মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৫
নুজাইফা নূন
-“আমার মতো অভাগীর জীবনেও এমন একটা মানুষ আইবো আমি কখনোই ভাবতে পারি নি।আমার যে ডর লাগতেছে।এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে?সিজদা আর ভাবতে পারে না কিছু।চোখ ভিজে আসে তার।সিজদা বিছানা ছেড়ে নেমে ওড়না কোমরে গুজে
ঝটপট কাজে লেগে পড়ে।বাসরের ফুল ফেলে দিয়ে বিছানা পরিপাটি করে রেখে ফ্লোর মোছার কাজে লেগে পড়ে। নিজের কাপড় চোপড় কার্বাডে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে।রুমের প্রত্যেক টা আসবাবপত্র মুছে আবার জায়গা মতো রেখে দেয়।এরই মধ্যে হালিমা বেগম শাড়ি গয়না নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে।হালিমা বেগম কে দেখে সিজদা কোমর থেকে ওড়না টা খুলে গায়ে জড়িয়ে নেয়।সিজদা কে দেখে হালিমা বেগম মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
-” এতো দিন একটা কথা শুনে এসেছি , ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও নাকি ধান ভানে।আজ সেটা স্বচোখে দেখতে পেলাম। তুমি এ বাড়ির বউ।কাজের মেয়ে নও সিজদা।এ বাড়িতে এতো গুলো কাজের লোক থাকতেও তুমি সকাল সকাল এগুলো কি শুরু করেছো?”
-” হালিমা বেগমের ধমকে কেঁপে উঠে সিজদা।সে আমতা আমতা করে বললো,
-” দাদিজান দৈনিক এই কাজগুলো করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেছে।কি করতাম আমি? তাই তো কাজে লাইগা পড়ছি।”
-” এখন থেকে তোমাকে আর কোনো কাজ করতে হবে না সিজদা। জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছো তুমি। গতকাল থেকে তোমার সুখের দিন শুরু হয়েছে।তোমাকে আর দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা গাধার মতো খাটতে হবে না। তুমি মুক্ত , স্বাধীন।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আমার তো বসে থাকতে ভালো লাগে না দাদিজান।কাজ না করলে কি করবো আমি? সারাদিন কাটাবো কিভাবে?”
-” পড়াশোনা করবে।”
-” পড়াশোনা! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সিজদা।”
-” হ্যাঁ পড়াশোনা।করবে তো পড়াশোনা?”
-” পড়াশোনা করার কথা শুনে খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠে সিজদার।সিজদার পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছা ছিলো। ঐশ্বর্য যখন টেবিলে বসে পড়তো সিজদা দূরে দাঁড়িয়ে দেখে দেখতো। ঐশ্বর্য যখন কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যেতো।সিজদার ও ইচ্ছে করতো স্কুল ড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যেতে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয় নি সিজদার।সিজদার মামিমা তাকে স্কুলে যাওয়া তো দূরের কথা ঐশ্বর্য পড়তে বসলেও তার আশেপাশে সিজদা কে ঘেঁষতে ও দিতো না।সিজদার থেকে রেসপন্স না পেয়ে হালিমা বেগম আবারো বললো,
-” কি হলো কথা বলছো না কেন? পড়াশোনা করতে চাও? নিজের গায়ে অশিক্ষিতের যে তকমা লেগে আছে সেটা মুছে ফেলতে চাও? নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাও?”
-” হ্যাঁ চাই দাদিজান।খুব করে চাই।আমার পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছা দাদিজান।”
-” হালিমা বেগম শাড়ি গয়না গুলো বিছানার উপর রেখে বললো,
-”দ্যাটস্ গুড। পড়াশোনা শেখার কোনো বয়স নেই। তুমি শুরু থেকে শিখবে।ভুলে যাবে না তুমি এখন মির্জা পরিবারের বউ।তোমাকে পুরোনো খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে হবে। কথা বার্তা চালচলনে স্মার্ট হতে হবে।এখনকার মেয়েরা কোন অংশে কম নয়। মেয়েরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে।তাহলে তুমি কেন পিছিয়ে থাকবে?তোমার পাশে আমি আছি।মির্জা পরিবারের সদস্যরা আছে।তোমার কোন ভয় নেই।বৌভাতের ঝামেলা মিটে গেলেই তোমার জন্য টিচার নিয়ে আসবো।ঘুরে দাঁড়াতে শিখো সিজদা।যারা তোমাকে পদে পদে অপমান, অপদস্থ করেছে তাদের কে উচিত জবাব দিতে শিখো।যাই হোক যেহেতু তুমি নতুন বউ।
পাড়া প্রতিবেশীরা বউ দেখতে আসবে। তুমি গোসল সেরে জলদি রেডি হয়ে আসো।”
-” ঠিক আছে দাদিজান বলে সিজদা ওয়াশরুমে চলে যায়।”
-” প্রায় ত্রিশ মিনিট পর সিজদা শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে সামিরা বিছানায় বসে রয়েছে।সিজদা কে দেখেই সামিরা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো,
-” তুমি নাকি শাড়ি পরতে পারো না ।তাই দিদুন আমাকে পাঠালো তোমাকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজগোজ করে দেওয়ার জন্য।”
-” ভালা হইছে তুমি আসছো।আমার আরো চিন্তা হচ্ছিলো।ক্যামনে শাড়ি পরবো।আমি তো বেশি একটা শাড়ি পরি নি।যে কয়বার পরছি সালেহা খালা আমারে পরাই দিছে। কিন্তু এখানে তো সালেহা খালা নেই।”
-” কোনো সমস্যা নেই। সালেহা খালা নেই তো কি হয়েছে।তোমার একমাত্র ননদিনী তো আছে।
আমি তোমাকে শাড়ি পরা শিখিয়ে দিবো।একবার ভালো করে দেখে নিলে তুমি নিজেই পরতে পারবা।তোমার শাড়ি পরানোর জন্য কাউকে লাগবে না।”
-” তুমি আমার বয়সে ছোট হওয়ার পরেও শাড়ি পরতে পারো।অথচ আমাকে দেখো আমি পারি না।”
-” সামিরা সিজদার কোমরে শাড়ির এক অংশ গুঁজে দিয়ে বললো ,
-”আমি ও শাড়ি পরতে পারতাম না।আমাকে ভাইয়া শিখিয়েছে।ভাইয়া খুব ভালো শাড়ি পরাতে পারে।আমার ভাইয়ার যে বউ হবে সে আসলেই অনেক ভাগ্যবতী হবে।তার শাড়ি পরা না জানলেও চলবে। ভাইয়া রোজ তাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে।কি একটা রোমান্টিক ব্যাপার !”
-” ভাইয়া কথাটা শুনে সিজদার বুঝতে বাকি রইলো না যে ভাইয়া বলতে সামিরা সারজিসের কথা বলছে।সারজিসের কথা মনে পড়তেই সিজদার মুখটা চুপসে গেলো।”
-” সামিরা সিজদা কে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
-”আমি মিলিয়ন ডলার শিওর ভাইয়ার তোমাকে দেখে হার্ট বিট মিস হবে।আমার সৈনিক ভাইকে কোন কিছু দমিয়ে রাখতে না পারলেও তুমি ঠিকই দমিয়ে রাখতে পারবে। জানো বউমণি তোমাকে দেখে আমার হিংসা হয়।”
-” ওমা ক্যান?”
-” এই যে তুমি এতো সুন্দর।আমি মেয়ে হয়েও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।তোমার হাসি মুখখানা দেখলে মন ভালো হয়ে যায়।”
-” তুমি ও অনেক সুন্দর সামিরা। সবচেয়ে বড় কথা তোমার মন সুন্দর।যার মন সুন্দর হয় ,তার সব কিছুই সুন্দর হয়।”
-” থ্যাংক ইউ সো মাচ বউমণি। আমি নিচে যাচ্ছি।তুমি তাড়াতাড়ি নিচে এসো।সবাই নতুন বউ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।”
-” ঠিক আছে। তুমি যাও । আমি আসছি।”
-” আচ্ছা বলে সামিরা রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সামিরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সিজদা মনে মনে বললো,
-” আমি ও ভাগ্যবতী কম নই সামিরা।মানুষ টা আমাকে না দেখে আমি কাজের মেয়ে জেনেও আমাকে বিয়ে করেছে।সে আমাকে যে সম্মান টুকু দিয়েছি সেটা হয়তো আমার পাওয়ার কথা ছিলো না।এমন একটা মানুষের বউ হওয়া চারটে খানি কথা নয়।আমি সারজিস মির্জার কাছে কৃতজ্ঞ।তিনি বিয়েটা ভেঙ্গে দিছিলেন বলেই আমি একজন ভালো মানুষ কে আমার মতো অভাগীর জীবনে পাইছি।সিজদা নিচে যাচ্ছে না দেখে সামিরা আবারো রুমে এসে দেখে সিজদা কিছু একটা ভাবছে।সামিরা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৩+২৪
-” তুমি কি এতো ভাবছো বউমণি?”
-” সামিরার প্রশ্নে চমকে উঠে সিজদা।সিজদা আমতা আমতা করে বললো, কই কিছু না তো।”
-” দিদুন ডাকছে।নিচে চলো। তুমি নিচে যাও নি দেখে দিদুন আবার আমাকে পাঠিয়েছে। তাড়াতাড়ি আসো ।সামিরা বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই সিজদা বের হয়ে
কয়েক কদম এগিয়ে আসতেই ফ্লোরে একটা দামি ঘড়ি দেখতে পায়।সিজদা ফ্লোর থেকে ঘড়িটা তুলে নাড়াচাড়া করে দেখে বললো,
-” আরে এই ঘড়িটা তো আমি ডাক্তারবাবুর হাতে দেখছিলাম। ডাক্তারবাবুর ঘড়ি এই বাড়িতে আসলো ক্যামনে??”