বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৫

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৫
Arshi Ayat

সন্ধ্যার আকাশে মেঘের ঘনঘটা।কালো মেঘের আস্তরণে বন্দী আকাশ।আজ যেন সন্ধ্যা নামলো দ্রুতই।পাখিরা দল বেঁধে ফিরছে নীড়ে।বাতাসের তালে দুলছে গাছপালা,মেঘের দল অবিন্যস্ত ভাবে ঘুরছে পুরো আকাশ জুড়ে।ক্রমেই বেড়ে চলছে বাতাসের বেগ।সন্ধ্যার অন্ধকারে ডুবেছে ধরণী।
অনুরুপের ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎই।ঘুমটা ভীষণ ভালো হয়েছে আজ।মাথাটা তুলে খেয়াল করতেই বুঝলো এতক্ষণ সে তার বউয়ের কোলে ঘুমাচ্ছিলো।ও তার মানে ভালো ঘুমের রহস্য তাহলে এটা!অনুরুপ মনে মনে হাসলো।ধীরে ধীরে উঠে বসলো শোয়া থেকে।মিলাত এখনো হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।বাইরে থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে মাঝেমাঝেই কেঁপে উঠছে।খোলা চুলগুলো উড়ছে বিক্ষিপ্ত ভাবে,বাতাসের তালে তালে।অনুরুপ ধীরে ধীরে স্ত্রীর মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দিলো।তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো।বাইরের আবহাওয়া খারাপের দিকে যাচ্ছে।ঝড়ের সম্ভবনা প্রবল।অনুরুপ পুরো ফ্ল্যাটের জানালা,বারান্দার দরজাগুলো বন্ধ করে দিলো।এর মাঝেই মিলাতেরও ঘুম ভেঙে গেলো।ও ওর খোলা চুলগুলো দু’হাতে আটপৌরে খোঁপাতে বাঁধলো।তারপর ঘুম ঘুম স্বরে বলল,’ঘুম ভালো হয়েছে?’
অনুরুপ চমৎকার হাসলো।উৎফুল্ল স্বরে বলল,’ভীষণ,চাকরি জীবনে এত ভালো ঘুম হয় নি আমার।’

‘তাই নাকি?তা আজ এত ভালো ঘুমের রহস্য কি?’
‘বউয়ের কোল।আশেপাশে বউ থাকলে ঘুম ভালো না হয়ে যাবে কোথায়।’
মিলাত লজ্জা পেয়ে হাসলো।কিচেনের দিকে যেতে যেতে বলল,’হাত,মুখ ধূয়ে আসুন।দুপুরেও তো খান নি কিছু।’
‘আসছি।’
মিলাত চলে যাওয়ার পর অনুরুপ গেলো ফ্রেশ হতে।
খাওয়ার টেবিলে খাবার দেওয়ার পর অনুরুপ মনে মনে চাইছিলো মিলাত যেন ওকে খাইয়ে দেয় কিন্তু হঠাৎ করে এই কথাটা কি করে বলবে সেটাই ভেবে পেলো না।
অনুরুপকে খাবার সামনে নিয়ে বসে থাকতে দেখে মিলাত বলল,’খাচ্ছেন না কেন?’
‘আমার তো হাত কেটে গেছে,ব্যাথা করছে খুব।’
মিলাত বুঝে নিলো স্বামীর পরোক্ষ আবদার খানা।সে চেয়ার টেনে অনুরুপের পাশে বসে বলল,’আমি খাইয়ে দিচ্ছি।’
অনুরুপ মনে মনে খুশি হলো আর স্ত্রীর বুদ্ধির প্রশংসা করলো।
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকানোর পর মিলাত কিচেনে গেলো এঁটো বাসনকোসন ধুয়ে,সব গুছিয়ে রাখতে।ওর পেছন পেছন অনুরুপও এলো।ও কে দেখে মিলাত বলল,’রেস্ট নিন ঘরে গিয়ে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘না,তোমাকে হেল্প করব।’
‘আপনার না হাতে ব্যাথা।’
‘ওইটা শুধু নিজ হাতে খেতে গেলেই হয়।’
মিলাত বুঝতে পারলো স্বামী তার বহুত সেয়ানা।কি সুন্দর হাত ব্যাথার নাটক করলো তখন যেন নিজ হাতে না খাওয়া লাগে!
মিলাত কপট রেগে বলল,’তাই না?এত সেয়ানা আপনি আগে জানা ছিলো না।’
‘আগে জানলে কি বিয়ে করতে না?’
‘ভাবতাম আরও।’
‘আচ্ছা,তবে আমার তোমার সাথে তুমুল প্রেম করার ইচ্ছা ছিলো।একদম ধরো ফাটাফাটি টাইপ কিন্তু তোমার ডাইনী বোন আমার ইগো হার্ট করেছে বলে প্রেমটা হয় নি।’
‘আহারে,তাহলে কি এখন প্রেম করবেন?’

‘না,এখন চুটিয়ে সংসার করব।’
‘প্রেম করার শখ শেষ এত তাড়াতাড়ি?’
‘না,আসলে সবসময় সবকিছুর শখ থাকে না।’
‘এখন শখ হলো বউয়ের আবদার মেটানো,বউয়ের রাগ ভাঙানো,বউয়ের মুড সুইং সহ্য করা,মোটকথা এখন সব শখ বউ কেন্দ্রিক।’
‘এরকম করলে পরে মানুষ আপনাকে বউপাগল বলবে।’
‘কিছু করার নাই।খানদানি পাগল সবাই।তোমার শ্বশুরও একটা বউ পাগলা।তার ঘরের প্রোডাক্ট কি ভালো হবে?’
অনুরুপের কথা শুনে হেসে ফেললো মিলাত।দুষ্টু মিষ্টি কথা আর গল্পে কিচেনের কাজ শেষ হয়ে গেলো।এখনও বেশি রাত হয় নি।বাইরে থেমে থেমে ঝড় হচ্ছে।এরমধ্যেই মিলাত বলল,’চা খাবেন?’
‘হ্যাঁ,দাও।’

অনুরুপ বসার ঘরে বসলো।কিছুক্ষণ পরই মিলাত হাজির হলো চা নিয়ে।অনুরুপ ব্যস্ত টিভির চ্যানেল ঘোরাতে।এই সময়ে সুন্দর একটা মুভি দিলে জমতো।এই কথা মনে আসা মাত্রই সামনে হিন্দি রোমান্টিক ফিল্ম আসলো।ও আগে এই মুভি দেখে নি তবে কাস্ট দেখে মনে হচ্ছে ভালোই হবে।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অনুরুপ উৎফুল্ল স্বরে বলল,’বৃষ্টির দিনে,চা হাতে,বউয়ের পাশে বসে রোমান্টিক ফিল্ম দেখার মতো আনন্দ আর কি হতে পারে!’
মিলাত হালকা হেসে বলল,’আপনার রোমান্টিক ফিল্ম পছন্দ?’
‘সবসময় না তবে এখন ভালো লাগছে।তোমার রোমান্টিক ফিল্ম পছন্দ?’
‘না,আমার হরর মুভি ভালো লাগে।’
‘চলো,তাহলে একটা হরর মুভি দেখি।’
‘চলুন,আমার রুমে আসুন।ল্যাপটপে দেখবো।’
‘চলো।’

টিভি বন্ধ করে মিলাতের পিছু পিছু অনুরুপও চললো।মিলাত ডাউনলোড করা একটা ভুতের মুভি অন করে দিয়ে পাশে বসলো অনুরুপের।মিলাতের ভুতের মুভি পছন্দ হলেও প্রচুর ভয় পায় সে।এই যেমন এখন সে একটু একটু অনুরুপের দিকে সরে আসছে।ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অনুরুপ ঠোঁট টিপে হাসলো।যাক ভালোই রোমান্টিক মুভি হলে লজ্জা পেতো,কাছে আসতো না কিন্তু এখন একটু পরপরই ভয়ের সীন দেবে আর মেয়েটা ওর কাছে চলে আসবে কিছু না করতেই।আসলে প্রেমিক প্রেমিকাদের উচিত রোমান্টিক মুভির বদলে হরর মুভি দেখা।
মুভি দেখতে দেখতেও যে কেউ ঘুমিয়ে পড়তে পারে সেটা নিজ স্ত্রীকে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতো না অনুরুপ।দেদারসে অনুরুপের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।এদিকে বউ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মুভি দেখে আর কি করবে!বোরিং।অনুরুপ ল্যাপটপ বন্ধ করে মিলাতকে সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে যে-ই গেস্ট রুমের দিকে পা বাড়ালো মিলাত ওর হাত খপ করে ধরে ফেলল।ঘুম জড়ানো স্বরে বলল,’আমার পাশে শুয়ে পড়ুন।’

‘আর ইউ শিউর?’
‘অবশ্যই।এই না বললেন সংসার করতে চান।তো বউকে দূরে রেখে সংসার হবে?’
অনুরুপ ভীষণ খুশি হলো।আসলে ওর মনই চাইছিলো না অন্য কোথাও ঘুমাতে কিন্তু তারপর ভাবলো মেয়েটা যদি কিছু মনে করে?
অনুরুপ মিলাতের পাশে শুয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,’আমি ভেবেছিলাম তুমি কিছু মনে করবে।’
‘আমার পাশে না শুয়ে অন্য ঘরে শুলে অবশ্যই কিছু মনে করতাম।’
‘কি মনে করতে?’
‘এই যে আপনার..’
‘আমার কি?’
‘পুরুষত্বে সমস্যা আছে।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৪

মিলাতের কথা শুনে অনুরুপ একটুও কালক্ষেপণ করলো না।চট করে ওকে মুখোমুখি ঘুরিয়ে অধরে মিলিয়ে দিলো অধর।মিলাত আচমকা আক্রমণে চমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে স্বামীকে আস্কারা দিলে।অনুরুপ কিছুক্ষণ পর ওর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে উপরে ঝুঁকে গভীর স্বরে বলল,’ভুল করলে,এভাবে বলা উচিত হয় নি।আজ পুরুষত্ব প্রমাণ করেই ছাড়ব।বেপরোয়া আমিটাকে সহ্য করে নিও প্লিজ।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৬