ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৯

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৯
মিথুবুড়ি

‘লেডি জেসিকা। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এই নারীর জীবন ছিল একসময় পূর্ণতায় ভরা। কিন্তু প্রকৃতির নির্মমতায় সবকিছু হারায়। পরিবার, পরিজন, স্বপ্ন। বন্যার ক্রূর ঢেউ তার সব কেড়ে নেয়। শুধু একটি জীবন রেখে যায় তার ছেলে। কিন্তু সেই সন্তানও তার থেকে দূরে চলে যায়। মাদকাসক্তির অন্ধকারে ডুবে থাকা ছেলেকে বাঁচাতে হৃদয় ভেঙে জেসিকা নিজেই তাকে আইনের হাতে তুলে দেন সাত বছর আগে। মা হয়েও সেই কঠিন সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হয়েছিল। কারণ ভালোবাসার সত্যিকার রূপ কখনও কখনও ত্যাগে প্রকাশ পায়।
‘একা হয়ে যান তিনি। তবে একাকীত্বকে দুর্বলতার মোড়কে বন্দি করেননি। আশ্রয় খুঁজে নেয় তাকবীরের “আলোছায়া” অনাথ আশ্রমে। দশ বছর ধরে ছোট্ট অনাথ শিশুদের মা হয়ে আছেন। এই আশ্রমের লেডি গভর্নস মিস জেসিকা, যিনি মাতৃত্বের মমতা দিয়ে অগণিত শিশুর জীবনে আলো জ্বালান। তার নিঃস্ব জীবনের গল্প হলেও, অন্যদের জন্য তিনি এক আশার প্রদীপ।

‘এলিজাবেথ এখনও বিস্ময়ে হতবাক। কাল রাতের স্বপ্নগুলো এত ভয়ংকর ছিল যে এখন আর সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, কোনটা বাস্তব আর কোনটা শুধুই মনের বিভ্রম। সকালে তাকবীরকে ফোন করে অঝোরে কান্না করলে তাকবীর লেডি জেসিকাকে পাঠায়। তাকবীর চাইলেও এই মুহূর্তে ছুটে আসতে পারবে না। কারণ সোয়াট অফিসাররা ওর পিছু লেগেছে। প্রতিদিন ওর অফিস, বাড়ি, এবং গোডাউনে অভিযান চালানো হচ্ছে। তার ওপর রিচার্ড তো আছে, বোনাস। যদি তাকবীর এলিজাবেথের কাছে আসে তাহলে রিচার্ড ওকে অনুসরণ করে এলিজাবেথের খবর পেয়ে যেতে পারে। এই বিপদটা কখনোই তাকবীর মেনে নিতে পারবে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘লেডি জেসিকার সাথে এলিজাবেথের আগে থেকেই একটি সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। আশ্রমে বেশ কয়েকবার তাকবীর এলিজাবেথকে নিয়ে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে লেডি জেসিকার উপস্থিতি একটুখানি শান্তির ছোঁয়া এনে দেয় এলিজাবেথের অস্থির হৃদয়ে। লেডি জেসিকার আচরণ ও গেটআপে খ্রিষ্টান নারীদের মতো স্নিগ্ধ ভাব। এলিজাবেথ মেঝেতে বসে আছে, মাথা নিচু। লেডি জেসিকা শান্তভাবে ওর চুলে তেল ম্যাসাজ করে দিচ্ছে।
‘এলিজাবেথের হাতের মুঠোয় ছোট্ট একটা চিরকুট। চিরকুটটি তাকবীর লেডি জেসিকার হাতে দিয়ে পাঠিয়েছিল তার জন্য। এলিজাবেথ চিরকুটের দিকে তাকায় না। চোখ নিচু, মনের ভেতরে কিছু অস্বস্তিকর অনুভূতি। চিরকুটে লেখা:
“দূরত্ব! তো চারটি অক্ষরের একটা শব্দ মাত্র।
তুমি তো থাকো মনের মনিকোঠায়।”

‘রামু দা এসে দুপুরের খাবারের জন্য ডাক দিয়ে গেল। তার নরম কণ্ঠস্বরেও যেন আশ্বস্তির সুর। এলিজাবেথ উঠে দাঁড়াল। হাতে ধরা চিরকুটটায় আরেকবার চোখ বুলিয়ে আলগোছে চিরকুটটা বালিশের নিচে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল খাবার টেবিলের দিকে। হাঁটায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। লেডি জেসিকা এলিজাবেথের পাশের চেয়ারে বসেছে। রামু দা এসে খাবারের প্লেট দুটো তাদের সামনে রেখে গেল। এলিজাবেথ ধীরে প্লেটের ওপর রাখা আরেকটি ঢাকনা সরাতেই থমকে গেল। মুহূর্তেই চিৎকার চাপা দিয়ে দূরে ছিটকে পড়ে। চোখে আতঙ্ক জমে,শ্বাসরুদ্ধকর ভীতিতে নিশ্বাস আটকে আসে।

‘লেডি জেসিকাও শিউরে উঠলেন। তার চোখ প্লেটের দিকে স্থির। স্যুপের বাটির ভেতর একটা কাটা আঙুল! আঙুল থেকে রক্ত এখনও পতিত হচ্ছে। পুরো বাটি রক্তে লাল হয়ে গেছে। ঘরটা কেমন নিস্তব্ধ আতঙ্কে ভরে গেল। লেডি জেসিকা চটজলদি করে সুপের বাটিটা সরিয়ে ফেলল। গলা ছেড়ে রামু দা কে ডাকতে থাকল। তবে রামু দা আসাতেও তেমন ফায়দা হলো না। ভদ্রলোক কথা বলতে পারে না। নিঃশব্দে মাথা নত করে রেখেছে শুধু। লেডি জেসিকা এতো চিৎকার চেঁচামেচি করছে তাও তার মধ্যে কোনো বিভ্রান্তির ছাপ দেখা গেল না।

‘এলিজাবেথের কান যেন কিছু শুনছে না, চোখও কিছু দেখছে না, কেবল মাংসপেশিগুলো ভয়ে কাঁপছে। সে আঙুলটা চিনতে পেরেছে। এক ঝাপটায় মনে পড়ল ছেলেটির কথা। আগের বার ফেসবুক আইডি নষ্ট হওয়ার পর দ্বিতীয় বার আর খুলেনি এলিজাবেথ। তবে এবার কিছুদিন আগে গোপনে খোলা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এলিজাবেথ ছেলেটিকে ফলো করেছিল। ছেলেটি ছিল সোশ্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জার, যার ব্লগগুলো ওর কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। একটা ভিডিওতে ছেলেটির হাতে যে রিংটি ছিল, সেটাই এখন এই মুহুর্তে সুপের বাটির মধ্যে! কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই রিংটি পাঠিয়েছে যেন সতর্কবার্তা দিয়ে গেছে। মাথায় এসব আসতেই এলিজাবেথ দ্রুত টেবিলের কাছে গেল। সুপের বাটির পাশে সাদা একটা চিরকুট পড়ে আছে। এলিজাবেথ করুন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিল চিরকুট। যেখানে গুট গুট অক্ষরে রক্তজবা রঙে তীক্ষ্ণাঘাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ক্রাসের সম্রাজ্য,রক্তাক্ত সংগ্রাম, পৈশাচিক প্রতিরোধ।

“I am watching your every move darling,
and you must understand that
you will never be able to stop a stalker.”
‘যার প্রতিটি পরতে জেদ,নির্ভয়ে উজ্জ্বল এক ম্রিয়মাণ প্রভা,রণক্ষেত্রের গর্জন। ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ পেয়েছে রক্তের লেখাগুলোতে। এলিজাবেথ রক্তহিম বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ তোলপাড় সামলে নিল। অতঃপর রামু দা কে চলে যেতে বলল৷ পরপর লেডি জেসিকাকে খেতে বলে নিজে সাবলীল ভাবে উপরে চলে গেল। বিস্মিত লেডি জেসিকা। পিছন দিয়ে এতো ডাকলো তবুও শুনলো না এলিজাবেথ।

‘রিচার্ডের হাতে মার্লবোরো সিগারেট। মনিটরিং রুমের অন্ধকারে বসে সেই কখন থেকে ধোঁয়া উড়াচ্ছে। পায়ের নিচে পড়ে আছে অসংখ্য টুকরো পোড়া সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ। তবে চোখ নিবদ্ধ শুধুমাত্র স্ক্রিনে। এলিজাবেথ আজ রাতের শাওয়ার নিচ্ছে বেশ দেরিতে। এই বিলম্বে খানিকটা ক্ষিপ্ত হলেও রিচার্ডের মুখে কোনো স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া নেই।
‘বাথরুমের সিসিটিভি ফুটেজ আপাতত বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ পর এলিজাবেথ বেরিয়ে এলো নরম ত্বকে সাদা বাথরোব পেঁচিয়ে। রক্তজবা রঙা চুল থেকে টপটপ গড়িয়ে পড়ছে জল,সেই শীতল স্রোত ছুঁয়ে যাচ্ছে কাঁধের উষ্ণতা। মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসায় এলিজাবেথের শরীর থেকে লাবন্যময় জ্যোতি বের হতে হচ্ছে। সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরটায় যেন নিমিষেই রৌদ্রচ্ছ ছড়িয়ে পড়ল। থমকে যায় রিচার্ডের চোখের পলক। হাত থেকে পড়ে গেল বাকিটুকু সিগারেট। বিমোহিত ভাবে চেয়ে থাকল তার অবাধ্য নারীর দিকে। রিচার্ডের দৃষ্টিতে প্রশ্ন_এমন সৌন্দর্যের সাক্ষী কি বারবার হওয়া সম্ভব?

‘এলিজাবেথ আলতো পা জোড়া ফেলে বেডের কাছে গেল কুটিল হেসে। ঝিনুকের মুক্তোদানার ন্যায় দূত্যি ছড়াচ্ছে ওর সুশ্রী হাসি থেকে। এলিজাবেথ তাকাল কেবিনেটের উপর থাকা ছোট পুতুলটার দিকে, তাকাল সিলিংয়ের উপর। অতঃপর রহস্যময় হাসি তুলে ধরল অধর কোণে। অকস্মাৎ বাথরোবের ফিতেটা খুলে দিল। রিচার্ডের ভ্রুদ্বয় কুঁচকালো। এবার এলিজাবেথ বিস্মিত পর্যায়ে গিয়ে করে বসল এক দৃষ্টি-নন্দন কাজ। শরীর থেকে উষ্ণ উত্তাপ বের হতে থাকে রিচার্ডের, ঘন হয়ে এলো নিশ্বাস। শক্ত করে চেপে ধরল দুই উরু। এলিজাবেথ পেলব হাতে ধরল বাথরোবের কাঁধের কেন্দ্রীক অংশ। অতঃপর উদ্যত হলো খুলে ফেলার জন্য।
‘এলিজাবেথ একটানে বাথরোব’টা কাঁধ থেকে সরিয়ে ফেলল। রিচার্ডের হাত স্ক্রিনের দিকে ছুটে গেল, চাইল থামাতে। মুখ ছিটকে বেরিয়ে এলো,

“ওহ ফা’ক।”
‘কিন্তু কিছু করার আগেই এলিজাবেথ আবারও বাথরোবটি নিজের শরীরে জড়িয়ে নিল। রিচার্ড হতভম্ব। ঠোঁট থেকে বেরিয়ে এলো এক অজান্ত ফোঁস শব্দ, নিশ্বাস ভারী ও দ্রুত।এলিজাবেথের চোখে চূড়ান্ত রহস্যের দৃষ্টি, যা রিচার্ডকে এক মুহূর্তের জন্য পরাজিত ও একই ভাবে মুগ্ধ করে রাখে।
‘এলিজাবেথ গুনগুন করতে লাগল। রিচার্ড থুতনির নিচে হাত ঠেকিয়ে দেখছে গভীর মনোযোগ দিয়ে। এলিজাবেথ এলোমেলো পায়ে হাঁটছে,ওষ্ঠপুটে চঞ্চল হাসি। হঠাৎ থমকে দাঁড়াল, দু’হাত পিছনে নিয়ে কোমরের উপর রাখল। কাঁধ একপাশে হেলাল, পরপর অপর পাশে হেলাল। এভাবে দুলতে দুলতে কণ্ঠ ছেড়ে সুর তুলল।

Mujhe tum chupke chupke
se jab aise dakhti ho
Achchi lagti ho.
kabhi zulfon se kabhi Aanchal se
jab khelti ho,achchi lagti ho.
‘রিচার্ডের ঠোঁটে চাপা হাসির ছায়া। থামানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু চোখের গভীরে এক অন্যরকম উষ্ণতা ফুটে উঠেছে অজান্তেই। এলিজাবেথ যেন এক শিশুর মতো পাগলামি করছিল। পুরো কক্ষ জুড়ে নাচছে আর গাইছে মনের আনন্দে। রিচার্ডের দৃষ্টি আরও গভীর হলো। গ্যাংস্টার বসের সেই কঠিন হৃদয়ে এক ঝলক আবেগ ছুঁয়ে গেল। লজ্জা, বিস্ময়—সব মিলিয়ে এক অনিশ্চিত অভিব্যক্তি। হরহামেশাই হাত চলে গেল থুতনির নিচে। এলিজাবেথ ছুটে গিয়ে টেবিলের উপর রাখা ছোট পুতুলটা তুলে নিল। পুতুলটিকে মুখের কাছে বারবার নিয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে আবার গাইল:

Mujhe dekhke jab tum
Yuh thandi aahein bharte ho,
Achchi lagti ho.
Mujhko jab lagta hai
Tum mujh par hi marte ho,
Achchi lagti ho.
‘রিচার্ডের দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্যও সরেনি এলিজাবেথের ওপর থেকে। এই উন্মুক্ত খুশির ঝর্ণাধারা যেন তার শক্ত-হৃদয়ের মধ্যে এক প্রবল ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। এক চিলতে হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল স্পষ্টত। তবে সেই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হলো না। মুহূর্তেই নিজেকে ফের কঠিন খোলসে মুড়ে নিল রিচার্ড। এটাই তার জন্য সঠিক। এই হাসি ভয়ংকর, এমন ভয়ংকর যা তরুণী হৃদয়ের জন্য ছুরি থেকেও ধারালো।
‘ভাগ্যিস এলিজাবেথ সেই দুঃসহ হাসি দেখতে পায়নি। এটাই বোধহয় তার জন্য মঙ্গল। নাহয় এতো ঘৃণা করত কিভাবে?এলিজাবেথ ক্লান্ত হলো। ধপাস করে গিয়ে শুয়ে পড়ল৷ অকস্মাৎ সিলিংয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গলা ছাড়ল।
“ওহে স্টকার। আমি সমুদ্রের পারে শঙ্খচিলের মাঝে উড়তে চাই। পারবে কি তুমি আমার উড়িয়ে নিয়ে যেতে?”

‘বাতাসের ঝাপটা কানে ভেসে এলো। বড় বড় চাকার কর্কশ শব্দ ঘুমের ওপর হাতুড়ির আঘাত তুলল। ঘাড়ে হালকা ব্যথা অনুভবে ধীরে ধীরে চোখ খুলল। প্রথমেই নজরে এলো নীলচে স্বচ্ছ আকাশ। খানিকক্ষণ অস্পষ্টভাবে তাকিয়ে রইল। তারপর বাম দিকে তাকিয়ে দেখল সাদা আর নীলের মাঝখানে যেন পৃথিবী হারিয়ে গেছে। চারপাশে কোনো দৃশ্যমান ভূমি নেই। ডান দিকে চোখ ফেরাতেই রিচার্ড।
‘রিচার্ডের উপস্থিতি দেখে তেমন অবাক হলো না এলিজাবেথ তবে যেটা দেখে অবাক হলো রিচার্ডের হাতে থাকা হেলিকপ্টারের নিয়ন্ত্রণ। ঠান্ডা, স্থির চোখে রিচার্ড চারপাশে মেঘহীন আকাশের সীমানা চষে বেড়াচ্ছে। এলিজাবেথ কিছু বলতে চাইল কিন্তু শব্দগুলো কণ্ঠে আটকে আসছে। নীরবতায় হেলিকপ্টারের প্রপেলারের একটানা শব্দ ভরাট করছিল তাদের চারপাশ। বাস্তব আর অবাস্তবের মাঝের এই স্তব্ধতাই হয়তো তাদের একসাথে ধরে রেখেছে।
‘এলিজাবেথ এবার নিশ্চিত হলো—স্টকার রিচার্ডই। ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলল। মনে জমে থাকা সন্দেহ এবার সত্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কীভাবে সে রিচার্ডকে আটকাবে? কীভাবে নিজেকে তার থেকে দূরে রাখবে? এই কঠিন প্রশ্নগুলো ভেতরে প্রতিবারের মতোই অশান্ত ঢেউ তোলে।

“আপনি হেলিকপ্টারও চালাতে পারেন?”
‘রিচার্ড ঘুরল না এলিজাবেথের দিকে। নিজ কাজে স্থির থেকে ভারি গলায় বলল,
“পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বাহিনী হলো কমান্ডো ফোর্স। তবুও তাদের প্রশিক্ষণ হয় মাত্র তেরো সপ্তাহ। আর সেই জায়গায় আমি বারো বছর যাবত প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমি কি পারি না—শুধু সেটা জানতে চাও।”
“আপনি ট্রেনিং নিয়েছেন! কিসের ট্রেনিং ?”
“নাথিং। জাস্ট এনজয় দ্য ভিউ।”
‘রিচার্ডের নির্লিপ্ত কণ্ঠে এলিজাবেথ আরও বিস্মিত। ওর চোখ এখনও আটকে আছে রিচার্ডের ট্যাটু-খচিত মসৃণ হাতগুলোতে। অবিশ্বাস্য দক্ষতায় হেলিকপ্টার চালাচ্ছে রিচার্ড।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

‘এলিজাবেথের প্রশ্নে সামান্যতম বিচলিত হলো না রিচার্ড। শুধু বলল, “সমুদ্রে।”
“হুহ!”—কিছুটা হতচকিয়ে গ্লাস পেরিয়ে নিচের দিকে তাকাল এলিজাবেথ। নিচে নীল সমুদ্রের বিস্তৃতি, উতালপাতাল ঢেউ। চোখে ভর করল এক অপার্থিব মোহ, সাথে বিস্ময়ের মুগ্ধতা। পাহাড় আর সমুদ্র এলিজাবেথের চিরকালীন দুর্বলতা।
“এটা কোথায়?”
“সেন্টমার্টিন।”
“কীহ্!”—চমকে উঠে চিৎকার করল এলিজাবেথ। ছোট জায়গার প্রতিধ্বনি ছুটে গিয়ে বিঁধল রিচার্ডের কানে। অবশেষে মাথা ঘোরাল রিচার্ড। চোয়াল শক্ত, ঠোঁটে অমোঘ হুমকি।,,”একদম নিচে ফেলে দেবো, আর একবার জোরে শব্দ করলে।”
‘এলিজাবেথ শুকনো ঢোক গিলল। এই লোক যা বলে তাই করতে পারে। এতে সন্দেহের কোনো জায়গা নেই। নিজের দিকে চোখ যেতেই এলিজাবেথের মনটা আরও ছোট হয়ে গেল। রাতের নাইট স্যুট এখনো গায়ে।
“এটা পরে সমুদ্রে যাবো আমি?”
‘ওর বিষণ্ণ কণ্ঠের জবাবে রিচার্ডের কটাক্ষমাখা সুর, “তুমি কি চাইছিলে ঘুমের মধ্যে আমি তোমার জামা চেঞ্জ করে নিয়ে আসি?”

“অসভ্য! একদম অসভ্য!” মনে মনে গজগজ করতে করতে কয়েকটা রঙিন গালি ছুড়ে দিল এলিজাবেথ। কিন্তু তাতেও মনে শান্তি মিলল না। মুখটা মলিনই থেকে গেল। উলটেপালটে নিজেকে দেখতে লাগল। কুঁচকানো জামা, এলোমেলো চুল, সব মিলিয়ে ওকে খুবই বিচ্ছিরি লাগছে।
“এই অবস্থায় গেলে সবাই আমাকে পাগল ভাববে।
‘রিচার্ডের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে ঠান্ডা হাসি। “চোখের দৃষ্টিতে পড়লে তবে-ই মস্তিষ্ক ব্যাখা তৈরি করে। কেউ দেখবে না তোমাকে। আর যদি দেখেও ফেলে, তবে সেই চোখ তার জ্যোতি হারাবে অকালে।”
‘এলিজাবেথ দমে গেল। আর একটা টু শব্দও করল না। রিচার্ড সেন্টমার্টিনের ছোট্ট একটি দ্বীপে হেলিকপ্টার নামাল। পাখার বাতাসে সাদা বালির কণা ঝিকিমিকি করে উড়ছে। কোনো কথা না বলে রিচার্ড এক লাফে নিচে নেমে গেল। বিপদে পড়ল এলিজাবেথ। সে মাটি থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থান করছে। লাফ দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। বুকের ভেতর ভয় গুমরে উঠছে। তবুও নিজেকে শক্ত করল। নামতে যাবে ঠিক তখনই রিচার্ড নিচ থেকে এক ঝটকায় ওর কোমর চেপে ধরল। এলিজাবেথের চমকে ওঠার সময়ও মিলল না। শক্ত বাহুতে ওকে শূন্যে তুলে নিল রিচার্ড, যেন মেঘের মধ্য দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। অতঃপর মসৃণভাবে ঘূর্ণির মতো নিচে নামিয়ে দিল। অদ্ভুত এক শিহরণ ছড়িয়ে গেল এলিজাবেথের সারা শরীরে। হৃদয়টা খানিক বেসামাল হয়ে উঠল।

‘তবে সেই শিহরণ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। হঠাৎ নজর গেল অদূরের এক ঝাঁক শঙ্খচিলের দিকে। মুহূর্তেই দু-হাত মেলে উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে সেদিকে ছুটে গেল এলিজাবেথ। বাতাসের ঝাপটায় চুড়ো করা চুলগুলো খুলে গিয়ে এলোমেলোভাবে উড়তে লাগল।সাদা-নীলের বিস্তারে যেন এক লাল আগুন জ্বলে উঠল এলিজাবেথের লাল কেশবতী রূপে। রিচার্ড দূর থেকে অনড়ভাবে চেয়ে দাঁড়িয়ে গ্রীবা বাঁকাল, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল পিছন পিছন। সমুদ্রের বাতাসে তার কালো কোটও দুলছে।
‘বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সমুদ্রের উতাল ঢেউয়ের মাঝে নিজের মনের আবেগ মিশিয়ে দিল রিচার্ড। নীরবে কিছু লাইন আবৃত্তি করে,
“লাল চুলে তার আগুন জ্বলে,
দিনে রাতে মন তার পিছু চলে।
সে জানে না, সে আমার প্রাণ,
তার প্রেমে পাগল, হারিয়েছি জ্ঞান।”

‘সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গেই মিলেমিশে গেল এই পঙক্তিগুলো এক গভীর নিস্তব্ধতার সাক্ষী হয়ে। রিচার্ড ধীরে ধীরে এগিয়ে এলিজাবেথের পাশে দাঁড়াল। এলিজাবেথ অন্য এক জগতে হারিয়ে গেছে। বহুদিন পর এমন মুক্ত বাতাসে নিজেকে এভাবে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। চোখ বুজে, হাত ছড়িয়ে, নিজের অজান্তেই আকাশের পানে চেয়ে ঘুরছে এলিজাবেথ। প্রশান্তি অনুভব করছে।
‘রিচার্ডের দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্যও ভঙ্গ হলো না। কোনো কথা বলল না, কোনো বাঁধাও দিল না। বরং তৃষ্ণার্ত চোখে চেয়ে রইল মনমুগ্ধকর দৃষ্টিতে। হঠাৎ চোখ মেলল এলিজাবেথ। মুহূর্তেই রিচার্ড মুখ ফিরিয়ে নিল ধরা পড়ার আগেই নিজেকে আড়াল করে। ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসল এলিজাবেথ। ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশ দেখে নিল। সত্যিই এই সীমানা পর্যন্ত কেউ নেই। মনের আনন্দে, নিজের অজান্তেই, গলা ছেড়ে ডাকল এলিজাবেথ, “টুকি!”
‘রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে ধরল। কিন্তু অভিব্যক্তিতে কিছুই প্রকাশ হতে দিল না। গম্ভীর মুখে ফিরল। চোখের ইশারায় কিছু বলতে যেতেই আবারও “টুকি!” বলে দৌড় দিল এলিজাবেথ সমুদ্রের কিনারা ধরে। কপাল কুঁচকাল রিচার্ড। বিরক্তির সুরে বলল,”এসব আমার দ্বারা সম্ভব নয়।”

“প্লিজ!”
“না বললাম।”
‘এবার এলিজাবেথ পিছন ফিরে বাচ্চাদের মতো মুখ করে আবারও বলল, “টুকি, প্লিজ!”,,’পরে হাসতে হাসতে দৌড় দিল সামনে। কী হলো রিচার্ডের সে নিজেও জানে না। হঠাৎ পা ছুটতে শুরু করল। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন আর বাতাসের তালে এলিজাবেথের পিছু নিল। তাদের চুল, পোশাক বাতাসে উড়ছে, আর অনুভূতি যেন ক্রমশ আরো গভীর হয়ে উঠছে।
‘লম্বা পা ফেলে খুব বেশি সময় লাগল না এলিজাবেথকে ধরতে। হঠাৎই পিছন থেকে এলিজাবেথের কোমর জড়িয়ে ধরল রিচার্ড। শক্ত আর মোলায়েম সেই স্পর্শে এলিজাবেথের ভেতরটা কেঁপে উঠল। তরঙ্গের মতো শিহরণ বয়ে গেল সারা দেহে। রিচার্ডের শক্ত হাত ধরে চেপে ধরল । নিজেকে শূন্যে ভাসতে অনুভব করল। ঘূর্ণির মতো চারপাশে দিগন্ত হারিয়ে যেতে লাগল। ঠোঁটে এক চঞ্চল, মুক্তির হাসি।

‘এই মুহূর্তটা যেন সমুদ্রের বিশালতার মতোই সীমাহীন। রিচার্ডের হৃদয়ের শব্দহীন প্রেমের স্পর্শে এলিজাবেথ নতুন এক জগতে প্রবেশ করল। হঠাৎ ঘূর্ণির মধ্যেই এলিজাবেথের চোখ আটকে গেল রিচার্ডের সমুদ্র-নীল দৃষ্টিতে। থমকে গেল রিচার্ড, থেমে গেল দৃষ্টি। সেই নীল চোখে এক গভীর শুষ্ক মরুভূমির ছোঁয়া। যেখানে মিশে আছে অস্ফুট আবেগের জোয়ার। মুহূর্তটি থেমে রইল এক চিরন্তন নিস্তব্ধতায়।
‘অকস্মাৎ রিচার্ডের হাত আলগা হয়ে গেল। এলিজাবেথের নগ্ন পা নেমে এলো সাদা বালিতে। কিন্তু এই স্থিরতাও টিকল না। হঠাৎই রিচার্ড হেঁচকা টানে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। এলিজাবেথ ভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। কিছু বুঝতে না পেরে সরতে চাইল। তার আগেই রিচার্ডের হাত কোমরে শক্ত হয়ে চেপে বসে গেল। ওকে এতটাই কাছে টেনে নিল যে কোনো ফাঁক ফোঁকর নেই তাদের মাঝে। রিচার্ডের নীল চোখের দৃষ্টিতে আপাতত নেই কোনো হিংস্রতা, নৃশংসতা। আছে শুধু কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা।
‘এলিজাবেথ ছটফর করে পা নড়াতে গেলে রিচার্ড নিজের পা হাঁটু অবধি তুলে ওর পা পেঁচিয়ে ধরল । অপর হাত দিয়ে জাপটে ধরল ওর কোমল গ্রীবা। কোনো আগাম সংকেত ছাড়াই ওষ্ঠে কামড়ে ধরল এক ঝড়ের মতো হঠাৎ বন্য তীব্রতায়।এলিজাবেথের শ্বাস আটকে এলো। চোখ-মুখ কুঁচকে রিচার্ডের কোট খামচে ধরল। নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেও সেই স্পর্শের গভীর আবেগে ডুবে যাচ্ছে। বাতাসের গর্জন আর সমুদ্রের ঢেউগুলোও যেন তাদের এই মুহূর্তকে সাক্ষী রেখে চুপ হয়ে গেল।

“তুমি দূরে ছিলে সময়ও এতটা কষ্ট পেতে হয়নি। যতটা কাছে পেয়েও পেতে হচ্ছে।”
‘কালো সানগ্লাসের আড়ালে লুকানো চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ল সাদা পাঞ্জাবির বুকপকেটে। এই মরণশীল যন্ত্রণার নিস্তব্ধতার সাক্ষী হয়ে থাকতে পারল না আর। দ্রুত পায়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বসল ভেতরে। রেয়ান তাকবীরের মনের অবস্থা অনুভব করতে পেরে কোনো কথা না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে মুহূর্তেই স্থান ত্যাগ করল।
‘রিচার্ড ছিল বরাবরই চতুর,শীতল অথচ তীক্ষ্ণ। রিচার্ড জানত তাকবীর সেন্টমার্টিনে এসেছে অফিসের কাজে। তাই তো সময় বুঝে পরিকল্পনা করেই এই রাস্তায় নিয়ে এসেছে এলিজাবেথকে। কক্সবাজার যাওয়ার সহজ পথ এড়িয়ে তাকবীরকে পোড়ানোর জন্যই এই পথ বেছে নিয়েছিল রিচার্ড।
“সে হাসছে অন্য কারোর সাথে অথচ আমার হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তো তাকে ভালোবাসি তবুও তার খুশিতে আমার এতো কেন হিংসে হচ্ছে?”
‘রেয়ান প্রত্যুত্তর করল না। তার কাছে এর জবাব নেই। তাকবীর ভগ্নহৃদয়ে চেয়ে আছে বাইরে। দৃষ্টি নির্জীব। চোখে চকচকে জল।

“কি ব্যাপার! এটার আবার কি হলো। গান চালু হচ্ছে না কেন।”
‘তাকবীর সামনে তাকাল। রেয়ান বার বার ব্লুটুথে গান বাজাতে চাইছে, তবে হচ্ছে না। ফিচলে হাসল তাকবীর। এটাও বোধহয় ওর মতোই ভিতরে ভিতরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
“ওটার কি প্রয়োজন? আমাকে বললেই তো আমি গান শোনায়।”
“তাহলে তো বেশ ভালো। অনেক দিন আপনার গান শুনি না বস।”
‘বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিল তাকবীর। অতঃপর হাহাকার মেশানো স্বরে সুর তুলল।
‘তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে
আমায় ভীষণ পীড়া দিচ্ছে
বলো কবে ছুঁতে দিবে?
‘তুমি আবার আমার হবে
বলো কোন তারিখে কবে?
আমার একলা একা থাকা
‘একা সৃতি ধরে রাখা
আর পারছি না এভাবে
‘তুমি আবার আমার হবে
বলো কোন তারিখে কবে?

“আপনি জানলেন কিভাবে আমি ঐ জঙ্গলে আছি?”
“পৃথিবীর যেই প্রান্তে-ই তুমি থাকো না কেন, আমি সেখানেই থাকব। কিভাবে জানো? কারণ আমি তোমার ওখানে বসবাস করি।”
‘রিচার্ড এলিজাবেথের বৃক্ষপটের দিকে ইশারা করে বলল। সেখানে হঠাৎই তীব্র চাপ অনুভব করল এলিজাবেথ।
“মানে?”
‘রিচার্ড কোনো উত্তর দিল না। সমুদ্রের দিকে দৃষ্টি স্থির করে বসে রইল। ওরা পাড়ে বসে আছে। রিচার্ডের সমুদ্র-নীল চোখ আটকে আছে ঢেউয়ের ওপারে, আর এলিজাবেথের দৃষ্টি থেমে আছে রিচার্ডের উপর। অকস্মাৎ এলিজাবেথ নীরবতা ভেঙে বলল,

“আপনাকে আজ একটু বর্ণনা করি?”
‘রিচার্ড চমকে তাকাল। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে বিদ্রুপ হাসি এনে বলল, “এতো সৌভাগ্য হলো বুঝি আমার?”
“করি না?”
“ওকে, প্রিন্সেস।”
‘আজ ঘৃণিত দৃষ্টি ছাড়া তাকাল এলিজাবেথ। কোনো জড়তা বিহীন সাবলীলভাবে বলতে থাকল,
“ঘন কালো সিল্কের মতো মসৃণ চুল। চওড়া তামুকের মতো কপাল যেন শক্ত পাথরের তৈরি। সমুদ্র-নীল চোখ, গভীর আর মুগ্ধতার অতল। খাড়া নাক, তীক্ষ্ণ জাও লাইন। গালে কাটা দাগ। থুতনিতে ঢেউয়ের মতো মোলায়েম ভাঙা। ভ্রুদের মাঝে হালকা এক ভাঁজ, যেন চিন্তা আর দৃঢ়তার মিশ্রণ। কালচে ঠোঁট, শক্ত অথচ রহস্যময়। আকর্ষণীয় এডামস অ্যাপেল। তালগাছের মতো লম্বা শরীর, দৈত্যের মতো শক্তিশালী গড়ন। হাত দুটো যেন ডাইনোসরের পাখা। হাতের রগগুলো ফুটন্ত পানির মতো সবসময় টগবগ করে। পায়ের গড়ন এমন যে মনে হয় লোহার রড দিয়ে জোড়া লাগানো। শরীরজুড়ে দলা দলা মাংস৷ হাঁটার স্টাইল এনাকোন্ডার মতো। কণ্ঠ বাজপাখির মতো।”
‘রিচার্ডের অভিব্যক্তি একটুও বদলাল না। শুধু একটু নাক কুঁচকে মৃদু গলায় বলল,”আমার চাঁদটা কি তোমার পছন্দ হয়নি রেড? ওটা নিয়ে কিছু বললে না তো।”

“চাঁদ মানে?”
‘রিচার্ড ঠৌঁট কামড়ে ভ্রু নাচাতে নাচাতে বলল,
“ইউ ডোন্ট নো দ্যাট রেড?মেয়েদের চাঁদের সৌন্দর্য থাকে তাদের ঠোঁটের হাসিতে। কিন্তু আমাদের পুরুষদের চাঁদের মতো কার্যকারিতা থাকে একটু নিচে।”
‘বলে চোখ টিপল রিচার্ড। কথার মানে বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে যায় এলিজাবেথ। সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে ঘুরে যায়।
”এবার আমি করি?”
‘এলিজাবেথ না ঘুরেই বলল, “কি?”
“তোমার স্বর্গ সুখ রূপের বর্ণনা।”

‘এলিজাবেথ উৎসুক চোখে রিচার্ডের দিকে ফিরল। কিছু বলার আগেই রিচার্ড আলতো করে হাত বাড়িয়ে দিল। আঙুলগুলো এলিজাবেথের চুলে ছুঁয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে বলল,”মায়া।”
‘তারপর ছুঁলো কপাল, মৃদু স্বরে আওড়ালো,”মায়া।”
‘ঠোঁটে ছুঁয়ে আরও গভীর হয়ে আওড়ালো,”মায়া।”
‘অতঃপর চোখ, নাক,গাল, সবটুকু স্পর্শ করে রিচার্ডের কণ্ঠে যেন ঝরে পড়ল,”মায়া আর মায়া।”
‘শেষে ওর গভীর নীল চোখ এলিজাবেথের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দৃষ্টিতে জড়িয়ে নিল। পরপর দৃঢ় কণ্ঠে শুধালো,”মায়া, মায়া পুরোটাই মায়া।”

‘ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল এলিজাবেথ। ওকে আরো স্তব্ধ করে দিতে রিচার্ড করে বসল আরেক কান্ড। ওর তব্দা খাওয়া চেহারা দেখে স্মিত হেসে আলতো করে ওর নাক টিপে দিল। এলিজাবেথের ভেতরে যেন ঝড় বয়ে গেল। তনু-মনে এক পুলকের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল। মনে হলো পেটে যেন অজস্র প্রজাপতি একসঙ্গে উড়তে শুরু করেছে। বুকের ভেতর দ্রিম-দ্রিম শব্দ থামছেই না। রিচার্ডও কেমন জানি হয়ে যায় এই মেয়ের সংস্পর্শে এলেই। ওর এলোমেলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করে দিয়ে বিরবির করে আওড়ালো,
“উঠে যাবে চাঁদ আর ফুটে যাবে ফুল।
মিলে দিলে চোখ তুই, খুলে যাবে চুল”
‘এলিজাবেথের চোখে বিষ্ময়কর মুগ্ধতা। অবাক করে বলে,”আপনি গানও গাইতে পারেন? জানেন ভালো মানুষের গানের গলাও আপনার মতো খুব সুন্দর।”
‘চিবুক শক্ত হয়ে এলো রিচার্ডের। গৌড় বর্ণের শিরা উপশিরা গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠল তাৎক্ষণিক। লক্ষ করে এলিজাবেথ ঠৌঁট কামড়ে হেসে ছোট ছোট চোখ করে হিসহিসিয়ে আওড়ালো,”আর ইউ ফিলিং হিংসা মি. কায়নাত।”
“জেলাসি? হুহ! আমার জেলাসি এতো সস্তা না। যাকে তাকে নিয়ে হয় না মাইন ফা°কিং ফুল।”
“ওমা ঐ ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম।”

‘ঝড়ের বেগে ঝাপিয়ে পড়ল রিচার্ড। এলিজাবেথের কণ্ঠনালী ধরে বালির সাথে চেপে ধরল৷ সমুদ্র নীল চোখ দু’টোতে ঘনীভূত হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“এই আল্লাহর বান্দী এই,আমার দিকে তাকা। তোর চোখের মনির সাইজ দেখতে চাই আমি। কত বড় সাহস তুই আমাকে রেখে অন্য কারোর দিকে তাকাচ্ছিস।”
‘ভয় বা কান্না পাওয়ার বদলে ফিক করে হেসে দিল এলিজাবেথ। ভ্রু কুঁচকালো রিচার্ড। আশপাশ তাকিয়ে দেখল দৃষ্টি সীমানার ভিতর কেউ নেই। সবটা বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। এলিজাবেথ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

“এইমাত্র না বললেন আপনি জেলাস নাহ?”
‘উত্তর দেয় না রিচার্ড। ক্রোধে পায়ের গতি বাড়ায়। এলিজাবেথ ছুটল পিছু পিছু।
“দু’টি দৃশ্য আমাকে খুব চমকে দেবে। পাশাপাশি হয়তো খানিকটা আনন্দেও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।”
১। আপনার মুখে হাসি।
২। আপনাকে কালো ব্যতিত অন্য পোশাকে দেখা।
‘রিচার্ড থেমে গেল। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভারী কণ্ঠে বলল,
“কাউকে খুশি করার জন্য রিচার্ড কায়নাত কখনো মিথ্যে বা ছলনার আশ্রয় নেয় না।”
‘এলিজাবেথ জেদি স্বরে বলে,”আপনি সবসময় এমন ভিলেনের ভাব নিয়ে থাকেন কেন?”
‘রিচার্ড বাঁকা হাসল,”বিকজ আ’ম।”
“সবাই তো হিরো হতে চাই৷ আপনি ভিলেন হতে গেলেন কেন?”
‘মুহূর্তেই রিচার্ডের চোখে আগুন জ্বলে উঠল। কণ্ঠে চাপা ক্ষোভ।
“Because villains are not born, they are made.”
“কি ছিল আপনার বিষাক্ত অতীতে, যে এই পথ বেছে নিলেন।”
“চাপা জিনিস চাপা থাকতে দে এলি জান। উপরে উঠে আসলে সহ্য করতে পারবি না। এই হৃদয়টা পাথরের মতো শক্ত এমনি এমনি হয়নি।”

“জানতে চাই আমি আপনার অতীত। প্লিজ এড়িয়ে যাবেন না।”
‘রিচার্ড রক্ত গরম চোখে তাকাল এলিজাবেথের দিকে। এলিজাবেথ দমলো না।,”কিসের এতো ভয় আপনার মুখ খুলতে?”
‘চিৎকার করে উঠল রিচার্ড,”আমার ভয় আমার দূর্বলতা। আমি চাই না কেউ জানুক আমি দূর্বল। সবাই শুধু জানুক আমি অমানুষ, পাথরের মতো শক্ত। হৃদয় নেই আমার। কীটের থেকেও নিকৃষ্ট আমি। কখনো প্রকাশ্যে না আসুক আমার দূর্বলতা, আমার অতীত। যেদিন আসবে সেদিন থেকে নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকবো আমি।”
“আমি জানতে চাই।”
‘এলিজাবেথের কথা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে গেল রিচার্ড। উল্টে স্বর পাল্টে চোখ টিপে বলল,
“ওয়েদার জোস। ঐ ঝোপটায় গেলে হয় না?”
‘গমগমে স্বর ভেসে এলো,”আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক।” একই ভাবে গমগমে পায়ে উল্টো পথে হাঁটা ধরল। রিচার্ড ঠৌঁট কামড়ে হাসি চেপে পিছু নিল।

“রেড স্টপ।”
‘থামে না এলিজাবেথ। রাগে গিজগিজ করছে।
“আই সেইড স্টপ ইউ ফা°কিং রেড।”
“বাহ রক্ষিতার জন্য দেখছি হেব্বি টান।”
‘কর্ণপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিচার্ড ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে প্রথমেই এলিজাবেথ’কে বুকের সাথে চেপে ধরল৷ মৌমাছির মতো ঝেঁকে ধরেছে ওদের কতগুলো ঘাতক প্রহরী চারদিক থেকে৷ সকলের হাতে অস্ত্র, তাক করে আছে ওদের দিকে৷ রিচার্ড রক্তগরম চোখে তাকায় ওদের দিকে। সকলের ঠৌঁটে বিচ্ছিরি হাসি৷ এলিজাবেথের গাঁ ঘিনঘিন করছে। ভয়ে লেপ্টে আছে পাথরের মতো শক্ত বৃক্ষপটে।
“তোদের বাপ কাদের পাঠিয়েছে?”
‘রিচার্ডের কথায় খুবই মজা নিয়ে হাসল একজন। এলিজাবেথের দিকে কুদৃষ্টি দিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,”হুম! ভাগ্যিস এসেছিলাম। নাহয় এই নাজুক সৌন্দর্যের রাজসাক্ষী হতাম কিভাবে?”
‘ভয়ার্ত কম্পনে প্রকম্পিত আড়ষ্ট মেয়েটাকে পাঁজরের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরল রিচার্ড। চোখে জ্বলে ওঠা অগ্নিগর্ভ, কণ্ঠে গর্জনমুখর চিৎকার,

“তোরা আন্দাজও করতে পারছিস না, কথাটা বলে নিজেদের জন্য ঠিক কতোটা ভয়াবহ মৃত্যু ডেকে নিয়ে এসেছিস।”
“মরবি তো এখন তুই। তারপর এই সুন্দরীর সৌন্দর্য উপভোগ করব আমরা সবাই।”
“আমার নামে দলিলকৃত সৌন্দর্যের আকাঙ্খা করা তো দূর চোখ তোলাও মহাপাপ। যে-ই সৌন্দর্য আমার জন্য ধার্য, তা রক্ষা করাও আমার জন্য অনিবার্য।”

‘প্রলয়ের আগামী বার্তার বিপরীতে শিকারীদের নির্মম দৃষ্টি। প্রচন্ড প্রতিশোধস্পৃহা কণ্ঠে চেঁচিয়ে বিস্ফোরণের ধ্বংসস্পৃহা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিল রিচার্ড। অতঃপর তীক্ষ্ণঘাতে পিছন দিয়ে এলিজাবেথের হাঁটুর জয়েন্ট বরাবর আঘাত করল। সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে পড়ল এলিজাবেথ। তৎক্ষনাৎ শুরু হয় রণক্ষেত্রের গর্জন,বাতাসে বাসতে থাকে বিস্ফোরণের আওয়াজ। নিস্তব্ধ মৃত্যুঘন্টার মতো রিচার্ড আততায়ী পরিকল্পনা মাফিক কোটের অন্তরালে আচ্ছাদিত দুই পকেট থেকে গান বের করে নির্ভুল নিশানায় পরম আঘাত হানতে থাকে সকলের উপর। অতর্কিত আক্রমণের আতঙ্কিত প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই বুলেটের ঝাঁঝ গিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেয় তাদের অভ্যন্তর।
‘অমোঘ বিধ্বংসীর নির্ভীক প্রতিরোধে নরকযন্ত্রণার আর্তনাদে লুটিয়ে পড়তে থাকে একে একে ঘাতক প্রহরী৷ চারিপাশে শুধু বেদনার কণ্টকময় সুর আর ছিন্নভিন্ন ধ্বনি। কমে এসেছে শত্রু সংখ্যা তবুও রিচার্ডের চোখে আগুনের বৃত্ত। ধ্বংসের প্রলেপ এখনো তার হাতে৷ এবার বাকি রইল শুধু সেই লোকটা, যে এলিজাবেথ কে নিয়ে বাজে কথা বলেছিল। হাত থেকে গান ফেলে দিল রিচার্ড। বালির সাথে চেপে ধরে বুকে হাঁটু গেঁড়ে বসে ক্ষোভপূর্ণ বিদুৎবেগে আক্রমণ করতে থাকে একের পর এক। রক্তে সিক্ত হয় সাদা বালি।
‘লোকটা গলা হতে নির্গত কর্কশ গোঙানির শব্দে দূর্বল গলায় উচ্চারণ করল,”শা°লা সামান্য একটা রক্ষিতার জন্য এতো লড়াই।”

‘সাইরেনের হুংকারের মতো হুংকার দিয়ে কাঁপন ধরালো তান্ডবীয় স্বরে চিৎকার করে উঠল রিচার্ড,”বউ হয় আমার।”
‘আর এক মুহুর্তও সময় নিল না রিচার্ড। ভয়ানক মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিল লোকটাকে। হাত থেকে ঝড়া রক্ত ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতেই সম্মুখীন হতে হলো এলিজাবেথের নিস্তব্ধ বিস্মিত ভেজা দৃষ্টিতে। ঠাসিয়ে এক থাবা বসালো চোয়ালে। কানের পাশটায় ভোঁ ভোঁ করে উঠল৷ সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়লো এলিজাবেথ। তবে বালি তাকে স্পর্শ করতে পারল না।

‘চেতনা ফিরতেই নিজেকে নরম তুলতুলে বিছানায় অনুভব করল এলিজাবেথ। মস্তিষ্ক সজাক হতেই তখনের মারামারির কথা মনে পড়ে গেল। দরদরিয়ে উঠতে চাইল৷ তবে একটা শক্ত হাত ওকে আবারও চেপে বিছানায় শুইয়ে দিল। এলিজাবেথ চকিতে সামনে তাকাল। দেখতে পেল রিচার্ড’কে৷ চোখের দৃষ্টি এখনও স্পষ্ট হয়নি। তখন চড়ের তোড়’টা এতোটাই মারাত্মক ছিল যে এখনও কানের পাশে ভোঁ ভোঁ করছে। এলিজাবেথ আশপাশ তাকাল, না সে ফার্মহাউজে ই আছে৷
“আপনি কেন আমাকে এভাবে স্টক করছেন?”
“এসব সিলি জিনিস রিচার্ড কায়নাতের সাথে যায় না।”

‘ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে জবাব দিল রিচার্ড। এলিজাবেথের পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল। দূর্বল শরীরেও ছুটে গেল বাথরুমে। হতবিহ্বল রিচার্ড। সে-ও পিছন পিছন ছুটে গেল৷ এলিজাবেথ কমোডর উপর উপুড় হয়ে পড়ে গরগর করে বমি করছে। রিচার্ড কেমন জানি অস্থির হয়ে উঠল৷ ছটফটিয়ে গিয়ে পিছন থেকে এলিজাবেথের চুলগুলো আগলে ধরল একহাতে, অপর হাত রেখেছে পিঠে। তার অমানবিক মন জানে না কি করতে হবে বা কিভাবে এই মুহুর্তে একটু কম্ফোর্ট দেওয়া যায়৷ পেট একদম খালি হয়ে এলো। কমোডের উপরেই ঝুঁকে হাঁপাতে থাকে এলিজাবেথ। অস্থিরতা আরও বাড়ল। রিচার্ড এলিজাবেথ’কে টেনে সোজা করে চিবুক শক্ত করে চেপে ধরল।
“আল্লাহ বান্দী জীবনে আসার পর থেকে একেবারে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছিস।”
‘থেমে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“কুত্তার বাচ্চা তোর কি হয়েছে? শরীর খারাপ? আগে বলিস নি কেন? কবে থেকে এমন হচ্ছে? বল আমায়। কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোর?”
‘চোয়ালে চেপে ধরার কারণে কিছু বলতে পারছে না এলিজাবেথ। রিচার্ডের ভিতরের অস্থিরতা ক্রোধ
মিশ্রিত স্বরে উদগীরণ হচ্ছে,
“কি হলো কথা বলছিস না কেন? কবে থেকে এমন হচ্ছে? এই আমার দিকে তাকা! তুই কি ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করিস না। কুত্তার বাচ্চা তোর পছন্দের সব খাবার পাঠানো হচ্ছিল প্রতিনিয়ত।”
“ছাড়ুন,,,, ”

‘ছেড়ে দিল রিচার্ড। আরো জোরে জোরে হাঁপাচ্ছে এলিজাবেথ। রিচার্ড এবার ওর দু’হাতে আজলায় চেপে ধরল এলিজাবেথের মুখ। চোখে উদ্বিগ্নতা স্পষ্ট৷
“এলি জান, তোর কি হয়েছে?”
‘নিশ্চুপ এলিজাবেথ।
“কি হলো বল কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”
“আপনার গাঁ থেকে আসা সিগারেটের গন্ধে গাঁ ঘিনঘিন করছে আমার।”
‘আবারও চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরল রিচার্ড। হুংকার তুলে বলল,”এটা এতোক্ষণ বলা যাচ্ছিল না ইডিয়ট? তোর মুখ কেন দেওয়া হয়েছে? শুধু কি আমাকে গালাগালি আর অভিশাপ দেওয়ার জন্য হুহ ?”

‘এলিজাবেথ’কে কোলে তুলে নিল রিচার্ড। ওকে বেডে শুইয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফিরেও আসলো। হাতে জামাকাপড়। এলিজাবেথ ভ্রু কুঁচকালো। তবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে রিচার্ড চলে গেল বাথরুমে। বেরিয়ে এলো কিছুক্ষণের মধ্যে শাওয়ার নিয়ে। এলিজাবেথ অবাক হলো,মনে অনেক প্রশ্ন আসলেও দূর্বলতার জন্য করে উঠতে পারল না। রিচার্ড মাথা থেকে টাওয়াল ছুঁড়ে ফেলে এসে এলিজাবেথ’কে আবারও কোলে তুলে নিল। ভরকে গিয়ে শার্টের কলার খামচে ধরল এলিজাবেথ।
“এ-কি! কি করছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
‘দরজার দিকে যেতে যেতে প্রত্যুত্তর করল রিচার্ড,”হসপিটালে।”

“কেন?”
“কারণ তুমি সিক।”
“আরে আজব কিছু হয়নি আমার। ঠিক আছি আমি। নামান আমাকে প্লিজ।”
‘নামায় না রিচার্ড। উল্টে শাসিয়ে বলে,”খবরদার রেড। রিপোর্টে উল্টাপাল্টা কিছু আসলে তোকে জিন্দা কবর দিবো আমি।”
“আরে আমি সুস্থ আছি। আমাকে নামান প্লিজ। আমি ঠিক আছি বললাম তো।”
‘অনেক জোড়াজুড়ির পর নামিয়ে দিল রিচার্ড। ওকে বেডে শুইয়ে দিয়ে পুরো রুমে রুম ফ্রেসনার স্প্রে করে দিল। অতঃপর এসির টেম্পারেচার কমিয়ে এলিজাবেথের দিকে তাকাল।
“আর কোনো স্মেইল আসছে?”
‘এলিজাবেথ মাথা নাড়াল। রিচার্ড গিয়ে বসল পাশে। কিছু বলার আগেই শোনা গেল এলিজাবেথের ভেজা স্বর,
“কেন ঝড়ের মতো ফিরে আসছেন আমার জীবনে বারবার?”
‘এলিজাবেথের কব্জি শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টেনে নিল রিচার্ড। চোখে এক অদ্ভুত জ্বালাময় শিখা। গভীর স্বরে বলল,

“কারণ,,,,,,!
তোকে দেখলেই যে এখানে—” বুকের মাঝখানে ওর হাত চেপে ধরে বলল—”টিপ টিপ শব্দ ওঠে। এটা কি আমার দোষ?”
‘এলিজাবেথের হাতটা কেঁপে উঠল। অনুভব করল এই শক্ত বুকের ভিতর অস্বাভাবিক উঠানামা । হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে আওড়াল,”কি করলে মুক্তি পাবো আপনার থেকে?”
‘রিচার্ড হেসে উঠল, হাসির মাঝে যেনো ঝড়ের শব্দ। কিন্তু কণ্ঠে ছিল আকুলতা।
“চল, একসাথে মরে যাই। তাহলেই তুই মুক্তি পাবি।”
“পাপীর সাথে মরলে যে আমিও পাপী হয়ে যাবো।”
‘এলিজাবেথের গলা তীক্ষ্ণ হলেও, ভেতরের টলমল ভাব লুকোতে পারল না। রিচার্ড গভীর চোখে তাকিয়ে খাদযুক্ত কণ্ঠে বলল,

“এলি জান তো কর না একটু পাপ। নিয়ম ভাঙতে ভয় কিসের? চল, একপথের সঙ্গী হয়ে যাই।”
“ভয় আর কিসের কলঙ্ক তো লাগিয়ে ই দিয়েছেন। কিছুদিন পর সমাজ কালি ছেটাবে আমার মুখে।”
“কেউ কিছু বলবে না। তুই শুধু আমার হয়ে যা।”
“চলে যান আপনি। আমি দেখতে চাই না আপনাকে। ঘৃণা করি আপনাকে। আপনি অভিশাপ হয়ে এসেছেন আমার জীবনে।”
“আই ওর্য়ান ইউ রেড। আমার সাথে কেউ এভাবে গলা উঁচিয়ে কথা বলে না।”
‘রিচার্ডের কণ্ঠে ক্রমশ শক্ত হতে থাকে। একটুও ঘাবড়ালো না এলিজাবেথ। নেমে গেল বেড থেকে। চলে যাবে বলে দরজার দিকে যেতে থাকে ছুটে। বাঁধা দিল না রিচার্ড। তবে হঠাৎ থমকে গেল এলিজাবেথের পা।
“মিস এলিসা বেঁচে আছে।”
‘পিছন ঘুরলো রিচার্ড, ঘুরলো এলিজাবেথ। কক্ষ জুড়ে বিষাদময় নিরবতা। ঢেউহীন যন্ত্রণায় ছুটে গিয়ে রিচার্ডের কলার চেপে ধরল এলিজাবেথ।

“কোথায় আছে আমার মম? সত্যিটা বলুন। কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন আমার মম কে?”
‘এলিজাবেথের হাতে শক্ত করে চেপে ধরল রিচার্ড। গম্ভীর গলায় বলল,”আমি কোথাও লুকিয়ে রাখিনি রেড।”
‘কাঁপছে এলিজাবেথের গলা,”তাহলে কোথায় আমার মম?”
‘ভাঁজ পড়লো রিচার্ডের ললাটে। ভাবুক ভঙ্গিতে শুধালো,”সেটা তো এখন আমিও জানি না। আচ্ছা, তোমাকে সেদিন যেই চাবিটা দিয়েছিলাম ওটা কোথায়?”
“ওটা আমার কাছে আছে। কেন?”
“সেদিন সে ঘরে রহস্যময় কিছু দেখেছিলে?”
‘ছিটকে দূরে সরে গেল এলিজাবেথ। রুষ্ট গলায় বলে,”আপনি কি ভালো মানুষকে সন্দেহ করছেন?”
‘চোখে ক্রোধ জ্বলজ্বল করে উঠল রিচার্ডের। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,”আমি অকারণে সন্দেহ করি না। আমার বৈশিষ্ট্যের সাথে ডিরেক্টর অক্যাশন যায়।”
“খবরদার আপনার নোংরা দৃষ্টি ঐ মানুষটার উপর নিবেন না।”
‘রিচার্ড বিদুৎবেগে গিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে নিল এলিজাবেথের চুল। থমকে যাওয়া মস্তিষ্ক টা ফিরে গেলো তার চিরাচরিত পৈশাচিক আত্মায়।

“ঐ মাদারফাকা°রের নাম আরেকবার মুখে নিলে তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব আমি। মানুষ চিনতে ভুল করছিস তুই।”
‘জোরে দু’টি শব্দ। ঘরের নিস্তব্ধতা ফালাফালা করে বেজে উঠল। রিচার্ড শক্ত করে চোখ বুজে নিল। এলিজাবেথের তীব্র চড়ের চিহ্ন ফর্সা গাল জুড়ে লাল হয়ে উঠেছে। আঙুলের দাগ স্পষ্ট। রিচার্ডের চোখে ক্ষণিক বিস্ময়ের ঝিলিক। তবে মুহূর্তেই তা রূপ নিল ফুঁসতে থাকা আগুনে। কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল। তবে নিজের ক্ষোভের ঢেউ সামলে নিয়ে এলিজাবেথকে জাপটে ধরে ছুড়ে ফেলল বিছানায়।
‘এলিজাবেথ অঝোরে কেঁদে উঠল। চোখে জ্বলন্ত রাগ আর অসহায়ত্বের মিশেল। রিচার্ড তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চিৎকার করল,”এই সাহস আর দ্বিতীয়বার দেখানোর চেষ্টাও করবি না। গেঁড়ে দিবো একেবারে!”
‘চাদরের কিনারা মুঠোয় চেপে ধরে এলিজাবেথ হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল, “আমার জীবনটা এমন কেন হলো? সৃষ্টিকর্তা আর কতবার পরীক্ষা নেবেন? আর কতটুকু সইতে হবে?,,,,,,,”

‘বাক্য অসম্পূর্ণ থেকে গেল। রিচার্ড গিয়ে মুখ চেপে ধরল শক্ত হাতে। ঠোঁটের কোণে তির্যক হাসি, চোখে দুঃসহ অন্ধকার। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“চুপ। কাঁদ, যত ইচ্ছা কাঁদ। কিন্তু কথা বলিস না। কষ্টের সময় কথা বললে মানুষ খোদার নাফরমানি করতে থাকে। কাঁদার সময় মানুষের সংযম থাকে না। তুই পবিত্র এলি। তুই জান্নাতে যাবি। এসব বলে খোদার মনঃক্ষুণ্ণ করিস না।”
‘অস্পষ্টে আওড়ালো এলিজাবেথ,”আর আপনি?”
‘ছেড়ে দিয়ে দূরে স্বরে আসলো রিচার্ড। বেডসাইডে গাঁ এলিয়ে উদাস স্বরে বাক্য ছাড়ল,
“আমি পাপী। পথেঘাটে হবে আমার মৃত্যু। তুই ফুলের বিছানা ডির্জাব করিস। আর সেই শুভ্র ফুলগুলোও যে আমায় বড্ড ঘৃণা করে রেড।”

‘রিচার্ডের কথা শুনে এলিজাবেথের বুকের ভেতর হাহাকার বেড়ে উঠল। কণ্ঠে লুকিয়ে থাকা গভীর কষ্ট যেন আরও তীব্র করে দিল এলিজাবেথের নিজের যন্ত্রণা। উঠে বসল। চোখে দৃঢ়তা নিয়ে বলল,
“তাহলে ভালো হয়ে যান না। এখনও সময় আছে নিজেকে বদলানোর।”
‘রিচার্ড তিক্ত হেসে উত্তর দিল,”কয়লা শত ধুলেও কয়লা সাদা হয় না। আমি যে-ই পাপের সাগরে ডুব দিয়েছি, সেখান থেকে ফিরে আসা যায় না।”
‘এলিজাবেথের চোখে ঝলসে উঠল সুতীব্র আবেগ। দৃঢ় কণ্ঠে বলল,”কোরআনের একটা আয়াত আছে জানেন? সেটার অর্থ হচ্ছে এরকম;

/আল্লাহ বলেছেন, “তুমি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাও, তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি কি ভেবেছো আমি রেগে আছি তোমার উপর??? না। আমি আল্লাহ। আমি কথায় কথায় রাগ করি না। আমি তোমার সাথেই থাকি সবসময় কারণ আমি জানি তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে। তুলি, বার বার, বার বার, হাজার বার, লক্ষ বার পথভ্রষ্ট হবে। কিন্তু আমি তোমাকে লক্ষ বার সুযোগ দিবো আমার কাছে ফিরে আসার। তোমার সমস্ত জীবনটাই সুযোগ। আমি অপেক্ষা করে আছি তোমার জন্য, আমার কাছে ফিরার। তুমি লক্ষ বার ভুল করে মাফ চাইবে, আমি লক্ষ বার তোমাকে মাফ করবো সুযোগ দিবো। আমি আল্লাহ তোমার সৃষ্টিকর্তা।”
‘রিচার্ডের মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটল। হাসতে হাসতে শরীর কাঁপল। তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
“এসব কথা আমার জন্য না। আমার এসবের প্রয়োজন নেই। টাকা লাগবে আমার। এই পথে আমি টাকা পাচ্ছি, সুখ পাচ্ছি। এখান থেকে আমি সরছি না মামু।”

“টাকায় কি এমন আছে? যে এটা ছাড়া বাঁচা যাবে না?”
‘রিচার্ড পায়ের উপর পা তুলে খুব আরাম করে বসল। অতঃপর স্নান হেসে বলতে থাকল,
“সৃষ্টি এবং ধ্বংস দু’টোই আছে টাকাতে। টাকায় পারে মানুষকে ধ্বংস করতে আবার টাকায় পারে নতুন করে গড়তে। এই আমাকেই দেখ না। এই টাকার জন্যই আমি শেষ হয়েছিলাম এখন টাকার জন্যই সবার উপরে আছি৷”
“ভালো থাকতে টাকা না, আল্লাহর রহমত লাগে।”
‘রিচার্ড উঠে দাঁড়াল। দরজার দিকে যেতে যেতে বলল,”সৃষ্টিকর্তা সেদিন আমার উপর সদয় হয়নি। তাই তো আজ আমি আজ বিধ্বস্ত। আসছি আমি। পা যেন নিচে না নামে।”
‘কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল এলিজাবেথ। প্রতিবার ই খুব করে বুঝতে চেয়েও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না রিচার্ড’কে৷ ভাবনার মধ্যে রিচার্ড আবার ফিরে এলো হাতে কিছু বোতল নিয়ে৷ দেখা মাত্র এলিজাবেথ নাক ছিটকাতে গেলে রিচার্ড তার আগেই গমগমে স্বরে বলে উঠল,
“ডোয়ান্ট ওয়ারি। এতে কোনো ব্যাড স্মেইল নেই। শুধু নেশা হয়।”
“আপনি এতো তারাতাড়ি এগুলো কোত্থেকে নিয়ে আসলেন?”
‘বেডে গিয়ে বসল রিচার্ড। কর্ক খুলতে খুলতে বলল,”জবাব দিতে বাধ্য নই।”

“চলে যান।”
“খুব ঘুম পাচ্ছে একটু ঘুম পাড়িয়ে দাও। তোমাকে পাহাড়া দিতে গিয়ে বেশ কয়েক রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে আমার।”
‘এলিজাবেথের চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো। নেত্রদ্বয়ে চকচকে কৌতুহল লেপ্টে,”পাহাড়া দিতে গিয়ে মানে?”
“এতোকিছু জানার প্রয়োজন নেই।”
‘নিমিষেই এক বোতল খালি করে ফেলল রিচার্ড। এলিজাবেথ খুবই অবাক হচ্ছে রিচার্ডের কান্ডে। হাঁটু ভেঙে বসে থাকা অবস্থায় এলিজাবেথের স্কার্ট খানিকটা উপরে সরে গিয়েছে। পায়ের মসৃণ ত্বক চোখে পড়তেই রিচার্ডের ভিতরে যেন এক ঝড় বয়ে গেল। বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। চোখে ঘোলাটে ভাব। ধীরে ধীরে এলিজাবেথের দিকে এগিয়ে এলো। চোখে ছিল এক অদম্য আকর্ষণ।
‘এলিজাবেথ স্পষ্টতই অস্বস্তিতে রিচার্ডের মুখ তার মুখের কাছে আসতেই তড়িঘড়ি পিছিয়ে গেল। কণ্ঠ কাঁপছে। ভয় আর সন্দেহ মেশানো স্বরে বলে উঠল,

“এ-কি আপনি এতো কাছে আসছেন কেন?”
‘রিচার্ডের ঠোঁটে খেলল এক বিপজ্জনক হাসি। নেশাগ্রস্ত স্বরে বলল,”রাত একটা বাজে, রেড। এই সময়ই তো কাছে আসার মুহূর্ত।”
‘এলিজাবেথ আরও এক ধাপ পিছিয়ে গেল। কণ্ঠে তীক্ষ্ণ প্রতিবাদ,”আপনি কাছে আসবেন না বলছি!”
‘রিচার্ডের চোখে জ্বলজ্বল করছে এক অদম্য ইচ্ছা। গম্ভীর অথচ তীব্র স্বরে ফিসফিস করে বলল,”আজ তোমার সর্বাঙ্গ জ্বলবে, রেড।”
“আপনি এমনটা করতে পারেন না।”
“আমি এমনটাই করব রেড।”

‘রিচার্ড আরেক ধাপ এগিয়ে আসতেই এলিজাবেথ আচমকা নিচ থেকে একটা বোতল তুলে নিয়ে রিচার্ডের মাথায় আঘাত করল। ঠক করে আওয়াজ হলো, কপাল থেকে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা রক্ত। কার্নিশ থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ল বিছানায়। হাতে রক্তের স্পর্শ পেতেই ফিচলে হাসল রিচার্ড। চোখে ঝিলিক খেলল। মাথা ঘুরিয়ে তাকাল এলিজাবেথের দিকে। ভেতরে গর্জে উঠলেও মুখে ছিল স্থির এক ফিকির। রাগের বদলে ঠোঁটে সেই বিপজ্জনক হাসি। রিচার্ড নিজেও জানে না এই মেয়ের জায়গায় এখন অন্য কেউ থাকলে তার পরিণতি ঠিক কি হতো। এলিজাবেথ ফুঁসে উঠল। কণ্ঠে শঙ্কা আর চিৎকারের এক অদ্ভুত মিশ্রণ।
“পারবেন ই তো আপনি! কারণ আপনি তো একটা রেপিস্ট!”
‘এবার রিচার্ডের চোয়াল মটমট করে উঠল। কথাটা তার সহ্যের সীমানা ছুঁয়ে ফেলল। রুক্ষ গলায় চাপা হেসে দাঁতে দাঁত পিষল৷

“বকলমের বাচ্চা আর একবার রেপিস্ট বললে ডেমো দেখিয়ে দেব এখন। তখন আর কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
‘এলিজাবেথ থমকে দাঁড়াল না। চোখে ছিল চরম ধিক্কার।
“এটাই তো পারেন আপনি। শরীরের জোর দেখানোটাই আপনাদের একমাত্র শক্তি।”
‘রিচার্ডের ঠোঁটে বিকৃত হাসি। “আমি আরও অনেক কিছু পারি। দেখতে চাও?”
“মানে!”
‘এলিজাবেথ পা ধরে হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। অতঃপর নিজের টেকনিক ইউজ করে শুরু করল লাগামহীন বাক্য ছুঁড়া।

“মানে এই যেমন কিভাবে আলতো ছোঁয়াতে সারা শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলতে হয়। ঠিক কিভাবে স্পর্শ করলে তুমি নিজেও থেকে আমাকে জরিয়ে ধরবে। কোথায় বিচরণ,,,
‘এলিজাবেথ এক ঝটকায় নিজের পা ছাড়িয়ে নিল। কান চেপে ধরে চিৎকার করে উঠেল,”চুপ।”
‘রিচার্ডের অট্টহাসি ঘরটাকে বিদীর্ণ করল। চোখে মদির খেলা, বলল,”আরে বাবা, একটু জ্ঞানমূলক কথা বলছিলাম। সেটাও সহ্য হলো না?”
“আপনার মতো নষ্ট পুরুষের মুখে আবার জ্ঞানমূলক কথা। হাসালেন।”
‘শক্ত চোখে এলিজাবেথের দিকে তাকাল রিচার্ড। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,”কে নষ্ট? নষ্টামি করলে এখন তুমি অন্য অবস্থায় থাকতে। সুখের কান্নায় চোখ ভিজে থাকতো।”
‘থেমে, আরেক বোতল খালাস করতে করতে কুটিল হেসে বলল,
“শোন! আজ থেকে তুই এই গান গাইবি। শিরায় শিরায় রক্ত, আমি এক নারীতে আসক্ত, রিচার্ড কায়নাতের ভক্ত।”
‘নাক-মুখ কুঁচকে হাসল এলিজাবেথ। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“খারাপেরও আবার ভক্ত থাকে নাকি!”

‘রিচার্ডের নেশা ধরে গিয়েছে। কণ্ঠটাও কেমন যেন শুনাচ্ছে।
“কিহ! আমার চরিত্র খারাপ? কিসের ভিত্তিতে? কোন নানির নাতি এ কথা বলেছে? তাকে আমার সামনে নিয়ে আয়। তার বাপের চতুর্থ বিয়ের পুরো খরচ আমি দেব। ফুলসজ্জার খাট কাকুলি ফার্নিচার থেকে যাবে।”
‘এলিজাবেথ দাঁতে দাঁত চেপে রাগ ঝাড়ল,”ছিঃ, আপনার মুখের ভাষা এমন কেন?”
“শালী ধান্ধাবাজ, সত্যি কথা বললেই লাগে তাই না? যা ভালো কথা বললাম, আসসালামু আলাইকুম। এবার মিষ্টি করে জবাব দে।”
‘এলিজাবেথ ভেংচি কেটে জবাব দিল,”ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
‘রিচার্ড প্রশংসায় ফেটে পড়ল,”বাহ, বাধ্য মেয়ে! এমন একটা মেয়ে ই চেয়ে ছিলাম বউ বানানোর জন্য। তবে এখন মুড নেই। পরে ভেবে দেখব।”
“বিষ খেয়ে মরব, তবু আপনার মতো অমানুষকে বিয়ে করব না।”
“আমাকে বিয়ে না করলে তোর বিষও খেতে হবে না। এমনিতেই মরে যাবি।”
“কীভাবে?”

“আমার পায়ের নিচে পিষে।”
“তারপর?”
“তারপর তোকে মমি বানিয়ে আমার বেডরুমে সাজিয়ে রাখব। এভাবে না হোক, সেভাবেই তোর আমার সঙ্গেই সংসার করতে হবে।”
“আপনি সংসার করার মানুষ?”
‘একের পর এক বোতল খালি করেই যাচ্ছে রিচার্ড। চোখের সামনেও সব ঘোলাটে হয়ে এসেছে।
“জানি না। তবে চেষ্টা করে দেখবো একবার।”
“না পারলে?”

“না পারলে চেষ্টা ছেড়ে দিবো। জোর করে হলেও তোকে আটকে রাখব, আদর করব, তোকে আমার সংসারের কর্ত্রী বানাবো। তুই ঘর গুছাবি, বাচ্চাদের মানুষ করবি, ওদের পড়তে বসাবি। স্কুলে আমি ই নিয়ে যাব। আমার পছন্দের রান্না করবি, আমাকে প্রতিদিন খাইয়ে দিবি। জানিস এলিজাবেথ, কত বছর হয়ে গেল কেউ আমাকে খাইয়ে দেয় না। নিজের হাতে খেতে পারতাম না আমি। এখন নিজের হাতে খাই, তবুও পেট ভরে না আমার।”
‘থেমে, রিচার্ডের আঙুল চোখের কোণ ছুঁয়ে থেমে রইল। গভীর বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,”এই যে চোখটা দেখেছিস এলি জান ? এখানে পানি আসলেই সবাই বুঝে যে ভেতরে কিছু হচ্ছে। দুঃখ, কষ্ট—সব স্পষ্ট হয়ে যায়।”
‘অতঃপর আঙুল ধীরে ধীরে বুকের ওপর এসে থামল। গলা আরও ভারী হয়ে গেল,”কিন্তু এই যে এখানে, এখানে যা-ই হোক, জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাক, কেউ টের পায় না।”
‘এলিজাবেথের বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। কণ্ঠে দলা পাকিয়ে আসে। বহু কসরতে আওড়ালো,”কি এতো কষ্ট ছিল আপনার অতীতে?”

‘রিচার্ডের শরীর ঢলতে ঢলতে বিছানায় পড়ে গেল। খুব ঘুম আসছে চোখে। তিরিক্ষি মেজাজ দেখিয়ে বলল,
“এই বাল। কি যা তা বলছিস? আমার আবার কিসের অতীত। শক্ত পুরুষদের অতীত থাকে না।”
‘তপ্ত শ্বাস ফেলল এলিজাবেথ। হতাশাগ্রস্ত স্বরে বলে
“অম্লীল ভাষা ব্যাবহারকারী ও উগ্র মেজাজি মানুষ জান্নাতে যাবে না।”
(আবু দাউদ, ৪১৬৮)
‘রিচার্ড নিভু নিভু চোখে চাইল এলিজাবেথের দিকে। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“গালি ছেড়ে দিলে কি তোকে পাবো? নিয়ে যাবি আমাকে তোর সাথে জান্নাতে?”
‘চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নিঃশব্দে মাথা নাড়ালো এলিজাবেথ। আবারও বিছানার মাথা লাগিয়ে চোখ বুঁজে ফেলল রিচার্ড। দৃঢ় সংকল্পিত স্বরে বলল,

“তাহলে আজ থেকে আর আমি গালি দিবো না কসম। ছেড়ে দিলাম গালি।”
‘সহসাই নিভে গেল চোখের পাপড়িজোড়া। কপাল থেকে এখনও রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। এলিজাবেথ একটু কাছে গেল রিচার্ডের। রক্তাক্ত স্থানে হাত রাখতেই ঘুমের মাঝেই নড়াচড়া করে উঠল রিচার্ড। এলিজাবেথের খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে। হঠাৎ চোখ গেল রিচার্ডের বুকে। ক্ষত থেকে শার্টের দুটো বোতাম খুলতেই কেঁপে উঠল। রিচার্ড বুক পাঁজর ঝাঁঝড়া করা ছুরি,বুলেন্টের তীক্ষ্ণ দাগে। কিছু কিছু দাগ একদম নতুন৷ তার মাঝে বা পাশটায় ছুরির কাটা দাগটা একদম তাজা। এটা আজকে বিচে আক্রমণের সময় লেগেছিল। ব্যান্ডেজ করা তো দূর ড্রেসিং ও করা হয়নি। ফোঁস নিশ্বাস ফেলে এলিজাবেথ উঠে দাঁড়াল৷
‘মৃদু আলোতে কিচেনে গিয়ে পানি গরম করতে থাকে। ক্ষয়প্রাপ্ত জায়গা পরিষ্কার করার জন্য। অভ্যন্তরে নিরবধি যন্ত্রণা। হঠাৎ পিছন থেকে ভেসে এলো লেডি জেসিকার কণ্ঠস্বর। গুমরে ওঠা যন্ত্রণা গিলে নিয়ে পিছন ফিরে তাকাল এলিজাবেথ।

“কতো ভালো তুমি। যে তোমার এতো বড় ক্ষতি করেছে তার সেবার ব্যবস্থা ই করছো।”
‘ভিতরে অস্বস্তিকর অনুভূতি। ঠৌঁট তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে এলিজাবেথ বলল,
“আমি আর ভালো হলাম কোথায়? একজন কুসচিৎ চরিত্রের মানুষকে মনে ঠাঁই দিয়ে নিজেকেই করলাম কুলশিত। তার অন্যায়, আমার কাছে এক আকাশ সমান বিশাল। যেখানে ভালোবাসার কোনো স্থান নেই। হ্যাঁ জানি ভালোবাসা মানে সাহসী হওয়া, ক্ষমা করতে জানা। কিন্তু আমি পারবো না—আমি বিবেকের কাছে হেরে যেতে।”
‘লেডি জেসিকা এসে এলিজাবেথের পাশে দাঁড়াল।
“মনের কোণে অনুভূতি থাকলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। পাপ, পূর্ণ সব ভুলে যায়। নারী এমন বিস্ময়কর, তারা ভালোবেসে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়। হারায় নিজেদের ব্যক্তিত্ব, মান, বিবেক৷ এ যেন এক গভীর আত্মবিলীনতা যেখানে তারা নিজের থেকেও বেশি হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিঃশেষ হয়ে যায়।”

”ঠিক বলেছেন মিস জেসিকা। তার জন্য আমি সতিত্ব খোয়ালাম, তবুও বেহায়া মন তার জন্যেই পুড়ে। তবে কি জানেন? সেই কষ্টের থেকেও বেশি কষ্ট মনের সাথে লড়াই করা। আমি চাই না আমার ভিতরের এই দূর্বলতা কখনো বাইরে আসুক। তাহলে যে আমি নিজে আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারবো না।”
‘থামল এলিজাবেথ। জ্বলন্ত আগুনের দিকে চেয়ে নিভে আসা বিষন্ন স্বরে বলল,
“মনের গভীরে আঘাত দিয়ে যারা ভাবছে জিতে গেছে, তারা হয়তো জানতো না যে এই মনে শুধু তারা-ই ছিলো।”
“ভালোবাসলে ক্ষমা করতে জানতে হয়। সুযোগ দিতে হয়৷”
“আমি পারবো না মিস। এটা ভুল না পাপ। আর এই পাপের ক্ষমা হয়না।”
“তবে কেন এতো ভালোবেসেছিলে?”
‘কয়েকবার পরপর ফোস নিশ্বাস ছাড়ল এলিজাবেথ। অতঃপর মিস জেসিকার দিকে চেয়ে হুট করেই কেঁদে দিল। আঁচড়ে পড়ল বুকে।

“আলো হয়ে এসে যে অন্ধকার রূপে ধরা দিবে সেটা কি আগে জানতাম?”
‘ভালোবাসা কোনো যুক্তি কিংবা কারণের ধার ধারে না। রূপ, নাম, জৌলুস—সবই ক্ষণস্থায়ী। প্রকৃত ভালোবাসা এক নিবিড় অনুভূতি। যা কখনও ব্যাখ্যার মোহনায় বাঁধা পড়ে না। এটি বাঁচতে শেখায়, আশা জাগায়। কিন্তু এলিজাবেথের জীবনে সেই ভালোবাসা একসময় হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে জটিল অধ্যায়। তিন বছর আগে জীবনের প্রতি সব আশা হারিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে গিয়েছিল সে। মিস এলিসার প্রতীক্ষায় বছরের পর বছর কেটে গেলেও যখন কেউ ফিরে আসেনি, তখন মৃত্যুই মনে হয়েছিল একমাত্র মুক্তি। কিন্তু সেই মুহূর্তেই ঘটে তার জীবনের সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনা।

‘একটা পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিল এলিজাবেথ। কিন্তু ঝাঁপ দেওয়ার আগ মুহূর্তে গাড়ির হর্ন ভেসে আসে দূর থেকে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে কালো পোশাক পরা একজন লম্বা মানুষ। গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল এলিজাবেথ। কিশোর মনে প্রথম অনুভূতি কাজ করেছিল সেদিন। হঠাৎ পা পিছলে পাথর থেকে নিচে পড়ে যায় এলিজাবেথ। আর তখনই রিচার্ড গাড়িতে উঠে চলে যায় এলিজাবেথের সামনে থেকে।
‘সেদিন রিচার্ডের মুখ দেখতে পায়নি এলিজাবেথ, কিন্তু তার কানের পেছনের ধনুকের তীরের ট্যাটুটি মনের গভীরে গেঁথে গিয়েছিল। সেই প্রথমবার কাউকে দেখে বাঁচার ইচ্ছা ফিরে পেয়েছিল। কল্পনায় রিচার্ডকে সাজিয়ে নিজের মনের অজান্তেই ঘোষণা দেয় কল্প প্রেমিক হিসেবে। তবে জীবন অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়। বহুদিন পর বাগানবাড়িতে কাটানো এক দীর্ঘ সময়েও এলিজাবেথ চিনতে পারেনি রিচার্ডকে। কিন্তু সেই দিন, যেদিন তাকবীর ওকে নিয়ে আসে সেদিনই রিচার্ডের কানের পেছনের সেই পরিচিত ট্যাটুটি দেখতে পেয়েছিল এলিজাবেথ। সেদিনই বুঝতে পেরেছিল এই মানুষটাই একসময় তাকে বাঁচার আশা দিয়েছিল।

‘রিচার্ড এখন আর সেই আলো নয়। কালের বিবর্তনে সে পরিণত হয়েছে এলিজাবেথের জীবনের এক কালো মেঘে। সেদিন থেকেই ঘৃণা আর ভালোবাসার সংমিশ্রণে আটকে পড়ে এলিজাবেথ আজও লড়াই করে চলেছে নিজের অনুভূতির সাথে৷ পুড়ছে অতীতের দহন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
“যাকে একবার ভালোবাসা হয়, সে যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাপীও হয়, তবুও তাকে ঘৃণা করা সম্ভব নয়। ভালোবাসার হৃদয়ে কোনো শত্রুতা, কোনো ঘৃণা স্থান পায় না।”
‘লেডি জেসিকার কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরুলো এলিজাবেথ। ভারি হয়ে উঠল বুক। ছোট বোলে গরম পানি নিয়ে উপরের দিকে যেতে যেতে বলল,
“আমি পারবো না তাকে ক্ষমা করতে। তাহলে যে নিজের সাথে খুব বড় অন্যায় হয়ে যাবে। এই অন্যায়ের বোঝা সহ্য করতে পারব না আমি।”

‘এলিজাবেথ ধীরে ধীরে রিচার্ডের ক্ষতস্থানগুলো পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিল। কাজ শেষ করে থমকে দাঁড়াল । একদৃষ্টে চেয়ে রইল রিচার্ডের ঘুমন্ত মুখের দিকে। কী অদ্ভুতভাবে নিষ্পাপ আর স্নিগ্ধ লাগছে তাকে। এই মুখটাই কি একসময় তার জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল?
“জানেন আমি আজ খুব চাইছিলাম আপনি আসুন। শেষবারের মতো একটা দিন আপনার সাথে কাটাতে চেয়েছিলাম। আজকের দিনটার জন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি চলে যাচ্ছি… বহুদূর। আপনি থাকুন আপনার পাপের সাম্রাজ্য নিয়ে। আমার মুক্তি দরকার।”
‘কয়েক ফোঁটা অশ্রু এলিজাবেথের গাল বেয়ে রিচার্ডের উপর পড়ে গেল। নিজের দুর্বলতায় কেঁপে উঠল এলিজাবেথ। তড়িঘড়ি করে সরে এল রিচার্ডের পাশ থেকে। তবু কেন যেন রিচার্ডের মুখটা ওকে থামিয়ে রাখতে চাইছে। নিজেকে সামলে ছোট কেবিনেট খুলে পাসপোর্টটা বের করে পাশের রুমে গিয়ে ব্যাগ গোছাতে শুরু করল এলিজাবেথ। রাশিয়ার ফ্লাইট কয়েকদিনের মধ্যেই। তাকবীর আজ সকালেই লেডি জেসিকার মাধ্যমে পাসপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার সত্যিই মুক্তি সম্ভব… তবে এই মুক্তি কি সত্যিই পুরোপুরি মুক্তি নাকি শুধুই পালানো?

‘শেষ রাতের নিস্তব্ধতায় রিচার্ডের ঘুম ভেঙে গেল। পাশ ফিরে এলিজাবেথকে দেখতে না পেয়ে উঠে দাঁড়াল। পাশের রুমে গিয়ে দেখল এলিজাবেথ ঘুমিয়ে আছে। ওর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কী এক অজানা অনুভূতি ভর করল রিচার্ডের চোখে। আলতো পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো এলিজাবেথের পাশে। কপালে আঁচড়ে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিল সযত্নে ।
“জানিস এলি, তোর জন্য আমার যতটা মায়া হয়। তার এক ভাগও যদি এই পৃথিবী আমাকে দেখাত, তাহলে আমি আজ এমন হতাম না।”
‘রিচার্ডের গরম নিশ্বাস মুখের উপর পড়তেই ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে উঠল এলিজাবেথ। রিচার্ড মুচকি হাসল৷ মুহূর্তের নিষ্পাপ সৌন্দর্যে আটকে যাচ্ছে সে।
“তুই-ই আমার মায়াজাল এলি জান। এতো মায়া কেন তোর ঘুমন্ত মুখে? কেন এত টানিস? কিন্তু আমি চাই না এই মুহুর্তে কোনো ভুল হোক।”
‘উঠে দাঁড়াল রিচার্ড। গিয়ে বসল এলিজাবেথের পায়ের কাছে। জঙ্গলে ছুটে কেটে যাওয়া জায়গাগুলোতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। কণ্ঠটা ভার হয়ে এলো।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৮

“অন্ধকারের সঙ্গে সম্পর্ক আমার। সেখানে তুই আলোর জোৎস্না হয়ে এসেছিস। কিন্তু এই আঁধারের সঙ্গী হতে হতে তুইও একদিন এতে তলিয়ে যাবি। তাই আমার থেকে দূরে থাকাই তোর জন্য মঙ্গল ।”
‘শেষবারের মতো আবারও এলিজাবেথের মুখের কাছে গিয়ে দাঁড়াল রিচার্ড। ঝুঁকে ওর কপালে শব্দহীন চুম্বনের ছোঁয়া দিল। গভীর ভালোবাসা মেশানো এক নি:শব্দ স্বীকারোক্তি দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল।
“এই শহরে তুই-ই আমার একমাত্র সুখ।”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৪০