মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৭

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৭
নুজাইফা নূন

-” আপামণি কোথায়? সেদিনের পর থেকে আপামণি আপামণি রে যে দেখছি না।আপামণি কি বাড়িতে নেই?”
-” ঐশ্বর্যের কথা শুনে বুক ধুক করে উঠলো বিথী চৌধুরীর।সিজদা কে কি জবাব দিবে জানা নেই তার।তিনি নিজের মেয়েকে খুব ভালো করে চিনেন।তাই তো যখনি ঐশ্বর্যের সিজদা কে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনেন।তখনি তার মনে সন্দেহ জাগে।তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ঐশ্বর্য মনে মনে কিছু একটা ছক কষছে। কিন্তু সেটা যে কিডন্যাপিংয়ের মতো এতো বড় একটা ক্রাইম হবে ।

তিনি সেটা কল্পনাও করতে পারেন নি।তিনি সরাসরি ঐশ্বর্য কে সিজদার কিডন্যাপিংয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ঐশ্বর্য প্রথমে অস্বীকার করে।পরে ঐশ্বর্য কে জেরা করতেই ঐশ্বর্য বিথী চৌধুরীর কাছে সবটা স্বীকার করে।সবটা শুনে বিথী হতবাক হয়ে যান।রাগের বশে প্রথম বারের মতো মেয়ের গায়ে হাত তুলেন। কিন্তু পরক্ষণেই ঐশ্বর্যের চোখে পানি দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে তার।তিনি ঐশ্বর্য কে বুকে টেনে নিয়ে চোখে মুখে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেন।মেয়ের দুশ্চিন্তায় পাগল প্রায় অবস্থা হয়ে যায় তার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গুন্ডা গুলো যেহেতু পুলিশের হেফাজতে ছিলো। পুলিশের জেরার মুখে যদি ঐশ্বর্যের নাম বলে দেয়।তখন তো পুলিশ এসে ঐশ্বর্য কে কোমরে দড়ি পরিয়ে নিয়ে যাবে।ঐশ্বর্যের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।ঐশ্বর্যের সেফটির কথা চিন্তা করে তিনি মেয়েকে রংপুর তার কানিজের বাসায় পাঠিয়ে দেন।তিনি এটাও বলে দিয়েছেন যতোদিন না কেস সলভ হচ্ছে ততোদিন ঐশ্বর্যের রংপুরে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে।বিথী চৌধুরীর থেকে রেসপন্স না পেয়ে সিজদা আবারো বললো,

-” আপামণি আমার বিয়েতে থাকবে না মামিমা? কোথায় আপামণি?”
-“সিজদার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিথী চোধুরী নিজের রুমে এসে ঐশ্বর্য কে কল করেন। কিন্তু ঐশ্বর্য কল রিসিভ করে না। মেয়ের জন্য বড্ড চিন্তা হয় তার। তিনি পুনরায় কল করেন।সাথে সাথে ঐশ্বর্য কল রিসিভ করে বললো,
-” আর কতোদিন আমি এভাবে গা ঢাকা দিয়ে থাকবো মম ? বিরক্ত লাগছে আমার। নিজেকে দাগী আসামি মনে হচ্ছে।সবকিছু হয়েছে ঐ বুড়ি টার জন্য।বুড়ি টা যতো নাটক জানে।এখন যদি বুড়ি টা কে সামনে পেতাম বলতাম,নাটক কম করো পিও।নাটক বাজ মহিলা একটা।”

-” সবটা হয়েছে তোমার রাগ জেদের কারণে। শুধু শুধু বুড়ি টার দোষ দিচ্ছো কেন? তোমাকে কে বলেছিলো এতো বড় একটা ক্রাইমের সাথে ইনভলব হতে ?তোমার পাপা যদি জানতে পারে তোমাকে কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না। তোমার সাথে সাথে আমাকে কথা শোনাবে।”
-” তুমি বুড়ি টার পক্ষ নিয়ে কথা বলছো মম?”
-” হ্যাঁ বলছি।বলতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ এখানে হালিমা বেগমের কোনো দোষ নেই।সব দোষ তোমার।”
-“যা করেছি বেশ করেছি।এখানে বুড়ির দোষ ও কম নয় মম।বুড়ি টা যদি আগেই বলতো আমার হিরোর সাথে সিজদার বিয়ে টা হচ্ছে না।অন্য কারো সাথে হচ্ছে।তাহলে আমার এতো কিছু করতে হতো না।আর না আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হতো।আমি আর নিতে পারছি না মম।বাড়িতে কতো আনন্দ , ফুর্তি হচ্ছে আর আমি এখানে বসে বসে আঙ্গুল চুষছি।”

-” তুমি টেনশন করো না বেবি।আমি দেখছি কি করা যায়?তোমার মমের টাকা পয়সা কম আছে নাকি ?টাকা দেখলে কাঠের পুতুল ও হাঁ করে থাকে।একটু সময় দাও।টাকা দিয়ে সবটা ক্লোজ করে দিবো।”
-” যা করার তাড়াতাড়ি করো।”
-” ওকে বেবি। তুমি প্যানিক করো না।রাখছি আমি।”
-” ওকে মম বলে ঐশ্বর্য কল কেটে দিয়ে গ্যালারি তে গিয়ে সারজিসের ছবি বের করে ছবিতে আলতো চুমু দিয়ে বললো,
-”চেয়েছিলাম হতে তোমার মনের রাজ্যের রানী
কিন্তু তুমি আমায় বানিয়ে দিলে পলাতক আসামি।”

-” মেহেদী আর্টিস্ট লাবণ্য খুব সুন্দর করে সিজদার হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সিজদার মন ভার হয়ে আছে।সব কিছু তে বিরক্ত লাগছে তার।সিজদার মন খারাপ দেখে মেহেদী আর্টিস্ট লাবণ্য বললো,
-” জানো সিজদা আমার বিয়ের পরের দিন সকালে কি হয়েছিলো ?”
-” সিজদা ছোট করে জবাব দেয় , না আপা ।”

-” তাই তো তুমি কিভাবে জানবে? আমি তো তোমাকে বলিই নি।তাহলে তুমি কিভাবে জানবে বলো? তাহলে শোনো কি হয়েছিল। কাকতালীয় ভাবে আমার বর আমার আমার ভাইয়ের নাম এক‌ই।তো বিয়ের পরের দিন সকাল বেলা আমার ঘুম ভাঙ্গার পরেই দেখি রুমে লাইট জ্বলছে। লাইটের আলো সহ্য হয় না আমার।আমি বাড়িতে যেভাবে চিৎকার করতাম। সেভাবেই চিৎকার করে বলে উঠেছিলাম এই রাফিন কুত্তা রুমের লাইট বন্ধ কর।মানে আমি বিয়ের পরেও ভুলে গেছিলাম যে আমি বিবাহিত।মেয়েটার কথা শুনে সিজদা হেসে দেয়।যা দেখে লাবণ্য বললো,
-” তোমার হাসি টা খুব সুন্দর সিজদা।বর কে ঘায়েল করার জন্য এমন মিষ্টি হাসি‌ই যথেষ্ট। সবসময় এমন হাসি খুশি থাকবে।আচ্ছা তোমার বরের নামের প্রথম অক্ষর কি গো?”

-” লাবণ্যের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় সিজদা।সে তো তার বরের নামটা পর্যন্ত জানে না।সারজিসের নাম জানতো। কিন্তু সারজিসের সাথে তো তার বিয়ে হচ্ছে না।অন্য কারো সাথে হচ্ছে।সিজদা কিছু বলতে যাবে তার আগেই বিথী চোধুরী এসে বললো,
-” ওর হবু বরের নাম সাইফান।”
-” লাবণ্য সিজদার হাতে মেহেদী দিতে দিতে বললো ,
-” সাইফান মিন প্রথম অক্ষর S। বাহ্ চমৎকার। S ফর সাইফান S ফর সিজদা। দুজনের নামের মিলের মতো আশা করি তোমাদের মনের মিল ও হবে।”

-” সিজদা প্রতিত্তরে শুধু মিষ্টি হাসি উপহার দেয়।মেহেদী দেওয়া শেষ হলে সিজদা কিছুক্ষণ মেহেদি শুকিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করে। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হবার পর সিজদা হাত ধুয়ে দেখে মেহেদির গাড় লাল রঙ তার হাতে যেন জ্বলছে।সিজদার হাত দেখে সালমা বেগম বললো,
-” শুনছি যার হাতের মেহেদীর রং যতো কড়া হয়।তার বর নাকি তারে ততো ভালোবেসে।তোরে তো জামাই বাবাজি মেলা ভালোবাসবো রে সিজদা।বর সোহাগী হবি তুই।সালমা বেগমের কথায় সিজদা লজ্জা পেয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে।”

-” পার্লারের মেয়েরা খুব সুন্দর করে সিজদা কে হলুদের সাজে সজ্জিত করে দিয়েছে।তার পরণে রয়েছে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি।গলায় , হাতে , কানে ,মাথায় গোলাপ আর গাঁদা ফুলের সংমিশ্রণে তৈরি গহনা পরানো হয়েছে।মুখে ভারী মেকআপ।ডাগর ডাগর চোখ দুটো আইলাইনার মাশকারা,গিল্গটার পেয়ে যেন আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক।নিচ ঠোঁটের বাম সাইডে কালো কুচকুচে তিলটা যেন মুখের সৌন্দর্য যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ।

তার হাত দুটো মেহেদীর গাড়ো লাল রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠেছে।সিজদার সাজ কমপ্লিট হলে পার্লারের মেয়েটা সিজদা কে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারে না সিজদা।মেকাপের আড়ালে ডেকে গিয়েছে সিজদার নিজস্ব রুপ।সিজদার সাজ কমপ্লিট হতে না হতেই হালিমা মঞ্জিলের সদস্যরা বিয়ের উপঢৌকন নিয়ে চলে এসেছেন।হালিমা বেগম এসেই সিজদা কে জড়িয়ে ধরে সিজদার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-” মাশাআল্লাহ। মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।এ যেন আসমান থেকে পরী নেমে আসছে।ভাগ্যিস সাইফান এখানে নেই।থাকলে সাইফানের দফা রফা হয়ে যেতো আজ। হলুদের সাজে একদম হলুদ পরী লাগছে।”

-” ধন্যবাদ দাদিজান।”
-” সামিরা প্রথম বার সিজদা কে দেখছে।হালিমা বেগমের মুখে সিজদার প্রশংসা শুনে সিজদা কে দেখার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছিলো। চোধুরী ভিলায় প্রবেশ করেই সামিরা দৌড়ে সিজদার কাছে চলে আসে।সিজদা কে সামিরার খুব পছন্দ হয়।সামিরা সিজদার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-” হাই আমি সামিরা।তোমার একমাত্র ননদীনি।”
-” সিজদা হাসি মুখে সামিরার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।সামিরা অনেক গুলো সেলফি তুলে নিলো‌ সিজদার সাথে।প্রথম দেখাতেই সিজদার সাথে সামিরার একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।তাথৈ এসে সিজদা দেখে কে মনে মনে বললো,

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৬

-” সারজিস এই মেয়েকে রিজেক্ট করছে? সৌন্দর্যের দিক থেকে আমি তো এই মেয়ের নখের ও যোগ্য না‌।সারজিস কি আদৌ এই মেয়েকে দেখেছে? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সারজিস সিজদা কে না দেখেই রিজেক্ট করেছে।এমন নিখুঁত মেয়েকে দেখে কোনো পুরুষেরই রিজেক্ট করার সাধ্য নেই।না না ।বিয়ে না হ‌ওয়া পর্যন্ত সারজিস কে কোন ভাবেই এই মেয়ের মুখোমুখি বা সিজদার কোনো ছবি ও দেখতে দেওয়া যাবে না।এই মেয়েকে দেখে যদি সারজিস বিয়ে করতে চায়।তখন আমার কি হবে?হালিমা মঞ্জিলের ব‌উ হয়ে আসার স্বপ্ন স্বপ্ন‌ই থেকে যাবে আজীবন।ভালোই হয়েছে সারজিস হলুদ সন্ধ্যায় আসে নি। কিন্তু বিয়েতে তো ঠিকই আসবে।। কিন্তু না।আমি থাকতে সেটা হতে দিবো না।সারজিস কে কিছুতেই বিয়েতে উপস্থিত থাকতে দেওয়া যাবে না। কিছুতেই না।।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৮