বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৩৬+৩৭
রোজা রহমান
শিশিরের প্রচুর ব্যস্ততা বেড়েছে৷ জানুয়ারিতে এলএলবি ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সামনে কয়েকমাস পরেই নির্বাচনী পরীক্ষা। সেই সাথে বিসিএসের জন্যও প্রস্ততি নিচ্ছে। দুই পড়া এক সাথে পড়তে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। এদিকে রেগুলার ক্যাম্পাসে যেতে হচ্ছে। রিজভী আর ওর এক দশা হয়েছে। দুজনে ক্যারিয়ারের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। এছাড়া শিশিরের ভাবনায় ওর তাড়া বেশি। বউয়ের দায়িত্ব ঘাড়ে চলে এসেছে জলদি।
কতকালই বা বাবার টাকায় বউ খাওয়াবে? নিজের দায়িত্ব নিজের বুঝে নিতে হবে। এই জন্য ক্যারিয়ারের চিন্তা একটু চেঞ্জ করেছে। আর সেটা এলএলবি এর পড়েই বিসিএস দেবে। আগে ভাবনা ছিল এলএলএম এর করেই দেবে। কিন্তু সেটা এখন বিসিএসের পর কমপ্লিট করার চিন্তাভাবনা করেছে। এরপর সব ঠিকঠাক হলে আল্লাহর রহমতে সাফল্য পেলে বিজেএসও দেবে৷ এইসব চিন্তা করেই নাকে মুখে খাটতেছে ছেলেটা। উদ্দেশ্য তার কিছু করতে হবে।
পড়াশুনোর চাপে বাড়িতে সহ পরিবারের সাথেও খুব একটা সময় কাটাতে পারছে না। শুক্রবার ছাড়া তেমন সময় হচ্ছে না। এই সপ্তাহ জুড়ে এমনই চলছে। রোজ সকালে উঠে কুয়াশাকে একটু জ্বালাবে। দু’জনের কিছু না কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে ঝগড়াতে যাবে এরপর একটু হাতাহাতিও হবে। সব শেষে শান্ত হয়ে নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে দু’জন দু’জনের গন্তব্যে রওনা হবে। দুপুরে কুয়াশার ক্লাস শেষে বাড়িতে রেখে আবার সে চলে যাবে। যাওয়া আসা শিশিরের বাইকেই হয়।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কুয়াশাও নিজের পড়াশুনোই ফোকাস করছে। সাথে এখন পরীক্ষা টরীক্ষার চাপ নেই বলে বিকেলে ভাবিদের সাথে ভালোই সময় কাটায়। সে এখন পড়াশুনোর ফাঁকে কাজ করার চেষ্টা করে। আগে কখনো কিছু করতে হয়নি। এক পড়াশুনো ছাড়া বাড়ির কোনো কাজই করত না। সব মা সহ চাচিরা করত। এখন সময়ে অসময়ে ভাবিদের সাথে কাজে সাহায্য করে। এছাড়া তিন জা মিলে বিকেলে প্রায়ই রঙ বেরঙের খাবার তৈরি করে। ইউটিউব দেখে সব এক্সপেরিমেন্ট করে। কোনো দিন খাবার যোগ্য হয় তো কোনোদিন হয় না।
অর্ধেক রাত পাড় করে পড়াশুনো করে। ঘুমোতে এসে আগে হয় দু’জন একটু গল্প করবে নয়তো কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া বেঁধে যাবে। কথার টপিক থাকে আগের কিছু কথা৷
চলে গেছে এভাবে কয়েকটা দিন৷ আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর তিনটা। অতিরিক্ত গরম, রোদ প্রকৃতিতে। শিশির আজ একটু জলদি এসেছে বাড়িতে। কুয়াশা নিজের ঘরে ছিল। শিশির এসে জাকিয়া বেগমকে ডাকতে লাগল৷ কুয়াশা তা শুনে বেড়িয়ে এলো। এসে দেখল মা’কে ডেকে রেখে সে ঘরে দিকে আসছে। সামনাসামনি পড়ল দু’জন। শিশির কোনো কথা বলল না৷ নিজের ঘরে চলে গেল। কুয়াশা পেছন পেছন ঢুকল। ঢুকে দেখল শিশির ঘেমে জুবুথুবু হয়ে যাওয়া শার্ট খুলছে। বুকের উপরের বোতাম গুলো খুলেছে। ঘামের বুক ভিজে লোমগুলো লেপ্টে আছে৷ মুখেও বিন্দু বিন্দু ঘাম৷ দেখল তা কুয়াশা। শিশির শার্ট খুলতে খুলতে কুয়াশাকে পর্যবেক্ষণ করল। বউ যে তাকেই দেখছে। বোতাম খোলা হয়ে গেলে কুয়াশার দিকে তাকিয়েই শার্ট খুলে ফেলল। চোখের নজর অতি দৃঢ় আর ঠোঁটে কেমন দুষ্টু ভাব৷ কুয়াশা এসব দেখে ভড়কে গেল। এরপর রাগ নিয়ে বলল,
” এসেই ওমন ভ্যাঁবাচ্ছ কেন ম্যাঁ ম্যাঁ করে?”
“তো বউ বউ করে ভ্যাঁবাব? ”
কথার পিঠে উচিত কথায় আবার ভড়কে গেল কুয়াশা৷ শিশির কথাটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল। হাসি রেখেই আবার বলল,
” আমার বউ তো আমার ঘরে নেই। সে তার বাপের বাড়ির ঘরে বসে চিল করছে৷ তাই মা মা করছি ”
কুয়াশা শুনে খিলখিল করে হেসে দিল। শিশিরও হাসল নিঃশব্দে। কুয়াশা এবার রাগ ফেলে দিয়ে কন্ঠে ঝাঁঝ রেখে বলল,
” তা ম্যাঁ ম্যাঁ করার কারণ কি? বউ এখন বাপের ঘর ছেড়ে শ্বশুরের ঘরে এসেছে। বলতে পারো ”
” আচ্ছা? ”
” তো কি? ”
শিশির এবার খুলে রাখা ঘামের শার্টটা ছুঁড়ে কুয়াশার মুখের উপর মা-রল। কুয়াশা তড়িঘড়ি করে ঘামের শার্টটা মুখ থেকে সরিয়ে ঘৃণায় মুখ কাচুমুচু করে রেগে উঠল৷ বলল,।
” এ্যাই…! এসব কি? ছিঃহ্..!”
” যাহ্ এখন শ্বশুরবাড়ি এসেছি যখন স্বামীর সেবা যত্ন কর। এই শার্ট কেঁচে আন। আরো দুইটা নোংরা আছে ওগুলো নিয়ে যাবি ”
কুয়াশা রাগ নিয়ে তাকিয়ে রইল৷ কততবড় বেয়াদব চিন্তা করা যায়? সে এবার কাছে এগিয়ে গেল। শার্ট দিয়ে শিশিরের বাহুতে বাড়ি মেরে বলল,
” তো এটা ভালোভাবে বলা যেত না? অসভ্য লোক…।”
বলে বকতে বকতে চলেই যাচ্ছিল শার্টটা নিয়ে। কিন্তু শিশির ওর কোমড় অবধি ভেজা ছেড়ে রাখা খোলা চুল পেছন থেকে টেনে ধরল। ‘আহ্’ করে উঠল ব্যথায়। হাত দিয়ে চুলের গোড়া চেপে ধরে বলল,
” ছাড়, বেয়াদবের বাচ্চা লাগছে আমার, মাগো..ইশশ.!”
বলতে বলতে ইশশ, আহ্, মাগো এমন সব শব্দ করছে। পেছন থেকে সামনে ঘুরে তাকাল। শিশির বলল,
” আজকাল তোর নজর দেখছি ছুঁকছুঁকানো হয়েছে৷ যখন তখন আমাকে দেখে ছুঁকছুঁক করিস বিড়ালের মতো। ব্যপার কী বলত? আমি মাছ লাগি তোর কাছে?”
কুয়াশা এবার পুরো ঘুরে তাকাল। কঠিনতা বজায় রেঝে দাম্ভিকতার সাথে ঝাঁঝ নিয়ে উত্তর করল,
” আমার কাছে মাছ তুই কোনোদিনই ছিলি না৷ তুই একটা গলা চুলকানোর গোডাউন। আজীবন তাই-ই থাকবি৷ আর ছুঁকছুঁক কখন করলাম আমি? বিড়াল যদি আমি হয়েও থাকি তবে সেটা আমার মালিকের কাছে। মাছের নেশায় না, পোষ মানার নেশায় আসি। মালিকের যাতে সুবিধা হয়। ”
শিশির কুয়াশার কথাগুলো শুনে এবার শব্দ করে হেসে উঠল। এর সাথে ঝগড়া করে সে কোনোদিনই কথায় পারে না৷ আজও মোক্ষম জবাব দিয়ে দিল। কুয়াশা কথাটা বলতে পেরে নিঃশব্দে হাসল। শিশির এখনো চুল ধরে। এবার সে হাসতে হাসতে চুলে টান দিয়ে কুয়াশাকে খোলা বুকে এনে ফেলল। কুয়াশা চেঁচিয়ে উঠল,
” ইয়াক ছিঃহ্, এ্যাই সরো, ছাড়ো তোমার শরীরে ঘাম, দূর্গন্ধ… ছাড়ো। আমি গোসল করেছি। ”
কে শোনে কার কথা? শিশির কুয়াশার ইয়াক ছিঃহ্ করা দেখে আরো শক্ত করে ধরল। কোমড় স্লাইড করে বামে থেকে ডানে নিয়ে রাখল হাত৷ স্লাইড করাটা কেমন যেন গভীর মনে হলো। এবার আপনাআপনি কুয়াশা জমে গিয়ে থেমে গেল। শিশির তা দেখে দুষ্টু হাসল৷ কাজে দিয়েছে ডোজ। বলল,
” তোকে চুপ করাতে আমার মিনিটের ব্যপার। ”
কুয়াশা কিছু বলতে যাবে ওর ঠোঁটে ডান হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে বলল,
” হুশশ, এই দূর্গন্ধ শরীরের ক্ষমতা কতখানি তোকে দেখিয়ে দেব। সময় আসতে দে অপেক্ষা কর শুধু। হারে হারে টের না পাওয়ালে আমিও ক্ষান্ত হব না৷ তোর মতো চুনোপুঁটিকে এই দূর্গন্ধময় শরীর নেশা যদি না চড়িয়েছি তবে আমার নামও শিশির মালিথা না। নিজেকে সামলাতে শিখে নে। আজকের এই কথার জবাব না দিয়ে ক্ষান্ত আমি হবো না। ”
কুয়াশা সেখানেই জমে বরফ হয়ে গেল। পুরো কায়া, অন্তর ভেতর থেকে আর্তনাদ করে উঠল,
” কুয়াশা তুই শেষ!”
ভেতরে তোলপাড় শুরু হলো। সে যে কাকে নেড়েছে হারে হারে এই মূহুর্তে টের পাচ্ছে। কথাতেই তো অর্ধেক জ্বালিয়ে দিল!! কুয়াশার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়েছে। আগে এমনটা কখনো হয়নি। কোনোদিন এমন কাঁপা-কাঁপি টের পায়নি৷ কেমন আপন আপন লাগে। এই যে এখন শক্ত, পেশিবহুল, মেদহীন শরীরের সাথে বেঁধে রেখেছে হার্টবিট মনে হচ্ছে লাফাতে লাফাতে বাইরে চলে আসবে। সামনের এই ছেলেটা আজকাল তার কাছে আ-গুন মনে হয়। কখন না জ্বালিয়ে পু-ড়িয়ে খাঁক করে দেয়। সে ডুবেছে। অর্ধেকই ডুবে গেছে এই সামনে থাকা ছেলেটাতে। আচ্ছা কতখানি ডুবেছে সে? কোমড় পর্যন্ত? নাকি গলা পর্যন্ত? ভাবনার মাঝে শিশির বলল,
” দেখ তোর ভেতরের কাঁপন শুরু হয়ে গেছে৷ ”
বলে দুষ্টু চোখে আবার হাসল। বলল,
” যাহ্ এখন স্বামীর কাপড় ধুয়ে আন। আপাতত স্বামীর খেদমত কর। পরে আদর টাদরের ব্যবস্থা করব। ”
বলে ঝটকা দিয়ে দূরে ঠেলল। কুয়াশা বড় একটা দম ফেলল৷ তা দেখে আবার মুচকি হাসল। কাছে গেলে তো এ এমনিই উনিয়ে যাবে!!এখনই যা হয়েছে৷ ভেবে সশব্দে হাসল ঠোঁট কামড়ে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে। কুয়াশা শিশিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে কর্ণার আলনা থেকে শার্টগুলো নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে ধাপধুপ করে পা ফেলে। সেদিকে তাকিয়ে শিশির দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলল। মেয়েটাকে আজকাল বড্ড আপন আপন লাগে।
এরই মাঝে জাকিয়া এলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
” কিরে আব্বু ডাকছিলি কেন? ”
শিশির ঘুরে হাসতে হাসতে বলল,
” ছেলেকে বউ দিয়েছ এখন আর কাজের জন্য তোমার প্রয়োজন পড়বে না৷ তোমার বৌমা করবে৷ কাপড় কাঁচতে দিয়েছি তোমাদের আহ্লাদীকে। ”
কথাটা এমনভাবে বলল যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে সে৷ বলে হাসল। জাকিয়া কাছে এসে বাহুতে আলত হাতে চাপ্পড় দিয়ে বললেন,
” তাই নাহ্ পাজি ছেলে..! ”
” হ্যাঁ, আহ্লাদীকে তো আহ্লাদ করে কোনো কাজ করাও না৷ তাই কাঁচতে পাঠালাম৷ ঠিক করেছি না আম্মু? ”
এবার জাকিয়া ছেলের কান ধরলেন। বললেন,
” হ্যাঁ, বিশ্ব জয় করে ফেলেছ। ”
” আরেহ্ আম্মু কোথায় ট্রিপিকাল শাশুড়ীদের মতো ছেলেকে আরেকটু অত্যাচার করতে শিখাবা তা না করে উল্টো আমাকেই মা-রছ? দেট’স নট ফেয়ার আম্মু ”
জাকিয়া এবার জোরে হেসে দিলেন ছেলের কথা শুনে। ছেলেটা সত্যি এত পাঁজি৷ ছোট থেকে সকলেকে জ্বালিয়ে মা-রে। বললেন,
” আমি সেইসব ট্রিপিকাল শাশুড়ী না যে ছেলেবউকে অত্যাচার করব৷ আর ছেলেদের শেখাব৷ পাজি একটা। আমার বৌমাকে অত্যাচার করবি না খবরদার। নয়তো আমিও তোর বউয়ের সাথে মিলে একসাথে পিটানি দেব। ”
বলে কান ছেড়ে দিলেন। শিশির হাসল। বলল,
” দু’জনে প্ল্যান করো নাকি? ”
” প্রয়োজনে সেটাও করব। ”
শিশির শুনে সশব্দে হাসল। মায়ের হাত ধরে নিয়ে বিছানায় সে বসে মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,
” আম্মু তুমি এত ভালো কেন? আমার বেস্ট আম্মু তুমি”
ছেলের কথায় তিনি মুচকি হাসলেন। চুলে হাত বুলোতে বুলোতে। কিছু বললেন না আর৷
রাত বারটা বাজতে চলল। কুয়াশা পড়া শেষ করে শিশিরের ঘরে এলো। এসে দেখল শিশির মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে৷ মাথা ধরেছে বোধহয়। কিছুদিন খুবই চাপ পড়ছে ব্রেনে। এছাড়া আজ রোদ, গরম অতিরিক্ত পড়েছে। যার জন্য মাথাটা ধরেছে।
কুয়াশার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল কন্ঠে একটু অশান্তি মনে হলো,
” কি হয়েছে তোমার? ”
শিশির চোখ খুলে তাকাল। কুয়াশা তাকিয়ে আছে৷ দেখল চোখ অসম্ভব লাল৷ আঁতকে উঠল সে। বলল,
” এ কি অবস্থা তোমার? শরীর খারাপ? ”
বলে কপালে হাত রাখল৷ দেখল জ্বর উঠেছে। বলল,
” গায়ে তো জ্বর তোমার! ”
” হ্যাঁ, মাথা ধরেছে প্রচন্ড ”
কন্ঠটাও কেমন নির্জিব মনে হলো। কুয়াশার একটু মায়া হলো। আগে শিশির অসুস্থ হলে তাকিয়েও দেখত না৷ বলল,
” কফি খাবে? ”
” এত রাতে আম্মুকে ডাকার দরকার নেই। আমি ঔষধ খেয়ে নিচ্ছি ”
” বসো আমি করে আনছি ”
কথাটা শুনে তাকাল শিশির৷ বলে কি? এ কফি করবে? জীবনে গেছে চুলার কাছে? কখনো তো দেখেনি। বলল,
” তুই পারিস? ”
” শিখেছি। ”
শিশির অনেক অবাক হলো৷ ইদানীং বাড়িতে দিনে বেশি থাকা হয়না বলে কিছু দেখা হয়না। শিশিরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
” বসো, আসছি আমি। ”
বলে চলে গেল। শিশির আবার আগের ন্যায় চোখ বন্ধ করল।
কুয়াশা রান্নাঘরে টুংটাং করছে। সেসময়ে আজমিরা নিচে এলেন। মূলত পানি নিতে এসেছেন। কুয়াশাকে এই সময়ে রান্নাঘরে দেখে বললেন,
” কি করছিস এত রাতে? ”
কুয়াশা বিব্রত হলো। এত রাতে কেউ আসবে ভাবেনি। এখন কী বলবে ভাবছে। কী বলেই বা মায়ের সামনে শিশিরকে সম্মোধন করবে বুঝছে না৷ নাম ধরে সে কোনো কালেই ডাকে না। বুনো ওল বলে সেটা এখন অযথা বললে বকা খাবে৷ এদিকে ছেলে বলবে নাকি মেয়েজামাই বলবে ভাবনাই পড়ল। আজমিরাকে চেয়ে থাকতে দেখে আমতাআমতা করে বলল,
” তোমাদের ছেলের মাথা ধরেছে। জ্বরও এসেছে হালকা৷ তাই কফি বানাতে এসেছি।”
আজমিরা একটু না অনেকটায় অবাক হলেন। বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইলেন৷ এ মেয়ে শিশিরের জন্য কফি বানাতে এসেছে? এটাকে আনন্দ ধরে নিবেন নাকি বিস্মিত হবেন বুঝছেন না৷ কুয়াশা কথাটা বলেও লজ্জায় পড়ে গেছে৷ হাজার মা হলেও কেন যেন লজ্জা লাগছে৷ বিস্মিত কাটিয়ে আজমিরা এগিয়ে গেলেন। চিনির কৌটা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন,
” আমাদের ছেলে থেকে কি আমার জামাইবাবা হয়েছে সে? ”
মায়ের এমন কথায় সে আরো লজ্জা পেয়ে গেল। আজমিরা মুচকি মুচকি হাসছেন। কুয়াশা লজ্জায় মাথা নুয়ে আছে৷ এবার না পেরে মা’কে জরিয়ে ধরল। বলল,
” চেষ্টা করছি আম্মু। একবারে কিছু তো সম্ভব না! তবে ও-ও মানতে শিখেছে৷ ”
অমায়িক হাসলেন তিনি। মেয়েটাকে ভাবতেন অবুঝ। কিন্তু এতটা বুঝদার আজ বুঝছেন। কতই বা বয়স মেয়েটার? এইতো সেদিনের মেয়ে। কোলেপিঠে করে মানুষ করলেন। বিয়ে দেবার পর থেকে চিন্তায় ঘুমাতে পারতেন না। মেয়েটা সুখী হবে কিনা, মেনে নিতে পারবে কিনা এসব চিন্তায় দিন,রাত পাড় করতেন। কিন্তু এরা ঠিকি সব ভাগ্য ভেবে মানতে শিখেছে। যে হারে দু’জন ঝগড়া মারা মারি করে কে বলবে এরা এখন একে অপরের জন্য দরদও দেখায়? শিশিরের জন্য কুয়াশা কফি করছে! জীবনে এই দিনও দেখবে ভাবেননি। আর আজ দেখো অধিকারবোধ, দায়িত্ববোধ থেকে দু’জন দু’জনেরই যত্ন নেয়। এটাই বিয়ের বন্ধন, বিয়ের জোর।
আজমিরা মুচকি হেসে মেয়ের কপালে চুমু খেলেন। বললেন,
” আমার মানিকটা অনেক সুখী হবে৷ আমি দু’চোখ মেলে দেখব সেদিন। আমার মা টা অনেক বুঝদার৷ ”
কুয়াশা লাজুক হাসল। এবার একটু আহ্লাদী হলো৷ আহ্লাদ করে মেকি অভিযোগ করে বলল,
” তোমার জামাই, স্বামী হিসেবে ততটাও খারাপ না অনেকটাই দায়িত্ববান। কিন্তু ভাই হিসেবে বেয়াদবের হাড্ডি ছিল ”
আজমিরা শুনে হাসল শব্দ করে। কুয়াশা কথাটা বলে মাথা নুয়ে নিল৷ আজমিরা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
” ছেলে আমাদের লাখে একটা ছিল৷ তাইত জামাই বানিয়ে নিয়েছি। ”
কুয়াশা আবার মা’কে জড়িয়ে ধরল। তিনি বললেন,
” যা কফি হয়ে এসেছে৷ নিয়ে যা৷ আর মেডিসিন দিয়ে দিস। বেশি জ্বর উঠলে ডাকবি আমায় ”
” আচ্ছা ”
কুয়াশা সম্মতি দিয়ে কফির কাপে কফি ঢেলে নিয়ে চলে গেল। আজমিরা সেদিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে চেয়ে মুচকি হাসলেন। বুকটা অনেক পাতলা লাগছে৷ এরপর স্বামীর কথা মনে উঠল। মনে মনে বললেন,
” দেখেছ! আমাদের মেয়ে সুখী হচ্ছে। আমি নিজে চোখে দেখছি সেই সুখ। তোমার আদরের ভাতিজা তোমার মেয়েকে সুখেই রাখবে৷ তুমিও থাকলে দেখতে!”
আজমিরা কথাগুলো ভেবে চোখের পানি নিরবে ছেড়ে দিলেন।
ঘরে এসে দেখল শিশির সেভাবেই বসে আছে। গিয়ে কাঁধের উপর হাত দিয়ে বলল,
” নাও কফি খাও। ভালো লাগবে৷ ”
শিশির মুখ তুলে তাকাল কুয়াশার মুখের দিকে। এরপর কফির দিকে। কুয়াশা আবার চোখের ইশারা করল। শিশির নিল কফি। ফুঁ দিয়ে কফি মুখে নিল। নাহ্ খারাপ হয়নি। ভালোই হয়েছে। গোবর ঠাঁসাটা তাহলে রান্নাও শিখেছে!!
টিপ্পনী কেটে বলল,
” ঝগড়া ছাড়া অন্যকিছুও যে পারিস জানা ছিল না তো! ”
কুয়াশা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। অন্য সময় হলে আগে মে-রে কথা বলত। এখন অসুস্থ বলে মুখ বুজে সহ্য করল। শিশিরে মুখের সামনে ঝুঁকে আস্তে করে বলল,
” মিস্টার, তোমার বউ যে ঝগড়া ছাড়া স্বামী সেবা করতে জানে মানতে শিখো, বুঝেছ? ”
শিশিরের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে উঠে এলো। শিশির নিঃশব্দে হেসে দিল দাঁত বের করে। সেদিন তার বলার মতো করেই বলে গেল। ভেবে আবার হাসল। কুয়াশা ডয়ারের সামনে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স বেড় করে শিশিরের সামনে এলো। একটা এক্সেল (প্যারাসিটামল) এন্টিবায়োটিক বের করে গ্লাসে পানি সমেত শিশিরের সামনে ধরল। বলল,
” এটা খেয়ে নাও। মাথা ব্যথা আর জ্বরটাও পড়ে যাবে। আর ওঠো এখন৷ ঘুমোবে চলো ”
বলে শিশিরকে ঠেলতে লাগল। শিশির একেরপর এক অবাক হচ্ছে। এই রাত বোধহয় অবাকের রাত। সে অবশিষ্ট কফিটুকু খেল একটু সময় নিয়ে। এরপর কুয়াশার থেকে ঔষধ নিয়ে খেয়ে উঠে পড়ল। কুয়াশা বক্স, গ্লাস জায়গামতো রেখে এলো। এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল। শিশির চিৎ হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। বেশি কথা বলছে না। মাথাটা একটু বেশিই ধরেছে। কুয়াশা শিশিরের কাছে এগিয়ে গেল। মাথায় হাত রেখে আলতো হাত রেখে ম্যাসাজ করতে লাগল। মেয়েলি চিকন চিকন নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শ কপালে পেয়ে শিউরে উঠল শিশির। মাথা ম্যাসাজ করাতে বেশ ভালো লাগছে৷ চোখ খুলে অন্ধকারে কুয়াশার মুখটা দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু দেখতে পেল না৷ তবে কুয়াশা নিঃশ্বাসের শব্দ পেল। বলল,
” অন্যসময় চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলিস এখন টেনে দে। ব্যথা করছে খুব মাথা। ”
কুয়াশা নিঃশব্দে হেসে ফেলল। কথা অনুযায়ী চুল টানতে লাগল। ছোট ছোট পুরুষালী চুলের মাঝে নিজের কোমল আঙুল গুলো চালাতে লাগল। শিশির এবার আরাম পাচ্ছে। শরীরটা গরম হয়ে আছে। ভালো লাগছে না। মাথা ধরলে যে কেমন লাগে! সেটা যার ধরে সেই বোঝে। এবার সে কুয়াশার পেট ধরে টেনে নিজের কাছে আনল। কুয়াশাকে নিজের মুখো কাৎ করে নিয়ে নিজেও কুয়াশার মুখো মুখ করে কাৎ হয়ে শুয়ে গলার মাঝে মুখ গুঁজে দিল। কুয়াশা কেঁপে উঠল। আজ প্রথম এভাবে শুলো শিশির। শরীর ভালো গরম অনুভব হলো। তাই সে-ও স্বামীর অসুস্থতার সঙ্গ দিতে কিছু আর বলল না। এই লোকটা আজকাল হৃদয়ে, ভাবনায় এসে উঁকি দেয়। শিশির গলার মাঝে মুখ গুঁজে রেখেই অস্পষ্ট স্বরে বলল,
” হাত বন্ধ করবি না। ম্যাসাজ কর। ভালো লাগছে। ঘুমবো আমি। ”
কুয়াশা উপায় না পেয়ে মেনে নিল। যতক্ষণ জেগে থাকল হাত চালাতে থাকল। তার একহাত শিশিরের মাথার নিচ। অন্যহাতে দিয়ে করছে। শিশির ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টায় আছে। নিঃশ্বাসের গরম বাতাস পড়ছে কুয়াশার গ্রীবাদেশে। এতে ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠছে সে। এদিকে শিশির ইচ্ছে করেই জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ফেলছে। কুয়াশার গ্রীবাদেশের স্মেলটা তার ভীষণ ভালো লাগে৷ ঐ যে প্রথমদিন পেয়েছিল! কিছুক্ষণের মাঝে চোখে ঘুম ধরা দিল। কুয়াশা বুঝল শিশির ঘুমিয়ে গেছে। বুঝে মুচকি হাসল।
প্রেমে পড়াতেও সুখ আছে! কেমন সুখ সুখ লাগে আজকাল। প্রেমে যে পড়েছে সে!!
পরেদিন শুক্রবার। জাহিদ মালিথা বাড়িতে এসেছেন। সকলে সকালের নাস্তা খেয়ে সোফায় বসেছেন। এমন সময় রান্নাঘর থেকে সোরগোল এলো।
রান্নাঘরে বৃষ্টিকে জাকিয়া বলেছেন দুপুরে রান্নার জন্য মাছ, মাংস বের করে ভিজিয়ে দিতে। সে কথা অনুযায়ী ফ্রিজ যেই না খুলেছে ওমনি ফ্রিজ থেকে আসা মাছ, মাংসের বটকা গন্ধ পেয়ে দৌড়ে রান্না ঘরের বেসিনে গিয়ে হরহর করে বমি করে দিয়েছে। এমনিতেই কাল থেকে বমি হচ্ছে। আর এখন কাচা মাংস, মাছের গন্ধ শুঁকে বমি করে দিয়েছে। গন্ধটা কেন যেন একটুও সহ্য হলো না। শাশুড়ীরা সহ ইয়াসমিন, কুয়াশা দেখে বিস্মিত হয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে সোরগোল সহ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মালিথা ভিলায় এমন সোরগোল পেয়ে তুষার সহ শিশির, নীহার, তুহিন,হিমেল ছুটে গেল। জাকির ও জাহিদ মালিথা অধির আগ্রহে মুখিয়ে রইলেন ঘটনা জানার জন্য। আগেই উনারা গেলেন না৷ তুষার, তুহিন বলে গেল তারা দেখছে বিষয়টা৷
রান্নাঘরের সামনে পাঁচভাই গিয়ে দেখল বৃষ্টিকে নিয়ে সকলের উত্তেজনা। তুষার দেখে তৎক্ষনাৎ ছুটে গেল। তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে আম্মু? ও এমন বমি করছে কেন? ”
তৎক্ষনাৎ কেউ উত্তর করতে পারল না। বাড়ির তিন গিন্নি বিষয়টা জহুরী নজরে দেখার চেষ্টা করছেন। বৃষ্টি বমি ছেড়ে এখন নেতিয়ে পড়ল৷ তৎক্ষনাৎ তুষার পেছনে গিয়ে ধরল দুই বাহু চেপে। এতক্ষণ কুয়াশা, ইয়াসমিন, আম্বিয়া ধরে রেখেছিল। তুষার ধরতেই ওরা ছেড়ে দিল। শিশির জাকিয়াকে জিজ্ঞেস করল,
” আম্মু সকালের খাবার তো সকলে খেয়েছি তেমন অসুবিধা তো হচ্ছে না। ভাবির কি হলো? গ্যাসট্রিকের সমস্যা হলো নাকি? ”
জাকিয়া বৃষ্টির দিকে তাকাল৷ গ্যাসট্রিক হলে ফ্রিজ খোলার পর এমন হবে না। তিনি যেটা ভাবছেন সেটা কি তবে? এদিকে তুষারের এবার কিছু একটা মনে পড়ল৷ তৎক্ষনাৎ বৃষ্টির মুখের দিকে নজর দিল। সে এতটায় নেতিয়ে পড়েছে যে কোনো উত্তর করতে পারছে না। তুষারের মনে পড়ল রাতে বৃষ্টি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট আনতে বলেছিল। এখন বমি হচ্ছে বিষয়টা পরিষ্কার হচ্ছে। সে শিক্ষিত ছেলে হয়ে যে এই সামান্য জিনিস বুঝবে না সেটা অহেতুকী হবে। তুষার এবার মায়ের মুখের দিকে তাকাল। তিন জা বৃষ্টির দিকে একবার তাকাল একবার তুষারের দিকে তাকাল। এরপর একে-অপরের দিকে তাকাল।
শিশির, কুয়াশা, নীহার হা করে শুধু এদের ভাবভঙ্গি দেখছে। ওদিকে তুহিন, ইয়াসমিনও বিষয়টা বুঝে গেছে৷ নীহার বলল,
” আরেহ্ তোমরা এভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছো কেন? বেশি সমস্যা হলে ডক্টরের কাছে নিতে হবে তো ভাবিকে! ”
কুয়াশা এদের জহুরী নজরে দেখে চলেছে। বিষয়টা কি সে বুঝতে পারছে? নাকি বোঝার চেষ্টা করছে? শিশিরের দিকে তাকাল। তখন শিশিরও তাকাল। এবার তিন গিন্নি একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একসাথে বলে উঠলেন,
” আমরা দাদী হতে চলেছি বৃষ্টি? ”
বৃষ্টি অসুস্থ শরীরেও চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল শাশুড়ীদের। লজ্জা এসে গ্রাস করল। কিন্তু এটা লজ্জার না, সব থেকে আনন্দের অনুভূতি। কীরকম শিহরণ হচ্ছে! বুকের মাঝে উতালপাতাল আনন্দ হচ্ছে। কাল সকাল থেকে বমি হচ্ছিল। তুষার ছিল না। পিরিয়ডও মিস গেছে। এসব থেকে রাতে তুষারকে টেস্ট কিট আনতে বলেছিল। একবারে শিউর হয়ে জানাবে ভেবেছে। এখনো অবশ্য শিউর হতে পারছে না। তবুও নব্বই শতাংশ শিউর। এখন শুধু টেস্ট করা বাকি।
মায়েদের কথায় শিশির, কুয়াশা, নীহার,হিম আবারও হা করে তাকাল৷ ইয়াসমিন মুচকি হেসে বলল,
” বোধহয় কাকিমনি হতে চলেছি। ঠিক না ভাবি? ”
বৃষ্টি উত্তর করল না। তুষার মুচকি হাসল। জাকিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আম্মু ঘরে নিয়ে যাব ও’কে? ”
জাকিয়া ছেলের পানে তাকালেন। স্পষ্ট আনন্দ ছেলের মুখে। কেমন সুখের হাসি৷ এই অনুভূতির সাথে যে তিনি এই বড় মানিকটার আসার সময় পেয়েছিলেন। এখন উনার সেই বড় মানিক সে-আনন্দ পাচ্ছে। ভাবা যায়!! জাকিয়া ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
” আমার বড় মানিক অভিনন্দন। দুনিয়ায় সব আনন্দ, সুখ তোদের হোক। ”
তুষার শব্দহীন হাসল দাঁত বের করে৷ আনন্দে এখন উড়তে ইচ্ছে করছে তার। দুই হাতে বৃষ্টির দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরল। বৃষ্টি তুষারের উত্তেজনা টের পেল। তাকাল মুখের দিকে নির্জিব চোখে। একজন স্ট্রোং পারসোনালিটির পুলিশ অফিসারের এই মুহূর্তে বাবা হবার আনন্দ কতটা গ্রাস করেছে! তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কেমন সুখ সুখ লাগছে। এতটা সুখ লাগে এই অনুভূতিগুলোই!! শিশির, নীহার, কুয়াশা, হিম এবার চেঁচিয়ে উঠল,
” সত্যি..!! ”
শিশির, নীহার, হিম একসাথে বলে উঠল,
” সিরিয়াসলি আমরা চাচু হব? ”
কুয়াশাও এবার চেঁচিয়ে বলে উঠল,
” সত্যি আমি ফুপু হচ্ছি বড় আম্মু? ”
তা শুনে শিশির চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। সকলেই এবার দৃষ্টি কুয়াশার পানে দিল৷ শিশির চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে কুয়াশার কথাটা ভাবল, সে যদি চাচু হয় তবে এই পাগলা ফুপু হয় কিকরে? মাথার উপর চাটি মেরে বলল,
” এ্যাই… গোবর ঠাঁসা! ফুপু হবি কেন তুই?”
কুয়াশাকে মা-রার জন্য সে রেগে গেল। মাথা ডলতে ডলতে রাগ তুলে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
” তো কি হব? তুষার ভাইয়া আমার ভাইয়া না? তবে ফুপু কেন হব না? আজব!!”
বাড়ির সকলে মনে মনে মাথা চাপড়াল। শুরু হয়ে গেছে এদের নিয়ম মাফিক যুদ্ধ।
” আমি যদি চাচু হয় তো তুই ফুপু কেন হবি? নামটা সার্থক। সাধে তো আর বলি না গোবর ঠাঁসা! ”
কুয়াশার এবার মনে পড়ল। সে আনন্দের চোটে এখনকার সম্পর্ক ভুলেই বসেছিল৷ তবে একটু বিরক্ত হলো এমন সম্পর্ক বদলের জন্য। কোথায় সে ফুপু ডাক শুনবে। একটা মাত্র ফুপু হবে এতগুলো ভাইয়ের ছানাপোনাদের৷ কিন্তু হায় আফসোস! সেটাও গো-ল্লায় গেল৷ তবুও সে নারাজ মানতে। সে ফুপুই হবে। তার সাধের ডাক সে শুনবে না? এটা হতেই পারে না। সে জোর গলায় বলল,
” ধুরর… রাখো তো তোমার চাচি টাচি। চাচি টাচি হতে পারব না আমি। আমি তো ফুপুই হব৷ ইভেন সব ছানাপোনাদের ফুপু হব। হায় আমার সাধের ডাক৷ সব ছানাপোনারা কিলবিল করেতে করতে এসে ফুপু ফুপু বলে ডাকবে ইশশ..! কী সুন্দর ডাক! আর আইছে চাচি বানাতে! আমি তো ফুপু ডাকই শুনব৷ ”
এবার হিম তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
” এই বুবু..! শিশির ভাইয়ের ছানাপোনারও ফুপু হবা নাকি তুমি? ”
ল্যাও ঠেলা, মর জ্বালা। কী কথার কী মানে হয়ে গেল? উফফ!
সকলে এই কথা শুনে জোরে জোরে হেসে দিয়েছে। বৃষ্টিও অসুস্থতার মাঝে হাসছে। আর শিশির কুয়াশা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইল। কুয়াশা নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেছে৷ শিশির এবার রাগ নিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে তাকাল কুয়াশার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ওর ফুপু হবার শখ জেগেছে। ওকে ফুপু বলেই ডাকাব। শখ না মিটিয়ে ছাড়ব না৷”
কুয়াশা লজ্জা পেয়ে গেল। আর সকলে আরেক দফা হেসে উঠল৷ নীহার এবার সুযোগ পেয়ে টিপ্পনী কেটে বলল,
” এক কাজ কর, কুশুর যখন ফুপু হবার শখ, তো তুই-ই না হয় ফুপা হয়ে যা। দোষ কি তাতে? ”
আবারও হাসির রোল পড়ল। কী একটা জ্বালা। নতুন অতিথি না-ই আসতে এত হাসি, আনন্দ না জানি আসলে কী হবে! শিশির এবার ভড়কে গেল৷ আর কুয়াশা বিশ্বজয়ের হাসি দিল দাঁত কেলিয়ে৷ শিশিরের দিকে দাঁত বের করে চোড়া চোখে তাকিয়ে নীহারে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
” এ্যাই ভাইয়া! এটা তো মাথাতেই আসেনি আমার! আমি তো এবার ফুপু-ই হচ্ছি। ও-ই প্রয়োজনে ফুপা হোক। না হলে নাই। ”
শিশির চোখ গরম করে তাকাল৷ তাতে সব মিটমিট করে হাসছে। ভালোই লাগছে এদের খুঁনসুটিগুলো। নীহার বলল,
” তবে তোদের ছানাপোনাদের সময় আমি মামা হচ্ছি এটা কনফার্ম। কারণ একটা মাত্র বোন আমার। ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি বলে কী মামা ডাক শুনব না? আমারও মামা ডাক শোনা লাগবে। তোরা কি হবি না হবি সেটা তোদের বিষয়। ”
কুয়াশা এবার লজ্জায় পারে না দৌড়ে চলে যাক। শিশির হতভম্ব হয়ে গেছে৷ এরা ভেবেছে কতদূর? তাদের এখনো ফার্স্টনাইট এলো না তো মামা হবে কি করে? বাসর হলে তো ভাগ্নে-ভাগ্নি আসবে? আজব সব ভাবনা৷ জীবন তার ত্যানা ত্যানা আর এরা আছে মামা হওয়া নিয়ে। ভেবে নীহারের দিকে রাগ নিয়ে কটমট করে তাকাল সে। তুহিন এখানে নিরব দর্শক। কারণ সে আগে থেকেই শান্তশিষ্ট আর এখন এরা এমন খাপছাড়া কথা বলে মজা করছে বড়ও মানছে না তাই সে আরোই চুপ আছে৷ ইয়াসমিনও একটু টিপ্পনী কেটে বলল,
” শিশির আমরা কি আরো একটা সদস্য পেতে যাচ্ছি? না তোরা তো তেমন করেই মিন করছিস ”
এবার জাকিয়া শব্দ করে হেসে দিলেন৷ বললেন,
” এদের ছানাপোনার মুখে দাদা-দাদু ডাক শোনার আশা আর করছি না আমরা। এরা আগে নিজেরাই বড় হয়ে নিক। ”
শুনে শিশির বেজায় লজ্জা পেল কেন যেন। আর কুয়াশা এবার একদৌড়ে ঘরে। তাকে আর পাই কে? এখানে আর থাকা যাবে না। এদের ভাবনা চিন্তা বহুদূর। অথচ তারা এদের ভাবনা পর্যন্ত-ই যেতে পারেনি। শিশিরও আর দাঁড়াল না৷ বেড়িয়ে এলো। ওরা দু’জন বেড়িয়ে আসতেই হাসল সকলে। তুষার বলল,
” ওরা মানতে শিখেছে আম্মু। সময়মতো স্বীকারও করবে। চাপ দিয়ো না ”
” হু ”
বলে থেমে আবার বললেন,
” আব্বু যা বৃষ্টিকে ঘরে নিয়ে যা। কাল সকালে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবি ”
তুষার সম্মতি দিয়ে বৃষ্টিকে ধরে বেড়িয়ে এলো। ওরা বেড়িয়ে যেতে সকলে প্রশান্তির হাসলেন। এমন সুখময় পরিবারই যেন চিরন্তন থাকে৷ কোনো বদ নজর যেন না লাগতে পারে। আল্লাহ যেন সব সময় পরিবারের সহায় থাকেন৷ আজ এই আনন্দ অনেক বড় আনন্দের। বাড়িতে ছোট সদস্য আসতে চলেছে চারটেখানি কথা? সকলে প্রথম কোনো ডাক, অনুভূতির সাথে পরিচয় হবে। জাকিয়া তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে গেলেন। কর্তাকে খবর না দিলে আনন্দ বাড়বে না৷ ইয়াসমিন, তুহিন বেড়িয়ে গেছে তখন৷
নীহার গিয়ে শশীকে আগে জানাবে। মেয়েটা জানলে নেচে উঠবে। কতশত পাগলামীর কথা বলবে। সেগুলো সে আনন্দে শুনবে আর মিটিমিটি হাসবে। কখনো আবার অট্টহাসিও দেবে। মেয়েটার সাথে কথা বলতে গেলে কখন যেন দুই-তিন ঘন্টা হয়ে যায় টেরই পাই না। এতটা আপন হয়ে যাবে এত অল্প সময়ে কখনো বুঝেনি। সে বলতে পাগল। শুধু পাকনা পাকনা কথা বলে। এই বয়সে এতটা না পাকলেও পারত। অনুভূতি আরো বাড়িয়ে দেয়। কবে যে নিজের করে নিজের কাছে আনতে পারবে!!
ভাবতে ভাবতে ঘরে গিয়ে শশীর কাছে কল দিল। শশী আজ শুক্রবার হওয়াতে ফ্রি ছিল। তৎক্ষনাৎ ওপাশ থেকে মায়াবী, মোহময়, নেশাময় চিকন সুরেলা কন্ঠে সালাম দিয়ে উঠল৷ নীহারের ঠোঁটে হাসি ফুটল। মেয়েটার কন্ঠ শোনা মাত্রই হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে। নীহার সালাম বিনিময় করে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করল৷ এরপর কাঙ্ক্ষিত কথাটা জানিয়ে দিল। এই নিয়ে বহু কথা চলল তাদের মাঝে।
কুয়াশা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে এসেছে। সে নিজের ঘরেই বেশি থাকে। এখনো কোনো জিনিস শিশিরের ঘরে নেই নি। শিশির ঘরে এসে দেখল কুয়াশা নেই। চূড়ান্ত বিরক্ত হলো। একে কখনো এখানে পাওয়া যায় না৷ বেড়িয়ে কুয়াশার ঘরের সামনে গেল। দেখল এসে ঢাঁস করে শুয়েছে৷ রাগ নিয়ে বলল,
” এ্যাই ঘরে আয়! তোর এখানে কিরে সবসময়? ”
কুয়াশা তা শুনে উঠে বসল। উত্তর করল,
” তো তোমার কি? আমার ঘরে আমি থাকি। এখানেই আমার সব।”
শিশির রাগল আরেকটু। কিড়মিড় করে বলল,
” আসবি তুই? ”
কুয়াশা দেখল রেগে গেছে। তাই কথা বাড়াল না। উঠে শিশিরের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেল। শিশির ওর আসা দেখে দরজার মুখ থেকে চলে গেল নিজের ঘরে।
কুয়াশা গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে? ”
শিশির এবার কুয়াশাকে খপ করে ধরল। হাত ধরে কাছে টেনে নিল। কুয়াশা ভয় পেয়ে গেল৷ এটাকে তখন খেপিয়েছে৷ না জানি কী করে এখন! শিশির বলল,
” তা, তোর খুব শখ না ফুপু ডাক শোনার?”
” হ্যাঁ, তো এতে দোষের কি আছে? ”
” নাহ্ দোষের কিছু নেই৷ তোহ্ আমার ছেলে-মেয়ের ফুপু ডাক শুনবি না আম্মু ডাক শুনবি? ”
কুয়াশার ভেতরে সব ঝঙ্কার তুলল। শিরশির করে শরীরের লোমগুলো কাঁটার ন্যায় খাড়া হলো৷ শিশিরের চোখে কেমন ভাব। দুষ্টুভাব তো আছেই সাথে৷ কুয়াশা ঢোক গিলল। এখন কী উত্তর দেবে ভাবছে। উল্টা পাল্টা উত্তর দিলে নির্ঘাত মাইর।
” কী হলো বল? ”
” তুমি মামা হতে পারলে আমিও ফুপু হতে পারব। ”
শিশির কথাটা শুনে ভড়কে গেল। হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ময় নিয়ে তাকাল৷ এ কি জবাব? সে কী জিজ্ঞেস করল আর এ কী জবাব দিল? তারই ছেলে-মেয়ের সে কিনা হবে মামা? মানে যা তা? কী সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার! এটা শুনতেই তো কেমন লাগছে। ডাকলে কেমন হবে? ছিঃহ্ ছিঃহ্ নিজের ছানাপোনাদের মামা সে কখনো হবে না। হলে বাবাই হবে। নয়তো কী একটা বিশ্রী ব্যাপার স্যাপার হবে! মামা মামা বলে ডাকবে ফিলিংস বউয়ের দুঃসম্পর্কের ভাই। এ হতে দেয়া যাবে না। না মানে না, কখনো না! সে বাবা ডাক-ই শুনবে, ইট’স কনফার্ম।
এদিকে কুয়াশা কথাটা বলে সেই আনন্দ পেয়েছে। তাকে যদি ফুপু ডাকাতে পারে সে কেন মামা ডাকাতে পারবে না? এটা একটা লজিক্যাল কথা৷ সম্পূর্ণ যুক্তি আছে৷ লয়ার হবে দু’দিন পর যুক্তি দিয়ে কথা না বললে কিকরে হবে? হাসি হাসি মুখে দুষ্টুমি করে আবার বলল,
” কিহ্ হবে তো মামা? দেখো মামা ডাকের ফিলিংস কিন্তু সেই হবে৷ ”
মজা লাগছে খুব উল্টো জবাব দিতে পেরে। আবার বলল,
” তবে একটা মজার বিষয় হবে, ছানাপোনারা তোমাকে মামা ডাকবে আমাকে ফুপু বিষয়টা কত ইউনিক নাহ্? আমরাই পৃথিবীর বেস্ট মাতা-পিতা হব যারা কিনা ছেলে-মেয়েকে মামা, ফুপু ডাক ডাকাবে।”
বলে ঠোঁট টিপে হাসছে সে। শিশির বিস্ময় কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মানে এই মেয়ে কি সত্যি ডাকাবে? এর দাঁড়ায় সম্ভব হবে। বলা যায় না ছানাপোনা হবার পর প্রথম ডাক তাকে মামা-ই ডাকল? ভেবে নিজেকে সামলে নিল। কুয়াশাকে এবার একটু শিক্ষা দেয়া যাক। টেনে একদম মিশিয়ে নিল। বলল,
” তাই নাহ্?”
কুয়াশা শক্ত, বলিষ্ঠ হাতের চাপে মনে হচ্ছে গুঁড়িয়ে যাবে৷ আজ বোধহয় হাড়গোড় ভেঙ্গেই বিছানাগত করে ছাড়বে এই দশ মনের ডাম্বেল। ভালো মতো চেতিয়েছে এটাকে। সে এবার নিজেকে বাঁচাতে অস্বাভাবিক একটা কাজ করে বসল।
শিশির ও’কে দু’হাতে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে আর ও নিজের ডান হাতটা তুলে শিশিরের ঘাড়ের পেছনে দিয়ে চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে মাথার পেছনের ছোট ছোট চুলগুলো শক্তকরে মুঠে চেপে ধরল। শিশির তৎক্ষনাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে বল প্রয়োগ করে শিশিরের মাথাটা ঝুঁকিয়ে নিল নিজের সামনে। কারণ তার পা উঁচু করার মতো কায়দা নেয়। শিশিরকে ছোঁয়া পেতে হলে ঝুঁকাতে হবে। আর সেটাই করল। শিশিরের মাথা ঝুঁকিয়ে সাথে সাথে ডান গালে কামড় বসিয়ে দিল। বোধহয় জোরেই দিল। তার কোমড় ভাঙার প্ল্যান করেছে আর সে কি আস্তে কামড় দেবে? কখনো না৷ কামড় দেবার সাথে সাথে শিশির হতভম্ব হয়ে গেল। কুয়াশা কামড় দিয়ে যখন মুখ তুলে নিল তখন শিশির কুয়াশার কোমড় ছেড়ে নিজের কামড় দেয়া গালে হাত দিয়ে,
” ইশশশ….! ”
বলে উঠল। ডলতে লাগল৷ চেঁতে উঠে বলল,
” গোবর ঠাঁসার বাচ্চা! ”
এটা বলার পরপরই কুয়াশা আবার আরেক কান্ড করল। শিশিরের বুকের লোম টেনে দিল। টিশার্টের উপর থেকেই। দিয়ে দিল ভোঁদৌড়। কিন্তু বেচারা বেশিদূর যেতে পারল না। শিশির এত অত্যাচার মেনে নেবে? সে কুয়াশা দৌড়ে চলে যাওয়া দেখে খপ করে হাত ধরতে গিয়ে ভুলবশত কুয়াশার ওড়না টেনে ধরে ফেলেছে। আর কুয়াশাও দৌড়ে চলে যাবার ফলে ওড়না একদম বুক থেকে খুলেই গেছে। এখন সেটা শিশিরের হাতে। কুয়াশা দরজার সামনে চলে গেছে।
দু’জনেই হতভম্ব হয়ে গেল। মানে বিষয়টা একদম অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে গেল। উদ্দেশ্য ছিল এক হয়ে গেল আরেক। কুয়াশা তো থেমেছে তখনি যখনি শরীর থেকে ওড়না ছুটে গেছে। আর শিশির হাত না পেয়ে ওড়না পেয়ে বিষয়টাতে বাকরূদ্ধ হয়ে গেছে। খুবই খারাপ একটা পরিস্থিতি হলো। যদিও স্বামীস্ত্রী তবুও দু’জনেরই কেমন যেন বাজে ফিল আসছে। দু’জনে একসাথে থাকুক, জড়িয়ে ধরুক কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতিতে ফিল অন্যরকম হচ্ছে৷ এছাড়া শরীরে ওড়না বাদে কুয়াশার লজ্জায় সেখানেই ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। সে এখনো শিশিরের দিকে ঘুরেনি। শিশিরের সামনে ওড়না বাদে থাকতে আর পারছে না। ভেতরে তোলপাড় হচ্ছে।
এদিকে শিশির পরিস্থিতিটাকে কিভাবে নেবে সেটা ভাবছে৷ নিজেকে সামলে নিল। জড়িয়ে ধরে শুতে পারলে ওড়না বাদে দেখতে কি সমস্যা। বউ সে তার৷ নিজেরা সময় নিয়েছে তাই বলে, এসব নিয়ে ন্যাকামো করার কি আছে? নিজেকে বুঝ দিয়ে কুয়াশার কাছে এগিয়ে গেল। কুয়াশা আরো লজ্জায় মরি মরি হয়ে গেল। দুরুদুরু করছে বুক। কুয়াশার একদম কাছে পেছনে গিয়ে লো ভয়েজে শিশির দুষ্টুমি করে ঠোঁট কামড়ে বলল,
” যাহ্ এবার.. ”
কুয়াশার লজ্জা আরো বাড়ল। মাথা নিচু করে আছে। সে আবার বলল,
” দাঁড়িয়ে থাকলি কেন? ছুট। হাওয়া শেষ? ”
কুয়াশা এবার না পেরে নিজের লজ্জা নিবাররের জন্য ঘুরে শিশিরকেই জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,
” প্লিজ..! ”
আর এদিকে শিশির তো চমকে উঠেছে। নিজে থেকে এমন আবেদনময়ী হয়ে জড়িয়ে ধরেছে কখনো কুয়াশা? মনে করার চেষ্টা করল। কিন্তু মনে পড়ছে না। এ মেয়ে তাকে এভাবেই ডুবিয়ে দেবে। তবে এ জড়িয়ে ধরল কিজন্য? লজ্জায়? নাকি ভয়ে? শিশির বিষয়টা ধরতে সক্ষম হলো না। সে কুয়াশাকে বুকে নিয়েই সামনে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা খোলা ছিল। শিশির এবার কুয়াশাকে বলল,
” বি নরমাল… বউ তুই আমার। আমি কোনো পরপুরুষ না। ”
কুয়াশার কাঁপন একটু থামল তা শুনে। সত্যি তো! শিশির চাইলে তারউপর সম্পূর্ণ অধিকার ফলাতে পারে। শিশির এবার টিপ্পনী কেটে বলল,
” আমার ভয়ে আমার বুকেই এসে লুকালি? বাহ্ ভালো উন্নতি হয়েছে তো তোর! ”
থেমে আবার বলল,
” তা এখন কী করব তোর সেটা বল? আমাকে কামড় দিলি, বুকের লোম টানলি এগুলো কিভাবে ফিরাব তাই বল। তোর বলা অনুযায়ী শাস্তি হবে। কিন্তু মাফ আমি করছি না। শাস্তি পেতেই হবে৷ তুই আমাকে মে-রে চলে যাবি আমি সেটা কোনো কালে হতে দিয়েছি? তবে এখন কেন দেব? অত সস্তা আমি না। বল জলদি বল.. ”
কুয়াশা হতভম্ব হয়ে গেল। কতবড় বেয়াদব? মনে মনে আচ্ছামতো বকে নিল। এরপর মাথা তুলে জড়িয়ে রাখা অবস্থাতেই শিশিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কী আর করবা? বেঁধে যে ফেলেছ আমায়! যাবার পথ নেই। দাও কামড় দাও। কামড় ফিরিয়ে দাও”
এই বলে সত্যি সত্যি শিশিরের দিকে গাল বাড়িয়ে দিল। শিশির হাসবে নাকি কিছু বলবে বুঝছে না। কুয়াশা কথাটা একদম বাচ্চাদের মতো করে বলল। সে কুয়াশার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ। নাহ্ এই মেয়ে বউ হিসেবে ততটাও খারাপ না৷ মানতে শিখেছে সবকিছু। তা ক্ষণে ক্ষণে কাজে-কর্মে, কথা-বার্তায় বুঝিয়ে দেয়৷ মেয়েটা তার মনের ঘরেও ঢুকে গেছে৷ আগে শুধু ঝগড়ুটে ভাবত তেমনটা নয়৷ এতদিনে বোঝা হয়ে গেছে এর সাথে সংসার ভালোই সুখময় হবে৷ আজকাল ততটাও বিবাগী হয় না৷
বুনো ওল বাঘা তেঁতুল পর্ব ৩৫
ভাবতে ভাবতে তুলল কুয়াশাকে বুক থেকে। তুলে সোজা করে দাঁড় করাল। কুয়াশা আবার লজ্জায় উনিয়ে গেল। দেখল তা মন দিয়ে। এ মেয়ে যে এতটা লজ্জাবতী আগে কখনো টের পায়নি। শিশির এবার হাতের ওড়না পরিয়ে দিল নিজেই। কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েজে বলল,
” ওড়না আমি নিজেই খুলব নিজেই পরাব। সেই দিন খুব জলদি আসছে৷ রেডি হ গোবর ঠাসা। ”
কুয়াশার শরীর, অন্তর অবস হয়ে এলো। সামনে থাকা তার স্বামীর কথা শুনে। এ কী ভয়ংকর অনুভূতি! আগে এমন কিছু তো কখনো হয়নি!!
