মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২৯

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২৯
নওরিন কবির তিশা

প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি—সুইজারল্যান্ড।। অনেকের কল্পনায় মোড়ানো এক স্বর্গভূমি, যার সৌন্দর্য যেন চোখে দেখা কোনো কল্পকাহিনি।আর সেই স্বর্গভূমিরই এক অভূতপূর্ব কোণ,ব্রেঞ্জ।এক নিঃশব্দ, নিভৃত, পাহাড়-জল-আকাশে মাখানো এক ছোট্ট গ্রাম।

ব্রেঞ্জার রথোন পাহাড়ের বিপরীত পাশে ‌পাহাড়ি রঙিন ফুলে শোভিত আধুনিক দুইতলা এক কটেজ,ভেতরটা—কাচ ও কাঠের মিশেলে তৈরি ইনটেরিয়র, দেয়ালে ঝুলছে মিনিমাল আর্ট, আর ফায়ারপ্লেসের পাশে পড়ে আছে ইংরেজি ক্লাসিক উপন্যাসের সারি।কটেজের উপর তলার উত্তর-পূর্ব কোণের রুম, যেখান থেকে একদিকে দেখা যায় ব্রেঞ্জ হ্রদের তীরে আঁকা নীল রেখা,আর অন্যদিকে দূরের রথোন পাহাড়ের তুষারশুভ্র চূড়া।সেই রুমের একটা ‌কিং সাইজ বক্সস্প্রিং বিছানায় নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে শিশির।এক সপ্তাহ হসপিটালাইজড থাকার পর গতকাল রাতেই এই কটেজে এসে উঠেছে তারা।সকালের হালকা আলো জানালার কাচ ছুঁয়ে মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভাঙে তার। শিশির একবার চোখ পিটপিট করে বাইরের দিকে তাকালো যেখানে তুলোর মতো মেঘের নিচে রথোন পাহাড়ের মাথায় ঝলমল করছে সোনালি রোদ। দূর থেকে ভেসে আসছে ব্রেঞ্জার হ্রদের তরঙ্গরাশির স্নিগ্ধ গর্জন। এমন স্নিগ্ধ একটা সকাল দেখে হঠাৎই মনটা ভালো হয়ে গেল তার।ঠোঁটের কোণে এক টুকরো শান্ত হাসি খেলে গেল।সে ধীরে উঠে বসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফ্রেশ হয়ে শিশির রুম থেকে বাইরে আসে।ধীরে ধীরে পা বাড়ায় সিঁড়ির দিকে।সিঁড়িটা অদ্ভুত সুন্দর,কাঠের সিঁড়ি‌ তবে সোজা নয় সর্পিলাকৃতি, ঠিক যেন বাঁকানো কোনো এক ঝরনাধারা।সিঁড়ির পাশের রেলিংটাও বাঁকানো।যেন সময়ের ক্যানভাসে আঁকা এক কল্পিত জল ছবি।

শিশির ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে। সদ্য শাওয়ার নেওয়ার কারণে চুলগুলো এখনো ভেজা।
নিচে নামতেই চোখে পড়ে কটেজের লিভিং স্পেস—একটা খোলা, প্রশস্ত এলাকা।প্যানোরামিক কাঁচের জানালার ওপার থেকেই রথোন পাহাড় আর ব্রেঞ্চ লেক আলোর খেলায় চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। মাঝখানে একটা সাদা-ধূসর মডার্ন কাউচ, যার ‌সামনে কাঁচের কফি টেবিল।দেয়ালে ঝুলছে এক আধুনিক বিমূর্ত শিল্পকর্ম, আর ঘরের এক পাশে রাখা একটা electric fireplace—যার আলো এখনও ক্ষীণভাবে জ্বলছে।এমন নিস্তব্ধতায় হঠাৎই তার কানে আসে— কাচে কিছু রাখার শব্দ, পানির গর্জন, আর ইলেকট্রিক কেটলের ফোঁস ফোঁস।শব্দগুলো ভেসে আসছে বামপাশের কিচেন থেকে।শিশির একটু চমকে উঠে।ধীরে ধীরে পা বাড়ায় কিচেনের দিকে।

ওপেন কনসেপ্ট আইল্যান্ড কিচেনটা মিউট কালারের ঘেরা।সাদা মার্বেল কাউন্টার, দেয়ালের সঙ্গে সেট করা স্টিল ফিনিশড ওভেন আর স্লিম ফ্রিজ। একপাশে হাই বার টেবিল আর দুইটা স্টুল।আর সেই আইল্যান্ড কিচেন কাউন্টার-এর ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে নাহিয়ান।
সাদা শার্টের হাতা গুটানো,সামনের সামান্য লম্বা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের উপর পড়েছে।চোখে নিঃশব্দ মনোযোগ,হাতে ছুরি—সবজি কাটছে দক্ষ হাতে।পাশেই ধোঁয়া উঠছে কফির মেশিন থেকে। নাহিয়ান কে কিচেনে দেখে শিশির হচকিত হয়ে যায়। অবাকের চুড়ায় পৌঁছে সে বলে,,
—”আপনি?কিচেনে?”

শিশিরের কন্ঠ শুনে নাহিয়ান ঘুরে তার দিকে তাকায়। ভেজা চুলগুলো কিছুটা শুকিয়ে উঠেছে। কোমর ছাড়ানো সোনালী চুল গুলো থেকে যেন সোনালী আভা উপচে পড়ছে। তাকে দেখে নাহিয়ান মুচকি হেসে বলে,,
—”Good morning miss smile. এত সকালে ঘুম থেকে উঠে গেলে?”
শিশির তার কথায় কোন হেলদোল না দেখিয়ে বরং পুনরায় প্রশ্ন করে বলে,,
—”হ্যাঁ ঘুম ভেঙে গেল। কিন্তু তার আগে আপনি বলুন আপনি কিচেনে কি করছেন?”
নাহিয়ান তার কথায় মুচকি হেসে বলে,,

—”দেখছো না রান্না করছি। আর হ্যাঁ তোমার জন্য কিন্তু শুধু Chicken & Vegetable Clear Soup,Grilled Salmon with Steamed Veggies,‌Fruit & Nut Salad, avocado toast with boiled egg, আর সেই সাথে Warm Lemon Honey Water…”
তাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে শিশির বলল,,
—”কি করেছেন টা কি আপনি?”
—”কেন? কম হয়ে গেছে আরও কিছু করা লাগবে? তোমার জন্য ভারী খাবারগুলো রাখেনি আসলে ডক্টর বারণ করেছে তো এই জন্য। বাট ডোন্ট ওয়ারী তুমি সুস্থ হও তারপর আমি নিজ হাতে তোমাকে সব কিছু বানিয়ে খাওয়াবো।”

—”আপনার কি আমাকে দেখে রাক্ষস মনে হয়? এত কিছু করতে কে বলেছে আপনাকে?”
—”এত কিছু কই? মাত্র তো এই কয়টা আইটেম। আসলে আজ আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছিল।ব্যাপার না তুমি ডাইনিং এ গিয়ে বসো আমি এক্ষুনি খাবার সার্ভ করছি। নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধা লেগেছে?”
—”কিন্তু…”
—”আর কোন কথা না, যা বলছি তাই করো।”

শিশির আর কিছু না বলে ধীরে পা বাড়ায় ডাইনিং টেবিলের দিকে।খোলা জানালা দিয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় চুলগুলো নড়ে উঠছে হালকা করে।সে গিয়ে ‌টেবিলের এক কোণে চুপচাপ বসে পড়ল ।কিছুক্ষণ পর খাবারের ট্রেই হাতে নিয়ে আসলো নাহিয়ান। সে শিশিরকে দেখে বলল,,
—”ফাস্ট কোনটা ট্রাই করতে চাও?আচ্ছা থাক, আমি বলি… তুমি বরং Chicken & Vegetable Clear Soup ট্রাই করো।”
তারপর হঠাৎ থেমে চোখ সরিয়ে শিশিরের হাতের দিকে তাকায় সে ।তার চোখে চিন্তার রেখা স্পষ্ট হয়।সে নরম কন্ঠে বলল,,

— “আচ্ছা দাঁড়াও… আমি খাইয়ে দিচ্ছি।তোমার হাতের যে অবস্থা আই থিঙ্ক নিজ হাতে খেতে পারবে না।”
শিশির কিছু বলে না। আসলেও তার ডান হাতটা ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। ব্যথায় নড়াচড়াও ঠিকমতো করতে পারছে না সে।এই হাতে কিছু তোলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সে কথা না বলে চুপ করে বসে থাকেন। নাহিয়ান স্যুপ বোল থেকে ধীরে এক চামচ তুলে নিল।

একটু ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে, তারপর সেটা শিশিরের মুখের কাছে ধরল। শিশিরএকটু সংকোচে চোখ নামিয়ে চামচটা গ্রহণ করল। ‌মুহূর্তটুকু এক অদ্ভুত নিঃশব্দতায় মোড়া, যেন ঘরের প্রতিটা বাতাস তাদের সেই স্নিগ্ধতম মুহূর্তের দিকে চেয়ে আছে।যখন স্যুপ বোলের প্রায় অর্ধেক শেষ হয়ে যায়, শিশির ধীরে মাথা নাড়ল। যার অর্থ সে আর খাবে না।নাহিয়ান সেটা বুঝে মুচকি হেসে নিজেই অবশিষ্ট স্যুপ টুকু খেল। নাহিয়ানের এমন কান্ডে শিশির চোখ বড় করে তার দিকে তাকায়।সে অবাক হয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নাহিয়ান চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলল,,
—”তোমার এখন সকালের মেডিসিন আছে না?তুমি রুমে যাও আমি এগুলো কিচেনে রেখে আসছি।”
কথাটা বলেই নাহিয়ান সোজা কিচেনের দিকে চলে গেল। শিশির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।আজ সকাল থেকেই তার প্রত্যেকটা কর্মকাণ্ড শিশিরকে বিস্ময়ের চূড়ায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। শিশির ঠিক বুঝতে পারছে না এটাই কি সেই গম্ভীর নাহিয়ান? যাকে সে গোমড়া মুখো নাম দিয়েছিল?

ক্লাস শেষে কলেজ ক্যাম্পাসের মাঠে বসে গল্প করছিল ফারিন, নেহা, আরা, আর ইমন। তখনই নেহা হাসতে হাসতে বলল,,
—”আজকে আমাদের ফারুর মনটা শান্ত হলো রে। আজ কতদিন বাদে নিজের নির্ঝর স্যারকে দেখেছে বলে কথা!”
পাশ থেকে ইমন বললো,,
—”হ্যাঁ হ্যাঁ বিগত কয়েকদিন‌ তো ওর কষ্টের কোনো শেষ ছিল না। বেচারী সারাক্ষণ মন খারাপ করে থাকতো।
আরা:”সেটা ঠিক। বেচারি বহুৎ কষ্ট ছিল আমি তো একদিন ওকে ওই ‘kaun tujhe tujhe Yun pyar karega’ গানটা শুনতেও দেখেছি।”
ফারিন এবার রেগে গিয়ে বলল,,

—”কই আমি তো ওই যে একটা গান আছে না ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ ঐ গানটা শুনতে ছিলাম জানিস না?
আরা: “ও শুনতে ছিলি বুঝি?হয়তো খেয়াল করিনি। আসলে এত স্যাড সং শুনতে ছিলি যে কোনটা রেখে কোনটা খেয়াল করব বল?”
এবার ফারিন বাদে সবাই সশব্দে হেসে উঠলো। লিসা বললো,,
—”যাই বলিস ফারু আগের দিন তোর ঐ কাজটা করা একদমই ঠিক হয়নি। বেচারা তোকে কত পছন্দ করে জানিস?”

ফারিন:”তোর এতো ঠেকে তো তুই যে একসেপ্ট কর না, আমাকে কেন বলতেছিস?”
লিসা:”আমায় প্রপোজ করলে অবশ্যই একসেপ্ট করতাম। তুই কি জানিস ওনি কত মেয়েদের ক্রাশ?”
ফারিন:”তো আমি কি করতে পারি?”
পাশ থেকে নেহা বলল,,
“কি হয়েছে রে লিসা? খোলসা করে বলতো ব্যাপারটা কি?”
লিসা:”আরে হয়েছে ইফরাত ভাই আছে না?”
নেহা:”হ্যাঁ শুনেছি ওনি অনেক সুন্দর দেখতে।”
লিসা:”শুধু সুন্দর! বল ড্যাসিং”
নেহা:”হ্যাঁ তো? ফারু কি করেছে?”
পাশ থেকে ফারিন বিরক্তি নিয়ে বলল,,
—”আরে ভাই বাদ দে তো ওই আ*বালের কথা। আইছিলো সিনেমার ডায়লগ শোনাতে। আমিও সুন্দর করে বাস্তবিক ডায়লগ দিয়ে দিয়েছি।”

লিসা এবার রেগে গিয়ে বলল,,
“তুই চুপ থাক!”
নেহা:”তোরা কি ঝগড়া করবি?নাকি বলবি কি হয়েছে?”
লিসা: আরে আগের দিন আমরা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। অসুস্থ ছিলি আর ইমন,আরা আগে আগে চলে গিয়েছিল ওদের টিউশনির জন্য। হঠাৎই ইফরাত ভাই একটা গোলাপ নিয়ে ওর সামনে বসে পুরো সিনেমাটিক স্টাইলে প্রপোজ করল।ভাই!”
আরা:”তারপর!!”
লিসা:”তারপর! ফারু কি বলল জানিস?”
ইমন:”কি?”
লিসা:”আপনি আবার কোন জায়গা থেকে উদয় হলেন?”
ইমন:”মানে!?”
লিসা:”মানে! ও হাবলু একসেপ্ট না করে এই বলল। তারপরেও ভাইয়া শান্তভাবে বলল,,
“কেউ প্রপোজ করলে হয় হ্যাঁ বলতে হয় নয়তো ন।তুমি কিছু একটা তো বলো”।
তখন তোমাদের আদরের ফারু বলল,,
“আমার ইচ্ছা করছে না মুড নেই!”
ইমন এবার হেসে বলল,,

—”তারপর?”
লিসা:”ভাইয়া অবাক হয়ে বলল,,
“আমি এতদিন শুনেছি যে কেউ প্রপোজ করলে মেয়েটা বলে যে আমার জন্য কি করতে পারবে? কতটা ভালোবাসো?আর তুমি বলছো মুড নেই।”
তখন ফারিন বলে,,
“হ্যাঁ,হ্যাঁ ভুলে গেছিলাম তা বলেন আপনি আমার জন্য কি করতে পারবেন?”
“জানিস ভাইয়া কি রোমান্টিক ভাবে বলল,,
‘পুরো দুনিয়া জ্বালিয়ে দেবো করব ছারখার তোমায় না পেলে।’
আর শেষমেষ এই বান্দর কি বলল জানিস?”
আরা এবার উত্তেজিত হয়ে বলল,,
“কথা বাধায় রাখিস ‌কেন?বল না কি হলো তারপর?”
লিসা:”কি হলো বুঝতে পারছ না?যেখানে তোমাদের আদরের ফারু থাকে সেখানে শান্তিতে কোন কাজ হতে পারে?”
ইমন:”আরে বলবি?”

লিসা:”তোদের ফারু ইফরাত ভাইয়ের গান শুনে হাসতে হাসতে বলল,
“দুনিয়া কি আপনার বাপের?যে আমার জন্য জ্বালিয়ে দিবেন”
সবাই এবার জোরে হেসে উঠলো। ইমনের হাসতে হাসতে ভীষম লাগার মত অবস্থা। সে বহু কষ্ট নিজেকে সামলে বলল,,
—”আসলেও ফারু এইসব শুধুমাত্র তোর দ্বারাই সম্ভব।”
ফারিনও এবার হেসে বলল,,

—”তাছাড়া আর কি? আইছে দুনিয়া জ্বালাইতে….যেন ।দুনিয়া ওনার বাপ দাদার সম্পত্তি!”
এদিকে ঠিক তাদের পিছনেই, ক্যাম্পাসের ছায়া ঢাকা এক কোণে নির্ঝর দাঁড়িয়ে ছিল, মোবাইলে চোখ রাখলেও তাতে তার পুরো মনোযোগ ছিল না।ইমেইলের খসড়া টাইপ করতে করতে তার কানে বাজে ফারিনদের হাসির শব্দ আর লিসার বলা ফারুর সেই বিখ্যাত ডায়লগ ‌:
“দুনিয়া কি আপনার বাপের? যে আমার জন্য জ্বালিয়ে দিবেন!”
এইটুকু শুনতেই নির্ঝরের আঙুল থেমে যায়।কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে সে মাথা নিচু করে একটু হেসে ফেলে—একটা অস্ফুট মুচকি হাসি, যা অজান্তেই বেরিয়ে এসেছে।

সুইজারল্যান্ডের ব্রেঞ্জে এখন পাহাড় আর হ্রদের মাঝখানে ঢাকা পড়া এক ‌নিস্তব্ধ দুপুর।বাহিরের লেকজুড়ে নীলচে নীরবতা ছড়িয়ে আছে, আর আল্পসের হিম বাতাসে যেন ঘুমিয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম।এই নিস্তব্ধতা ছিন্ন করে ধীরে ধীরে দরজার ইলেকট্রনিক প্যানেলে হাত রাখে নাহিয়ান।
পাসওয়ার্ডটা চাপতেই নিঃশব্দে খুলে যায় কটেজের মূল দরজা।ভিতরে ঢুকে সে চারপাশে একবারও না তাকিয়ে সোজা পা বাড়ায় দুই তলার উত্তর-পূর্ব পাশের রুমের দিকে করিডোর দিয়ে সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে রুমটা সামনে এসে দাঁড়ায়।দরজাটা খানিকটা খোলা ছিল।হালকা এক ছোঁয়াতেই তা ধীরে খুলে গেল।ভেতরে ঢুকেই তার চোখ আটকে যায়।বিছানার উপর এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে শিশির।
সোনালী চুলগুলো যেন প্রাকৃতিক জলরাশির মতো ছড়িয়ে আছে বিছানার চারপাশে‌ ,যার প্রতি ঢেউ নাহিয়ানের চোখে সোনার প্রতিফলন, আর হৃদয়ে প্রেমময় দোলা সৃষ্টি করছে।সম্ভবত হাতের ব্যথার কারণেই চুল বাঁধতে পারেনি সে।
তবু সেই অগোছালো চুলেই যেন লুকিয়ে আছে অনবদ্য এক মায়া, যা তাকে নাহিয়ানের চোখে শ্রেষ্ঠ মায়াবিনী করে তুলেছে।

নাহিয়ান চুপচাপ এগিয়ে এসে শিশিরের বিছানার নিচে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।ঘোর লাগা নয়নে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ‌থাকে শিশিরের দিকে।তার মনে হয়, পৃথিবীতে আর কিছু থাক বা না থাক, এই এক মুহূর্ত যদি থেমে থাকতো—তাহলে সেই বিরল সৌন্দর্যটাই হতো তার জীবনের পরিপূর্ণতা, শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।

জানালার কাঁচ গলিয়ে পড়ছে হালকা রোদের আলো, যা এসে শিশিরের চোখে-মুখে ঝিলিক দিচ্ছে।কখনো তা সরাসরি চোখে পড়ে, কখনো কপালে আর শিশির ঘুমের মধ্যেই মুখটা একটু একটু করে কুঁচকে নিচ্ছে, যেন রোদটা তাকে তাকে বিরক্ত করছে।নাহিয়ান মুচকি হেসে হাত বাড়ায়।তার হাতের ছায়া দিয়ে শিশিরের মুখ থেকে রোদটা আড়াল করতে চায়।আলোটা সরতেই শিশির আবার নিঃশ্বাসের মতো শান্ত হয়ে যায়।ঢেউহীন জলের মতো, নিখুঁত ‌মুখটাতে সামান্য বিষন্নতার ছায়া।তবুও নাহিয়ানের দৃষ্টিতে তাকে লাগছে ‌অপরুপা,সেই মায়াবতী যার চোখে মুখে মিশে আছে কোন দামি মাদকের মাদকতা। সে নেশাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো শিশিরের দিকে।শিশিরের চোখের উপর পড়া ছোট ছোট চুলগুলোকে আলতো হাতে সরিয়ে দিতে দিতে সে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো,,,

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২৮

“নেশা নেশা…
একি নেশা চোখে…
ভুলে থাকতে…
পারিনা তোকে…
অচেনা স্বপ্নগুলো..
তোকে ছুঁতে চায়…”

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩০