মন ফাগুন পর্ব ২৮
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
হানিয়া শিকদার এখন নিজের ছেলের রাগের কারণ বুঝতে পারে না হলে তার ছেলে কখনো কি মিহির সাথে রাগ করতে পারে। তবে সত্যি মিহির বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা দরকার ওনি মনে করেছিলেন মিহির পরিবারে হয়তো কেউ নাই তাই হয়তো কিছু বলে নাই। এইবার কথা হানিয়া শিকদার না বলে মুরাদ শিকদার বলে –
“-হৃম মিহি তোমার কথাটা আমরা বুঝতে পারছি তোমার মা বাবাকে সত্যি বিষয়টা জানানো দরকার। একটা কাজ করো ওনাদের এই বাড়িতে আসতে বলো বা ওনাদের ফোন নাম্বার দেও আমরা কথা বলি। যেহেতু তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে সেটা তোমার পরিবারকে জানানো দরকার “।
মিহি মুরাদ শিকদারের কথা শুনে শান্তি পায় নাই সে আরো বেশি টেনশনে করে তার বাবাকে তো চিনে না সেইজন্য এইসব কথা বলছে। মিহি বলে –
“- আসলে আপনারা যত সহজ মনে করছেন বিষয়টা এতোটা সহজ না আর আমার আব্বু কোনো সহজ সরল বা গরীব মানুষ না। ওনি যথেষ্ট রাগী আর প্রভাবশালী লোক আমাদের গ্রামে আমার বাবার উপর কথা বলার সাহস কারো হয় না। আর আমি ওনার কথা ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি আবার এতোদিন সংসার করছি এইটা জানলে হয়তো আমাকে মেরে ফেলবে “।
হানিয়া শিকদারের মিহির মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হচ্ছে মেয়েটা হয়তো সত্যি ভয় পেয়ে রয়েছে। হানিয়া শিকদার বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি টেনশন করো না তোমার বাবাকে আমরা সবাই বলে বুঝাবো। নিহান বাড়িতে আসুক তারপর ওর সাথে কথা বলে সব সমস্যা সমাধান করব। আর আমাদের নিহান এই শহরের মন্ত্রী তাই ওকে জামাই হিসাবে মানতে কোনো সমস্যা হবে না তোমার বাবার। তুমি বেশি চিন্তা করো না মিহি “।
মিহি একটু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় সবাই মনে করছে তার বাবাকে মানানো খুব সহজ কিন্তু একমাত্র মিহি জানে কতটা সমস্যা হবে। কারণ ওর বাবার রাগ কেমন সেটা মিহি খুব ভালো করে জানে সত্যি জানলে কি যে হবে সেটা কেউ বলতে পারে না। তবে এখন মিহির ওই ছেলের সাথে দেখা করতে যাওয়া খুব জরুরি না হলে পরে আরো বড়ো সমস্যা হবে। সবাইকে খাওয়া দাওয়া শেষ করিয়ে মিহি বাড়ির গাড়ি নিয়ে রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা দেয়। মিহি যখন গাড়িতে বসে থাকে তখন ওর ফোনে তার মা কল করে। মিহি কল রিসিভ করে বলে –
“- হ্যালো আম্মু বলো কি হয়েছে “।
“- মিহু তুমি কি সেই ছেলের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে। কেমন লাগলো কথা বলে ছেলেটার সাথে “।
“- আম্মু মাএ সকাল দশটা বাজে এতো তাড়াতাড়ি দেখা করে কি করে আসতে পারব। মাএ গাড়ি করে যাচ্ছি রেস্টুরেন্টে পড়ে ফোন করে বলবো “।
“- ওহ আচ্ছা তাহলে তোমার আব্বু যদি কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে কি বলবো?তোমার আব্বু না কি ছেলে খুব পছন্দ হয়েছে “।
“- যদি আব্বু ছেলে এতো পছন্দ হয় তাহলে বলো ওনাকে বিয়ে করে নিতে আমাকে কোনো বিরক্ত করে। আর একটা কথা আমি এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না তুমি দেখা করতে বলছো তাই করছি এর চেয়ে বেশি কিছু হবে না। তুমি আব্বুকে বলো আমার ছেলে পছন্দ হয় নাই “।
“- তুমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে মিহি এই কথাটা তোমার আব্বুর সামনে কি করে বলবো আমি । আর ছেলে কোনো পছন্দ হবে না তোমার কি খারাপ আছে ছেলের মধ্যে দেখতে সুন্দর ভালো পরিবার থেকে বিলং করে ভালো চাকরি রয়েছে আর কি চাই “।
“- এইসব দিয়ে আমার কোনো দরকার নাই আর আব্বুকে কি করে বলবে মানে মুখ দিয়ে বলবে যে মিহির এই ছেলে পছন্দ হয় নাই দ্যার্ট ইট। আর একটা কথা কথা এইসব চাকরি দিয়ে আমার কোনো কাজ নাই আমি এখন বিয়ে করব না মানে করব না। আর এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না “।
মিহি কথাটা বলে ফোন কেটে দেয় রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে এখন সে যে কি করবে সেটা নিজে ও জানে না। এই কথা যদি ওর বাবা একবার শুনে তাহলে হয়তো মিহিকে জীবিত কবর দিয়ে দিবে কিন্তু ওর আর কিছুই করার নাই। নিহানকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না মিহি তাই এইবার তার আব্বুকে বিষয়টা জানানো দরকার তার। মিহি বলে –
“- কোনো যে সেইদিন চুরি করে বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম এরপর থেকো জীবনে একটার পর একটা বিপদ লেগেই আছে। মিহি তোর সামনে অনেক বড়ো বিপদ রয়েছে নিজেকে বাঁচাতে হবে তোকে “।
মিহির মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু গাড়ি ছুটে চলছে তার আপন গতিতে একটা সময় পর সেটা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যায়। মিহি গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে যায় সেখানে অনেক লোক বসে ছিলো এর মধ্যে থেকে একটা লোক রয়েছে যাকে সে কালকের ছবিতে দেখেছে। মিহি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেইদিকে এগিয়ে যায় পিছনে মুখ করে একজন বসে রয়েছে। মিহি বুকে সাহস নিয়ে ডাক দেয় –
“- এক্সকিউজ মি আপনি কি মিস্টার ইয়াসিন “।
পিছনে ফিরে থাকা লোকটা মিহির ডাকে পিছনে ফিরে তাকায় বেশ সুন্দর দেখতে জীম করা বডি অবশ্য মিহির বাবার পছন্দ কি খারাপ হতে পারে কোনোদিন। ইয়াসিন হাসি মুখে বলে –
“- জী আমি ইয়াসিন আর আপনি নিশ্চয়ই মিহি৷ যার সাথে আজকে আমার দেখা করার কথা রেস্টুরেন্টে “।
“- হুম আমি মিহি আসলে আপনার পিক আম্মু কালকে আমাকে দিয়েছে কিন্তু তত ভালো করে খেয়াল করে দেখা হয় নাই তাই একটু সিউর হয়ে নিলাম। বাই দ্যা ওয়ে আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো “।
“- জী আমার ও ভালো লাগলো মিহি আপনার সাথে দেখা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কোনো বসুন না। বসুন “।
মিহি বসে যায় ছেলেটা ভালো আছে দেখতে যদি আজকে নিহানের সাথে তার বিয়ে ঠিক না হতো তাহলে হয়তো এই লোককে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যেতো। কিন্তু এখন সে বিবাহিত আর সত্যি বলতে এর সাথে কথা বলতে কেমন যানি অস্বস্তি বোধ হচ্ছে তার কিন্তু তবুও সৌজন্যে রাখার জন্য কথা বলা দরকার। মিহি বলে –
“- আচ্ছা আপনার বিষয়ে তেমন কোনো কথা জানা হলো না তাই একটু জানা যাক একে অপরের বিষয়ে। আপনি কি করেন? বা কোথা থেকে পড়াশোনা করেছেন “।
“- হুম অবশ্যই কোনো নয় “।
ইয়াসিন আর মিহি কথা বলতে থাকে মিহির কোনো যানি ভালো লাগছে না কথা বলতে। কিন্তু নিহানের সাথে ঝগড়া করতে কথা বলতে সবসময় তার ভালো লাগে তাহলে ওর সাথে এমন কোনো ফিল হচ্ছে মিহির।
আজকে নিহানের একটা মিটিং রয়েছে সামনে নিবার্চন তাই এই মিটিং করা খুব জরুরি তার জন্য। কিন্তু তারা সবাই ঠিক করে আজকে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করবে আর সেখানে বসে কথা বলবে তাই নিহান সানভি আর তার কাজের লোকেরা একটা রেস্টুরেন্টে ভিতরে আসে। সেখানে অনেক লোক রয়েছে তারা একটা বড়ো টেবিলে বসে কথা বলতে থাকে।
মিহি আর সেই ছেলে যখন কথা বলতে থাকে তখন খাবারের অর্ডার নিয়ে আসে ওয়েটার মিহি যখন খাবার খেতে যাবে। তখন ওর হাতে হঠাৎ করে একটু গরম খাবার পড়ে যায় যার কারণে মিহি একটু মুখ দিয়ে আহ নামক শব্দ বের করে। ইয়াসিন বলে –
“- আরে মিহি কি হয়েছে আপনার দেখি। ওহ আপনার হাতে গরম স্যুপ পড়ে গেছে দাঁড়ান আমি টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছি “।
মিহির এখন তার ব্যাথার দিকে খেয়াল নাই কারণ সে সামনে থাকা একটা মানুষকে দেখা যাচ্ছে অপলক সেটা আর কেউ না নিহান। নিহান আর মিহি একই রেস্টুরেন্টে এসেছে তাদের কাজের জন্য হঠাৎ করে কারো মুখে আহ শব্দটা শুনে নিহানের চোখ যায় সেইদিকে। সেখানে মিহিকে দেখে সে অবাক হয় পড়ে তার সব কথা মনে পড়ে নিহানের এখন আগুনের দৃষ্টি মিহির দিকে রাখা।
মিহি একটু শুধু ঢুক গিলছে নিহান তাকিয়ে দেখে মিহির হাতে যেখানে গরম খাবার পড়ে যায় আর ইয়াসিন সেখানে টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে। এইটা দেখে নিহানের কি পরিমাণ রাগ হচ্ছে সেটা ওর চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। ইয়াসিন বলে –
মন ফাগুন পর্ব ২৭
“- মিহি আপনার কি বেশি ব্যাথা করছে। মিহি “।
মিহির খেয়াল আসে তার হাতের দিকে সেখানে ইয়াসিনের হাত দেখে মিহি তাড়াতাড়ি সরিয়ে নেয়। সে একটু আড়চোখে নিহানকে দেখে নিহান এখনো মিহির দিকে তাকিয়ে রয়েছে মিহি বলে –
“- না না আমার কিছু হয় নাই আমি ঠিক আছি। আপনি খাবার খাওয়া শুধু করেন ইয়াসিন “।
মিহি যে কি করবে সেটক বুঝতে পারছে না। ভয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে না মিহি মনে মনে বলে –
“- ওহ গর্ড তুমার কি আমার জান কবজ না করা অবধি শান্তি হবে না। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয় কথাটা এতোদিন বিশ্বাস করি নাই আজ করছি। এখন কি যে হবে এই নিহান আমাকে খুন করে ফেলবে মিহি আজকে তুই শেষ “।