদিন হয়নি।দর্শন তাকে কোনোদিন মেনে নিবে না।শুধু সম্পর্কের নাম যতদিন আছে দায়িত্ব পালন করবে।শোভা এর মাঝেই নিজের জন্য কোনো ব্যবস্থা করবে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ভোরবেলা আযানের শব্দ পেয়ে ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠলো দর্শন।মাথাটা ঝিমঝিম করছে।কানে সারারাত হেডফোন থাকার কারণে এখন কানটাও ব্যাথা।মোবাইল বন্ধ হয়েগেছে।ঘরে এসে মোবাইল চার্জ দিলো।আযান দেওয়ায় মনে পড়ল শোভার কথা।বিছানায় চোখ রাখতেই পেলো না তাকে।ভ্রুকুটি করে ভাবতে লাগলো।মনে পড়ল রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মেয়েটাকে ঘরছাড়া করেছিল।বাকি কিছু না ভেবে চলে গেলো ওযু করতে।টুপি মাথায় দিয়ে দরজা খুলেই দেখলো শোভা পাশেই হাঁটুগেড়ে ঘুমিয়ে।মনে মনে বলে,“এই মেয়ে দিজার ঘরে জায়গা পেলো না নাকি?”
শোভাকে ডাকার জন্য গলা খাঁকারি দেয়।একটুতেই নড়ে ওঠে শোভা।চোখ মেলে উপরের দিকে তাকাতেই দেখে দর্শন।কোনো উত্তর না দিয়ে হামি তুলে উঠে দাড়ালো।দর্শনের সাথে বাক্য ব্যয় না করে ওযু করতে গেলো।দর্শন নিজেও চলে গেলো মসজিদে।
নামাজ শেষ করে ব্যাগ গোছাতে লাগলো শোভা।এমনিতেও অনেক কিছুই গোছানো আছে তার কিন্তু ভাঁজগুলো ঠিক আছে কিনা একটু দেখে নিলো।ভাইয়ের দেওয়া মোবাইল দেখে ভাবছে,“এবার এটার ব্যবহার শিখে নিবে।”
দর্শন নামাজ পড়ে এসে দেখলো শোভা ব্যাগ গোছানোর কাজে ব্যস্ত।কোনো কথা না বলে সে ল্যাপটপে কাজ করছে।বিভিন্ন আপডেট চেক করছে এখন।কোম্পানিতে স্যামসাং ব্র্যান্ডের নতুন ফ্রিজ আনা হবে।মোবাইল নিয়ে একটা শোরুম ওপেন হয়েছে এবার ফ্রিজ।এগুলোই ঘাটাঘাটি করছে দর্শন। দিজা এসে চা দিয়ে একবার শোভার দিকে তাকালো আবার দর্শনের দিকে।শোভার কাছে এসে বলে,“তোমার জন্যও আম্মু চা পাঠিয়েছে।আচ্ছা তোমরা কি রাতে ঘুমাওনি?”
শোভা গলা ঝাড়া দিয়ে বলে,“ঘুমিয়েছি,কেন?”
“দুজনের চোখ ফোলা তাই।”
শোভা উত্তর না দিয়ে চা নেয়।দর্শন আগেই চায়ে চুমুক দিলো।দিজার উদ্দেশে প্রশ্ন,“তোদের গোছানো হয়েছে?”
“হ্যাঁ,ভাইয়া।”
“একটু পরেই বের হবো।”
“এত সকাল সকাল?”
“ওখানে গিয়েই গোছানোর কাজ আছে।কাল যেহেতু ভর্তি পরীক্ষা তোদের আগেই পৌঁছানো ভালো।আমাকেও একটু ব্যাস্ত থাকতে হবে।”
“ওহ।”
শোভা শোনা মাত্রই কল দিলো মিতুকে।ওপাশ থেকে ধরতেই মিতু বলে,“আসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভাবী।আমরা একটু পর বের হবো।”
“বিকালে না?”
“উহু।”
“কি হলো?”
“জানি না।যাওয়ার আগে জানিয়ে দিলাম তোমাকে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে,আসছি।”
শামীম প্রশ্ন করে,“কি হলো?”
“ওরা একটু পরেই বের হবে।”
“তাহলে চল খেয়ে ওদের সাথে দেখা দেই।একদিক থেকে ভালো হলো।ওদের সাথে দেখা দিয়ে অফিসে যাবো।”
“দুপুরে খেতে আসবা না?”
“যদি দেরি করে অফিস যাই তাইলে দুপুরে আসতে দেবে না আর সময়মতো পৌঁছালে আসতে দিবে।”
দিজা নিচে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে দাদাজানকে বলে,“তোমার বড় নাতি আবারো ঝামেলা বাদিয়েছে।দুইজনে দুইদিকে মনক্ষুন্ন হয়ে আছে।”
দাদাজান চ বোদক শব্দ করে বলেন,“মেয়েটাকে মন খারাপ হতে দিব না বলেই তো অতকিছুঁ জানালাম না। এই ছেলে দেখি সবসময় বাড়াবাড়ি করে।”
“ভাইয়ার মনের অবস্থা একবার বোঝো দাদাজান।এমন অবস্থার মুখোমুখি হলে মাথা ঠিক থাকে কার?”
দিদারের কথা শুনে দিজা থমকে পিছন ফিরল।ভাইয়ের ভালোবাসার বিচ্ছেদ ঘটেছে কাল।দিদার গাড়িতেই সব শুনেছে।এখন নিজের উপরেই বিতৃষ্ণা কাজ করছে।তার দ্বারা পরিবারের সকলের মনে কত বড় একটা আঘাত লাগলো।নিজেকে দায়ী করে দিদার।দিদারের চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সারারাত সে ঘুমায়নি বরং কান্না করেছে একা নীরব ঘরে।ভুল করে কেউ শুধরালে তাকে কিছু বলা বেকার।বরং এই শুধরানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।তাহলে পরে সে একতা বজায় রেখে ভালো কাজে উদ্যত হবে।দিদারের দিকে চেয়ে দাদাজান মৃদু হেসে বলেন,“তুমি তোমার ভাইয়ের ব্যাথা অনুভব করছো তাহলে?”
দিদার চোখ তুলে তাকিয়ে বলে,“আসলে সত্যি তো এটাই যে,অন্যের ব্যাথা কখনও অনুভব করা যায়না।নিজের ব্যাথা নিজেকে অনুভব করানো হয়।আমরা শুধু নীরব সাক্ষী থাকি।ভাইয়ার ব্যাপারটা বুঝতে হলে আমাদেরকেও ওই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।যেটা আংশিক হয়েছি।”
“তাই বলে তো আর সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবেনা।শোভা মেয়েটিকে বুঝতে হবে।”
“ভাবীকে বুঝতে গেলে আগে ভাইয়ার মস্তিষ্কে ভাবীর বিষয়ে জানান দিতে হবে।ভাইয়া টোটালি এসবে নিজে থেকে মাথা ঘামাবে না।প্রত্যেকটা সমস্যার উপায় থাকে।আমাদের উপায় খুজতে হবে।তবেই এই সমস্যার সমাধান হবে।”
দিজা রান্নাঘরের দরজার কোণায় হেলান দিয়ে বলে,“ভালোই তো বুদ্ধি বেড়েছে।”
দিদার মৃদু হাসলো উত্তর দিলো না। দিজা জানায়,“একটু পর বের হবো আমরা।”
“দুপুরে না?”
“না,ভাইয়ার কাজ আছে।”
“আসলে ওগুলো অজুহাত।ওখানে গিয়ে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখবে।কারো সাথে কোনো কথা বলবে না তাই।”
“তারপরও আমি চেষ্টা করবো ভাইয়া ভাবী যেন দুজন দুজনকে বুঝে চলে।”
“ভরসা এখন একমাত্র তুমি।”
দিজা আশ্বস্ত ইশারা দিয়ে দেখে শোভা আসছে।দাদাজানের উদ্দেশে বলে,“ওই যে তোমার নাতবউ আসছে আমি গেলাম রান্নাঘরে।”
শোভা নিচে নামতেই দাদাজান প্রশ্ন করেন,“তোমার ভাই ভাবীকে ডেকেছো তো?”
“জি দাদাজান ওনারা আসবেন।”
“শোনো কিছু কথা তোমাকে শিখিয়ে দেই।”
বলেই কিছু বিষয়ে উপদেশ দিলেন দাদাজান।সাথে ভালো মন্দ গল্প করলেন।
শামীম ও মিতু এসেছে মৌলিকে নিয়ে।শোভা ব্যাগ নিয়ে নিচে নামতেই শামীম হাতে থাকা শোভার সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে বলে,“এই নেন ভাইজান।”
দর্শন নিতেই শোভা ভ্রুকুটি করে বলে,“এই কাগজে কি আছে ভাইয়া?”
“তোর কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য যেসব কাগজ লাগবে ভাইজান এগুলো আনতে বলেছিলো।”
শোভা যদিও নিজ দায়িত্বে এনেছিল কিন্তু দর্শন চায়নি বলে দেয়নি।উল্টো শামীমের থেকে আনিয়ে নিলো বলে হতাশ হলো।এতটাই বেখেয়ালি ভাবছে শোভাকে!মুখটা ঘুরিয়ে পারুল বেগমের কাছে গেলো।পারুল বেগমকে জড়িয়ে আছে দিজা মা মেয়ে কান্না শুরু করেছে।মেয়ের বিয়ে না দিয়ে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পাঠাচ্ছেন তাও কান্না।কারণ সন্তান দূরে গেলেই মায়ের বুক খালি হয়ে যায়।পারুল বেগম চোখের পানি মুছে বলেন,“ওখানে গিয়ে ভালো মেয়ে হয়ে চলবি।ভাই ভাবীকে বিরক্ত করবি না।পড়ালেখা মন দিয়ে করবি।কোনো বদনাম যেনো তোর নামে না শুনি।আর হ্যাঁ খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করবি।নিজের যত্ন নিবি।কিছু লাগলেই কল করে বলবি আমাকে।”
শোভা পাশে এসে বলে,“আমাকেও একটু সুযোগ দেওয়া হোক।”
পারুল বেগম হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন শোভাকে।আমার মেয়েটার যত্ন নিবি একটু।যদিও ওর কাজ ও নিজেই করতে পারে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি কিন্তু তাও দুজন দুজনকে বুঝে চলিস।ভুল কিছু করলে ক্ষমা করে দিস।”
“তোমার মনে হয় আমাদের সম্পর্ক খারাপ কিছু?”
“না তাই তো ভরসা করে তোদের কাছেই দিজাকে পাঠাচ্ছি।ভালো থাকিস তুইও।ভালো রাখিস আমার ছেলেটাকেও।”
শোভা মৃদু হাসে।পারুল বেগম দর্শনের কাছে এসে ধীর কণ্ঠে কাউকে না শুনিয়ে একা দর্শনকে বলে,“সব নারী এক হয়না।তোর দুই মা কিন্তু দুইরকম।এক মাকে নাহয় খারাপ দেখছিস আরেক মাকেও কি তাই মনে হয় তোর?আমাকে দেখ আমি যেমন শোভা ঠিক তার থেকেও গুনি আর ভালো।তুই ওকে একটু বোঝার চেষ্টা কর।একটামাসের কয়েকটা দিন বাকি আছে।মানুষ চিনতে গেলে তাকে জানা লাগে।তুই আজ মেয়ে জাতিকে ঘৃণা করিস কিন্তু এমন কিছু করিস না যেনো এই মেয়েটা ছেলে জাতিকে ঘৃণা করে।মেয়েটাও তো তোর বউ।তুই তাকে তালাক দিলে সে কিন্তু সমাজে তালাকি নারী নামে পরিচিত হবে।সব মেয়ে এই বোঝা বয়ে বেড়াতে পারেনা।শোভার শিক্ষাদীক্ষা একদম ভিন্ন।তুই আমার কথাগুলো ভেবে দেখিস।সাথে মনকে প্রশ্ন করিস।সবশেষে আমি আর জোর করতে পারবো না তোকে।”
দর্শন সম্মতিজনক মাথা নাড়িয়ে দাদাজানের কাছে গেলো।শোভা এসে মৌলিকে জড়িয়ে ধরে বলে,“আম্মু যেটা বলে শুনবে।কোনো দুষ্টুমি করবে না কেমন?”
মৌলির কপালে চুমু দিয়ে বলে,“এখন তো পিপিরও ভিডিও কলে কথা বলার মত মোবাইল আছে।আব্বুর মোবাইলে কল দিবো আমি।তুমি আমাকে দেখতে পাবে।”
মৌলি কান্না করতে করতে বলে,“যেও না।”
মিতু মৌলিকে জড়িয়ে রেখে বলে,“কাল থেকেই কান্না করে যাচ্ছে মেয়েটা।আমার একটা কথাও শোনে না।একদম ফুফুর জন্য পাগল।”
সবাই হেসে দেয়।দর্শন কোলে নিলো মৌলিকে।তারপর আদুরে কন্ঠে বলে,“আমাদের সাথে ঢাকায় যাবে?”
“না,তোমলাও যাবে না।”
বলেই মুখ বেকিয়ে কান্না করে দেয়।দর্শনের বুকে ছোট্ট হাত দিয়ে মারছে।বারবার বলে,“আমি কত্ত পাবো।”
এত কান্নার পরেও বাচ্চা মেয়েটার কথা রাখতে পারবে না কেউই।যেতে হবে তিনজনকে।শামীম এসে জোর করে নিলো মৌলিকে।দাদাজানের ইশারায় শোভার হাত ধরে গাড়িতে উঠলো দিজা।মিতু গাড়ির জানালার কাছে এসে শোভার হাত ধরে বলে,“মন দিয়ে সংসার করবে আর কোনো অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে।নিজের যত্ন নিও।”
কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলে মিতু।পারুল বেগম নিজেও কান্না করছেন মেয়ের জন্য।দুইদিকে থেকে দুই পরিবারের কান্না।দর্শন গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে।দাদাজান এসে জানালা দিয়ে মাথা নামিয়ে বলেন,“তোমার অতীত তোমার সাথে যেটা করেছে বর্তমান হুবহু তাই করবে এটা ভাবলে তুমি বোকা।অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত একই ভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়না।তোমার বাবাকে ঠকতে দেখে তুমি নিজেকে কঠোর বানিয়েছো কিন্তু তাকেই আবার অন্য নারীর মাধ্যমে সুখে থাকতে দেখে তুমি কিছুই শিখলে না।একবার বাবার দিকে চেয়ে দেখো।যে পুরুষ এক নারীর জন্য পা খোয়ালো সেই পুরুষই আরেক নারীর জন্য পা ছাড়াও এই জগতে হাসিখুশিভাবে জীবন কাটাচ্ছে।সব মানুষ এক হয়না।সবাইকে এক ভাবাটা ভুল।তোমারও বোন আছে।তারও কিন্তু একটা চরিত্র আছে।তাকে দেখেও বুঝতে পারো মানুষকে এক পাল্লায় ভাবতে নেই।”
দর্শন তাকালো দীপ্ত ফরাজির দিকে।হুইল চেয়ারে বসে আছেন দাদাজানের পাশে।দীপ্ত ফরাজি মৃদু হেসে বলেন,“আমি এখন অনেক সুখে আছি।তোমার এই মা আমাকে অনেক সম্মান করে।তুমি শোভার মাঝে তোমার এই মায়ের আরেক রুপ খুজো।দেখবে ভালো থাকবে।”
দর্শনের চোখটা জ্বলে উঠলো।পুরুষ মানুষ বলেই পানি গড়াতে না দিয়ে হালকা নাক টেনে বলে,“আসছি আমরা।ভালো থেকো।”
“তুমিও ভালো থেকো।”
সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়ি ছুটছে ঢাকার পথে।গাড়ি চালাতে শুরু করে দর্শন।গাড়িতে সব জানালা লাগানো এসি অন করা।পুরুষ বলতে দর্শন একা তাই শোভা মুখ থেকে নিকাব সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।কাচের ভিতর দিয়েও প্রকৃতি দেখা যায়। দিজা ও শোভা দুজনেই গল্প করছে।শোভা এর মাঝেই হেসে দেয়।যেটা সামনের ছোট্ট আয়না থেকে দেখলো দর্শন।চোখটা সেদিকেই স্থির হয়ে রইলো।অন্যান্য আধুনিক মেয়েদের থেকে শোভার নাকফুল একটু বড়।আজকালকার মেয়েরা নাকফুল ছোট্ট দেখে পড়ে।শোভাকে দাদাজান ও পারুল বেগম পছন্দ করে দেয়।শশুর সাথে থাকায় ও দিজাও অল্প বয়সী ছিল বলে পারুল বেগম জানাতে পারেননি এটা একটু বেশি বড় এই আজকালকার জন্য।বিয়ের পর বউদের গহনা দেওয়া লাগে তাই দিয়েছে দাদাজান।সেই নাকফুল পরে আছে শোভা।ধবধবে ফর্সা মুখে এই নাকফুল বেশ মানিয়েছে।একেবারে সেকেলে লাগছে না।হিজাবের কালো ইনারের কারণে কপালটা গোল দেখা যাচ্ছে।মুখের মধ্যে লাবণ্য ফুটে উঠেছে।দর্শনের সেদিকেই চোখ স্থির।আচমকা পিছনে থেকে দিজা বলে,“ভাইয়া সাবধানে।”
বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ২০
আরেকটু হলেই এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।দর্শন নিজেও ঘাবড়ে গেলো।শোভা দোয়া পড়ে বুকে ফু দিয়ে পুরো গাড়িতে ফু দিলো। দিজা প্রশ্ন করে,“কি পড়লে?”
“বিপদ মুক্তির দোয়া।আল্লাহ সহায় হোন।”
“আমাকেও বলে দেও।”
শোভা পড়ে শুনালো।সাথে সাথেই পড়ে নেয় দিজা।মনে মনে এটা পড়েছে দর্শন নিজেও।