মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৯

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৯
নুজাইফা নূন

-” স্যার পুলিশ এসেছে।”
-” কেন?”
-”আপনার সাথে যে ম্যাডাম রয়েছে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ম্যাডামের মামা থানায় মিসিং ডায়েরী করেছেন। প্রত্যেক থানায় ম্যাডামের ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ হাজি রোডে সিসি ক্যামেরায় আপনার সাথে ম্যাডাম কে দেখেছেন।তারা শিওর হয়েই এসেছেন যে ম্যাডাম আপনার সাথে রয়েছে। এখন কি করবেন স্যার? ম্যাডাম কি চলে যাবে?”

-” তুমি এমন রিয়্যাক্ট করছো যেন মেয়েটা আমার বিয়ে করা ব‌উ।তাকে সারাজীবন আমার সাথে রেখে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি।”
-”ম্যাডাম কে বিয়ে করলে মন্দ হতো না স্যার। আপনাদের দুজনকে দারুন মানিয়েছে।মনে হচ্ছে আমি রণবীর কাপুর আর আলিয়া ভাট কে দেখছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তুমিই দাদু কে কল করে আমার বিয়ের মিথ্যা নিউজ দিয়েছো। তাই না রামিম?”
-” সরি স্যার। আপনার দাদু আমাকে বলেছিল আপনি কখন কোথায় যান, কোন মেয়ের সাথে কথা বলেন, কোন মেয়ের সাথে দেখা করেন।সবটা তাকে ইনফর্ম করতে।দাদু তো গুরুজন। গুরুজন মানে সম্মানীয় ব্যক্তি।আমি দাদুর কথা অমান্য করলে দাদু কে অসম্মান করা হতো।তাই তো দাদু কে আপনার সব আপডেট দেই।”

-” গুড জব।ক্যারি অন।”
-” থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার। ম্যাডাম কে নিয়ে যাই তাহলে?”
-” তুমি যাও।আমি মায়াবতী কে নিয়ে আসছি।”
-” মায়াবতী কে স্যার?”
-” সারজিস নিজের কাজ ছেড়ে রামিমের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই রামিম শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,

-” আ আ আমি আসছি স্যার।”
-”রামিম যেতেই সারজিস সিজদার পাশে দাঁড়িয়ে সিজদা কে কয়েক বার মায়াবতী বলে ডাক দেয়। কিন্তু সারজিসের ডাক সিজদার কান অব্দি পৌঁছায় না। সিজদা কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিয়ে সারজিসের ফোনে কার্টুন দেখছে। কার্টুন তার অনেক পছন্দের। সিজদা ফ্রি টাইমে সালেহা বেগম কে সাথে নিয়ে কার্টুন দেখতে বসে যায়।সারজিস কাজের ফাঁকে লক্ষ করেছিলো সিজদা বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছে। দাঁত দিয়ে নিজের নখ কাটছে। শাড়ির আঁচল থেকে টেনে টেনে সুতা বের করছে।এসব দেখে সারজিস এসে সিজদা কে জিজ্ঞেস করে সে কোন সিরিয়াল দেখে কিনা? তখন সিজদা বলে সে কার্টুন দেখে। কথা টা শুনে সারজিস মুচকি হেসে মনে মনে বললো,

-” যে মেয়েকে আজকে বিয়ে দিলে কালকেই এক বাচ্চার মা হয়ে যাবে‌‌।সে নাকি এখনো কার্টুন দেখে।সারজিস তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে ইউটিউবে গিয়ে কার্টুন ভিডিও প্লে করে সিজদার হাতে ফোন দিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে দেয়। সিজদা কার্টুন দেখায় এতোটাই মগ্ন হয়ে গেছে তার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার সময় নেই।সারজিস সিজদা কয়েকবার ডাকার পরেও রেসপন্স না পেয়ে সিজদার কান থেকে ইয়ারফোন সরিয়ে নেয়।সিজদা তড়িৎ গতিতে পেছনে তাকিয়ে দেখে সারজিস দাঁড়িয়ে রয়েছে।তাকে দেখে কিছুটা ভড়কে যায় সিজদা।সিজদা দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো,

-” আমি কি কিছু ভুল করেছি স্যার ?”
-” না না। তুমি কোন ভুল করো নি। পুলিশ এসেছে তোমাকে নিয়ে যেতে ।চলো।”
-” পুলিশ!পুলিশ কেন ?”
-” তোমার মামা মিসিং ডায়েরী করেছেন। পুলিশ নিরাপদে তোমাকে তোমার মামার কাছে পৌঁছে দিবে।”
-” আমি পুলিশ ভয় পাই।আমার পুলিশের সাথে যাবো না।”

-” সিজদার কথা শুনে সারজিস মনে মনে বললো আমি ও যে তোমাকে ছাড়তে চাই না। কিন্তু তোমাকে আটকে রাখার কোনো অধিকার যে আমার নেই।তবে তুমি একদম চিন্তা করো না মায়াবতী।তোমার কোন ক্ষতি হবে না। যদিও মেয়ে কনস্টেবল এসেছে। তবু ও আমি তোমার সাথে রামিম কে পাঠাবো।তোমার মামার কাছে না ফেরা পর্যন্ত রামিম তোমার সাথে থাকবে।তুমি আমার হৃদয়ে কাঁপন সৃষ্টি করেছো। এতো সহজে সারজিস মির্জার থেকে নিস্তার পাবে না তুমি। তুমি যেখানেই থাকো না কেন আমি তোমাকে ঠিক‌ই খুঁজে বের করবো ।করবোই।”

-” আপনি একটু শান্ত হোন প্লিজ। মেয়েটা অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।তার কিছু হয় নি।”
-” আমার সহজ সরল মেয়েটার সাথে এতো বড় একটা ক্রাইম হলো।আর আপনি আমাকে শান্ত হতে বলছেন অফিসার? যদি আমার মেয়েটার কিছু হয়ে যেতো।তাহলে এর দায়ভার কি আপনারা নিতেন? মেয়েরা কি কোথাও নিরাপত্তা পাবে না? দিন দুপুরে একটা মেয়ে কিডন্যাপ হয়ে যাচ্ছে।আর আপনারা থানায় বসে বসে বাতাস খাচ্ছেন?”
-”আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। ইনভেস্টিগেশন চলছে।যারা আপনার ভাগ্নি কে কিডন্যাপ করেছিল তারা লকাপে রয়েছে। কিন্তু কিছুতেই নিজেদের মুখ খুলতে চাইছে না।তবে চিন্তা করবেন না। রিমান্ডে নিয়ে থেরাপি দিলেই বাপ বাপ বলে মুখ খুলবে।কে বা কারা এই কিডন্যাপিংয়ের সাথে জড়িত রয়েছে।সেটা আমরা খুব শ্রীঘ্রই জানতে পারবো। এবং তাদের কে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করবো।”

-” পুলিশের কথা শুনে ভরসা পায় রাশেদ চৌধুরী।তিনি সিজদা কে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে সোজা নিজেদের বাড়িতে চলে আসেন।সিজদা কে দেখা মাত্রই সালেহা বেগম সিজদা কে জড়িয়ে ধরে চোখে মুখে অজস্র চুমু দিয়ে বললো,
-” তোর কিছু হয় নি তো মা? তুই ঠিক আছিস তো? আমি সকালেই তোরে ক‌ইছিলাম তুই যাস নে মা। কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না।আইজ সারাটা দিন কেমনে যে কাটছে আমার।তোরে বুঝাবার পারুম না। তুই যাওনের পর থেইক্কা এট্টু পানি ও মুখে তুলবার পারি নাই। চিন্তা হচ্ছিলো তোর লাইগা।”

-” আমি ঠিক আছি।আমার কিছু হয় নাই।”
-” মুখ খানি শুকাইয়া এতোটুকুন হয়ে গেছে।যা মা গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আয়।আমি তোর জন্য খাবার আনতাছি ।”
-” আমি কিছু খামু না খালা।মোর প্যাট ভরা।”
-” কি কস ? প্যাট ভরা মানে? গুন্ডারা তোরে ল‌ইয়া কি খাওন দিছিলো ?”

-” কি হ‌ইছো জানো খালা? গুন্ডারা আমারে লইয়া যাওনোর সময় সিনেমার মতো এক ডাক্তার বাবু আইসা গুন্ডাগুলার রে আচ্ছা মতোন পিডাইছে। এরপর আমারে তার লগে ক‌ইয়া হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো।ডাক্তার বাবু অনেক ভালা মনের মানুষ।আমারে বিরিয়ানি কিনা খাওয়াইছে।তার মোবাইলে কার্টুন দেখতে দেছে।”
-” ওমা সিজদা! ডাক্তার বাবুর কথা ক‌ইতে গিয়া তোর মুখ এমন লজ্জায় লাল হ‌ইয়া যাইতেছে ক্যা রে? তোর মন আবার ডাক্তার বাবুরে দিয়া আইলি নাকি ?”
-” কি যে ক‌ও না তুমি খালা বলেই সিজদা নিজের রুমে চলে গেল।”

-” রাদেশ চৌধুরী ফ্রেশ হয়ে এসে ইমেইল চেইক করে দেখেন তাকে তার বিজনেসের কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে।তিনি চিন্তায় পড়ে যান।সিজদা কে একা রেখে তিনি যেতে চাইছেন না।আবার না গেলে অনেক টাকার লোকসান হয়ে যাবে।তিনি কি করবে বুঝতে না পেরে হালিমা বেগমের কাছে কল করেন। হালিমা বেগম কল রিসিভ করতেই তিনি সালাম দিয়ে হালিমা বেগমের শরীর ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞেস করার পর বললেন,
-” কাকিমা আমি সিজদার বিয়েটা নিয়ে দেরি করতে চাইছি না।আমি চাচ্ছি শর্ট টাইমে শুভ কাজটা শেষ করতে।”
-” এটা তো অতি উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু মির্জা পরিবারের ছেলের বিয়ে বলে কথা।একটু ধুমধাম করে উদযাপন না করলে হয় বল?”

-” রাশেদ চৌধুরী ভাবলো সিজদার কিডন্যাপ হবার ব্যাপার টা হালিমা বেগমের সাথে শেয়ার করবে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো সিজদার কিডন্যাপ হবার কথা শুনে যদি সিজদার চরিত্র নিয়ে কথা উঠে।এই ভয়ে রাশেদ চৌধুরী কিডন্যাপের ব্যাপার টা হাইড করে বললো,
আমি তো সিজদার ব্যাপারে সবটাই আপনাদের বলেছি কাকিমা।সিজদার উপর অ্যাটাক হয়েছিল।আবারো হতে পারে।আমি দেশে থাকছি না। মেয়েটাকে বিথীর ভরসায় রেখেও যেতে পারছি না।তাই ভাবলাম মেয়েটাকে যদি আপনাদের হাতে তুলে দিতে পারি।তাহলে আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৮

-” ঠিক আছে।আমি দেখছি কি করা যায়। কিন্তু একটা সমস্যা হয়েছে রাদেশ।আমি সারজিস কে চিনতে ভুল করেছি।সারজিসের উপর বিশ্বাস ভরসা থেকে সারজিসের সাথে সিজদার বিয়ে ঠিক করে এসেছিলাম। কিন্তু সারজিস আমার মান রাখে নি।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাইফানের সাথে সিজদার বিয়ে হবে।।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১০