বিকেলের প্রণয় পর্ব ৫
Arshi Ayat
মিলাতের পেছনে অনুরুপ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটা এমন কিছু করবে ও ভাবতেই পারে নি।আজ সকালে রুটিন চেক-আপ শেষে চেম্বারে আসতেই একজন নার্স দ্রুত এসে খবর দিলেন,’তিনশো সাতাশ নম্বর কেবিনের রোগী ঔষধ খেতে চাচ্ছে না কিছুতেই।তার বাবা,মাও নেই এখন।তারা একঘন্টা পর আসবেন।এখন আমরা কি করব ডাক্তার?’
নার্সের কথা শুনে অনুরুপ তিনশো সাতাশ নম্বর কেবিনে আবারও ছুটে গেলো।ঘটনা সত্যি।মেয়েটা কিছুতেই ঔষধ খেতে চাচ্ছে না।ওর বিছানার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো অনুরুপ।তারপর শান্ত স্বরে বলল,’কোনো সমস্যা হচ্ছে?আমাকে সবটা খুলে বলুন,মিস।’
মিলাত অনুরুপের দিকে চেয়ে নির্বিকার স্বরে বলল,’আমার ঔষধ খেতে ইচ্ছে করছে না।’
‘তাহলে এখন কি করছে আপনার?আমাকে বলুন।আমি চেষ্টা করব আপনার ইচ্ছা পূরণ করার।’
মিলাত অনুরুপের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বলল,’এমুহূর্তে আমি একজনের সাথে দেখা করতে চাই।যদি আপনি আমাকে তার কাছে নিয়ে যান তবেই আমি ঔষধ খাব।’
‘কিন্তু আপনার শারীরিক অবস্থা এখনও অতটা ভালো নয়।’
‘আমি পারব।আমাকে নিয়ে যান।’
‘আচ্ছা,আপনার বাবা মা আসুক।তাদের বললে তারা নিয়ে যাবে।’
‘না,আপনাকেই নিয়ে যেতে হবে।আমি আর কারো সাথে যাব না।’
‘কেনো?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘কারণ আমি বাঁচতে চাই নি কিন্তু আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন।তাই আপনাকে আমার কথাও শুনতে হবে।যদি না শোনেন তাহলে আবার সু’ইসাইড করতে যাব।আর এবার যদি ম’রে যাই দায়ী থাকবেন আপনি।’
মিলাতের কথ শুনে বিস্ময়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলো অনুরুপ।আজ পর্যন্ত এমন অভিনব পদ্ধতিতে ব্ল্যাকমেইল কেউ করে নি।অগত্যা মেয়েটির কথায় রাজি হয়ে ওর কথামতো অনুরুপ একটা বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।মিলাত গাড়ি থেকে নেমে কোনো কথা না বলে দ্রুত বাড়িটির দোতলায় উঠে গেলো।ওর হাতে একটা শপিং ব্যাগও ছিলো।অনুরুপ ধারণা করেছিলো হয়তো কারো জন্য গিফট এনেছে সেটা দিতেই এসেছে।কিন্তু এই মূহুর্তে সামনের দৃশ্যটি দেখার পর মনে হচ্ছে গিফট এমনও হতে পারে জানা ছিলো না।তবে জুতোটা চেনা পরিচিত লাগছে।অনুরুপ মস্তিষ্কে একটু জোর দিতেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো।এটা তো হাসপাতালের ওয়াশরুমের জুতা।প্রত্যেকটা ওয়ার্ড,চেম্বারের ওয়াশরুমে একই রকমের জুতো।আরেকদফা হতভম্ব হলো সে।
এদিকে সাইফুল বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মিলাতের দিকে।ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না সেই শান্তশিষ্ট মিলাত ওকে জুতো দিয়ে মারলো।যে মেয়েটা কখনো ওর মুখে মুখে কথা বলতো না সে মেয়েটা এমনও করতে পারে!সাইফুল কিছু বলবে তার আগেই মিলাত একদলা থু থু নিক্ষেপ করলো ওর মুখে।এবার মাথা গরম হয়ে গেলো সাইফুলের।ডানহাত উঁচু করে যেই থাপ্পড় দিতে যাবে সে-ই অনুরুপ পেছন থেকে এসে মিলাতকে সরিয়ে ফেললো।মিলাত রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,’আমার জীবন নরক বানানোর জন্য তোর এর থেকেও বড়ো শাস্তি প্রাপ্য ছিলো কিন্তু একটা সময়ে তোকে ভালোবাসতাম তাই অল্পেই ছেড়ে দিলাম।আপা..স্যরি তোর বউকে বলিস তার সাথে হিসাব নিকাশ তোলা রইলো।’
কথাগুলো বলেই মিলাত আর দাঁড়ালো না হনহনিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যেতে লাগলো।পেছনে অনুরুপ এলো।
সাইফুল পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছলো।মেজাজ একদম খিঁচে গেছে।ডাইনিং রুম থেকে সব দেখা যায় বলে এতক্ষণ কিচ্ছু বলে নি সব চুপচাপ সহ্য করে গেছে।আজকে যদি রেভান না থাকতো তাহলে ওই মেয়েকে এমন শিক্ষা দিতো যে এইরকম কাজ করার আগে দুশোবার ভাবতো।থাক,সমস্যা নেই।এটা তোলা রইলো।কোনো একদিন সুদে আসলে ফেরত দেওয়া যাবে।ডাইনিং রুমে ফিরে আসতে আসতে এসবই ভাবছিলো সাইফুল।ওকে দেখে রেভান জিজ্ঞেস করলো,’কে এসেছিলো রে?’
‘ভিক্ষুক।’
‘ও আচ্ছা।তুই বের হবি কখন?’
‘চৈতিকে একটু দেখে আসি।তারপরই বের হবো।’
‘আচ্ছা।আমি নাস্তাটা করে ফেলি।আমিও বের হবো।আজ সারাদিন কাজ আছে।’
সাইফুল আর রেভান একসাথেই বের হলো।
গাড়িতে উঠেই কেঁদে ফেলেছিলো মিলাত।অনুরুপের কৌতুহল জাগলো এই অদ্ভুত মেয়েটির প্রতি।তবুও এই মুহূর্তে কিছুই জিজ্ঞেস করলো।গাড়ি ঘুরালো হাসপাতালের দিকে।হাসপাতালে পৌঁছে মিলাতকে নিজের কেবিনে পৌঁছে দিয়ে বলল,’এবার যেনো কোনো বাহানা না শুনি।অলরেডি সকালের ঔষধে লেট করেছেন।বাকি বেলার ঔষধ ঠিকঠাক খাওয়া চাই।’
সেই রণচণ্ডী রুপটা এখন আর নেই মিলাতে।শান্ত মেয়ের মতো মাথা নেড়ে সায় দিলো সে।আর বলল,’প্লিজ,আজকের ঘটনাটা বাবা,মা’কে বলবেন না।’
অনুরূপ মাথা নাড়লো।তারপর কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের চেম্বারে ফিরে গেলো।এখন ও বাসায় যাবে।তবে কিছুতেই মেয়েটির ভাবনা মাথা থেকে যাচ্ছে না।কৌতুহল বাড়ছে।
একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো চৈতি।এখন শরীরটা ভালো লাগছে একটু।রেভানের ঘরে গিয়ে দেখলো সে সেখানে নেই।তবে তার ব্যাগ আছে।তারমানে যায় নি এখনও।চৈতি গিয়ে ওর বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।ইশ!কি শান্তি লাগছে।জীবনে প্রথমবার সত্যিকারের ভালোবাসা অনুভব করতে পরছে ও।তবে এই ভালোবাসা কি আদৌ কপালে আছে?না!যেকোনো মূল্যে ওই পুরুষটিকে তার চাই ই চাই!তা নাহলে নারী জীবন বৃথা।
রেভান সবার জন্য টুকটাক কেনাকাটা করে বের হতেই ওর মা সালেহা বেগম ফোন করলেন।রিসিভ করতেই তিনি বললেন,’কি করছিস রে?’
‘শপিংয়ে এসেছিলাম,মা।’
‘ফিরছিস কবে?’
‘আজ রাতেই।’
‘শোন না!একটা কথা বলতাম তোকে।’
‘বলো।’
‘নাইমার জন্য একটা ছেলে পছন্দ করেছে তোর মামা।ছেলে ডাক্তার।ঢাকায় একটা নামকরা হাসপাতালে আছে।দেখতেও ভালো।তোকে ছবি,বায়োডাটা দিয়েছি।একটু দেখা আয় না ছেলেটাকে।’
‘আহ,মা!নাইমা সবে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে।এখনই কি দরকার বিয়ের।’
‘তুই বুঝবি না।আর ভালো ছেলে সবসময় পাওয়াও যায় না।আর দেখলেই তো বিয়ে হচ্ছে না।যা না বাপ!’
রেভান অতিষ্ঠ হয়ে বলল,’আচ্ছা,যাব।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪
আরও কিছু টুকটাক কথা সেরে ফোন রাখতেই দেখলো মা ছেলের ছবি,বায়েডাটা দিয়ে বসে আছে।নিতান্তই অনাগ্রহের সাথে ছবিটা দেখলো রেভান।চেহারা তো ভালোই।ছেলের নাম কি?ও আচ্ছা অনুরুপ চৌধুরী।রেভান পুরো বায়োডাটা পড়লো।যাক,ভালোই মনে হচ্ছে।দেখে আসা যায়।ভাবনা অনুযায়ী হাসপাতালের দিকে রওনা হলো ও।