বিয়ে থা পর্ব ৪২
তাহিনা নিভৃত প্রাণ
ভোরে ঘুম ভাঙার পর ধ্রুব সবার প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। নিনীকাকে ডেকে তুললো। দিব্য আগেই বাবার সাথে উঠে পড়েছে। নিনীকাকে তুলে বউ বাচ্চা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ধ্রুব।
নিনীকা আগে বের হয়ে দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে নিয়েছে। ধ্রুব ছেলেকে কোলে নিয়ে বের হলো। নিনীকা দিব্যর শরীর মুছিয়ে দিলো। দিব্যকে তার বাবার মতো শুভ্র পাঞ্জাবি পড়ালো। ধ্রুব ছেলের মাথায় টুপি পড়িয়ে দিয়ে নিজের সাথে জায়নামাজে বসালো।
দিব্য ভালো করে হামাগুড়ি দিতে পারে এখন। মাঝে মধ্যে উঠে দাড়িয়ে থাকে কিছু সেকেন্ড। তারপর ঠাস করে পড়ে যায়।
ধ্রুব যখন জায়নামাজে দাড়িয়েছে তখন সেও দাড়াতে চেষ্টা করলো। কিছু সেকেন্ড পর ঠাস করে পড়ে গেলো। খিলখিল করে হেসে বাবার পিঠে উঠতে চেষ্টা করলো। একসময় পিঠে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে রইলো।
নামাজ শেষ করে ধ্রুব ছেলেকে পিঠ থেকে নামিয়ে দোয়া পড়ে কপালে ফু দিলো। নিনীকা নামাজ পড়ে উঠতেই তার কপালেও দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাগানে মা বাবার হাত ধরে হাঁটতে শিখছে দিব্য। এক পা ভালো করে ফেলতে না পারলেও তার খুশির সীমা নেই। পেছনে ধারা ও ফাহিম দাড়িয়ে আছেন। দিব্য মা বাবার হাত ধরে জবা ফুলের গাছটার কাছে চলে গেলে তারা সেখান থেকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসছেন দুদিকে ধরে। কখনো মা বাবা কখনো দাদা দাদির হাত ধরে পা ফেলতে চেষ্টা করছে সে। ফারিন বসে বসে দেখছে। দিব্য হাসলে সকলে হাসছে।
তারপরের দৃশ্যটি নিত্যদিনকার। ধ্রুব উদাম শরীরে টাউজার পড়ে বুক ডাউন দিচ্ছে। পিঠে দিব্য বাবার গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে আছে। ধ্রুবর নিচে নিনীকা বুক ডাউন দিতে চেষ্টা করছে। মাঝে মধ্যে ধ্রুবর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে চিৎ হয়ে পড়ে যাচ্ছে। ধ্রুব তখন বুকে হাত রেখে রক্ষা করছে তো কখনো দু’হাতে শক্ত করে ধরে বুক ডাউন দিতে শেখাচ্ছে।
দিব্য হঠাৎ করে নিনীকাকে ডাকলো,
‘ মা ম ম মা..’
নিনীকা সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো। ধ্রুব নিজেও শরীর এলিয়ে দিলো। নিনীকা হাত বাড়িয়ে ছেলেকে বুকে টানলো। দিব্য মায়ের বুকে আরামে চোখ বন্ধ করে খাচ্ছে৷
ধ্রুব ছেলের পিঠে হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলো।
‘ মিসেস চলো কোথাও ঘুরে আসি। ছুটিতে আছি তো। ‘
নিনীকা দিব্যর মুখ তুলে বলল,
‘ দিব্য কি নানু বাসায় যেতে চায়? ‘
দিব্য মায়ের কথা বুঝেনি। তবে নানু ভাইকে সে চিনে। বললো,
‘ না ন না ন না..’
‘ চলো দিব্যর আব্বু দিব্যর নানু বাসায় যাই? ‘
ধ্রুব বাচ্চা ও বাচ্চার মাকে জড়িয়ে ধরলো।
‘ দিব্য ও দিব্যর আম্মু যখন চাইছে তবে তো যেতেই হয়।’
শেখ বাড়ির গেইট দিয়ে ধ্রুবর জিপগাড়ি ঢুকলো। সদর দরজা দিয়ে ছুটে এলেন মিথিলা৷ নিনীকার কোল থেকে নিয়ে নিলেন দিব্য কে।
দিব্য হাসছে। মিথিলার মুখে হাত দিয়ে ডাকলো,
‘ আ প প পা..’
মিথিলা পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলেন। রমজান শেখ নাতি আসার খবর পেয়ে আজ অফিসে যাননি। মিথিলার পেছনে দাড়িয়ে দিব্যর থুতনি টেনে দিলেন।
‘ আমার ভাই এসেছে যে। ‘
দিব্য হাত তালি দিলো। রমজান শেখের দিকে হাত বাড়ালো। নানা ভাইয়ের কোলে উঠে মুখে মুখ লাগিয়ে আদর দিলো।
‘ না ন ন না..’
‘ কেমন আছে আমার ভাইটা? ‘
দিব্য শুধু হাসে। তার গলা দিয়ে হাসির সাথে সাথে এক ধরনের চিৎকার বের হচ্ছে। সে যে দারুণ উচ্ছ্বসিত ও খুশি তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
ধ্রুব হাতের সব মিষ্টান্ন সার্ভেন্টদের কাছে দিলো। মিথিলাকে সালাম দিয়ে রমজান শেখের পাশে দাঁড়ালো।
‘ আসসালামু আলাইকুম আব্বু, কেমন আছেন? ‘
রমজান শেখ উত্তর দিয়ে নাতি ও মেয়ে জামাইকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলেন। পেছনে নিনীকা নাক ফুলিয়ে মিথিলাকে বলল,
‘ তোমার বর তো দেখি আমাকে ভুলে গেছে। তার যে একটা মেয়ে আছে তা কি সে জানে না? ‘
মিথিলা মেয়ের কাঁধ জড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন।
‘ তোর বাবার নাতি পেলে কি আর কারো দিকে খেয়াল থাকে? ‘
নরম বিছানায় মায়ের দু-হাত ধরে লাফালাফি করছে দিব্য। মুঠোফোনে বেজে চলেছে দিব্যর প্রিয় কার্টুন গান ‘শাক।’
তন্মোধ্যে দরজা দিয়ে ঢুকলো ধ্রুব। বউ বাচ্চাকে দিনদুনিয়া ভুলে লাফাতে দেখে হেসে ফেললো। বাবাকে দেখে হাত বাড়িয়ে হেঁটে আসতে চাইলো দিব্য। পারলো না। বিছানায় বসে পড়লো ধপাস করে৷ ধ্রুব এগিয়ে এসে ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। দিব্য বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ডাকলো,
‘ বা বা..উম ‘
ধ্রুব বিছানায় চিপসের প্যাকেট ছড়িয়ে দিলো। দিব্যকে বসিয়ে দিলো মাঝে। দিব্য তাবা দিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো সব।
নিনীকার কোমড়ে টান পড়লো।
‘ বাড়ি যেতে হবে না ম্যাডাম? ‘
নিনীকা গলা জড়িয়ে ধরলো,
‘ যাবো তো, সন্ধ্যায় যাই? বাবা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। আমাকে কি যেনো বলবেন বলেছিলেন আজ। ‘
‘ ঠিক আছে। ‘
শেখ বাড়িতে তিনদিন হয়ে গেলো এসে। ধারা বার-বার ফোন দিয়ে নাতিকে নিয়ে আসতে বলছেন। দিব্যকে ছাড়া কারোরই ভালো লাগে না।
রমজান শেখ বিকালে ফিরলেন। সোফায় বসা স্ত্রী, কন্যাকে বললেন,
‘ আমার তো উত্তরাধিকার বলতে একমাত্র তুমিই নিনী৷ আমার পরে সেজন্য তোমাকেই সব দেখতে হবে মা। তুমি তো পড়াশোনা শেষ করে দেড় বছরের মতো পাইভেট কোম্পানিতে জব করেছো। সেজন্য তোমার তেমন অসুবিধা হবে না বিজনেস সামলাতে। যদি কিছু না বুঝো তো বুঝিয়ে দিতে আমি আছি। তবে হালটা এখনই ধরতে হবে তোমায়। ধীরে ধীরে তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিতে পারলেই আমার শান্তি। কবে কার কি হয়ে যাবে বলা তো যায় না! ‘
নিনীকা কিছু সময় চুপ থাকলো। তারপর বলল,
‘ মাকে সব বুঝিয়ে দাও বাবা, তোমার পরে সেই সবকিছুর দায়িত্ব নিবে৷ ‘
রমজান হাসলেন,
‘ এই সহজ সরল রমনী কি বিজনেস বুঝতে পারবে? তবে তাকেও বুঝাতে চেষ্টা করবো। কিন্তু অফিসে এমডির আসনে তোমাকেই বসতে হবে আমার পর। ‘
মিথিলা রেগে বললেন,
‘ তোমার পর মানে কি? তুমি কি আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে চাইছো কোথাও? ‘
‘ আরে কি বলো, বয়স তো কম হয়নি। তোমাদের এখন যদি সব বুঝিয়ে না দেই তো কবে দিবো? ‘
‘তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমরা সেম বয়সের। তুমি আমার থেকে অনেক ফিট। সুতরাং পরপারে যদি যেতে হয় তো তোমার আগে আমি-ই যাবো। সুতরাং তোমার মেয়েকেই সব বুঝিয়ে দাও। ‘
‘ তোমাকেও এখন থেকে আমার থেকে বিজনেস বুঝতে হবে। বয়স বা ফিটনেস কখনো একটা মানুষের আয়ু ধরে রাখতে পারে না। ‘
মিথিলা হার মানলেন,
‘ ঠিক আছে। ‘
ধ্রুবরা সন্ধ্যায় বউ কথা কও-তে ফিরে গেলো। নিনীকা দৃদিন পর থেকেই ছেলেকে নিয়েই অফিসে যেতে শুরু করে। একমাসে সে বিজনেসের অনেক কিছুই আয়ত্ত করতে পেরেছে। কোনো জরুরি মিটিংয়ে নিনীকা ও মিথিলাকে রমজান শেখের সাথে থাকতে হয়৷
মেডিকেল কলেজের সামনে দাড়িয়ে উঁকিঝুকি দিচ্ছে এক যুবক। ফারিন পেছন থেকে মাথায় টুকা দিলো। যুবকটি হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ মিস ফারিন আপনি? ‘
ফারিন চোখ ছোটছোট করে তাকালো।
‘ হাঁটুর বয়সী মেয়েকে ইভটিজিং করতে লজ্জা করে না? আপনি না ক্যাপ্টেন? ‘
নিরব অসহায় চোখে তাকালো।
‘ আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। ‘
‘ তাই নাকি? তবে আপনি কি জন্য এসেছেন শুনি! ‘
‘ মাকে নিয়ে এসেছিলাম ডক্টরের কাছে। ‘
‘ স্যরি বিশ্বাস করলাম না। কচি মেয়ে বিয়ে করার শখ বাদ দিন। নেক্সট টাইম যেন এখানে আর উঁকিঝুঁকি দিতে না দেখি! ‘
নিরব অকপটে বলল,
‘ কচি মেয়ে বিয়ে করার শখ বাদ দেওয়া যাবে না ম্যাডাম। বাদ দিলে এতোদিনে আমারও ধ্রুব স্যারের মতো সন্তান থাকতো হয়তো। ‘
ফারিন কোমড়ে দুহাত রেখে চোখ গরম করে তাকালো।
‘ কোন কচি মেয়ে বিয়ে করবে আপনাকে? ‘
‘ কারো করতে হবে না। ‘
নিরব গটগট করে হেঁটে চলে গেলো গাড়ির কাছে। কিছুক্ষণ পর মেডিক্যাল থেকে নিরবের মাকে বের হতে দেখলো ফারিন। ভদ্রমহিলা গাড়িতে উঠে বসেছেন।
বিকেলে যখন ফারিন বাসায় গেলো তখন ডোয়িং রুমে নিরবের মাকে দেখে অবাক হলো। ভ্রু কুঁচকে গেলো তার। আড়ালে নিনীকাকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ উনি হঠাৎ? ‘
নিনীকা হেসে ফেললো,
‘ তোমার কি খুবই চিন্তা হচ্ছে? টেনশন করো না তোমার মা বাবা কখনোই তোমার মতামত না নিয়ে কিছু করবেন না। ‘
নিরবের মা চলে যাওয়ার পর নিনীকা ফারিনকে নিয়ে ধারার সামনে বসলো। ধারা মেয়েকে আগলে নিলেন।
‘ কয়েক বছর আগে ও প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তুমি ছোট বলে এ বিষয়ে তোমাকে কিছু বলিনি। তবে এখন তুমি যথেষ্ট বুঝদার হয়েছো। আজও তিনি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। নিরব কেমন সেটা আমরা সকলে জানি। সুতরাং আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না যদি তোমার উত্তর হ্যাঁ হয়। তুমি ভেবে মাম্মাকে জানাবে, কেমন বাচ্চা? ‘
ফারিন অস্ফুটস্বরে বলল,
‘ যদি উত্তর না হয় তবে? ‘
‘ তবে আমরা মানা করে দিবো, ব্যস। ‘
পার্কে বসে আছে নিরব। তার পাশে একটু দূরত্বে বসে আছে ফারিন। জরুরি ভিত্তিতে তাকে ডাকা হয়েছে এখানে।
‘ মিস ফারিন? আপনি কি বলবেন ঠিক কি জন্য আমাকে ডাকা হলো? ‘
ফারিন অনেকক্ষণ পর বলল,
‘ আপনার মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছেন আমাদের বাসায়। সে বিষয়ে আপনি জানেন? ‘
‘ হ্যাঁ জানি। এবং এর আগে আরও একবার মা প্রস্তাব নিয়ে গেছিলেন। ‘
‘ কেন? ‘
‘ বিয়ের প্রস্তাব কেন নিয়ে যায়? অফকোর্স বউ বানানোর জন্য। ‘
‘ দুনিয়ায় আর কোনো মেয়ে নেই? ‘
নিরব হাসলো, সরল সুন্দর হাসি তার। ফারিন সেই হাসিতে আটকে গেলো। নিরব বলল,
‘ দুনিয়ায় মেয়ের অভাব নেই মিস ফারিন। তারপরও আমরা নির্দিষ্ট এক জনের প্রতিই আকৃষ্ট হই, এবং তাকেই পেতে চাই। এবং এটাতে আমি কোনো ভুল বা দোষ দেখি না। ‘
‘ মাম্মা বলেছে আমি যদি না করে দেই তো আপনাদের মানা করে দিবে। ‘
‘ সে তো দিবেই। কাউকে তো জোর করা যায় না। ‘
‘ বিয়ে করবেন না? ‘
নিরব তার সেই সরল হাসিটাই দিলো।
‘ আমার বাবা নেই, আমি যখন পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ি তখন মা*রা গেছিলেন। মা টিচার ছিলেন বলে কোনোরকমে আমাকে মানুষ করতে পেরেছেন। আমার মায়ের অবদান আমার জীবনে অনেক বেশি। আমি তাকে এতো বছর অপেক্ষা করিয়েছি। এরপর হয়তো আর আটকে রাখা সম্ভব হবে না। ইচ্ছেতে হোক বা অনিচ্ছায় আমাকে বিয়ে করতেই হবে। ছেলেকে বিয়ে করাবে সেরকম স্বপ্ন তারও আছে। আমি তার স্বপ্ন পূরণ না করে তার মনে আঘাত দিতে পারবো না। ‘
ফারিন কেমন করে যেন তাকালো। নিরব ঠিক বুঝতে পারলো না। আচমকা তার কলারে টান পড়লো। ঝুঁকে পড়লো ফারিনের দিকে।
‘ আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করবেন! ‘
‘ বিয়ে তো করতেই হবে। ‘
ফারিন ছেড়ে দিলো।
‘ ঠিক আছে। চলে যান, বিয়ে করুন। ‘
ফারিন উঠে দাঁড়ালো। নিরব প্রথমবার সাহস করে হাত টেনে ধরলো।
‘ আপনি যদি হ্যাঁ বলে দিতেন! ‘
‘ দিলে কি হবে? ‘
‘ আমি হয়তো অদ্ভুত এক যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যাবো। ‘
ফারিন হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো। নিরব যখন অসহায় করুণ মুখ নিয়ে বাড়ি ফিরলো তখন নিজের মায়ের কাছে শুনলো,
‘ কিছু মিনিট আগেই ধারা ফোন করে ফারিন রাজি আছে বলে জানিয়েছেন! ‘
গোধুলি এক লগ্নে ফারিনকে নিজের সাথে সারাজীবনের জন্য বেঁধে ফেললো নিরব। ধ্রুব বোনের হাত তুলে দিয়ে বলল,
‘ দায়িত্ববান ক্যাপ্টেন, আজ তুমি আমার বোন জামাই হয়ে গেলে। পাগলিটাকে দেখে রেখো। ‘
নিরব বিনিময়ে হাসলো। ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে। ধ্রুব মজা করে বলল,
‘ দেখ তোকে বিদায় করে দিয়েছি। ‘
দিব্য মায়ের কোল থেকে আধোআধো স্বরে বলল,
‘ টা টা টা টা..’
ফারিন রাগে অভিমানে ফাহিম মাহবুবকে জড়িয়ে ধরলো।
‘ তোমার ছেলে আর নাতিকে আমি কিন্তু মা*রবো! ‘
ফারিন পড়াশোনা শেষ করবে বউ কথা কও-তে থেকেই। অর্থাৎ শ্বশুরবাড়িতে পার্মানেন্ট যাচ্ছে না সে। সেজন্য কান্না ভুলে শেষে হাসি-হাসি মুখ নিয়েই উঠে বসলো গাড়িতে। পাশে নিরব।
শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে নিরবের সাথে দেখা হলো একেবারে বাসর ঘরে। নিরব সুপুরুষদের মতো করেই বললো,
‘ আমার কোনো তাড়া নেই, আপনি যথেষ্ট সময় পাবেন। ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন৷ ‘
কিন্তু মানলো না ফারিন। টেনে ফেললো বিছানায়।
‘ এতো এতো বছর এতো খুঁচা মে*রেও মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা বের করতে পারিনি। শালা বিয়ে করে এখন বলছে বাসর করবে না! ‘
নিরব হতভম্ব হয়ে গেছে। ফারিন রেগে ফুসফুস করে আবারও বলল,
‘ কচি মেয়ে বিয়ে করতে তো অসুবিধা হয়নি, বাসর করতে অসুবিধা কিসের? ‘
নিরব আমতা আমতা করলো,
‘ আপনি বুঝতে পারছেন না। আমি আপনাকে সময় দিতে চেয়েছি কারণ আপনি যদি প্রস্তুত না থাকেন…
‘ কেউই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে না। ‘
নিরব থমকালো। ফারিন আচমকা ঠোঁট চেপে ধরলো কপালে। বুকে মাথা রেখে বলল,
‘ আপনি তো কখনো বলবেন না ভালোবাসি, সেজন্য আমিই বলে দিচ্ছি। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। ‘
নিরবের হয়তো আজ অবাক হওয়ার দিন। বলল,
‘ কবে থেকে? ‘
‘ যখন থেকে আপনার অনুভূতি বুঝতে পেরেছি তখন থেকে৷ ‘
‘ কখনো বলেন নি! ‘
‘ আপনি বলেছেন? ‘
নিরব দু’হাতে মুখ তুলে ধরলো,
‘ আমাকে খুঁচাতেন কেন তাহলে? ‘
ফারিন নাক ফুলিয়ে সরে গেলো। পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। নিরব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
‘ আপনাকে বলতে হবে না। ঠিক আছে বাবা স্যরি, এখন থেকে প্রতি ঘন্টা একবার করে ভালোবাসি বলবো। ‘
‘ আমি ভীতু লোকদের থেকে ভালোবাসি শুনতে বসে নেই। ‘
নিরবের মুখ চুপসে গেলো।
‘ মেজরের বোনকে ভালোবেসেছি, একটু ভয়ডর তো থাকবেই। ‘
ফারিন সোজা হয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো।
‘ আমি কিন্তু পরিবারের বাহিরে ভীষণ অভদ্র একটি মেয়ে। সামলাতে পারবেন? ‘
‘ অভদ্র সম্বোধনটির মধ্যেও ভালো খারাপ থাকে। আপনি ভালোর কাতারেই অবস্থান করছেন। নাহলে আমার বউ হতে পারতেন না। ‘
ফারিন চুপ করে রইলো। নিরব মিটমিটিয়ে হাসলো,
‘ বউয়ের কাছে এবার আমাকে অভদ্র হতে হবে। আপনি প্রস্তুত তো? ‘
ফারিন গলা জড়িয়ে ধরলো। ছুঁড়ে দিলো নিজের ডায়লগ,
‘ কেউ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে না! ‘
বউ কথা কও নিস্তব্ধ। সবাই যার যার ঘরে। দিব্য বিছানায় বসে খেলছে। নিনীকা ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। সবার মনই ভার। ধ্রুবর চুলের ভাজে হাত চালালো সে।
‘ কয়েকদিন পরই তো চলে আসবে। পড়াশোনা শেষ না করে পার্মানেন্ট শ্বশুরবাড়ি তো থাকবে না। আর মুখ ভার করে রেখো না। ‘
ধ্রুব ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। দিব্যর দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকলো,
‘ দিব্য..এসো বাবা। ‘
দিব্য বাবার আহ্বানে খুশি হলো। অস্পষ্ট চিৎকার বের হচ্ছে তার গলা দিয়ে। কোলে বসে বাবার মুখে মুখ লাগিয়ে দিলো। কখনো মা কখনো বাবার দিকে সে খুশি নিয়ে তাকাচ্ছে। নিনীকা ছেলের গালে আদর দিলো।
‘ আমার সোনা বাবা টাহ্। ‘
বিয়ে থা পর্ব ৪১
ধ্রুব নিনীকার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। দিব্যকে নিজের বুকের উপর শুইয়ে দিলো।
‘ আমরা বাবা ছেলে ঘুমাবো। তুমি জেগে পাহারা দাও। ‘