বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৯
Arshi Ayat
অনুরুপ মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বসে আছে ঘন্টাখানেক যাবত।ও আজ পণ করেছে মা’কে মানিয়েই তবে ক্ষ্যান্ত হবে।কিন্তু কলি বেগম ছেলের এমন বুদ্ধিহীন আচরণে ভীষণ দুঃখ পেয়েছেন।ওর যদি পছন্দই থাকতো তাহলে বললেই পারতো।তিনি টিপিক্যাল বাংলা মায়েদের মতো নাকি?ছেলের পড়াশোনা থাকাকালীন তো তিনি নিজেই বলতেন কাউকে পছন্দ করতে বা প্রেম করতে কিন্তু তখন অকর্মার ঢেঁকিটা কিছু করতে পারলো না।অগত্যা বাধ্য হয় বিড়ালের গলায় ঘন্টা ঝুলানোর জন্য তাকে নামতে হলো।এদিকে বিড়াল যে নিজেই নিজের গলায় ঘন্টা ঝুলিয়ে এসেছে সেটা কে জানতো!বড় হয়ে বিড়াল হোক আর মানুষ সব সেয়ানা হয়ে যায়।তবে মিলাতের ছবি দেখে মনে মনে তিনি মেয়েটাকে পছন্দ করেছেন কিন্তু এত সহজে গলবেন না।না জানিয়ে বিয়ে করার শাস্তি এই ছেলেকে অবশ্যই পেতে হবে।
অনুরুপ কি করবে বুঝতে পারলো না।চিন্তায় পড়ে গেলো।মায়ের রাগই ভাঙাতে পারছে না তো বউ রাগ করলো কিভাবে ভাঙাবে।অনুরুপ এবার বাবাকেও ধরলো ওর হয়ে ওকালতি করার জন্য।আমিনুল সাহেব এক কানে ধরে বলল,’না,বাবা।অকাজ তুমি করেছো,সামলাবেও তুমি।আমি পারব না।পরে তুমি তো চলে যাবে।এই রমণীর নখরা আমার দেখতে হবে।বিয়ে তো হয়েছে দেখবা বউ কি জিনিস!’
অনুরুপ গর্বের শুরে বলল,’আমার বউ তোমার বউয়ের থেকেও ভালো।’
আমিনুল সাহেব কপট রেগে বললে,’কি!তুই আমার বউ মানে তোর মা’কে খারাপ বললি।এখনই বলছি তোর মা’কে দাঁড়া।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনুরুপ সাথে সাথে বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলল,’দয়া করো বাবা।আর ভেজাল লাগিও না।’
আমিনুল সাহেব এবার শান্ত গলায় বললেন,’তুই এক কাজ কর।অনশন শুরু কর।মায়ের সামনে ছেলে মেয়েরা না খেয়ে কষ্ট করলো সেটা মায়েরা সহ্য করতে পারে না।’
অনুরুপ খুশি হয়ে বলল,’বুদ্ধি তো ভালোই।’
‘আমি সবসময়ই ভালো বুদ্ধি দেই।’
‘বাবা তুমি দমকল বাহিনী।’
আমিনুল সাহেব হাসলেন ছেলের কথায়।
কলি বেগম ছেলের জন্য রান্না করলেন ঠিকই কিন্তু নিজে খেতে বসলেন না।এদিকে বাপের কথা মতো ছেলেও বসলো না খেতে।ড্রইং রুমে কাপড় বিছিয়ে তারওপর বসলো।সামনে সাইনবোর্ড ঝুলালো না মেনে নিলো আমরণ অনশন।কলি বেগম বিরক্ত হলে ভেতরে ভেতরে এমন ফালতু বুদ্ধি দিলো কে ছেলেটাকে?এত কষ্ট করে রান্না করা খাবার এখন খাবে না ছেলেটা!এটা নিশ্চয়ই তার বুড়োটার বুদ্ধি।
ভগ্নহৃদয় নিয়েই চট্টগ্রাম ফিরলো রেভান।জীবনে দ্বিতীয় বার ব্যর্থ হবার পর আজকের পর থেকে ভালোবাসা নামক চ্যাপ্টারটাই বাদ দিয়েছে সে।এবার পরিবার যাকে গলায় ঝুলিয়ে দেবে তাকেই করবে বিয়ে।রেভান বাসায় ফিরেই নিজের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে বলল।এতদিনে ছেলে রাজি হয়েছে বলে সালেহা বেগম বেজায় খুশি।তিনি ছেলের বিয়েটা দেখে শুনে অনেক ভালো ঘরে করাবেন।
মিলাত দুপুরের খাবারের পর অনুরুপকে ফোন করলো।অনুরুপ ফোন কেটে দিয়ে কল টেক্সট করলো,’আমি অনশনে আছি।এখন কথা বলব না।’
‘কিসের অনশন?’
‘মা রাগ করে বসে আছেন।তাকে মানানোর জন্য বসেছি অনশনে।’
‘তাহলে আমাকেও নিতেন আমিও বসতাম অনশনে।’
‘এবার ফেল হলে পরেরবার তোমাকেও নেবো।’
‘আচ্ছা কিন্তু বেশিক্ষণ অনশনে থাকার দরকার নেই।খেয়ে নিয়েন।’
‘আচ্ছা,বউ।’
মিলাত হাসলো।লোকটাকে বিয়ে করেছে মাত্র কয়েকদিন হলো এই কয়েকদিনে সে এমন ভাবে বউ বউ করে যে কত যুগের সংসার তাদের!মিলাতের অবশ্য ভালো লাগে।দুই অক্ষরের নাম তবুও কি অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি দিয়ে যায়।
অনশন করতে করতে ওই চাদরের ওপরই ঘুমিয়ে পড়েছে অনুরুপ।বিকেলে ঘুম থেকপ উঠে কলি বেগম ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে ওর কাছে গিয়ে ডেকে বললেন,’এই হতচ্ছাড়া ওঠ!’
অনুরুপ চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলো।কলি বেগম কড়া সুরে বললেন,’এসব নাটক আমার বাড়ি চলবে না।খেলে খাও নাহলে যাও।’
‘মা প্লিজ।’
‘কি বলেছি শোনো নি!’
অনুরুপ আমার মায়ের পা ধরে ফেললো।অসহায় সুরে বলল,’মা আর কখনো এমন হবে না।’
‘আর কখনো এমন হবে না মানে?তুই আর কয়টা বিয়ে করতে চাস?’
‘আর একটাও না।বলতে চেয়েছি তোমাকে না জানিয়ে কিছু করব না।’অনুরুপ হড়বড়িয়ে বলল কথাটা।
কলি বেগম আড়ালে মুচকি হেসেও নিজের চেহারার কাঠিন্যতা বজায় রাখলেন।বললেন,’ঠিকাছে ভেবে দেখব।এখন খেয়ে,ঘরে গিয়ে ঘুমা।বাপ-ছেলে একই রকম।আমি বলে এদের ঘর করেছি।আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে জীবনেও করতো না।’
আমিনুল সাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে বলল,’দেখিস একদিন তোর বউও এমন ডায়লগ দিবে।’
অনুরুপ হেসে বলল,’প্রত্যেকটা বউই তার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে এসব রপ্ত করে।’
‘হ্যাঁ এখন বল।মেনেছেন ম্যাডাম কলাবতী?’
‘বলেছে ভেবে দেখবে।’
আমিনুল সাহেব হেসে বললেন,’আরে ওসব ফর্মালিটিস।মেনে বসে আছে।’
‘যাক এখন ভালো লাগছে।’
‘এখন গিয়ে খেয়ে একটু ঘুমা।বউ মাকেও ফোন করে খবরটা দিস।’
‘অবশ্যই।’
অনুরুপ খেয়ে নিজের রুমে গেলো।বিছানায় বসে মিলাতকে ফোন করবে তখনই কল এলো হিমেলের।ওর ফোন রিসিভ করতেই হিমেল বলল,’কি অবস্থা ভাই?’
‘ভালো।তোর?’
‘আলহামদুলিল্লাহ।তোকে একটা ইন্টারেস্টিং খবর জানানোর জন্য ফোন দিয়েছিলাম।’
‘বল।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৮
‘চৈতি নামের মেয়েটা কোনো রাজনৈতিক নেতার সাথে জড়িত।মানে অ্যাফেয়ার আছে।সোজা বাংলায় লোকটার রক্ষিতা।মাঝেমাঝেই হুট করে যখন উধাও হয়ে যায় তখন ও ওই লোকের বাড়িই যায়।তুই ফিরলে আরও বিস্তারিত বলব।’
‘আচ্ছা।আমি কাল আসব।’
‘আয়,সাবধানে।রাখছি।’
অনুরুপ ফোন কেটে ভাবনায় মশগুল হলো।ও ভেতরে ভেতরে এরকম কিছুই অুমান করেছিলো মেয়েটার ব্যাপারে।