বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩০

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩০
Arshi Ayat

অনুরুপের মনেই ছিলো না মিলাতকে ফোন করার কথা।এদিকে মিলাতের মনে সূক্ষ্ম একটা উৎকন্ঠা কাজ করছে শ্বশুড়বাড়ির কি অবস্থা এটা ভেবে।তাই নিজেই ফোন করলো।অনুরুপ তখন শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো চৈতির ব্যাপারে।হঠাৎ ফোন আসায় স্ক্রিনে চোখ রাখতেই ঠোঁটের কোণ প্রশস্ত হলো।উবু হয়ে শুয়ে ফোন রিসিভ করে বলল,’কি অবস্থা বউ?’
‘ভালোই।আপনার কি অবস্থা?পরিস্থিতি কেমন?’
অনুরুপ প্রফুল্ল স্বরে বলল,’আরে বিন্দাস।তোমার শ্বাশুড়ি তো মেনে গেছে।’
‘সত্যি?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাহলে বাবা,মা আসবেন কবে?’
‘আমি কাল চলে আসবো।বাবা-মা সামনের সপ্তাহে আসবেন।’
‘বাহ!’

‘আমি এসে তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।এখনও তো দেখো নি আমার আস্তানা।অবশ্য ওটা এখন তোমারও।’
একটু থেমে অনুরুপ আবারও বলল,’আমার ফ্ল্যাটে কিন্তু বেশি আসবাবপত্র নেই।তুমি যখন পুরোপুরি চলে আসবে আমার কাছে তখন তুমি যা লাগে কিনে নিও।’
‘ঠিকাছে আমি আগে গিয়ে দেখি।’
‘হ্যাঁ,অবশ্যই।মাঝেমধ্যে এসে পিকনিক করে যেতে পারো।যদি তোমার বাবা এলাও করে।’
মিলাত ফিক করে হেসে বলল,’আপনার বাসায় যাব পিকনিক করতে?’
‘হ্যাঁ যেহেতু বিয়ের পরও বিবাহিত ব্যাচেলর থাকতে হচ্ছে সেহেতু মাঝেমধ্যে বউয়ের সাথে পিকনিক তো ডিজার্ভ করি।’
মিলাত হাসতে হাসতেই বলল,’ঠিকাছে আসব পিকনিক করতে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এভাবেই আরও বেশ কিছুক্ষণ ওরা দু’জনে হাসাহাসি করলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।আস্তে আস্তে ওদের সম্পর্ক সহজ হচ্ছে।এর অগ্রাধিকার অনুরুপকেই দিতে হয়।ও মিলাতকে সহজ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।
খাটের ওপর ভীষণ আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বসে আছে চৈতি।পরণে ফিনফিনে লাল রঙের একটি নাইটি উরু পর্যন্ত উঠে আছে।চেহারায় কামুকতার রেশ।হাতের ইশারায় সামনের মানুষটিকে ডাকছে নিজের দিকে।সামনের মানুষটির চোখেও লালসা।সে ঝাপিয়ে পড়লো চৈতির ওপর।শুরু হলো প্রচীন নোংরা খেলা।শারীরিক ক্রিয়া শেষে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পাশাপাশি শুয়ে পড়লো।খানিকক্ষণ পর চৈতি হঠাৎই শোয়া থেকে উঠে চড়ে বসলো লোকটির ওপর।লাস্যময়ী ভঙ্গিতে হেসে বলল,’মন ভরেছে জনাবের?’
‘খুব।’ লোকটাও উত্তর দিলো একই স্বরে।
‘তাহলে আমার মন ভরাও।’
‘সেকি!তোমার মনে ভরে নি?আরেক রাউন্ড হবে নাকি?
‘এটার কথা বলি নি।গত সপ্তাহে যে বলেছিলাম আমাকে চট্টগ্রামে একটা ফ্ল্যাট দিতে।সেটার কি হলো?’
‘দিব তো।’

‘কবে দিবে?আসলে তুমি আমাকে ভালোই বাসো না।’
এটা বলেই চৈতি কপট ঢংয়ে লোকটার ওপর থেকে নেমে গেলো।লোকটা পেছন থেকে নগ্ন শরীরে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,’খুব শীঘ্রই দেবো,গো।একটা প্রজেক্ট আসবে আগামীকাল।তোমাকে সামনের সপ্তাহেই দিতে পারব।’
এই কথা শুনে চৈতি খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরলো আধবুড়ো লোকটাকে।
চৈতি গোসল করে বের হতেই দেখলো মতিউর হাসান নিজের পান্জাবি পড়ছে।চৈতি পেছন থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা স্বরে বলল,’কি গো!চলে যাচ্ছো আমাকে ফেলে?’
‘না তো!কাজ আছে একটা করেই রাতে চলে আসব তোমার কাছে।’
‘সত্যি?’চৈতি খুশি হওয়ার ভান ধরে বলল।
মতিউর হাসান চৈতির গাল টেনে ধরে বলল,’হ্যাঁ,সত্যি।’
পরক্ষনেই চৈতি আবারও নিজের অভিব্যক্তি পরিবর্তন করে ন্যাক সুরে টেনে টেনে বলল,’তুমি তো আমার কাছে আসোই না।সব ভালোবাসা তোমার বউয়ের জন্যই।’
‘আরে না।বাচ্চাদের জন্য যেতে হয়।ওকে তো দেখতেই পারি না আমি আমার সব ভালোবাসা তোমার জন্য।’
‘তাই?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাড়াতাড়ি এসো তাহলে।’

মতিউর হাসান চলে গেলে চৈতি বিছানার ওপর আরাম করে বসলো।এই আলিশান ফ্ল্যাটটাও ওর নামেই কেনা।গত একবছর আগে রেলমন্ত্রী মতিউর রহমানের সাথে পরিচয় হয় ওর এক বান্ধবীর বিয়েতে।সোই বান্ধবীর মামা হয় এই লোক।বিয়েতে যখনই এই লোকের সাথে ওর বান্ধবী পরিচয় করায় তখনই মনে মনে ছক কষে একে হাতে আনার।সেইজন্য অবশ্য বেশি কসরত করতে হয় নি।পনেরো দিনেই পটিয়ে ফেলেছে ও।আর তারপর থেকেই ওর অভাব নেই।অনেক কিছু আছে ওর নামে কেউ জানে না।চৈতি মনে মনে হাসে।আর ভাবে নেক্সট টার্গেটের কথা।চট্টগ্রামের ফ্ল্যাটটা খুবই জরুরি।রেভানকে আগে একটা শিক্ষা দিতে হবে পরে মিলাতের দিকে ঘুরবে।চৈতি আফসোসের স্বরে স্বগোতক্তি করে,’আহারে রেভান যদি আমাকে ভালোবাসতা তো আমি ভালো হয়ে যেতাম।তুমি আমাকে ভালো হতে দিলে না।আমার ভালো না হওয়ার পেছনে তুমি দায়ী।’
পরেরদিন সকালের ট্রেনে চড়ে দুপুর নাগাদ ঢাকা এসে পৌঁছালো অনুরুপ।তখন বাজে আড়াইটা।প্রথমেই মিলাতকে ফোন করলো।রিসিভ করতেই অনুরুপ বলল,’কোথায় তুমি?’

‘ভার্সিটি থেকে বের হবো।’
‘আচ্ছা অপেক্ষা করো।আসছি আমি।’
‘আচ্ছা।’
মিলাত ক্যান্টিনে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো।আধঘন্টা পর দেখা গেলো অনুরুপকে।গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার।মিলাত নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে বলল,’দেখি এদিকে তাকান।’
অনুরুপ তাকাতেই মিলাত রুমালটা দিয়ে রোদে লালা হয়ে যাওয়া ঘর্মাক্ত মুখখানা মুছে দিলো।অনুরুপের ভীষণ ভালো লাগলো।মুখ মুছে দিয়ে মিলাত বলল,’পানি খাবেন?’
‘না,চলো বাসায় যাই।’
‘আপনার বাসায়?’
অনুরুপ রিকশা ডাক দিয়ে।বলল,’আমাদের বাসায়।’

রিকশায় উঠে বসার পর রিকশার হুড উঠিয়ে দিলো রিকশাওয়ালা মামা তাতে ওরা অনেকটা কাছে চলে এলো।অনুরুপ যতটা পারে চেপে বসেছে।মিলাত হাসলো ওর কান্ড দেখে কানে কানে ফিসফিস করে বলল,’আমরা বিবাহিত মশাই।এত চেপে বসার দরকার নেই।’
‘ফর্মালিটিস।তা নাহলে তো তোমরা মেয়েরা বলবে আমরা তোমাদের শরীর চাই।’
‘তাই না?ফর্মালিটিস করা লাগবে না।ঠিকভাবে বসুন।’
অনুরুপ সহজ হয়ে বসলো কিন্তু সমস্যা বাঁধলো ওর লম্বা,পেশিবহুল হাত নিয়ে এক হাত মিলাতের পেছন দিকে রাখায় একটু পরপরই রিকশার ঝাঁকুনিতে কোমরের সংস্পর্শে আসে।তাই মিলাত ওর হাত খান উঠিয়ে নিজের ঘাড়ের ওপর রাখলো।অনুরুপ কিছু বলল না।হাসলো কেবল।
ওদের ফ্ল্যাটে পৌঁছানোর পর মিলাত ফ্ল্যাটটা ঘুরে দেখলো।বেশি বড় না তবে ছোটোও নয়।মাঝারি ধরনের।দু’টো বেডরুম,ডাইনিং,ড্রইং একইসাথে।সবচেয়ে ভালো লেগেছে অনুরুপের ঘরের ব্যালকনিটা।বিভিন্ন রকমের গাছগাছালি আছে।এখান থেকে অনেকটাদূর পর্যন্ত দেখা যায়।অনুরুপ মিলাতের দিকে তাকিয়ে এক ঝলক হেসে বলল,’গোসল করে আসি।তারপর কিছু বানিয়ে দিব।’

অনুরুপ গোসলে যাবার পর মিলাত খুঁজে খুঁজে কিচেনে চলে গেলো।ভাত তরকারি রান্নার চেয়ে এখন শর্টকাট নুডুলস রান্না করাটাই ভালো তাই ও নুডুলস খুঁজতে লাগলো আর পেয়েও গেলো।রান্না করে সাজিয়ে টেবিলে আনতে দেখলো অনুরুপ হাঁটু পর্যন্ত শুধু একটা তোয়ালে পরেই ওকে ডাকতে ডাকতে ডাইনিংএ চলে এসেছে।স্বামী নামক পুরুষটির এই প্রথম এমন রুপ থেকে ঢোক গিললো মিলাত।সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।মিলাতের এমন কান্ড দেখে অনুরুপ হাসতে হাসতে বলল,’দোষ তোমার।তোমাকে রুমে না পেয়েই তো এখানে চলে এলাম।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৯

‘জামা কাপড় পরে আসুন,যান।’
অনুরুপের মন চাইলো আরেকটু জ্বালাতে তাই ও এগিয়ে এসে একটু ঝুঁকে মিলাতের কানে কানে বলল,’দেখে নিন,আপনারই তো সব।স্বামীরটা দেখলে পাপ হয় না।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩১