বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৯

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৯
Arshi Ayat

সুইজারল্যান্ড থেকে সরাসরি কোনো ফ্লাইট বাংলাদেশে না থাকায় ওরা ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে তিনঘণ্টার ট্রানজিট নিলো।এই তিনঘণ্টা এয়ারপোর্টের ভেতরে ঘুরাঘুরি,শপিং আর খাওয়া দাওয়া করলো।
ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্ট’টা ভীষণ সুন্দর।আন্তর্জাতিক অনেক ব্রান্ডের শপ রয়েছে এয়ারপোর্ট জুড়ে।সেখানেই ঘুরতে ঘুরতে নুহার চোখ পড়লো Calvin Klein ব্রান্ডের শপের ওপর।ও সেখানে গিয়ে একে একে দেখতে লাগলো তাদের পণ্যসামগ্রী।দেখতে দেখতে ও জেন্টস এরিয়ায় ঢুকে পড়লো।এখানে ছেলেদের সব আন্ডারওয়্যার।নুহা ভাবলো ঢুকেছে যেহেতু সেহেতু রেভানের জন্য একটা আন্ডারওয়্যার কিনে ফেলা যাক।তাই ও নিজের পছন্দমত আন্ডারওয়্যার কিনলো।এদিকে রেভান Gucci থেকে পছন্দ করে একটা ব্যাগ কিনলো নুহার জন্য।

জ্বর,ঠান্ডার প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিয়ে দু’জনেই মোটামুটি সুস্থ তবে এখনও হালকা অসুস্থতা আছেই।
দুপুরে মায়ের সাথে ভাত খেতে বসে এক লোকমা মুখে দিতেই বেসিনের দিকে দৌড়ে গিয়ে মুখ ভরে বমি করে ফেললো।পেছনে মিনারা বেগমও দৌড়ে আসলেন।মেয়ের মাথায় পানি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,’কি হয়েছে তোর?’
‘হঠাৎ বমি পাচ্ছে মা।সব গন্ধ লাগছে।’
মিনারা বেগম হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বললেন,’প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নে একবার।’
‘আরে না মা এরকম কিছু না।’
‘আমার তো মনে হচ্ছে।’
‘ধূর!বমি করলেই কেউ প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় না।’
‘তাও একবার করে দেখ আমার মনের শান্তির জন্য।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আচ্ছা কাল করব।’
‘আচ্ছা,এখন বল কি খাবি?’
‘কিছু খাব না মা।ইচ্ছে করছে না খেতে।’
‘শরীর এমনিই দূর্বল।জ্বর,ঠান্ডা বাঁধিয়ে বসে আছে এখন আবার বমি!তোকে নিয়ে কোথায় যাব আমি বল তো?এই তোর থেকেও কম বয়সে আমি সংসার,বাচ্চা সব দু’হাতে সামলেছি আর তুই নিজেকেই সামলাতে পারছিস না সংসার কি সামলাবি আবার এদিকে যদি বাবু হয় তাহলে তোকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।’
মায়ের গর্জনে অতিষ্ঠ হয়ে মিলাত বলল,’ভর্তা,ভাত খেতে ইচ্ছে করছে।’
মিনারা বেগম সন্দেহ নিয়ে বললেন,’লক্ষ্মণ তো ভালো লাগছে না আমার।ঘরে গিয়ে বস,আমি শুটকি ভর্তা করে আনি।’

‘হু।’
মিলাত মুখে ‘না’,’না’ করলেও নিজের মনেও সন্দেহ তৈরি হলো।
বিকেলে অনুরুপ ফোন করলো।ওর আজ ইভনিং আর নাইট দুই শিফটে ডিউটি।মূলত নাইট শিফটে ছিলো কিন্তু এক কলিগের মামা মারা গেছে তাই ওর হয়ে আজ ওর শিফট অনুরুপই করবে।আর এমনিতেও আজ মেজর দু’টো অস্ত্রোপচার করতে হবে।ভীষণ ব্যস্ত সময় যাবে তাই বিকেলে সময় পেতেই মিলাতের সাথে কথা বলে নিলো।রাতে যদি সময় পায় তাহলে আবার ফোন করবে আর কাল সকালে বাসায় যাওয়ার আগে দেখা করে যাবে।
মিনারা বেগমের আর ধৈর্য হলো না।তিনি বিকেলেই বেরিয়ে গিয়ে প্রেগন্যান্সি কীট নিয়ে এলেন।সন্ধ্যায় চা দিতে এসে কীট’টা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,’চেক করে ফেল।’

মিলাত হতাশ গলায় মায়ের দিকে চেয়ে বলল,’উফ!মা।তুমিও না!এত অধৈর্য কেন?’
‘হবো না তো কি করব?এই বয়সে একটা নাতি,নাতনি কি দেখবার শখ হয় না আমার?’
মিলাত আর কথা না বাড়িয়ে কীট’টা নিয়ে বলল,’যাও,আমি টেস্ট করে জানাচ্ছি।’
‘হ্যাঁ,দেখে বল।’

এটা বলেই মিনারা বেগম চলে গেলেন রুম ছেড়ে।তিনি যাওয়ার পর মিলাত ওয়াশরুমে গিয়ে টেস্ট করে ফেললো এবং ওকে অবাক করে দিয়ে রেজাল্ট পজিটিভ আসলো।মিলাত খুশিতে কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারলো না একদৃষ্টে চেয়ে রইলো কীট’টার দিকে।নিজের পেটে হাত রেখে বলল,’সোনা,তুই এসেছিস মায়ের কাছে?’
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দরজা খুলে নিজের খাটে এসে বসলো মিলাত।এদিকে মিনারা বেগম আগেই ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলেন দরজার পাশে।মেয়ে দরজা খুলতেই ঢুকে পড়লেন।উত্তেজিত স্বরে প্রশ্ন করলেন,’কি রে?রেজাল্ট কি?’

মিলাত কেঁদে ফেললো।মিনারা বেগম ঘাবড়ে গিয়ে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে বললেন,’কি হয়েছে রে?কাঁদছিস কেন?’
মিলাত কাঁদতে কাঁদতেই বলল,’মা,তোমার শখ পূরণ হবে।’
মিনারা বেগম খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে ফেললেন।মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন সাথে সাথেই।মিলাত মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল,’মা,আমি ভীষণ খুশি।আমার বাচ্চাটা আমার পেটে বড় হবে।নয়মাস পর আমি ওকে কোলে নেবো।’
মিনারা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।তিনি বুঝলেন মেয়ের মনের মাতৃ সুলভ অনুভূতি কারণ এরকম অনুভূতি তো তারও হয়েছিলো।
পরেরদিন সকালে অনুরুপের সাথে যখন দেখা হয়েছিলো তখনও মিলাত কিছু বলে নি ওর পরিকল্পনা ভিন্ন।
অনুরুপ মিলাতের সাথে দেখা করে বাড়ি ফিরলো।গোসল করে,খেয়ে,ঘুমিয়ে পড়লো।উঠবে দুপুরে।নাইট ডিউটি থেকে এসে ভীষণ ক্লান্ত লাগে ওর।

দুপুরের খাবারের পর মিলাত মিষ্টি নিয়ে হাজির হলো অনুরুপের বাসায়।প্রথমেই কলি বেগম আর আমিনুল সাহেবকে পা ছুঁয়ে সালাম করলো।কলি বেগম বুকে জড়িয়ে নিয়ে স্ব স্নেহে বললেন,’কেমন আছো মা?’
‘আলহামদুলিল্লাহ,মা।ভালো আছি।আপনি আর বাবা কেমন আছেন?’
‘আমরাও ভালো।’
আমিনুল সাহেব আর কলি বেগম দু’জনেই মিলাতের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলল।দুপুরের খাবারও খেতে বলল কিন্তু মিলাত জানালো সে খেয়ে এসেছে।অতঃপর হুট করেই মুখে একটু লজ্জা ভাব এনে বলল,’বাবা,মা আমি একটা খুশির সংবাদ দিতে এসেছি।’

আমিনুল সাহেব আর কলি বেগম দু’জনেই উন্মুখ হয়ে বললেন,’কি,খবর মা?’
মিলাত মাথা নীচু করে বলল,’আপনার দাদা,দাদী হবেন।’
প্রায় সাথে সাথেই দু’জনে সমস্বরে বলে উঠলেন,’আলহামদুলিল্লাহ।’
কলি বেগম উৎফুল্ল স্বরে বললেন,’ভীষণ খুশির খবর।মিষ্টি মুখ করতে হবে।’
মিলাত একই স্বরে বলল,’মা,আমি একটু উনাকে খবরটা দিয়ে আসি।’
‘যাও মা।তোমার উনি ঘুমাচ্ছে।আমার মনে হয় না এই খবর শোনার পর তার ঘুম থাকবে।’আমিনুল সাহেব কথাটা বলেই হাসলেন তার সাথে কলি বেগমও।মিলাত লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে উঠে চলে এলো অনুরূপের রুমে।এসেই দেখলো সাহেব ঘুমিয়ে আছে খালি গায়ে,শুধু ট্রাউজার পরে।
মিলাত হেসে এগিয়ে গেলো।মাথার কাছে বসে মাথা হাত রেখে কিছুক্ষণ হাত বুলাতেই অনুরুপ চোখ মেলে চাইলো।মিলাতকে দেখে একটু অবাক হয়ে বলল,’তুমি!’

‘আসলাম আপনাকে দেখতে!’
অনুরূপ হেসে উঠে বসলো।দুষ্টু স্বরে বলল,’মিস করছিলে বুঝি?’
‘হ্যাঁ আমি তো করছিলামই কিন্তু আরেকজনও মিস করছিলো।’
অনুরুপ ভ্রু কুঁচকে বলল,’কে?’
মিলাত অনুরুপের একটা হাত নিজের পেটের ওপর রেখে বলল,’সে!’

অনুরুপ কিছুক্ষণ মিলাতের পেটের দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎই ওকে জড়িয়ে ধরলো প্রবল আবেগে।মনের ভেতর এখন আনন্দের প্রবল ধারা বইছে।অনুরূপ মিলাতের সারা মুখ উষ্ণ চুমোয় ভরিয়ে দিলো।
মিলাত স্বামীর পিঠে হাত রেখে প্রবল আবেগে প্রশ্ন করলো,’আপনি খুশি হয়েছেন?’
‘ভীষণ খুশি।আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি খুশি আজ।’
মিলাত প্রশান্তিতে হাসলো।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪৮

চৈতি আগেই জেনেছিলো মিলাত আর অনুরুপের আবার বিয়ে হবে কিন্তু আজ জানলো মিলাত সন্তানসম্ভবা।এটা জেনে কি যে ভীষণ আনন্দ লাগলো ওর।ও ওর ফেবারিট ব্রান্ডের মদ খেয়ে নগ্ন শরীরে সারা ঘর নৃত্য করলো।এবার পাওয়া যাবে আসল মজা।ওই শালা ডাক্তারের বাচ্চা,শু’য়োরকে জন্মের শিক্ষা দিয়ে দেবে এবার।সুখে,শান্তিতে সংসার করা জন্মের মত ঘুচে যাবে।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৫০

1 COMMENT

  1. পূর্ববর্তী পাট কখন আসবে 🥺 একটু তাড়াতাড়ি দেন প্লিজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here