মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২১

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২১
নুজাইফা নূন

” লাল টুকটুকে বেনারসী শাড়ি,মুখে ভারী মেকআপ, গা ভর্তি গহনা পরে বিছানায় বধূ বেশে বসে রয়েছে সিজদা। অজানা ভয়ে , শঙ্কায় ক্ষণে ক্ষণে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে । তবুও ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে সিজদা।বুকের ভেতর ঢোল পেটানোর‌ শব্দের মতো আওয়াজ হচ্ছে। সবাইকে ছেড়ে থাকতে হবে ভাবতেই বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে।সিজদার এই মুহূর্তে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো না। কিন্তু সে তার মামার ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে চায় নি।তাই তো পাত্র বদল হ‌ওয়া থেকে শুরু করে তারা যা বলছে তাই সিজদা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে।সে চায় নি তার জন্য তার মামা মামির মধ্য কোনো প্রকার অশান্তির সৃষ্টি হোক। ভেতরে ভেতরে কষ্টের পাহাড় জমলেও কাউকে সেই কষ্ট বুঝতে দেয় নি। নিজের ভেতর সবটা চেপে রেখেছে।সিজদা‌‌ নিজের রুমে বসে চোখের পানি ফেলছিলো ।এর‌ই মধ্যে সালেহা বেগম প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে সিজদার রুমে প্রবেশ করে।সালেহা বেগম কে দেখে সিজদা সন্তপর্ণে চোখের পানি মুছে নিলো।যেটা চোখ এড়িয়ে গেলো না সালেহা বেগমের। সালেহা বেগম সিজদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

-” পাগল মাইয়া কাঁনতেছিস ক্যা ? কান্দে কান্দে সাজগোজ নষ্ট ক‌ইরা ফেলাইছিস। একদম কানবি না ক‌ইয়া দিলাম। চোখের পানি মোছ ক‌ইতাছি সিজদা।না হ‌ইলে কিন্তু তোর সাথে সাথে আমিও কাইন্দা দিমু। তুই বুঝোস না ক্যান তোর চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি নে।আমার ও বুক ফাইটা কান্দন আহে বলে সালেহা বেগম ও কান্না করে দিলো।”
-” সালেহা বেগমের কান্না দেখে সিজদা তৎক্ষণাৎ চোখ মুছে বললো,
-” আমার ক্ষিদে লাগছে খালা। শেষ বারের মতো একটু তোমার হাতে খাওয়াই দিবা?”
-” শেষ বার মানে কি হ্যাঁ? বিয়া হ‌ইবো তার মানে এটা না যে তুই আর কোনদিন ও এই‌ বাড়ি আইবি না।”
-” বিশ্বাস করো খালা আমি আর এই বাড়ি আসতে চাই না।আমি আসা মানেই মামু মামিমার মধ্যে ঝগড়া লাগা।অশান্তির সৃষ্টি হ‌ওয়া।যেইটা আমার ভালা লাগবো না খালা। শ্বশুর বাড়ি গিয়ে আমার যা হয় হবে। তবু ও আমি আর কখনোই এই বাড়িতে আসবো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দু দিন থেইকা আপামণি রেও দেখতে পারছি না।মামিমা ও আপামণির কথা কিছুই বলবো না। আপামণি কোথায় আছে, কেমন আছে কে জানে?আপামণির জন্য চিন্তা হচ্ছে।এসব হ‌ইছে আমার জন্য।
আমার জন্য হয়তো বাড়ির মাইয়া বাড়ি ছাইড়া অন্য কোথাও চ‌ইলা গেছে। নিজেরে অনেক অপরাধী মনে হ‌ইতাছে খালা।”

-” জাহান্নামে যাক।তাতে তোর কি?যে মাইয়া তোরে দু চোক্ষে সহ্য করতে পারে না।তার লাইগা তোর দরদ উথলে পড়ছে ক্যা রে ?আপামণির চিন্তা তোর করোন লাগতো না।তার চিন্তা করোনোর লাইগা বহুত মানুষ আছে। তুই চুপচাপ খাঁ বলে সালেহা বেগম সিজদার গালে খাবার তুলে দিলেন।সিজদা কয়েক লোকমা খাওয়ার পর আর খেতে পারলো না।সালেহা বেগম ও জোর না করে খাবারের প্লেট নিয়ে সিজদার রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তিনি বেরিয়ে আসতেই সিজদা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে যেন অবাক হয়ে গেল। নিজেরই নিজেকে চেনা দায় হয়ে গেলো সিজদার।এর‌ই মধ্যে নিচ থেকে বর এসেছে বর এসেছে বলে চিৎকার চেঁচামেচি শোনা গেলো‌।বর এসেছে শুনেই সিজদার হার্টবিট বেড়ে গেলো। চেনা না জানা না সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মানুষের জন্য অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হলো ।”

-” সাইফান গাড়ি থেকে নামতেই বিথী চোধুরী সাইফানের গলায় একটা স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দিয়ে মিষ্টি মুখ করালেন। বিথী চৌধুরীর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে জামাইকে সাদরে গ্রহণ করতে স্বেচ্ছায় আসেন নি।তাকে ফোর্স করে নিয়ে আসা হয়েছে। মুখখানা কেমন ভাঁড় করে রেখেছেন তিনি। মিষ্টি মুখ শেষ হলে সাইফান কে প্রবেশ দ্বারে ফিতা কাটার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো।ফিতা টেনে তারা দেয়াল তৈরি করে রেখেছেন।অপর প্রান্তে কেঁচি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুন্দরী সুন্দরী রমণী‌। তাদের দাবি ফিতা নামক এই দেয়াল টপকাতে হলে তাদেরকে সম্মানী স্বরুপ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হবে।এই নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হতে লাগলো।এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে হালিমা বেগম তাদের হাতে ত্রিশ হাজার টাকা ধরিয়ে দিলো।টাকা হাতে পেতেই মেয়েগুলো আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠলো।সাইফানের হাতে ফিতা কাটার জন্য কেঁচি দেওয়া হলো।সাইফান ফিতা কাটতেই তার মাথায় ফুল ছিটিয়ে দিতে লাগলো সবাই। যথারীতি সাইফান কে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বরের আসনে বসিয়ে দেওয়া হলো।সাইফানের দুচোখ তখন শুধু মাত্র সারজিস কে খুঁজে চলেছে।সাইফান কয়েক বার সারজিসের নাম্বারে কল দিলো। কিন্তু কল রিসিভ হলো না ।সাইফান ফোন পকেটে রেখে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিলো। কিন্তু সারজিসের কোনো দেখা মিললো না।সাইফান কে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে সামিরা এসে বললো,

-” ভাবী মণি কে খুঁজছো বুঝি? তাকে এখন খুঁজে কোনো লাভ হবে না ভাইয়া।সবে মাত্র এলে সবুর করো।সবুরে মেওয়া ফলে।”
-” তুই চার লাইন বেশি বুঝিস।তোকে কে বললো আমি তোর ভাবী মণি কে খুঁজছি?”
-” তো কাকে খুঁজছো ? আমি বুঝি না মনে করছো।আমি জানি তুমি মনে মনে বলছো, নয়ন ও ঘুরাইয়া খুঁজি‌ইইই তোমারে তোমারে।”
-” আমি তাকে খুঁজছি না।আমি খুঁজছি সারজিস কে।সারজিস এখনো আসে নি? ও তো বলেছিলো তাড়াতাড়ি চলে আসবে। কিন্তু দেখ এখনো আসার কোনো খবর নেই। ফোন দিচ্ছি ফোন ও রিসিভ করছে না।বাড়িতে কল করলাম বললো সারজিস অনেক আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। অথচ এখনো বিয়ে বাড়ি এসে পৌঁছায় নি।কি যে করছে ছেলেটা?বড্ড টেনশন লাগছে। রাস্তায় কোন বিপদ আপদ হলো না তো আবার?”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২০

-” নো টেনশন ডু ফুর্তি।ভাইয়ার এক জবান।ভাইয়া যখন আসবে বলে কথা দিয়েছে।সে তার কথার খেলাপ করবে না।ভাইয়া ঠিক চলে আসবে। তুমি টেনশন করো না ।এনজয় ইউরসেল্ফ বলতেই কোথা থেকে এক ঝাঁক তরুণী ছুটে এলো।তারা সাইফানের সাথে হাসি ঠাট্টা করতে শুরু করলো।কেউ কেউ আবার সেলফি তুলতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সিজদা কেও নিয়ে আসা হলো।সিজদা সাইফান দুজনের মাঝ খানে একটা পর্দা টানিয়ে দুজন কে দুই পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো।সাইফান তখনো সিজদার মুখখানা দেখে নি।সাইফান পর্দা সরাতে ইতস্তত বোধ করছে দেখে সামিরা তাদের মাঝ খান থেকে পর্দা সরিয়ে দিলো। পর্দা সরাতেই যেন সাইফানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২২