মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২০
নুজাইফা নূন
-” কি করছেন টা ডাক্তারবাবু ? ছাড়ুন বলছি।না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি আপনার কথা মেনে নিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি তার মানে এই নয় যে আপনি যা নয় তাই করবেন আমার সাথে।”
-” সবাই মিষ্টি খাচ্ছে।আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে না সৌন্দর্যময়ী।”
-” আপনি লুলা নাকি যে আপনাকে আমার মিষ্টি খাওয়ায় দিতে হবে? আপনার ইচ্ছে হলে নিজে খান।না হলে না খান।কথাটা বলার সাথে সাথেই সারজিস সিজদার ওষ্টে নিজের ওষ্ট মিলিয়ে দেয়।”
-” অকষ্মাৎ প্রচন্ড গরম অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় সিজদার।এসি রুমে থাকাও পরেও ঘেমে জামাটা গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।সিজদা ধড়ফড় করে উঠে বসে। চারিদিকে তখন ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারিপাশ।সিজদা উঠে বসতেই সালেহা বেগম উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেন।সিজদার মুখে ভয়ের স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে।সালেহা বেগম সিজদা কে এক গ্লাস পানি এনে দেয়।সিজদা পুরো পানি এক নিঃশ্বাসে শেষ করে।সিজদার এই অবস্থা দেখে সালেহা বেগম সিজদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” কি রে মা ? কি হইছে ? খারাপ স্বপ্ন দেখছিস নাকি?”
-” আচ্ছা খালা একটা কথা কও দিনি।ভোরের দেখা স্বপ্ন কি সত্যিই সত্যি হয়? “
-” হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
-” কও না খালা?”
-”গ্ৰারামের মাইনষেরা তো কয় যে ভোরের দেহা স্বপ্ন সত্যি হয়। তুই কি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখছিস মা?”
-” সিজদা মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বললো,
-” এ আমি কি স্বপ্ন দেখলাম? এতো মানুষ থাকতে ডাক্তারবাবু আমার স্বপ্নে আইলো ক্যান? ডাক্তারবাবু কি সত্যিই খারাপ মানুষ?”
না না ডাক্তারবাবু কখনোই এমন কাজ করবে না। আল্লাহ না করুক এমন স্বপ্ন যেন কোনদিন ও সত্যি না হয়।”
-” হালিমা মঞ্জিলে বিয়ের তোরজোর চলছে।সকাল থেকে মির্জা পরিবারের মেয়ে সদস্যগুলো নিজেদের মতো করে সাজগোজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।বিয়ে বাড়ি বলে কথা।সামিরা গোলাপি কালারের একটা শাড়ি পরেছে।শাড়িটা সামিরার জন্মদিনে রামিম তাকে গিফট করেছে।সাথে ম্যাচিং চুড়ি, কানের দুল,এক পাতা টিপ ও দিয়েছে।সামিরা দুহাত ভর্তি চুড়ি ,কপালে ছোট্ট একটা টিপ ,কানে বড় ঝুমকো,চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিয়ে তার ব্রাউন কালারের ছোট ছোট চুলগুলো ছেড়ে দিলো। সবমিলিয়ে দারুন লাগছে সামিরা কে।সামিরা রেডি হয়েই ঝটপট কয়েক টা সেলফি তুলে রামিমের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিলো।বিয়েতে রামিম কেও বরযাত্রী হয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো। সামিরা ভেবেছিলো এই সুযোগে তারা চুটিয়ে প্রেম করতে পারবে। কিন্তু সামিরার সেই আশা পূরণ হয় না। হুট করেই রামিমের বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।বাবা কে অসুস্থ্য অবস্থায় রেখে ছেলে হয়ে আনন্দ ফুর্তি করে বেড়ানোটা রামিমের মন সায় দেয় নি।রামিম যাবে না বলে দেয়।সামিরা ও জোর করে না রামিম কে।ছবি দেখেই রামিম ভিডিও কল করে।সামিরা কল রিসিভ করতেই রামিম বললো,
-”ছবি দেখিয়ে মনে যে আগুন জ্বালিয়ে দিলে।সেই আগুন নেভাবো কিভাবে এখন?এখন আমার একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে।।”
-” গাও ।শুনি।”
-”তুমি জ্বালায়া গেলা মনের আগুন,নিভাইয়া
গেলা না।
-” কাছে আসো। নিভিয়ে দেই।”
-” সম্ভব হলে এক্ষুনি ছুটে চলে আসতাম।”
-” আর কতোদিন এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবো বলো তো? তোমাকে কতোবার বলেছি আমাদের বাড়িতে এসে বাবার কাছে আমাদের সম্পর্কের কথা জানাও। কিন্তু তোমার কোন হেলদোল নেই। তুমি আমাদের সম্পর্ক টা নিয়ে এখনো সিরিয়াস হতে পারলে না রামিম।”
-” তোমার বাবা কে দূর থেকে দেখেই আমার ভয় লাগে।কাছে গেলে আমি নিশ্চিত পটল তুলবো।”
-”বাবার মেয়ের সাথে প্রেম করার আগে মনে ছিলো না?”
-” আমার বাবা একটু সুস্থ্য হলেই আমি বাবা মাকে তোমাদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠাবো লক্ষীটি।”
-”তোমার এক কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি আমি।দয়া করে নতুন কিছু বলো।”
-” এবারে আর পিছু হটবো না। সত্যি সত্যিই তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।”
-” দেখাই যাব।বের হতে হবে আমার ।রাখছি এখন।”
-” ফোন রাখার আগে একটা দাও না?”
-” কি দিবো?”
-” চুমু।”
-” যতোদিন না তুমি বাবা কে আমাদের সম্পর্কের কথা জানাতে না পারছো।ততোদিন তুমি কোন চুমু পাবে না।এটাই তোমার শাস্তি বলে সামিরা কল কেটে দিয়ে সাইফানের রুমে এসে দেখে সাইফান সম্পূর্ণ রেডি হয়ে গিয়েছে।সাইফানের পরণে বিয়ের শেরোয়ানি, পায়ে জুতা , বাম হাতে হ্যান্ড ওয়াচ।সামিরা সাইফান কে দেখে বললো,
-” মাশাআল্লাহ। আমার ভাইকে বিয়ের সাজে খুব সুন্দর লাগছে।কারো নজর না লাগুক আমার ভাইয়ের উপর।”
-” আমার বোন কেও শাড়িতে খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে।”
-” থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।এবার চলো তো।সবাই সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।”
-” আমি তো সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি।সারজিসের কোনো খবর নেই। মেয়েদের মতো এতো সময় নিতো কি এতো সাজগোজ করছে আল্লাহ জানেন।”
-” আমি একবার দেখে আসছি ভাইয়ার হলো কি না বলে সামিরা সাইফানের রুম থেকে বের হতেই দেখে সারজিস একদম রেডি।সারজিসের পরণে ডিপ নেভী ব্লু কালারের পাঞ্জাবি,সাথে লাল কালারের পকেট স্কয়ার, সাদা কালারের চিনোস,হাতে ম্যাচিং ঘড়ি,পায়ে দামি সু। চুলগুলো স্পাইক করা।সব মিলিয়ে কোনো হিরোর থেকে কম দেখতে লাগছে না সারজিস কে।।সারজিস বের হতেই সাইফান সারজিস কে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” আমি তোর বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পক্ষে ছিলাম ভাই। কিন্তু তোর এতো সাজগোজ করে যাওয়ার পক্ষে নেই।এতো সাজগোজ করে যাচ্ছিস ভাই।দেখা গেলো মেয়ে আমাকে রেখে তোকে বিয়ে করতে চাইলো।”
-” সারজিস কিছু বলার আগেই শান্তা মির্জা প্লেটে মিষ্টি, দুধ নিয়ে এসে সাইফানের গালে মিষ্টি তুলে দিলো।সাইফানের খাওয়া শেষ হতেই শান্তা মির্জা সারজিসের গালেও মিষ্টি তুলে দিলো।সারজিস সবার সামনে সিনক্রিয়েট না করে চুপচাপ মিষ্টি খেয়ে নিলো। মিষ্টি খাওয়া শেষ হতেই শান্তা মির্জা সারজিসের হাতে এক গ্লাস দুধ দিলো।সারজিস চুপচাপ দুধ খেয়ে নিলো।সাইফান গুরুজনদের সালাম করে সারজিস কে নিয়ে বের হতে যাবে তখনি সারজিসের খেয়াল হয় সারজিস ওয়ালেট নিতে ভুলে গিয়েছে।যা দেখে সারজিস বললো,
-” ওহ্ শিট।আমি ওয়ালেট আনতে ভুলে গিয়েছি।তুমি আগাও।আমি অন্য গাড়ি বা বাইক নিয়ে আসছি।”
-” তুই নিয়ে আয়।আমি অপেক্ষা করছি।”
-” সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি যাও আমি দু মিনিটে আসছি।”
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৯
-” ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আয় বলে সাইফান গাড়িতে বসে যায়।বাড়ির সদস্যদের মতো গাড়ি কেও নতুন রুপ দেওয়া হয়েছে।গোলাপ , গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুলের সংমিশ্রণে গাড়ি সাজানো হয়েছে।বরের গাড়িতে সাইফান, সামিরাসহ সাইফানের সব কাজিনরা হৈ হুল্লোড় করতে করতে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।”