মনে রেখ এ আমারে পর্ব ১০

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ১০
রায়েনা হায়াত

তাইমুরের জ্বর সামান্য কমে গেলে আনোয়ার সাহেব আর রেহেনা বেগম তাকে নিজেদের ফ্ল্যাটে আনে। রাতে আবার বেড়ে গেলে কে দেখবে তাই ভেবেই এনেছে। ছেলের জ্বর আর বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য হায়দার সাহেব আর তহুরা বেগমও গতরাতেই রাজশাহীর দিকে রওয়ানা দিয়েছেন। তাইমুর অন্তিদের ফাঁকা রুমটাতে শুয়ে ছিলো। গতকালের চেয়ে আজ তার জ্বরটা কম। কপালে হাত রেখে নিশ্চল হয়ে পরে ছিলো। অন্তি নাস্তার প্লেট হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–‘আসবো?’
তাইমুর কপাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে। অন্তি ততক্ষণে রুমে ঢুকে গেছে। নাস্তার প্লেটটা বিছানার ওপর রেখে বলে,

–‘আম্মু আপনাকে খেয়ে নিতে বলেছে।’
অন্তির মুখটা শুকনো। তাইমুর এক পলক তার মুখের দিকে তাকিয়ে নাস্তার প্লেট হাতে নিতে নিতে বলে,
–‘কিছু হয়েছে?’
অন্তি স্বাভাবিক ভাবেই তার দিকে তাকায়। কন্ঠ যত সম্ভব স্বাভাবিক রেখেই বলে,
–‘না। খেয়ে নিন। আমি আসছি!’
অন্তি চলে যেতে নিলে পেছন থেকে তাইমুর বলে ওঠে,
–‘প্রেমিক তো বিয়ে করে বউ নিয়ে সুখে আছে। তো তার সাথে তো দেখা করা নাই। তাইলে আপনার এতো তাড়া কেন? নাকি নতুন কেউ হইছে?’
অন্তি না ফিরেই বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–‘হইলে হইতেও পারে। সিঙ্গেল তো আর থাকা যাবে না। বিয়েও করতে হবে।’
তাইমুরের হাত থেমে যায়। অন্তি বেড়িয়ে যায়। তাইমুর নাস্তার প্লেট নিচে রেখে দিয়ে ভাবে অন্তি এটা কি বললো! তাকে খোঁচার বিপরীতে বললো নাকি সত্যি বললো? তার ভাবনার মাঝেই হায়দার সাহেব আর তহুরা বেগম তড়িঘড়ি করে রুমে আসে। তারা মাত্রই এসেছে। তহুরা বেগম ছেলেকে দেখেই কাছে এসে আগে জড়িয়ে ধরেন। তাইমুর হেসে বলে,
–‘আমি ঠিক আছি, আম্মু। এতো চিন্তা করো না।’
–‘কেমন ঠিক আছিস দেখতেই পাচ্ছি।’
তাইমুর হাসে। মা”কে জড়িয়ে ধরে। হায়দার সাহেবও পাশে বসে নরম স্বরে কথা বলেন। আনোয়ার সাহেব, রেহেনা বেগম আর অন্তিও আসে। তারা আসলে তহুরা বেগম ছেলেকে ছেড়ে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে। হায়দার সাহেব অন্তিকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,

–‘এটা অন্তি মা?’
অন্তি মাথা নাড়িয়ে সালাম দেয়। হায়দার সাহেব সালামের উত্তর নিয়ে তার কাছে গিয়ে মাথায় হাত রেখে বলে,
–‘কত বড় হয়ে গেছে আমাদের মেয়েটা!’
আনোয়ার সাহেব মুচকি হাসেন। দু বন্ধু একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। কতদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই। শুধু ফোনেই কথা বলা হয়। দু’জন বাহিরে চলে গেলেন নিজেদের মতো। তহুরা বেগম তাইমুরকে খাইয়ে দিচ্ছেন। তা দেখে রেহেনা বেগম তাকে বললেন,

–‘ভাবী, আপনি তাইমুরকে খাইয়ে দিয়ে আসেন। আমি আপনার জন্য নাস্তা বের করছি।’
তহুরা বেগম মাথা নাড়ালেন। রেহেনা বেগম বেড়িয়ে গেলেন। অন্তি ভাবছিলো সেও যাবে এমন সময় তাইমুরের গলায় খাবার আটকে যায়। অন্তি টেবিল থেকে দ্রুত পানি নিয়ে তাইমুরের দিকে এগিয়ে দেয়। তহুরা বেগম অন্তির দিকে তাকালেন। অন্তি তখনো তাইমুরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাইমুরের পানিটুকু খাওয়া শেষ হলে সে বেড়িয়ে যেতে নেয়। তহুরা বেগম পিছু ডাকেন। অন্তি পিছু ফিরলে তিনি বলেন,
–‘এখানে বসো না! সেদিনও তোমার সাথে গল্প করা হয়নি। এবার কিন্তু লম্বা সময় নিয়ে এসেছি।’
অন্তি কৃত্রিম হেসে সায় দিয়ে বলে,
–‘অবশ্যই, আন্টি। আপনি খাইয়ে দিয়ে আসেন, তারপর একসাথে বসে গল্প করবো।’
তহুরা বেগম সায় দিলেন। অন্তি চলে গেলে তাইমুর ঘাড় বাঁকিয়ে সেদিকে তাকায়। তহুরা বেগম আরেক টুকরো ছেলের মুখে দিয়ে বলেন,

–‘বলেছিস ওকে?’
তাইমুর উদাস গলায় বলে,
–‘দরকার নেই, আম্মু। অন্তিকা তো আমাকে ভালোবাসেনি। শুধু শুধু ওকে বলে আমার অনুভূতিগুলোকে ন’ষ্ট করতে চাই না।’
তহুরা বেগম সবই জানেন। শুধু জানেন না তন্ময়ের কথা। ছেলে এতোগুলো বছর অন্তির থেকে দুরে থেকেছে কোনো একটা কারণে কিন্তু সে কারণটা তাইমুর কখনোই তাকে বলেনি। ছেলের য’ন্ত্রণা পাওয়া তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। তা দেখার পর অন্তির ওপর তারও প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মেছিলো। কিন্তু যখন জানতে পারলেন যে অন্তি তো জানেও না তাইমুরের মনের খবর তখন তার ক্ষোভ কমে যায়। তাইমুরকে অনেকবার বলেছে অন্তিকে বলে দিতে কিন্তু তাইমুর শোনেনি। তহুরা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলের মুখের সামনে আবার খাবার ধরলে তাইমুর মানা করে। জ্বর মুখে আর খেতে পারে না। তহুরা বেগম জোর করলেন না। প্লেট সরিয়ে পানি খেতে দিয়ে বললেন,

–‘যদি না-ই বলিস তাহলে আমার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে কর!’
তাইমুর শুনেও শুনলো না। সে অন্তিকেও বলবে না, বিয়েও করবে না। তহুরা বেগমও এবার জিদ নিয়েই আছেন। তিনিও এতো সহজে ছেলেকে ছাড় দিবেন না।

আনোয়ার সাহেব হৃদানকে কল করে বলেছিলো যেনো অবনীকে নিয়ে আসে। হৃদান অফিসের কারণে সন্ধ্যায় আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু মাঝখান থেকে নীলা বলেছে সে আসবে তার ভাবীর সাথে। হানিফা বেগম প্রথমে মানা করেছিলেন কিন্তু নীলা জিদ ধরে বসে আছে সে যাবে। কোথাও যায় না বলে হৃদানও পারমিশন দিয়ে দিয়েছে। অবনী এ নিয়ে আছে আরেক চিন্তায়। গত রাতে সে নীলার ব্যাপারটা হৃদানকে বলতে চেয়েছিলো কিন্তু হৃদান কিভাবে নিবে বুঝতে না পেরে আর বলা হয়নি। অবনীর ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে থামে মোড়ে। নীলা ডাকে,
–‘ভাবী, এসে গেছি। নামো!’
অবনী ব্যাগ হাতে নিয়ে নামে। ৪-৫ দিন সে এখানে থাকবে। হায়দার সাহেব আর তহুরা বেগম থাকবেন বলেই সেও থাকবে। নীলাও হয়তো থাকবে। অবনী নীলাকে নিয়ে বিল্ডিং এর মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
–‘তাইমুর ভাইয়ের জন্য এসেছো, তাই না?’

নীলা মুখে কিছু বলে না। তার চোখ মুখের উজ্জ্বলতা-ই বলে দেয় সে তাইমুরের জন্যই এসেছে। অবনী পরেছে মাঝে। একদিকে তার বোন তো অন্যদিকে ননদ। পরিণতি যা-ই হোক দোষ তার ঘাড়েই পরবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ঢুকতেই অন্তি এগিয়ে আসে। সাথে নীলাকে দেখতেই তার মুখটা মলিন হয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে হেসে বলে,
–‘আরে নীলা! তুমিও আসছো। আসো আসো। ভালো আছো তো?’
নীলা অন্তিকে দেখে তেমন একটা খুশি হয়নি। অবশ্য এটা বোধহয় মেয়েদের জাতিগত স্বভাব। যাকে তারা পছন্দ করে সেই পছন্দের মানুষ অন্য কাউকে পছন্দ করলে তাকে দেখে খুশি হওয়াটা তো যায়-ও না। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে,

–‘হ্যাঁ ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?’
অন্তি মাথা নাড়ায়। এরপর অবনীর ব্যাগটা নিয়ে পাশের রুমে যায়। নীলাও সে রুমেই থাকবে। নীলা রুমে ঢুকেই আশে পাশে তাকায়। বিরক্তি নিয়ে বলে,
–‘এ রুমে ব্যালকনি নেই, ভাবী? আসার সময় যে দেখলাম একটা রুমে ব্যালকনি আছে! ওটা কোনটা?’
অন্তি হাত বগলদাবা করে বলে,
–‘আমার রুম ওটা।’
নীলা শুধু ‘ওহ’ বলে। অবনী নীলাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে। নীলা ওয়াশরুমে ঢুকলে সে নিজেও অন্তির রুমে যায় ফ্রেশ হতে। অন্তি হেসে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–‘ননদকে কি ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে আনলি নাকি, আপু?’
অবনী অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। অন্তি তা দেখে আরও জোড়ে হাসে। অবনী কিছু না বলেই ফ্রেশ হয়ে আসে। তাইমুররা তাদের ফ্ল্যাটে আছে। তাইমুর অসুস্থ আর তহুরা বেগমরাও সেখানে বলে তারাও ওই ফ্ল্যাটেই যাবে। রেহেনা বেগম অবশ্য ওই ফ্ল্যাটেই আছে। অবনী আর নীলাকে নিয়ে অন্তিও তাইমুরের ফ্ল্যাটে যায়। তাইমুর তখন সোফায় বসে মায়ের জোড়াজুড়িতে জুস খাচ্ছে। নীলাকে অবনীর সাথে দেখে সে বেশ অবাক হয়। নীলা লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তহুরা বেগম অবনীর সাথে কথা বলার পর নীলাকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,

–‘ও কে?’
রেহেনা বেগম বলেন,
–‘ও নীলা। অবনীর ননদ। ওকে নিয়ে আসবি জানাসনি তো!’
–‘তোমাদের জামাইয়ের অফিস আছে তাই ওকে নিয়েই আসলাম।’
তহুরা বেগম নীলাকে কাছে ডাকেন। সোফায় বসতে বলে বলেন,
–‘অবনীর ননদ তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।’
নীলা মাথা নিচু করে হাসে। অন্তি মুখে হাত চেপে চাপা হাসে। বিড়বিড় করে বলে,
–‘বউমা হওয়ার জন্য তো ও রেডিই আছে। আপনিও রেডি হয়ে যান।’
তাইমুর বুঝতে পারে নীলার ব্যাপারটা। কপাল কুঁচকে সে নীলার দিকেই তাকিয়ে থাকে। তহুরা বেগম, রেহেনা বেগম গল্প করছেন আর হাসছেন। অন্তি টিভি দেখছে, নীলা তাইমুরকে দেখছে আর তাইমুর চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু দেখে অবনীর কপাল চাপড়াতে মন চায়। নিজেকে সামলে সে তাইমুরকে জিজ্ঞেস করে,

–‘তাইমুর ভাই, শরীর ঠিক আছে এখন?’
–‘হ্যাঁ, ঠিক আছে।
তারপর তহুরা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘আম্মু, আমি রুমে গেলাম। ভালো লাগছে না।’
তহুরা বেগম যেতে বলেন। তাইমুর গেলে পিছু পিছু অবনীও যায়। অবনীকে যেতে দেখে নীলাও উঠতে নেয়। অন্তি ডেকে বলে,
–‘কোথায় যাচ্ছো?’
–‘ভাবী!’
–‘ওরা ভাই-বোন কথা বলবে। তুমি বসো! তোমার ভাবী চলে আসবে।’

অনিচ্ছা সত্ত্বেও নীলা বসে পরে। তহুরা বেগম সবই দেখছেন। রেহেনা বেগম তাইমুরদের সবাইকে নিজেদের বাড়িতে খেতে বলে উঠে যান। তার রান্না করতে হবে। সাথে অন্তিকেও ডেকে যান। এ সুযোগে নীলাও তাইমুরের রুমে চলে যায়। তাইমুর আর অবনীর মধ্যে ততক্ষণে নীলাকে নিয়ে কথা হয়ে গেছে। নীলা জানে অন্তির ব্যাপারে তবুও সে জিদ নিয়ে বসে আছে শুনে তাইমুরের বেশ রাগ হয়। মুখে কিছু বলে না। নীলা তাইমুরের সামনে না থেকে তার রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখে ব্যালকনিতে যায়। এবং পাশের ব্যালকনি দেখে বুঝে যায় ওটা অন্তির রুমের ব্যালকনি। তার ভেতরটা জ্বলে ওঠে।

আনোয়ার সাহেব আর হায়দার সাহেব বসে আছে রুমে। বাহিরে রেহেনা বেগম আর অন্তি রান্না করছে। কথায় কথায় আনোয়ার সাহেব স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলেন,
–‘৫ বছর আগে তুই আমার কাছে আমার ছোট মেয়েকে চেয়েছিলি। তাইমুরকে পছন্দ ছিলো বলে তোকে মানাও করিনি। আমি যত্নে রেখেছি। এবার তুই ওকে নিয়ে গিয়ে আমাকে স্বস্তি দে, হায়দার। বড় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি আর হৃদান নিঃসন্দেহে তাকে ভালো রেখেছে। এবার ছোট মেয়েটাকে সুখী দেখলে আমি শান্তিতে ম’রতেও পারবো।’
হায়দার সাহেব একটু রেগে যান। রাগান্বিত গলাতেই বলেন,
–‘এতো আগেই এসব কি বলিস? এখনো তো নাতি-নাতনীকে নিয়ে খেলাধুলা-ই হলো না।’
আনোয়ার সাহেব হাসেন। ইদানীং তার শরীরটা বেশি ভালো যায় না। তার মন বলে তার হাতে বেশি সময় নেই। এই সময়টুকু ফুরোনোর আগেই মেয়েটাকে সুখী দেখে যেতে পারলে তিনি শান্তি পেতেন। হায়দার সাহেব আনোয়ার সাহেবকে অন্যমনষ্ক দেখে জিজ্ঞাসা করে,

–‘কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?’
–‘জানি না। কিছুদিন যাবত শরীরটা ভালো লাগছে না। আমার ছোট মেয়েটা আমার ঘরের দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে। এগুলো ভাবলেই কেমন নিজেকে ব্যর্থ লাগে।’
হায়দার সাহেব বন্ধুর কাঁধে হাত রাখেন। আনোয়ার সাহেব ভরসা পেয়ে হায়দার সাহেবের হাত দুটো ধরে বলে,
–‘তুই এবার আমার মেয়েটাকে নিয়ে যাবি তো, হায়দার? ওকে সুখে রাখবি তো?’
হায়দার সাহেব আশ্বাস দিলেন। ৫ বছর আগে ছেলের অবস্থা তিনিও দেখেছেন। তহুরা বেগমের থেকেই জানতে পেরেছিলেন তাইমুর অন্তিকে পছন্দ করে। এবং কোনো কারণে তাদের মাঝে দূরত্ব বেড়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তখনই বুঝেছিলেন তাদের ছেলের সুখ কোথায়! এবং তাই তো দেড়ি না করেই বন্ধুর কাছে অনুরোধ করে চেয়েছিলেন তার মেয়েকে। বন্ধু বোধহয় বুঝেছিলো। তাইমুরকে অপছন্দ করার কারণ ছিলো না বলে সেও হ্যাঁ করে দিয়েছিলো। ছেলের সুখকে সে সুখী রাখবে না তাই কখনো হয়? তাছাড়াও মেয়েটা তো তারই প্রাণপ্রিয় বন্ধুর মেয়ে। তাই হেসে ভরসা দিয়ে বলেন,

–‘তোর মেয়েকে আমি আমার ঘরে মেয়ে হিসেবে নিয়ে যাবো। তাইমুর ওকে ভালো রাখবে। দেখিস!’
আনোয়ার সাহেব মাথা নাড়ান। এ নিয়ে তার সন্দেহ নেই। দু’বন্ধু যখন নিজেদের মাঝে কথা বলাতে ব্যস্ত তখন দরজার বাহির থেকে সবটুকু শুনে নেয় অন্তি। তাইমুরের সাথে তার বিয়ের কথা শুনে সে থমকে গেছে। ৫ বছর আগেই সে তাইমুরের হয়ে গেছিলো। শুধু আইনত হওয়াটুকুই বাকি। এসেছিলো বাবাকে ডাকতে তবে এতো বড় সত্য জেনে তার নড়ার শক্তিটুকু হারিয়ে গেছে। রেহেনা বেগম রান্নাঘর থেকে ডাকছেন তাকে। এর মধ্যেই কলিং বেল বেজে ওঠে। রেহেনা বেগম চেচিয়ে বলে,

–‘তাইমুররা এসেছে হয়তো৷ দরজা খোল, অন্তি।’
অন্তি কোনোরকম নিজেকে সামলে সদর দরজা খুলে দেয়। সামনে সত্যিই তহুরা বেগম, তাইমুর, অবনী আর নীলা দাঁড়িয়ে আছে৷ তাইমুরকে দেখে অন্তির মাথায় আবার কথাগুলো ঘুরতে থাকে। উদাস নয়নে চেয়ে থাকে তাইমুরের মুখপানে। তাইমুরের অন্তিকে একটু অস্বাভাবিক লাগে। অন্তি দরজা থেকে সরে গিয়ে অবনীকে বলে,
–‘আম্মুকে একটু সাহায্য কর, আপু। আমি আসছি।’
অবনীকে কিছু না বলতে দিয়েই সে নিজের রুমে চলে যায়। তাইমুর তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,
–‘এর আবার কি হলো!’

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৯

অন্তি রুমে এসে দরজা লাগিয়ে বসে পরে। মাথায় হাত দিয়ে ভাবে এসব কি হচ্ছে! তাইমুর তো তাকে পছন্দ-ই করে না। আর যদি করতোই তাহলে গত ৫ বছর সে একবারও কেনো আসেনি? এত বছর পর এসেও এমন অপরিচিত ব্যবহারের মানে কি? যদি দুজনের মাঝে ভালোবাসা-ই না থাকে তবে বিয়ের মানে কি? তাদের যে বিয়ের কথা ঠিক হয়ে আছে আরও ৫ বছর আগে তা কি তাইমুর জানে? তার কি মত আছে এই বিয়েতে? মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ছাড়া-ই সে কিভাবে বিয়েতে ‘হ্যাঁ’ বলবে?

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ১১