বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৮

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৮
Arshi Ayat

মিলাত জানে তার দুষ্টু স্বামীটি ঠিকই আসবে তাই সে দরজা আটকায় নি এবং তার ভাবনা অক্ষরে অক্ষরে ফলেও গেলো।মিস্টার অনুরুপ চৌধুরী দরজার ফাঁকে মাথা গলিয়ে মুখে একটা দুষ্টু হাসি এনে বলল,’টুকি বউ!’
মিলাত মুখটা বাঁকিয়ে বলল,’এখানে কি চাই?’
অনুরুপ এবার ঘরের ভেতর ঢুকে দরজাটা আঁটকে দিয়ে বলল,’শ্বশুরের মেয়েকে।’
‘কিন্তু শ্বশুর তো মানবে না।সে তো আপনাকে আলাদা ঘুমাতে বলেছে।’
‘এহ!নিজে তো ঠিকই বউয়ের সাথে ঘুমাচ্ছে।আমার বেলায় যতসব!’
মিলাত ঠোঁট টিপে হাসলো।বলল,’ফিরে যান।’

অনুরুপ মিলাতের দিকে এগিয়ে এসে ওকে চেপে ধরলো নিজের সাথে।তারপর একহাতে কপালের ওপর আসা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল,’গতকাল যা হয়েছে তারপর আর তুমি ছাড়া গতি নেই।’
মিলাত মোহময় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো স্বামীর দিকে।মানুষটা ওকে অল্পদিনেই এত ভালোবেসেছে যে অতীতের ক্ষতগুলো শুকাতে শুরু করেছে।মিলাত কিছু না বলে অনুরুপের বুকে মাথা রাখলো।
রাত তিনটায় ঘরে এসে নিজের বিছানায় একজনকে শুয়ে শুয়ে গেম খেলতে দেখে রেভান বেজায় বিরক্ত হলো।এই মেয়েকেই সে আজ বিয়ে করেছে।এরইমধ্যে সে তার রুমটা হারাতে বসেছে।পায়ের ওপর পা তুলে বিছানার মাঝে বসে জোরে সাউন্ড দিয়ে ফ্রী ফায়ার খেলছে নুহা।রেভান এগিয়ে এসে চওড়া স্বরে বলল,’এসব কি হচ্ছে?রাত কয়টা বাজে খেয়াল আছে?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘না,নেই।’নুহা খেলায় মনযোগ রেখেই বলল।
‘সাউন্ড কমাও আর খাট থেকে নামো।’
‘কিছুই করব না।’
‘এই মেয়ে এই সমস্যা কি তোমার?’তেতে উঠলো রেভান।নুহা না থেমে দ্বিগুণ তেজে বলল,’আপনার কি সমস্যা?’
‘আমার সমস্যা আমি কোন দুঃখে যে তোমার মত অসভ্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি!’
‘করেছেন কেনো?’
‘আমার কথা বাদ।তুমি কবুল বললে কেনো?’
‘আপনি বলেছেন কেনো?’নুহার পাল্টা প্রশ্নের উত্তরে রেভান বলল,’আমার পাছায় বোম আঁটকে দেওয়া হয়েছিলো।কবুল না বললেই ফুটে যেতো।’
রেভানের এমন ত্যাড়া উত্তর শুনে নুহা দাঁত কটমট করে বলল,’আর আমার পেটে গুঁড়া কৃমি কামড়াচ্ছিলো না কবুল না বললে মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতো।’
নুহার এমব বিদঘুটে উত্তর শুনে রেভান বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে বিড়বিড়িয়ে বলল,’খাচ্চোর।’
নুহাও কম যায় না সে শুনিয়েই বলল,’খবিশ।’

রেভান তেড়ে এসে বলল,’এটা কি আমাকে বললে?’
‘আপনার নাম নিয়েছি আমি?বলেছি রেভান খবিশ?’
‘শাট আপ।অন্যঘরে গিয়ে ঘুমাও।’
‘আপনি যান।আমি এখানেই ঘুমাবো।’
‘এটা আমার ঘর।’রেভান চোখ রাঙিয়ে বলল।
নুহা বিছানার ওপর হাত ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে বলল,’আমি এখানেই শোবো।’
‘ঠিকাছে আমি তোমার ওপরে শোবো।’
‘এটার চেষ্টাও করবেন না একদম।লাথি মেরে গুঁড়া গুড়া করে দিব কিন্তু।’
রেভান কিছু বলল না।ধপাস করে নুহার গায়ের ওপর পড়ে গেলো।নুহা আত্নচিৎকার দেওয়ার আগেই ওর মুখ চেপে ধরে রেভান বলল,’আমিও দেখি কিভাবে তুমি আজ আমাকে লাথি মেরে গুঁড়া গুড়া করো।’
নুহা রেভানের হাত কামড় দিতেই রেভান মৃদু চিৎকারে ওর হাত সরিয়ে ফেললো।নুহা ওকে দু’হাতে ধাক্কা মেরে পাশে সরিয়ে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বলল,’একদম সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।’

রেভান মুখটা কুঁচকে চরম বিরক্তির স্বরে বলল,’তোমার সুযোগ নেওয়ার চেয়ে কচু গাছে ঝুলে যাওয়া ভালো।’
এটা বলে রেভান হনহন করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।নুহা মুখ বাকিয়ে আবারও খেলায় মনযোগ দিলো।
অনেক ভেবে চৈতি একটা পরিকল্পনা আটলো মনে মনে।এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।এখন শুধু মিলাত নয় অনুরুপকেও ধ্বংসের দুয়ারে পৌঁছে দিতে হবে তবেই শান্তি।এসব ভাবতে ভাবতেই চৈতি গোসল শেষ করে শরীরে একটা তোয়ালে জড়িয়ে নিলো।বুকের ওপর থেকে উরু পর্যন্ত সাদা তোয়ালে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে ভীষণ আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বেরিয়ে এলো চৈতি।মতিউর সাহেব বিছানায় আধশোয়া হয়ে টিভিতে একটা আইটেম গান দেখছিলেন।ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকাতেই নেশা ধরে গেলো।এর আগে এত মেয়ের সাথে শুয়েছে সে কিন্তু একজনকেও চৈতির মত ভালো লাগে নি।মতিউর সাহেব ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে চৈতিকে জাপটে ধরলো।চৈতি আহ্লাদী স্বরে বলল,’শুরু হয়ে গেছে দুষ্টুমি!’

‘কি করব বলো তোমাকে দেখলেই নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।’
চৈতি কন্ঠে আরেকটু মধু ঢেলে বলল,’তাহলে আমাকে নিজের করে নাও।’
‘তুমি তো আমারই।’এটা বলেই মতিউর রহমান চৈতিকে বিছানায় নিয়ে ফেললো।অতঃপর নিজের লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে গেলো চৈতির দিকে।চৈতি দু’হাতে তাকে কাছে টেনে নিয়ে নেশাক্ত স্বরে বলল,’আমাকে বিয়ে করো,প্লিজ।আমি স্বীকৃতি চাই।আমি সারাজীবন তোমার হয়ে থাকতে চাই।’
চৈতির এমন কথায় মতিউর সাহেবের ঘোর কাটলো।তিনি হকচকিয়ে উঠলেন।চৈতিকে ছেড়ে দিয়ে পাশে বসে হতভম্ব স্বরে বলল,’কি বলছো এসব তুমি?’
‘ঠিকই বলছি।’
‘আমি টাকা,পয়সা,ফ্ল্যাট কিচ্ছু চাই না আমি কেবল তোমার স্ত্রীর মর্যাদা চাই।’
‘চৈতি একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি বিবাহিত এবং আমার একটা মেয়েও আছে।’
‘তো কি হয়েছে?আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।তুমি আমাকে ভালো বাসো না?বলো?’
‘বাসি কিন্তু এটা সম্ভব না।এছাড়া তুমি যা চাইবে তাই পাবে।’
‘কিচ্ছু চাই না আমি।’চৈতি মিথ্যে কান্নার ভান ধরলো।মতিউর সাহেব চৈতিকে জড়িয়ে ধরতে চাইলে চৈতি সরে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,’যদি তুমি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমি আমার জীবন দিয়ে দেবো।’
‘চৈতি!’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৭

‘যে জীবনে তোমার হতে পারব না সে জীবন না থাকাই ভালো।’
‘কেন এমন পাগলামি করছো চৈতি?’
‘তোমাকে পাওয়ার জন্য।তোমাকেই চাই আমি।তুমি যদি আমাকে কালকের মধ্যে বিয়ে না করো তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো।’
মতিউর সাহেব কিছু একটা ভেবে বসা থেকে চৈতির কাছে উঠে গেলেন।আলতো করে জড়িয়ে ধরে আশ্বাস দিলেন,’ঠিকাছে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।এবার কেঁদো না আর পাগলী।’
নিজের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে পেরে চৈতি মতিউর সাহেবের বুকে মাথা রেখে কুটিল হাসলো।মনে মনে বলল,’অনুরুপ চৌধুরী এবার খেলায় মজা আসবে।তাই না বল?নে চেকমেট!পারলে রাজা বাঁচা।’
ফজরের আজানের আগে অনুরুপ আবার মিলাতের ঘরে চলে এলো।এতক্ষণ বউয়ের সাথে দুষ্টুমি,খুনসুটি,গল্প আড্ডা চলেছে।এখন যেহেতু হিটলার শ্বশুর উঠবে তাই ঘরে এসে পড়াই উত্তম তবে অনুরুপও কম যায় না।এই ভোরেই ও গোসল সেরে নিলো।এই ভেজা চুল নিয়েই শ্বশুরের সাথে নামাজে যাবে সে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৯