ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব ৪০

ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব ৪০
লেখিকা দিশা মনি

মিষ্টি রাফসানকে কিছু বলতেই যাবে এমন সময় সেই সিরিয়াল কিলার ছু*রি নিয়ে মিষ্টির দিকে এগোতে থাকে আবার৷ মিষ্টি ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাফসান মিষ্টির সামনে চলে আসে এবং ছুরিটা রাফসানের পেটে ঢুকে যায়৷ মিষ্টি আর্তনাদ করে বলে ওঠে,”রাফসান!”
এরমধ্যে এলা কিছু পুলিশ সদস্যকে নিয়ে সেখানে চলে আসে এবং তারা সবাই মিলে সিরিয়াল কিলারকে ঘিরে ধরে। সিরিয়াল কিলার পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় এবং তাকে ধরে ফেলা হয়। মিষ্টি রাফসানের কাছে বসে পড়ে এবং কান্নারত স্বরে বলে,

“তোমার কিছু হবে না,রাফসান। এতদিন পর আমি তোমায় ফিরে পেয়েছি..আর তোমায় আমি হারাতে পারব না।”
এদিকে রাফসান কোন কিছু না বলেই ব্যথার চোটে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অতঃপর সবাই মিলে রাফসানকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়।
হাসপাতালে সবাই মিলে অপেক্ষা করছে ডাক্তারের আগমনের জন্য। রাফসানকে অটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মিষ্টি ক্রমশ প্রার্থনা করে চলেছে যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এমন সময় আসাদ, মোর্শেদ চৌধুরী ও আমিনা সেখানে চলে আসে। আমিনা এসেই মিষ্টির পাশে বসে বলে,
“কি শুনলাম আমি মিষ্টি আপু? তোমার উপর নাকি আক্রমণ হয়েছিল।”
মিষ্টি আমিনাকে সব ঘটনা খুলে বলে৷ সব শুনে আমিনা হতবাক হয়ে যায়। মোর্শেদ চৌধুরী বলেন,
“রাফসান এখন কেমন আছে? আর ও এতদিন কোথায় ছিল কিছু জানো তুমি?”
“আমি কিচ্ছু জানি না আব্বু। একমাত্র ও সুস্থ হলেই আমি সবটা জানতে পারব।”
কিছু সময় পর একজন ডাক্তার এসে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মিস্টার রাফসান এখন অনেকটাই সুস্থ। আপনারা চাইলে তার সাথে গিয়ে দেখা করতে পারেন।”
মিষ্টি আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে ভেতরে প্রবেশ করে। মিষ্টিকে দেখামাত্রই রাফসান নড়েচড়ে ওঠে। মিষ্টি রাফসানের পাশে বসে বলে,
“তুমি ঠিক আছ তো এখন?”
“হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।”
“এত দিন কোথায় ছিলে তুমি? কেন এভাবে আমাদের থেকে লুকিয়ে বেড়ালে?”
“দুঃখিত,আমি বুঝতে পারছি না আপনি এসব কি বলছেন। আমি লুকিয়ে বেরিয়েছি মানে?”
“নাটক করা বন্ধ করো রাফসান। আমি জানি তুমি আমার রাফসান, আমার স্বামী।”
“আপনি ভুল ভাবছেন। আমার নাম ইমানুয়েল পল। আমি একজন পুলিশ অফিসার। আর দুঃখিত, আমি আপনাকে চিনি না। আমি কিভাবে আপনার স্বামী হবো? আমার মনে হয় আপনি কারো সাথে আমায় গুলিয়ে ফেলছেন।”
মিষ্টি এবার ক্রোধান্বিত স্বরে বলে,

“আমি তোমাকে চিনতে ভুল করিনি রাফসান। আমি জানি না, তুমি কেন এসব বলছ। কেন সত্যটা স্বীকার করছ না। কিন্তু আমি শতভাগ নিশ্চিত যে তুমি আমার স্বামী রাফসান শিকদার। এর আগে তুমি আমাদের মেয়ের সাথেও দেখা করেছ তাহলে..”
“দুঃখিত আপনি এবার একটু বেশিই অযৌক্তিক কথা বলছেন। একে তো আমি আপনাকেই চিনি না এখন আবার আপনি আমাকে আপনার সন্তানের বাবা বানিয়ে দিচ্ছেন। এটা ঠিক না।”
“রাফসান! এবার কিন্তু অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে৷ ৬ বছর কি কম ছিল যে তুমি আবার নতুন নাটক শুরু করেছ।”
এরমধ্যে আসাদ কেবিনে প্রবেশ করে। সে এসেই বলে,
“কি হয়েছে মিষ্টি? কোন সমস্যা?”

” দেখো না আসাদ, রাফসান এসব কি বলছে। ও নাকি রাফসান নয় ও নাকি ইমানুয়েল পল। জানো ৬ বছর আগেও ও আমার সাথে এই সব মিথ্যা নাটক করেছিল। তখন হয়তো আমি ওকে চিনতে পারিনি কিন্তু এবার আমি নিশ্চিত যে ঐ আমার রাফসান। যদি ও আমার রাফসান না হতো তাহলে এভাবে বিপদের মুখে ঝাপিয়ে পড়ে আমায় রক্ষা কর‍ত না।”
“শুনুন, আমি যা করেছি নিজের দায়িত্ব থেকে করেছি। আমি একজন পুলিশ অফিসার আর তাই এটা আমার দায়িত্ব যে আমাকে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
মিষ্টি রাফসানের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বলে,
“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো যে তুমি আমার রাফসান নও।”
এমন সময় এলা সেখানে চলে আসে এবং কেবিনে প্রবেশ করেই মিষ্টিকে ধাক্কা দিয়ে রাফসানের কাছ থেকে সরিয়ে দেয়। আসাদ মিষ্টিকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাছায়। এলা রাগান্বিত স্বরে বলে,
“এই মেয়ে দূরে থাকো আমার পলের থেকে। পল আমার বয়ফ্রেন্ড এবং ফিয়ন্সে। খুব শীঘ্রই আমাদের বিয়ে হতে চলেছে। তাই একদম ওর কাছে ঘেষার চেষ্টা করবে না।”
মিষ্টি হতবাক স্বরে বলে,

“এসব কি বলছেন আপনি? ও রাফসান, ও আমার স্বামী। আপনি ওর ফিয়ন্সে মানে?”
“ও আপনার কোন স্বামী নয়। ও আমার ফিয়ন্সে। ওকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। ওর নাম রাফসান নয়। বুঝতে পেরেছেন আপনি?”
“এটা কিভাবে সম্ভব? আমি নিজের স্বামীকে চিনতে ভুল করতে পারি না। আচ্ছা একটু অপেক্ষা করুন,আমি আমার স্বামীর সাথে আমার কিছু ছবি আপনাকে দেখাচ্ছি।”
বলেই নিজের ফোনে নিজের আর রাফসানের কিছু ছবি বের করে এলাকে দেখায়। এলা ছবিগুলো দেখে হতবাক স্বরে বলে,
“ইনি তো দেখতে একদম পলের মতো। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?”
“দেখেছেন। ও হলো আমার স্বামী রাফসান..”
এমন সময় ইমানুয়েল পল বলে ওঠে,
“আমি রাফসান নই আমি ইমানুয়েল পল। রাফসান মারা গেছে।”
মিষ্টি বলে,
“না, এটা হতে পারে না।”
“এটাই সত্যি। আমি আপনার স্বামীর কবরও আপনাকে দেখাতে পারি।”
“কি?”

“এই ব্যাপারটা আমি আপনাকে জানাতে চাই নি কারণ আপনি হয়তো কষ্ট পাবেন। আপনার স্বামী মৃত্যুর আগে আমায় বলেছিল আপনাদের এসব কথা না জানাতে। আমি হলাম ইমানুয়েল পল। আমার পরিচয়েই আপনার স্বামী এই দেশে ছিল৷ কিন্তু আজ থেকে ৬ বছর আগে যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল সেই দূর্ঘটনাতেই ওনার মৃত্যু হয়েছিল। আমি নিজে ওনার লাশ দাফন করেছিলাম। আর..”
মিষ্টি হঠাৎ করে চিৎকার করে ওঠে। সে বলে ওঠে,
“না, এটা হতে পারে না। এটা…”
বলেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মিষ্টির জ্ঞান হারানো পরপরই আসাদ তাকে ঘিরে ধরে।

মিষ্টির জ্ঞান ফিরতেই সে নিজের চোখের সামনে নিজের মাকে দেখতে পায়। রোকসানা শিকদার ও রাফাও ছিল সেখানে।
রাফা বলে ওঠে,
“মম, তুমি ঠিক আছ তো। ড্যাড খুব পচা। ড্যাড তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমি ড্যাডকে বকে দেব।”
মিষ্টি রাফাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে।
সুইটি চৌধুরী বলে ওঠেন,
“ব্যস, অনেক হয়েছে৷ এসব নাটক এবার বন্ধ করা হোক। রাফসান যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে তো আর বাধা নেই। তুমি তাহলে এবার দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত থাকো। আসাদের সাথে খুব শীঘ্রই আমি তোমার বিয়ে দেব।”
“মম..”
“ব্যস আর কোন কথা না।”
এমন সময় রোকসানা শিকদার বলে ওঠে,

ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব ৩৯

“আমিও তোমার মায়ের সাথে একমত। এবার তুমি নিজের জীবন নতুন করে শুরু করো।”
মিষ্টি বলে,
“বেশ, তোমরা সবাই যদি এটাই চাও। তাহলে তাই হবে। আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি। তোমরা দেখতে থাকো।”

ভূমধ্যসাগরের তীরে পর্ব ৪১