ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৪
মিথুবুড়ি
“ওয়েলকাম ম্যান ওয়েলকাম।”
‘রিচার্ডের এহেন মধুমিশ্রিত টিটকারিময় স্বরে কপালে ভাঁজের দেখা মিলে ডিবানে বসে থাকা ন্যাসো আর লুকাসের। উৎসুক হয়ে সামনে তাকাল দু’জন । দেখতে পেল অফিসার প্রেম ব্যগ্র পায়ে এগিয়ে আসছে। ঠৌঁটের কোণে লেগে আছে বক্র হাসি। রিচার্ড হেড অফিসের চিপ অফ হেড ডেক্স টপে বসে কিছু ফাইল চেক করছিল। উমহু_অধীর অপেক্ষায় ছিল কারোর জন্য । বারো তলায় অবস্থিত চেম্বারের ভিতর কাচের গ্লাস গলিয়ে সোনালী দূত্যি আলোক রশ্মি ছড়াচ্ছে।
‘পুরো কক্ষ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আধুনিকতার নিখুঁত ছোঁয়া ৷ ডেক্সের উপর নানান ধরনের ফাইল এলোমেলো করে ছড়িয়ে রাখা। অর্ধ খাওয়া আপেল খচিত ল্যাপটপে তখনও বাগান বাড়ির প্রতিটা কোণার সিসিটিভি ফুটেজ লাইভে ছিল। বাগান বাড়ির মতো অফিসের দেয়ালেও ড্রাগনের বিশাল আকৃতির একটা পেইন্টিং রয়েছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে রিচার্ড সুবিশাল আকৃতির ড্রাগনের সিংহাসনে বসে আছে। কোনো কথা ছাড়া অফিসার প্রেম এসে পায়ের উপর পা তুলে বসল ডেস্কটপের সামনের চেয়ারে। রিচার্ড প্রেমের এটিটিউড দেখে নিচের ঠৌঁট ঠেলে উপরের ঠৌঁট উঁচিয়ে ভ্রু নাঁচাতে নাঁচাতে বলল,
“ট্রি অর কফি?”
‘প্রেম চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুরো কক্ষ স্ক্যান করছিল। এদিকওদিক তাকাতে তাকাতে চোখ গিয়ে ঠেকল ন্যাসো আর লুকাসের উপর। একজন পূর্নিমা আর একজন অমাবস্যা দেখে ঠৌঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
“ইন্টারেস্টিং।”
‘থেমে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“ক্যাসিনোর মালিক চা কফির অফার করছে ?সো রুড অফ ইউ ম্যান।”
‘ঠৌঁট এলিয়ে হাসল রিচার্ড,”উইস্কি অর ভডকা ?”
“আই থিংক ইট উডন্ট বি এনজয়েবল উইথআউট গার্লস।”
“ডু ইউ প্রেফার বিইং ইন এ ডার্ক রুম অর উইথ লাইটিং?”
‘থমকে গেল প্রেম। ঠৌঁটের কোণের বক্র হাসি গায়েব হয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজের ছাপ ফুটে উঠল। তা দেখে আবারও বাঁকা হাসল রিচার্ড। তবে বরাবরের মতোই তা ছিল অদৃশ্য। ন্যাসোর দিকে তাকাতেই ন্যাসো ব্যগ্র হয়ে এসে রিচার্ডের ডেক্সটপের সামনে দাঁড়ায় মাথা কিছুটা ঝুঁকিয়ে।
“Sistema bene il pacco e preparalo subito”
(পার্সেলটা সুন্দর করে সাজিয়ে রেডি কর এক্ষুনি।)
“স্পিক ইংলিশ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘প্রচন্ড জোরে ডেক্সে থাবা মেরে উঠে দাঁড়িয়ে গেল প্রেম। ক্রোধে গলার নীল রগ গুলো ফুলে ফেপে উঠেছে। তবে সেই তেজ স্থায়ী হলো না বেশিক্ষণ। ন্যাসো আর লুকাস ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে প্রেমের মাথা ডেক্সের সাথে চেপে ধরে। ঘটনা টা এতোই দ্রুত হলো যে নিজেকে প্রতিরক্ষার জন্য কিছুই করতে পারেনি প্রেম। ছুটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে প্রেম। প্রেমের দু-হাত ওদের দু’জনের দখলে। হাত মোচকিয়ে পিঠে চেপে রেখেছে। যতই ছোটার চেষ্টা করে প্রেম ততই তারা হাতের উপর চাপ বাড়ায়। রিচার্ড চেয়ারে গা এলিয়ে শক্ত চিবুকে তাকিয়ে আছে। গুরুগম্ভীর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ মস্তিষ্ক আবারও ফিরে যায় নিজ বৈশিষ্ট্যে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“আমার দিকে হাত বাড়ানো তো দূর, আগে এদের কে অতিক্রম করে নে।”
‘অতঃপর ন্যাসো আর লুকাসের দিকে তাকিয়ে জলদগম্ভীর গলায় বলল ,”লিভ হিম।”
‘ন্যাসো রিচার্ডের কথায় মাথা নাড়িয়ে প্রেমের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে গমগমে পায়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। লুকাস প্রেম কে ছেড়ে দিয়ে গিয়ে দাঁড়াল রিচার্ডের পাশে বুক বেঁধে। লম্বাটে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী পালোয়ানের ন্যায় লুকাসকে পিনপতন নীরবতায় আচ্ছন্ন কক্ষে যমদূতের মতো লাগছে। রুক্ষ, তামুক চেহারার অগ্নিশিখার জ্বলন্ত লাবার অগ্নি বিচ্ছুরিত হতে থাকা দু-চোখ দিয়ে যেন ভস্ম করে দিবে প্রেমকে। প্রেম শরীর ঝাড়া দিয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে। শক্ত চোখে তাকাল রিচার্ডের চোখে। এক জোড়া কালো আঁখিদ্বয় আর নীল আঁখিদ্বয়ের মধ্যে নিরব যুদ্ধ হলো কিছুক্ষণ।
“মন্ত্রীর ছেলেকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস ?”
“পাতালে। পারলে খুঁজে নে।”
‘রিচার্ডের কাঠকাঠ জবাব। তিরতির করে রাগ বাড়তে থাকে প্রেমের। তবে এখন রাগ দেখানোর সময় না। বুদ্ধিমানরা কখনো রাগ দেখিয়ে হাতের কাছে থাকা সুযোগ ক্রোধে দূরে ঠেলে দেওয়ার মতো বোকামি করে না। হঠাৎ করে অদ্ভুত ভাবে হাসল প্রেম। রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে গোলগোল ভাসা ভাসা চোখগুলোকে কিঞ্চিৎ ছোট করে বলে,
“তার মানে স্বীকার করছিস তুই-ই অপহরণ করেছিস মন্ত্রীর ছেলেকে।”
“হ্যাঁ আমিই কিডন্যাপ করেছি, আর সেই মাদারফ*** পি.এ কে আমিই মে/রেছি।”
‘রিচার্ডের চিবিয়ে চিবিয়ে বলা কথাগুলোর বিপরীতে রহস্যময় হাসি দিল প্রেম। কণ্ঠ খাদে নামায়। কথার মধ্যে রস আনে যেন দু’জন বন্ধুর মধ্যে নরমাল কনভারসেশন।
“তারপর মাথা কি করেছিস?”
“চো/খগুলো গলি/য়ে একুরিয়ামে দিয়েছি মাছের খাবার হিসেবে। আর জি/ভ, ঠৌঁ/ট কে/টে সি/দ্ধ করে পোষা বিড়ালকে খাইয়েছি।”
‘প্রেমের মুখভঙ্গি খুবই স্বাভাবিক। এই নৃশংস, ভয়ংকর বর্ণনা গুলো তাকে একটুও বিচলিত করছে না। বরংচ আগ্রহ বাড়ায়, বাড়ে ছটফটানি। অধিক আগ্রহে চেয়ে থাকে রিচার্ডের পানে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তরের আশায়।
“আর মাথার খুলি! সেটা কি করেছিস?”
“ওয়েট,, ‘ বলে রিচার্ড ল্যাপটপ প্রেমের দিকে ঘুরিয়ে দিল৷ ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকাতেই পাথরের মতো পুরুষালি শক্ত হৃদয়ে নাড়া দিয়ে উঠল। ভিতরে ভিতরে শুকনো ঢোক গিললো প্রেম। তবে তা বাইরে প্রকাশ করল না। স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নিল দ্রুত। বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারল না সেই বিধ্বস্ততী দৃশ্যে। মাথার খুলি থেকে তখনও ম/গ/জ চুইয়ে চুই/য়ে পড়ছিল। কুকুরের পায়ে পায়ের সাথে লেপ্টে যাচ্ছিল মগ/জে/র সেই তরল ধাতু। বিধ্বস্ত ভাবে কাঁ/টাছে/ড়া করা হয়েছে মুখের অংশ। চোখ উপ/রে তুলে ফেলা হয়েছিল। নাক মাঝখানে থেকে দু’ভাগ করে কা/টা হয়েছে খুব ধারালো ছু/ড়ি দিয়ে। ঠৌঁটের অংশে যেন কেউ কোদাল দিয়ে কে/টে নিয়েছে মাং/স। খু/লির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা তরল ম/গজ গুলো খাঁচার ভিতর বন্দী হিংস্র কুকুরগুলো খেলার সাথে সাথে লম্বাটে জ্বি/ব দিয়ে চে/টে চে/টে খাচ্ছিল । প্রেম মুখভঙ্গির ছাপ পরিবর্তন করে শক্ত চোখে তাকাল রিচার্ডের দিকে। রিচার্ডের ঠোঁটের প্রতিটা বাঁকা হাসি কাটার মতো বিঁধছে তার শরীরে। রুষ্ট গলায় বলল,
“কি প্রমাণ আছে যে এটা সুলতান কায়েশের খুলি?”
“প্রমাণ তো তোর হাতে ।”
‘আবারও অতর্কিত আক্রমণে ভরকে গেল প্রেম। রিচার্ডের বাক্য শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে লুকাস প্রেমের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। প্রেম রিচার্ডের সুক্ষ্ম বুদ্ধির কারিশমা দেখে অবাক হলো বটে। লুকাস প্রেমের শার্টের পকেটে থাকা বল পেন নিয়ে নিচে ফেলে দানবীয় পা দিয়ে পিষে দিল। পরপর তৎক্ষনাৎ প্রেমের মাথায় গান পয়েন্ট করল। তপ্ত শ্বাস ফেলল প্রেম। এক টুকরো প্রত্যাশার আশা গিয়ে দাঁড়াল শূন্যের কোঠায়। রিচার্ড একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্রেমের থমথমে মুখের দিকে। মুখভঙ্গির কোনো ভাবান্তর নেই, চাহনি খুবই শান্ত। অকস্মাৎ সংযম হারিয়ে হিংস্র প্রাণীর মতো গর্জে উঠল প্রেম।
“কতদিন এভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবি ?তোর শেষ খেলা এবার আমার হাতেই হবে।”
‘ডেস্কটপে থাকা এলোমেলো ফাইল গুলো কিছুটা নড়েচড়ে ওঠে রিচার্ডের অট্টাহাসি থেকে নির্গত হওয়া উপ্তত নিশ্বাসে। বরফ গলিত ঠান্ডা পানির ন্যায় মেজাজ তিরিক্ষি মেজাজে পরিণত হয়। হাসি থামিলে কর্কশ গলায় দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,
“পরবর্তীতে আমার সাথে খেলতে আসার আগে খেলার গুটি কীভাবে চালতে হয় তা শিখে আসিস। নাদান শিশু,,,, ”
‘রিচার্ডের অট্টহাসির ধ্বনি গুলো প্রচন্ড জোরে জোরে করাঘাত করতে থাকে প্রেমের কানে। মস্তিষ্ক, নিউরন,শ্রবণ ইন্দ্রিয় ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে রিচার্ডের বিদঘুটে হাসির শব্দ। রক্ত গরম চোখে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে গেল প্রেম।
প্রেম বেরিয়ে যেতেই হাসি থেমে যায় রিচার্ডের। চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
‘আট বছর আগে স্থাপন হওয়া বাগানবাড়িতে এই প্রথম কোনো মহিলা মেড প্রবেশ করল এবং দ্বিতীয় বারের মতো কোনো নারী পা রাখে রিচার্ডের সেই ঘন ঘুটঘুটে জঙ্গলে অবস্থিত অদ্ভুত বাগানবাড়িতে। চারজন মেড রাখা হয়। সকলের পরণে কালো পোশাক আর মাথায় বিমান বালাদের মতো টুপি। ভয়ে তটস্থ সকলে। ভিতরে পা রাখতেই গা শিউরে ওঠে। ভয়কাতুরে চোখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে থাকল। প্রতিটা ফার্নিচার থেকে শুরু দেয়ালের রং পর্যন্ত কালো। সকলের চোখেমুখে বিস্ময়তা। ভিতরের ডিজাইন দেখে কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে তারা এখানে কাজে আসতে রাজি হয়েছে। সাতদিনে তারা যে টাকা পাবে তা অবশ্য সাত মাসেও পেত না। শুধুমাত্র টাকা নয় তারা বাধ্য হয়েছে এখানে আসার জন্য। গাড়ি যখন লোকালয় ছাড়িয়ে ঘন জঙ্গলের ভিতর ঢুকে তখন থেকেই অজানা আতঙ্ক চেপে ধরে সকলের ভিতর। কিন্তু গার্ডের হাতে থাকা বড় বড় অস্ত্র দেখে কেউ আর মুখ খোলার সাহস পায়নি। ঘন জঙ্গল গলিয়ে যখন বাগানবাড়ির প্রধান ফটকে এসে গাড়ি থামে তখন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও যতোই ভিতরে যাচ্ছে ততোই তাদের ভয় বাড়তে থাকে। ন্যাসো চোখ গরম করে তাকালে যে যায় যায় কাজে লেগে যায়।
‘এলিজাবেথের তখনও জ্ঞান ফিরেনি। শরীর একদম বিছানার সাথে মিশে রয়েছে। রিচার্ড তখন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার পর যেখানে ছিল এখনো সেখানেই। দু’জন মেড কক্ষের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। মেঝেতে একজন নারী ও পুরুষের কাপড় এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, বিছানা অগোছালো। ঠোঁট গোল করে গরম নিশ্বাস ছাড়ে দু’জন। বুঝতে বাকি থাকে না এখানে গত রাতে কারোর উপর পাশবিক নির্যাতন হয়েছে। কোনো অভাগী হয়তো হারিয়েছে নিজের সবথেকে বড় মূল্যবান সম্পদ। বিভৎস দৃশ্য দেখার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে গেল তারা।
‘এলিজাবেথের মুখের উপর থেকে কম্ফর্টার সরাতেই দু’জনের চোখ গোল গোল হয়ে গেল। অবাক দৃষ্টিতে নিমেষহীন চেয়ে থাকল এলিজাবেথের নিস্তেজ মুখশ্রীতে। বিস্মিত চোখে একে অপরের দিকে তাকায়। একজন মেড অবাক চোখে চেয়ে থেকে হাত রাখল বালিশের নিচে জট বেঁধে থাকা এলিজাবেথের লাল চুলে। পরপরই হাত দিয়ে গাল স্পর্শ করল। সেই হাত আবার চোখের সামনে এনে খুবই কাছ থেকে দেখল কোনো কৃত্রিমতা আছে কিনা। রেশামা নামের মেডটি এলিজাবেথ নীল হয়ে যাওয়া অবয়ব দেখে এলিজাবেথের জন্য খুবই মায়া লাগল। তার নিজেরও এলিজাবেথের বয়সী মেয়ে আছে। নিজের মেয়ের কথা ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল রেশমার। এলিজাবেথের বিমোহিত সৌন্দর্যের ধ্যানমগ্ন না হয়ে থেকে কাঁপা কাঁপা হাত নাকের কাছে নিয়ে দেখল শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দু’জনেই।
‘অনেকক্ষণ চোখে পানি দেওয়ার পর পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাল এলিজাবেথ। রেশমা উৎসুক হয়ে এলিজাবেথের উপর ঝুঁকে ছিল। পা নাড়াতে চাইলে ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলে এলিজাবেথ। শরীর বিছানা থেকে আলাদা করতে পারছে না, পেটের নিচের অংশ অনুভূত হচ্ছে না। কম্ফোর্টার তুলে নিজের নগ্ন দেহের দিকে তাকায় এলিজাবেথ। রাতের কথা মনে হতেই ঠুকরে কেঁদে উঠল। দিকশূন্য জ্ঞান হারিয়ে পাশে থাকা রেশমার কোমর জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। মাতৃ মন রেশমার।
‘এলিজাবেথের প্রতিটা আর্তনাদ সোজে গিয়ে বিঁধছে রেশমার বৃক্ষপটে। রেশমা ভিতরের জড়তা দূর করে পেলব হাত দিয়ে এলিজাবেথের লাল চুলের ভাঁজে ভাঁজে বিলি করতে থাকল। এলিজাবেথকে নিজে নিজে শান্ত হবার সময় দিল। সময় দিল নিজের জীবনের এই চিরন্তন সত্যকে মেনে নিতে। গুমোট পরিবেশ এলিজাবেথের কান্না, আহাজারিতে শোকে গেয়ে উঠল। গার্ডের দেওয়া নিদের্শনার কথা মনে হলে নিজেকে শক্ত করে রেশামা। এলিজাবেথকে ছাড়িয়ে সোজা করে বসালো। কম্ফোর্টার দিয়ে শরীর ঢেকে দিল ভালো মতো। তারপরও হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে এলিজাবেথ। এরিমধ্য দু’জন মেড হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ নিয়ে এসে রেখে যায়। শক্ত হয়ে দাঁড়ায় রেশমা। দুর্বোধ্য এলিজাবেথের দিকে তাকিয়ে বলল,”ম্যাম উঠুন আপনাকে ফ্রেস করিয়ে দিচ্ছি।”
‘হঠাৎ এলিজাবেথ রেশমার দু-হাত জাপ্টে ধরল। রেশমা ফিরে তাকাল এলিজাবেথের দিকে। দু’টো খাদযুক্ত দৃষ্টি মিলে গেল। এলিজাবেথ নিভে যাওয়া নিস্তেজ স্বরে আকুতি মিনতি করতে থাকে রেশমার কাছে।
“প্লিজ আমাকে বাঁচান। জানো/য়ার টা আমার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। আমাকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করুন। আমার শরীর থেকে জানো/য়ার টার পারফিউমের স্মেইল আসছে। আমাকে নর/ক যন্ত্র/ণা দিচ্ছে। আমি মরে যাবো, আমাকে বাঁচান।”
“আমরা অপারগ মেডাম । মাফ করবেন।”
“আপনারা এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিবেন না আমার থেকে। জানো/য়ার টা মেরে ফেলবে আমাকে। এভাবে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবেন না।”
‘থেমে,
“ফো ফোন আছে আপনাদের কাছে ? ফোন করব আমার চাচাকে। আমার চাচা এক্ষুনি এসে আমাকে নিয়ে যাবে।”
“আমাদের কারোর কাছেই ফোন নেই ম্যাম।”
“ল্যান্ডলাইন কোথায় আছে আমাকে একটু বলুন। প্লিজ জলদি বলুন শয়তানটা এসে পড়বে।”
“এই বাসায় কোনো ফোন নেই ম্যাম।”
‘কার্নিশ বেয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়তে থাকল এলিজাবেথের। রাতের দৃশ্য গুলো বার বার ভেসে উঠছে চোখের সামনে। যা তীরের ফলার চেয়েও যন্ত্রনাদায়ক এলিজাবেথের কাছে। হঠাৎ করে এলিজাবেথ নিজের শরীরে আঘাত করতে থাকল। চুল টেনে ছিঁড়তে থাকে নিজের। এলিজাবেথের পাগলামো আচরণে ঘাবড়ে যায় মেড’রা। মনে পড়ে যায় ন্যাসোর শক্ত গলায় বলে দেওয়া সতর্কবাণী গুলো। দু’জনেই এগিয়ে গিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে এলিজাবেথকে। এলিজাবেথ কারোর বাঁধা মানে না। আঘাতপ্রাপ্ত জায়গা গুলোতে আঘাত করতে থাকে বার বার। থেঁতলে যাওয়া জায়গায় আবারও আঘাত লাগায় এবার রক্তক্ষরণ হতে থাকে কিছু জায়গা থেকে। শুকনো ঢোক গিলে মেড’রা। শরীরে আর ছিটেফোঁটা শক্তিও অবশিষ্ট থাকল না এলিজাবেথের। আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল। মেড’রা চাদর দিয়ে ঢেকে এলিজাবেথকে বেড থেকে নামায়। নিজেকে শক্ত করে রাখে এলিজাবেথ একটা জড়সড় বস্তুর মতো।
“আমাদের কাজ করতে দেন ম্যাম।”
“দয়াকরে আমাকে বাঁচতে সাহায্য করুন।”
“আমার জানা মতে আপনি নিজ্ব ইচ্ছায় এখানে এসেছেন ম্যাম।”
‘ কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল এলিজাবেথ। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ফ্লোরে। শ্রাবণের সকল মেঘ গুলো এসে জমা হয় এলিজাবেথের চোখের কোণে। কালো মেঘে টইটম্বুর হয়ে ঘোলাটে হয়ে আসলো এলিজাবেথের আখিঁদ্বয়। সত্যিই তো সে তো নিজের ইচ্ছাতে এসেছে এখানে। নিজের হাতে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। কার কাছে অভিযোগ দিবে সে__?কোন মুখে___?
‘আর একটা টু শব্দও করল না এলিজাবেথ। মেড’রা এলিজাবেথকে ধরে ওয়াশরুম নিয়ে ফ্রেস করিয়ে আনে। রেশমা নিজের হাতে খাইয়ে দিল এলিজাবেথকে। বিনা শব্দে চুপচাপ খেয়ে নেয় এলিজাবেথ। রেশমা এলিজাবেথকে খাইয়ে ব্যাথায় ঔষধ দিয়ে চলে যায়। তবে যায় না রেশমা,দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে বরফের মতো জমে যাওয়া এলিজাবেথকে। অনুভব করতে পারছে ভিতরে ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় টা কিভাবে ঘূর্ণিঝড়ে দুমড়ে মুচড়ে উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে শুধু নোনা জল পড়ে। এলিজাবেথ একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে কাচের গ্লাস গলিয়ে বাইরে। আদৌতেও সেই চাহনিতে নেই কোনো প্রাণ। তপ্ত শ্বাস ফেলে চলে যায় রেশমা।
‘মাথায় আইসপ্যাক লাগিয়ে বসে আছে তথ্যমন্ত্রী আনিসুল হক। ছেলের শোকে মুর্ছা যাচ্ছে এমন ভাব।একমাত্র ছেলে সাদমান। পাশের সোফায় বসে আছে অফিসার প্রেম ও তার তিন সহকর্মী। অপজিটে আছে পুলিশ কমিশনার। সকলের কপালে চিন্তার ছাপ। আনিসুল হকের স্ত্রীয়ের অবস্থা এখনও আশংকাজনক। পুলিশ কমিশনার পুরো সোর্স কাজে লাগিয়ে দিলেও এখনও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি সাদমানের। এয়ারপোর্ট রোড সংযুক্ত সকল রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেও সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি। এখানও পর্যন্ত আসেনি মুক্তিপণের জন্য কোনো কল। যা সকলকে খুব ভাবাচ্ছে। প্রেমের কাছে সব কিছু পানির মতো পরিষ্কার হলেও এই মুহুর্তে তার হাত বাঁধা। প্রমাণ ছাড়া তার সকল কথা ভিত্তিহীন আইনের কাছে। আইনের প্রধান শাখা অংশ হলো প্রমাণ, স্বাক্ষী।
‘লিভিং এরিয়ার নিরবতা ভাঙে পুলিশ কমিশনারের কথায়। অনেকক্ষণ পর শুষ্ক ঢোক গিলে কাইকুঁই করে ধরাশায়ী আওয়াজে বললেন,
“আটচল্লিশ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে এখনো মুক্তিপণের জন্য কোনো কল আসেনি। আমার মনে হয় আপনার ছেলে ইচ্ছে করে লুকিয়ে আছে স্যার৷”
‘কমিশনের অদ্ভুত প্রশ্নবানে মাথা থেকে আইসপ্যাক ছুড়ে ফেলে কর্কশ গলায় চেঁচিয়ে উঠল আনিসুল হক,
“কি যা তা বলছেন ?আমার ছেলে লুকিয়ে থাকবে কেন, কিসের কমতি ওর? আমার এই অঢেল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকার সাদমান।ভুলে যাবেন না কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন।”
‘থেমে, নিজেকে কিছুটা সংযত করল আনিসুল হক। কণ্ঠ খাদে নামালো। এবার একজন অসহায় পিতা ভাঙা কন্ঠে আওড়ালো,
“আপনারা দয়া করে আমার ছেলেকে খুঁজে দেন। যতো টাকা লাগে আমি দিব। আমার ছেলের কিছু হলে আমরা কেউ বাঁচব না।”
‘এমনিতেই মেজাজ খুবই চটে ছিল প্রেমের সকালের ঐ ঘটনার জন্য। এখন কমিশনের এমন বোকা বোকা কথা শুনে আরো বিরক্ত হচ্ছে প্রেম। প্রেম উঠে দাঁড়াল চলে যাওয়ার অভিপ্রায়ে। তখনই হঠাৎ ল্যান্ডলাইনে কল আসে। সকলে এলার্ট হয়ে যায় তৎক্ষনাৎ। প্রেম আনিসুল হক কে ইশারা করল কল ধরার জন্য। সকলের সামনে স্পিকারে দিয়ে কল রিসিভ করল আনিসুল হক। গলা কাঁপছে তার।
“হ্যালো।”
“ছেলে চাই ?”
‘চমকে যায় সকলে এহেন আজব কণ্ঠস্বরে। প্রেম বুঝতে পারে ভয়েস চেঞ্জ করে কল করেছে রিচার্ড। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে প্রেমের। বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ধরল আনিসুল হকের। খৈঁয় হারিয়ে তড়িঘড়ি করে বললেন,
“হ্যাঁ হ্যাঁ! আমার ছেলেকে চাই সুস্থ ভাবে। প্লিজ আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করবেন না। কেমন আছে আমার ছেলে?”
“তোর ছেলের ভালো থাকা আমার উপর নির্ভর করছে। আর আমার ভালো মুড নির্ভর করছে তোর কথার উপর।”
‘শুকনো ঢোক গিলল আনিসুল হক,বলল,”কিসের বিনিময়ে আমার ছেলেকে পাবো?”
” টাকা?”
‘প্রেম ধীরে ধীরে নিজের মেজাজ হারাতে থাকে। কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে কমিশনার চোখ রাঙিয়ে থামিয়ে দিল প্রেমকে। দাঁতে দাঁত পিষতে থাকে প্রেম। আনিসুল হক কোনো কিছু না ভেবেই বলে দিল,”কত টাকা?”
“পঞ্চাশ লাখ।”
‘তথ্যমন্ত্রী আনিসুল হক যে খুব সৎ নিষ্ঠাপরায়ন ব্যক্তি তেমনটা নয়। মন্ত্রীত্বের পাশাপাশি দুনীতিতে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আছে। টাকার নেই কোনো কমতি। পাটের ব্যবসার আড়ালে রয়েছে মাদকের ব্যবসা। তবে যার জন্য টাকার পাহাড় গড়ে তোলা সে-ই যদি না থাকে,,,, । এককথায় রাজি হয়ে গেল আনিসুল হক।
“হ হ্যাঁ আমি রাজি।”
”WISE MAN ,,’ওপাশ থেকে শোনা যায় কারোর গলা ফাটিয়ে হাসির শব্দ। বিচ্ছিরি হাসির শব্দে কান চেপে ধরল সকলে। প্রেম এবার আর ধরে রাখতে পারল না নিজেকে। সকালে রিচার্ডের খুনের ভয়ংকর বর্ণনা শুনে মনে ভীতি ঢোকে গিয়েছে। আনিসুল হকের কাছ থেকে ছো মেরে টেলিফোন নিয়ে নেয়।
“কি প্রমাণ আছে সাদমান এখনও জীবিত আছে?”
“প্রমাণ পাঠাচ্ছি।”
‘সাথে সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বুকের মধ্যে হাত চেপে ধরে সোফায় গা এলিয়ে দেয় আনিসুল হোক। চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসছে সবকিছু। চশমার ফাঁক দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে কার্নিশ বেয়ে। কমিশনার বার বার কাকে যেন কল করছে। সকল পুলিশরা কমিশনারের তিরিক্ষি মেজাজের কোবলে পড়ছে দু’দিন যাবত। প্রেমের সহযোগীরা ইতিমধ্যে বেরিয়ে গিয়েছে নাম্বার ট্রেস করার জন্য।
‘এক হাত কোমরে বেঁধে পায়চারি করতে থাকে প্রেম। এতো চেষ্টা করেও কোনো ভাবে হিসেব মেলাতে পারছে না। সকাল থেকে রিচার্ডের ব্যাপারে স্টাডি করে যা জানতে পেরেছে রিচার্ড বাংলাদেশী। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিল। রিচার্ডের পরিবার সম্পর্কে কোনো তথ্যই জোগাড় করতে পারেনি প্রেম। তবে হঠাৎ করে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ইতালির গ্যাংস্টার হয়ে যাওয়ার পিছনের কাহিনি সকলের কাছে অজানা এখনও পর্যন্ত। আট বছরে রিচার্ড আট বার দেশে এসেছে। তাও শুধু দুইদিনের জন্য। আনিসুল হকের হিস্ট্রিও চেক করেছে প্রেম। আনিসুল হকের সাথে কোনো পূর্ব শত্রুতা নেই রিচার্ডের। সবকিছু কেমন ধোঁয়াশা লাগছে প্রমের কাছে। সাদমানের অপহরণের পিছনে মূল উদ্দেশ্য কি__? রিচার্ড যে শুধুমাত্র টাকার জন্য তথ্যমন্ত্রীর ছেলেকে টার্গেট করেছে তা মানতে নারাজ প্রেম। রিচার্ডের নিজেরই অঢেল সম্পত্তি। মুক্তিপণের টাকা রিচার্ডের কালো ব্যবসার একদিনের ইনকাম। ভাবনার মাঝেই হঠাৎ গাড়ির হর্ন শোনা যায়। সকলে তির্যক বেগে সদর দরজার দিকে তাকাল। দেখা যায় বড় একটা ট্রাক। বাইরে থেকে সিকিউরিটি গার্ড দৌঁড়ে ভিতরে আসে।
“স্যার কিডন্যাপার কিছু পাঠিয়েছে ।”
‘আনিসুল হক দাঁড়াতে গিয়েও আবার সোফায় বসে পড়ে। ভয়ে তার ভিতর শুকিয়ে গিয়েছে। কমিশনার গিয়ে আনিসুল হক’কে ধরে ধরে নিয়ে যায়। প্রেম সবার আগে ছুটে গেল। এরিমধ্য ট্রাক ড্রাইবার গায়েব হয়ে গিয়েছে। পুরো ট্রাক খুঁজে কিছুই পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় না গাড়ির কোনো কাগজপত্র। গাড়ির নেইম-প্লেট টিও নকল। ক্রোধে ট্রাকে ঘুষি বসালো প্রেম। দু’হাতে চুল টেনে ধরে চেঁচাতে থাকল। হঠাৎ খেয়ালে আসে ট্রাকের পিছন সাইট চেক করা হয়নি। প্রেম এক লাফে ট্রাকে উঠে ডিঁকি খুলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিরি গন্ধে সকলে নাক চেপে ধরে। প্রেম পকেট থেকে রুমাল বের করে নাক চেপে ধরে সামনে এগিয়ে গেল। প্রেমের সুগভীর, টানটান চোখ বাইরে থেকে দেখতে থাকল ড্রামটিকে। বিশাল আকৃতির একটা ড্রাম, যেটা থেকে ড্রেনের ময়লা আর্বজনার পচা গন্ধ আসছে। কপালের ভাঁজ গুলো গুটিয়ে প্রেম ড্রামের ঢাকনা খুললো। কালো পঁচা নর্দমার মাঝে দেখা যায় একটা অর্ধ গলি/ত কাটা আঙুল। মাং/সা গলে হা/ড্ডি বেরিয়ে এসেছে আঙুল থেকে। প্রেম এক দেখায় আন্দাজ করে নেয় ঘটনা। চোখের সামনে প্রতিফলিত হতে থাকে কেউ খুবই আক্রোশের সাথে কা/টারি দিয়ে টেনে টেনে মাং/স ছি/ড়ে ফালি ফালি করেছে। পরবর্তীতে ফালি ফালি করা ছে/ড়া মাং/স এসিড দিয়ে গলিয়ে দিয়েছে।
‘প্রেম সবকিছু নিজের মতো করে সাজিয়ে ড্রামের মুখ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিল। ফিরে তাকাল নিচে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকা আনিসুল হকের দিকে। আনিসুল হকের ভেজা চোখ দেখে জিনিসটা নিজের মধ্যেই চেপে যায় প্রেম। মাথায় সাজিয়ে নেয় নতুন প্ল্যান। এক লাফে ট্রাক থেকে নেমে সরাসরি আনিসুল হকের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াল।
“চিন্তা করবেন না ট্রাকে কিছু ছিল না। আপনি স্বাভাবিক হোন। শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য এমনটা করা হয়েছে। আমার মনে হয় কিডন্যাপার আবারও কল দিবে।”
‘বলার মধ্যেই আবারও কল আসে ল্যান্ডলাইনে। সকলে ভিতরে ছুটে যায়। এবার কল রিসিভ করে প্রেম। ছোট থেকে এটা তার গড গিফটেড ট্যালেন্ট ছিল। যে কারোর ভয়েস নকল করতে পারে প্রেম।
“ওয়ান্ট মোর ?”
“কোথায় টাকা নিয়ে যেতে হবে?”
“দ্যাট’স মাই বয়।”
“আমার ছেলেকে আমি সুস্থ এবং জীবিত চাই। তাও আজকের মধ্যেই।”
“আমার রাজ্যে আমার ইচ্ছেতে’ই হয় সব কিছু।”
‘ফোঁস নিশ্বাস ছাড়ে প্রেম। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“আচ্ছা কখন? ”
“কাল সকাল দশটা। আগারগাঁও স্টেশন।”
‘বলার সাথে সাথে কল কাট হয়ে যায়। প্রেমের ঠৌঁটের কোণে দেখা মিলে বক্র হাসি। কোনো কথা না বলে প্রেম শিস বাজাতে বাজাতে সদর দরজা পেরিয়ে গিয়ে নিজের বাইকে চড়ে। উদ্দেশ্য আগারগাঁও স্টেশন।
‘রিচার্ডকে দেখামাত্র সকল মেড কিচেনে চলে যায়। ন্যাসোর কড়া নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এটাও ছিল, রিচার্ডের সামনে যেন কোনো মেড না যায়। লম্বা লম্বা পা ফেলে উপরে চলে গেল রিচার্ড। গায়ে তখনও সকালের কালো কোট, আর ভিতরে কালো শার্ট। হাতঘড়ি খুলতে খুলতে বেডরুমের দিকে এগোতে থাকল রিচার্ড। দরজা ভেজানো, ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রিচার্ড লাইট অন করতেই সোয়া থেকে দরফরিয়ে উঠে এলিজাবেথ। সকালের পর থেকে একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে এলিজাবেথ। একটু আগে এসে রেশমা ওকে খাইয়ে দিয়ে গেল। এলিজাবেথ নিঃশব্দে খেয়ে নিয়েছিল। তিনবার ঔষধ খাওয়ার পরও এখনো শরীরের ব্যাথা কমেনি একফোঁটা। শরীরের ব্যাথা লাঘব করা গেলেও মনের ব্যাথা এতো সহজেই কি লাঘব হয়__? দু’চোখের পাতা এক করতে পারে না এলিজাবেথ। চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই ভয়ংকর মুহুর্তগুলো। কিভাবে জানো/য়ারের মতো পাশবিক অত্যা/চার চালিয়ে গিয়েছিল তার উপর সারারাত।
‘এই প্রথম রিচার্ডকে দেখল এলিজাবেথ। দেখল একটা জানো/য়ারকে। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের অধিকারী মানুষ যে এতোটা নৃশংস হতে পারে তা হয়তো এই ভদ্র সমাজের অজানা। মানুষটার চরিত্রের সাথে চেহারার কোনো সাদৃশ্য খুঁজে পেল না এলিজাবেথ। রুক্ষ পুরুষালি তামুক চেহারার অন্তরালে লুকিয়ে আছে এক নর/পিশাচ। ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নেয় এলিজাবেথ। যদিও ভয়ে জবুথবু করে কাঁপছিল গড়ন।
‘রিচার্ডের সুগভীর, নিকষ নীল চোখ গভীরভাবে পরখ করছিল এলিজাবেথ কে। শরীর নেতিয়ে পড়লেও সৌন্দর্য একফোঁটাও কমেনি এই মেয়ের। অপূর্ব সৌন্দর্যে ধাঁধানো এই মেয়ের রূপ। লুকাসের ভাষায় যা আগুন সুন্দরী। রিচার্ড তাকাল এলিজাবেথের এলোমেলো হয়ে থাকা লাল চুলগুলোর দিকে। যা যত্নের অভাব উসকোখুসকো হয়ে আছে। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রিচার্ড। হঠাৎ একটানে গলা থেকে টাই খুলে কাউচে ছুঁড়ে মারে। ধীরে ধীরে ওয়েস্ট কোটের বাটন খুলতে খুলতে এক পা,এক পা করে বেডের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
‘বক্ষপিঞ্জরের মাঝে অবস্থানরত দূর্বার হৃদযন্ত্র অদৃশ্যমান তেজস্বী আশ্বের সঙ্গে যেন দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভুমিকম্পের ন্যায় সম্পূর্ণ শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে এলিজাবেথের। এসির লো ট্যাম্পাচারেও ঘাম ছুটে যায় এলিজাবেথের, রিচার্ডের পায়ের প্রতিটি স্বতঃস্ফূর্ত কদমে। বিস্ফোরিত নয়নজোড়ায় ভাসছে গত রাতের লোমহর্ষক দৃশ্য গুলো। কানের মাঝে বারি খেতে থাকে নিজের প্রতিটা আর্ত/নাদ। আতঙ্কের শীতল ঘামে শরীরে চাপানো পাকিস্তানি থ্রি-পিসের কামিজ গায়ের সাথে আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে যায়। হাত-পা অসাড় হতে থাকে এলিজাবেথের।
‘রিচার্ড খুব কাছে চলে আসে এলিজাবেথের। বিছানায় হাঁটু গেঁড়ে এলিজাবেথের উপর ঝুঁকে। পেলব হাতে ওর কপালের পাশের চুলগুলো কানের লতির ফোঁকরে গুঁজে দিল। রিচার্ডের গরম নিশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে এলিজাবেথের উপর। গা শিউরে উঠল এলিজাবেথের। রির্চাডের শরীর থেকে আসা পারফিউমের ডার্ক স্মেইল যা এখনও এলিজাবেথের শরীরের সাথে লেপ্টে আছে তা আরো দৃঢ় হয় কাছে আসায়। ছয়বার শাওয়ার নিয়েও শরীর থেকে একেবারে মুছে দিতে পারেনি নরপিশাচের শরীরের ঘ্রাণ।
‘আকষ্মিক এলিজাবেথের ধরাশায়ী কান্ডে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় রিচার্ডের। ড্রাগনের ট্যাটু খচিত শক্ত হাতে চেপে ধরে এলিজাবেথের কণ্ঠনালি। অথচ কপাল থেকে যে গড়িয়ে রক্ত ঝড়ছে সেদিনে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অগ্নি বিচ্ছুরিত হওয়া চোখে তাকিয়ে আছে এলিজাবেথের দিকে। নিশ্বাস থমকে গেল এলিজাবেথের। পড়ে গেল হাত থেকে ফুলদানি টা। গলা হতে নির্গত কর্কশ গোঙানির শব্দে দূর্বল গলায় উচ্চারণ করল এলিজাবেথ,
“জানো/য়ার, নরপি/শাচ, অমা/নুষ ছেড়ে দে আমাকে।”
‘হাতে আরো চাপ প্রয়োগ করল রিচার্ড। শ্বাস আঁটকে চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে এলিজাবেথের। রিচার্ড হিংস্র প্রাণীর মতো গর্জে উঠল, কর্কশ গলায় চেঁচাল।
“এই মেয়ে, আমার সাথে একদম উঁচু গলায় কথা বলবি না। জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব, বুঝলি? আমার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে না! আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, টাকা দিয়ে কিনে এনেছি তোকে এখানে। আমার ত্রিশ বছরের জীবনে তুই প্রথম মেয়ে, যাকে আমি ছুঁয়েছি। তুই আমার বৃক্ষপটে খোদাই করা প্রথম মেয়ে। কিন্তু তাই বলে আমার কাছে নমনীয়তা আশা করিস না একদমই। ঘর করার ছেলে আমি নই। তবুও, তোর মুক্তি নেই। তোর শরীরের প্রতিটা লোমকূপ থেকে চোখের জল পর্যন্ত কিনে নিয়েছি আমি। আমার হাতে কোমলতা নয়, গান মানায়। এই রিচার্ড কায়নাতের সকাল শুরু হয় রক্তের স্রোতে হাত ডুবিয়ে। আর রাতের সমাপ্তি ঘটে সেই রক্ত পানিতে ধুয়ে দিয়ে। রক্ত ভালোবাসি আমি, রক্ত! দেখছিস আমার শার্টের কলারের লাল দাগ? এটা কোনো নাইট ক্লাবের ভিড় ঠেলে আসা রমণীদের লিপস্টিকের চিহ্ন নয়। এটা রক্ত! মানুষের তাজা উষ্ণ রক্ত, যা আমার সবচেয়ে প্রিয়।আমি বান্ডিল বান্ডিল টাকার হিসাবে আটকায়, কোনো ছলনাময়ী নারীর ফাঁদে আটকায় না। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?”
” убийца ” (খুনি)
‘এলিজাবেথের গলা ছেড়ে দিল রিচার্ড। গলায় ধরে খুকখুক করে কাশতে থাকল এলিজাবেথ। রিচার্ডের কপালের মধ্যে ভাগ বিভক্ত হয় ভাঁজে ভাঁজে। ছোট ছোট চোখ করে তাকায় এলিজাবেথের দিকে। ঘাড় বাঁকিয়ে শুকনো গলায় বলল,
“ডু ইউ স্পিক রাশিয়ান,রেড?”
“আমি তোর থেকে মুক্তি চাই জানোয়ার। আমি অনেকদূর চলে যাবো। আমার মম ড্যাডের কাছে চলে যাবো আমি, অনেকদূর। এই অভিশপ্ত, স্বার্থপর মানুষদের মধ্যে থাকতে চাই না আমি।”
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩
‘হাঁটুতে মাথা গুঁজে আহাজারি করতে থাকে এলিজাবেথ। এলিজাবেথের মুখ থেকে তুই তুকারি শুনে রিচার্ডের থমকে যাওয়া মস্তিষ্কটা ফিরে গেলো তার চিরাচরিত পৈশা/চিক আত্মায়। হেচকা টানে বেডে ছুড়ে ফেলল এলিজাবেথ কে। ঠৌঁটের কোণে ফুটে উঠেছে পৈশাচিক হাসি। কোনো কথা ছাড়া ই ঝাঁপিয়ে পড়ল এলিজাবেথের উপর। মুহূর্তেই নিজের মাঝে নিয়ে নিল এলিজাবেথকে। ফলাতে থাকে নিজের শক্তি। মাঝে শুধু উচ্চারণ করল গুট গুট কিছু শব্দ।
“I DESPERATELY WANT YOU RED”