বিকেলের প্রণয় পর্ব ১১
Arshi Ayat
খাওয়ার পর্ব চুকে গেলেই ওরা বেরিয়ে পড়বে বাড়ি যাবার জন্য।মিলাত তেমন একটা ভারী খাবার খেতে পারে না,কোনোরকম একটু খেয়েই উঠে পড়লো।ফুপু,নিরুর এখনও খাওয়া হয় নি।তাই ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
বন্ধুরা সব আড্ডা দিবে আজ তাই কেউ বাড়ি ফিরবে না তবে রেভানকে ফিরতে হবে।কাল অফিস আছে।নিজের ব্যবসা হলেও দায়িত্ব গাফিলতি করা একদমই পছন্দ করে না সে তাই বন্ধুদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ি যাবার জন্য।কিন্তু হঠাৎ মিলাতকে দেখতে পেয়ে চোখ আঁটকে গেলো।মেয়েটা নিরিবিলি একটা কর্ণারে দাড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছে।এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করলো না সে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো মিলাতের দিকে।হটাৎই চোখের সামনে রেভানকে দেখে চমকে গেলো মিলাত।চোখ বড় বড় করে বলল,’আপনি?’
‘এত অবাক হচ্ছো কেন?সেই সন্ধ্যা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে।কি ভেবেছিলে দেখবো না?’
মিলাত একটু থতমত খেয়ে বলল,’কে বলেছে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম।আপনাকে তো আমি দেখিই নি।’
‘তাই নাকি?’রেভান হাসলো।ফের প্রশ্ন করলো,’সাথে কেউ আছে?’
‘হ্যাঁ,ফুপু আর ফুপাতো বোন।’
‘কোথায় তারা?’
‘খেতে বসেছে।’
‘তোমার খাওয়া শেষ?’
‘হ্যাঁ।আপনি খেয়েছেন?’
‘হ্যাঁ,বন্ধুর বিয়ে বলে কথা!শুক্রবার ফ্রী আছো?’
‘কেনো?’
‘দেখা করব।’
‘কেনো?’
‘মন চাইছে।’
‘কেনো?’
‘এই মেয়ে এত কেনো কেনো করছো কেনো?’
‘তো করব না?আপনার সাথে আমি দেখা করব কোন কারণে?’
‘কারণ লাগবে?’
‘অবশ্যই।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘এই যে আমি তোমাকে সহীহ্ সালামতে ফুপুর বাসায় পৌঁছে দিয়েছি তার জন্য তো তুমি আমাকে একবার ধন্যবাদও দাও নি।’
‘আচ্ছা,ধন্যবাদ।’
‘উঁহু,চলবে না।তখন দিলে এই ধন্যবাদ নিতাম কিন্তু বাসি ধন্যবাদ আমি নিই না।’
‘তাহলে?’
‘তাহলে আবার কি?শুক্রবার দেখা করে কফি খাওয়াবা।কারণ চেয়েছিলে না?এই যে কারণ দিলাম।এবার কিন্তু দেখা করতেই হবে।’
মিলাত ভেঙচি কেটে বলল,’করব না।’
‘দেখা যাবে।তোমার ফোন নম্বর দাও।’
‘দিব না।’
‘তাহলে তোমার ফুপির বাসার সামনে গিয়ে বসে থাকব।’
‘অসহ্য!’মিলাত বিরক্ত হয়ে বলল।
রেভান হেসে ফেললো।মেয়েটাকে রাগাতো ভালোই লাগছে।তারপর বলল,’বিরক্ত আমি তোমাকে করবই।এখন পছন্দ করো তুমি কিভাবে বিরক্ত হতে চাও ফোন নাকি সরাসরি?’
উপায়ন্তর না পেয়ে মিলাত বলল,’ঠিকাছে।নাম্বার টাইপ করুন।’
‘তুমি বলো।আমার মনে থাকবে।’
মিলাত নাম্বারটা বলল।রেভান মনে মনে দু’চার বার আওড়ে নিয়ে বলল,’ঠিকাছে।সাবধানে বাসায় যাও।শুভরাত্রি।আসছি।’
বলেই বিয়ে বাড়ি ছাড়লো।রেভান যাওয়ার দুমিনিট পর নিরু আর ফুপুও এলো।তারপর ওরাও বেরিয়ে পড়লো।
পুরো ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে এসে নিজের কেবিনে বসলো অনুরুপ।তখনই ফোন দিয়েছে মা।কলি বেগম জানতে চাইলেন,’কি রে!ছুটি নিয়েছিস?’
‘হ্যাঁ,মা।নিয়েছি।’
‘আসবি কখন?’
‘ঠিক নেই।সন্ধ্যায় আসতে পারি।’
‘আচ্ছা।দুপুরে খাবার পাঠিয়ে দিব নি তোর জামাল কাকাকে দিয়ে।’
‘লাগবে না,মা।এখান থেকেই খেয়ে নেব আমি।’
‘লাগবে না কি?আমি থাকতে তুই বাইরে খাবি কেনো?’
‘আচ্ছা,মা জননী।আপনি পাঠিয়ে দিয়েন।’
মায়ের সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখলো অনুরুপ তারপর একটু ফেসবুকে ঢু মারতেই দেখলো তাসিন জামান নিরু এই আইডি থেকে মিলাতের আইডি ট্যাগ করে একটা ছবি পোস্ট করা হয়েছে কাল রাতে।হয়তো কোনো বিয়ে বাড়িতে তোলা।অনুরুপ মিলাতের মুখের দিকে তাকালো।হাস্যজ্বল মুখেও কেমন বিষন্নতার ছাপ।সবাই যেখানে হলুদ শাড়ি পরেছে মেয়েটা পরেছে ধূসর।জীবন কি এমনই রঙহীন ধূসর হয়?
দু’ বোনই বেশ বেলা করে ঘুমিয়েছে।রুজিনা বেগম বারবার ডেকেও কাউকে ঘুম থেকে উঠাতে পারেন নি।অবশেষে বেলা বারোটায় উঠলো তারা।রুজিনা বেগম কপট রাগের ভঙ্গিতে বললেন,’এই তোদের ওঠার সময়?’
নিরু হাই তুলে বলল,’মা,খিদে পেয়েছে।’
‘হাত,মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।’
মিলাত আর নিরু দু’জনেই হাত,মুখ ধুয়ে টেবিলে এসে বসলো।নাস্তা খেতে খেতে নিরু বলল,’আপু পুরানগর যাবা?’
‘কেনো রে?’
‘আজ থেকে মেলা বসবে।’
‘তাই নাকি?তাহলে আজ না কাল যা।কারণ আজ সব দোকান বসবে।কাল সব ভালো ভাবে বসলে পরে যাস।’
‘হ্যাঁ,ঠিক বলেছো।তাহলে আজ বিকেলে ঘুরতে যাবা?’
‘কোথায়?’
‘বৈলতলি লেকে।’
‘ঠিকাছে,চল।’
নিরু রুজিনা মা’কে ডেকে বলল,’মা,তুমি বৈলতলি লেকে যাবা?’
‘আমি হাজারবার গিয়েছি।তোরা গিয়ে ঘুরে আয়।আমার আজ তালিম আছে।’
‘আচ্ছা।’
বান্ধবীর বিয়ে শেষ করে,বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে আজ বিকেলে বাসায় ফিরেছে নাইমা।সালেহা বেগম মেয়েকে তখন কিছু না বললেও সন্ধ্যায় মেয়ের ঘরে আসলেন।মা’কে দেখে নাইমা একটু ভয় পেলো।মা কি জেনে গেছে সে যে মাশফিকের সাথে পালিয়েছিলো!মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে নাইমা বলল,’কিছু বলবা,মা?’
‘হ্যাঁ,বলতেই এলাম।তোর বাবা আর আমি একটা ছেলে পছন্দ করেছি তোর জন্য।পরশু দেখতে আসবে তোকে।’
‘আমাকে না জানিয়েই?’
‘কই না জানিয়ে?জানাচ্ছি তো।’
‘পছন্দ করার পর জানাচ্ছো।’
‘আরে পছন্দ তো আমরা করেছি এখন দেখতে এলে তোর যদি পছন্দ হয় তবেই এগুবো নাহলো বাদ।এমনিতে ছেলে ভালো,শিক্ষিত,বংশও ভালো।’
‘মা,ঘটকালি করো না তো!’
‘সত্যি বলছি আমি।’
‘আচ্ছা,যাও এখন।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ১০
সালেহা বেগম মেয়েকে আরেকটু বুঝিয়ে চলে গেলেন।নাইমাও হাঁপ ছেড়ে বাচলো।
চৈতি মনমতো শপিং করছে নিজের জন্য।হঠাৎ ছেলেদর ঘড়ির দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটা ঘড়িতে চোখ আটকাতেই থেমে গেলো ও।এই ঘড়িটা রেভানের জন্য নিলে কেমন হয়?ভেবেই থেমে থাকে নি সে রেভানের জন্য ঘড়িটা নিয়েও নিলো।ওকে ভালোবাসার কথা বলার সময় এটা দেবে।ভাবতেই খুশি হয়ে গেলো চৈতি।