মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৯

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৯
নুজাইফা নূন

-” এসব কি হচ্ছে সারজিস?আমি তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।এ আমি কোন সারজিস কে দেখছি?আমি দুইদিন আগের সারজিস আর আজকের সারজিসের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। সিগারেটের প্যাকেট,লাইটার , সিগারেট খেয়ে রাখা উচ্ছিষ্ট অংশ।এসব কি সারজিস?”
-”যেটা দেখতে পারছো সেটাই!”

-” কি হয়েছে তোমার? চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? গতকালের পোশাক এখনো গায়ে রয়েছে।বাড়িতে অনুষ্ঠান হচ্ছে ।অথচ তুমি এখানে মরার মতো পড়ে রয়েছো। গতকাল তো ঠিকই ছিলে।আজ হঠাৎ কি হলো যার জন্য সিগারেট হাতে তুলে নিলে?কি হয়েছে তোমার? চুপ করে থেকো না।চুপ করে থাকলে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।প্লিজ বলো কি হয়েছে তোমার?”
-” বাড়িতে অনুষ্ঠান হচ্ছে আর তুমি এনজয় না করে এখানে কেন এসেছো?যাও বাবা।গিয়ে এনজয় করো।তোমার কাছে সময়ের অনেক দাম।
আমার পেছনে অযথা তোমার মূল্যবান সময় নষ্ট করো না বাবা।”
-” কেন আমি আমার ছেলের রুমে আসতে পারি না? তার সম্পর্কে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতে পারি না সারজিস?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ছোটবেলা থেকেই যদি এই কাজটা করতে তাহলে আমার জীবনধারা অন্য রকম হতো বাবা।তোমার কাছে একটু সময় , ভালোবাসা চেয়েছি।অথচ তুমি আমাকে দিয়েছো শুধু টাকা।
টাকা ছাড়া তোমার কাছ থেকে কোনো দিন ও কিছু পাই নি বাবা।অথচ আমি টাকা চাই নি।চেয়েছি একটু ভালোবাসা , একটু আদর , একটু যত্ম।বাবা হয়ে কখনো কোনো চাওয়া পূরণ করো নি আমার। কিন্তু এবারে আমার একটা চাওয়া পূরন করবে বাবা?”
-” অবশ্যই করবো।বল না কি লাগবে তোর? তুই যা যাস।তাই পাবি‌। তুই শুধু একবার বল তোর কি লাগবে?”

-”আমি দেশে থাকবো না বাবা। আমি যতো দ্রুত সম্ভব কানাডা খালামণির কাছে চলে যেতে চাই বাবা। তুমি মতো দ্রুত সম্ভব আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।প্লিজ বাবা প্লিজ।আমি তোমার কাছে হাত জোর করছি।”
-”সারজিসের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেল ফারুক মির্জা।তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন তার ছেলের উপর দিয়ে বড় কোনো ঝড় বয়ে গেছে।সেই ঝড়ে তার ছেলেটা দুমরে মুচড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে।ছেলের এমন অসহায়ত্ব মেনে নিতে পারছেন না ফারুক মির্জা।তিনি সারজিস কে আকড়ে ধরে বললো,

-” তোর কি হয়েছে বাবা? বল না আমাকে?বাবা কে বলবি না?”
-”কি হয়েছে? কেন যাবো এসব প্লিজ জানতে চেয়ো না বাবা। এতো দিন যখন আমার কথা শোনার মতো কোনো সময় তোমার হয় নি।তখন আজকেও তোমার সময় হবে না।তোমাকে যেটা বললাম তুমি সেটা করো বাবা। একজন বাবা হিসেবে ছেলের অন্তত একটা চাওয়া পূরন করো।”
-” ঠিক আছে আমি অতি দ্রুত তোর কানাডা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু হুট করে তুই কানাডা যাবি কেন? তুই তো তোর দেশের মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলি‌।এখন আবার মাথায় কানাডার ভূত চেপে বসলো কেন?”

-” সব কেনোর উত্তর হয় না বাবা।”
-” ঠিক আছে। তুই যা চাস তাই হবে বলে ফারুক মির্জা সারজিসের রুম থেকে বেরিয়ে যান।তিনি যেতেই সারজিস দুই ঠোঁটের মাঝখানে সিগারেট চেপে ধরে লাইটার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।একটা সিগারেট শেষ করে আর একটা সিগারেট ধরাতে গেলেই সাইফান আসে।সাইফানের সাজ দেখে সারজিসের যেন বুকের ব্যাথা টা আরো বেড়ে যায়।আজকে সাইফানের জায়গায় তার থাকার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ সে সাইফান আর তার সৌন্দর্যময়ীর মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি ।সে কারো মধ্যে দেয়াল হয়ে থাকতে চায় না। এজন্যই সারজিস দেশ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সাইফান সারজিসের অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে বললো,

-” ভাই! কি হয়েছে তোর? তুই এখনো রেডি হোস নি? আমি তো ভেবেছি তুই রেডি হয়ে গিয়েছিস। এজন্যই তোকে নিতে এসেছি।অথচ তুই দেখি দেবদাস হয়ে বসে রয়েছিস।প্রেমে ছ্যাকা ট্যাকা খেয়েছিস নাকি ভাই?আমার এমন হিরো ভাইকে রিজেক্ট করার সাধ্যি হলো কোন মেয়ের?”
-” সারজিস সাইফানের কথায় কান না দিয়ে বললো,
-” তুমি যাও।আমি রেডি হয়ে আসছি।”
-” না কোথাও যাচ্ছি না ভাই।আমি বিছানায় বসছি।তোকে বলে বিশ্বাস নেই আমার।বিয়ের দিন কি করেছিলি ভুলে যাই নি আমি।তুই রেডি হ।আমি তোকে সাথে নিয়ে তারপর যাবো।”
-” ঠিক আছে। তুমি যদি বসে থাকতে পারো আমার কোনো সমস্যা নেই বলে সারজিস ওয়াশরুমে চলে যায়।”

-” প্রায় দশ মিনিট পর সারজিস শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে সাইফান সত্যি‌ই বসে রয়েছে।সারজিস ঝটপট রেডি হয়ে সাইফানের সাথে রিসিপশনে চলে আসে।এতো এতো মানুষের ভিরে সারজিসের সর্বপ্রথম স্টেজে বধূরুপে বসে থাকা সিজদার দিকে নজর যায়।সিজদার চোখে চোখ পড়তেই‌ বুক ধুক করে উঠে তার।বুকে চিনচিনে ব্যথার সৃষ্টি হয়। সাইফান স্টেজে যেতেই ফটোগ্রাফার সাইফানের ছবি তুলতে শুরু করে। এরপর সিজদার ছবি তোলার পালা।সিজদার সিঙ্গেল ছবি তোলা হয়ে গেলে ফটোগ্রাফার বললো,

-” এবার কাপল পিক তুলতে হবে। আপনারা দুজনে পাশাপাশি দাঁড়ান।”
-” ফটোগ্রাফারের কথা শুনে সাইফান এসে সিজদার পাশে দাঁড়ালো। কিন্তু এতে যেন ফটোগ্রাফার সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।তিনি সিজদা কে বললেন,
-” ম্যাম আপনি স্যারের হার্টের উপর হাত রাখুন।আর স্যার আপনি ম্যামের কোমরে হাত রাখুন।”
-” ফটোগ্রাফারের কথা মতো সিজদা কাঁপা কাঁপা হাত সাইফানের হার্টের উপর রাখলো।সাইফান সিজদার কোমরে হাত রাখতেই কেঁপে উঠলো সিজদা। ফটোগ্রাফার ফটাফট ছবি তুলে নিলো।এরপর পোজ চেঞ্জ করে তারা আরো কাছাকাছি এসে ফটোশুট করতে লাগলো।এসব দূর থেকে দেখে সহ্য করতে পারছিলো না সারজিস।তার চোখ জ্বলছিলো।সারজিস রুমে আসার জন্য পা বাড়াতেই সাইফান সারজিস কে স্টেজে টেনে নিয়ে ছবি তুলতে লাগলো।সারজিস মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে ছবি তুলতে লাগলো।তখনি তাথৈ এসে সারজিসের পাশে দাঁড়িয়ে সারজিসের হাতের মধ্যে নিজের হাত দিয়ে বললো,

-” ফটোগ্রাফার ভাইয়া আমার আর সারজিসের কিছু ছবি তুলে দিন। সুন্দর হয় যেন।”
-” সারজিস কিছু টা বিরক্ত হয়ে তাথৈর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
-” এসব কোন ধরনের অসভ‌্যতা তাথৈ?”
-” অসভ্যতার কি দেখলে? জাস্ট হাত ধরেছি।চুমু তো আর দেই নি। তুমি এভাবে রিয়্যাক্ট করো কেন বলো তো? বুকে ব্যথা হয় তো আমার।”
-”জাস্ট শাট আপ ।লজ্জা করে না তোর?তোর মতো নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে আমি দুই টা দেখি নি।তোকে এতো বার বলেছি তুই আমার চোখের সামনে আসবি না। এরপরও নির্লজ্জের মতো তুই এসে আমাকে ডিস্টার্ব করিস। জাস্ট ডিসগাস্টিং।”

-” এখন যা খুশি বলে নাও।যখন তোমার ঘরের ব‌উ হয়ে যাবো।তখন কিন্তু কিছুই বলতে পারবে না। শুধু ভালোবাসবে , আদর করবে।না হলে কিন্তু আমি রাগ করে বাবার বাড়ি চলে যাবো‌।”
-” জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বাদ দে তাথৈ।আমি আগেও বলেছি।এখনো বলছি।তোর প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ফিলিংস কাজ করে না।আমি তোকে সামিরার মতোই ভালোবাসি।একটাই তো মন।একটা নারীকে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয় কোনো নারীকে এই মন দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় বলে সারজিস রিসিপশন থেকে বেরিয়ে যায়।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৮

-” সারজিসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে তাথৈ বললো,
-” কি বলে গেলো সারজিস? দ্বিতীয় নারী মানে? সারজিসের জীবনে কেউ এসেছিলো? কিন্তু কে এসে? কি এমন রুপবতী মেয়ে যে সারজিসের মতো এটোম বোম কে ছ্যাকা দিয়ে ব্যাকা করে দিলো??”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩০