বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩২
Arshi Ayat
চৈতি বাসায় ফিরেছে কিছুক্ষণ আগেই।ওকে দেখে হারুন সাহেব বাজখাঁই স্বরে প্রশ্ন করলেন,’কোথায় ছিলে এতদিন?’
চৈতি নির্বিকার স্বরে বলল,’উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।’
‘তাহলে এই বাড়িতে থাকারও প্রয়োজন নেই।’
‘ঠিকাছে চলে যাচ্ছি এমনিতেও তোমাদের সব দালানকোঠা তো ছোটো মেয়ের নামেই দিচ্ছো।’
‘তোমাকেও দিতাম কিন্তু তুমি তো মানুষ হলে না।’
চৈতি হঠাৎই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।হাত তালি দিতে দিতে বলল,’আমার তোমাদের সম্পত্তি লাগবেও না।তোমাদের থেকে কয়েকগুণ আছে আমার।তবে তোমাদের মেয়েকে সাবধানে রেখো।’
এটা বলেই চৈতি হাসতে হাসতে চলে গেলো নিজের ঘরে।ওর কথা শুনে হারুন সাহেব,মিলাতের মা,মিলাত সবাই হতভম্ব।একটু পর হারুন সাহেব দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বললেন,’ওর ধ্বংস অতি নিকটে।ও যতটা গতিতে উপরে উঠছি তার থেকে দ্বিগুণ গতিতে মাটিতে আছড়ে পড়বে।’
চৈতি নিজের সবকিছু গুছিয়ে একবার রান্নাঘরে গেলো।রান্নার খালা পাপিয়া বেগম সকালের চা বানাচ্ছিলেন সবার জন্য।চৈতি তার কাছে একটা খাম বাড়িয়ে দিলো।তারপর চাপা স্বরে বলল,’এখানে দশ হাজার আছে।প্রত্যেক মাসে পাবে।শুধু আমাকে এই ঘরের সব ইনফরমেশন দিতে হবে।’
পাপিয়ার চোখ লোভে চকচক করে উঠলো।সে চৈতির হাত থেকে টাকাটা ছো মেরে নিয়ে একটা তেলতেলে হাসি দিয়ে বলল,’ম্যাডাম,একদম ই চিন্তা করবেন না।সব খবর পৌঁছায় যাবে আপনার কাছে।’
‘আর এই কথা যেন বাইরে বের নাহয়।হলে এমন হাল করব…’
চৈতি নিজের হুমকি সম্পূর্ণ করার আগেই পাপিয়া দ্রুত স্বরে বলল,’না,না ম্যাডাম কাকপক্ষীও জানবো না।’
‘গুড।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথা শেষ করে চৈতি পুনরায় নিজের ঘরে এসে ট্রলি নিয়ে বাসার সবার সামনে দিয়ে গটগট করে পায়ের আওয়াজ তুলে চলে গেলো।ওর চলে যাওয়াতে কারো বিন্দুমাত্র খারাপ লাগলো না তবে বাবা-মায়ের আফসোস হলো।
হারুন সাহেব অফিসে যাবার পর মিলাতও তৈরি হতে শুরু করলো ক্লাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আর তখনই ফোন এলো অনুরুপের।মিলাত রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ক্লান্ত অথচ আদরপূর্ণ গলার আওয়ার ভেসে আসলো।
‘বউ,একটু নিচে নামবে?তোমাকে একটু দেখে বাসায় যাব।’
মিলাত মুচকি হেসে বলল,’দুই মিনিট অপেক্ষা করুন,আসছি।’
মিলাত ফোন রেখে নিজেকে আয়নায় একবার দেখেই ব্যাগ আর ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
অনুরুপ নিজের গাড়ির সামনেই হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছিলো বউয়ের জন্য।মিলাতকে আসতে দেখে এগিয়ে গেলো সামনে।মিলাত লক্ষ্য করলো নিজের স্বামীকে।রিমলেস চশমার ফাকে একজোড়া ঘুমে নিভু নিভু চোখ উঁকি দিচ্ছে,চুল উসকোখুসকো,শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখা কনুই পর্যন্ত তবুও জনাবের ওষ্ঠে লম্বা চওড়া এক হাসি বিদ্যমান।সে মুগ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো,’বউ তোমাকে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে।’
‘আর আপনাকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।বাসায় না গিয়ে এখানে এসেছেন কেন?’মিলাতের কন্ঠে বিরক্তির ভান।ভেতরে ভেতরে সে কতোটা খুশি সেটা ওর চোখের আভাতেই ফুটে উঠেছে।
অনুরুপ একটু ঢং করে বলল,’বউকে দেখতে।আমার এত সুন্দর একটা বউ না দেখলেই পরাণে ব্যাথা করে।’
মিলাত লজ্জায় ঠোঁট চেপে হাসলো।বলল,’হয়েছে না বউকে দেখা?এবার বাসায় যান।’
‘তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?’
‘তাড়িয়ে দিচ্ছি না,এখন আপনার রেস্ট প্রয়োজন তাই বাসায় যেতে বলছি।’
‘আমি তো রেস্টই নিচ্ছি।’
‘কিভাবে?’
‘মানুষ বিশ্রাম নেয় শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য আর মনের ক্লান্তি দূর করার জন্য কি করে?’
‘কি করে?’
‘ভালো লাগা এবং ভালাবাসার সংস্পর্শে থাকে।শরীরের আরামের সাথে সাথে সবারই মনের আরামের প্রয়োজন আছে।’
‘তাই না?’
অনুরুপ আরেকটু এগিয়ে এসে মিলাতের গালে হাতে রেখে উষ্ণ,গভীর,ভালোবাসা পূর্ণ স্বরে বলল,’আমার মনের আরাম তুমি।’
মিলাত ফের লজ্জা পেলো।অনুরুপের ভীষণ ইচ্ছে করলো মেয়েটার কপালে চুমু খেতে।নিজের এই অদম্য ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিয়ে অনুরুপ কাজটা করেই বসলো।মিলাত প্রথমে একদফা অবাক হলো।পরবর্তীতে ভীষণ ভালোলাগায় মন ছুঁয়ে গেলো।এই স্পর্শে লুকোনো ছিলো হৃদয়ের অব্যক্ত অনুভূতি।এখন মাঝেমধ্যেই মিলাত অনুভব করে সে আসলে ভালো থাকে এই অসাধারণ মানুষটার সাথে থাকলে।
অনুরুপ ভয়ে ছিলো এহেন কান্ডে মেয়েটা যদি কিছু মনে করে!এখনও তো এতোটাও ফ্রী হয় নি ওরা কিন্তু না বউয়ের চেহারায় অদ্ভুত এক ভালো লাগার প্রতিচ্ছবি।অনুরুপ নিঃশব্দে হাসলো।বলল,’বউ,তুমি কি ক্লাসে যাচ্ছো?’
‘হ্যাঁ।’
‘চলো,আমি নামিয়ে দেই।’
‘একদমই না।শিগগিরই বাসায় যাবেন।খেয়ে,ঘুমাবেন।’মিলাতের স্বরে শাসন আর অধিকার স্পষ্ট।অনুরুপের আত্নায় প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেলো।সে বউয়ের একদম বাধ্য স্বামীর মতো মাথা নেড়ে বলল,’জ্বি,ম্যাডাম একদম আপনার কথাই শিরোধার্য।’
এটা বলেই অনুরুপ হাত নেড়ে গাড়ির দিকে এগুলো পেছন থেকে মিলাত ডেকে উঠলো।
‘ডাক্তার,শুনুন।’
অনুরুপ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,’বলুন,বউ ম্যাডাম।’
‘কাল আপনার কখন ডিউটি?’
‘কাল আমার ছুটি।সকাল আটটায় ডিউটি শেষ করে আসব।তারপর একদিনের রেস্ট।’
‘আচ্ছা।’
‘কেনো?আসবে?’
‘নাহ!এমনিই খবর নিচ্ছিলাম।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩১
অনুরুপ হেসে গাড়িতে উঠে বসলো।আরো একবার হাত নেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলো দৃষ্টি সীমার বাহিরে।
পাপিয়া জানতে পেরেছে বড় ম্যাডাম আর স্যার মানে মিলাতের বাবা,মা কাল গ্রামে যাবেন।তার মানে বাসায় একা মিলাতই থাকবে।সে দ্রুত চৈতিকে খবরটা দিয়ে দিলো।কথাটা জেনেই চৈতি ছক কষে ফেললো।এমন অবস্থা করবে যে ডাক্তার অনুরুপ পা ধরে ভিক্ষা চাইবে নিজের স্ত্রীর ইজ্জত!কত বড় স্পর্ধা ওর ওপর স্পাই লাগায়।এই দুঃসাহস ভেঙে একদম গুড়িয়ে দেবে।কার সাথে খেলতে এসেছে জানে না ডাক্তার সাহেব!