মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১০
নুজাইফা নূন
”আমি সারজিস কে চিনতে ভুল করেছি।সারজিসের উপর বিশ্বাস ভরসা থেকে সারজিসের সাথে সিজদার বিয়ে ঠিক করে এসেছিলাম। কিন্তু সারজিস আমার মান রাখে নি।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাইফানের সাথে সিজদার বিয়ে হবে।সাইফান খুবই ভালো ছেলে ।সাইফান সিজদা কে অনেক ভালো রাখবে।সুখে রাখবে।”
-” এসব কি বলছেন কাকিমা? একজনের সাথে বিয়ে ঠিক করে এখন আবার অন্যজনের সাথে বিয়ে হবে।এটা আমি মানতে পারছি না কাকিমা। বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয় কাকিমা।প্রথমত আপনারা ঐশ্বর্য কে দেখতে এসে সিজদা কে পছন্দ করেছিলেন।আমি নিজের মেয়ের সুখের কথা না ভেবে সিজদার সুখের কথা ভেবে আপনার প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আপনি অন্য কথা বলছেন কাকিমা।সিজদা বাবা মা ছাড়া বড় হয়েছে বলে ফেলনা নয়।সিজদা আমার আরো একটা মেয়ে।আমি জানি সিজদা একটা কাঠের পুতুল। সিজদা কে যে যেভাবে নাচাবে,সিজদা সেই ভাবেই নাচবে।তাই বলে আমি বিবেকহীন হয়ে যাই নি।আমি সিজদার জীবন নিয়ে পুতুল খেলা খেলতে পারি না কাকিমা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেয়েটা আমার ছোটবেলা থেকে অযত্নে অবহেলায় বড় হয়েছে।আমি চাইলেও কিছু করতে পারি নি।আমাকে মাপ করবেন কাকিমা।আমি সিজদার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবো না।”
-” তুই আমাকে ভুল বুঝছিস রাশেদ।আমি ও চাই সিজদা ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।তুই তো জানিস সারজিস একজন নামকরা কার্ডিওলজিস্ট।সারজিস জন্য দেশে মেয়ের অভাব ছিলো না। তবুও আমি সারজিসের জন্য সিজদার মতো একটা আন এডুকেটেড মেয়ে
কে সিলেক্ট করেছিলাম।আর আমি এটাও শিওর যে সারজিস কে আমি জোর করলে সারজিস ঠিকই বিয়েটা করতো। কিন্তু আমি সারজিস কে জোর করতে চাই নি।সিজদা আর সাইফান দুজনের ভাগ্য যেন একই সূত্রে গাঁথা।সিজদা যেমন ছোটবেলা থেকে অযত্নে অবহেলায় বড় হয়েছে।তেমনি সাইফান ও ছোটবেলা থেকেই অবহেলার পাত্র হয়েছে। সেই জায়গা থেকে সাইফান সিজদার কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারবে।যেটা সারজিস কখনোই পারতো না।আমি সিজদার ভালোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকিটা তোর ইচ্ছে। তুই যদি চাস তবে বিয়েটা হবে।নাহলে বিয়েটা হবে না।”
-” আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি কাকিমা। কিন্তু ছোট ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার ব্যাপার টা নিয়ে সিজদা কেমন রিয়্যাক্ট করবে সেটাই ভাববার বিষয়।বিয়ের পর যদি তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়?”
-” যেহেতু সারজিস সিজদা দুজনেই কেউ কাউকে দেখি নি। সেহেতু আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে। তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে বিয়ের তোরজোর শুরু করে করে দেই? সাইফানের ছুটি হয়েছে।সাইফান ও খুব শ্রীঘ্রই চলে আসবে।
তুই ও দেশের বাইরে চলে যাবি।তাই আমার মনে হয় শুভ কাজে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চার হাত এক করে দেওয়া টা ভালো হবে।”
-” ঠিক আছে কাকিমা।আপনি যেটা ভালো মনে করেন সেটাই হবে।”
-”তাহলে আগামীকাল বুধবার বিয়ের শপিং, বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ, মেহেন্দী, আর শুক্রবার বিয়ে।”
-” ঠিক আছে কাকিমা।আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং মেয়েটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারলে আমি নিশ্চিন্তে বাইরে যেতে পারবো।আমি রাখছি কাকিমা।আমার এখন সময় এসেছে সিজদার বাবার অবর্তমানে একজন বাবার দায়িত্ব পালন করার।আজ বাদে কাল মেয়েটার বিয়ে। অনেক বড় দায়িত্ব কাঁধে এসেছে আমার।”
-” শোন সিজদার বিয়ে বাবদ এক টাকাও খরচা করবি না তুই।সিজদার বিয়ের সমস্ত খরচ আমার । তোদের বাড়ির একটা সুতাও আমি সিজদার শরীরে দেখতে চাই না।আমি তোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিবো।”
-” এটা আপনি কি বলছেন কাকিমা? আমি সিজদার মামা।আমার নিজের একটা দায়িত্ব আছে না?মেয়েটার জন্য আমি কিছুই করতে পারি নি কাকিমা।এখন যখন মেয়েটার জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছি।তখন আমাকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না কাকিমা।আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো বিয়ের আয়োজনে কোন ক্রুটি না রাখার।কাউকে কোনো অভিযোগ আনতে দিবো না।”
-” তুই যা চাস তাই হবে।রাখছি এখন।”
-” ঠিক আছে কাকিমা বলে রাশেদ চৌধুরী ফোন রেখে সিজদার সিজদার রুমের দিকে অগ্রসর হয়।”
-” সিজদা সবে মাত্র আসরের নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখেছে।এরই মধ্যে রাশেদ চৌধুরী সিজদার রুমে প্রবেশ করে।রাদেশ চৌধুরী কে দেখে সিজদা একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো,
-” কিছু বলবা মামু?”
-” হ্যাঁ রে মা । বলার জন্যেই তো এসেছি।”
-” দাঁড়ায় আছো ক্যা? বিছানায় বসো।বসে কথা কও।”
-” সিজদার কথা শুনে রাশেদ চৌধুরী সিজদা কে বুকে টেনে নিয়ে বললো,
-” তোকে এই মুহূর্তে বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিলো না রে মা। কিন্তু আমার যে হাত পা বাঁধা অবস্থায় রয়েছে।আজকে যা হলো এর পরেও আমি তোকে বিথীর ভরসায় রাখতে পারছি না। সেজন্য শুক্রবারেই তোর বিয়ের পাকা কথা হয়েছে। কাকিমাও চাইছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক।তাই আমি আর দ্বিমত করি নি।তবে একটা সমস্যা হয়েছে মা।পাত্র বদল হয়েছে।এতে তোর কোন আপত্তি আছে মা?”
-” না মামু। তুমি আমার গুরুজন।তোমার কথায় শেষ কথা।আমি জানি তুমি যা করবে আমার ভালোর জন্যই করবে।আজকে যদি আমার বিয়ের জন্য তুমি কোনো ভ্যান চালক,রিক্সা চালক পাত্র ঠিক করতে।আমি সেটাই হাসি মুখে মেনে নিতাম মামু।এই বিয়ে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই মামু।তাই তুমি কোন চিন্তা করো না। তুমি যা বলবে তাই হবে।আমার কাছে কোনো কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই মামু।”
-” শুনে প্রাণ টা জুড়িয়ে গেল রে মা। দেখবি তুই একদিন অনেক সুখী হবি।তোর না পাওয়া আদর , যত্ম, ভালোবাসা সবটা ফিরে পাবি।তোর মতো এতো ভালো মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হতে পারে না। কিছুতেই না।।”
-”হসিপালের থেকে বেরিয়ে সারজিস সোজা হালিমা মঞ্জিলে চলে আসে।আজ সারাদিন এক প্রকার অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে কেটেছে তার। কিছুতেই নিজের কাজে ফোকাস দিতে পারে নি। বারবার চোখের সামনে সিজদার চুপসে যাওয়া ভীতু মুখটা ভেসে উঠছিলো।সারজিস চুপিসারে সিজদার ভীতু মুখের গোটা কয়েক ছবি তুলে নিয়েছে।এমনকি সিজদার ব্যবহার করা রক্ত মাখা রুমাল খানা সযত্নে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।যদি ও রুমাল খানা পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে সারজিসের।রক্ত মাখা রুমাল দেখে রামিম রুমাল খানা ফেলে দিতে গেলে সারজিস রামিমের হাত থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নেয় রুমাল খানা।যেন অনেক মূল্যবান সম্পদ ফেলে দিতে গেছিলো রামিম।সারজিস ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই হালিমা বেগম ছুটে এসে সারজিসের হাতের ব্যান্ডেজ দেখে চোখে পানি জমে তার।সে ভেজা কণ্ঠে বললো,
-” তোমার হাতে কি হয়েছে দাদুভাই?তুমি ঠিক আছো তো?সকালে তোমার সাথে কথা হলো।কই তখন তো এই ব্যাপারে কিছু বললে না?”
-” কিছু না দাদু।সামান্য একটু চোট লেগেছিল।রামিম ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে।টেনশন করার মতো কিছু হয় নি।”
-” তুমি কেমন যেন আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো দাদুভাই।এতো বড় একটা বিপদ হলো।অথচ আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?”
-” কাম অন ডার্লিং।নাথিং হ্যাপেন্ড টু মি।আ’ম ফাইন।ডোন্ট ওয়ারি।”
-” ঠিক আছে ।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৯
-” ওকে মাই ডেয়ার বলে হালিমা বেগমের দিকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে সারজিস গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিজের রুমে চলে যায়।সারজিসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে হালিমা বেগম বললো,
-” আজকে তোমাকে একটু বেশিই খুশি লাগছে দাদুভাই।মনে হচ্ছে যেন তোমার মন টা তোমার মধ্যে নেই।তোমার মনের দখলদার অন্য কেউ হয়ে গিয়েছে।সিজদার সাথে জোর করে বিয়ে দিলে তোমার এই হাসি খুশি মুখটা হয়তো দেখতে পারতাম না আমি। এখন মনে হচ্ছে আমি সাইফানের সাথে সিজদার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ভুল করি নি।আমার একটা ভুল সিদ্ধান্তে তোমারাদের দুটো জীবন নষ্ট হয়ে যেতো।সাইফানের বিয়েটা ভালোই ভালোই মিটে যাক।এরপর তোমার মনের রানী কে খুঁজে বের করে তোমাদের ও
চার হাত এক করে দিবো। তবেই আমার শান্তি মিলবে
।”