মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ৩৬

মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ৩৬
মুশফিকা রহমান মৈথি

“তোর ভাইয়ের বিয়ের কামলা দেওয়ার জন্য আমার একটা আবদার আছে”
“কি আবদার?”
অভ্র ফিঁচেল হাসলো। ঐন্দ্রিলার কানে মুখ লাগিয়ে বললো,
“তুইতে মত্ত আরেকটি রাত”
বড়ই নির্লজ্জ আবদার। বাজে ছেলে বাজে আবদার। তার গাঢ় চোখে উঁকি দিচ্ছে দুষ্টুমির লহর। সেই সাথে মিশে আছে তীব্র আকাঙ্খা। এমন দৃষ্টি খুব ভয়ংকর। জলদগম্ভীর আঁখিতে মারাত্মক নেশা থাকে। সেই নেশার খরা তাপে গলে যায় হৃদয়ের কঠিন পাহাড়। দূরত্বের দেওয়াল খসে যায়। কালবৈশাখী ঝড়ের মতো উত্তাল হয়ে উঠে সদ্য প্রেমের জোয়ারে ভাসা হৃদয়। থরথর করে কাঁপে শরীর। তখন হৃদয়ও সম্মোহনী স্বরে বলে,

“একটু বেপরোয়া হলে কি ক্ষতি”
নিজের হৃদয়ের এমন নির্লজ্জ যুক্তিতে অবাক হলো ঐন্দ্রিলা। নির্লজ্জ আবদারকে কি চমৎকার যুক্তিতে বাঁধছে হৃদয়। আজকাল হৃদয়টা বড্ড বেশি নির্লজ্জ হয়ে গেছে। এটা হতে পারে এই বেলেহাজ পুরুষের সাথে থাকার সাইড ইফেক্ট। তাই তো বাড়ে বাড়ে এই পুরুষটার অসভ্যতাকেও মিষ্টি বলে আখ্যা দিতেও লজ্জা করে না। হৃদয় শিহরিত হয় তার স্পর্শ পেতে। বুভুক্ষু হয়ে থাকে তার আদুরে প্রলাপ শুনতে। ঐন্দ্রিলার মস্তিষ্ক মাঝে মাঝে চায় কঠিন মামলা ঠুকে এই বেয়াদব হৃদয়টাকে শাস্তি দিতে। কিন্তু আজকাল তার যুক্তির ধারে জং ধরেছে। যখন অভ্র তাকে পরম যত্নে আগলে রাখে তখন পৃথিবীটাকেও ঠুংকো মনে হয়। এই অনুভূতিটা খুব বিচিত্র কিন্তু স্নিগ্ধ। তার চোখের গভীরতায় হারিয়ে গেলেও আফসোস হয় না। মন চিৎকার করে গায় “আজ আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা”।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিল্লালের চিৎকার আবার শোনা গেলো। ছেলেটা বেশ খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছে। এতোটা খিটখিটে আগে ছিলো না। পৃথিবীর মানব সভ্যতার উপর তার বিতৃষ্ণা। এই বিতৃষ্ণার ঝাল পোহাতে হয় অভ্রকে। মেনে নিতে হবে কিছু করার নেই। বন্ধুত্ব তো একপাক্ষিক নয়। অভ্র যখন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির হয়ে লাভা উদগীরণ করে তখন এই ব্যাক্তি লোহার ডান্ডা হাতে সেই লাভা গুলোকে শীতল পানিতে চুবিয়ে আগ্নেয় শিলা জমা করে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঐন্দ্রিলার ঠোঁটে চট করে চুমু খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা করলো অভ্র। যাবার সময় বললো,
“আমার আবদার ভুলবি না। আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমালে খবর আছে। ঠান্ডা পানিতে চুবানি দিবো”
হুমকিসংশ্লিষ্ট আদেশ। ঐন্দ্রিলার হাসি পাচ্ছে। শত্রুটাকে আজকাল এতো ভালো লাগে! ব্যাপারটি মোটেই ভালো নয়।

সালাম সাহেব পায়চারী করছেন। তিনি চিন্তিত। নিজের গাধা মানব ছেলের আজ বিয়ে। এটা তো স্বপ্নতীত। নীলাদ্রিকে শুধু গাধা ভাবেন না তিনি। সে নিন্মমানের গাধা। গাধাদের সমাজের সে কলঙ্ক। অথচ আজ সে বিয়ে করছে। তার যে কোনোদিন বিয়ে হবে সেটা কস্মিনকালেও ভাবেন নি সালাম সাহেব। বিয়েটাও নাটকীয় ভাবে। পিউকে সে ভালোবাসে না বলে দাবী করে। অথচ ভাবসাব বলে উলটো কথা। নীলাদ্রিকে দেখলে যে কেউ সাদা খাতায় লিখে দিতে পারে সে পিউকে শুধু ভালোবাসেই না, পিউয়ের হাতে নিতান্ত রশি ধরিয়ে রেখে সে। বাবা হিসেবে সালাম সাহেবের উচিত এই বিশেষ দিনে ছেলেকে কিছু বলা।

জীবন থেকে ধারণ করা কোনো উপদেশ বাক্য অথবা সুন্দর করে শুভকামনা। কিন্তু নীলাদ্রিকে ঠিক কি বলা যায় ঠাহর করতে পারছেন না সালাম সাহেব। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটির স্বভাব ব্যাতিক্রম। তাদের সম্পর্কটাও ব্যাতিক্রম। তাই এমন বিচিত্র সম্পর্কে মিঠা কথা মুখে আসে না। আর এই শুভদিনে তিক্ত কথাও বলতে চান না। আজকাল একাবিংশ শতাব্দীতে এসে সব কিছুর সমাধান পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। সালাম সাহেবও সেই সমাধান খুজলেন। লিখলেন “How to appreciate my idiot son?” সমাধান এলো। একটা ছয় পয়েন্টের সমাধান। পয়েন্টগুলো পড়লেন। কিন্তু পছন্দ হলো না মোটেই। তবুও একটা সাদা কাগজে টুকলেন। সবচেয়ে সহজ যেটা মনে হলো সেটা হলো “হাসা”। নীলাদ্রিকে দেখে তার এমনেই হাসি পায়। কিন্তু এই হাসি বিদ্রুপের নয় বরং আনন্দের, কৃতজ্ঞতার। এবার সালাম সাহেব আয়নার সামনে হাসির অনুশীলন শুরু করলেন। সেই মুহূর্তে ঘরে প্রবেশ করলো সাবেরা। আয়নার সামনে স্বামীকে এমন অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসতে দেখে শুধালেন,

” কি হয়েছে তোমার? পাগলের মতো হাসছো কেন?”
সাবেরার প্রশ্নে ভড়কে গেলেন সালাম সাহেব। অপ্রস্তুত স্বরে বললেন,
“তুমি কি করছো?”
“রেডি হতে এসেছি। তুমি রেডি না হয়ে আয়নার সামনে পাগলের মত হাসছো কেনো? আমাদের তো যেতে হবে পিউয়ের বাসায়। সময় তো হয়ে এলো”
“হাসছি না। আমি তোমার গাধা ছেলেকে বিয়েতে শুভকামনা দেবার প্রাকটিস করছি। বাবা হিসেবে এটা তো আমার দায়িত্ব”

“হঠাৎ পশ্চিম দিকে সূর্যের উদয় কেনো?”
সালাম সাহেব উত্তর দিলেন না। সাবেরা শাড়ি বের করতে করতে মুচকি হেসে বললো,
“সালাম সাহেব, আমার গাধা পুত্র আপনাকে বাজিমাত করে দিয়েছে বলে কি আপনি লজ্জিত?”
“এখানে লজ্জার কি আছে?”
“এই যে সে প্রেম না করেও, তোমার সাহায্য ছাড়াই তার প্রিয়তমাকে নিজের করে নিয়েছে। তোমার মতে তো তার দ্বারা কিছুই সম্ভব নয়। । ইশ! ছেলেটা মুখে ঝামা ঘষে দিলো”
“বেশি হেসো না বুঝলে! ভুলে যেও না তোমার ছেড়া নোট কিন্তু গুছিয়ে সংসার করছে। খুব তো বলছিলে আমার মেয়ের দ্বারা কিছুই সম্ভব নয়”

সাবেরা হাসলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়িটা বাছাই করতে করতে বললো,
“আমি কিন্তু খুব খুশি। হেরে যাওয়ায় এতো আনন্দ আগে জানতাম না বুঝলে। তোমার আনন্দ হচ্ছে না?”
অস্বীকার করাটা অন্যায় হবে, সালাম সাহেব সত্যি ই আনন্দিত। পিউয়ের মত একটি মেয়ে তার গাধা পুত্রের জীবনে আসবে এটা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। তবুও স্ত্রীর কাছে স্বীকার করলেন না। কারণ মান সম্মানের ব্যাপার৷

পিউয়ের বাসায় লোক গিজগিজ করছে। যথারীতি সন্ধ্যা সাতটায় বরপক্ষ তার দলবল দিয়ে এসেছে। গাড়ি নিয়ে বিশাল কান্ড ঘটেছে। ভুলে গাড়ি সাজানো হয়েছে গোলাপ দিয়ে। অন্যদিকে গোলাপের গন্ধে এলার্জি নীলাদ্রির। গাড়িতে উঠেই হাচি দিতে দিতে অবস্থা বিতিকিচ্ছিরি। পড়ে সমাধান বের করা হলো বির আসবে ইজি বাইকে করে। তাই হলো, বর ইজি বাইকে করে আসলো।

ব্যাপারটা তার নাটকীয় বিয়েতে বেশ “চেরি অন টপ” এর মতো কাজ কার করলো। পিউয়ের মা নিতুল তাকে বরন করতে ব্যাস্ত, তখন আকরাম সাহেবের দৃষ্টি শুধু অভ্রতেই আটকে থাকছে। ছেলেটার মুখটা অতীব পরিচিত লাগছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে মোটেই মনে করতে পারছে না। বয়সের এই একটা বাজে দিক। স্মরণ থাকে না কিছুই। আকরাম সাহেবের অবস্থা হয়েছে তেমন। তিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন অভ্রর দিকে। তার দৃষ্টি এমন যে অভ্রও সেটা খেয়াল করেছে। এখন বেশ বিব্রতবোধ হচ্ছে তার। সে যতই এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে, নাছোড়বান্দা তার দিকেই চেয়ে আছে। অবশেষে না পেড়ে বললো,

“কিছু বলবেন আংকেল?”
“তোমাকে আমার চেনা চেনা কেনো লাগছে বাবা?”
আকরাম সাহেবের এমন বাক্যে অভ্র দাঁত কপাটি বের করে বললো,
” আসলে আমি অনেক সুন্দর তো, মাশআল্লাহ মডেলের মতো চেহারা আল্লাহ দিয়েছেন। তাই সবার আমাকে চেনা চেনা লাগে। ব্যাপার না আংকেল উত্তেজিত হবেন না প্লিজ”
অভ্রর উত্তরে তিনি আরোও দ্বিধায় পড়ে গেলো। কিন্তু অভ্র বুঝলো যতই আড়াই হাজার টাকার মেকাপ করুক বুড়ো তাকে সন্দেহ করছে। এখন কেটে পড়াই ভালো। নয়তো এতো সুন্দর গুছানো বিয়েটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে।

নিজের টেবিলে বসে আছে পিউ। পরণে লাল বেনারসি। বিয়ের সাজ, গহনা, খোপায় মালা, মাথায় ওড়না। দুধে আলতা মেয়েটির রুপ আজ ঠিকরে পড়ছে। নীলাদ্রির কঠিন হৃদয়ে দোলা দেবার সর্বস্ব প্রচেষ্টা। মেয়েদের বিয়ে হলে তাদের দুঃখ পেতে হয়। এটা ন্যাচারস ল। মানতেই হবে। নিজ রাজত্ব, সম্ভার, অস্তিত্ব ত্যাগ করে অন্যের আঙ্গিনা যাওয়ার সময় অশ্রু আপনাআপনি হৃদয়কে ভারী করে। মন ডুবে যায় বিস্তীর্ণ বিষন্নতায়।

কিন্তু পিউয়ের ঠোঁট থেকে সরছে না হাসি। ঠোঁটের কোনায় আঠার মতো লেগে আছে৷ কারণ তার হৃদয়ে শংকা নেই, ভয় নেই। যে মানুষটার কাছে সে যাচ্ছে সে তার বহুসাধনার পুরুষ, তার হৃদয়ে লালিত করেছে সে। নীলাদ্রিকে কখনো বলা হয় নি বটে কিন্তু সে তাকে যে বহু বসন্ত জুড়ে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে একটি চিঠিও লিখেছে সে। বাসর রাতে নীলাদ্রিকে দিবে এই প্রেম গলানো পত্র। নীলাদ্রির অবস্থা তখন কেমন হবে? জানার ইচ্ছে হচ্ছে খুব। এর মাঝেই ঐন্দ্রিলা প্রবেশ করলো ঘরে। একটা নীল কাতান পড়েছে সে। সাধারণ সাজেও মেয়েটিকে মায়াবতী তকমায় অলংকৃত করা যায়। ছুটে এসে বান্ধবীর সামনে বসলো,

“কি গো ভাবীসাব, ভাইজান তো চলে এসেছে। তৈরি তো?”
বান্ধবীর ঠাট্টায় লজ্জায় মুখখানা রক্তিম হলো। বান্ধবী এখন শুধু বান্ধবী নয়, তার ননদিনী রায়বাঘিনী। ঐন্দ্রিলা নিজের স্থান পরিষ্কার করতে বললো,
“আমি কিন্তু যে সে ননদ নই। বুঝে শুনে চলবে কিন্তু”
“যথাআজ্ঞা ননদিনী”
“আমার ভাইকে বুঝি পত্র লিখছিলি! আর লিখে কাজ নেই, তোর বর এখন উতলা হয়ে তোর প্রতীক্ষায় আছে”
পিউ চিঠিটা ভাঁজ করলো। বিদ্রুপ টেনে বললো,
“এমন করছিস কেনো রে! বিয়ে তো হয়েই যাচ্ছে। প্রেম করার ভাগ্য তো হলো না, তাই বলে কি প্রেমপত্রও লিখতে দিবি না”

“বিয়েই তো হয়ে যাচ্ছে এখন প্রেমপত্রের কি কাজ?”
“তাই বলে ভালোবাসি বলবো না? তুইও বলিস নি অভ্রকে?”
ঐন্দ্রিলা চুপ করে গেলো। কিছুসময় চুপ থেকে মিনমিনিয়ে বললো,
“প্রেমপত্রের বহুত উপরে চলে গেছে আমাদের সম্পর্ক। এখন আর প্রেমপত্র দিয়ে ফিয়ে কাজ নেই”
“তাই বলে জানাবিও না ওকে?”
“জানানো লাগবে?”
“আলবাত লাগবে। তুই তো তার প্রেমে পড়েছিস তাই না?”

হ্যা, ঐন্দ্রিলা প্রেমে পড়েছে। একেবারে হুমকি খেয়ে হাটু গেড়ে পড়েছে। অসভ্য, নির্লজ্জ, বেয়াদব পুরুষটা বিশ্রীভাবে তার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। সেই আধিপত্যকে অস্বীকার করার জো নেই। ঐন্দ্রিলা একটু একটু করে তার মাঝে ডুবেছে। অজান্তেই সে ভালোবেসে ফেলেছে নিজের শত্রুকে। কিন্তু সেই কথা মুখে আনতেই লজ্জায় কুকড়ে উঠে। পিউ হেসে বললো,
“মুখে আনতে না পারলে লিখে জানা! প্রেমপত্র যে মেয়েরা দিতে পারবে না সেই নিয়ম তো নেই”

কাজী এসেছে। কবুল পর্ব শুরু হলো। তিন বার কবুলের মাধ্যমে নীলাদ্রি এবং পিউ একে অপরের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে গেলো। খুরমা বিতরণ হলো। সবার মাঝে আনন্দ। বরপক্ষের খাবার ব্যাবস্থা করলেন আকরাম সাহেব। ঐন্দ্রিলা অভ্রকে খুজতে লাগলো। আসার পর থেকে ছেলেটি লুকিয়ে লুকিয়ে আছে। হঠাৎ চোখ পড়লো শামিয়ানার এক পাশে এক ঝাঁক মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে সে। মেয়েগুলো পিউয়ের কাজিন। ছোট ছোট ইঁচড়েপাকা মেয়ে। এর মাঝে পদ্মফুল সেজেছে যেনো অভ্র। কি প্রয়োজন ছিলো কালো পাঞ্জাবীটা পড়ার। এমনিই তার সুবিশাল দেহ আর সুউচ্চ গড়ণে সকলের নজরে প্রথমেই পড়ে সে। তারপর উপর নায়ক সেজে আসার কি হেতু? মেয়েগুলো তার সাথে কথা বলছে হেসে হেসে। হাসতে হাসতে তারা প্রায় অভ্রের উপর পড়ে যাচ্ছে। দৃশ্যটি একটুও সহ্য করার মতো নয়। ফলে হনহন করে মেয়েগুলো হাসিতে ব্যাঘাত ঘটাতে সেখানে উপস্থিত হলো। মুখে হাসি এঁটে কঠিন বললো,

“বাবু, খাবে না?”
ঐন্দ্রিলাকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। প্রায় ছুটে এসে তার পেছনে দাঁড়ালো। ঐন্দ্রিলার কাঁধে দুহাত রেখে বললো,
“এই যে তোমাদের ভাবী এসে গেছে। তোমরা বরং তোমাদের দুলাভাইয়ের মাথা খাও”
“দুলাভাইয়ের মাথায় মজা নেই অভ্র ভাইয়া। আমরা আপনার মাথা খেতে চাই”
বলেই নির্লজ্জের মতো হাসলো মেয়েগুলো। ঐন্দ্রিলা তখন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আসলে ও তো দুপুরের পর থেকে অভুক্ত, ওর মাথায় গ্যাস হয়েছে। ওর মাথা খেলে তোমাদের পেট খারাপ হবে। সুন্দর করে সেজে বাথরুমে ছুটতে কি ভালোলাগবে বলো?”
মেয়েগুলোর হাসি উবে গেলো। ঐন্দ্রিলা একপ্রকার টেনে অভ্রকে নিয়ে এলো মেয়েদের মাঝ থেকে। একটা খালি জায়গায় এসে কড়া স্বরে শুধালো,

“কি হচ্ছিলো?”
“বিশ্বাস কর, আমার দোষ নেই”
“তো নায়ক সেজে কে আসতে বলেছিলো”
“শালার বিয়ে, সাজবো না? হাতে আংটি থাকতেও যদি কেউ না বুঝে আমি বিবাহিত এখানে আমার কি দোষ। এখন গলায় তো সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ঘুরতে পারি না ”
ঐন্দ্রিলা কটকট করে চাইলো। তার চোখ থেকে আগুন ঝরছে যেনো। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে শান্ত স্বরে বললো,
“নিচু হ”
“হ্যা?”
“বললাম মাথা নিচু কর”

অভ্র স্ত্রী আজ্ঞা পালনে মাথা নোয়ালো। ঐন্দ্রিলা পায়ের পাতার উপর দাঁড়িয়ে দুহাতে ধরলো অভ্রের মুখবিবর। অভ্রর বিস্ময়কে সপ্তম আকাশে উঠিয়ে হঠাৎ তার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলো সে। সাথে সাথে “হিসসস” করে উঠলো অভ্র। তীক্ষ্ণভাবে জ্বলছে জায়গাটা। কিন্তু সেই মৃদু ব্যাথাকে মোটেই অনুভব করতে পারলো না সে ঐন্দ্রিলার এমন কাজের বিস্ময়ে। ঐন্দ্রিলার তার স্তম্ভিত দৃষ্টিতে দুপয়সার দাম না দিয়ে বললো,
“সাইনবোর্ড লাগবে না। আমি আমার স্টাম্প নেরে দিয়েছি”

বিয়ের পর্ব শেষে নীলাদ্রির বাড়ির সকলে চলে গেলো। থেকে গেলো শুধু নীলাদ্রি। বিয়ে করেই বউ ফেলিয়ে ছুট দেওয়াটা শোভা পায় না। পিউয়ের ফুপুরা একবার বলাতেই নীলাদ্রিকে রেখে দিলেন সবাই। নীলাদ্রি কিঞ্চিত চিন্তিত। প্রচুর স্ট্রেস লাগছে। এর উপরে ইঁচড়েপাকা শালী গুলো তো আরোও একধাপ এগিয়ে। তারা ঘরে ঢুকতে দিবে না। চাঁদা চায়। নীলাদ্রি তার পকেট থেকে দুটো পাঁচশ টাকার নোট দিয়েছে। কিন্তু তারা তাও ছাড়বে না। একটা সময় নীলাদ্রি যখন বললো,
“ঠিক আছে, তোমরাই থাকো। আমি বসার ঘরে ঘুমাবো”

তারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে গেট ছেড়ে দিলো। ঘরে একেবারে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে পিউ। পিউকে আজ ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের দেবী লাগছে। গ্রীক দেবী এফ্রিদিতিও এতো সুন্দর কিনা সন্দেহ। নীলাদ্রি তার ঘোমটা তুললো। পিউ চোখ নামিয়ে রেখেছে। লজ্জায় তার মুখখানা রক্তিম হয়ে আছে। চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে। লাল লিপ্সটিকে রাঙ্গানো ঠোঁটজোড়াও কাঁপছে ক্ষীন। দৃশ্যটি কামুক। তাই বিনা ভনীতায় বললো,

মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ৩৫

“গবেষণায় বলে চুমু খেলে নাকি ছয় ক্যালোরি বার্ন হয়। ” ফিল গুড” হরমোন নিঃসরণ হয় বলে মেদ গলে। যত আন্তরিকতার সাথে চুমু খাওয়া হয় তত ভালো ফলাফল। দাঁতের জন্যও চুমু বেশ উপকারী। আমার যদিও দাঁতের সমস্যা নেই, তবে বিয়েতে খাওয়াটা বোধ হয় বেশি হয়ে গেছে। হুট করে বিবাহে আমার স্ট্রেসও বেড়ে গেছে। তাই আমি কি তোমাকে চুমু খেতে পারি?”………….

মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ৩৭