বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৮

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৮
ইশরাত জাহান

কাউকে পরোয়া না করে শোভার হাত ধরে হনহন করে ঘরে নিয়ে এলো দর্শন।ঘরে ঢুকেই পুরোনো এই দরজাটা খট করে শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। আতকে উঠলো শোভা।বেক্কল বোনে গেলো দরজার বিপরীত পাশে থাকা শামীম ও মিতু।মুখ ঝামটা দিয়ে মিতু বলে ওঠে,“পীড়িত অতিরিক্ত থাকলে বাড়িতে সেরে তবেই আসতো।কোনো জায়গায় ঘুরতে আসলে প্রথমে সাক্ষাৎ করতে হয়।এটা কি তোমার বোনের পীড়িত উতলে ওঠা জামাই জানে না?”
শামীম বিরক্তির সাথে বলে,“এসব কি বলো?”

“নাটক দেখে মাথায় যা আসলো তাই বললাম।দেখি সরো।মাংস চাপিয়ে এসেছি।পুড়ে গেলো কি না কে জানে!”
মিতু রান্নাঘরে গেলে মিতুর সাথে শামীম ও মৌলিও গেলো।মৌলি এখানে বিরক্ত করতেই এসেছে।রানানঘরে ঢুকেই হাড়ি পাতিল নিয়ে খেলা করছে।মিতুর কুটে রাখা সবজির খোসা দিয়ে মিথ্যা মিথ্যা রান্না করছে।খোসাগুলো রান্নাঘরের চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিষ্কার রান্নাঘর নোংরা করে দিলো।শামীম রসুনের কোয়া ছাড়িয়ে খোসা ছাড়িয়ে দিতে থাকে।এই ফাঁকে মিতু একবার মৌলিকে দেখে বিরক্তির সাথে শামীমের দিকে তাকায়।মিতুর মাথায় আলতো চাপড় মেরে বলে,“রান্নাঘর কি তোর বাপ পরিষ্কার করে?দিনে বাড়ি ঝাড়ু দেই চারবার রান্নাঘরেও কি শান্তি দিবি না?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শামীম এখানেও নিজেকে টানতে দেখে চমকে তাকালো। মৌলি কান্না কান্না মুখশ্রী করে বলে,“মালতো কেন?”
“তোমাকে তো চুম্মা দিতে হবে তাই না?সর এখান থেকে।কি করে রাখছে চারপাশ!এগুলো কে পরিষ্কার করবে এখন?”
“তুমি কলবে।”
মৌলির উত্তর হজম হলো না মিতুর।চোখ গরম দিয়ে বলে,“বের হ তোর বাপের সাথে।”
শামীম অবাকের সাথে বলে,“আমি আবার কি করলাম?”
“কাজের কাজ কিছুই করোনি।”
শামীম রসুনগুলো দেখে বলে,“এগুলো ছাড়িয়ে দিচ্ছিলাম তোমার উপকারের জন্য।কাজ এগিয়ে যাবে বলে।”
“বাটনা কি তুমি করে দিবা?”
“না।”

“তাইলে মেয়ে নিয়ে বিদায় হও।তোমার একটু এগিয়ে দেওয়া কাজের বিনিময়ে তোমার মেয়ে আমার কাজ আরো বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
শামীম উঠে দাঁড়ায়। মৌলিকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,“এই জন্য বউয়ের উপকার করতে নেই।এরা স্বামীর খুত না থাকলেও টেনে হিঁচড়ে বের করবে।”
মিতু মুখ ঝামটা দিয়ে বলে,“আজাইরা ব্যাটা মানুষ।ধর্মে বিয়ে ফরজ না থাকলে জীবনেও বিয়ের মত ভুল কাজ করতাম না।”
মিতুর কন্ঠ শুনতে পায় শোভা।জিহ্বায় কামড়ে পিছনে তাকালো।দর্শন চেয়ারে বসে আছে।মাথা নিচু কপালে হাত।বসে বসে শুধু নিশ্বাস নিচ্ছে দ্রুত গতিতে।গা থেকে বোরকা খুলে সহানুভূতির সাথে জিজ্ঞাসা করে,“কিছু হয়েছে আপনার?”

দর্শন চুপ।কোনো কথা বলছে না।এমনকি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।শোভা আবারও প্রশ্ন ছুড়লো,“কি হলো?”
দর্শনের কোনো উত্তর না পেয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে শোভা।এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে,“শরীর খারাপ?”
এবারও উত্তর না পাওয়ায় বিরক্ত হয় শোভা।ভাবলো বাইরে গিয়ে শরবত আর কল থেকে ঠান্ডা পানি আনবে।যেটা খেতে মন চায় খাবে।যেই ভাবনা সেই কাজ।দরজার নিকট আসতে নিলে শোভার হাতটা খপ করে ধরে দর্শন।শোভা পাশ ফিরতেই দর্শন মাথা তুলে তাকায়।মুখটা ঘেমে আছে।চোখটা লাল।ফর্সা মুখশ্রী কেমন ভয়ানক লাগছে।গরমে এমন হবার কথা না।গরমের সাথে রাগটাও যে যুক্ত।শোভা ধরতে পারল না।আতঙ্কের সাথে বলে,“আপনার জন্য কিছু নিয়ে আসি।আপনি তো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”

দর্শন এসবের খেয়ালে নেই।তার চোখ আছে শোভার ঠোঁটের দিকে।কি সুন্দর ঠোঁটজোড়া।তার বউয়ের ঠোঁট এটা।তার ব্যক্তিগত নারী এই মেয়েটা।অন্য কাউকে কিভাবে চুমু খায়!ভাবতেই গা রিরি করে ওঠে।শোভা অনুভব করছে ওর ধরে রাখা হাতটা কেমন কাপছে।শোভা একবার হাতের দিকে তাকায় আরেকবার দর্শনের মুখের দিকে।দেখে তো মনে হচ্ছে এই লোককে জ্বিনে ধরছে।শোভা ভাবছে জ্বিন কি পুরুষ মানুষের উপর ভর করে!ওগুলো তো মেয়েদের উপরেই ভর করতে দেখেছে এতকাল।এতকিছু জানা নেই শোভার।একবার এক মেয়ের ঘাড়ে নাকি জ্বীন ভর করছিল।দেখতে যায় শোভা ও মিতু।মেয়েটার ভাবভঙ্গি এমন যে আশেপাশের সবাইকে খুন করে দিবে।এমনকি কারো দিকে তাকালে সেই ব্যক্তি ভয়ে আতকে ওঠে।ওই মেয়ে যখন শোভার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো শোভা তখন মিতুর হাত ধরে দৌড়ে বাড়িতে আসে।দুজনেই ভয়ে হাঁপিয়ে ওঠে।

অতীত মনে পড়তেই শোভার ভয় বাড়ল।সাথে দর্শনের চাহনি।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো,“ঘর থেকে বেরিয়েই একটা ওঝা আনার ব্যবস্থা করতে হবে।এখানে থাকাটা বিপদজনক।”
ভেবেই ছুটে যেতে নেয় শোভা।দর্শন শক্ত করে ধরে রেখেছে শোভার হাত।শোভা ছাড়ানোর চেষ্টায় আছে।পারছে না ছাড়াতে।দর্শনও শক্ত করে ধরে রেখেছে।এক পর্যায়ে হাতটা মোচড়াতে থাকে।শোভা ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে।দর্শন হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।শোভা সুযোগ বুঝে দরজার কাছে যাওয়ার চেষ্টায় থাকলে দর্শন আবারও অন্য হাত ধরে বিছানার কাছে এনে দাঁড় করায়।শোভা ভয়ে ভয়ে আছে।ভাবছে চিৎকার দিবে কিন্তু পিছনের দিকেই কুদ্দুসের বাসা।বলা যায়না ওরা দৌড়ে আসলো। শোভাদের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে। আর যাই হোক ভাই ভাবীর সম্মান খোয়াতে চায়না।শোভা কাপা কাপা কণ্ঠে বলে,“ভাইজানের সাথে সাক্ষাৎ করে আসি।”
দর্শন শান্ত কিন্তু হিংস্র চাহনি দিয়েই বলে,“সব হবে তার আগে আমার সাথে তোমার বোঝাপড়া আছে।”

শোভা ভয়ে বলে ওঠে,“বোঝাপড়া?”
“হুমমম,তুমি কুদ্দুসকে চুমু দিয়েছিলে কেন?”
শোভা মুখটা বেকিয়ে বলে,“কিঃ!”
দর্শন ধমকে বলে,“যেটা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দেও।”
“আপনার মাথা খারাপ।আমি পরপুরুষকে চুমু দিবো কেন?আমার চরিত্র নিয়ে আপনার সন্দেহ আছে?”
“তোমার চরিত্র নিয়ে আমার সন্দেহ নেই কিন্তু তুমি কুদ্দুসকে চুমু খেয়েছো এটা আমার মাথা থেকে সরছে না।”
“আমি কবে চুমু খেলাম?”

“ছোটবেলায় ওর নাকে তুমি চুমু খেয়েছো।তোমার গালের সব লালা ওর নাকে লাগে।”
শোভার মাথা যেনো ভনভন করে ওঠে।বিরক্ত লাগছে এখন দর্শনকে।এসব অহেতুক কথা।এসবের কোনো অর্থ নেই।শোভা রাগ দেখিয়ে বলে,“আপনি পাগল।আমি তখন সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা ছিলাম।নিজেরই মনে নেই এসব কথা।এছাড়া বুঝ হবার পর থেকে আমি পর্দা করি।”
“বুঝ হবার পর থেকে তুমি ভালো মেয়ে ছিলে কিন্তু তার আগে তুমি একজনকে চুমু খেয়েছো।সেই একজন কোনো নারী না সোজা একজন যুবক।তাও আবার এটাকে স্মরণীয় করে রেখেছে ওরা।বেহায়ার মত আমাদের সামনে এটা নিয়ে বলছেও।রিডিকিউলাস!”

শোভা চোখ আওড়ায় দর্শনের দিকে।নিজেকে ছাড়াতে চায়।অর্থহীন বিষয় নিয়ে কথা বলা বেমানান।শোভার এখন ধারণা তার স্বামীর উপর জ্বীন নাহলে পরী কিছু তো একটা ভর করছেই।শোভা ক্ষিপ্ত হয় আবার বাইরে যাওয়ার জন্য ছটফট করে।দর্শন তার হাত ছাড়বেই না।শোভা না পেরে বলে,“ছাড়ুন আমার হাত।”
দর্শন কর্কশ কন্ঠে বলে,“ছাড়বো না।”
“আমার ব্যাথা লাগছে।”
“আমি ধরলেই ব্যাথা লাগে?পরপুরুষের কোলে তো ঠিকই উঠতে।”
“আরেহ!তখন দুজনেই ছোট ছিলাম।অহেতুক বিষয়ে কথা বাড়াবেন না।”
“এগুলো অহেতুক না এগুলোই আসল কথা।আমার মাথা থেকে এগুলো সরছে না।এর একটা হেস্তনেস্ত না করা অব্দি আমার শান্তি নেই।”

“মানসিক ডাক্তার দেখান।হেস্তনেস্ত করতে হবে না একটা উপায়ন্তর বের করে দিলাম।”
দর্শন চোয়াল শক্ত করে শোভার থুতনি চেপে ধরে বলে,“একেতো আমাকে মানসিক অশান্তি তুমি নিজে দিছো তারউপর আবার আমাকে তেজ দেখাও!”
শোভা কুকড়ে উঠে বলে,“ছাড়ুন।আপনি উন্মাদের মত আচরণ করছেন কেন?”
“আমি উন্মাদ!তোমরা মেয়েরা একেক সময় একেক পরপুরুষের সাথে মেলামেশা করবে আমরা সহ্য করতে না পারলে উন্মাদ?”

শোভার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।তার ব্যক্তিত্বের সাথে এসব কথা যায়না। অপমানে মেয়েটা কান্না করে বলে,“আমার মত মেয়েকে আর আপনার সহ্য করতে হবে না।কালকে ঢাকায় যাবেন তাই না?আপনারা যাইয়েন।আমি আপনার সাথে যাবো না।একমাস আমাদের একসাথে থাকার কথা বলা হয়েছিল তাই না? আর একদিনও থাকতে হবে না আপনার আমার সাথে।চলে যান আপনি।আমি আপনাকে মুক্ত করে দিবো।”
কথাগুলো দর্শনের জন্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত ছিল। সে আরো বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে।শোভার চোয়াল ছেড়ে হিসহিস করতে শুরু করে।দেখেই বুক কেঁপে ওঠে শোভার।এক পা দরজার দিকে যেতে নিলেই শোভার গলার কাছে ছোবলের মত করে হাতটা ধরে।শোভা ঘাবড়ে গেলো আবারো।মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে বিছানার কোণায় ফেলে দেয়।শোভা নিজের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়।এমন দৃশ্যের সাথে আগে কখনও সাক্ষাৎ হয়নি সে।সেদিন দর্শন ওর পোশাক পাল্টে দিলেও ও তো অজ্ঞান ছিলো।গায়ে কাপড় না থাকায় বর্তমানে অসস্তি বাড়ল শোভার।দর্শন সেদিকে নজর দিয়ে নেই।তার নজর শোভার ঠোঁটে।
শোভাকে বিছানায় ছুড়ে মারে।শোভা ছিটকে বিছানায় পড়ে যায়।দর্শন তার উপর উঠে হিংস্র হয়ে বলে,“দেওয়াচ্ছি আমি মুক্তি!”

বলেই শোভার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে করে নেয়।অনেক জোরে কামড়ে ধরেছে শোভার ঠোঁটজোড়া।শোভা হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।পারছে না।দর্শন সেই হাতদুটো একত্রে করে জানালার সাথে আটকে ধরে।শোভার পুরো শরীরের উপর দর্শন ভার হয়ে আছে।শোভার ঠোঁটের পাতায় দাঁত দিয়ে নির্মমভাবে কামড়ে দিতে থাকে যেনো এই ঠোঁট দর্শন ব্যতীত আর কোনোদিন কাউকে না ছুঁতে পারে।দর্শনের দাঁতের একেকটা চাপে শোভার নরম ঠোঁটে যেনো খুবলে খাচ্ছে।নিজেকে রক্ষা করার উপায়ন্তর না পেয়ে চোখ থেকে পানি বের করে।একদিকে দর্শনের কামড় অন্যদিকে দর্শনের হাতের মুঠোয় তার দুইহাত তাও আবার জব্দ করে।ব্যথায় কান্না ছাড়া উপায় নেই।নিজের সমস্ত রাগ ইচ্ছামত মিটিয়ে যাচ্ছে দর্শন।মিনিট কুড়ি যেতেই শোভার গলার কাছে মুখটা এনে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করে।দুজনেই ঘেমে গেছে।শোভা এতক্ষণ ব্যাথা পেলেও এখন ব্যাথা পাচ্ছে না।বরং দর্শনের ভারী নিশ্বাস তার শরীরে শিহরন জাগায়।দর্শনের নিশ্বাসের ওঠা নামায় শোভা কুঁকড়ে ওঠে।তবে ব্যাথা না উন্মাদনায়।
খানিক পর শোভার দিকে চোখ তুলে তাকায় দর্শন।চোখ বেয়ে পানি কানের পাশ গড়িয়ে যাচ্ছে।ঠোঁট ফুলে লাল টুকটুকে।রক্ত জমাট বেঁধেছে।ঠোঁটের এক কোনা দিয়ে রক্তের ছোট্ট এক বিন্দু দেখা দিলো।ঠোঁট দিয়ে নরম ছোঁয়া দিলো দর্শন সেখানে।শোভা কেঁপে উঠলো।শোভার চোখের পানি নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দেয়।শোভার চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

দর্শন এক দৃষ্টিতে দেখছে কাপা কাপা ঠোঁটজোড়া।শোভা আর কোনকিছু অনুভব না পেয়ে চোখ মেলে তাকায়।দর্শনের চোখে চোখ মেলায়।অতঃপর অভিমানে চোখটা সরিয়ে নেয়।দর্শন উঠে দাঁড়ায়।পরণের শার্ট দেখে নেয়।ঘেমে ভিজে গেছে।ফ্যান চললেও দুপুরের রোদের তেজে ঘরটা গরম হয়ে আছে।শোভা এখনও শুয়ে।মুখটা অন্যদিকেই করা।ওঠার ইচ্ছা বা শক্তি কোনোটাই নেই।গায়ের মধ্যে অলসতা ভর করেছে।ভাবছে কি থেকে কি হলো মাত্র।স্বামীর ভালোবাসা কোন নারীই বা না চায়?তাই বলে এভাবে পশুর মত?এতটা শাস্তি পাওয়ার মত কাজ করেনি শোভা।তবুও তার চরিত্র নিয়ে কথা উঠিয়েছে।শোভা চোখের পানি এখনও ফেলছে।দর্শন কাছে এসে শোভার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে উঠিয়ে বসায়।শোভা উঠে বসে।দর্শন হাতটা তার চোখের দিকে এগোতে নিলেই শোভা মুখ ফিরিয়ে নিজের হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।অভিমান থেকেই জানায়,“আমি আপনাকে মুক্ত করে দিবো।খুব দ্রুত।আমার মত চরিত্রহীন নারীর সাথে আপনাকে সংসার করতে হবে না।”

দর্শন যা একটু স্বাভাবিক হয়েছিল সব শেষ।ভেবেছিল শোভার সামনে অনুতপ্ত হবে।জোর করে হক আদায়ের চেষ্টা করা তার থেকেও বড় কথা আঘাত করার জন্য শোভার সাথে বোঝাপড়া করবে।শোভাকে নিজের মস্তিষ্কের অবস্থা বুঝাতে চেয়েছিল কিন্তু পারলো না।এরমধ্যেই আবারও ঠান্ডা মস্তিষ্কে গরম লাভা ঢেলে দিলো যেনো।শোভার দিকে রাগী দৃষ্টি দিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,“what did you say?”

শোভা নরম চাহনি দিয়ে বলে,“বললাম,একমাস সময় নেওয়ার থেকে আমাদের এখনই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া ভালো।আপনি আমার চরিত্রে আঘাত করবেন আর সেই আপনার সাথে থাকবো আমি,এটা হয়না।আপনি এতদিন যেভাবে কথা বলতেন আমি সব মেনে নিয়েছি কিন্তু আমার সম্মানে আঘাত করাটা মানতে পারবো না।”
শোভার কাপা কাপা মুখটার দিকে চেয়ে দর্শন বলে,“আমি কখন তোমার চরিত্র নিয়ে আঙুল তুললাম?”
শোভা বেক্কল বোনে গেলো।রাগে হিড়হিড় করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,“অসহ্যকর লোক একটা।”
দর্শন শোভার মুখের সামনে এসে শোভার চুল নিজের মুঠে নিয়ে জোরে টান মারে।শোভা ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে।হাত সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে তার।শোভার কান্না ভেজা চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।রাগে আঙুল উঁচিয়ে চোয়াল শক্ত করে সাবধান করে বলে,“আমাকে ঠান্ডা মাথায় থাকতে দেও।আমি চাইনা যতটুকু অন্যায় করেছি তার থেকেও অধিক কিছু ঘটাতে।আমার মাথা ঠিক না থাকলে আমি খুনটাও করে দিতে পারি।”

শোভা নাক টেনে চোখের পানি মুছে বলে,“আপনি আমাকে খুন করার হুমকি দিচ্ছেন?”
“শোভা টপিক চেঞ্জ করো।আমি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে চাই।যা গেছে তা ওখানেই ক্লোজ।যে বিষয়ে মাথা গরম হয় ওই বিষয়ে কথা না বাড়ানোই ভালো।”
শোভা থামলো না।ওর আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে।দুনিয়াতে আছেই তো একটা জিনিস।নারীদের ক্ষেত্রে আত্মসম্মান।ও তো বিলাসিতার সাথে জীবন পার করা মেয়ে না।ও বেড়ে উঠেছে অভাবের সাথে।দিনে পান্তা খেয়ে কাটিয়েছে কিন্তু কারো কাছে হাত পাতেনি।সেই মেয়েকে কিনা এখন এই অসম্মানের সাথেই জীবন পার করতে হয়!শোভা থামবে না আজ।নিজের বাড়িতে যখন আছে এখানেই ফয়সালা করে পাঠিয়ে দিবে। ঠিক তাই মুখ খুলল,

“আপনার মত রাগী,বদমেজাজি,উন্মাদ লোকের সাথে আমি কোনোদিন থাকবো না।”
“বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু!”
“কি করবেন বাড়াবাড়ি করলে?”
“আমার রাগ দেখেছো কিন্তু প্রভাব দেখোনি।”
“এতক্ষণ তাহলে কি ছিল?”
“ওটা তো কিছুই না।আমি যদি একবার রেগে যাই…

বলেই থেমে গেলো দর্শন।শোভাকে হারানোর ভয়টাও আছে।সেই ভয়েই কিনা উল্টো পাল্টা বকছে।মাথা কাজ করছে না ওর।শোভার ঠোঁটের দিকে তাকালেই কুদ্দুসের কথা মনে পড়ছিল।ফারহা ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে দর্শন নিজের মস্তিষ্কে গেঁথে রেখেছে,“যেটা আমার সেটা আমারই থাকবে।কেউ তার ভাগ পাবে না।আমার জিনিসে কেউ হাত দিতে পারবে না আর না আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে।”

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৭

শোভা যখন দর্শনের জীবনে এসেছেই তার মানে এই নারী শুধুই তার।এই নারীর থেকে ভালোবাসা,সুখ,দুঃখ সবকিছু দর্শন একা ভোগ করবে।কেউ এর ভাগীদার না সেখানে শোভার চুম্বনের কথা তো বড় কিছুই দর্শনের জন্য।শোভা এসবের কিছুই বুঝবে না।কারণ এই ধরনের মস্তিষ্ক গড়ে ওঠার মত বাজে পরিস্থিতি তার কখনও হয়নি।যেটা হয়েছে নিজের আত্মসম্মান ধরে রাখার।সেটাই শোভা ধরে রাখে।ছোট থেকে মনে গেঁথে রাখা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আমাদের জিবনে বড় আকারে রূপ ধারণ করে।হয়তো সেটা ভালো হয়ে নয়তো ভয়ংকর হয়ে।দর্শনের মাঝে যেটা গেঁথে আছে এটা শোভার জন্য ভয়ানক।

বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here