ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৯

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৯
মিথুবুড়ি

‘সড়কগুলোর উপর যানবাহনের শব্দ কমে আসছে। কিন্তু শহরের অসীম আলোয় ভরে উঠেছে চারপাশ। গাড়ির হেডলাইটের রোশনি এবং স্ট্রিট লাইটের মৃদু জ্বলজ্বলে আলো রাস্তা ধরে ছড়িয়ে পরছে রাতের আগমনী বার্তা। উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলোর মাঝে আকাশের রং পরিবর্তন হতে হতে গভীর নীল হয়ে আসছে। কফি শপ, রেস্তোরাঁ, দোকান-পাটগুলোতে মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েই চলেছে । রাস্তার ধারে টুকটাক স্টল থেকে মুখরোচক খাবারের গন্ধ ভেসে আসছে। সেই সাথে সঙ্গীতের মৃদু সুরও মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে। কিছু টুরিস্ট যুবক গিটারে সুর তুলেছে। এলিজাবেথ মুগ্ধ নয়নে পরিতৃপ্তে গান শুনছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে।

চোখে মুগ্ধতা, ঠৌঁটে মিষ্টি হাসি৷ গানের তালে তালে শরীর দোলাতে দোলাতে মৃদু শব্দে তালি বাজাচ্ছে। তাকবীর পাশের একটা স্টল থেকে চা নিয়ে আসে। ধ্যান ভঙ্গ হয় এলিজাবেথের। সৌজন্যেমূলক হাসি দিয়ে তাকবীরের হাত থেকে চায়ের অন-টাইম গ্লাসটা নিল।
‘তাকবীরের ঠৌঁটের কোণায় অমায়িক হাসিবলল,” হাঁটা যাক? ~এলিজাবেথ স্নান হেসে মাথা নাড়ায়। গুটি গুটি পায়ে সামনে এগোতে থাকে যুগলপ্রেম। দু’জনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা। এলিজাবেথ যেন ডুবে আছে সাগরের তলদেশে। দীপ্তিময় অবয়বে অভিব্যক্তি শূন্যের কোঠায়। তাকবীরের নজরে আটকে তা। গলা খাসকি দিয়ে এলিজাবেথের অ্যাটেনশন নিতে চাইল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“উহুম।”
‘স্তম্ভিত ফিরে পেল এলিজাবেথ। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল তাকবীরের দিকে। নিস্তেজ কন্ঠগহ্বর থেকে উচ্চারিত হল,”হুমম ?”
‘চোখজোড়া কিঞ্চিৎ ছোট করল তাকবীর,পরপর বলল, “কি এতো ভাবা হচ্ছে? হুমম! ‘শেষের কথাটা ভ্রু উঁচিয়ে বলল। ফিচলে হাসল এলিজাবেথ। অতঃপর রুষ্ট গলায় আওড়াল,
“এখন কি মনে মনেও কিছু ভাবতে পারব না?”
‘তাকবীর সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যুত্তর করল, “নাহ! তেমনটা নয়। ভাবতে পারবে তবে অতীতের কিছুই না। ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে শুধু।”
‘থেমে, ভাবুক ভঙ্গিমায় কিছুক্ষণ আকাশে চেয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলল, “যেমন, কোনো ব্র্যান্ডের জিনিস বেশি ভালো, নতুন কোন মুভি রিলিজ পেয়েছে, শহরে নতুন রেস্টুরেন্ট কোথায় লঞ্চ করা হয়েছে, কোন সানস্ক্রিন’টা বেশি ভালো হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি।~’ বলে ঠৌঁট কামড়ে হাসতে থাকে তাকবীর। এলিজাবেথ স্নান হেসে তাকায় তাকবীরের পানে। মানুষটা কিভাবে সর্বাক্ষণ তার কথায় ভেবে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ এখতিয়ার থাকা সত্বেও দেখাচ্ছে না কোনো রকম স্বামীর অধিকার। মুক্ত পাখির মতো ছেড়ে রেখেছে তাকে। ঠৌঁট গোল করে ফোঁস নিশ্বাস ছাড়ে এলিজাবেথ।
“অতীতের কথা তো আমিও মনে করতে চায় না। তবে এতো সহজেই কি অতীত আমাদের ছেড়ে দেয়? বিষাক্ত দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনও ঈশান কোণে মেঘ জমে।”

‘কথা শেষ করে লম্বা শ্বাস টানল এলিজাবেথ। থামল তাকবীরের পা, গম্ভীর হলো কণ্ঠস্বর। ফিরে তাকাল এলিজাবেথের দিকে,
“কাঁদা মানে তোমার দুর্বলতা নয়, বরং এটা প্রমাণ যে তোমার অন্তরে অনুভূতি রয়েছে, তুমি জীবিত এবং অনুভব করছো এলোকেশী।”
“ভিতরে জমে থাকা কান্না গুলোকে কি করব তবে?”
‘স্মিত হাসল তাকবীব। অতঃপর উভয় হাতের চায়ের কাপে মৃদু সংঘর্ষ তৈরি করল। এলিজাবেথ চকিতে সরে যায়। ভেবেছিল গরম চা হয়তো গায়ে পড়বে৷ কিন্তু আদৌতেও ভাবান্তর অনুযায়ী কিছুই হয়নি। শোনা যায় তাকবীরের দৃঢ় কণ্ঠস্বর,

“দুঃখকে মনের কোণে জমিয়ে রাখা ঠিক নয়। চায়ের ধোঁয়ার সাথে ওগুলোকে হালকা করে উড়িয়ে দিতে জানতে হয়। তারপর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে নতুন করে বাঁচতে হয়, হাসিতে ভরিয়ে তুলতে হয়। কারণ, দুঃখ পুষে রাখলে মানুষের হৃদয় পাথর হয়ে যায়, চোখের জল শুকিয়ে যায়, আর অনুভূতিগুলো একদিন নিঃশব্দে ঝরে পড়ে—মন থেকে সমস্ত স্নিগ্ধতা মুছে যায় ধীরে ধীরে।”
‘অনড়ভাবে চেয়ে থাকল এলিজাবেথ। সাবলীল গলায় বলে,”আপনাকে এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা কে শিখিয়েছে?”
‘চিলতে হাসে তাকবীর। নিমিষেই পাল্টে গেল কৃষ্ণগহ্বরের রং। চেহারায় বিষন্ন ভাব। দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সুদূর তাঁরাময় আকাশে। স্বরে বহমান মন্থর শিথিলতা,”জীবন শিখিয়েছে।”
‘গোল গোল চোখগুলো ছোট হলো এলিজাবেথের। নেত্রদ্বয়ে চকচকে কৌতুহল লেপ্টে আছে। বলল,
“আপনার জীবনেও ক,,,
‘মুখের কথা কেড়ে নেয় তাকবীর। বিলম্বহীন ভাবে বলতে থাকল,

“আমার ভাঙা হৃদয়ে ঝড় তুলতে তোমার সেই বাঁকা হাসিটুকুই যথেষ্ট। সেই হাসিতেই যেন সমস্ত আবেগ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, আর মন কাঁপতে কাঁপতে ছড়িয়ে পড়ে। বুঝ মেয়ে?”
‘তাকবীরের আবেগময় কথায় চাপা পড়ে গেল এলিজাবেথের কৌতুহল। পূনরায় প্রশ্ন করে,”আপনার ভাঙা হৃদয় বলতে?”
“তোমার কোটের পকেটে ওটা কি এলোকেশী?”
‘কপালে ভাঁজ সংকুচিত হলো। ভ্রু কুঁচকে এলিজাবেথ তাকাল শরীরে চাপিয়ে রাখা ওভার কোটের পকেটে। ছোট কার্ডের মতো দেখতে একটা বস্তু। পেলব হাতে সেটা তুলে নিল এলিজাবেথ। স্পষ্ট আলোতে নিতে দেখতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। চকিতে ফিরে তাকায় তাকবীরের দিকে। তাকবীর ঠৌঁট কামড়ে হাসছে। এলিজাবেথের গলায় জড়তা,
“এ-এটা তো ব্ল্যাক কার্ড।”

” হুম।”
“হুম মানে? এটা আমার কাছে আসল কি করে?”
“হেঁটে হেঁটে। ~ হাসতে থাকে তাকবীর। মেজাজ উত্তপ্ত হয়ে আসে এলিজাবেথের। ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“মজা করবেন না। বলুন।”
‘তাকবীর কয়েক কদম এগিয়ে এসে আড়ষ্ট মেয়েটার পাশে দাঁড়াল। এলিজাবেথের হাতে থাকা কার্ড ওর দু’হাতে ভাঁজের মধ্যে চেপে ধরে কোমল স্বরে শুধালো,
“নিজের মতো বাঁচতে শিখ। নিজ স্বাধীনতায় চলতে শিখ। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি আছি তো।”
‘এলিজাবেথ আবেগী হতে থাকে। কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল। কিছু বলতে যাবে তখনই তাকবীরের ফোন ভাইব্রেট করে উঠল। আজও তারা দু’জনে ম্যাচিং করে ওভার কোট পরেছে। তাকবীর ওভার কোটের পকেট থেকে ফোন বের করে হাতে নিতেই রক্তাভ চেহারায় ক্রোধ উদীয়মান হয়। গোলাকার মসৃণ দ্বীপ্তিময় অবয়বে ফুটে ওঠে আগুনের লেলিহান।

“এলোকেশী একটা ইমারজেন্সি কল। এক মিনিট হুহ?”
‘এলিজাবেথ মাথা নাড়িয়ে সম্মুতি জানায়। তাকবীর এলিজাবেথের নিটক হতে একটু আড়ালে গেল। ক্রোধে কাঁপতে থাকে নাকের পাটা। কল করল সেই অজ্ঞাত নাম্বারে। বরাবরের মতো এইবারও অপর পাশ থেকে সেই একই স্বর। সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। গত দুইদিন যাবতই এমন হয়ে আসছে। অজ্ঞাত নাম্বার থেকে একই মেসেজ বার-বার আসছে। আবার সাথে সাথে কল দিলেই সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয় জানায়। কীবোর্ডে হাত চালালো তাকবীর।
🗣️~ সাধারণ একটা মিনিস্টারের আমেরিকার মতো বড় দেশে চার চারটে বাড়ি। ওয়াও ম্যান ওয়াও। ~
তাকবীর : সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল। আমিও দেখি দম কতো।”
‘মেসেজ পাঠিয়ে তৎক্ষনাৎ তাকবীর অভিব্যক্তি পরিবর্তন করে নিল। পরপর গেল এলিজাবেথের কাছে। কিন্তু সেখানে এলিজাবেথ নেই। ঘাবড়ে যায় তাকবীর। অজানা ভয়ে ভিতরে চাপ দিয়ে ধরে। শ্যামলা কৃষ্ণগহ্বরে উদ্বিগ্নতা আর উৎকণ্ঠা। উন্মাদের মতো এদিকসেদিক খুঁজতে থাকে এলিজাবেথকে।
” এলোকেশী, এলোকেশী, এলোকেশী। ”

‘উম,, উমহু,, ছাড়ুন,,, এলিজাবেথ মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে। শক্ত হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করল কিছুক্ষণ। নাক মুখ চেপে ধরে রাখার কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হতে থাকে ওর মুখশ্রী। শক্ত হাতের চাপে চিবুকে দাগ বসে যায়, ব্যথায় মুখ বিকৃত হয়ে ওঠে। ছাড়া পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ছটফট করতে গিয়ে গাড়ির ধাতব অংশে ধাক্কা খেল এলিজাবেথ । আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটা ব্যথায় টনটন করে উঠলেও থামো না, ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতেই থাকে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করলেও পেরে ওঠে না দানবীয় সেই মানবের সাথে। হঠাৎ করে মুখ থেকে সেই শক্ত হাতটি সরে যায়। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আরেকটি শক্ত হাত এলিজাবেথের হাত নিয়ে চেপে ধরে পিঠের পেছনে। অধিক চাপ প্রয়োগের ফলে মুখ চেপ্টে গিয়ে উইন্ডো মিররের সঙ্গে লেপ্টে যায়। মুষ্টিবদ্ধ হাতে ওর ঢেউখেলানো চুল টেনে ধরা হয়। তখনই কর্কশ কণ্ঠের ভয়ানক স্বর ভেসে আসে—শীতল, কঠোর, এবং তীব্র।

“এই হাতে ছুঁইয়েছে নাহ?”
‘উইন্ডো মিররে অবলোকন হয় রিচার্ডের হিংস্র চেহারা। ক্রোধে মটমট করছে ধারালো চোয়াল। দু’চোখে জ্বলছে অগ্নিকান্ড। ভিতর থেকে শুকিয়ে আসে এলিজাবেথের। শিরদাঁড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়ল শীতল ঘাম। গলায় দলা জমাট বাঁধে। সহসাই বহু কসরতে আওতায়,
” আপনি?”
‘পিঠ পেঁচানো হাতের চাপ আরো দৃঢ় হয়। চুলের মুঠি আরো শক্ত করে চেপে ধরে রিচার্ড। এলিজাবেথের গাল পিষে যেতে থাকে উইন্ডো মিররের সাথে৷ বাঁধ ভাঙে কার্নিশে। চেঁচাল রিচার্ড কর্কশ গলায়,
“তো কি অন্য কাউকে আশা করছিলে ইউ ফা*কিং ডার্ক রেড ?”
‘কেঁপে উঠল এলিজাবেথ সেই কণ্ঠের তেজে। সাউন্ডপ্রুফ গাড়ির বাইরে গেল না রিচার্ডের হুংকার গুলো। জবুথবু করে কাঁপতে থাকে এলিজাবেথ। গালের মাংস হাড্ডির সাথে মিশে যাবে এবার। হাতের হাড়ঁ বোধহয় এবার ভেঙেই যাবে। ব্যাথার শব্দও করতে পারছে না এলিজাবেথ। রিচার্ড প্রতিবারের মতো এবারেও নোংরা বস্তুর মতো ঝাড়ি মেরে ছেড়ে দিল এলিজাবেথের হাত। আর্তনাদ করে উঠে এলিজাবেথ।
“আহহ।”

‘সোজা হয়ে বসতে না বসতে আবারও ধরাশায়ী আক্রমণ। রিচার্ড এলিজাবেথকে একটানে নিজের কোলে বসিয়ে দিল। শক্ত হাতে চেপে ধরে এলিজাবেথের চিবুক। অপর হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল কোমর। বাঁকানো কোমরের পাতলা চামড়া ভেদ করে বিঁধে যায় ধারালো নখ। কাঁদতে থাকে এলিজাবেথ। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না রিচার্ড। সুচারু আকৃতির নাক ঘষতে থাকে ওর গ্রীবাদেশে। ছোটার জন্য ফটফট করছে এলিজাবেথ। খামচে ধরে রিচার্ডের চুল। টেনে সরাতে চাইলো। তবে রিচার্ড নিটল। চেঁচাল এলিজাবেথ,”ছাড়ুন আমাকে।”
‘অবাকের শীর্ষে গিয়ে ছেড়ে দিল রিচার্ড। মুক্তির সুযোগ পেয়ে চকিতে সরে যেতে চাইল এলিজাবেথ। তবে তা এতো সহজে কীভাবে হতে দেয় রিচার্ড ? _ওর এক হাত দিয়ে এখনও পেঁচানো এলিজাবেথের কোমর। শক্ত হাত এলিজাবেথের কোমর পেঁচিয়ে রেখেছে নিজের সাথে, বাঁধা দিচ্ছে এলিজাবেথের প্রতিটি চেষ্টা। অবাধ্য হয় হাতের পথচলা। ভাঁজে ভাঁজে ছুটাছুটি করছে।

নবেম্বরের বৃষ্টির মতো অপ্রত্যাশিত ভাবে বদলে যায় রিচার্ডের স্বর। বৃদ্ধাঙ্গুল রাখল এলিজাবেথের গোলাপি মসৃণ ওষ্টে। ললাটে ললাটের ছোঁয়া৷ মৃদু ঘর্ঘণ। কণ্ঠে কামুকতা,
“আমায় আদর কর রেড।”
‘বিষাদের এক গভীর ছায়া এলিজাবেথের অন্তঃকরণ গ্রাস করে নেয়। রিচার্ডের শরীরের উত্তাপ তার কাছে বিষের মতো ঠেকছে—জ্বালাময়ী, ভারী, এবং অসহ্য। অবাধ্য সেই স্পর্শে এলিজাবেথের শরীর শীতল হয়ে আসে। প্রতিটি স্নায়ু জমে যাচ্ছে তীব্র এক অস্বস্তিতে। মুক্তির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা চালায় এলিজাবেথ। কিন্তু শক্ত হাতে বাঁধা পড়ে থাকায় পারে না, অতঃপর সহসাই নিজের আত্মাকে আরও শক্ত করে ধরে রাখল এলিজাবেথ।
“আপনি একটা কীটের থেকেও নিকৃষ্ট।”

‘গলদেশ হতে মুখ তুলল রিচার্ড। অধর এলিয়ে বাঁকা হাসল এলিজাবেথের কথায়। অনর্থক হেসে চাপা স্বরে এলিজাবেথের কানের লতির অতি নিটকে গিয়ে বলল,
“তোমার জানাতে এখনও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে রেড। আমার সাথে নিকৃষ্ট শব্দটাও যায় না।”
“আমি আর কিছু জানতেও চাই না। মুক্তি চাই আমি! মুক্তি।”
“মুক্তি? কেন! তোমার সো কলড হাসবেন্ডের সাথে থাকার জন্য?”
ছ্যাৎ
ছ্যাৎ
ছ্যাৎ
ছ্যাৎ

“অযথা এমন মানুষের সাথে থেকেই কি হবে যার কোনো অস্তিত্বই থাকবে না তোমার জীবনে।”
‘রিচার্ডের হিংস্র আচরণের কথা মনে হতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ধরে এলিজাবেথের । ভেজা চোখে তাকাল রিচার্ডের দিকে। হাসছে রিচার্ড, ঠৌঁটে বিদঘুটে হাসি। এলিজাবেথ কথা আওড়ায় কান্নায় জড়জড়িত কণ্ঠে,
“মানে কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? দয়া করে ওনার কোনো ক্ষতি করবেন না।”
‘আবারও অবাক করে দিয়ে রিচার্ডের সাবলীল জবাব, ঠান্ডা গলায়,”হ্যাঁ করব না তো। সত্যিই কিছু করব না নিজের হাতে! কিছুই করব না।”
‘রিচার্ডের স্পষ্ট কথাও নতুন এক জটিলতার সূচনা করল। গুটিয়ে যেতে থাকে এলিজাবেথ। বাঁধ ভাঙে কান্নার। “কেন এমন করছেন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার? আমি শান্তিতে বাঁচতে চাই।”
“কে বাঁধা দিয়েছে তাতে?” ‘ রিচার্ডের নিরুদ্বেগ ভাব, নিরুদ্বেগ জবাব।
‘এহেন লাপাত্তা জবাবে সংযম হারায় এলিজাবেথ। দূর্বল চিত্তে চেঁচাল,

“যে অন্যের খুশি ছিনিয়ে নেয়,তার সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কারণ কর্মের ফল অশেষ বিপর্যয় ডেকে আনে।”
“হোক বিপর্যয় কিংবা আর্শীবাদ সবকিছুর অংশীদার তুমিও।”
“আমি যেমনটা চাইছেন তেমনটা কখনোই হবে না।”
‘হুঁশশশশশশ ~ ওষ্ঠপুটের উপর ঠেঁকে পুরুষালি রুক্ষ খসখসে বৃদ্ধাঙ্গুল। রিচার্ডের ঠৌঁটের ফাঁক হতে আগত নিশ্বাস আঁচড়ে পরছে এলিজাবেথের রক্তাভ চেহারায়। গভীর থেকে গভীরতম রিচার্ডের স্বর,
“অ্যাকশন অলওয়েজ স্পিকস লাউডার দ্যান ওয়ার্ড ডার্লিং।”
“আমাকে এসব নোংরা নামে একদম ডাকবেন না।”
“যখন পুরো আমি টা-ই বিরাজ করি তোমার মাঝে, তখন নামে কি এসে যায় বেইবি ?”

‘তৎক্ষনাৎ মিলে গেল দু’টো ঠৌঁটের ভাঁজ। একত্র হয় একে-অপরের শ্বাস-প্রশ্বাস। প্রথমে কোমলতা তারপর কোমলতা ছাড়িয়ে যায় হিংস্রতায়। আচরণ হয় উগ্র। অধিক হয় যন্ত্রণা। রিচার্ডের বুকে অসংখ্য কিল-ঘুষি দিতে থাকে এলিজাবেথ। আঁটকে আসে নিশ্বাস। ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকে এলিজাবেথের শরীর। থেমে যায় হাত-পা ছুটাছুটি। শুকিয়ে গেল চোখের পানি। তবুও অটল রিচার্ড নিজের হিংস্রতার আধিপত্য বিস্তারে। গড়িয়ে গেল কিছু মুহুর্ত। ভালোবাসা নামক নৃশংসতার সমাপ্তি ঘটে বেদনায়।
“ব্যাপারটা দারুণ না রেড, হানিমুন করতে আসছো হাসবেন্ডের সাথে। অথচ,,,,। ~’জোরে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করে এলিজাবেথ। বুকের ভিতর জমে থাকা দুঃখ, অপমান, একাকিত্বতা যা প্রকাশ পায় কেবল চোখের জলে এক অনন্ত বেদনা গড়িয়ে পড়ে বিন্দু বিন্দু কোণায়। যে মরিচীকা থেকে পালাতে চাই সে, কিন্তু সেখানেই পা পিছলে পড়ে যায় বার-বার। আর সেই শ্বাসরুদ্ধকর বেদনা।

“আমি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।”
“রিচার্ড কায়নাত নিজে শান্তি না পেলে কাউকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। হারামি আমার রক্তে।”
‘এলিজাবেথ একই স্বরে হা-হুতাশ করে প্রলাপ পারতে থাকে। অধিক সময় শ্বাস নিতে পারায় কথা ভেজে ভেজে আসছে। সেই সাথে কান্নায় বুজে আসে গলা। ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজে আওড়ায়, “আমি মুক্তি চাই।”
‘রিচার্ডের কাঠকাঠ গলায় বিলম্বহীন জবাব,”সম্ভব নয়।”
‘এলিজাবেথ এই প্রথম বারের মতো পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রিচার্ডের চওড়া তামুকে। রাস্তার সোডিয়াম আলোতে কিছুটা আলোকিত হয় গাড়ির ভিতর। আদৌ আদৌ আলোতে সর্বপ্রথমই অবলোকন হয় রিচার্ডের গালের আক্রমণাত্মক কাটা দাগ। আজকের চাহনিতে ছিল না কোনো ঘৃণা, বিষাদ। ছিল অব্যক্ত কিছু একটা।
“মানুষ তো তাদের জোর করে নিজের সাথে রাখতে চাই, যাদের তারা ভাল,,,,,
‘আকস্মিক ঝড়ের বেগে ছিটকে গিয়ে সিটে পড়ল এলিজাবেথ। কাঁধে আঘাত লাগল গাড়ির ডোরে লেগে। গ্যাংস্টার বস ফিরে গেল তার নিজ বৈশিষ্ট্যে। রং পরিবর্তন হলো সমুদ্র নীল গভীর চোখজোড়ার। হিংস্রের গর্জনে কেঁপে উঠল এলিজাবেথ।

“আমার সাথে এসব যায় না, একদমই না। আমি রিচার্ড কায়নাত। নমনীয়তা, অনুগত্যতা তো একদমই না। আর তুই,,,? ইউ আর নাথিং বাট এ পিস অফ শি*ট টু মি। এ গার্ল হু জাস্ট পিসেস মি অফ। সামওয়ান আই হেট মোর দ্যান এনিথিং।”
‘গলায় দলা কুন্ডলী পাকিয়ে রাজত্ব কায়েম করল কান্না এলিজাবেথের।
“এ-এ এতো ঘৃণা তবুও কেন এতো জোর-জবরদস্তি?”
‘অতর্কিতে কণ্ঠনালী আবারও চেপে ধরল রিচার্ড। তীব্র ক্রোধে দাঁতে দাঁত পিষতে থাকে। এবার একটুও ছটফট করে না এলিজাবেথ। বরংচ অনড়ভাবে চেয়ে থাকে রিচার্ডের ধারালো চিবুকে। গলা ছেড়ে চেঁচাতে থাকল রিচার্ড,
“কারণ এটাই আমার বৈশিষ্ট্যের সাথে পারফেক্ট। তোকে ছিঁনিয়ে এনে আবার খাঁচায় বন্দী করাও আমার হাতের মুঠোয়। কিন্তু করছি না কেন জানিস? _কারণ তোর চোখে সেই আফসোসের ছায়া দেখতে চাই, যেই চোখ আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বাছাই করার সাহস করেছে। নিজের সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনায় জ্বলতে দেখার মজা নিতে চাই আমি। আমার থেকে দূরে গিয়ে শান্তি পাবি, এমনটা সম্ভব নয়। জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে তুই একদিন নিজেই আমার সামনে আত্মসমর্পণ করবি। আমি সুস্থ নই, একটু নয়, পুরোপুরিই সাইকো আমি।”

‘একদমে কথাগুলো বলে থামল রিচার্ড, তবে এতেই পৈশাচিক আত্মা শান্তি পায় না। রিচার্ড পাশের সিট থেকে হাতরে গাড়ির চাবি খুঁজে বের করল। আশাবাদী জিনিসটা পেয়েই ঠৌঁটের কোণায় রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। অতঃপর করে বসল এক ধরাশায়ী কাজ। চাবিতে প্রেস করে ডোর লক খুলল প্রথমে,অতঃপর লম্বাটে পা দিয়ে এক ধাক্কায় খুলে ফেলল ডোর। কোনোরূপ আন্দাজের আগেই এক ধাক্কায় এলিজাবেথ কে ফেলে দিল গাড়ি থেকে। ছিটকে গিয়ে নিচে পড়ল এলিজাবেথ। ভাঁজে ভাঁজে কুঁচকে যায় নাকমুখ যন্ত্রণায়। সহসাই সয়ে নিল সকল ব্যাথা। একটুখানি শব্দ অব্ধি করল না। ওর বেদনার্ত চোখ চেয়ে আছে রিচার্ডের নীল মনিতে। রিচার্ড দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সটানভাবে দাঁড়ায় পড়ন্ত এলিজাবেথের সামনে। ওর চোখে আগুনের মতো দহন, যেন প্রতিটি দৃষ্টিতে শিকার করার পৈশাচিক তৃষ্ণা। স্বরে গভীর, কঠিন, আর শীতল ধ্বনিতে আচ্ছন্ন।
“ইফ ইউ এমবডি বিউটি, আই শ্যাল পার্সনিফাই দ্য মনস্টার।”(যদি তুমি সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি হও, তবে আমি হব দানবের জীবন্ত রূপ।)
‘সাথে সাথে ধুলো উড়িয়ে চলে গেল কালো গাড়িটি। একরকম নিরব যন্ত্রণায়, যেখানে অনুভূতিগুলোর শেষে আঘাত থাকে সবচেয়ে তীব্র। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যখন অবশেষে ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তাতে থাকা প্রত্যাশা, সুখ, ও প্রাপ্তির অবসান ঘটে এক বিষাদময় সত্যে। ভালোবাসা আর নৃশংসতার মধ্যে যে সম্পর্ক, তার শেষ হয় একটি শূন্যতা, যা পুরনো অনুভূতিগুলোকে মুছে ফেলে রেখে যায় কেবল ক্ষত ঠিক সেই দৃষ্টিতে এখনো সামনে তাকিয়ে আছে এলিজাবেথ।

“এলোকেশী, এলোকেশী।”
‘ দূর হতে আকুলতা ভরা স্বরে ডাকতে ডাকতে ছুটে আসে তাকবীর। এসেই হাঁটু মুড়ে বসে এলিজাবেথের পাশে। ওর গভীর চোখজোড়া এলিজাবেথের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে থাকে। অস্থির কণ্ঠস্বর,
“এলোকেশী তুমি এখানে কি করে? আমি কখন থেকে খুঁজছি। জানো তোমাকে না পেয়ে আমার অবস্থা কি হয়েছিল?”
‘নিস্তেজ স্বর এলিজাবেথের,”হাঁটতে হাঁটতে এদিকে চলে এসেছিলাম। পরে আর রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।”
‘সম্পূর্ণ ঘটনা চেপে গেল এলিজাবেথ। তাকবীরের চোখজোড়া রেহাই পেল কাতরতা, অনুভূতিপ্রবণতা থেকে। চোখ কিঞ্চিৎ ছোট করে তাকায় এলিজাবেথের পানে। বলল,”ফোন তো সাথেই ছিল। একটা কল করতে পারতে আমায়।”
‘অযাচিত কারণে বুকজোড়া পুড়ছে এলিজাবেথের। ছটফটিয়ে উঠল,”চলুন না হোটেলে যায়। আমি শরীর খারাপ লাগছে।”

“কিন্তু,,,
” প্লিজ।”
“ওকে উঠো,,, তাকবীরের সাহায্যে উঠে দাঁড়াল এলিজাবেথ। সোডিয়াম লাইটের আলোতে ফুটে উঠল এলিজাবেথের ক্ষীণ অবয়ব। চিন্তার ভাঁজ সংকুচিত হলো তাকবীরের দ্বারে। নজর গেল ওর ঠৌঁটে।
“তোমার ঠৌঁট ফোলা ফোলা লাগছে কেন এলোকেশী?”
‘অজান্তেই এলিজাবেথের হাত চলে গেল ঠোঁটে। অনুভূত হলো তীব্র জ্বালা। কিছুক্ষণ আগের ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি যা তাকে দিচ্ছে । চোখে অস্বস্তি, মনে তীব্র কষ্টের অনুভূতি। আশেপাশের পরিবেশে অদৃশ্য কোনো ভার নেমে আসলো। অন্দরমহল সিক্ত হয়ে উঠে সেই অদ্ভুত, অশান্ত আবহে।
“পোকায় কামড় দিয়েছে হয়তো।”
‘তাকবীর শুধু একপলক তাকাল এলিজাবেথের পানে। প্রত্যুত্তর করল না। হাঁটা দিল হোটেলের উদ্দেশ্য।

“নতুন বছর আসতাছে তো। কি চাস নতুন বছরে?”
“আমাকে ভ’ন্ডামির পথ থেকে ফিরিয়ে আনবে নতুন বছরে এমন একজন দয়ালু মানুষ চাই।”
“শা*লা তোকে একজন কেন দশজনেও ফিরিয়ে আনতে পারবে না। বেশি ন*ষ্ট হয়ে গিয়েছিস।”
“ন**কির পোলা। তুই কোন খেতের মোলা রে?”
” উত্তরবঙ্গের।”
“শা*লা চাপাবাজ। চুরের জাত আমার মুখ খুলাবি না। তুই যে খাটি নোয়াখাইল্লা এটা সবাই জানে।”
“আরে বেডা চুরি বিদ্যা, বড় বিদ্যা। যদি না পড় ধরা।
‘বলে চোখ টিভ মারল গার্ডটি। অপর গার্ডটি চোখ রাঙায়। পাত্তা দেয় কে কাকে? গার্ডটি মুখ বেজার করে চুপসানো গলায় বলল,

“আমি জানি না, কিভাবে আমার জীবন এত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে গেছে!”
“কেন, কি ঘটেছে?”
“আজ আমি দোকান থেকে এসে প্যাকেট খুলে দেখি, পাস্তা আছে, সস নেই!”
‘অপর গার্ড টি ভ্রু জোড়া গুছিয়ে ঠৌঁট কামড়ে হেসে বলে, “প্যাকেট না প্যান্ট?”
‘কাচুমাচু হয়ে জবাব আসে, “আপনারা যা ভালো বুঝেন।”
‘গার্ডটি ফিক করে হেসে দেয়৷ কিছু বলতে যাবে তখনই শোনা যায় কারোর পায়ের শব্দ। শিরদাঁড়া শক্ত হয়ে যায় ওদের। ন্যাসোকে আকস্মিক দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে গেল। কেউই আশা করেনি ন্যাসো এতো জলদি ফিরে আসবে।
“বস আপনি?”

‘নত দৃষ্টি নিবিষ্ট করে গার্ডরা। কোনো এক গুপ্ত কারনে সকলেই ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে৷ ন্যাসো কোনো প্রত্যুত্তর করে না। শক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গমগমে পায়ে বেজমেন্টের ভিতরে যায়। বুক শুকিয়ে আসে সকলের। একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। ন্যাসো নিজেও জানে না সব কাজ ফেলে সবার আগে তাকে বেজমেন্টেই কেন আসতে হলো। সবিতা বেগম’কে খাঁচা থেকে বের করে অন্ধকারে ঘরে আঁটকে রাখা হয়েছে। যেখানে শুধু একটি দরজা, নেই কোনো জানালা। এক বিন্দু আলোর দেখা নেই। তিন বেলা খাবারও দেওয়া হচ্ছে এখন। গার্ডের কাছ থেকে যতটুকু জানতে পেরেছে ন্যাসো প্রথন তিনদিন ইবরাত ঠিকঠাক ভাবে খেলেও দুইদিন ধরে কিছুই মুখে তুলছে না ইবরাত। এটা শোনার পর আর কেন যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারল না ন্যাসো।

‘মেঝেতে ঝিমাচ্ছে ইবরাত। ত্বকে নেই আর সেই লাবণ্য। মায়াবী চোখজোড়ায় নিচে গর্ত, কালো দাগ। ভাসমান গলদেশের হাড্ডি। ইবরাতের এই অবস্থা দেখে অপ্রত্যাশিতভাবে ন্যাসো দূর দাঁড়িয়ে ফোঁস নিশ্বাস ছাড়ল। পরপর ব্যগ্র পায়ে এসে দাঁড়াল ইবরাতের সামনে। কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে দূর্বল চিত্তে মাথা তুলে ইবরাত। ন্যাসো’কে এতোদিন পর দেখতে পেয়েও অভিব্যক্তিতে নেই কোনো পরিবর্তন। দৃষ্টি নত করে আবারও। ন্যাসো খুব অবাক হলো বটে। তার আশা ছিল অন্যরকম। একটু আবেগপ্রবণ, বাচ্চামি, আর একটু,,,,,।
“আবার কি নতুন নাটক শুরু করেছ?খাচ্ছো না কেন?”
‘ইবরাত নিরব,নিঃশব্দ।
“কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না?”

‘এবারও নিশ্চুপ ইবরাত। যেন মুখে কুলু পেটেছে। চিবুক শক্ত হতে থাকে ন্যাসোর। ন্যাসোর পরণে ছিল ডেনিম প্যান্ট আর ব্রাউন কালারের জ্যাকেট। ব্রাউন কালারের জ্যাকেটের সাথে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে অবলীলায় মিলে গিয়েছে ব্রাউন ধাঁচের চোখজোড়া। শক্ত হলো দৃষ্টিভঙ্গি। হাঁটু ভেঙে বসল ইবরাতের সামনে। চিবুক ধরে সোজা উপরে তুলল ইবরাতের মুখ। ইবরাতের পাপড়িজোড়া ভেজা। কম্পিত হচ্ছে শরীর। অস্বাভাবিক লাগতে থাকে সবকিছু ন্যাসোর। হঠাৎ চোখ গেল ইবরাতের গলার পাশটায়। নখের আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট। কিছু কিছু দাগের উপর সিক্ত তাজা রক্ত শুকিয়ে জমাট বেঁধে আছে। অযাচিত কারণেই বুকের ভিতর জ্বলন শুরু হয় ন্যাসোর। চওড়া তামুকের আভা পরিবর্তন হলো। শান্ত গোছের মানবের মুখে ফুটে উঠে অযাচিত ক্ষুব্ধতার ছাপ। ওর তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কে বার্তা জানান দিয়ে দেয়, এখানে কিছু ঘটেছে। যা ঘটার কথা ছিল না। শক্ত হাতে চেপে ধরল ইবরাতের চিবুক। বিজলি চমকানোর মতো গর্জন ন্যাসোর,”সত্যি করে বল কে করেছে?”
‘ন্যাসোর শশব্যস্ত বিদুৎ বেগী চাহনি দেখে আরো বেশি করে কাঁপতে থাকে ইবরাত। ফ্যারফ্যার করে কেঁদে দেয়। অধৈর্য্যের পরিচয় দিল ন্যাসো। আবারও চেঁচাল,
“বল কে ছুঁইয়েছে তোকে?”

‘ইবরাত এই নরকেও যেন একটুকরো ভরসাযোগ্য ঠাঁই পেল। খামচে ধরল ন্যাসোর জ্যাকেট। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। “কোথায় ছিলেন আপনি? আর একটু হলেই আমার সর্বনাশ হয়ে যেত।”
‘ওর কান্না একটুও গায়ে লাগল না ন্যাসোর। ইস্পাতের মতো শক্ত বুক থেকে টেনে ওর মুখ সামনে আনল। উগ্র ভাবে চেঁচাতে থাকে,”আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবি না। বল কে তোকে ছোঁয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে?”
ইবরাত মুখে কিছু বলে না। শুধু কাঁপতে কাঁপতে ভর্য়াত চোখে সামনে তাকায় এক গার্ডের দিকে। ন্যাসো ইবরাতের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল সেই গার্ডের দিকে। যে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে জড়সড় হয়ে। তার পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে। ন্যাসোর চোখেমুখে আবির্ভাব ঘটল ভিতরের ঘুমন্ত সেই নরখাদকের । ঝড়ের বেগে গিয়ে গলা চেপে ধরে গার্ডটির। বাকি গার্ড’রা তটস্থ হয়ে দূরে সরে যায়। এগোনোর সাহস নেই কারোর। ন্যাসো প্রথমেই পায়ে আঘাত করে নিচে ফেলে দেয় গার্ডটিকে। গার্ড নিচে পড়তেই হামলে পড়ে তার উপর। হাঁটু গেঁড়ে বসল গার্ডের বুকের উপর। ন্যাসোর চেহারায় বিকৃত ক্রোধ।

‘ জলে টইটম্বুর করা চোখে ঢুকিয়ে দিল তর্জনী। চোখের কালো মনি গলে ছিটকে কালো তরল এসে পড়ে ন্যাসোর মুখের উপর। হাত-পা ছুঁড়ে ছটফট করতে থাকে গার্ডটি অসহ্যকর যন্ত্রণায়। কিছু মুহুর্তের ব্যবধানে ন্যাসো অপর চোখেও ঢুকিয়ে দিল তর্জনী। এতেই ক্ষান্ত হয় না। সহসা তর্জনী ঘুরতে থাকে ক্ষত-বি/ক্ষত চোখের ভিতর। তাজা রক্তে সিক্ত গার্ডের মুখমন্ডল। গড়িয়ে গড়িয়ে র/ক্ত আর মনির তরল অংশ মেঝেতে পড়তে থাকে। এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে শক্ত-পোক্ত গোছের বাকি গার্ডদেরও গা শিউরে ওঠে। ন্যাসো নিজের কাজে অনড়। ক্রমাগত আরো নৃশংস হতে আচরণ।
“এই চোখ দিয়ে নোংরা দৃষ্টি দিয়েছিলি নাহ?”

‘পকেট থেকে ছোট একটা পকেট নাইফ বের করল ন্যাসো। প্রথম করাঘাত ই হয় বুক পাঁজরের মাঝটায়। এভাবে একের পর এক আঘাত করতেই থাকে ন্যাসো। তাজা রক্তে সিক্ত হয় পুরো মেঝে। চেঁচানোর মতো অবশিষ্ট শক্তিও থাকে না শরীরে গার্ডটির। অসাড় হয়ে আসে সমস্ত শরীর। চোখের সামনে নেমে আসে আঁধার। ফালি ফালি হয়ে যায় বুক। তবুও হিংস্রতা কমে না ন্যাসোর। ফিনকি দিয়ে ছিটকে আসা রক্তে আড়ালে হয়ে যায় ন্যাসোর নিজস্ব গায়ের রং। রক্তের ভিতরে শুধু জ্বলজ্বল করে ন্যাসোর বাদামি চোখজোড়া। চোখে দহন ও আগ্রাসন, আগুন জ্বলছে, দৃষ্টি হয় তীক্ষ্ণ, বেপরোয়া, এবং ধ্বংসাত্মক।

‘চোখের মণি স্থির নয় ন্যাসোর, অস্থিরভাবে চারপাশে কিছু খুঁজতে থাকে। কিছু দূরে একটা বড় পাথর খন্ড দেখতে পেয়ে পৈশা/চিক হাসি দিয়ে সেটির কাছে ছুটে যায়। অধিক ওজনের পাথরটা তুলতে একটু বেগ পোহাতে হলো ন্যাসোর । তবুও সুঠাম দেহের অধিকারী ন্যাসোর তেমন খাটতে হয়নি। আবারও তেড়ে আসলো রক্তাক্ত গার্ডের কাছে। নিস্তেজ দেহ। প্রানপাখি উড়াল দিয়েছে সেই কখনই। ন্যাসের ধ্বংসযজ্ঞের কাছে টিকতে না পারেনি বেশিক্ষণ। সকল গার্ডরা মুখ ফিরিয়ে নেয় আগাম৷ নৃশংস অপ্রীতিকর দৃশ্য দেখে গা গুলাতে থাকে ইবরাতের। দু’হাতে চোখ চেপে ধরে চিৎকার করে উঠল। ন্যাসোর ইবরাতের চিৎকারে চকিতে ওর দিকে ফিরল। পরপর মাথার উপর তুলে রাখা পাথরটি ছুরে মারল মৃত লাশের উপর। থেঁতলে যায় সম্পূর্ণ মুখ। মাথার খু/লি ফেটে মগ/জ গিয়ে ছিটকে পড়ে দূরে। ন্যাসো সেই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখে পৈশাচিক হাসি দিয়ে ইতি টানল আজকের ধ্বংসযজ্ঞের। যেই হাসি তাদের কাছে তৃপ্তিময় হাসি।

‘ইবরাতের আর্তনাদ শুনে ছুটে গেল ওর কাছে। টেনে তুলে সহসা বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। ন্যাসোর গায়ের রক্তে সিক্ত হয় ইবরাতের শরীর। তবুও ছাড়ে না ন্যাসো। ছটফট করতে থাকা ইবরাতকে শক্ত-পোক্ত বুকে চেপে ধরে রাখে। ন্যাসোর বুকের ভিতরের প্রকম্পনে কম্পিত হচ্ছে ইবরাতের শরীরও।হঠাৎ নড়াচড়া থেমে গেল ইবরাতের ৷ ন্যাসো বুঝতে পারে ইবরাত চেতনা হারিয়েছে ৷ তাও ছাড়ল না ন্যাসো। অনুভব করল পৈশাচিক জুড়ে তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা তীব্র ক্রোধ আর হিংস্রতা তলিয়ে যাচ্ছে বৃক্ষপটে বহমান মন্থর শিথিলত এই মেয়ের সংস্পর্শে। হঠাৎই পকেটের অবহেলিত ফোনটি বেজে উঠল।
‘লুকাসের কল। ইবরাতকে কাঠের চৌকিতে শুইয়ে দিয়ে কল রিসিভ করে ন্যাসো। ওপাশ থেকে শোনা যায় লুকাসের অস্থির গলায়,
“লোকা।”

“বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়েছো?”
হুম। ঐদিকের কি অবস্থা?”
“আমরা কালকের ফ্লাইটে ইতালি ব্যাক করছি।”
‘ন্যাসোর ভ্রুজোড়া কুঁচকালো। অবিশ্বাস্য স্বরে আওড়ায়,”বস রাজি হয়েছে তবে?”
“ফাদারের উপর অ্যাটাক হয়েছে ন্যাসো ।”
‘”কিহ ! খুব করে অবাক হয়ে চেঁচাল ন্যাসো। “কার এতো সাহস আর শখ হলো মরার?”
বিদঘুটে হাসি দিল লুকাস, বলল,”সেটাই তো দেখতে যাচ্ছি।”
“ওকে আমি নেক্সট ফ্লাইটেই আসছি।”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৮

“না না একদম না। এই মুহুর্তে তোমার বাংলাদেশে থাকা অনেক দরকার। একটা ব্যাংক একাউন্টকের নাম্বার পাঠিয়েছি দেখ। এক ঘন্টার ভিতর এই একাউন্টের সকল ডিটেইলস লাগবে বসের।
“ওকে”। ~ কল কেটে দেয় ন্যাসো। অচেতন ইবরাতের দিকে একপল তাকিয়ে কাউকে ফোন করতে করতে বেরিয়ে গেল বেজমেন্ট থেকে।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২০