মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪৯
নওরিন কবির তিশা
সময়গুলো যেন বাতাসে ভর করে উড়ে চলেছে।দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে প্রায় অর্ধ মাস। নিজেদের সংসার বেশ গুছিয়ে শুরু করেছে আনায়া,রিদিত।সামনের মাসেই রোম যাবে তারা। এদিকে শিশিরও নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে,নাহিয়ানের আসার এখনো প্রায় মাস তিনেক বাকি,তবে দিনগুলো অতি দ্রুত কেটে যাবে,সেই আশায় আছে শিশির-নাহিয়ান দুজনেই।
প্রতিদিন পালা করে ৩-৪ বার কথা হয় তাদের। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টা। আজ কর্মদিবস না থাকায় বাসায় বসে বসে বোর হচ্ছিলো শিশির। আর এখন তো আনায়াকেও আগের মতো ফ্রী পাওয়া যায় না।শিশিরের মাথায় নাহিয়ানের চিন্তাগুলো বড্ড বেশি জ্বালাতন করছিল। তাই আর কিছু না ভেবেই সে নাহিয়ানের ফোনে কল লাগালো।
এদিকে…..
নিউইয়র্কে নিজের শ্যাডো হ্যাভেনে মিটিং সেরে সবে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েছিল নাহিয়ান। ঘড়ির কাঁটায় প্রায় রাত বারোটা। আর এক সপ্তাহ পর থেকেই তেহেরানে একটা সিক্রেট মিশন শুরু হতে যাচ্ছে তাদের। এসব নিয়েই আলোচনা শেষে সবে দু চোখের পাতা এক করেছিল নাহিয়ান। হঠাৎই তার সেলফোনে বেঁজে উঠলো,,
“রোজ সকালে তোর মায়াবী ছবি…
চোখে ভাসে তোর মিষ্টি হাসি…
বেলী গাঁথা তোর চুলের বেনি…
মায়াপূর্ন তোর চোখের চাহনি….
ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী…
ভালবাসি শুধু তোকেই…”
বহুদিন পুরাতন রিংটোনটি এখনো বদলানো হয়নি তার। পরপর দুইবার কল আসার পর পাশ থেকে সেলফোন টা নিয়ে চোখ বন্ধ অবস্থায় কোনোমতে কানে ধরে সে বলে,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
——“হ্যালো কে?”
এপাশ থেকে শিশিরের জবাব,,
——“এ আর নাহিয়ান চৌধুরীর বউ!”
শিশিরের কন্ঠে ঘুম ঘোরেই মুচকি হাসে নাহিয়ান।
নাহিয়ান:“এ আর নাহিয়ান চৌধুরী কে?”
শিশির: “আমার হাজব্যান্ড!”
নাহিয়ান:“তা মিসেস নাহিয়ান চৌধুরী!এত রাতে আমায় কল দেওয়ার কারণ? মতলব কি হ্যাঁ?”
শিশির:“মতলব আবার কি? আপনার কথা মনে পড়ছিল তাই ফোন দিলাম!”
নাহিয়ান:“ছি ছি! একজনের স্ত্রী হয়ে এত রাতে আমাকে কল দেন!পরকীয়া করার ইচ্ছা আছে নাকি?”
শিশির নাহিয়ানের কথায় লাজুক হাসলো। একটা লোক কতটা অসভ্য হলে নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকেই পরকিয়ার প্রস্তাব দিতে পারে!
নাহিয়ান:“কিন্তু আম সরি মিসেস, আমার ঘরে আমার লক্ষ্মী একটা বউ আছে! সে যদি জানতে পারে তাকে রেখে আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলছি তাহলে সেই মেয়েসহ আমার কলিজা ভুনা করে গুলিস্তানের মোড়ের কুকুরকে দিয়ে খাওয়াবে!”
শিশির:“বাজে কথা বলা বন্ধ করবেন!”
নাহিয়ান মুচকি হেসে বলে,,
——“তা বললেন না তো কেন ফোন দিয়েছেন?”
শিশির:“এমনিই কিছু ভালো লাগছিল না তাই! এখন তো আর আনায়াকেও যখন তখন ফোন করতে পারিনা।”
নাহিয়ান:“মিস করছেন ম্যাম? চলে আসব?”
শিশির:“আমি বললেই কি আপনি চলে আসবেন নাকি?”
নাহিয়ান:“একবার শুধু বলেই দেখুন না!”
শিশির:“কি করছেন?”
নাহিয়ান:“এইতো আপনার সাথে কথা বলছি!”
শিশির:“আর আমার সাথে কথা বলার আগে আপনি কি করছিলেন?”
নাহিয়ান:“ভাবছিলাম!”
শিশির:“কি ভাবছিলেন? কোন মেয়েকে নিয়ে ভাবছিলেন?সত্যি কথা বলুন কিন্তু!”
নাহিয়ান:“ওরে বাবা! বউ আমার দেখি জেলাস!”
শিশির:“কথা না ঘুরিয়ে বলুন কার কথা ভাবছিলেন?”
নাহিয়ান:“বাংলাদেশের রেখে আসা আমার জেলাস বউটার কথা!”
নাহিয়ানের কথায় লাজুক হাসলো শিশির। এই লোকটার প্রত্যেকটা কথায় লজ্জায় নুইয়ে পড়ে সে। তবুও তার মনে-প্রানে শুধু এই ঠোঁটকাটা নির্লজ্জ বেহায়া লোকটিরই অস্তিত্ব।
ঘড়ির কাঁটায় সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললেও এখনো বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে রিদিত। কিছুক্ষণ আগেই আনায়া এসে একবার ডেকে গিয়েছে তাকে। কিন্তু তাতেও কোনো ভাবান্তর নেই রিদিতের। দুইদিন আগেই রিদিতের বাবা-মা কিছুদিনের জন্য তাদের গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছে। বলা চলে নব দম্পতিকে কিছুদিন একা সময় কাটাতে দেওয়ার জন্যই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পুরো বাড়ি জুড়ে এখন শুধু রিদিত আর আনায়া।দুপুরবেলায় সকালের বেড টি হাতে রুমে প্রবেশ করল আনায়া।রিদিতকে পড়ে পড়ে ঘুমাতে দেখে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলল তার। দ্রুত এগিয়ে এসে রিদিতের মাথার কাছে বসলো সে। অতঃপর রিদিতের ডান হাতের একটা আঙ্গুল নিয়ে গরম চায়ে ডুবিয়ে দিল।
সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো রিদিত। তা দেখে শব্দ করে হেসে ফেলল আনায়া।আনায়াকে হাসতে দেখে রিদিত বলল,,
——“এটা কি করলে?”
আনায়া:“ঘুম থেকে উঠছিলেন না কেন?”
রিদিত আঙ্গুলটিতে ফুঁ দিতে দিতে বলল,,
——“তাই বলে গরম চায়ে…”
তার কথা শেষ করার আগে আনায়া এগিয়ে এসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,,
——“চা টা তো বেশি গরম ছিল না। দেখি কোথায় লেগেছে!”
কথাটা বলে আনায়া রিদিতের দিকে এগিয়ে আসতেই রিদিত একটা টানে তাকে নিজের বুকের উপর ফেলে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলল,,
——“চা টা একদমই গরম ছিল না! এটা তো তোমাকে কাছে পাওয়ার একটা ট্রাপ ছিল!”
আনায়া আর কোনো কথা বলতে পারল না। শুধু লজ্জায় মুখ লুকালো রিদিতের প্রশস্ত বক্ষ দেশে।
——“দোস্ত তুই তো পুরাই পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছিস রে? নাকে নোলক হাতে বালা!”
বন্ধুদের সাথে গ্রুপ ভিডিও কলে কথা বলছিলো ফারিন। হঠাৎই আরার এমন কথায় ফারিন বলল,,
——“ওই আর কি? যাইহোক তোরা বল কলেজে যাবি কবে থেকে?”
ইমন:“আমরা তো কলেজ শুরুর দিন থেকেই আসা স্টার্ট করছি! তুই তো বরের সাথে সারা জায়গা ঘুরে বেড়াচ্ছিলি!”
ফারিন:“বাজে কথা বন্ধ করে বল কালকে কলেজ আসবি কিনা?”
রায়ান:“কিসের বাজে কথা? আমরা তো google থেকে সার্চ করে কিছু সুন্দর সুন্দর নাম সিলেক্ট করে রেখেছি!”
ফারিন:“কিসের নাম?”
লিসা:“আমাদের অনাগত ভাগ্নে-ভাগ্নির নাম।”
ফারিন:“কেন?কেউ কি প্রেগন্যান্ট নাকি?”
এবার সবাই মিলে একযোগে শয়তানি হেসে বলল,,
——“সেটা তো আপনিই ভালো জানেন ম্যাডাম! ইদানিং বরের সাথে যে পরিমাণ লুতুপুতু চলছে আপনার তাতে মনে হচ্ছে অতি শীঘ্রই আমরা মামা-খালা ডাক শুনতে যাচ্ছি!”
তাদের কথায় ফারিন শব্দ করে এসে বলল,,
——“ও তার মানে তোরা আমার কথা বলছিলে! কোনদিন শুনছিস উত্তর দিকে সূর্য উঠে? আমার বিয়ে এত সুন্দর একটা মানুষের সাথে হয়েছে যে তোদের নাতি নাতনিরাও মনে হয় আমার বাচ্চার মুখ দেখতে পারবে না!”
সবাই একসাথে বলল,,
——“সেটা সময় এলেই দেখা যাবে!”
ফারিন:“হ্যাঁ হ্যাঁ দেখা যাবে! এখন রাখ।আপাতত ভীষণ ঘুম আসছে আমার!”
আরা:“বললেই হতো যে এখন বরের সাথে প্রাইভেট সময় কাটাবি। শুধু শুধু ঘুম আসার মিথ্যে কথা বলার কি দরকার ছিল?”
ফারিন:“মানে?”
আরা:“পিছনে দেখ!”
কথাটা বলেই কল কেটে দেয় তারা। সঙ্গে সঙ্গে ফারিন পিছনে তাকিয়ে দেখে রুমে প্রবেশ করছে নির্ঝর। তবে আজকে পুরোপুরি অন্যরকম লাগছে তাকে।রুমে ঢুকেই শব্দ করে দরজাটা দিয়েই ছিটকিনি আটকে দেয় নির্ঝর। ফারিন কিছুটা ঘাবড়ে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে বলে,,
——“কোনো সমস্যা স্যার?এমন করছেন কেন?”
নির্ঝর শার্টের বোতামগুলো আনলক করতে করতে তার দিকে এগিয়ে এসে বলে,,
——“সমস্যা তো অবশ্যই!তবে তার সলিউশনও আমার জানা আছে!”
ফারিন নির্ঝরের এমন আচরণে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে,,
——“ক-কি সমস্যা?”
নির্ঝর:“সমস্যাটাও তুমি সলিউশনটাও তুমি!”
ফারিন:“ম-মানে?”
নির্ঝর ফারিনের কাছাকাছি এগিয়ে এসে বলল,,
——“একটু আগে তুমি তোমার বন্ধুদের কি বলছিলে?”
ফারিন:“তেমন কিছু না স্যার।আসলে ওরা উল্টাপাল্টা কথা বলছিল তাই আর কি!”
নির্ঝর:“আর সেই উল্টাপাল্টা কথাগুলোকেই যদি আমি সত্যি করে দেই!”
ফারিন নির্ঝরের এমন কথায় কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,
——“স-স-স্যার..!!”
নির্ঝর ফারিনের তির তির করে কাঁপতে থাকা গোলাপি অধরে নিজের তর্জনী ঠেঁকিয়ে বলল,,
——“উসসস,আর কিছুক্ষণ পর তোমার আর আমার মাঝে এক ইঞ্চিও দুরত্ব থাকবে না।সো ডোন্ট কল মি স্যার বেইবি!”
নির্ঝরের এমন কথায় চোখ যেন কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম ফারিনের। ভীত কন্ঠে সে বলল,,
——“মানে?”
নির্ঝর আর কোনো কথা না বলে এগিয়ে এসে ফারিনের খোঁপা থেকে ক্লিপটা খুলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে ফারিনের পিঠ ছাড়ানো হালকা লালচে কেশরাজী বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ল।সেই বাঁধনহারা কেশরাজীর মাঝে হাত ডুবিয়ে দিল নির্ঝর। অতঃপর নিজের তামাটে ওষ্টদ্বয় দিয়ে তীব্রভাবে দখল করল ফারিনের নরম কোমল অধরদ্বয়।
নির্ঝরের এমন কান্ডে ফারিনের হৃদস্পন্দন কয়েকশ গুন বেড়ে গেল।এযেন কোনো দিবাস্বপ্ন।এমন কিছু ফারিন তো কখনো কল্পনাও করতে পারে নি। লজ্জায় ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করল তার। লাজুক লতার ন্যায় নুইয়ে পড়ল সে। মুহূর্ত খানেক পর নির্ঝর নিজে থেকে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিল ফারিনকে ততক্ষণে তার কোমল ওষ্টদ্বয় ফুলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
অতঃপর নির্ঝর কোলে তুলে নিলো ফারিনকে।ফারিন লজ্জায় মুখ লুকালো নির্ঝরের বক্ষপ্রাচীরের মাঝে।নির্ঝর আলগোছে ফারিনকে বিছানায় শুইয়ে নিজের পরনের শার্ট আর ফারিনের শরীরে জড়ানো ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে।তারপর নির্ঝর ধীরে ধীরে নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো ফারিনের উপর।
এদিকে নির্ঝরের প্রতিটি স্পর্শে লজ্জায় মরি মরি অবস্থা ফারিনের। লজ্জায় সে সরে যেতে গেলেই নির্ঝর তার আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪৮
——“আজ রাতে আমার থেকে তোমার মুক্তি নেই বেইবি।অনেক অপেক্ষা করিয়েছো আমায়। শুধু বয়স কম ছিল বলে দিনের পর দিন আমার সামনে ঘুরঘুর করার পরও নিজেকে কন্ট্রোল করতে বাধ্য হয়েছি।বাট আর না! ইউ আর টু অ্যাট্রাকটিভ ইউ নো!সো নাউ আই ওয়ান্ট টু টেস্ট ইউ!”
লজ্জায় আর গলা দিয়ে আর কোনো শব্দ বের হলো না ফারিনের। নির্ঝর ফারিনের লজ্জা মাখা মুখশ্রীতে দীর্ঘ প্রেম পরশ বুলিয়ে রুমের আলো নিভিয়ে দিলো।আর নিস্তব্ধ এক রজনী সাক্ষী হলো একজোড়া কপতো-কপতির মধুচন্দ্রিমার।