বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৭

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৭
ইশরাত জাহান

ফজরের নামাজ শেষে শোভা নিঃশব্দে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়।ভোরের আলো তখনো ঠিকঠাক ছড়িয়ে পড়েনি।আকাশের কোণে হালকা নীলচে ছায়া।ব্যালকনির কোণার টবে আছে লেমন গ্রাস।দর্শনের ভীষণ প্রিয়।প্রতিদিনই সে চা বানায় এই ঘ্রাণজড়ানো পাতাগুলো দিয়ে।ইদানিং যশোর ও ঢাকায় দর্শনের সাথে তাল মিলিয়ে শোভারও ভালো লেগে গেছে এই পাতার স্বাদ ও সুবাস।

পাতাগুলো ছিঁড়তে ছিঁড়তে শোভা হালকা ঠান্ডা বাতাসের পরশে চোখ বন্ধ করে নেয়।লেমন গ্রাস লেবুর ঘ্রাণটা আরও গাঢ় হয়ে আসে।এমন সময় মসজিদ থেকে ফিরে দর্শন তার পাশে এসে দাঁড়ায়। শোভা একবার শুধু চোখ তুলে তাকায়।তারপর আবার নিজ মনে পাতা ছিঁড়তে থাকে।দর্শন কিছু বলে না।নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে।দেখে যাচ্ছে এখনো তার বউয়ের অভিমানী মুখটা।এই মেয়ের মাঝে সব ধরনের ভঙ্গিতেই দর্শন ভালোবাসা খুঁজে পায়।
কিছুক্ষণ পর শোভা চা বানিয়ে আনলো।দর্শন তখন ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত।শোভা চায়ের কাপ নামিয়ে চলে যেতে চায় ঠিক সেই মুহূর্তে দর্শনের হাত তার কনুই ছুঁয়ে বসে।চায়ের কাপ একটুখানি কাঁপে।আরেকটু হলেই পড়ে যেতো।শোভা চমকে ওঠে।দর্শনের গলা ধীর কিন্তু স্নিগ্ধ করে বলে,“পাশে বসো।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শোভা মুখে কোনো কথা না বলে মিনমিনে ভঙ্গিতে পাশে এসে বসে।দু’জনের মাঝে কিছুটা নীরবতা।শুধু চায়ের ধোঁয়া ভেসে বেড়ায় চারপাশে।দর্শন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,“কাল ঢাকায় যাবো আমরা।”
কথাটা শুনে শোভার চোখ থেমে যায় দর্শনের মুখপানে।কিছু বলতে গিয়েও যেন গলায় আটকে যায়।দর্শন ভ্রু কুঁচকে তাকায়।প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,“কিছু বলবে?”
শোভা একটু দ্বিধায় পড়ে।তারপর নিচু গলায় থেমে থেমে বলল,“হ্যাঁ… আমাদের বাড়িতে একবার যেতে চাই।”
দর্শন তাকালো শোভার দিকে।তবে বুঝতে দিলো না।আড়চোখে দেখে নিলো।প্রতিবারের মতোই।ঠোঁটের হাসিটা আড়ালে রেখে স্বাভাবিক সুরে বলল,“তাহলে তৈরি থেকো।সকালের খাবার খেয়েই বেরিয়ে যাবো। আগে গেলে ভাই-ভাবিকে সময় দেওয়া যাবে বেশি বেশি।সাথে তো ওই পুঁচকি আছেই।”

শোভার মুখটা তৎক্ষণাৎ চিকচিক করে ওঠে।চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক,যেন এই অল্প কথার মধ্যেই সে পেয়ে গেছে তার প্রত্যাশার ছায়া। সকালটা হঠাৎ করেই হয়ে উঠলো আরও কোমল, আরও আপন।এই লোক এখন তার সাথে নরম আচরণে আছে।বেশ ভালই কাটছে মুহূর্ত শোভার।না জানি কখন আবার তার মাথার ঘিলু নড়েচড়ে ওঠে।বলা যায়না হুট করে শোভাকে দূরে সরিয়ে দিলো।আবার কটু কথাও শুনিয়ে দিতে পারে।সাথে চড় থাপ্পড় তো আছেই।

দর্শন চায়ের কাপে আরেক চুমুক দিয়ে বলে,“পুচকি কি শুধু চকলেট খায় নাকি আরো ভাজাপোড়া অন্যান্য কিছু?”
শোভা চেয়ে আছে দর্শনের দিকে।দর্শন উত্তর না পেয়ে বিরক্ত হলো।তার একটা স্বভাব আছে। কারো সাথে কথা বললে সাথে সাথে জবাব না পেলে রাগ বাড়ে।বিশেষ করে প্রশ্নের উত্তর না পেলে।ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে শোভার দিকে চোখ রাখে দর্শন।রাগ দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু দেখালো না।শোভার চোখেমুখে আনন্দ স্পষ্ট।দর্শন হাত উঁচিয়ে তুড়ি বাজালো।শোভা চমকে উঠলো।সাথে সাথে তোতলায়,“হ হ্যাঁ?কিছু বললেন?”
দর্শন মুখটা স্বাভাবিক রাখলেও চোখের মধ্যে এক রসিকতা ফোঁটায়।শোভার দিকে নরম চাহনি দিয়ে বলে,“আমাকে দেখছিলে বুঝি?”

শোভা হা করে ঠোঁট কাঁপিয়ে অন্যদিকে ফিরল।লজ্জা বাড়ছে তার।মনে মনে বলে,“এভাবে প্রশ্ন করে কেন এই লোক?”
শোভার নাক ঘামছে।একটু কুঁচকে আছে জায়গাটা।দর্শন আঙুল ছুঁয়ে ঘাম মুছে বলে,“আবহাওয়া তো ঠান্ডা।তুমি ঘামছো কেন?”
শোভা এবার আরো নুয়ে গেলো যেনো।চোখের পাতা দ্রুত গতিতে কয়েকবার নাড়িয়ে বলে,“আমি নাস্তা বানাতে যাচ্ছি।”

দর্শন হাতটা জব্দ করে ধরে বলে,“খবরদার উঠবে না।”
শোভা অবাক হলো।দর্শন স্বাভাবিক চাহনি দিয়ে বলে,“কাজের বুয়া আছে বাড়িতে।আম্মাজান নিজেও রান্না করছে না।তোমাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না।তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।”
শোভা কিছুটা হাসফাঁস করে বলে,“আমি দেখিনি।আমার চোখ চলে গেছিল আপনার মুখের দিকে।”
দর্শন নিজেও যেনো কথাটার মাথামুন্ডু বুঝলো না।শোভা মিনমিন করছে।সে কখনও ভাবেওনি এমনটা তার হবে।তার জীবনটা স্বচ্ছ পানির মত। কারো সাথে কথা বলত না।যদি কোনো মেয়ের সাথে ঝামেলা বাঁধতো তাহলে সেখানে ভদ্রভাবে এমন উত্তর দিতো যেনো কথা না বাড়ানো হয়।শিক্ষক কোনো প্রশ্ন করলে মাথা নিচু রেখে উত্তর দিতো।যেদিন পড়া পারতো না বলে দিতো কেন পারছে না।তবুও কোনো কথার মাঝে জড়তা ছিল না।এই লোকটার সাথে কথা বলার সময়ও ঠিক তাই।বেশি একটা জড়তা কাজ করেনি কিন্তু দুম করে তার পানে চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে জড়তা কাজ তো করবেই।এই অনুভুতির সাথে শোভা প্রথমবার সাক্ষাৎ পেলো।

শোভার চোখ গেলো তার হাতের দিকে।দর্শন এখনও ধরে আছে এই হাত।শোভার মধ্যে রাত থেকেই আলাদা অনুভূতি কাজ করছে।মনের মধ্যে বারবার ইশারা দিলেও মুখ ফুটে বলার সাহস নেই।শোভা মুখ খুলল,“হাত ছাড়ুন।”
“যদি না ছাড়ি?”
শোভা ভরকে গেলো।দর্শন আবারও বলে,“রাক্ষসীর মত কামড়ে দিবে?”
শোভার মুখটা চুপসে গেলো।চোখটা গেলো দর্শনের হাতের দিকে।ব্যান্ডেজ করা এখনও।শোভা সব বাদ দিয়ে প্রশ্ন করে,“এখনও ব্যাথা আছে?”
দর্শন মাথা দুলিয়ে না বুঝিয়ে বলে,“তো ম্যাডাম বলুন,কেন আমার দিকে ঘুরঘুর করে দেখছিলেন?”
শোভা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,“বললাম তো।চোখটা চলে যায়।ইচ্ছা করে দেখিনি।”
“ইচ্ছা করে দেখাটা কি খুব অন্যায় হয়ে যেতো?”

শোভা কথাটা শুনে থম হয়ে গেলো।দর্শন আজ প্রথম শোভাকে নিজের প্রসারিত ঠোঁট দেখিয়ে বলে,“আপনার নসিবের পুরুষটিকে আপনি ইচ্ছা করেও দেখতে পারেন,ম্যাডাম।এটা আপনার হক।আমি এই হক আপনার থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছি না।বরং আপনি চাইলে আমি আপনার হক সম্পূর্ণভাবে পূরণ করে দিতে রাজি।”
শোভা গলা খাঁকারি দেয়।গলায় যেনো কিছু আটকে আছে।এত দ্রুত সাবলীলভাবে সব গরগর করে বলে দিলো সামনের পুরুষ যেনো এটা এক চুটকিতে মানিয়ে নেওয়ার মত।শোভার মত লাজুক মেয়ে এগুলো ভাবছে এটাই লজ্জাজনক তার জন্য তারউপর সরাসরি প্রস্তাব পেলো।শোভা কথা বলার জন্য ঠোঁট নাড়ানোর চেষ্টায় আছে।কিন্তু কি বলবে?কথা খুঁজে পাচ্ছে না।এর মধ্যেই দর্শন দিলো আরেক অঘটন ঘটিয়ে।বলা নেই কওয়া নেই হুট করে শোভার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।শোভা শিউরে উঠে দূরে সরে বসে।বুকটা কেঁপে উঠলো।গা হিম হয়ে এসেছে।শীতল আবহাওয়ায় গা যেনো উষ্ণ গরমে ছেয়ে গেছে।

দর্শন ঠোঁট প্রসারিত করে ল্যাপটপের দিকে চেয়ে বলে,“ত্রিশ মিনিটের ব্যর্থ চুমুটা আজ ত্রিশ সেকেন্ডও ব্যয় করেনি,ওয়াইফি।”
শোভার মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।সে নিজেই তো এই অঘটন ঘটাতে চেয়েছিল।রাত থেকেই মনে মনে এসব তার মধ্যে জেঁকে বসেছে।অথচ যেই সে তার ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে পারছে ওমনি লজ্জায় নেতিয়ে পড়ছে।এই অনুভুতির নাম কি জানা নেই।এদিকে দর্শন আপনমনে একটা চুমু খেয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে ব্যাস্ত।শোভা ধীর কণ্ঠে জানায়,“আমি দিজার সাথে কথা বলে আসছি।”
শোভা চলে যেতেই দর্শন তাকালো।পিছন পাশ দেখা যাচ্ছে শোভার।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,“তোমার মনে আমার প্রতি অনুভূতি না জাগিয়ে নিজ ইচ্ছায় কিছুই করবো না।জোর করে নয়,তোমাকে আমি তোমার ইচ্ছাতেই নিজের করে নিবো।”

হালকা রোদে গরম ভাগটা খুব বেশি নেই।তবে বাতাসে অদ্ভুত একটা থমথমে ভাব।দর্শন আর শোভা তখন ঠিক গেটের সামনে এসে থেমেছে।গাড়ি থেকে নেমেই শোভা বোরকায় ঢাকা মুখে চারদিকটা একবার দেখে নেয়।এমন সময় পাশের বাড়ির বারান্দা থেকে ভেসে এলো এক চিৎকারে উচ্ছ্বসিত গলার স্বর,“শোভা নাকি রে?”
মাঝবয়সী মহিলা চেঁচিয়েই খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে দৌড়ে এসে শোভার হাতদুটো ধরে শোভাকে বুকে আগলে নিয়ে বলে,“মাশাআল্লাহ মা আমার!কত্ত বড় হইছিস!”

মহিলাটির মুখে হাসির বিস্ফোরণ।চোখে অদ্ভুত উল্লাস।শোভার হাত ধরতেই যেন পুরোনো স্মৃতি মাথায় এসে ভর করে।শোভা তখন সদ্য জন্ম নেয়।শামীমা বেগমের পেট থেকে বের হয়ে রক্ত মাখা শরীরটা প্রথম তার কোলেই ওঠে।হাত পা ছড়িয়ে সে কি কান্না মেয়েটার।শামীমা বেগমের কথা মনে পড়তেই চোখটা জ্বলে ওঠে।তবুও প্রাণবন্ত মুকুর হোক,“এই তো সেই ছোট্ট শোভা!তোরে তো দেখিনা কতকাল হইলো!”
দর্শনের মুখ থমথমে।ভ্রু কুঁচকে আসে তার।মহিলাটি এবার তার দিকে ফিরে বলেন,“আমি ধইরা ফেলছি।এটাই আমাগো জামাই।ভালো আছো জামাই?”

ভদ্রতার সাথেই দর্শন জানায়,“জি…আপনি?”
দর্শনের ঠান্ডা গলা।মৃদু হাসি ঝুলে থাকে ঠোঁটে,যেন ভদ্রতা না করলে বিস্ফোরণ হবে।শোভাও বোরকার আড়ালে মুখটা হাসিখুশি রাখে।মহিলাটি বলে,“ভালোই আছি।তোমাদের দেইখা আরো ভাল্লাগছে।কত কত স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠছে।”
বলেই গলা উঁচিয়ে ডাক দিলেন,“এই কুদ্দুস!দেখ কে আইছে!তোর সেই লেংটা কালের সঙ্গী।”
দর্শনের নাকমুখ সিটকে রেখেছে।শুনতেই বিশ্রী লাগলো যেনো।দূর থেকে দৌড়ে আসে লুঙ্গি পরা, ঘামে চকচকে একটা উদোম শরীর।একরাশ হাসি নিয়ে চিৎকার করে ওঠে,“আরে বুন্ডি!ভালো আছির?”

নিজ অঞ্চলের ভাষা।শোভা পুরুষ মানুষের সাথে এমনিতেই কথা বলে না।এটা অবশ্য বুঝ হবার পর থেকে। তার আগে কি হয়েছিল জানা নেই।বুঝ হবার পর কুদ্দুসকে দেখেনি কখনও।ঢাকায় যায় কুদ্দুস।অল্প বয়সে শ্রমিকের কাজ করতে।শোভার ব্যাপারে হয়তো বুঝলো না।ভেবে নিলো ছোট্ট শোভা ওদেরকে চেনেনি।তাই উল্লসিত মনে বলে, “চিনতি পারিসনি?আমি কুদ্দুস।তোর ভাই হই।খালাম্মা তোর কাছে আমার গল্প করেনি?”
শোভার মুখ যেন আরো গভীর হয়ে যায় বোরকার আড়ালে।শুনেছে তো মায়ের কাছে অনেক গল্পই কিন্তু ছোটবেলার যে কেউই বড় হবার পর সামনে আসলে সেই টান থাকে না।কুদ্দুসের আছে কারণ সে প্রাণবন্ত মনের মানুষ।
দর্শন এবার মুখ ফিরিয়ে তাকায় শোভার দিকে।তার চোখে যেন চাপা বিস্ময় ও রাগের এক বিক্ষিপ্ত সমুদ্র। কুদ্দুস ঠিক পাশেই এসে দাঁড়ায়।পুরোনো স্মৃতিচারণ করে বলে,“সেই লেংটা কালে দেখছিলাম তোরে!কত্ত গড়াগড়ি খাইতি মাটিতে।আর এখন…হায়রে!বিয়াও করছিস শুনলাম শামীম ভাইয়ের কাছে।ঐটাই তোর স্বামী?বাহ!একদম সাহেবের মতো!টিপটাপ।ভাই তো বিদেশে থেকে কতকিছু শিখে আসছে।আপনার প্রশংসা শুনছি অনেক।”

দর্শন এবার গলার রগ টান টান করে ফেলেছে।হাত মুঠো।চোখ জ্বলে উঠেছে অশ্রাব্য রাগে।শোভার পাশে এসে দাঁড়ানোর কি দরকার?শোভার সাথে পরপুরুষ কথা বলছে এটাই তো মানতে পারছে না।কুদ্দুসের মা এবার মুখ খুললো,“হ্যাঁ রে মা,আসিস আমাদের বাড়িতে।তোর ভাবী আছে।বউমা পোয়াতি।ওর কাছে কত্ত কথা বলি তোর সম্পর্কে!তোরে একবার দেখার ইচ্ছা আছে ওর।”
দর্শনের ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের রেখা খেলে যায়।প্রশ্ন ছুঁড়ে,“ওনার কাছে এত কী বলতেন,যে দেখতে চাইলো?”
শোভা ভরকে তাকালো এমন কণ্ঠে।কুদ্দুসের মা বলতে শুরু করে,“আর না বলি কেন! সে তো লম্বা গল্প।শোভা জন্মানোর পর প্রথম আমার কোলে ওঠে। কুদ্দুস তো সারাটাদিন ওরে কোলে নিতে চাইতো। একবার তো কুদ্দুসের নাকের উপর শোভা মুখটা রেখে লালাগুলো মাখামাখি করে দিল!সদ্য জন্ম নেয়া মেয়েটা কুদ্দুসের গায়েই পিশাব করে।তাও কোলে নিয়েছিল ও।তারপর তো রোজ খেলা করত একসাথে।হাহা,কি দিন ছিল!ভাবলেই মন চায় ফিরে যাই ওই সময়টায়।”

এই মুহূর্তে দর্শনের কপালটায় যেন আগুন জ্বলে।রাগ যেন পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।মুখে একটা ধৈর্যভাঙা হাহাকার।হঠাৎই সে শোভার হাতটা জোরে চেপে ধরে।কর্কশ কন্ঠে বলে,“আমরা ব্যস্ত।পরে কথা হবে।”
আর কথা না বাড়িয়ে দর্শন টেনে নিয়ে যায় শোভাকে বাড়ির ভেতরে।কুদ্দুস আর তার মা দাঁড়িয়ে থাকেন অবাক চোখে।পরে নিজেদের বুঝিয়ে ভিতরে যায়।ঢাকা শহরে ঘুরেছে।ধনী থেকে গরীব সবার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে কুদ্দুসের।কিছু গম্ভীর ব্যক্তি থাকে যাদের মন ভালো কিন্তু মিশুক না।দর্শনকে সেই কাতারে রাখলো কুদ্দুস।
দুজনে ভিতরে ঢুকতেই শামীম এগিয়ে আসে।দর্শনের থমথমে মুখটা দেখে শামীম ভাবনায় পড়ে।এমন রাগান্বিত লাগছে কেন?বোন জামাই কি ঝামেলা বাদালো!দুশ্চিন্তায় পড়লো বেচারা।

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৬

শোভা নিজেও বুঝে উঠতে পারে না,এই পুরোনো কথাগুলো কেন দর্শনের মনে বিষ ছড়ালো।তবে তার মনেও একটা অস্বস্তি জমে।কুদ্দুসের মায়ের শেষ কথাগুলো শোভার নিজের কাছেই ভালো লাগেনি।ছোটবেলার কথা এত প্রকাশ করে বলার কী দরকার?সবাই কি এক? সবার কাছে কথাগুলো একরকম স্বাভাবিক লাগবে না।
শোভা জানে না,দর্শন শুধু আজকের স্ত্রী নয় বরং তার অতীতের প্রতিটি মুহূর্তের শরিক হতে চায়।শুদ্ধভাবে, সম্মানে, নিঃসন্দেহে কিন্তু যখন সেই অতীত এসে বিব্রত করে তার বর্তমানকে।দর্শনের দৃষ্টিতে সেটাই হয়ে যায় দাগ।আর সেই দাগেই আজ ফেটে যাচ্ছে তার সযত্নে গড়া ভালোবাসার দেয়াল।

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here