মহাপ্রয়াণ পর্ব ১৯+২০

মহাপ্রয়াণ পর্ব ১৯+২০
নাফিসা তাবাসসুম খান

সদর দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হতেই দৌড়ে দরজা খুলতে এগিয়ে যায় লোল্যান্ডা। এই বুঝি ক্রিয়াস ক্যাথরিনকে নিয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু দরজা খুলতেই আশাহত হয় লোল্যান্ডা। সাথে ভয়ও জেকে ধরে তাকে। দরজার সামনে আর কেউ নয় আরোণ দাঁড়িয়ে আছে। লোল্যান্ডা কম্পিত কণ্ঠে বলে,
” স্বাগতম আলফা। ”
আরোণ ভ্রু কুচকে ক্লকের হুড মাথা থেকে ফেলে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে প্রশ্ন করে,
” কি ব্যাপার লোল্যান্ডা? বুখারেস্টে তো এখনও পুরোপুরি বরফে জমে যাওয়ার মতো শীত পড়ে নি। তাহলে তোমার গলার স্বর এতো কাপছে কেন? ”

” তেমন কিছু না আলফা। ঠান্ডা লেগেছে আমার হালকা। সেজন্যই। ”
আরোণ একবার চারিদিকে নজর বুলিয়ে নেয়। তারপর সিঁড়ির কাছে যেতে যেতে প্রশ্ন করে,
” ক্যাথরিন ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই? এতো রাতে তো ওর জেগে থাকার কথা না। ”
লোল্যান্ডা দৃষ্টি নিজের পায়ের দিকে স্থির রেখেই জবাব দেয়,
” ক্যাথরিন নিজের কক্ষে নেই। ”
ভ্রু কুচকে পিছনে ফিরে তাকায় আরোণ। ধীর পায়ে হেঁটে এগিয়ে আসে লোল্যান্ডার সামনে। ঠান্ডা স্বরে প্রশ্ন করে,
” নিজের কক্ষে নেই মানে? কোথায় ক্যাথরিন? ”
লোল্যান্ডা ভয়ে চুপ করে থাকে। আরোণ অধৈর্য হয়ে পড়ে। চিৎকার করে উঠে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কথা বলছো না কেন মেয়ে? ক্যাথরিন কোথায়? ক্রিয়াস কোথায়? ”
লোল্যান্ডা ভয়ে কাপতে কাপতে জবাব দেয়,
” সন্ধ্যায় চার্চে গিয়েছিলাম আমরা। আমরা সবাই ফিরে আসার জন্য যখন বের হই তখন ক্যাথরিন দৌড়ে চার্চের ভেতর প্রবেশ করে পবিত্র পানি নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যখন সে বেড়িয়ে আসে না তখন আমরা ভিতরে প্রবেশ করে ওকে অনেক খুঁজি। কিন্তু কোথাও তাকে পাই নি। আর চার্চের পেছনের দরজাও খোলা ছিলো। ”
আরোণ রাগে তৎক্ষণাৎ সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। লোল্যান্ডা ভয়ে কেদে ফেলে এবার। মেঝেতে বসে পড়ে। মনে তার অনেক ধরনের ভয় কাজ করছে। ক্যাথরিন কোথায় আছে? ঠিক আছে কিনা? ক্যাথরিনকে না পেলে ক্রিয়াস, কোদ্রিন এবং লোনাট কে আলফা কি করবে? এসব ভেবেই লোল্যান্ডার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।

মাঝরাত হওয়ায় রাস্তাঘাট সব খালি। চার্চের সামনেও তেমন কোনো মানুষ নেই বললেই চলে। ক্রিয়াস, কোদ্রিন, লোনাট আশেপাশে সব জায়গায় খুঁজে আবার চার্চের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কোথাও খুঁজে পায় নি ক্যাথরিনকে। ক্রিয়াস চিন্তায় বার বার কপালে হাত রাখছে। আবার খুঁজতে যাবে এমন সময়ই ঝড়ের গতিতে একজন এসে তার গলায় চেপে ধরে মাটি থেকে কিছুটা উপরে তুলে ফেলে তাকে। প্রথমে ক্রিয়াস প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও আরোণের চেহারা দেখে সে প্রতিরোধ করা বন্ধ করে দেয়। কোদ্রিন এবং লোনাটও আরোণকে দেখে ভয়ে চুপ হয়ে যায়। তারা দুজনেই কখনো নেকড়ের ভয়ংকর রূপ দেখে নি। কিন্তু ক্রিয়াসের মুখে বহুবার শুনেছে যে রাগান্বিত আরোণ পৃথিবী ভস্ম করার ক্ষমতা রাখে। আরোণ চোয়াল শক্ত করে বলে,

” বলেছিলাম না ক্যাথরিনের কিছু হলে জীবন নিয়ে নিবো? যদি সূর্যোদয়ের পূর্বে ক্যাথরিনকে সম্পূর্ণ ঠিক অবস্থায় আমার সামনে না পাই তাহলে আজকেই সবার জীবনের শেষ দিন হবে। ”
এটুকু বলে ক্রিয়াসকে কয়েক হাত দূরে ছুড়ে ফেলে আরোণ। ক্রিয়াস গলা ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে উঠে বসে। আরোণ আর কিছু না বলে বাতাসের গতিতে সেখান থেকে প্রস্থান করে। ক্রিয়াস উঠে দাঁড়িয়ে কোদ্রিন ও লোনাটকে বাসায় ফিরে যেতে বলে। কোদ্রিন ও লোনাট যেতে চায় না তবুও জোর করে তাদের বাসায় পাঠিয়ে আরোণ যেদিকে গিয়েছে সেই পথ অনুসরণ করে যায় ক্রিয়াস।

অর্ধেক বুখারেস্ট খুঁজে ফেলেছে। কোথাও পাচ্ছে না ক্যাথরিনকে। আপাতত একটি লঙ্গরখানার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আরোণ ও ক্রিয়াস। চারিদিক খুঁজে এখানেও ক্যাথরিনকে না পেয়ে প্রস্থানের জন্য পা বাড়ায় তারা।
তখনই হ্রেষাধ্বনি ভেসে আসে দূর থেকে। আরোণ এবং ক্রিয়াস দুজনেই পিছনে ফিরে তাকায়। লঙ্গরখানার বাহিরে জ্বলতে থাকা আগুনের মাশলের আলোয় এক ঘোড়ার ছায়া দেখে তারা। ঘোড়াটা আরেকটু কাছে আসতেই দেখতে পারে এটা ভ্যালেন্টাইন। তার পিঠে বসে আছে ক্যাথরিন। বারবার পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে কি যেন দেখছে। আবার ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই আরোণকে দেখতে পায় সে। ক্যাথরিন আরোণকে দেখেই লাগাম টেনে ঘোড়া থামায়। তাড়াহুড়ো করে নামতে নিয়ে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। তারপর দৌড়ে এসে আরোণকে জড়িয়ে ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় আরোণ থমকে যায়। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয় তার হৃদয়ে জ্বলতে থাকা আগুনের উপর এক পশলা বর্ষণ হলো বুঝি। তার বিচলিত চোখদ্বয় শীতল হয়ে আসে। দু হাত দিয়ে ক্যাথরিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তার কাধে মুখ গুজে ফিসফিসিয়ে আওড়ায়,

” ক্যাথ। ”
ক্যাথরিন আরোণকে ছেড়ে দিয়ে তাড়া দেখিয়ে বলে,
” এখন কোনো প্রশ্ন করো না। তাড়াতাড়ি এখান থেকে নিয়ে চলো আমাকে। ”
আরোণ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি ক্রিয়াসকে বলে,
” এখানে আর এক মুহূর্তও নয়। ”
ক্রিয়াস এতক্ষণ হতবুদ্ধি হয়ে থাকলেও আরোণের আদেশ শুনে সাথে সাথে স্তম্ভিত ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনকে সহ তারা প্রস্থান করে সেখান থেকে।

ক্যাথরিনের কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিয়াস এবং লোল্যান্ডা। ক্যাথরিন বিছানায় হাটু ভেঙে বসে পানি খাচ্ছে। তার পাশেই বিছানায় বসে আছে আরোণ। ক্যাথরিনের পানি খাওয়া শেষ হতেই তার হাত থেকে গ্লাস এগিয়ে এসে নিয়ে নেয় লোল্যান্ডা। আরোণ প্রশ্ন করে,
” এবার বলো কি হয়েছিলো? ”
ক্যাথরিন এক শ্বাসে বলা শুরু করে,

” আমি চার্চের ভিতর যাই ফাদারের থেকে পবিত্র পানি নিতে। পানি নিয়ে ফিরে আসার সময় আমার দৃষ্টি পিছনের দরজায় পড়ে। দরজার একপাশ খোলা ছিলো। আমি দেখি ভ্যালেন্টাইন ওদিক দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। আমি ভাবি হয়তো বাধন ছুটে গিয়েছিল তাই ওকে ধরার জন্য পিছনের দরজা দিয়ে ওর পিছনে ছুটি। ও সোজা জঙ্গলের ভিতরে দৌড়ে যাচ্ছিলো। অনেকদূর যাওয়ার পর ও যখন থামে আমি ওর কাছে গিয়ে ওকে নিয়ে ফিরে আসতে নিয়ে বুঝতে পারি যে আমি জঙ্গলের বেশ ভিতরে এসে পড়েছি এবং ফিরে আসার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। ততক্ষণে চারিদিকে আধার নেমে এসেছে। অনেকক্ষণ খুঁজেও আর রাস্তা বের করতে পাচ্ছিলাম না। তখনই দূর হতে এক মেয়ের চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে। আমি ভ্যালেন্টাইনকে দূরে এক গাছের সাথে বেধে রেখে ওই চিৎকার অনুসরণ করে সেদিকে যাই। ঝোপের আড়াল হতে দেখি একজন যুবক এক মেয়েকে ধর্ষন করে তার হাত পা বেধে ফেলে রেখেছে। আমি সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাবো তার আগেই ওই জানোয়ার ওই মেয়ের গলায় ছুড়ি চালায়। আমার সামনেই সেই মেয়েটা গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে করতে নিজের দম ছেড়ে দেয়। আমি ভয়ে সেখান থেকে ধীরে ধীরে পালানোর জন্য সড়ে আসতে নিতেই ভুল করে অসাবধানতার ফলে শুকনো পাতায় পা রাখি। মড়মড় শব্দ ওই যুবকের কানে পৌঁছায়। আমি তাড়াতাড়ি দৌড়ে ভ্যালেন্টাইনের কাছে এসে সেই জঙ্গল পেরিয়ে লোকালয়ে পৌঁছাই। কিন্তু সাহায্য চাওয়ার জন্য কাউকেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ”

এটুকু বলেই কেদে ফেলে ক্যাথরিন। নিজের চোখের সামনে খুন হতে দেখা কোনো সাধারণ বিষয় নয়। তাও এমন বর্বরোচিত ভাবে৷ আরোণ চোখের ইশারায় লোল্যান্ডা এবং ক্রিয়াসকে যেতে বলে। ইশারা পেতেই তারা কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আরোণ উঠে ক্যাথরিনের সামনে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে। তার দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। একহাতের বৃদ্ধাঙুল দিয়ে ক্যাথরিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
” আমার কাছে আছো তুমি এখন। এখানে কেউ তোমার ক্ষতি করতে সক্ষম না। এই স্মৃতি মুছে ফেলো মস্তিষ্ক থেকে। ”
ক্যাথরিন চোখ তুলে তাকায় আরোণের দিকে। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
” ওই মেয়েকে যে খুন করেছে? তাকে কিছু করবে না তুমি? ”
” তুমি ঠিক আছো। সুস্থ আছো। তোমার কোনো ক্ষতি করে নি ও। তাকে কি করবো আমি? ”
” একটা মেয়ের জীবন নিয়েছে সে। আজকে আমি সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছি। কালকে অন্য কেউ হয়তো না ও বাঁচতে পারে। ওই মেয়েগুলোর পরিবার আছে। তারা কি পুরো জীবন নিজেদের মেয়ের শোক পালন করে কাটিয়ে দিবে? ”
” আমার কোনো যায় আসে না। যতক্ষণ তুমি ঠিক আছো ততক্ষণ কে মরলো বা বাঁচলো দেখার প্রয়োজন মনে করি না আমি। ”

নিজের উপর রাগ হয় ক্যাথরিনের। কার থেকে সাহায্য আশা করছিলো সে। নেকড়ের মনে মানবতা খুঁজতে আসা এবং রাতের বেলা আকাশে সূর্য খুঁজে বেড়ানো একই সমতুল্য। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় আরোণের হাত থেকে। তারপর তার চোখে চোখ রেখে কঠিন স্বরে বলে,
” আজকে হয়তো তুমি সেই মৃত মেয়ের পরিবারের মনের অবস্থা বুঝতে পারছো না। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে এই ব্যাথার সাথে সাক্ষাৎ করায়। তোমার সবথেকে প্রিয়জনকে তিনি ছিনিয়ে নেক তোমার থেকে। তখন একমাত্র তুমি বুঝবে কাউকে হারালে তার পরিবার কতটা কষ্ট পায়। ”
আরোণের মুখের রঙ ফিকে হয়ে যায়। ক্যাথরিন চাদর টেনে অপর পাশে ফিরে শুয়ে পড়ে। আরোণ মনে মনে বলে,
” তোমার ঈশ্বরও আমার থেকে আমার প্রিয়জন ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে না। কারণ সেই প্রিয়জন তুমি। তোমাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সবকিছু বাজি রাখতে রাজি আছি আমি। ”

পূর্ব দিক হয়ে সূর্য উঠেছে অনেকক্ষণ আগেই। বসন্তের সকাল হলেও এখনও মৃদু শীতল হাওয়া বইছে। বিশ মিনিট ধরে আনাস্তাসিয়া অপেক্ষা করছে ছাউনিতলে ওরিয়নের জন্য। রাতে তো লিয়ামকে দিয়ে চিরকুট পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলো সে। লিখেছিলো যেন ভোরের আলো ফুটতেই তার সাথে এই চেরি বাগানের ছাউনির নিচে এসে দেখা করে। ওরিয়ন কি সেই চিরকুট পায় নি? নাকি খুলে দেখে নি? আনাস্তাসিয়ার ভাবনার মাঝেই কারো দৌড়ে আসার শব্দ হয়। পায়চারি থামিয়ে সামনে তাকায় আনাস্তাসিয়া। ওরিয়ন আসছে। ওরিয়ন এসেই প্রথমে বলে,
” দুঃখিত অ্যানা। ঘর থেকে বেরোনোর সময় দাদিমা ডেকে ছিলো। উনার হাঁটুর ব্যাথাটা বেড়েছে। সেটার জন্যই তেল মালিশ করতে গিয়ে দেরি হয়ে গিয়েছে। ”

ওরিয়নের হঠাৎ অ্যানা বলে ডাকায় প্রথমে অবাক হয় আনাস্তাসিয়া। তার পরিবারের সদস্যরা কেবল তাকে এই নামে ডাকে। ওরিয়ন এই নামে ডেকে কি এটাই বুঝাতে চাচ্ছে যে খুব শীঘ্রই সে ও আনাস্তাসিয়ার পরিবারের অংশ হতে চলেছে? মনের প্রশ্ন মনে চেপে আনাস্তাসিয়া বলে,
” সমস্যা নেই। ”
ওরিয়ন আনাস্তাসিয়াকে বলে,
” বসে কথা বলবে? ”
আনাস্তাসিয়া হালকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ছাউনিতলে বেতের তৈরি আসনে বসে পড়ে। ওরিয়নও তার সামনে বসে। এবার ওরিয়ন নিজ থেকেই প্রশ্ন করে,

” কি নিয়ে কথা বলবে বলেছিলে? ”
” বিয়ে নিয়ে। ”
এবার ওরিয়ন সোজা হয়ে বসে। মনযোগ দেয় আনাস্তাসিয়ার দিকে সম্পূর্ণ। আনাস্তাসিয়া বলে,
” তোমাদের বাসা থেকে বিয়ের জন্য সম্মন্ধ পাঠানো হয়েছে আমার জন্য গ্র্যানির কাছে। কেন তা জানতে পারি? ”
আনাস্তাসিয়ার সোজাসাপ্টা প্রশ্ন৷ ওরিয়ন বিনা সময় ব্যয়ে জবাব দেয়,
” বিয়ের প্রস্তাব নিশ্চিত বিয়ে করার জন্যই দেয়া হয়। তাইনা অ্যানা? ”
” কিন্তু আমাদের মাঝে কি এমন কোনো সম্পর্ক আছে যেটার ভিত্তিতে তুমি তোমার পরিবারকে দিয়ে আমার অনুমতি ব্যাতিত আমার বাসায় সম্মন্ধ পাঠিয়েছো? ”
ওরিয়ন অকপটে জবাব দেয়,

” আমাদের নিয়ে কি কানাঘুষা চলছিলো তা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়। তাই বিয়ে হয়ে গেলেই আর কেউ আমাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। ”
আনাস্তাসিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
” এটা সমাধান নয় ওরিয়ন। এর ফলে সবার সন্দেহকে সত্য প্রমাণ করা হবে। সবাই ভাববে সবার মুখ বন্ধ করার জন্য আমরা কোনো অবৈধ সম্পর্ককে বৈধ করছি। ”
” তুমি শুধু এই কারণেই বিয়েতে অমত করছো? ”
আনাস্তাসিয়া স্পষ্ট গলায় জবাব দেয়,
” না। আরেকটাও কারণ আছে। আমি তোমাকে বন্ধুর দৃষ্টিতে দেখি। তাই তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। ”

ওরিয়ন আনাস্তাসিয়ার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,
” কাকে মন দিয়ে বসেছো অ্যানা? ”
আনাস্তাসিয়া চকিতে তাকায়। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে একজোড়া সবুজ পল্লব। এই প্রশ্ন শুনে তার সামনে রিকার্ডোর চোখ কেন ভেসে উঠলো? রিকার্ডোকে মন দিয়ে বসেছে সে? নাকি কেবল রিকার্ডোর দৃষ্টির মোহ জালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছে? নিজেকে সামলে আনাস্তাসিয়া আমতা আমতা করে জবাব দেয়,
” আমার মন কেনো কাউকে দিতে যাবো? আমার কাছেই আছে। ”
ওরিয়ন হালকা হেসে বলে,

” আমরা আমাদের মন কখনো নিজে কাউকে দেই না অ্যানা। কেউ ধীরে ধীরে আমাদের মনে জায়গা করে নেয়। তারপর সমস্ত মন জুড়ে সে বিচরণ করে। মালিকানা হয়ে যায়। আর তুমি এই মাত্র আমায় মিথ্যে বলেছো। আমার প্রশ্ন শুনে তুমি যার ভাবনায় মশগুল ছিলে সে তোমার মনের মালিকানা হয়ে আছে। যার নাম লুকাতে তুমি আমতা স্বরে জবাব দিয়েছো সে তোমার মস্তিষ্ক এবং হৃদয় গ্রাস করেছে। ”
আনাস্তাসিয়া এক ধ্যানে ওরিয়নের কথা শুনে। সে মনে মনে ভাবে রিকার্ডো তার মন এবং মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করছে তবে? ঠিকই হয়তো বলেছে ওরিয়ন। নাহয় যে এখানে নেই তার অস্তিত্ব কেন সে অনুভব করবে নিজের ভাবনায়? আনাস্তাসিয়ার ভাবনার মাঝেই ওরিয়ন উঠে যায়। যাওয়ার আগে বলে,

” আমি এখন বাসায় ফিরেই কিছু কাজে কাস্টোরিয়ার বাহিরে যাবো। ফিরতে কাল সকাল হবে। এসে সকলকে জানিয়ে দিবো যে আমার এই বিয়েতে অমত রয়েছে। তুমি নিশ্চিন্তে ফিরে যাও বাসায়। ”
এটুকু বলে আনাস্তাসিয়ার মাথায় আলতো করে হাত রেখে সেখান থেকে প্রস্থান করে ওরিয়ন। আনাস্তাসিয়া স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক! এই চিন্তা দূর হলো মাথা থেকে। ওরিয়ন মানা করে দিলে আর কেউ এই কথা আগে বাড়াবে না।

কক্ষে প্রবেশ করতেই নাকে মদের উটকো গন্ধ এসে লাগে সিসিলিয়ার। কিন্তু এতে তার কোনো ভাবান্তর হয় না। এ যেন তার জন্য নতুন কিছু নয়। তার পিছনেই দু জন দাসি কক্ষে প্রবেশ করে। সিসিলিয়া হাতের ইশারায় হুকুম দিতেই তারা গিয়ে বিশাল পর্দা দু পাশে টেনে সড়িয়ে দেয়। কক্ষের জানালা ভেদ করে প্রবেশ করে এক ফালি আলো। কক্ষের মাঝে অবস্থিত বিছানার উপর উবুড় হয়ে শুয়ে থাকা ড্রাগোসের ঘুমে যেন ব্যাঘাত ঘটলো এতে। সিসিলিয়া আরেকবার চোখের ইশারা করতেই দাসি দু’জন প্রস্থান করে কক্ষ থেকে। সিসিলিয়া এগিয়ে এসে বিছানায় ছেলের পাশে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
” প্রিন্স! বাবা আমার। আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন তোমার জন্য। উঠে পড় জলদি। ”
ড্রাগোস ঘুমের মাঝে বলে উঠে,

” কাউন্ট লোনেল আজ এতো আয়োজন করে আমায় রাজসভায় ডেকেছে। ব্যাপার কি? ”
” তোমার পিতা তিনি। আমার বিশ্বাস ভালো কোনো উদ্দেশ্যেই তিনি সকলকে একসাথে ডেকেছেন। তাড়াতাড়ি উঠে তৈরি হয়ে নাও। ”
ড্রাগোস উঠে বসতে বসতে বলে,
” তুমি যাও আমি আসছি। ”
সিসিলিয়া ছেলের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। ড্রাগোস বিছানা ছেড়ে নেমে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ তার চোখ পরে পাশে মেঝেতে পড়ে থাকা নিজের কাপড়ের দিকে। ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। রেগে সে হুংকার দিয়ে দাসীকে ডাকে। দাসী কক্ষে প্রবেশ করতেই তাকে বলে,
” এই কাপড় নিয়ে চুপচাপ পুড়িয়ে ফেলবে। যদি কেউ ভুলেও এই সম্পর্কে জানে তাহলে তোমার লাশও কেউ খুঁজে পাবে না। ”
দাসী উপর নিচে মাথা নেড়ে তাড়াতাড়ি লুকিয়ে সেই কাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

রাজসভায় সকলেই উপস্থিত আছে। কাউন্ট লোনেল এবং তারপাশে কাউন্টেস সিসিলিয়া দুজনেই নিজেদের সিংহাসনে বসে আছেন। সকলের অপেক্ষা প্রিন্স ড্রাগোসের জন্য। অপেক্ষা শেষ হয়। রাজসভায় প্রবেশ করে প্রিন্স ড্রাগোস। রাজসভায় উপস্থিত উচ্চপদস্থ সকলেই এক হাটু গেড়ে বসে প্রিন্সকে স্বাগত জানায়। ড্রাগস এসে লোনেল এবং সিসিলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই লোনেল বলে উঠে,
” স্বাগতম তোমায় প্রিন্স ড্রাগোস। ”
তারপর সকলের উদ্দেশ্যে লোনেল বলে,

” আমি এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেজন্যই আজকে সকলকে একত্রে ডেকেছি। আমাদের রোমানিয়ান সাম্রাজ্যের পরিধি আরো বাড়ানোর জন্য আমি গ্রীককে নির্বাচন করেছি। গ্রীককের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সেই যুদ্ধে জয়লাভ করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। কারো কোনো আপত্তি আছে? ”
রাজ নেতা আন্ঘেল বলে,
” কাউন্ট আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গ্রীক সম্রাট হার্মসকে শিক্ষা দেওয়ার মোক্ষম সময়। কিন্তু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে তো বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। ”
লোনেল হেসে বলে,
” সময় লাগবে না। প্রস্তুতি সব নেওয়া শেষ। আমি প্রধান সেনাপতি স্টেফেনকে বলে রেখেছিলাম আগেই। এখন প্রশ্ন হলো এই যুদ্ধের নেতৃত্ব কে দিবে তা নিয়ে। ”
আন্ঘেল বলে,

” কাউন্ট স্টেফেন যেহেতু সব প্রস্তুতি নিয়েছে আমার মনে হয় তাকে পাঠানোই ভালো হবে। ”
লোনেল বলে,
” স্টেফেন অবশ্যই যাবে। কিন্তু নেতৃত্ব দিবে প্রিন্স ড্রাগোস। তোমার কোনো আপত্তি আছে প্রিন্স? ”
আচমকা এতো বড় দায়িত্ব পেয়ে ড্রাগোস ভড়কে যায়। অবিশ্বাস্য সুরে বলে,
” আমার কোনো আপত্তি নেই কাউন্ট। ”
লোনেল বলে,
” বেশ তবে। যাও গিয়ে তুমি প্রস্তুতি নাও বিজয়ের। আর হ্যাঁ! এই রাজসভা থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে তুমি নিজের সকল রাজ সুবিধা এখানে ফেলে যাবে। যুদ্ধের ময়দানে সকলেই যোদ্ধা। তাই তুমি যোদ্ধা হিসেবে যাবে এবং যোদ্ধার মতোই ফিরে আসবে। ”

সিসিলিয়া, ড্রাগোস সহ উপস্থিত সকলেই বেশ অবাক হয়ে কাউন্ট লোনালের কথা শুনে যাচ্ছে। ড্রাগোসকে ইতিপূর্বে কখনো কোনো সাম্রাজ্যের দায়িত্ব পালনে দেখা যায় নি। হঠাৎ এতো বড় দায়িত্ব দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে তাকে? সকলের মনে একই প্রশ্ন। ড্রাগোস হাটু গেড়ে রাজসভায় সকলের মাঝে বসে নিজের মাথায় পরিহিত হীরা খচিত মুকুট খুলে লোনেলের পায়ের সামনে রাখে। তারপর বুকে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করে বলে,
” আমি বিজয়ী হয়েই ফিরে আসবো কাউন্ট। ”

সকাল থেকে দু তিনবার ক্যাথরিন আরোণের সামনে পড়েছে। প্রত্যেকবারই ক্যাথরিন মুখ ফিরিয়ে তাকে এড়িয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছে। আরোণ মনে মনে ভাবে সে নিজে হিংস্র কিন্তু ক্যাথরিন তো মানবী। তার মাঝে মানবতা আছে। কালকের রাতের ওইসব কথায় নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে। কালকে এখান থেকে বাসকোভ প্রাসাদে আবার ফিরে যাবে তারা। তারমানে আজকেই এখানে শেষ দিন। দুপুরে লোল্যান্ডার মুখে সে শুনেছিলো আজকে সন্ধ্যায় নাকি সমগ্র বুখারেস্ট শহরের সকলে উৎসবে মেতে উঠবে। প্রিন্স ড্রাগস যুদ্ধে যাবেন এই খুশিতে। সিদ্ধান্ত নেয় সন্ধ্যার পর ওদের নিয়ে বেরোবে। এই বাহানায় ক্যাথরিন কালকের ঘটনাও হয়তো ভুলে যাবে। যেমন সিদ্ধান্ত তেমনই কাজ। লোল্যান্ডাকে জানিয়ে দেয় সন্ধ্যায় ক্যাথরিনকে সহ তৈরি হয়ে থাকতে তারা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত উৎসবে যাবে।

ক্যাথরিন ও লোল্যান্ডা সামনে একসাথে হাঁটছে। তার পিছনেই আরোণ এবং ক্রিয়াস হাঁটছে। সামনে মানুষের সমাগম বেশি হওয়ায় আরোণ এগিয়ে ক্যাথরিনের পাশে এসে দাঁড়ায়। এক হাত দিয়ে ক্যাথরিনকে আড়াল করে দাঁড়ায় যেন ভীড়ে কারো ছোঁয়া না লাগে। ক্যাথরিন এসব দেখে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,
” আদিখ্যেতা। ”

শহরের প্রাণ কেন্দ্রে জমজমাট আয়োজন। অনেকটা মেলার মতো। খাবার, অলংকার সহ আরো অনেক কিছুর দোকান বসেছে চারিদিকে। তার মধ্যিখানে অনেকেই থিয়েটার নাচ করছে। ক্যাথরিন বেশ উৎসাহ নিয়ে দেখছে এসব। ক্রিসমাসের সময় থাসোস দ্বীপেও এরকম আয়োজন হতো। ক্যাথরিন, আনাস্তাসিয়া এবং লিয়াম মিলে একসাথে সেখানে ঘুরতে বেশ পছন্দ করতো। কিন্তু এরকম থিয়েটার ডান্স আগে দেখা হয় নি তার। লোল্যান্ডা নিজের ক্লক খুলে ক্যাথরিনকেও বলে ক্লক খুলে দিতে। ক্যাথরিন ক্লক খুলে দিতেই লোল্যান্ডা নিজেদের ক্লক কোদ্রিনের হাতে দিয়ে ক্যাথরিনকে সহ টেনে নিয়ে যায় নাচার জন্য। প্রথমে কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও কিছুক্ষণের মাঝেই বাকিদের দেখাদেখি তারাও বাদ্যের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে। আরোণ দূর থেকে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখতে থাকে। তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। অবশেষে ক্যাথ হেসেছে। তার পাশেই দাঁড়ানো ক্রিয়াস লোল্যান্ডার নাচ দেখে বলে,

” সব বিষয়েই এই মেয়ের লজ্জা কম। নিজে গিয়েছে আবার সাথে ক্যাথরিনকেও টেনে নিয়ে নাচাচ্ছে। ”
তখনই থিয়েটারের একজন বলে উঠে এখন যুগল নাচ হবে। যারা যারা নাচতে চায় তারা যেন একজন সঙ্গী নিয়ে এখানে উপস্থিত থাকে আর বাকিরা যেন সড়ে দাঁড়ায়। এটা শুনে ক্যাথরিন চলে যাচ্ছিলো। লোল্যান্ডা তার হাত ধরে টেনে বলে,
” অপেক্ষা করো এখানে। আমি এখনই আসছি। ”
এই বলে লোল্যান্ডা দৌঁড়ে আরোণ এবং ক্রিয়াসের কাছে আসে। আরোণকে কিছুটা আকুতির সুরে বলে,
” আলফা আপনি না গেলে ক্যাথ এক কোণায় একা দাঁড়িয়ে থাকবে। আপনি চলুন না। ”
ক্রিয়াস পাশ থেকে ধমকের স্বরে বলে,
” এই মেয়ে! কাকে কি বলছো? আলফাকে হুকুম দেওয়ার তুমি কে? ”
লোল্যান্ডা বিরক্তি মিশ্রিত স্বরে ক্রিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলে,

” প্রথম কথা হচ্ছে আমি আলফার সাথে কথা বলছি তোমার সাথে নয় আর দ্বিতীয় কথা হলো যে আমি হুকুম না অনুরোধ করছি। ”
আরোণ হালকা গলা খাকড়ি দিয়ে বলে,
” আমি আসছি। ”
এই বলে সে ক্যাথরিনের দিকে এগিয়ে যায়। লোল্যান্ডা সেদিকে তাকিয়ে সব দাত বের করে হেসে দেয়। ক্রিয়াস ভ্রু কুচকে বলে,
” তুমি দাত বের করে হাসছো কেন? ”
” কারণ এখন আমিও নাচতে যাবো? ”

ক্রিয়াস ব্যঙ্গ করে পাশের এক বয়স্ক লোককে দেখিয়ে বলে,
” কার সাথে? সেই বয়স্ক দাদুর সাথে? ”
লোল্যান্ডা ক্রিয়াসের হাত ধরে টেনে নিতে নিতে বলে,
” না। ক্রিয়াস নামক বয়স্ক দাদুর সাথে। ”
ততক্ষণে তারা সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছে নাচের আসরে। ক্রিয়াস রাগ দেখিয়ে বলে,
” বয়স্ক বলছো আবার হুটহাট অসভ্যের মতো ঠোঁটে চুমুও খাও? ”
লোল্যান্ডা হেসে বলে,
” অসভ্য যেহেতু বলছো আবার খেয়ে দেখাবো? ”

ক্রিয়াস চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই লোল্যান্ডা হেসে নাচে মনযোগ দেয়। ক্যাথরিন প্রথমে আরোণকে দেখে রাগে চলে যেতে নিলেও ততক্ষণে বাদ্য বাজানো শুরু হয়ে যায়। তাই সেও সকলের মতো তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে। প্রথমে কিছুক্ষণ রেগে থাকলেও কিছুক্ষণের মাঝেই বাদ্যের তালে সব ভুলে বসে সে। সকলেই একসাথে খুব আনন্দ করে যুগল নাচে মগ্ন হয়ে পড়ে। নাচ শেষ হতেই করতালি বেজে উঠে চারিপাশ থেকে। ক্যাথরিন দৌড়ে এসে লোল্যান্ডার কাছে দাঁড়ায়। ক্লক পড়ে নিতে নিতে প্রশ্ন করে,
” আজকে কি উপলক্ষে এখানে সবাই উৎসব করছে? ”
লোল্যান্ডা বেখেয়ালি হয়ে হেসে বলে ফেলে,

” কাউন্ট লোনেল গ্রীকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আর সেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন প্রিন্স ড্রাগোস। সেই উপলক্ষেই সকলে এই আয়োজনে মেতে উঠেছেন। ”
ক্যাথরিন বাকহারা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার দেশ, তার রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ! আর সে কি না এতক্ষণ এই উপলক্ষে এদের সাথে উদযাপন করেছে? যুদ্ধ হলে তার পরিবার? আনাস্তাসিয়া, লিয়াম, গ্র্যানি তারা সকলে ওখানে। তাদের কে রক্ষা করবে? রাগে, দুঃখে সে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। আরোণ ক্যাথরিনকে অন্য দিকে যেতে দেখে তার পিছু আসে। ক্যাথরিন এক নির্জন গলিতে প্রবেশ করে। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা এক পাথরে লাথি মেরে রাগ কমানোর চেষ্টা করে। রাগ না কমে উল্টো চোখের পানি হয়ে বেরিয়ে আসে। আরোণ পিছনে এসে ক্যাথরিনের কাধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকে,

” ক্যাথ! ”
ক্যাথরিন আচমকা পিছনে ফিরে আরোণের বুকে দু হাত দিয়ে ধাক্কা মারে। যদিও এতে আরোণকে এক বিন্দু সরাতে পারে নি সে। কিন্তু আরোণ অনেক অবাক হয়। আরো দুই কদম এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে,
” কি হয়েছে ক্যাথ? কাদছো কেন? খারাপ কিছু হয়েছে? ”
ক্যাথরিন চেচিয়ে বলে উঠে,

মহাপ্রয়াণ পর্ব ১৭+১৮

” যার জীবনে তোমার ছায়া আছে তার সাথে আর কি খারাপ হওয়া বাকি থাকে? অভিশাপ তুমি আমার জীবনের। ঘৃণা করি তোমাকে। আর প্রতিদিন এই ঘৃণা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ”
আহত হয় আরোণ। ক্যাথরিন তাকে ঘৃণা করে এটা সে আজ নতুন জানলো না। কিন্তু ক্যাথরিনের মুখ থেকে এটা শুনে মনে হচ্ছে নীল বিষের দানা তারা শিরা উপশিরা হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। যন্ত্রণা হচ্ছে খুব।

মহাপ্রয়াণ পর্ব ২১+২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here