ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ২৮

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ২৮
প্রিয়স্মিতা তেহজীব রাই

প্রিথমের চিৎকার শুনে তনুশ্রী বেগম, অনন্যা বেগম, অর্থি বেগমও ছুটে এসেছেন।
প্রেম চিৎকার দিয়ে বলল, “কীইই বলছ দাদান!”
প্রিথম আর কোনো কথা না বলে উদভ্রান্তের মতো ছুটে গেল বাড়ির বাইরের দিকে।
অনুস্রী বেগম বোধহয় কথাটা ঠিকমতো হজম করতে পারলেন না।
“উনার প্রণয়ের এক্সিডেন্ট!” — এটা বুঝতেই উনার প্রেসার বেড়ে গেল। মমতাময়ী সন্তানের বিপদের কথা শুনতেই উনার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল উনার।

মাথায় শুধু একটা কথাই পাক খাচ্ছে — “আমার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে।”
অনুস্রী বেগম জোরে কেঁদে উঠলেন, “আব্বু! আব্বু!” — বলে দু’বার আর্তনাদ করে জ্ঞান হারালেন।
তনুশ্রী বেগম ও অনন্যা ছুটে এসে বড়জাকে ধরলেন।
ড্রয়িংরুমের হৈহট্টগোল আর চিল্লা-চিৎকারে
দুই কর্তা আর প্রহেলিকা ও ছুটে এলেন ড্রয়িংরুমে।
সাদমান শিকদার গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, “এত চেঁচামেচি কিসের এখানে?”
কথা বলতে বলতে উনার চোখ গেল অনুস্রী বেগমের দিকে।
তিনি ছুটে গিয়ে স্ত্রীকে ধরলেন। উত্তেজিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“কি হয়েছে, অনু?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অন্যরা সবাই পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না এই কথা।
প্রহেলিকা পরিণীতাকে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে রে?”
পরিণীতা কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিল না — তার বড় ভাই!
প্রহেলিকার ধাক্কায় তার হুঁশ ফিরল। সে টলটলে চোখে তাকাল আপুর দিকে।
প্রহেলিকার প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রহেলিকা আবারও জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে, বল!”
পরিণীতা এবার কথার জবাব না দিয়েই আচমকাই কেঁদে উঠল।
প্রহেলিকা, সাদমান শিকদার, খালিদ শিকদার আর সোহেব শিকদার হকচকিয়ে উঠলেন।
পরিণীতা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “বড় দাদান এক্সিডেন্ট করেছে, আপু…”
কথাটা শুনতেই প্রহেলিকা সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল।
হৃদ্‌পিণ্ডে চাপ অনুভব করল।

সে মুহূর্তেই অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ল।
সে পরিণীতার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
“কি… কী বলছিস এসব! কোথায় আছে প্রণয়? কতটুকু ইনজার্ড হয়েছে? বল! আমাকে বল! চুপ করে আছিস কেন? প্লিজ, বোন, বল!”
বলতে বলতে চিৎকার দিয়ে উঠল প্রহেলিকা।
সবাই অবাক চোখে প্রহেলিকার দিকে চেয়ে আছে।
পরিণীতা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আর কিছু জানি না, আপু…”
ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়া থেমেছে—মিনিট পাঁচেক হলো। আকাশে তীব্র আলোর ঝলকানির পর বিকট শব্দে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। পরিবেশ দেখে সহজেই ধারণা করা যায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই পুনরায় ঝড়সহ ঝুম বৃষ্টি নামবে। বাইরে তখনও প্রবল হাওয়া বইছে।

পৃথম বাড়ি থেকে বেরিয়ে উন্মাদের মতো ছুটে এসেছে গ্যারেজের দিকে। সে সামনের দিকে আর এক পা বাড়াতেই, পেছন থেকে একটা পরিচিত, অথচ ব্যথাতুর কণ্ঠ ভেসে আসলো কন্ঠটা কানে যেতেই আপনা-আপনি থেমে গেল প্রীতমের পা।
পৃথম বুকের মাঝে খুব সূক্ষ্ম, সুচালো কিছুর একটার আঘাত অনুভব করলো।
পেছন থেকে কেউ কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে ডাকলো, “ভাইয়া!”
তীব্র বেগে পেছনে ফিরে তাকাতেই প্রীতমের কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
প্রিয়তা ছুটে এসে ধপ করে বসে পড়লো প্রীতমের পায়ের কাছে।
পৃথম করুণ চোখে তাকিয়ে রইল বোনের দিকে।

হঠাৎই প্রিয়তা পৃথমের দুই পা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। অশ্রুসিক্ত চোখে অনুরোধ করে বললো,
“আমাকে ও নিয়ে চলো ভাইয়া… আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে আমার প্রণয় ভাইয়ের কাছে নিয়ে চলো। আমার প্রণয় ভাইয়ের ও হয়তো অনেক কষ্ট হচ্ছে, হয়তো অনেক ব্যথা পেয়েছেন। আমাকে ও তোমার সাথে নিয়ে চলো ভাইয়া।”
কাঁদতে কাঁদতেই উন্মাদের মতো বিলাপ করতে লাগলো প্রিয়তা। তার কেমন বিষাক্ত অনুভূতি হচ্ছে, এই মুহূর্তে সে পৃথিবীর কাউকে বোঝাতে পারবে না।
প্রিয়তা ছটফটিয়ে উঠে বলল,

“উনি আমাকে বলেছিলেন, আমি নাকি ওনার সব যন্ত্রণার একমাত্র ওষুধ। আমি পাশে থাকলে নাকি ওনার কোনো কষ্টই অনুভব হয় না। উনি আরও বলেছিলেন, উনি অসুস্থ থাকলে যেন আমি সবসময় উনার পাশেই থাকি—তবেই নাকি উনি পুরোপুরি সুস্থ থাকবেন।
তাই, আমাকে আমার প্রণয় ভাইয়ের কাছে নিয়ে চলো ভাইয়া। ও ভাইয়া, প্লিজ… উনার কাছে নিয়ে চলো। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, মনে হয় মরে যাচ্ছি। বুকের ভিতর খুব কষ্ট হচ্ছে।”
বলে বলতেই প্রিয়তা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে প্রীতমের পা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
নীল চোখ বেয়ে পড়া অনর্গল জলরাশি যেন নীল সমুদ্রের ভানবাশি উত্তাল ঢেউ। বিধ্বস্ত চোখ-মুখ, চুলের খোঁপা খুলে গিয়ে ঘাসের উপর লুটিয়ে পড়েছে প্রণয়ের প্রাণপ্রিয়, অতি আদরের পুতুল। যন্ত্রণায় ছটফট করে কাঁদছে।
এই দৃশ্য দেখলে প্রণয় নিশ্চিত এখানেই হার্ট অ্যাটাক করত।

কলিজার টুকরো বোনের এক একটা আর্তনাদ পৃথমের হৃৎপিণ্ড এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিচ্ছে।
সে প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে ধীরে ধীরে বলল,
“শান্ত হ বোন, তোর প্রণয় ভাইয়ের কিছু হবে না।”
প্রিয়তা আরও জোরে কেঁদে উঠল। এতক্ষণে প্রেম আর সাদাফও এসে দাঁড়িয়েছে। প্রেমের ও কলিজাটা জলে যাচ্ছে আদরের বোনের এমন করুণ অবস্থা দেখে। কষ্ট তো তারাও পেয়েছে—ভাই তো তদের ও।
তবুও কেন ওই মেয়েটাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে, ওর কষ্টের তুলনায় তাদের অনুভূতি গুলো তেমন কাজই করছে না?

পৃথম বোনকে তুলে বুকে জড়িয়ে নিল। চোখের পানি মুছাতে মুছাতে বলল,
“জানি, তোকে বড় দাদানের মতো সামলাতে পারব না বোন, তাই সেই চেষ্টাও করলাম না। কাঁদিস না বোন, নিয়ে যাবো তোকে।”
সাদাফ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার বিধ্বস্ত চেহারার দিকে। সে জানতো এই প্রেমে তীব্র উন্মাদ কেবল প্রণয়ই সে স্বপ্নে ও ভাবেনি প্রিয়তা ও প্রনয়কে এতো ভালোবাসে।
প্রিয়তা পৃথমকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাদন হারা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
পৃথম প্রেমকে বলল,

“অন্যরা চলে আসার আগে । তাড়াতাড়ি গাড়ি বের কর—কুইক!”
প্রেমও সম্মতি জানিয়ে ছুটে গেল গ্যারেজের দিকে। পৃথম বোনের মাথায় অনবরত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। প্রিয়তা কেমন বার বার ছটফটিয়ে উঠছে, সে কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে বলল, “আপনি খুব খারাপ, প্রণয় ভাই খুব খারাপ…”
গাড়ি নিয়ে আসলো প্রেম। পৃথম প্রিয়তা, সাদাফ ছুটে গিয়ে গাড়িতে বসল। গাড়িটা চোখের পলকেই শিকদার বাড়ির গেট পেরিয়ে গেল। ওরা চলে যাওয়ার মিনিট দুই পার হতেই প্রহেলিকা, পরিণীতা, অরণ্য, সমুদ্র, রাজ ছুটে এলো।
প্রহেলিকা পাগলের মতো আচরণ করছে, কিন্তু ওরা এসে প্রেম আর পৃথমকে কোথাও দেখতে পেল না। প্রহেলিকা চিৎকার দিয়ে রাজকে বলল, “দেখছিস কী, গাড়ি বের কর!”
রাজ ছুটে যেতে নিয়ে ও থেমে গেল। প্রহেলিকা রেগে গিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে ধমক দিয়ে বলল, “কি হল, দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? যা!”

রাজ উত্তেজিত কণ্ঠে জবাব দিল, “কিন্তু আপু, কোন হাসপাতাল, সেটাই তো মেজদার কাছ থেকে জানা হয়নি!”
প্রহেলিকার যেন পায়ের নিচ থেকে জমি সরে গেল। সে ধপ করে বসে পড়ল ঘাসের উপর। আকাশে তীব্র বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা গেল। তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার ও ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামল ধরনিতে। ওরা ভাইবোন অসহায়ভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা কাঁদতে কাঁদতে নেতিয়ে পড়েছে পৃথমের বুকে। বোনের অবস্থা দেখে পৃথমের জান বেরিয়ে যাচ্ছে—সে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলল,
“হে মাবুদ, আমার ভাইবোনদের শান্তি দাও আর কষ্ট দিও না। পাপীরা তো বেশ আছে, তবে নিষ্পাপরা কেন শাস্তি পাবে? ওদের পাপের কলস কি কখনো পূর্ণ হবে না?”
দেখতে দেখতে দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেল। শিকদার বাড়ির গাড়ি এসে থামল DCMC হসপিটাল-এর সামনে। পৃথম আর প্রেম গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল।

প্রিয়তার শরীর কাঁপছে। সে সারা রাস্তা আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা করেছে, আবারও সে একই প্রার্থনা করে বলল, “এমন কোনো দৃশ্য দেখাবেন না, মাবুদ, যা আমি সহ্য করতে পারব না। আমার প্রণয় ভাইকে সুস্থ রেখো, মাবুদ। উনার কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাব, বাঁচতে পারবো না একদম।”
পৃথম আর প্রেম, প্রিয়তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভিতরে ঢুকে পড়ল। পৃথম উত্তেজিত কণ্ঠে রিসেপশনিস্টের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল—

“Excuse me, could you please tell me which cabin number Abrar Shikhdar Pronoy is in?”
রিসেপশনিস্ট প্রিথমের দিকে কিছুক্ষণ দেখে নম্র কণ্ঠে জবাব দিলেন,
“Let me check… Yes, Mr. Abrar Shikhdar Pronoy is in—”
“But I’m sorry, may I know your relation to the patient?”
Prithom: “Yes, of course. He’s my elder brother.”
Receptionist:
“Oh, he’s your elder brother? No problem. He’s currently in Cabin 305—third floor, right wing. Just show your visitor pass at the lift, and you’ll be allowed in.”
প্রিয়তা অধৈর্য হয়ে উঠেছে এসব কথোপকথনে। কেবিন নম্বর কানে আসতেই সে সেদিকে দৌড় দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু কিছু অপ্রত্যাশিত শব্দচয়ন কানে আসতেই পা থমকে গেল।
প্রিথম আবারও ফর্মালভাবে বলল,

“Thank you. But may I ask what happened to him? Could you kindly check and let me know?”
পাশ থেকে একজন বেশ হতাশ কণ্ঠে বলে উঠল,
“ডাক্তার বলেছেন, উনার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। উনার মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, ফুসফুস ফেটে গেছে, হৃদপিণ্ডেও আঘাত লেগেছে। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে উনাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন। রক্তপাত কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।”
এমন নির্মম বর্ণনা কানে আসতেই প্রিয়তার দেহের সকল রক্ত ছলকে উঠলো। হৃদয়টা মনে হচ্ছে এখনই ভয়ংকর বিস্ফোরণ ঘটাবে। প্রিয়তার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে সে বলল,

“না… আমার প্রণয় ভাইয়ের কিছু হতে পারে না!”
সে লিফট ছেড়ে সিঁড়ির দিকে দৌড় দিল। বোনকে দৌড় দিতে দেখে প্রেম-ও পেছন পেছন ছুটছে আর বলছে, “দাঁড়া বোন!”
প্রিয়তা কারো কোনো কথা কানে তুলল না। তার জন্য এই মুহূর্তে পৃথিবীর জাগতিক যা কিছু আছে, সবই অদৃশ্য। সে কিভাবে তিনতলায় এসে পৌঁছেছে, জানে না সে। হাঁটুতে ও কোনো রকম কোন ব্যথার অনুভব হচ্ছে না তার—হৃদয়ের ব্যথার কাছে অন্য সব ব্যথা খুবই তুচ্ছ লাগছে প্রিয়তার কাছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার অনর্গল নুনা জলের স্রোত। খোঁপা খুলে লম্বা চুলগুলো হাঁটু ছুঁয়ে গেছে। নীল চোখ দুটো টকটকে লাল। সে এক ছুটে ৩০৫ নম্বর কেবিনের সামনে চলে এলো।

শরীর কাঁপছে প্রিয়তার। সে কিছুতেই দরজায় হাত রাখার সাহস পাচ্ছিল না। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পার হওয়ার আগেই সে ঝড়ের বেগে দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ল।
বিছানার দিকে দৃষ্টি পড়তেই তার উত্তাল সকল অনুভূতি শান্ত হয়ে গেল।
বিছানার উপর প্রণয় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কপালে সাদা ব্যান্ডেজ প্যাঁচানো, দুই হাতের উল্টোপিঠে ক্যানোলা লাগানো—একটা দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে, আরেকটা দিয়ে স্যালাইন। সুন্দর, সুদর্শন চেহারাটা নিস্প্রভ—সেখানে কোনো মলিনতা নেই, নেই কোনো অসুস্থতার চিহ্ন।

প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই প্রিয়তার ঠোঁট ভেঙে কান্না এল। কিছু মুহূর্তের জন্য অনুভূতি শান্ত হয়ে গেলেও, এই মুহূর্তে সেই সব অনুভূতিরা ১০০ গুণ হয়ে প্রিয়তার হৃদয়ে আছড়ে পড়ছে। প্রিয়তার মন বলল, “দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছিস কেন? ওই যে দেখ—তোর মানসিক শান্তি, সুরক্ষাস্থল, ভালোবাসার আধার।”
প্রিয়তার কি হলো, জানা নেই। সে বিন্দুমাত্র নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে বিদ্যুত্ বেগে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রণয়ের বুকে।

প্রণয়ের শরীর কেঁপে উঠল। তীব্র ঝাঁকুনির ফলে ডান হাতের ক্যানোলায় টান লাগতেই চোখের নিমিষেই তর তর করে স্যালাইনে রক্ত উঠে গেল। মুহূর্তেই সাদা তরল লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে গেল।
প্রিয়তা শক্ত করে প্রণয়ের বুকের কাছের শার্ট আঁকড়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে তীব্র কান্নায় ভেঙে পড়ল। তার চোখের পানিতে ইতিমধ্যেই প্রণয়ের বুকের কাছে শার্ট ভিজে গেছে।
বুকের উপর নরম কিছু আঁচড়ে পড়তেই জেগে গেল প্রণয়। সঙ্গে সঙ্গেই নাকে এসে ঠেকল সেই চেনা সুবাস। দেহে প্রিয় নারীসত্তাটা অনুভব হতেই কাঁপন ধরল বুকে। সর্বাঙ্গে হল-হল করে ছড়িয়ে পড়তে লাগল মরণবেদনা। চোখ বন্ধ রেখেই ঠোঁট কামড়ে ধরল প্রণয়। বন্ধ চোখের কোণা বেয়ে গড়াতে লাগল তরল অশ্রু। প্রিয় নারীর স্পর্শ অন্তরের আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছে। সে মনে মনে তাচ্ছিল্য করে বলল—

“কেন এসেছিস এখানে? বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি দেখতে এসেছিস? নাকি আমার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে মন ভরেনি, এবার প্রাণটাও নিতে এসেছিস? প্রাণ নেওয়ার হলে সেটাও নিয়ে যা। এই প্রণয় শিকদারের যা ছিল, সবই তো তোর ছিল আর আমার প্রাণ তো তুই যেহেতু তুই আর আমার রইলি না, —তবে তুই হিনা, এই জীবন নিয়ে আমি কী করব? এর চেয়ে মরে যাওয়া ঢের ভালো বল! আমিও বড্ড ক্লান্ত জানিস—এই বিষাদময় জীবনের বোঝা আমি ও আর বইতে পারছি না। তুই নিজের হাতেই না হয় মুক্তি দে আমায়। আমি আর সইতে পারছি না। চলে যা তুই এখান থেকে… ছুঁবি না আমায়, একদম স্পর্শ করবি না! দয়া দেখাচ্ছিস? দয়া!
আবরার শিকদার প্রণয়ের প্রয়োজনে মরণ হলেও হবে, তবু সে কারো দয়ায় বাঁচবে না! চলে যা তুই, তোর শুদ্ধের কাছে।”

প্রিয়তার কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে বলল—
“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্রণয় ভাই… খুব… আপনাকে এই অবস্থায় কিছুতেই দেখতে পারছি না আমি পারছি না। আপনি খুব খারাপ… প্রণয় ভাই, আপনি একবারও আমার কথা ভাবেন না কেন?
আপনার যদি কিছু হয়ে যায়… আমি একদম মরে যাব প্রণয় ভাই, এক সেকেন্ডও বাঁচব না আপনাকে ছাড়া! আপনার কিছু হয়েছে এটা ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসে… নিশ্বাস নিতে পারি না… আমি আপনাকে বলতে পারি না, বোঝাতেও পারি না… আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি…

ভালোবাসি বলেই কি এত কষ্ট দেন? ভালোবাসায় আপনার জুড়ি নেই, আবার যন্ত্রণা দেওয়াতেও আপনার জুড়ি নেই এই পৃথিবীতে! আপনি আমাকে সব থেকে বেশি কষ্ট দেন, আবার আপনিই আমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসাও দেন। আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আপনার এমন বিষাক্ত ভালোবাসায়—আমি না পারছি আপনার কাছে থাকতে, আর না পারছি আপনার থেকে দূরে যেতে। আপনার ভালোবাসা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ, সেখানে আপনাকে দুই মিনিট মনভরে দেখার অধিকার আমার আমার নেই!
আপনি যদি আমার হবেনই না, তবে কেন আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেলেন?
আপনার প্রতি কেন এত ভালোবাসা জন্মালো?
আমি কী করব এত ভালোবাসা নিয়ে? আপনি তো ভালোই আছেন। তবে কেন আজ এটা, কাল ওটা ঘটিয়ে আমাকে শেষ করে দেন?

কিসের শত্রুতা আপনার সঙ্গে আমার?”
প্রিয়তা নাক টেনে বুক থেকে মাথা তুলে প্রণয়ের মুখের দিকে অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকালো। প্রণয়ের দু’গালে হাত রেখে কপালে পেঁচানো সাদা ব্যান্ডেজে গভীর চুমু খেয়ে বললো—
“আপনাকে হয়তো কোনোদিন বলা হবে না… আপনাকে কতটা ভালোবাসি… কিন্তু বিশ্বাস করুন,
আমার ভালবাসার পরিমাপ করতে গেলে আপনিই তলিয়ে যাবেন এমনকি আমি নিজেও জানিনা আপনাকে কতটা ভালোবাসি তবে..
মনের গভীরে শুধু আপনাকেই অনুভব করি…”
কোন সকালে আপনাকে দেখতে না পেলে সারাটা দিন ছটফট করি।

বলতে বলতে সারা মুখে পাগলের মতো অঝোরে চুমু খেতে লাগলো। চোখের পানি টুপটাপ করে গড়িয়ে পড়তে লাগলো প্রণয়ের চোখেমুখে। প্রিয়তা আবারও প্রণয়ের বুকে লেপ্টে গিয়ে বিড়বিড় করে বললো—
“আপনাকে একটা ছোট্ট মিথ্যে বলেছিলাম বলে আমাকে এত কষ্ট দেবেন? আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, জানেন প্রণয় ভাই… যদি আপনি আমাকে ভুল বুঝেন… দূরে সরিয়ে দেন… তখন কেমন করে বাঁচতাম আমি?
আমি আপনার চোখে ঘৃণা দেখতে চাইনি। আমি আপনাকে মিথ্যে বলতে চাইনি… ওইদিন, ওই লোকটা আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছিল… আমাকে চুমুও খেয়েছে। তবে খারাপ কিছু করেনি। তাও আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম… আপনাকে বলতে পারিনি… আমি…”
বলতে বলতে আবার হুহু করে কেঁদে উঠলো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো—

“Please প্রণয় ভাই… এভাবে নির্লিপ্ত থাকবেন না… Hug me please… প্রণয় ভাই, একটু জড়িয়ে ধরুন আমায়… একটু সান্ত্বনা দিন… খুব কষ্ট হচ্ছে আমার…
একটুখানি বলুন… ‘কাঁদছো কেন, রক্তজবা? আমি তো আছি…’ Please প্রণয় ভাই… Say something…”
“Just hold me for a while, Pronoy bhai… I need a little love, a little peace. I’m hurting a lot. Please, let me rest in your arms for a moment. Just hold me, please.”
প্রণয়ের ঠোঁটে হালকা হাসি দেখা গেল। দুই হাতের ক্যানুলা এক ঝটকায় টেনে খুলে ফেলতেই, হাতের শিরা বেয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল। কিন্তু সে সেসবে পাত্তা দিল না প্রণয়, তার জান, তার কাছে ভালোবাসা চাচ্ছে।
প্রিয়তা যেমনভাবে প্রণয়ের আদর চেয়েছিলো, তার থেকে ও নিবিড়ভাবে সে তার প্রাণপাখিটাকে নিজের বুকে মিশিয়ে নিল।

দুই হাতে জাপটে ধরল তাকে নিজের বুকে। কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করতে থাকা প্রিয়তা হঠাৎ কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে চমকে গেল। মাথা তুলে প্রণয়ের মুখের দিকে তাকাতে চাইলে, প্রণয় দুর্বল কণ্ঠে ধমক দিয়ে বলল,
“একদম লাফালাফি করবি না, না হলে জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলব।”
প্রণয়ের কণ্ঠ কানে আসতেই প্রিয়তার আবার ও হুঁশ হারিয়ে গেল।সে প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠল।
প্রণয় ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আদরমাখা কন্ঠে বলল,
“কাঁদছিস কেনো জান পাখি, আমি তো আছি। কাঁদিস না জান।”
বলতে বলতেই প্রিয়তার চুলে গভীর ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলো। প্রিয় পুরুষের উষ্ণতা আর প্রশ্রয় পেয়ে প্রিয়তার কান্নার বাঁধ আরও ভেঙে গেল।
সে আরও জোরে প্রণয়ের শার্ট খামচে ধরে কেঁদে উঠল। প্রিয়তার চোখের পানিতে প্রণয়ের গলা, বুক, সব ভিজে যাচ্ছে।

প্রণয় প্রিয়তার ছোট্ট দেহটা নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
“I’m sorry, রক্তজবা… আমি খুব sorry… খুব কষ্ট পেয়েছিস, তাই না জান।”
প্রিয়তা কাঁদতে কাঁদতে মাথা উপর নিচ ঝাকালো।
প্রণয় দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
“তোমাকে ভুল বোঝার জন্য আমায় যা শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নেব রক্তজবা… কিন্তু তোমার এমন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখতে প্রণয় শিকদার একবার কেন, হাজার বার ও এমন জীবনের বাজি লাগাতে দু’বার ভাববে না। আমার বিন্দু মাত্র আফসোস নেই এই রক্ত ঝরাতে…

আমার প্রিয় রক্তজবা, আমি ও তোকে খুব, খুব ভালোবাসি জান… অনেক ভালোবাসি। তুই আমার অস্তিত্ব, আমার বেঁচে থাকার কারণ। তোর এক কনা ভাগ ও আমি কাউকে দিতে পারবো না। আমার মাথার ঠিক ছিল না জান, আমি সহ্য করতে পারছিলাম না তুমি ওর সাথে। সত্যি আমি মরে যেতাম। পৃথিবীর সব উলট পালট হয়ে যাক বন্ধু, তুই শুধু আমার হয়ে থাক, তুই শুধুই আমার হয়ে থাক।
আমি তোকে অনেক কষ্ট দেই তাইনা জান কিন্তু কি করবো বল আমি যে অসহায় ভালোবাসলে কষ্ট পেতেই হবে একটু আধটু কলঙ্কের কালি ও গায় মাখাতে হতে পারে ।

ভলোনাসার অমৃত সুধার সাথে যন্ত্রণার হলাহল ও তোকে সহ্য করতে হবে।
ভালোবাসিস যেহেতু ভালোবাসার সাথে সাথে যন্ত্রণার ভাগ ও নিতে হবে।
সব সহ্য করে ও তুই আমাকে এভাবেই ভালোবাসবি তো দূরে যেতে চাইবি না তো
তুই আমার মৃত্যু চেয়েও কাছে তাকিস জান, তবু… ও, দূরে যেতে চাস না বাঁচতে পারব না আমি ।”
প্রণয় দুই হাতে প্রিয়তার পিঠ জড়িয়ে ধরে আবার চোখ বন্ধ করে বড় করে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। বড্ড আরাম লাগছে জানে। প্রিয়তাকে কেদে হালকা হওয়ার সময় দিল।
কেন জানি আজ, প্রিয়তার এই কান্না তাকে একটুও কষ্ট দিচ্ছে না… বরং খুব শান্তি লাহছে লাগছে।
সে কখনো তার রক্তজবার চোখে পানি দেখতে পারে না, কিন্তু আজ তার রক্তজবা তাকে হারানোর ভয়ে কাঁদছে—এটা তার জন্য পরম সুখের।

১০ মিনিট পর প্রিয়তা একটু শান্ত হল, কিন্তু শরীর এখনও থেকে থেকে কেঁপে উঠছে।
প্রণয় ওর মুখ তুলে, নরম গাল মুছে দিয়ে, দুষ্টু হেসে খোঁচা দিয়ে বলল,
“হয়ে গেছে… আর অভিনয় করতে হবে না। এতো ভালোবাসা রাখার যায়গা নেই আমার।
প্রিয়তার কান্না থেমে গেল। চোখ-মুখ ফোলা ফোলা, মেয়েটাকে কেমন রসগোল্লা রসগোল্লা মনে হচ্ছে প্রণয়ের কাছে। সে অভিমানী কণ্ঠে গাল ফুলিয়ে বলল,
— “আমি অভিনয় করছি আপনার সাথে।”
প্রণয় হেসে উঠল। উঠে বসে প্রিয়তার দুই গাল টেনে দিয়ে বলল,
— “তা ছাড়া আবার কী! প্রিয়তার খুব!”
রাগ হলো নিজের উপর — সে নাকি এই মানুষটার জন্য কেঁদে কেটে মরছিল!
সে মুখ বাঁকিয়ে বলল,

— “অকৃতজ্ঞ লোক একটা!”
প্রণয় শব্দ করে হেসে উঠল। প্রিয়তা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল সেই হাসির পানে।
উফ! অসুস্থ মানুষের হাসিও এত সুন্দর হয়!
প্রণয় হাসলে এক গালে টোল পড়ে। টোল পড়া হাসির সাথে অ্যাডামস অ্যাপলটা যখন উঠা-নামা করে, তখন চোখ ফেরাতে পারে না প্রিয়তা। মন চায়, বড়ো একটা হা করে অ্যাডামস অ্যাপলটা খেয়ে ফেলতে! বেহায়া সে, কিছুতেই সেদিক থেকে চোখ সরাতে পারে না।
প্রণয়, প্রিয়তাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

— “এভাবে নজর দিচ্ছিস কেন?”
লজ্জা পেয়ে গেল প্রিয়তা।
কিন্তু হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই চমকে তাকাল প্রণয়ের দিকে।
ভয় আর আতঙ্কে তার গলা শুকিয়ে গেল। হাতের তালু ঘামতে লাগল। আতঙ্কিত হয়ে গুল গুল চোখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে ঢোঁক গিলে ভাবল,
— “প্রণয় ভাই কি আমার বলা সব কথা শুনেছে? আমার করা পাগলামোগুলো কি দেখেছে? প্রণয় ভাই কি আমার মনের কথা বুঝে গেছেন?”
প্রণয়, প্রিয়তাকে হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকাল।
তার চোখের দিকেই তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল, কী হয়েছে।
প্রিয়তা কাঁপা গলায় বলল,

— “প্রণয় ভাই, আমি আসার আগে থেকেই কি আপনি জেগেই ছিলেন?”
প্রিয়তার প্রশ্ন শুনে প্রণয়ের কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল। মুহূর্তেই সে সব বুঝে গেল।
সে প্রিয়তার আতঙ্কিত গোল গোল চোখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
— “না।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল প্রিয়তা।
দৃষ্টি সরাতেই দেখল — প্রণয়ের হাত গড়িয়ে রক্ত পড়ছে!
প্রণয়ের রক্ত দেখতেই জলে উঠল প্রিয়তার হৃদয়। আর্তনাদ করে প্রণয়ের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
— “ব্লিডিং হচ্ছে! ডাক্তার ডেকে আনি!”
বলে দৌড়াতে যাবে, তখনই প্রণয় ওর হাত টেনে ধরল।
প্রিয়তা ঘুরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল।
প্রণয় ওকে একদম নিজের কাছে বসিয়ে দিয়ে বলল,

— “এত তিরিং-বিরিং করিস কেন?”
প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল,
— “তিরিং-বিরিং কই করলাম?”
প্রণয় ওর দুই হাত নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরল।
প্রিয়তা এখনও গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে।
প্রণয় ওর নীল চোখে চেয়ে মনে মনে বলল,
— “বুকা পাখি আমার! তুই কি জানিস, তুই পাশে থাকলে প্রণয় শিকদার মৃত্যুকেও ভয় পায় না!
তুই তো আমার সব রে জান, তুই আমার প্রাণপাখি, তুই আমার জানপাখি।
তোর একটুখানি ছোঁয়া আমার জন্য জীবনদায়ী। একটু কাছে থাক না, এমন করছিস কেনো…”
প্রণয়ের বাদামি চোখের মায়ায় আটকে পড়েছে প্রিয়তা।

ওই দুই চোখে কিছু একটা আছে, যা প্রিয়তাকে খুব করে আকৃষ্ট করে, যা উপেক্ষা করার সাধ্য প্রিয়তার নেই।
তার মনে হচ্ছে, ওই চোখ তাকে কিছু বলছে, কিন্তু সেই ভাষা বুঝার সামর্থ্য তার নেই।
কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে পৃথম, প্রেম আর সদাফ।
সদাফ বলল,
— “এতক্ষণ থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কী? প্রণয়ের কন্ডিশন দেখতে যাব না?”
প্রেম বলল,
— “কন্ডিশন তো রিসেপশনিস্ট বলেই দিয়েছে।”
সদাফ বলল,
— “তবুও একবার চোখের দেখা তো দেখবো!”
হাসলো পৃথম। হেসে বলল,

— “আমরা ভিতরে গিয়ে কী করব? আমাদের যাওয়া না যাওয়ায় বড় দাদনের কিছুই যায় আসে না।
আর আমাদের দেখে তার কোনও লাভও নেই।
কিন্তু যাকে দেখলে আমার ভাই প্রাণ ফিরে পাবে,
যাকে কাছে পেলে আমার ভাই মানসিক শান্তি পাবে,
তাকে ওর জন্য নিয়ে এসেছি।
এতে দুজনেরই ভালো— না হলে দুজনেই ছটফট করতে করতে মরে যাবে।”
সদাফ অবাক হয়ে গেল।
প্রণয় সম্পর্কে এরাও জানে?
প্রেম বলল,

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ২৭

— “বোন ভীষণ ভয় পেয়েছে আরেকটা পেশেন্টের কন্ডিশন শুনে।”
পৃথম বলল,
— “ভালোবাসে যে অনেক।”
প্রেম আবার বলল,
— “এমন কেন হয় ভাই?
যেটা ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব, সেটাই কেন জীবন থেকে হারিয়ে যায়?
কেনই বা আমাদের আপনজনকে প্রতি মুহূর্তে একটু একটু করে শেষ হয়ে যেতে দেখতে হয়?”

ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে পর্ব ২৯