বিকেলের প্রণয় পর্ব ৮
Arshi Ayat
হালকা নাস্তা সেরে টং দোকান থেকে বের হতেই হারুন সাহেব ফোন করলেন।মিলাত রিসিভ করে বলল,’হ্যাঁ,বাবা।বলো।’
‘কোথায় আছিস এখন?’
‘স্টেশনে।’
‘তোর সাথে ছেলেটা আছে?’
মিলাত একবার রেভানের দিকে চেয়ে বলল,’হ্যাঁ,আছে।’
‘ছেলেটাকে একটু দে তো!’
‘কেনো?’
‘দরকার আছে।তুই দে।’
অনিচ্ছা স্বত্বেও মিলাত ফোনটা রেভানের দিকে বাড়িয়ে বলল,’বাবা,কথা বলবে।’
রেভান হাত বাড়িয়ে ফোন নিয়ে সালাম দিয়ে বলল,’জ্বি,আঙ্কেল।বলুন।’
‘বাবা,ও তো সাতকানিয়া যাবে ওর ফুপির বাসায়।তোমার যদি সময় থাকে ওকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসবে?জানোই তো মেয়েটা অসুস্থ।তাই চিন্তা হচ্ছে ভিষণ।’
‘আঙ্কেল,আপনি একটুও চিন্তা করবেন না।আমি তো আছিই।এছাড়া আমার বাড়িও সাতকানিয়ায়।’
‘বাহ!বেশ ভালো।তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো!’
‘এভাবে বলিয়েন না,আঙ্কেল।তবে,ধন্যবাদ দিতে হলে চট্টগ্রাম এলে আমাদের বাড়ি আসতে হবে।’
‘আচ্ছা বাবা,আসব।’
‘এবার তোমরা সাবধানে যাও।’
এই বলে হারুন সাহেব ফোন রেখে দিলেন।রেভান মিলাতের ফোন ফিরিয়ে দিয়ে বলল,’এর আগে চট্টগ্রাম আসা হয়েছিলো?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘হ্যাঁ দু’বার এসেছিলাম।’
‘ও,আচ্ছা।একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।’
‘করুন।’
‘আপনি সুইসাইড এটেম্পট করেছিলেন?’
মিলাত রেভানের দিকে চেয়ে অকপটে বলল,’হ্যাঁ।’
‘কেনো?’
‘সেটা জেনে আপনি কি করবেন?’
‘কিছু করব না তবে কৌতুহল হচ্ছে।’
‘বেশি কৌতুহল ভালো না।নিজের কৌতুহল নিজের মধ্যেই রাখুন।’
‘আচ্ছা,ঠিকাছে বলতে হবে না।চলুন,যাওয়া যাক।’
সাইফুল যাওয়ার পর চৈতি নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে রেভানের আইডি খুঁজতে বসলো।কিন্তু শুধু রেভান লিখলে আসছে না কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির আইডি এদিকে বংশ পদবীও জানে না।হঠাৎ মনে হলো সাইফুলের আইডির কথা।বন্ধু যেহেতু ওর সাথে এড তো থাকবেই।চৈতি নিজের আইডি থেকে বের হয়ে সাইফুলের আইডিতে ঢুকলো।খুঁজে খুঁজে রেভানের আইডিটা পেয়েই গেলো।জনাবের পুরো নাম ‘তাশাহুদ শিকদার রেভান’।খানদানি নাম!চৈতি ওর আইডিতে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে খুশিতে নাচতে লাগলো।টিভিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে বাজছে ভারতীয় বাংলা গান।
‘উলাল্লা,আই লাভ ইউ মাই সোনিয়া,
উলাল্লা ও সোনিয়া……
করে যে দুরু দুরু দুরু মন আমার..
হলো যে শুরু শুরু দু’জনের,
চেনা পথে হারাবার….’
নাস্তা করতে বসে কলি বেগম আসল কথাটা পাড়লেন।ইনিয়ে বিনিয়ে বললেন,’হ্যাঁ রে,রুপ কিছু ভেভেছিস?’
‘কি ভাববো মা?’
‘কি ভাববি মানে?বয়স কি কম হলো?উনত্রিশ চলে।ক’দিন পর ত্রিশ হবে।বিয়েশাদি কি করবি না?’
‘ও আচ্ছা,তো তোমাদের এখানে আসার এই মতলব ছিলো।’
‘কথা ঘুরাবি না রুপ।’
‘মা,বিয়েশাদি করার ইচ্ছে নেই এখন আমার।’
‘তো কি আধবুড়ো হওয়ার পর করবি?আমাদের কি নাতি-নাতনি দেখতে ইচ্ছে করে না?’
‘আচ্ছা,আর একবছর সময় দাও।’
‘না,কোনো কথা শুনব না।একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য।হুরপরী বললেও কম হবে।খানদানি বংশের মেয়ে।ছবি…’
কলি বেগম কথা শেষ করার আগেই অনুরুপের কল এলো।এক্ষুনি হাসপাতালে যেতে হবে।তাই কথা শেষ না করেই এপ্রোনটা নিয়ে ছুটলো সে।আমিনুল সাহেব আফসোস করে বললেন,’একদণ্ড শান্তি নেই ছেলেটার।’
‘তবুও।আমার ছেলে মহৎ কাজ করছে।মানুষের দোয়া পাচ্ছে অফুরন্ত।এসব কয়জনই বা পায়।’
‘হ্যাঁ,তা ঠিক বলেছো।মাঝেমধ্যে ছেলেটার জন্য গর্ব হয়।’
স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
মিলাতের ফুপুর বাসা থেকে রেভানদের বাসার দূরত্ব দশমিনিটের।রেভান মিলাতকে আগে বাসায় পৌঁছে দিয়ে পরে নিজের বাসার দিকে গেলো।
মিলাতের ফুপা মারা গেছে বছর দুয়েক আগে।তখন বাবা-মায়ের সাথে ও এসেছিলো তবে চৈতি আসে নি ওর মাস্টার্সের পরীক্ষা ছিলে বলে।মিলাতের ফুপু রুজিনা বেগম ভাইঝিকে দেখে আবেগে জড়িয়ে ধরলেন।তারপর কপালে চুমু খেয়ে বললেন,’কতো শুকিয়ে গেছসি রে,তুই।’
মিলাত হেসে বলল,’তুমিও শুরু করলে মায়ের মতো?’
রুজিনা বেগম হেসে বললেন,’আয়,ভেতরে আয়।তোর বাবা,মা কেমন আছে?’
‘আলহামদুলিল্লাহ,ভালো।নিরু কোথায় ফুপু?’
‘নিরু তো ভার্সিটি হলে।বলেছি তুই আসার কথা।ফোনের মধ্যেই হই হই করছিলো।চলে আসবে বোধহয় আজ বিকেলে।’
মিলাত হাসলো।তারপর বলল,’সজীব ভাইয়ের কি অবস্থা?’
‘ভালোই।সামনের বছর আসব দেশে।তখন দেখেশুনে বিয়ে দিয়ে দেব যেনো আর যেতে না পারে।’বলেই হাসলো রুজিনা বেগম।’
বাসায় ফিরে নাস্তা করেই ঘুমিয়ে পড়লো রেভান।আজ আর অফিসে যাবে না।ম্যানেজারকে বলে দিয়েছে সে-ই সব সামলে নেবে।উত্তরাধিকার সূত্রে পারিবারিক ব্যবসা সামলায় সে।বড়ো ভাই ইউনিভার্সিটির লেকচারার তার এসব ব্যবসা বাণিজ্য ভালো লাগে না।আর ছোটোবোন অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে কেবল।
বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিলো রেভান।কয়টা বাজে দেখার জন্য।স্ক্রিনে চোখ রাখতেই মায়কেশীর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখে অজান্তেই ঠোঁটজোড়া প্রসারিত হলো।আগের প্রেমিক স্বত্বা কি ফিরে আসছে তাহলে?
নিরু আজ আসতে পারে নি কাল সকালে আসবে তবে মিলাতের সাথে কথা হয়েছিলো বিকেলে।মেয়েটা খুশিতে আটখানা হয়ে আছে।মিলাতেরও ভালো লাগলো আজ অনেকদিন পর নতুন পরিবেশে ভালোই লাগছে।এদিকে ফুপু কি রেখে কি খাওয়াবে সেটার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৭
মিলাতের ভালোই লাগছে এমন আহ্লাদীপনা।সারাদিন ফুপুর সাথে থেকে রাত এগারোটায় নিরুর রুমে এলো ও।এখন থেকে এখানেই ঘুমাবে।শুয়ে ফোনটা হাতে নিতেই একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল এলো।মিলাত প্রথমে ভাবলো রিসিভ করবে না।যদি সাইফুল বা চৈতি হয়?তারপর ভাবলো রিসিভ করে দেখা উচিত।ও রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে কেউ বলল,’হ্যালো!’
মিলাত চিনতে পারলো গলার আওয়াজ।অস্ফুটে স্বরে বলল,’ডাক্তার!’