বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৯
ইশরাত জাহান
শোভার মধ্যে দর্শন নিজের মাধ্যমেই বিষ পুষে দিচ্ছে।নিজেকে শান্ত করতে চায়। সে তো চেয়েছিল শোভার থেকে ভালোবাসা আদায় করতে।হুট করে সব বদলে গেলো।তবে বেশিদূর এগোনো যাবে না।দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো দর্শন।
দর্শনের বেরিয়ে যাওয়ার পর শোভা দ্রুত দরজাটা লাগিয়ে দেয়।শামীম বেক্কল হয়ে দেখছে।এরা একেকজন এসে ধরে দরজাই লাগিয়ে যাচ্ছে।ঘরে দেয়ালের সাথে ঝোলা ছোট্ট আয়নায় নিজের মুখ দেখে ডুকরে ওঠে শোভা।ঠোঁটের অবস্থা যা তা।ঠোঁট ফুলে উঠেছে।লাল হয়ে গেছে জায়গাটা।এমন মুখ দেখানো যাবে না। ব্যাগ হাতিয়ে দেখে লিপস্টিক।ঠোঁটে দেয়।তবে মুখে মানাচ্ছে না।তাই ভালোভাবে পাওডার মুখে লাগায়।চোখে কাজল দিলো।সাধারণ সালোয়ার কামিজের সাথে সাজ দেখলে কথা উঠবে।বিশেষ করে মিতুর বিচক্ষণ দৃষ্টি কিছুটা ধরে ফেলতে পারে।মিতুর থেকে প্রায় প্রায় রোমান্টিক বিষয়ে কথা শুনেছে শোভা।উপন্যাসের বই থেকে পড়ে পড়ে শোভাকে জানায়।ভাই ভাবীকে এগুলো দেখানো লজ্জাজনক।তাই ভালো কোনো জামা পড়তে চায়।শোভার ভালো জামাকাপড় সব ঢাকায়।এমনকি শোভার মোবাইলটাও।সেদিন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মোবাইল সাথে নেয়না।ঘরের কোণায় গুণে খাওয়া আলমারি খুলে মায়ের শাড়ি পেলো।মনটা চাইলো আজ মায়ের শাড়ি পরতে। তাইই করলো শোভা।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
জলপাই রঙের শাড়ি।সাথে ব্লাউজ গোলাপী রঙের শাড়ির পারে অবশ্য গোলাপী রং।শোভা শাড়ি দুই রকম ভাবে পরতে পারে।হাত ছেড়ে ও বাঙালি আকারে।আজকে বাঙালি স্ট্যাইলে শাড়ি পরেছে।চুল ছেড়ে দেওয়া।লম্বা চুলগুলো হাঁটুর নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মাথায় চিরুনি ধরতেই ব্যাথা পেলো।যে পাশটা দর্শন ধরেছিল ঠিক সেই পাশটায়।চিরুনি সরাতেই বেশ খানিক চুল দেখা গেলো।এতটা চুল ওঠেনা।আজ উঠেছে।কারণটা ভাবতেই মুখে ব্যঙ্গাত্মক হাসি ফুটে ওঠে।
বাড়িতে পরপুরুষ ঢুকতে পারবে না।আছেই তো নিজের ভাই আর স্বামী।মাথায় কাপড় দিতে ইচ্ছা করলো না।বাইরে এসে শামীমের দিকে তাকালো। মৌলিকে নিয়ে কলপাড়ে আছে।গোসল করাচ্ছে মৌলিকে। মৌলির গায়ে সাবানের ফেনা দিয়ে খেলা করতে করতে বোনের দিকে চোখ গেলো শামীমের।বোনকে দেখতে নজরকাড়া লাগছে।মুখে হাসি ফুটে ওঠে শামীমের।বোনকে এই সাজে দেখে ভেবে নিলো সুখী মেয়ে।ঠোঁটে প্রাণবন্ত হাসি ফুটিয়ে বলে,“মাশাআল্লাহ বোন।তোকে সেই সুন্দর লাগছে।”
মিতু রান্নাঘর একটু উকি দিলো।শোভাকে সাজতে দেখে খুশিই হয়।শোভার হাত আর গলা ফাঁকা।কানে স্বর্ণের দুল নাকে স্বর্ণের নাকফুল আছে।মিতু এক ছুটে নিজের ঘরে গিয়ে গোলাপী রংয়ের রেশমি চুড়ি ও তার সাথে ম্যাচিং করে গলার হার নিয়ে আসে।সবার সামনে এনে বলে,“সামনেই এক মহিলা দোকান দিয়েছে।উনি মেয়েদের সুন্দর সুন্দর পোশাক ও রেশমি সুতার কিছু জিনিস বানিয়ে বিক্রি করে।আমি শখ করে কিনেছিলাম।তোমার গলা আর হাত খালি দেখে ভালো লাগছে না।এগুলো পড়লে মানাবে ভালো।”
শোভা ইতস্তত করে বলে,“আবার এগুলো কেন?”
মিতু মুখটা বেকিয়ে জোর করে পরিয়ে দিলো।হাতে চুড়ি ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলে,“সাজ মেয়েরা বাপের বাড়িতে এসে বেশি করতে পারে।স্বামীর সংসারে এত সাজার সময় থাকে নাকি?”
“থাকে তো।সেদিনকেও তো আমাকে দিয়ে সাজালে।”
“নতুন নতুন গো নতুন নতুন তাই।যাক কটা দিন বুঝবা সংসারের সুখ কি!বাচ্চা হইলে তো কথাই নাই।ঘুম তোমার চোখে এসে ডাক দিলেও বাচ্চা আর স্বামী মিলে সেই ঘুম বিদায় করে দিবে।মনটা চায় ওই সময় স্বামী আর সন্তান দুটোরেই ঘর থেকে বিদায় করে দেই।”
মিতু কথাগুলো বলার সময় শামীমের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। মানে বুঝিয়ে দিলো নিজের জীবনটা তেজপাতা।শোভা বুঝতে পারে।হেসে দেয় সে।মৌলি ফেনা মাখা শরীরে গোমড়া মুখে চেয়ে আছে মিতুর দিকে।মিতু বলে ওঠে,“দেখো দেখো!এইটুকু মেয়ে কিনা মুখটা গোমড়া করে রাখছে।এর মাথায় এতকিছু আসে কিভাবে?”
শোভা হেসে দিয়ে বলে,“মেয়েটা বড় হচ্ছে তো।ওর তো বুঝ হবেই।”
মিতু কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে দৌড় দেয়।শোভাও পিছু নিলো।রান্নাঘরে ঢোকা মাত্রই শোভাকে দেখে মিতু বলে, “আইসো না আইসো না।সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।রাতেরবেলা চুলায় বৃষ্টির পানি পড়ছিল।আজকে চুল জ্বলার থেকে ধোঁয়া উড়তেছে বেশি।তোমার মুখে লাগলে সমস্যা আছে।”
শোভা মুখটা পানসুটে করে বলে,“এই বাড়ির মেয়ে আমি।চুলা থেকে ধোঁয়া নিয়ে নিয়ে বড় হয়েছি।আজ অব্দি তো কালো হইনি।”
“বিয়ের পর স্বামীর আলাদা যত্ন পাইলে এসব কিন্তু আবার সহ্য করা কষ্টের হয়।আমিও তো এখান থেকে মায়ের বাড়ি গেলে কিছুই করতে পারিনা।এখানে তো রান্নাঘর আছে আমার মায়ের তাও নাই।মাথার উপর ফাঁকা।একটা বেড়া দিয়ে রান্নার জায়গাটা আড়াল করা।যেনো পরপুরুষ না দেখে গোসলখানা তো আরো বাজে অবস্থায়। বেড়া দিয়ে চারপাশ ঢেকে রাখা তাও মাথার উপর ফাঁকা।এইবার মৌলিকে গোসল করানোর সময় বৃষ্টি পড়ছিল।কষ্ট করে ওর মাথায় মগ দিয়ে পানি ঢালতে হয়নি।আকাশ থেকে পানি সব ওর গায়ে পড়ছে।”
শোভা যখনই মিতুর সাথে গল্প করে ওর যেনো সব অভিমানের মুহূর্ত মাথা থেকে উড়ে যায়।এখন শোভা মন খুলে হাসতে থাকে।শোভা নিজের ভাবীকে পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। ভাবী বেশ রসিক।শুধু ভাইকে তিনবেলা উঠতে বসতে কথা শুনায়।তাও ভালই লাগে এগুলো।
বাইরের খোলা মাঠ।চারদিকে নিস্তব্ধতায় এক কোণে বসে আছে দর্শন।রাগে শরীর যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে।শোভাকে অপমান করার জন্যই এই ক্রোধ আরও বাড়ছে।আসলে সে কখনোই শোভার চরিত্র নিয়ে বাজে কিছু বলতে চাইনি।অথচ মুখ থেকে তিক্ত কথাগুলো না বেরিয়ে শান্তি পাচ্ছিল না।
কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।অতীত যেন ফিরে এল তার চোখের সামনে।
..বাবার সাথে সেদিন পার্কে ফারহা আর জবরুল আহমেদকে দেখেছিল।গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দুজন ঠোঁট মিলিয়েছিল।দীপ্ত ফরাজির কাছে সেটা ছিল ঘৃণ্য দৃশ্য।দর্শন তার বাবাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে মায়ের দিকে তাকায়।বুঝে নেয় এটাই হলো বাজে কাজ।অন্যরা হয়তো পার্কের মধ্যে এসব দেখেও চুপ করে চোখ ফিরিয়ে নিত কিন্তু তাদের চোখে তখন অন্ধকার নেমে এসেছিল।আজও সেই দৃশ্যটা ভেসে আসে।বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে নিজেকেই নিজে বলল,“সেদিন যদি চোখে না দেখতে পেতাম,তাহলে হয়তো আমার কাছে আজকের ব্যাপারটা তুচ্ছ লাগতো।শোভার মত আমিও অহেতুক ভাবতাম ব্যাপারটাকে।কিন্তু আমি তো আমার মধ্যে থাকি না আমি থাকি তিক্ত অনুভূতিতে যেটা কেউ বুঝবে না।এই পৃথিবীতে সন্তানকে বোঝার জন্য মা আছে,আমাকে বোঝার জন্য সেই দূরে সরে গেছে।”
ঠোঁটে কটাক্ষের হাসি ফুটে উঠল দর্শনের।ফিসফিস করে আবারও বলল,“আমার নিজের জন্মদাত্রীই আমার জীবনটাকে অন্ধকারে ঠেলে দিলো।সেই অন্ধকার থেকে আমাকে বের করার কেউ নেই।যার হাত ধরে আমি নিজে আলোকিত জীবন গড়তে চাই,আফসোস!সেও আমায় বুঝবে না কোনোদিন।”
পকেট থেকে মোবাইল বের করল দর্শন।ডায়াল করল মিস্টার আর্যকে।কানাডায় থাকে তার মানসিক চিকিৎসক।মিস্টার আর্য প্রথমে ধরলেন না।দর্শনের ভেতরের রাগ তখন দ্বিগুণ হয়ে উঠল।সময়মতো কাজ না হলে তার মাথায় ক্রোধ হুহু করে বাড়ে।কিছুক্ষণ পর কল ব্যাক এলো।
ওপাশ থেকে কুশলাদি স্বরে আর্য জিজ্ঞেস করলেন,“কেমন আছো?”
দর্শন কর্কশ গলায় উত্তর দিলো,“ভালো নেই।সবকিছু ধৈর্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।জানি আমি ভুল করেছি, তবুও নিজেকে সামলাতে পারছি না।মাথা আর মন দুটো দুইদিকে টানছে।”
মিস্টার আর্যর কপাল কুঁচকে গেল।জিজ্ঞাসা করলো,“তুমি বাংলাদেশে গেলে কেন?আরও দু’মাস যদি প্রপার ট্রিটমেন্ট নিতে তাহলে অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো হতো।যদিও এই রোগ পুরোপুরি সারানো যায় না।”
দর্শনের কণ্ঠ ভারী হয়ে এলো,“দাদাজানের প্রতি আমি দুর্বল।ওটাই কাজে লাগালেন তিনি।আসলে পরিকল্পনা ছিল আরও দু’মাস পর দেশে আসব,কিন্তু দাদাজানের অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে আসি।এসে দেখি সব সাজানো নাটক।যদিও সত্যি বলতে, দাদাজান অনেক ভেঙে পড়েছেন।আমাকে দেখেই যেন প্রাণবন্ত মনে হলো তাকে।”
এরপর আজকের ঘটনাটা খুলে বলল দর্শন।দীর্ঘশ্বাস ফেলে যোগ করল,“শোভাকে আমি অপমান করতে চাইনি।তাকে আঘাত দিতে চাই না আমি।কিন্তু ওই মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।এখন আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।আমার মনে হয় প্রথম সিদ্ধান্তটাই ঠিক ছিল।ওকে আমার থেকে দূরে রাখাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।”
আর্য হেসে বললেন,“ধৈর্য ধরো।মনকে শক্ত করো।তোমাকে তো বলেছি এই ট্যাকনিক ফলো করো,যাকে চাও তাকেই না বুঝিয়ে মুখ ফিরিয়ে দিতে হবে।এভাবে কিছুদিন চললে সবকিছু সহজ লাগবে।”
দর্শন তিক্তভাবে মাথা নাড়ল আর জানালো,“আমি তাইই করেছিলাম শুরুতে।মেয়েটাকে নিজের করে পাওয়ার উন্মাদনায় ভুগলেও ইচ্ছে করে দূরে রেখেছি। কথায় কথায় অপমান করেছি,সরিয়ে দিয়েছি নিজের থেকে।জানিয়েছিলাম আমার প্রতি স্বামীর অধিকার না চাইতে।কিন্তু শেষে অদ্ভুত এক টানে আবার আমরা একসাথেই থাকি।আমি আর পারব না ওকে দূরে রাখতে।আমার বুকটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।”
আর্য এবার কণ্ঠ নিচু করে বললেন,“তুমি নিজেও জানো না তুমি ওর জন্য কতটা ভয়ানক।তোমার জেদ তোমার রাগ তোমার অতিরিক্ত চিন্তাধারা তোমাকে বাধ্য করে সামনের ব্যক্তিকে আঘাত দিতে।কানাডায় যে খুনটা করেছিলে,সেটা কোনোরকমে আমি ধামাচাপা দিয়েছি।শুধু তোমার মানসিক অবস্থা বুঝে সাপোর্ট করেছি তোমাকে।কিন্তু যাকে খুন করেছিলে, তার বাবা বাংলাদেশের নামকরা পরিবার থেকে।যদি তোমাকে খুঁজে পায়,জীবিত রাখবে না।”
দর্শনের চোখে দপদপ আগুন জ্বলে উঠল। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উত্তর দিল,“নোংরা মেয়েদের আমি ঘৃণা করি।ওই মেয়েটা ওর শরীর দেখিয়ে বারবার আমার কাছে আসতে চেয়েছিল।আমি এড়িয়েছিলাম কতবার।সে চাইলে সম্মান নিয়ে সরে যেতে পারত।তা না করে নিজেকে উজাড় করে দিতে এসে হেরে গিয়ে আমাকে দোষারোপ করতে চেয়েছিল।ভাইরাল করতে চেয়েছিল মিথ্যা একটা রিউমার দিয়ে।তখন মাথা ঠিক ছিল না আমার!আমার জায়গায় আপনি থাকলে পারবেন নিজের স্ত্রীকে রেখে অন্য নারীর সাথে বাজেভাবে মেলামেশা করতে?”
আর্য কেশে উঠলেন।তার ভেতরে নিঃশব্দ স্বীকারোক্তি।বাইরের পুরুষদের দিকে তাকালে দেখা যায়,স্ত্রী ছাড়াও অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ থাকে অনেকের।দর্শন যদি শৈশব থেকে এত ট্রমার মধ্যে না থাকত,হয়তো সেও আজ অন্য রকম মানুষ হতো।নারীদের প্ররোচনায় পড়তো।নিশ্চিত করে বলা যায় না,তবে অনুমান করা যায়।সবারই যে চাহিদা ভিন্ন।দর্শন উত্তর না পেয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,“কি হলো আপনার?”
মিস্টার আর্য ফোনের ওপাশ থেকে কেঁপে উঠলেন।মৃদু কন্ঠে জানালেন,“তোমার বউয়ের থেকে আরো একটু দূরত্বে থাকো।কয়েকদিন নিজেকে সময় দেও।এমনভাবে থাকো যেনো তুমি ওই মেয়েকে চেনোই না।”
“আবার?”
“এটা ইম্পর্ট্যান্ট।কিছুদিন তো এভাবে করে ঠিকই ছিলে।সব উল্টে গেলো কেন?”
“কয়েকদিনে অনেক কিছু ঘটেছে তাই।সব আমার হাতে ছিল না।”
“ওকে ওকে।তাহলে তুমি আবারও শুরু থেকে শুরু করো।”
দর্শন হাত মুঠ করে চোখ খিঁচে বলে,“ঠিক আছে।”
বলেই উঠে দাঁড়ায়।রোদে ঘেমে ওঠা মুখ হাত দিয়ে মুছলো।কপালের দিকে চুলগুলো ভিজে গেছে।কয়েক কদম ফেলে চলে গেলো গাড়ির কাছে।গাড়ি চালাতে শুরু করে।রাস্তাটা বর্তমানে ঝুমঝুমপুরের দিকে।তারপর ঢাকার দিকে চলে যাবে।
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু দর্শন ফিরছে না।শামীম ওর মোবাইলে সময় দেখে চিন্তিত সুরে বলে,“ভাইজান গেলো কই?”
শোভা মুখ বেকিয়ে বলে,“জানি না।”
শামীম এক পলক তাকিয়ে বুঝিয়ে বলে,“স্বামীকে নিয়ে হেলাফেলা করতে নেই বোন।”
শোভা কথা বাড়ালো না।শামীম আবারও বলে,“স্বামী হলো মেয়েদের জীবনের বটগাছ।”
শোভা ক্ষেপে উঠে বলে,“বটগাছে ভূত থাকে।তাই আমার ওমন বটগাছ চাইনা।”
মিতু মুখ টিপে হাসলো।শামীম বোকার মত তাকালো।মিতু বলে ওঠে,“ভাইজানকে কল দেও।”
শামীম ভাবুক হয়ে বলে,“যদি রাগ করে।হয়তো কোনো কাজে আটকে আছে।”
“দিতে হবে না কল।”
শোভার কথা অবজ্ঞা করে মিতু বলে, “আরে তুমি দেও তো কল।সে কোনো রাজপ্রাসাদে নাই,যে সামান্য কল দিলেই রাগ করতে হবে।”
শামীম দিলো কল।দর্শন গাড়ি চালানোর মাঝেই রিসিভ করে।শামীম সালাম দিয়ে ভদ্রতার সাথে বলে,“ভাইজান আপনি কোথায়?”
দর্শন সোজা রাস্তার দিকে চোখ রেখে বলে,“ঝুমঝুমপুর ক্রস করব এখন।”
“ওখানে কেন ভাইজান?”
“ঢাকায় যাচ্ছি।”
শামীম একবার শোভার দিকে চেয়ে মলিন কণ্ঠে বলে,“বাসায় আসবেন না?”
“না।”
“আমার বোন!”
“ওখানেই থাকুক।”
“কিন্তু ভাইজান…
আর কিছু বলার আগেই কুদ্দুসের কন্ঠ শোনা গেলো। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ভিতরে এসে বলে, “এ বুন্ডি দুপুরের খাওয়া শেষ?”
শোভা দৌঁড়ে ঘরে গেলো।মিতু আস্তে করে বলে,“হুট করে ব্যাটা মানুষ কারো বাড়িতে ঢোকে নাকি?যেই আজকে দরজাটা খোলা দেখলো ওমনি ঢুকলো।বেক্কল একটা!ভাগ্যিস শোভা দৌঁড়ে গেলো নাহলে শাড়ি পরা,চুল ছাড়া সব সাজ দেখে নিতো।মেয়েটা কত লজ্জা পেতো ঠিক নাই।”
বলেই নিজের পাশে থাকা ওড়নাটা দ্রুত মাথায় জড়িয়ে নেয়।দর্শন শুনতে পেলো।ওর হাত থেমে গেলো।গাড়িটা রাস্তার একপাশ করে থামালো।কপালে ভাঁজ ফেলে শামীমের কাছে প্রশ্ন ছুড়লো,“শোভা শাড়ি পরেছে?”
শামীম পিছনে ফিরেছিল।কুদ্দুসকে দেখে কপাল কুঁচকে আসে ওর।দর্শনের কন্ঠে হুশ ফিরলে বলে,“হ্যাঁ একটু সাজছিল বোন।”
বাবুই পাখির সুখী নীড় পর্ব ৩৮
কুদ্দুস আবারও চিৎকার করে বলে,“বুন্ডি দেখ তোর জন্যে বড়ই আচার,গরুর মাংসের আচার আনিছি।”
দর্শনের নিশ্বাস ভারী হলো।ফোস করে উঠছে এখন।ডাক্তারের এডভাইস ভুলে গাড়ি ঘোরালো।কল কেটে বিড়বিড় করে,“এবার কুদ্দুসের হেস্তনেস্ত করবই করব।”