মন ফাগুন পর্ব ২৯
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
নিহান যেভাবে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে মিহি বুঝতে পারে তার কপালে আজকে প্রচুর বিপদ রয়েছে কিন্তু এখন মে কি করবে। না পারবে এখন এখান থেকে চলে যেতে তাহলে ওর আব্বু মনে হয় ওকে মেরে ফেলবে আর না পারবে এই নিহানের সামনে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে। মিহি মনে মনে বলে –
“- মিহি তোর সাথে আজকে কি যে হবে সেটা কেউ বলতে পারবে না নিহান কি মিটিং করার জন্য অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে পাই নাই। ওহ গর্ড কি যে হবে আমার তাড়াতাড়ি কথা বলে এখান থেকে চলে যায় “।
মিহি আর ইয়াসিন তখন খাবার খেতে থাকে নিহানের সেইদিকে তাকিয়ে থাকা দেখে সানভি নিহানের কাছে এসে ওর কানে কানে বলে –
“- বস এই নিবার্চন জয় লাভ করার জন্য আমাদের এই মিটিং অনেক জরুরি তাই স্যার সেখানে মনোযোগ দেন। আর মিহি ম্যাম আজকে এই ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছে এইটা আপনার জানা ছিলো তাই এখন কি করা যাবে না স্যার “।
সানভির কথা শুনে নিহান সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে টেবিলে বসে থাকা রাজনীতির লোকজন তার দিকে তাকিয়ে আছে আসলে কি হচ্ছে সেটা তারা বুঝতে পারছে না। নিহান হঠাৎ করে কোনো এতো রেগে গেলো আর ওইদিকে কোনো তাকিয়ে আছে সেটা তাদের বোধগম্য হচ্ছে না। নিহান বুঝতে পারে তার এখন মিটিং করা কতটা জরুরি সানভি সঠিক বলেছে নিবার্চনে জয় লাভ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিহান বলে –
“-আসলে এই রেস্টুরেন্টে আমার খুব পরিচিত তাই একটু আশেপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম এখন এইসব বাদ দিয়ে কাজের কথা বলা যাক। যেহেতু সামনে নিবার্চন সেইজন্য আপনাদের সাহায্যে আর নিবার্চনে বিরুদ্ধে যারা থাকবে তারা যাতে কোনো সমস্যা না করতে পারে সেটা দেখা জরুরি “।
নিহান তার মিটিং করতে থাকে তবে আড়চোখে সবসময় তার নজর মিহির উপর রয়েছে অন্যদিকে মিহি কি বলবে ইয়াসিনের সাথে ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার। ইয়াসিন মিহির এইরকম পানি খাওয়া দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- মিহি কিছু কি হয়েছে আপনার এইরকম করে পানি খাচ্ছেন কোনো শরীর খারাপ লাগছে কি?ডক্টরের কাছে কি যেতে হবে কোনো সমস্যা?
-” না না ইয়াসিন ডক্টরের কাছে যেতে হবে না আমার আসলে বাহিরে অনেক গরম তাই একটু পানি পিপাসা লাগছে। আচ্ছা আপনার বিষয়ে কোনো কথা জানা হলো না তাহলে সেই বিষয়ে জানা যাক “।
ইয়াসিন বেশ সুন্দর করে কথা বলতে পারে মিহির বেশ ভালো লাগছে কথা শুনতে। কিন্তু মিহির এইরকম করে তাকিয়ে থাকা যে নিহানের কতটা রাগ উঠিয়ে দিচ্ছে হয়তো মিহি সেটা জানে না। নিহানের মিটিং অনেক সময় ধরে চলে তবে এখন সবার জন্য খাবার অর্ডার করে সানভি। কারণ সানভি যানে নিহানের এখন যা রাগ ও হয়তো কি যে করবে তাই সব দায়িত্ব সেই পালন করছে।নিহান হাত থেকে ফোন নিয়ে কাউকে মেসেজ করে –
“- মিহি ওয়াশরুমে আসুন আমি সেখানে ফ্রেশ হতে যাচ্ছি যদি না আসেন। তাহলে আপনার সাথে আজকে বাড়িতে কি হবে সেটা আপনি নিজে ও জানেন না “।
মিহি যখন ইয়াসিনের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছিলো তখন ওর ফোনে একটা মেসেজ আসে। মিহি চেক করে দেখে নিহানের নাম্বার থেকে এসেছে পড়ে দেখে নিহান তাকে ওয়াশরুমে যেতে বলেছে। মিহি নিহানের দিকে তাকায় নিহান ওকে ইশারা দিয়ে ওয়াশরুমে যেতে বলে। তখন মিহি বলে –
“- আচ্ছা ইয়াসিন আমার না একটু শরীর খারাপ লাগছে একটু ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি। আপনি এখানে বসুন একটু “।
“- ওহ আচ্ছা যান মিহি সমস্যা নাই “।
মিহি কথাটা বলে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায় নিহান ও ফ্রেশ হওয়ার কথা বলে ওয়াশরুমে যায়। মিহি এখন ওয়াশরুমের ভিতরে দাঁড়িয়ে রয়েছে হঠাৎ করে কেউ একজন তার হাত শক্ত করে ধরে। আর সেটা কে হতে পারে তা মিহি জানে নিহান রাগী স্বরে বলে –
“- সমস্যা কি আপনার মিহি ওই ছেলেটার সাথে এতো হেঁসে হেঁসে কি কথা বলছিলেন আপনি হুম। এতো ভালো লাগছিলো কথা বলতে ওর ছোঁয়া যেতে খুব ইনজয় করছিলেন তাই না “।
নিহান মিহির হাত খুব শক্ত করে ধরে যার কারণে মিহি বেশ অনেক ব্যাথা পাচ্ছে কিন্তু নিহানের সেই বিষয়ে কোনো খেয়াল নাই। আর নিহান যেভাবে মিহির সাথে কথা বলছে সেটা শুনে মিহির বেশ বিরক্ত লাগছে মিহি বলে –
-” এইটা কেমন করে কথা বলছেন আপনি নিহান? আর হাতে এতো শক্ত করে কোনো ধরলেন ব্যাথা করছে আমার। ওই ছেলের সাথে কথা বলতে বাধ্য আমি না বললে সমস্যা হবে আর আপনি সব জানেন তাই না “।
মিহির ব্যাথা বা মিহির একটা কথা ও নিহানের কানে যায় নাই সে আরো জোরে মিহির হাত ধরে রাখে। নিহান বলে –
“- ওহ এখন একটু আমি হাত ধরেছি বলে আপনার ব্যাথা লাগছে কিন্তু এতোখন সেই ছেলেটা হাত ধরেছিলো তখন ভালো লাগছিলো তাই না। ওই ছেলের সাথে কথা বলা আপনার বাধ্যতা না আপনার ভালো লাগে মিহি। আপনার প্রথম দেখায় সেই ছেলেকে ভালো লেগে গিয়েছে কিন্তু শুরু বিয়েতে রাজি হতে পারছেন কারণ আমার রাগ আর আমাদের বিয়ের জন্য “।
“- বিষয়টা এইরকম না নিহান ইয়াসিনের সাথে কথা না বললে আব্বু আমাকে অন্য কারো সাথে কথা বলতে বলবে তখন কি করব। আর আমি বিবাহিত আর আপনি আমার স্বামী আমার কোনো অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে ভালো লাগবে “।
নিহান মিহির হাত ছেড়ে দেয় আর মিহির কতটা কষ্ট হচ্ছে সেটা ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ওর রাগ একটু ও কমে নাই নিহান বলে –
“- আজকে আপনার আব্বুর জন্য এই ছেলের সাথে কথা বলতে বাধ্য করেছে কালকে যদি বলে আপনাকে ইয়াসিনকে বিয়ে করতে তখন কি করবেন আপনি মিহি? আসলে সত্যি কি যানেন মিহি আমাদের বিয়ের পর থেকে আমার কেয়ার ভালো ব্যবহার আপনাকে মুগ্ধ করেছে তাই আপনি আমার সাথে এতোদিন থেকেছেন। কিন্তু আজকে ইয়াসিনেন ব্যবহার আপনার কাছে ভালো লাগছে তাই ওর সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে আপনার “।
“- আপনার কি মনে হয় নিহান আমি চরিত্রহীন যে আজকে নিহানকে ভালো লাগবে কালকে ইয়াসিনকে। ইয়াসিনের ব্যবহার ভালো তার মানে এই না আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি “।
“- হুম সেটা ঠিক কিন্তু একটা কথা বলুন ওর সাথে দেখা হওয়ার পর আপনার মনে হয়েছে হয়তো ও আমার থেকে ভালো।যদি আপনি আমার হতেন তাহলে কখনো অন্য কাউকে আমার থেকে বেশি ভালো লাগতো না আপনার মিহি। একটা সত্যি কথা কি জানেন না আপনার প্রতি ভালোবাসার কোনো অনুভূতি আছে আর না নিজের বাবার সামনে গিয়ে আমাদের বিয়ের বিষয়ে বলার কোনো সাহস আছে “।
মন ফাগুন পর্ব ২৮
“- নিহান “।
“- সত্যি এইটাই মিহি এখন আমি বুঝতে পারছি শুধু শুধু আপনার প্রতি অধিকার দেখেয়ি ভুল করেছি আমি। আপনার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নাই না কখনো সেটা হবে। আপনি শুধু এইটা দেখলেন সেই ছেলের সাথে যদি আপনি কথা বলেন তাহলে আমার কতটা রাগ হয় কিন্তু কতটা কষ্ট হয় সেটা আপনি দেখেন নাই। নিজের বউয়ের হাত অন্য কেউ ধরলে কতটা খারাপ লাগে সেটা আপনি বুঝতে পারবেন না কারণ আপনি এখনো কাউকে ভালোবাসেন নাই এমন কি আমাকে ও না “।