বিকেলের প্রণয় পর্ব ১২

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১২
Arshi Ayat

চট্টগ্রাম পৌঁছে বেশ ভালো লাগছে অনুরুপের।অনেকদিন পর নিজের জেলায় এসেছে।কাজের জন্য তেমন একটা আসা হয় না।আসলেও থাকা হয় নি বেশি।এবারও মাত্র দুদিনের জন্য এসেছে সে তাও আবার বাবা-মায়ের জোরাজোরিতে।আর এই আসার কারণটাও অনুরুপ জানে।তবে মন থেকে এখনিই কাউকে আপন করার অনুমতি আসে নি।
সকালের নাস্তার পর চা খেতে খেতে রুজিনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,’হ্যাঁ রে,মিলাত।কি সিদ্ধান্ত নিলি জীবন নিয়ে?এরপর কি করবি?’
মিলাত চায়ে চুমুক দিতে দিতে কিছুটা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,’ভাবছি জব করব পাশাপাশি মাস্টার্সে ভর্তি হব।’
‘ভালো সিদ্ধান্ত।নিজেকে গড়ে নে।’

‘হ্যাঁ,মা বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।এখন আর তাদের ওপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।’
‘সন্তান বাবা-মায়ের ওপর কখনোই বোঝা হয় না।তবে চিন্তা হয় তারা চলে গেলে তোকে দেখবে কে!সবকিছু টাকা দিয়ে হয় না।জীবনে চলতে গেলে বিশ্বস্ত কাউকে পাশে সবসময়ই প্রয়োজন।’
মিলাত তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।বিদ্রুপের স্বরে বলল,’বিশ্বাস?করেছিলাম তো ফুপু।কি হলো বলো?শেষ পর্যন্ত জীবনের প্রতি মায়া হারিয়ে ফেলেছি।এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই কাউকে বিশ্বাস করাটা।’
রুজিনা বেগম বুঝতে পারলেন মেয়েটা আর আগের মতো নেই।হৃদয়ের গভীরে তৈরি হয়েছে গভীর এক ক্ষত।সেই ক্ষত শুকিয়ে যেতে লাগবে বহুদিন তবে দাগ থেকে যাবে চিরদিন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দুপুরে রুজিনা বেগম মিলাত আর নিরুকে নিয়ে বৌভাতে গেলেন।যদিও দু’জনের একজনও যেতে চায় নি তবুও তার কাছে হেরে,যেতেই হচ্ছে।তবে বৌভাত থেকে বেরিয়েই মেলার যাবার ইচ্ছে দুবোনের।রুজিনা বেগম মেনে নিলেন মেয়েদের আবদার তবে শর্ত দিলেন সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরার।দু’বোনই বিনাবাক্য ব্যয়ে শর্ত মেনে নিলো।
অনেকদিন পর বাড়ি এসে দুপুরে ভাতঘুম দিলো অনুরুপ।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাবা মায়ের সাথে টুকটাক আড্ডা দিয়ে বাইরে বের হলো।বন্ধুরা সব যে যার মতো কাজের জন্য বেরিয়ে পড়েছে।তাই একসাথে সবাইকে পাওয়া হয় না।অনুরুপ নিজের মতোই হাঁটতে লাগলো।বিকেলের এই মৃদুমন্দ বাতাস আর অস্তমিত প্রায় সূর্যটা বেশ ভালো লাগছে ওর।অনেকদিন পর নিজেকে বেশ উৎফুল্ল লাগছে।হাঁটতে হাঁটতেই দেখলো অদূরে একটা মেলা বসেছে।অনেকেই ঢুকছে,বের হচ্ছে।তবে এরমধ্যে কমবয়সী মেয়ে আর বাচ্চাদের সংখ্যা বেশি।

মাঝেমধ্যে কপোত-কপোতীদের জোড়াও দেখা যাচ্ছে।হেঁটে এসে অনুরুপও ঢুকলো মেলায়।সারি সারি দোকান বসেছে একাধারে।বেশিরভাগই মেয়েদের কসমেটিকস,জুয়েলারি আর জামাকাপড়।আরেকপাশে সাংসারিক জিনিসপত্র,যেমন দা,ব’টি,পিঁড়ি,বেলুন বাচ্চাদের খেলনার দোকান বসেছে।এছাড়া বিখ্যাত নাগরদোলা যেটা ছাড়া মেলা অসম্পূর্ণ সেটাও বসেছে। বিভিন্ন রকমের খাবার যেমন নিমকি,পেয়াজু,চিংড়ি মাছের মাথার বড়া,বিভিন্ন রকমের আচার,তেলের পিঠা সহ অনেক কিছু উঠেছে মেলায়।সবগুলো দোকান ঘুরতে ঘুরতে অনুরুপ একটা বাহারি চুড়ির দোকানে গেলো।এখান থেকে মায়ের জন্য কিছু চুড়ি নেবে।ছোটোবেলা থেকে অনুরুপ দেখে তার মা ভিষণ রকমের চুড়ি প্রেমী।কাঁচের চুড়ি,রেশমি চুড়ির দোকান দেওয়া যাবে এত চুড়ি রয়েছে কলি বেগমের তবুও এখনও মেলায় বা শপিংয়ে গেলে চুড়ি দেখলেই ষোড়শী কিশোরীর মতো খুশি হয়ে ওঠে।

অনুরূপ চুড়ি দেখছিলো হঠাৎ পাশে দু’জন রমণীর চঞ্চল,উৎফুল্ল গলার আওয়াজ পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে তাকাতেই পরিচিত মুখ ভেসে উঠলো।মিলাতকে এই মুহুর্তে একদমই আশা করে নি অনুরুপ।তবে অজানা একটা ভালো লাগাও টের পাচ্ছে ও।চুড়ি দেখার ছুতোয় আঁড়চোখে চাইতে লাগলো ওদের দু’জনের কর্মকান্ড।মাস্ক থাকায় মিলাত ওকে চিনতে পারে নি।মিলাতের পাশের চঞ্চল মেয়েটি বিভিন্ন চুড়ি দেখাচ্ছে ওকে।তবে একটাও পছন্দ হচ্ছে না ওর।শেষ পর্যন্ত চঞ্চল মেয়েটি নিজের জন্য দুই ডজন চুড়ি নিয়ে মিলাতকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
নিরু অনেক্ক্ষণ ধরে চেষ্টা করছে তার প্রিয় আপুটিকে কিছু কিনে দেবার কিন্তু মিলাতের কিছুই পছন্দ হচ্ছে না।অবশেষে মেলার বাইরে দাঁড়িয়ে একব্যক্তি রজনীগন্ধা বিক্রি করছিলো।সেখানে গিয়ে নিরু একগুচ্ছ রজনীগন্ধা কিনে মিলাতের হাতে দিলো।মিলাতের কাছের সবাই জানে রজনীগন্ধা কতোটা প্রিয় তার।তবে এবার রজনীগন্ধা হাতে পেয়ে খুশি হবার বদলে মুখটা মলিন হয়ে গেলো ওর।মনে পড়ে গেলো পুরোনো স্মৃতি।একটা সময় সাইফুল যখন ওর সাথে দেখা করতে আসতো তখন হাতে করে রজনীগন্ধাও নিয়ে আসতো।সেই ভিষণ সুন্দর দিনগুলো এখন তিক্ত অতীত!ফোঁস করে একটা গভীর শ্বাস ফেলে ফুলগুলোর ঘ্রাণ নিতে নিতে নিরুর সাথে মেলা ত্যাগ করলো ও।
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সবটাই লক্ষ্য করলো অনুরুপ।তারপর ওদের পিছনে পিছনে আসতে শুরু করলো।অনুরুপ জানে না কিসের টানে এমন করছে ও।তবে মেয়েটাকে সামনে দেখলেই অন্যরকম অনুভূতি হয়।

ওরা বাসায় ঢোকার পর অনুরুপ দুই ডজন রঙীন কাঁচের চুড়ি,একটা গোলাপ দরজার সামনে রেখে চলে গেলো।মেলায় যখন ওরা চুড়ি দেখছিলো তখন ওই চুড়িগুলো বারবারই দেখছিলো মিলাত তবে ছুঁয়ে দেখেনি।ওরা সেখান থেকে যাবার পরই অনুরুপ চুড়িগুলো কিনে নিয়েছিলো।আর গোলাপটা কেন দিয়েছে জানা নেই।তবে দিতে ইচ্ছে করছিলো।
বাসায় ফিরে অনুরুপ জানতে পারলো কালই তার মেয়ে দেখতে যেতে হবে।এই প্রথম বাবা-মায়ের কোনো সিদ্ধান্তে বেশ বিরক্ত হলো সে।কাল কিছুতেই সে মেয়ে দেখতে যাবে না মনে মনে স্থির করলো।

চৈতি দু’দিন ধরে কেবল লাগেজই গোছাচ্ছে।অবশেষে আজই তারা রওনা হচ্ছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হওয়ার খুশিতে আত্নহারা চৈতি।এবার ওকে নিজের করে পাওয়ার অপেক্ষা।এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসতেই চৈতি নিজের জন্য কেনা নতুন ফোনটা নিয়ে ডায়াল করলো মিলাতের নাম্বারে।মিলাত তখন একটা উপন্যাস পড়ছিলো বইয়ে চোখ রেখেই রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল,’হ্যালো।’
ওপাশ থেকে চৈতি বাঁকা হেসে বলল,’কি,রে!বেঁচে আছিস তাহলে?’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১১

মিলাত চমকে গেলো।চিনতে পারলো চৈতির গলা।হঠাৎ কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে গেলো।অতিকষ্টে মুখ দিয়ে বের করলো,’কেনো ফোন করেছো?’
‘শোন,তোকে একটা গুড নিউজ দেই।তোর সাইফুলকে এখন আমার লাগবে না।তুই ওকে নিয়ে যেতে পারিস আমি এখন নতুন পাখি পেয়েছি।’বলেই হাসতে লাগলো চৈতি।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৩