ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৬

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৬
মিথুবুড়ি

“লেটস বিগিন দ্য কি/লিং মিশন”
‘নিস্তব্ধ, পিনপতন নীরবতায় ঢাকা বেজমেন্ট ঘেরাও করে রেখেছে লা/শ প/চা ঘুটঘুটে বিচ্ছিরি গন্ধ। চারিপাশ জনবিচ্ছিন্নহীন এক অবিচ্ছেদ্য অভিশপ্ত পরিত্যক্ত অংশের মতো আধাঁরে ঘেরা। এক চিমটি পরিমাণ রোশনাই আলোর দেখা নেই এই বিষাদে আভিভূত গোমট পরিবেশে। জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে হিং/স্র জীব জ/ন্তুর কর্কশ গর্জন গাঁ শি/উরে দেয়ার মতো। অর্হনিশে ভোঁ ভোঁ করছে একঝাঁক জংলী মশা। যা সুনশান-নিস্তব্ধ পরিবেশে যুদ্ধের পূর্ব প্রস্ততি হিসেবে ইস্পাতের উপর চিকচিক, ফকফকা বালি দিয়ে হাতিয়ার ধারানোর মতো ঝাঁঝালো শব্দের মতো মস্তিষ্ক, নিউরন,শ্রবণ ইন্দ্রিয় ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে।

‘স্যাতঁস্যাতেঁ মেঝের নিচ থেকে উবলে বেরিয়ে আসতে চাওয়া লা/শের প/চা দুর্গ/ন্ধ পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে পাকস্থলী উগড়ে ভিতরের খাদ্যকণা গুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে বার বার। বক্ষপিঞ্জরের মাঝে অবস্থিত দূর্বোধ্য হৃদযন্ত্র তটস্থ হয়ে ধীরে ধীরে প্রতিক্রিয়া জানানে দ্বিমত পোষণের পায়তারা করছে। নিঃস্তব্ধতা আস্তরণে বন্দী পড়ে যাওয়া বেজমেন্টে শুধু কর্ণপাত হচ্ছে শক্ত টায়েলের উপর পড়া টপটপ পানির শব্দ। যা গড়িয়ে লুটোপুটি খাচ্ছে উরু হতে পায়ের পাতার নিচ দেহাংশে। তবে সেটা কোনো পানি পড়ার শব্দ নয়।
‘বেজমেন্টের সিলিং থেকে সরু নলের ফাঁক গলিয়ে ফিনকির মতো ফোঁটা ফোঁটা উষ্ণ তরল লাল পদার্থ পড়ছে সরাসরি মস্তকে। সাদা কালো মিশ্রণের কৃশলার ফাঁক গলিয়ে গলিতে কার্নিশ বেয়ে পুরুষালি রুক্ষ ঘাড়ে আচড়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে সফেদ সাদা শুভ্র পাঞ্জাবি রংধনুর প্রথম সারিতে থাকা রঙে তলিয়ে গিয়েছে। হৃদপিন্ড চেপে ধরে আতংকে। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়ায় রক্তে রঞ্জিত পাঞ্জাবি, শরীর থেকে নির্গত আতঙ্কের শীতল ঘামে কায়াতে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘হঠাৎ করেই বিকট বিস্ফো/রিত শব্দে কেঁপে ওঠে আনিসুল হকের কায়া। এটা কোনো গ্রা/নেট বা বো/মা বিস্ফোরণের শব্দ নয়, স্মোকিং গ্রাসের। ভয়, ভীতিতে তটস্থ হয়ে থাকা আনিসুল সামান্য সঙ্গোপন শব্দে থরথর করে কাঁপতে থাকে। বিস্ফোরিত নয়নজোড়ায় ভাসছে পরবর্তী নরদৃশ্য নৃশংসতার সাক্ষাৎ। অন্দরমহলে হতে থাকা ধ্বংসযজ্ঞ নরকের শাস্তির তুলনায়ও নগন্য আনিসুল হকের মনের অভিসাম্য মতে। হঠাৎ করেই প্রচন্ড শব্দ করে বেজমেন্টের সাটার ক্রমে ক্রমে উপরে উঠতে থাকে।

‘সাটারের ফাঁক গলিয়ে বাইরের ল্যামপোস্টের আলোয় কিঞ্চিৎ আলোকিত করে অন্ধকারের অভিশপ্ত বেজমেন্ট। লোচনযুগল হতে কনুই সরিয়ে ঢেকে রাখা আতঙ্কিত আস্য প্রকাশ্যে এনে কাঁপা কাঁপা চোখের পাতা মেলে সামনে তাকালেন তিনি। শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে শরীরের সাথে অষ্টেপৃষ্ঠে সাদা দঁড়িতে বেঁধে থাকা চেয়ার নিয়ে মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ল আনিসুল হক। শরীর অধিক হারে কাঁপতে থাকে সামনের বিভৎস দৃশ্য চাক্ষুষ অবলোকন হওয়ায়।
‘উন্মুক্ত ফটকের সামনে স্মোকিং গ্রাসের ধোঁয়ায় ন্যায় ছাই রঙের বাষ্প গলিয়ে ব্যগ্র পায়ে তিন দানবীয় মানবের অশলীলী রূপ। পায়া থেকে মস্তক পর্যন্ত সম্পূর্ণ কালোতে আবৃত। প্রান্তভাগের তেমাথায় ঝুলিয়ে রাখা কালো হোমবার্গ টুপির জন্য আকৃতি অস্পষ্ট। ক্র্যন্ত পায়ে হাঁটার ফলে উরু হতে পায়ের মধ্যভাগ অংশ পর্যন্ত থাকা ওভার কোটের রেলল্ডিং প্রান্ত হাঁটুতে বার বার বারি খেয়ে ঘর্ষণের সৃষ্টি হচ্ছে। নির্কশ কালো রঙের ওভার কোটে শক্তপোক্ত, বলিষ্ঠ লম্বাচওড়া দেহের অধিকারী তিন মানবকে আঁধো অন্ধকারে যমদূতের মতো লাগছে। মাঝখানে ছোট শটগান নিয়ে তেড়ে আসছে অভিশাপ বিষাদের রাজা, তার দুইপাশে সিপাহী হিসেবে দুই বাহাদুর। রক্ষক হিসেবে আসছে বিশাল আকৃতি মরণশীল অস্ত্র নিয়ে। রাশিয়ান মার্কেটে এই কালো ওভারকোট গুলো হান্টিং কোট নামে পরিচিত। ১৯২০শের এডিশনের হার্লি উইনিন স্টাইলের মাফিয়া সো একই সাথে ওভার কোটের মেটাল বাটনের চকচকে সাদৃশ্যঅংশ দেখা যাচ্ছে শুধু কালো তিন মূর্তি মানবের অবছায়ায় । সম্পূর্ণ কালোতে তলিয়ে থাকার কারণে তিন যান্ত্রিক মানবকে মিশরীয় মমির মতো লাগছে তাছাড়া ভিন্ন কিছুই না। ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট হয় ছায়াগুলো।

‘হঠাৎ করে মেঝেতে লুটিয়ে জবুথবু হয়ে কাঁপতে থাকা আনিসুল হকের মাথার উপর বহু পুরাতন লাল বাতি জ্বলে উঠল। গোল খাঁচার মতো ঝুলে থাকা খাঁচার ভিতর থেকে রোশনাই আলো আসছে। ফলস্বরূপ স্পষ্ট আন্দাজ করা যায় ঠিক আনিসুল অভিব্যক্তি কতটা বিভ/ৎস, অকুতোভয়ী হৃদিন্ড দেহখানা কতোটা আতঙ্কগ্রস্থ । আলোর নিচে আসলো তিনজন, ঠোঁটের আগায় জড়ো হওয়া রহস্যের ঘনঘটা ঝুলিয়ে। আনিসুল চোখের পাতার কাঁপুনি বন্ধ হয়।
‘কিছু মুহুর্ত ক্রোধে মটমট করতে থাকা ধারালো একটি চোয়াল এবং তার দু’পাশে ঢালের মতো দাঁড়িয়ে থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক অভিব্যক্তির চোয়াল গুলোর পানে চেয়ে থেকেও শুরু শেষ পর্যন্ত হিসেবে মিলিয়েও ঠাওর করতে পারল না আনিসুল হক এরা কে? কি ক্ষতি করছে এদের যার ফলস্বরূপ আজ এখানে? এতো ষড়যন্ত্র, এতো এতো অযাচিত ক্ষুব্ধতায়। আনিসুল হকের হিসেবে মতো তিনি ওদের কোনো ক্ষতি করেনি এই জীবনে। গলায় দলা পাকিয়ে থাকা কুন্ডলী গুলো শক্ত ঢোক গিলে পিষে ভিতরে ঠেলে বিষাদ রাজ্যের রাজার সুগভীর, নিকষ নীল চোখ হতে অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হওয়া মানবের দিকে তাকিয়ে গতি হারা হৃদস্পন্দন তোয়াক্কা না করে দূর্বল গলায় ঝাঁঝ এনে, ঝাঁঝাল গলায় চেঁচালেন,

“আমার ছেলে কোথায় ? আর আমাকেই বা এখানে আঁটকে রেখেছেন কেন ?টাকা পাওয়ার পরও আর কি চাই?”
‘হাঁটু ভেঙে পড়ে থাকা আনিসুল হকের মুখের সামনে সটান দাঁড়িয়ে আছে রিচার্ড। হিংস্রতার প্রভাবে বিড়বিড়িয়ে ওঠে ওর পৈশাচিক আত্মার সাইকো মস্তিষ্ক,
“জীবন।”
‘তটস্থ, জীর্ণশীর্ণ হয়ে থাকা আনিসুল হকের অর্হনিশে পোছায় না রিচার্ডের গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর। সহসাই তেজ দেখিয়ে আবারও বলল,”কিহ?”
‘রুক্ষ কর্কশ গলায় অর্নথক হাসি, হেসে চাপা স্বরে আওড়ায় রিচার্ড কায়নাত,”তোর জীবন।”
‘চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল আনিসুল হকের। গলার তেজ যেন নিমিষেই গায়েব হয়ে তিরিক্ষি মেজাজ সংকীর্ণতায় ঢাকা পড়ে গেল। খৈ হারিয়ে তড়িঘড়ি করে বললেন,”আমার ছেলে?কোথায় আছে আমার ছেলে?”
“হেই বয়েজ, লেট’স এনজয় দ্য মুভি।”

‘রিচার্ড বলার সাথে সাথে অট্টহাসিতে ফেটে উঠল ন্যাসো, লুকাস। তাদের দানবীয় শরীর তড়তড়িয়ে কাঁপতে থাকে হাসির তালে তালে। ন্যাসো পেলব দু’হাতের তালু একসাথে করে শব্দ তুলতেই অন্ধকার হতে নীল তীর সূচক আলো এসে পড়ল দেয়ালে। স্ক্রিন ভেসে উঠল দেয়ালের মাঝে। হঠাৎ করে স্ক্রিনে একটা ভিডিও প্লে হতেই অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয়ে গেল আনিসুল হকের । স্ক্রিনে প্লে হতে থাকা ভিডিও ক্লিপের প্রতিটা সেকেন্ড তীরের ফলার মতো যন্ত্রনাদায়ক আনিসুল হকের কাছে,যা সোজে গিয়ে বিঁধছে তার বৃক্ষপটে। অনবরত চেঁচাতে থাকলেন,
“আমার ছেলে’কে বের কর কফিন থেকে, ও মারা যাবে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর।”
‘সাদমানের আঙুলের কাটা অংশ লক্ষ না করেই কফিনের মধ্যে দেখামাত্র অস্থির হয়ে উঠল আনিসুল হক। আঁধার থেকে আসা নীল তীর সূচক আলোকরশ্মি আবার আঁধারেই বিলীন হয়ে যায়। অঝোরে চেঁচাতে থাকলেন আনিসুল হক। প্রাণ প্রিয় ছেলের এই করুণ দশা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। কোনো পিতার পক্ষেই সম্ভবত না মেনে নেওয়া।
“আমার ছেলে’কে ছেড়ে দাও, তোমাদের যা লাগবে তাই দিব আমি। সব নিয়ে যাও শুধু আমার ছেলেকে কিছু কর না।”

‘পৈশাচিক হাসির ঝলকানির দেখা মিলে রিচার্ডের ঠৌঁটে। আনিসুল হকের চুলের ভাঁজে ঢুকিয়ে দিল ড্রাগনের ট্যাটু খচিত হাতটি। ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠে আনিসুল হক। চুল গোড়া থেকে আলগা হয়ে আসে তাও ছাড়ে না রিচার্ড। আনিসুল হকের গোঙানির সাথে শোনা যায় রিচার্ডের শক্ত চিবুকে দাঁতে দাঁত পিষার কর্কশ শব্দ। চুল শক্ত করে টেনে ধরে আনিসুল হকের মাথা কিছুটা উপরে তুলল রিচার্ড। হাত শক্ত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখার ফলে হাতের গৌড় বর্ণের শিরা উপশিরা গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে উঠে। সমুদ্র নীল চোখ দু’টোতে ঘনীভূত হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। রুষ্ট গলায় বলল,
“শুধু চৌদ্দ বছর আগে করা পাপের স্টেটমেন্ট দিলেই হবে। তোর ছেলে সুস্থ ভাবে বাড়ি চলে যাবে।”
‘চৌদ্দ বছর আগের ঘটনার কথা মনে হতেই হৃদপিন্ডে ভয়ংকর রকমের চাপ অনুভূত হয় আনিসুল হকের। বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় রিচার্ডের তামুক চেহারায়। আনিসুল হকের বিষন্ন দৃষ্টিতে তৃপ্তি পায় রিচার্ড।ক্রোধে মটমট করছে ধারালো চোয়াল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,”ইউ হ্যাভ জাস্ট ওয়ান অপশন। ভাবার জন্য পাঁচ সেকেন্ড সময় দিলাম। ”

‘কথা শেষ করে বৃদ্ধাঙ্গুল থেকে শুরু করে ক্রোমে ক্রোমে মুষ্টিমেয় আঙুল তুলে কাউন্ট করতে থাকল রিচার্ড। তিন সেকেন্ডও সময় নেয়নি আনিসুল হক। রাজি হয়ে যায়। ছেলের থেকে বড় তার কাছে কিছুই নয়। যেই ছেলের জন্য এতো বড় পাপের স্রোতে ডুব দিয়েছিল সেই ছেলেকে হারাতে চান না, আর এতে নিজে ধ্বংস হলে হোক। আনিসুল হক খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে এই ধ্বংসযজ্ঞ, পাপাচারে নিবিষ্ট এক অন্তহীন মরিচীকায় আটঁকা পড়ে গিয়েছেন তিনি। এই মরিচীকার অতলে তলিয়ে গিয়ে হলেও ছেলের জীবন নিশ্চিত করার জন্য রাজি হয়ে গেল আনিসুল হক। পূর্ণাবৃত্তি হলো চৌদ্দ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক লোমহর্ষক ঘটনা।
“আমি রাজি।”
‘থেমে, সরাসরি রিচার্ডের তীক্ষ্ণ, গুরুগম্ভীর, অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় জলন্ত অবয়বে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলল,”কি গ্যারান্টি আছে সত্যি বলার পর আমার ছেলেকে ছেড়ে দিবে? ”
“রিচার্ড কায়নাত মানুষের জাতের মধ্যে না পড়লেও এককথার মানুষ। ”

‘রিচার্ডের বিলম্বহীন কাঠকাঠ জবাব। তপ্ত শ্বাস ফেলল আনিসুল হক। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে বেজমেন্টে পরিবেশ পাল্টিয়ে ফেলে লুকাস। আনিসুল হক কে ধরে কাঠের চেয়ারে বসায়। দড়ি দিয়ে বাঁধা রক্তা/ক্ত শরীর সাদা চাদরে ঢেকে দেয়। সামনে রাখা কাঠের টেবিলের উপর এনে ল্যাপটপ রাখল ন্যাসো। তাৎক্ষণিক একটা ফেইক একাউন্ট খুলে সেই একাউন্ট দিয়ে লাইভে গেল। রিচার্ড কে এই মুহুর্তে যান্ত্রিক মেশিন ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। চেহারায় পৈশাচিক স্পষ্ট হাসি, চোখে আগুনের লেলিহান। পৈশাচিক চেহারা জুড়ে তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা তীব্র ক্রোধ আর হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে রক্তাভ আনিসুল হকের অবয়বে। তপ্ত শ্বাস ফেলে বক্তব্য শুরু করেন আনিসুল হক।

“আসসালামু আলাইকুম আমি আপনাদের সর্বজনীয় প্রিয় নেতা আনিসুল হক। জানি আজকের পর হয়তো প্রিয় শব্দটা একটা বিচ্ছিরি গালিতে পরিণত হবে। সত্যিকার অর্থে আমি কারোর প্রিয় হবার যোগ্য নয়। তখনও ভাবিনি কারোর প্রিয় হবার কথা। ভেবেছি শুধু একজন ভালো বাবা হবার কথা, খৈ হারিয়ে নরপশু হয়ে গিয়েছিলাম নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য। নিজের বুক ভরতে গিয়ে অন্যের বুক খালি করে দিয়েছিলাম। তখন শুধু আমি আমার ছেলের কথা ভেবেছি। বিশ্বাস করুন তখন আমার ছেলে ব্যতিত আর কোনো কিছুই ভাবতেই পারিনি আমি। আমার ছেলেকে খুব ভালোবাসি আমি। জানি এটা দেখার পর আমার ছেলেও ঘৃণা করবে আমাকে আজ থেকে। সাদমান আব্বু তোমাকে খুব ভালোবাসে , আব্বুকে ভুল বুঝো না। আব্বু স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিল, কিছুই ভাবতে পারেনি তোমাকে ছাড়া।”

‘এইটুকু বলে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কান্নার ভেঙে পড়েন আনিসুল হক। ন্যাসোর ল্যাপটপের দুই প্রান্ত একা সাথে মিশিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিল। আনিসুল এবং তার স্ত্রী উভয়েরই কোনোরূপ সমস্যা ছিল না বার্ধক্যজনিত। তবুও সন্তানের মুখ দেখতে পায়নি বহুকাল অনেক ডাক্তার দেখালেও। এভাবে আট বছর অনেক চেষ্টা ও দোয়ার মাধ্যমে অবশেষে আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে আনে সাদমানকে। বিয়ের আট বছর পর তাদের কোল আলো করে আসে সাদনাম। কিন্তু সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে ব্যর্থ হয় আনিসুল হকের স্ত্রী। জন্মের পরপরই সাদমান অসুস্থ হয়ে যায়। পরিক্ষা করে দেখা যায় হার্টের মধ্যে তিনটি ছিদ্র। পরবর্তী চেন্নাই থেকে অপারেশন করিয়ে আনলে সাময়িকের জন্য সুস্থ হয় সাদমান কিন্তু তখনও ঔষধ চলছিল । তবুও সুন্দর ভাবে চলছিল আনিসুল হকের পরিবার। বাগানের রং বেরঙের সাজানো ফুলের সমাহার থাকতো তার সুন্দর হাসিখুশি পরিবারে। কিন্তু এক সুনামির ঝড় এসে সকল কিছু আবার উল্টো-পালোট করে দেয় মুহুর্তেই। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় সাদমান। আবারও পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর ধরা পড়ে সাদমানের হার্ট ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে পুরোপুরি। সাদমানের ব্লাডগ্রুপ ছিল খুবই রেয়ার। ধীরে ধীরে অবস্থা বেগতিক হতে থাকে সাদমানে।

‘হসপিটালের সাদা বেডের সাথে মিশে যেতে থাকে শরীর। ডক্টর বলেছে ইমিডিয়েটলি হার্ট ট্রান্সফার করতে হবে। ছেলের রক্তশূণ্য নীল মুখশ্রী দেখে দিশাহীন হয়ে পড়ে আনিসুল হক। সকল জায়গায় খোঁজ লাগাতে থাকে Rh null blood রক্তের কে আছে। তখন অবশ্য মন্ত্রী ছিলের না তিনি, সাধারণ মেয়র ছিলেন। ক্ষমতাও ছিল কম। কেউ-ই চাইবে না নিজের জীবন বির্সজন দিয়ে অন্যকে বাঁচাতে। কেউ হার্ট ডোনেটের জন্য রাজি হয় না । মরিয়া হয়ে অন্য পন্থা ব্যবহার করেন আনিসুল হক। ছেলের কথা ভেবে ক্ষয়ে ছিল নিজের বিবেক, মনুষ্যত্ব। বস্তির অবহেলিত বাচ্চাদের এনে এনে ব্লাডগ্রুপ পরিক্ষা করে সাদমানের সাথে ম্যাচ করাতে থাকে। তিনি জানতেন বস্তির কোনো বাচ্চা যদি হঠাৎ করে গুম হয়ে যায় এতে বেশি হলে দুইদিন নিউজ হবে তাছাড়া তেমন কিছুই না। থানা টাকা দিয়ে সামলিয়ে নেওয়া যাবে। এমন করতে করতে এক ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়, যার নাম ছিল নিলয়।

‘নিলয় ছিল রিচার্ডের একমাত্র বন্ধু কিশোর জীবনের। তাদের মধ্যে শ্রেণীবিভাজন থাকলেও বন্ধুত্বে তা কখনো ফুটে ওঠেনি। ছোট থেকেই রিচার্ড ছিল অন্তর্মূখী। কখনোই কারোর সাথে মিশতে পারত না কিন্তু ঘটনাক্রমে নিলয়ের সাথে গড়ে ওঠে সুন্দর বন্ধুত্ব। হঠাৎ রিচার্ড গায়েব হয়ে গেলে নিলয় এক হয়ে পড়ে। বারো বছর পর দেশে এসে সবার আগে নিলয়কেই খুঁজেছিল রিচার্ড। এতো বছরেও ভুলেনি শৈশবের বন্ধুত্ব। কিন্তু দেশে এসে বস্তিতে খুঁজে নিলয়ের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বস্তির লোকজনের ভাস্যমতে আজ থেকে আরো চৌদ্দ বছর আগে হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যায় নিলয়, এবং নিলয়ের মা রোড এক্সিডেন্ট আর বাবা অসুস্থ অবস্থায় মারা যায়। তবে তা মানতে নারাজ ছিল রিচার্ড। তার স্মৃতিতে অস্তিত্বশীল সকল মেমোরিগুলো বলছিল নিলয় হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়ার ছেলে নয় অসুস্থ বাবাকে ফেলে। রিচার্ডের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অন্য কিছুর আভাস দিচ্ছিল। ঘটনা তলিয়ে দেখার জন্য ফিরে যায় চৌদ্দ বছর আগে।

‘রাস্তা থেকে আনিসুল হকের লোকেরা নিলয়কে তুলে নিয়ে যায়। নিলয়ের মা ছিল অর্ধ পাগল, বাবা ছিল প্রতিবন্ধী। ছেলের জন্য আরো পাগলামি বেড়ে যায় মহিলার। প্রতিদিন থানায় গিয়ে ছেলেকে খুঁজে এনে দেওয়ার জন্য আহাজারি করতো । থানার কনস্টেবল রোজ রোজ তাকে গেইটের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিত নোংরা বস্তুর মতো। একদিন রাতে থানা থেকে ফেরার সময় হঠাৎ এক মালবাহী লড়ির নিচে চাপা পড়ে মহিলা। লড়ি চালক সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য ঘটনাস্থলেই মারায় যায় মহিলা। লাশ উদ্ধারেও আসেনি কেউ, পরবর্তীতে সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

‘ওদিকে বিছানায় শয্যাশায়ী নিলয়ের বাবা তখনও জানতেন না তার স্ত্রী এবং ছেলে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছে। অসুস্থ লোক দরজার পানে চেয়ে থাকতেন সুখের আশার। কিন্তু তার সুখ পাখিগুলো যে খাঁচা খুলে পালিয়েছে তাকে ছাড়ায়। এভাবে পার হয় অনেকদিন। একদিন পঁ/চা গন্ধে বস্তির মানুষরা থানায় কল দেয়। পুলিশ এসে নিলয়দের ঘরের তালা ভেঙে ভিতরে গিয়ে উদ্ধার করে নিলয়ের বাবার পঁ/চা অর্ধ গ/লিত লা/শ। নিলয়ের মা যেদিন শেষ বের হয়েছিল সময় বাইরে থেকে তালা দিয়ে গিয়েছিল বিছানার সাথে মিশে যাওয়া স্বামী শক্ত হাড়গুলো। তবু দেহে প্রাণ ছিল। কিন্তু সেই প্রাণ আর বেশিদিন টিকতে পারেনি বন্ধ ঘরে যত্নের অভাবে। উড়াল দেয় দূর আকাশে।

‘বাকি থাকল নিলয় ? হার্ট ট্রান্সফারের সময়ই মারায় যায় নিলয়। পরবর্তী নিলয়ের লা/শ লুকানোর জন্য আনিসুল হকের লোকরা লা/শ কেটে আট ভাগে বিভক্ত করে। পরবর্তীতে তা ক্যাটারিং সার্ভিসের বড় পাত্রে দিয়ে কা/টা কা/টা অংশগুলো সিদ্ধ করে। সিদ্ধ মাংস গুলো হাড় থেকে কাঁটার দিয়ে আলাদা করে খুবলে নেওয়া হয়। পরে তা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুসি কিমা করে বৃষ্টির পানির সাথে ভাসিয়ে দেয়। আর মাথার খু/লির জায়গা হয়েছিল কোনো এক পরিত্যক্ত নোর্দমায়। সম্পূর্ণ কাজ দাঁড়িয়ে থেকে করেছিল আনিসুল হকের পি.এ।
“মাথায় আসছে না সবকিছু এতো আগে থেকে জানার পরও আট বছর চুপ ছিলাম কেন ?”

‘থমকে যাওয়া মস্তিষ্ক টা ফিরে গেলো তার চিরাচরিত পৈশাচিক আত্মায়। রিচার্ডের কর্কশ গলায় আনিসুল ভেজা চোখের পাতা মেলে মাথা তুলে। রক্তজবার অঞ্জলি মতো টকটকে লাল আভা দিচ্ছে রিচার্ডের চোখের নীল মনির পাশের সাদা অংশে। চোয়াল মাড়ির সাথে চেপ্টে লেগে আছে । আনিসুল হকের টেবিলের সামনে ঝুঁকে কন্ঠ নালির মধ্যে দু’আঙুলে চেপে ধরে হিংস্র প্রাণীর মতো গর্জে উঠল রিচার্ড,
“মরার আগে তোর শোনা দরকার। তবে শোন, তোর ছেলেকে চাইলে আমেরিকায় মেরে বালির সাথে মিশিয়ে দিতে পারতাম আমি । তার জন্য আমার হাতের একটা ইশারার দরকার ছিল শুধু। কেন করিনি শুনতে চাস? তোর এই কুৎসিত চেহারা সকলের সামনে আনার জন্য। তোর নিজের মুখ থেকে তোর ছেলেকে শুনানোর জন্য। শুধু এই দু’টো জিনিসের জন্য এতো আয়োজন। তোর মুখে এই আতঙ্ক আমাকে অমৃতের স্বাদ দিচ্ছে আনিসুল বিশ্বাস কর।
‘রিচার্ডের অট্টহাসি বারি খেতে থাকে বন্ধ বেজমেন্টের প্রতিটা কোণায় কোণায়। ভারিক্কি কণ্ঠস্বরের হাসির সেই প্রতিধ্বনি দেয়ালে বারি খেয়ে ঘর্ষনের ফলে ভূতুরে লাগছে। মৃত্যুর কথা শুনতেই সম্বিত ফিরে পায় আনিসুল হক। বুক পাঁজরে মোচড় দিয়ে ধরল। খৈ হারিয়ে তড়িঘড়ি করে আকুতি মিনতি করতে থাকে রিচার্ডের কাছে,
“দয়া করে আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও। আমাকে মেরে ফেলো তবুও আমার ছেলের কোনো ক্ষতি কর না তোমরা। ও এই ব্যাপারে কিছুই জানত না। আজকের পর ওর সামনে মুখ দেখাতেও পারব না আমি। তার চেয়ে বরং মেরে ফেলো আমাকে তবুও আমার ছেলেকে কিছু কর না।”

“হ্যাঁ ছেড়ে দিব তো তোর ছেলেকে। ওকে দিয়ে আমার আর কোনো কাজ নেই।
‘থেমে, এক পৈশাচিক রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
“বিশ্বাস কর আনিসুল তোকে একটুও কষ্ট দিয়ে মারব না আমি। ট্রাস্ট মি একটুও না।”
‘রিচার্ডের কথা শেষ হবার সাথে সাথে পিছন থেকে লুকাস প্লাস্টিকের পলি দিয়ে মুখে চেপে ধরল আনিসুল হকের । সাদা পলির জন্য চোখের সামনে সকল কিছু ঘোলাটে হয়ে আসে। হাত-পা ছড়িয়ে ছটফট করতে থাকে আনিসুল হক। গলা থেকে মস্তক সম্পূর্ণ পলির দখলে, ফলস্বরূপ শ্বাস নিতে এবং ফেলতে পারছে না। ন্যাসো শরীরের বাঁধন খুঁজতে থাকে। রিচার্ড ঠৌঁটের কোণে বক্র হাসি ঝুলিয়ে ঝাটারের দিকে এগোয়। সকল বাঁধন খুলে ছটফট করতে থাকা আনিসুল হক কে নিয়ে রিচার্ডের পিছুপিছু যায় ন্যাসো, লুকাস।

‘বাগান বাড়ির পিছনের অংশে খালি জায়গায় মাটি খুঁড়ছিল গার্ডরা। রিচার্ড গিয়ে অভিব্যক্তি শূন্য তামুকে ভ্রু উঁচিয়ে ইশারা করতেই চলে যায় সকল গার্ডরা। ন্যাসো আর লুকাস আনিসুল হকের ছটফট করতে থাকা দেহ ছুঁড়ে ফেলে দেয় তার জন্য খোদিত কবরে। জীবন্ত সমাধি দেওয়া হলো এক পাপিষ্ঠ বিষ্ঠার। রিচার্ডের যেন এতেও তেজ কমেনি। তখনও সমুদ্র নীল চোখ দু’টোতে ঘনীভূত হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত জ্বলজ্বল করে । ন্যাসো লুকাস কোদাল দিয়ে মাটি সমান করে দিচ্ছে আনিসুল হকের সমাধিতে। হঠাৎ পিছন থেকে ভেসে আসে এক অনাকাঙ্ক্ষিত, অপরিচিত কন্ঠস্বর। তবে অভিব্যক্তি অত্যন্ত স্বাভাবিক তাদের। ঠোঁট কামড়ে ভ্রু নাচিয়ে পিছন ফিরে রিচার্ড। হাত থমে যায় ন্যাসো,লুকাসের, স্তম্ভিত ফিরে তাকাল সামনে।
“সো দিস ইজ দ্য সিক্রেট প্লেস অফ গ্যাংস্টার রিদ কায়নাত।”
“এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন?”

‘ঠৌঁটের বাঁকা হাসি কিছুক্ষণের জন্য মিলিয়ে গিয়ে কপালের মধ্যে ভাগ দুই ভাগে বিভক্ত হয় প্রেমের। বলল,”মানে?”
“মানে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের অফিসারা এ-তোই মূর্খ যে কারোর নামও ঠিকঠাক ভাবে বলতে পারে না।”
‘রিচার্ডের চিবিয়ে চিবিয়ে বলা কথার বিপরীতে ঠৌঁট প্রসারিত করে হাসল প্রেম। কাছে এগিয়ে গেল, হাতে থাকা পেনড্রাইভ টি দু’আঙুলের ফাঁকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
“বাংলাদেশের অফিসারা কি পারে আর না পারে সেটা জানি না তবে মাফিয়াদের রহস্য ঠিকই উন্মোচন করতে জানে।”
‘ন্যাসো আর লুকাস কোমরে গুঁজে রাখা গা/ন বের করে তেড়ে আসলে সতর্কতা সহিত প্রেমও গা/ন বের করে রিচার্ডকে গা/ন পয়েন্টে নিয়ে নেয়। দু’পাশে মৃদু মাথা নাড়িয়ে হাসল রিচার্ড। হাসিটা বরাবরের মতোই দেখা দিল না দন্তপাটে। হাত তুলে রক্ষাকবচের মতো ছুটে আসা ন্যাসো আর লুকাস কে থামিয়ে দেয় রিচার্ড পিছন না ঘুরেই। দু’আঙুল নাড়িয়ে ইশারা দিল চলে যাওয়ার জন্য। বাক্যহীন ন্যাসো আর লুকাস জায়গা প্রস্থান করে। প্রেম ছোট ছোট চোখ করে তাকায় রিচার্ডের দিকে। অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করল। তবে এই শান্তি নীড় স্রোতের মতো প্রবাহমান গুরুগম্ভীর অবয়ব দেখে ভাবভঙ্গি বুঝার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় প্রেম।
রিচার্ডের ঠোঁটের আগায় জড়ো হয়েছে রহস্যের ঘনঘটা। বন্দুকের সরু নলে নিজের মাথা চেপে ধরে ঠৌঁট এলিয়ে বাঁকা হাসল। দু’জনের দৃষ্টি সরাসরি নিক্ষেপ দুজনের আখিঁদ্বয়ে। প্রেম কিছুটা হচকিয়ে গেল রিচার্ডের এহেন বেপরোয়া কাজে।

“শুনলাম অফিসারের নাকি সুন্দর হাসি খুবই পছন্দ?”
‘চোয়াল ঝুলে যায় প্রেমের। রিচার্ডের কপাল থেকে গা/নটি নেমে যায় আপনাআপনি । প্রেমের রক্তাভ মুখ দেখে ঠৌঁট কামড়ে হাসল রিচার্ড। হঠাৎ অভিব্যক্তি পরিবর্তন করে হিংস্র প্রাণীর মতো কর্কশ গলায় গর্জে উঠল।
“নেহাৎ তোর বিকেলের কাজটা আমার পছন্দ হয়েছে। না হলে এতো বড় দুঃসাহস দেখানোর জন্য তোর জায়গাও তিন হাত মাটির নিচে হতো।”
‘কথা শেষ করে হনহনিয়ে চলে যায় রিচার্ড। প্রতিটা কদমে কদমে আচঁ পাচ্ছে ভিতরের জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। রাগে গিজগিজ থাকে প্রেম। গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে পেনড্রাইভটি ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘাসের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেইন গেইট দিয়ে গিয়ে বাইকে বসে। প্রথমবার দেয়াল টপকিয়ে ভিতরে আসলেও এবার আর তা করতে হয়নি। রিচার্ডের ইশারায় গার্ডরাও কিছু বলেনি। পুল সাইডে দাঁড়িয়ে থেকে রিচার্ড দেখতে থাকে পরাজিত সৈনিকের মতো মাথা নিচু করে চলে যাওয়া প্রেমকে। জঙ্গলের আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা গলিয়ে লোকালয়ে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাইকটি। আশেপাশে ঝোপঝাড় থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝিপোকা আর শেয়ালের হাঁক-ডাক। কার্নিশের রগ গুলো ভেসে ওঠেছে ক্রোধে।

‘রিচার্ডের সাথে আনিসুল হকের কোনো যোগসূত্র না পেয়ে সাদমানের হিস্ট্রি ঘাটতে শুরু করেছিল প্রেম। ঘাঁটতে ঘাঁটতে বেরিয়ে আসে চৌদ্দ বছর আগে হওয়া সাদমানের ওপের হার্ট সার্জারির ব্যাপারটা। হসপিটাল থেকে সাদমানের সকল রিপোর্ট সংগ্রহ করে প্রেম শুধুমাত্র সন্দেহের বসে। তবে সেই সন্দেহ ক্লু’তে রুপান্তরিত হয় যখন হার্ট ডোনেট করা ব্যক্তির কোনোরকম ইনফেকশন পাওয়া যায় না রিপোর্টে। সন্দেহ আরো গাঢ় হয় প্রেমে যখন আর একটু তলিয়ে দেখতে পায় ঠিক সেই সময় বস্তির একটা ছেলেও নিখোঁজ হয়েছিল। পুরোনো নিউজ ঘেঁটে এগুলো বের করে প্রেম। ঘটনা আরো তলিয়ে দেখলে বেরিয়ে আসে রিচার্ডের বাসার পাশেই অবস্থিত ছিল সেই বস্তি এবং দু’জন একসাথে পাশের একটা কিন্ডারগার্টেনে পড়ত। দুইয়ে, দুইয়ে চার মিলিয়ে নেয় প্রেম। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বার্তা দিচ্ছিল আনিসুল হকের কাছে আবার কল আসবেই। সেই জন্য অযাচিত ভাবে আনিসুল হকের বাসভবনে গিয়েছিল প্রেম। তখন কমিশনারের সাথে বেরিয়ে গেলেও বাসার পিছন গেইটে লুকিয়ে অপেক্ষা করছিল প্রেম । তার ধারণা ঠিক হয়। আনিসুল হক কোনো গার্ড বা ড্রাইবার ছাড়া একাই কোথায় যাওয়ার উদ্দেশ্য পিছন গেইট দিয়ে লুকিয়ে বের হয়। তখনই আনিসুল হকের পিছু করতে করতে রিচার্ডের বাগানবাড়িতে পৌঁছায় প্রেম।

‘রিচার্ডের বলা শেষ কথা বিকেলের কাজ !? দ্বিতীয় বারের মতো টাকা বৃষ্টি ফলনের পিছনে মাস্টারমাইন্ড ছিল প্রেম নিজে। সকালে প্ল্যাটফর্মে আসল টাকা ভর্তি ব্যাগ সরিয়ে সুকৌশলে নকল টাকা রেখে দিয়েছিল প্রেম। আগে থেকেই ধারণা ছিল এতো সহজে রিচার্ড কে ধরতে পারবে না তারা। কিন্তু নকল টাকা পাওয়ার পরও রিচার্ডের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে সন্দেহ আরো গাঢ়তা পায়, যে কিডন্যাপের পিছনে টাকা মূল উদ্দেশ্য ছিল না। পরবর্তীতে সরিয়ে রাখা আসল টাকা গুলো আবারও বস্তির গরিব, দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেয় প্রেম। সে নিজেও অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠেছে। অভাবের তাড়না কি জানে সে। কিন্তু এখনও এটার রহস্য ভেদ করতে পারল না, নকল টাকা পাওয়ার পরও কেন নিজের এতোগুলা আসল টাকা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিল, তাও আবার রিচার্ডের মতো একজন হার্টলেস, নরখাদক মানব।

‘ভাবনার মাঝেই লোকালয়ে এসে পড়ে প্রেম। লোকালয়ে আসতেই ঢাকা শহরের সেই বিরক্তিকর জ্যামে ফেঁসে যায় সে। এমনিতে মেজাজ ক্ষিপ্ত তারউপর আরও এতো লম্বা জ্যাম রাগে কটমট করতে থাকে প্রেমের চোয়াল। হঠাৎ অর্হনিশে আসে এক রমনীর খিলখিলে হাসির রিনঝিনে শব্দ। সেদিন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় প্রেম। দেখতে পায় ফুটপাতের পাশে এক ফুচকার দোকানে কিছু মেয়ে একসাথে ফুচকা খাচ্ছে। ওদের মধ্যেরই একটা মেয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে। প্রতিটা হাসির পরতে পরতে উদীয়মান হয় গালের মধ্যভাগের ছোট সৌন্দর্যের গর্ত ।প্রেমের ঠৌঁটের কোণে ফুটে উঠল এক পৈশা/চিক রহস্যময় হাসি।

‘গায়ের ওভার কোট খুলে এক হাতে ঝুলিয়ে লম্বা লম্বা কদম ফেলে উপরে যাচ্ছে রিচার্ড। বেডরুমের সামনে যেতেই কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজের দেখা মিলে । সব মেডরা দরজা উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। সকলের মুখ চুপসে আছে, উদ্বিগ্নতা আর মৃত ভয়ে জর্জরিত। রিচার্ডকে দেখতে পেয়ে সকলের গা শিউরে ওঠে। থরথর করে কাঁপতে থাকে। দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় সবাই । রিচার্ড মেডদের দিকে না তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে ভিতরে যায়। রুমে পা রাখতেই হাত থেকে ওভার কোট নিচে পড়ে গেল, থেমে গেল রিচার্ডের পা। হঠাৎ গুলির শব্দে নিচ থেকে ন্যাসো লুকাস দৌঁড়ে উপরে আসে। দরজার সামনে আসতেই শুকনো ঢোক গিলল দু’জনে।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫

‘দু’জন মেড রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। আরেকজন দরজার আড়ালে দু’হাতে কান চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে এই নৃশংস অপ্রীতিকর দৃশ্যের সম্মুখীন হয়ে। রেশমা এলিজাবেথের হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। চোখ গোল গোল হয়ে যায় লুকাসের এলিজাবেথের হাত দেখে। ন্যাসো ঘাবড়ে গিয়ে তাকায় রিচার্ডের অনুভূতি শূন্য চওড়া তামুকে। একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে রিচার্ড এলিজাবেথের উপশিরার উপরের পাতলা চামরার অংশে ফাঁক গলিয়ে আগত তাজা উষ্ণ তরলে। অযাচিত ক্ষুব্ধতায় হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে রিচার্ড। ন্যাসো তড়িঘড়ি করে বলল,” আমি এক্ষুনি ডক্টর আনার ব্যবস্থা করছি বস । ”
‘রিচার্ডের শূন্য দৃষ্টিতে জমে রয়েছে ক্রোধের পাহাড়। শক্ত চোয়ালে কটকমটিয়ে বলল,”না।”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৭