মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৫৮ (৩)
নওরিন কবির তিশা
খানম কুঞ্জের ছাদটা আজ সেজে উঠেছে স্বপ্নীল আবহে। আশেপাশের স্ট্রিং লাইটের রঙিন আলোকরশ্মির মৃদু ঝলকানি;যেন সেখানে নেমে এসেছে আকাশের তারকারাজি। স্ট্রিং লাইটের নিয়ন আলোর পাশাপাশি পুরো ছাদ সজ্জিত তীব্র আলোক সজ্জায়। ছাদেই আয়োজিত হয়েছে শিশির আর নাহিয়ানের হলুদ সন্ধ্যা।
বরাদ্দকৃত পুষ্প সজ্জিত আসনটিতে বসে আছে শিশির, পরনে অসম্ভব সুন্দর কারুকার্য খচিত কাঁচা হলুদ রঙা পাকিস্তানি সারারা,স্বর্ণাভ কেশরাজী ফ্রেঞ্চ বিনুনীর শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ। ঠোঁট গাঢ় মেরুন রঙের রঞ্জকে আবৃত, চোখে হালকা করে আইলাইনার সব মিলিয়ে এক অপরূপী সৌন্দর্যের অধিকারিনী রূপসী অষ্টাদশী আজ সে।
শিশিরের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আনায়া, ফারিন,ইলমা আর নিঝুম। তাদের পরনে একরঙা পাকিস্তানি লেহেঙ্গা। ম্যাচ করেই পড়েছে তারা সবাই, সবার অপেক্ষারত দৃষ্টি চিলেকোঠায় নিবদ্ধ, অপেক্ষা একজনেরই—-নাহিয়ান! এখানে সবাই থাকলেও,অনুপস্থিত একমাত্র সে। ফারিন কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,,
——“যার বিয়ে তার খোঁজ নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই! দেখো আমরা সেই কখন থেকে ছাদে ওয়েট করছি। আর যার বিয়ে সেই নাহিয়ান ভাইয়া কই?”
আনায়া বিচক্ষণ কন্ঠে বলল,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
——“ফারু, আই থিঙ্ক কোনো একটা চমক ওয়েট করছে আমাদের জন্য! না মানে নাহিয়ান ভাইয়া তো তার বউকে না দেখে থাকতে পারেনা। তাও এতক্ষণ ধরে যখন আমাদের ওয়েট করানোর সাথে সাথে সে নিজেও ওয়েট করছে তার মানে কিছু একটা ঘাপলা তো আছেই!”
ফারিন আনায়ার দিকে ফিরে বলল,,
——“ঘাপলা তো আছেই! কিন্তু সেটা কি হতে পারে আপু?”
আনায়া তার জবাবে আর কিছু বলার আগেই একসঙ্গে নিভে গেল ছাদের সব আলো। শুধু স্ট্রিং লাইটের মৃদু আলোয় দৃশ্যমান হলো এক সুঠামদেহী পুরুষাবয়ব। অবয়বটি এগিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে গেয়ে উঠলো,,
🎶 আরে মনের ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট টিভিতে…..
মনের ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট টিভিতে…..
তুই কালার লাগালি……হায়…..
রিমোট দিয়ে প্রেমের নতুন চ্যানেল দেখালি….🎶
অবয়বটি শিশিরের একদম সামনাসামনি এসে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে একযোগে সবগুলো আলো জ্বলে উঠলো। দৃশ্যমান হলো নাহিয়ান,সে নিজের দোশালাটা ওড়নার মতো গলায় পেঁচিয়ে শুরু করল ডান্স।সেই সঙ্গে জোরে জোরে গাইলো,,
🎶 ঠুমকা লাগালি.. রূপের বিজরি গিরালি….
তোকে দেখে গাইছে এ মন রিমিক্স কাওয়ালী…
জোহরা জবি না তুই আনারকলি….
তোকে দেখে গাইছে এ মন রিমিক্স কাওয়ালী…
রিমিক্স কাওয়ালী… প্রেমের রিমিক্স কাওয়ালী…
ফুরসতে তোকে… বানিয়েছে আলী….
ফুরসতে তোকে… বানিয়েছে আলী….
তোকে দেখে গাইছে এ মন রিমিক্স কাওয়ালী…🎶
দুর্দান্ত এক ডান্স শেষে নাহিয়ান এসে শিশিরের পাশে বসলো। শিশির লাজুক ভঙ্গিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল,,
——“কি আপনি?”
নাহিয়ান দুষ্টু হেসে শিশিরের কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিসিয়ে বলল,,
——“Your ultra romantic hubby sweetheart….!!”
শিশির লাজুক হেসে বলল,,
——“ধ্যাৎ; চলে যাব কিন্তু!”
নাহিয়ান:“মরে যাবো কিন্তু!”
নিজের রুমের সব আলো নিভিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে ইয়ালিনা। দুনিয়াটাকে তার কাছে জাহান্নামের চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না আজ। আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা তারপরেই তার জীবনের সবচেয়ে আকুল ভাবে চাওয়া মানুষটা হারিয়ে যাবে।মানুষটির নাম স্বাক্ষরিত হবে অন্য কোনো মেয়ের নামে,সারা জীবন এক পুরুষকে একতরফা ভালোবেসে যাবে সে, কিন্তু সেই পুরুষটি কখনো জানতেই পারবে না কতটা আকুল ভাবে তাকে নিজের প্রার্থনাতে চেয়েছিল ইয়ালিনা!
বুক চিরে দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। হঠাৎই মনের মাঝে দোলা দিল এক সুপ্ত বাসনা।ইয়ালিনা শুনেছে যে; মানুষ যাকে ভালোবাসে তার সঙ্গেই নাকি তার হাশর হয়। তবে কি এমনটা হতে পারে যে,ইয়ালিনা হয়তো হাশরের ময়দানে নাহিয়ান কে আল্লাহর কাছে চাইলো!কিন্তু তখন কি নাহিয়ান ইয়ালিনাকে ভালবাসবে? হয়তো নয়! হয়তো তখনও নাহিয়ান পাগলের মতো শিশিরের জন্য;আকুতি জানাবে যেমনটা এখন জানায়!
নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই পেলো ইয়ালিনা। নাহিয়ানকে পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়; শুধু ইহকালে কেন পরপারেও নয়! ইয়ালিনা,আর কিছু ভাবতে চাইছে না, সমস্ত ভাবনা,জল্পনা-কল্পনাকে আঁধার কুটিরে বন্ধ করে রাখতে চাইছে সে। তবুও মাঝে মাঝে এসব অদ্ভুত চিন্তারা বড্ড জ্বালাচ্ছে তাকে।
কিছুক্ষণ আগেই শিউলি হক এসেছিলেন তার কাছে। হয়তো তার ফুলে ওঠা রক্তিম চক্ষু দেখে সবকিছুই বুঝে গিয়েছিলেন তিনি।তবুও নিজেকে সামলে তিনি বহু কষ্ট বলেছিলেন,,
——“আল্লাহ যা করে তা সবকিছু ভালোর জন্যই করে মা,হয়তো তোর জন্য এমন কেউ অপেক্ষা করছে; যাকে তুই না বরং সে নিজেই তোকে ভীষণ ভালবাসবে!”
মায়ের এমন কথায় ইয়ালিনা মলিন হেসে বলেছিল,,
——“সে আমাকে ভালোবেসে আর কি করবে মা? আমার ভালবাসা তো ছন্নছাড়া হয়ে আছে এক না পাওয়া পুরুষের জন্য! হয়তো তাকে আমি কোনোদিনই নিজের করে পাব না; তবে তাকে নিজকল্পনায় আপন করে রাখতে ক্ষতি কি?”
মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার হয়তো আর কোনো ভাষা খুঁজে পাননি তিনি। সে নিজেও তো এখানে আসতে চায়নি, তবু স্বামীর মুখের উপর কথা বলার সাধ্য যে তার নেই। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই এখানে এসেছেন তিনি,আর কেউ জানুক বা না জানুক সে তো খুব ভালো করেই জানে তার আদরের মেয়েটা নাহিয়ানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে! কিন্তু তারই বা কি করার আছে?নাহিয়ান আর শিশিরের বিয়েটা যে অনেক আগে থেকে ঠিক করা! সেটা তো তিনি নিজেও জানেন। মলিন মুখে;বুকে একরাশ ব্যাথা চেপে সেখান থেকে উঠে গিয়েছিলেন তিনি। ইয়ালিনা ফের দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। অতঃপর রাতের আকাশের পানে চেয়ে বলল,,
——“ওহে বাতাস, তুমি আমার হয়ে গভীরভাবে ছুঁয়ে দিও তাকে,এত আকুল ভাবে চাওয়ার পরও আমি পেলাম না যাকে!”
ইয়ালিনা আকাশের পানে ঠিক ওভাবেই চেয়ে থাকল বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎই দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ধ্যান ভাঙলো তার। সে বুঝলো হয়তো শিউলি হোক আবার এসেছেন তার কাছে।দরজায় না তাকিয়েই বলল,,
——“দরজা খোলাই আছে।চলে আসো।”
ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করল শেজাহান।এতক্ষণে হয়তো তার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। চেইনটিকে মালকিনের কাছে না দেওয়া অব্দি শান্তি মিলছিলো না তার। কিন্তু চেইনের মালকিন কে তা এখনো অজ্ঞাত তার কাছে।ঠিক অজ্ঞাত নয় নিঝুম এর কাছ থেকে যতটুকু জানতে পেরেছে চেইনটির মালকিনের নাম ‘ইয়ালিনা’বা এই টাইপ কিছু!
যাই হোক শেজাহানের কাছে মেয়েটির একটাই পরিচয় “miss fiery” এই নামকরণের উদ্দেশ্যে অবশ্য একটাই সেদিন বিনা দোষে সে যেভাবে শেজাহানকে শাসালো সেদিন!তারপর থেকে মেয়েটার কথা মাথায় আসতেই এই একটাই নাম বারবার মস্তিষ্কে দোলা দেয় তার। শেজাহান লক্ষ্য করল সারা বাড়ি আলোকসজ্জিত হলেও এর রুমটা নিহাতই অন্ধকারাচ্ছন্ন, শুধু একটা ডিম লাইটের টিমটিম আলো লাল নিয়ন আলো ছড়াচ্ছে বিশাল রুম জুড়ে।
শেজাহান যখন রুমটিকে নিরক্ষন করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই ব্যালকনি থেকে একটি মেয়েলী কন্ঠ ভেসে এলো,,
——“কি ব্যাপার কথা বলতে এসে কি রুমেই দাঁড়িয়ে থাকলে নাকি?”
শেহজাহান অমন মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠে কিছুটা বিস্মিত হলো। কালকেও তো ঠিক এই মেয়েটার কন্ঠই শুনেছিল সে। তবে এমন অদ্ভুত সুন্দর তো লাগেনি। সে এগিয়ে গিয়ে ইয়ালিনার পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,,
——“না আসলে আপনার রুমটা অন্ধকার তো;এজন্য বোঝা যাচ্ছিলো না আপনি কোথায়!”
অপরিচিত পুরুষালী কন্ঠে চমকে তাকালো ইয়ালিনা। আঁধারের মাঝে পুরুষটির মুখশ্রী স্পষ্ট নয়। যতটুকু বোঝা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে পুরুষটা উচ্চতায় প্রায় নাহিয়ানের মতোই।তবে কন্ঠটা কেমন যেন! ইয়ালিনা আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,,
——“কে আপনি? আর আমার রুমে কি দরকার আপনার? বলা নেই কওয়া নেই একটা অপরিচিত মেয়ের রুমে ঢুকে যেতে আপনার লজ্জা করল না, ম্যানারসলেস কোথাকার!”
শেজাহান:“এই এই স্টপ, হোয়াটস রং উইথ ইউ? আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিবেন নাকি?”
ইয়ালিনা রাগি কন্ঠে বলল,,
——“কি বলবেন আপনি হ্যাঁ? আমি আপনার কোনো কথা শুনতে ইচ্ছুক নই।জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই রুম নাউ!”
শেজাহান:“আমার কথাটা তো শুনবেন…”
ইয়ালিনা:“আই সেই গেট আউট!”
শেজাহানের মেজাজ এবার ভীষণ রকম বিগড়ে গেল।এই মেয়েটার এত দেমাগ কিসের?সে রেগে গিয়ে ইয়ালিনার দিকে দুকদম এগিয়ে গিয়ে বলল,,
——“এই মেয়ে এই? এত দেমাগ কিসের তোমার হ্যাঁ? আমি কি এখানে তোমার সাথে প্রেম আলাপ করতে এসেছি নাকি নষ্টামি করছি? যে এরকম রুড বিহেভ করছ?”
পুরুষটির এমন কাছাকাছি এগিয়ে আসা,সেই সাথে এমন কথায় বেশ অবাক হলো ইয়ালিনা। তবুও নিজের অবস্থান থেকে এক চুল নড়লো না সে।কাঠকাঠ কন্ঠে সে বলল,,
——“হু আর ইউ? ডু ইউ নো অ্যাবাউট মি? আপনিই আমার রুমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করেছেন,সো গলা নিচে!”
শেজাহান:“ইয়েস আই নো,যে এটা তোমার রুম। আর আমি তোমার রুমে প্রবেশ করেছে, বাট সেটা তোমার বিনা অনুমতিতে নয়, তুমিই হয়তো আমাকে না দেখে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছো। মনে করো।”
ইয়ালিনার মনে পড়ল সে দরজায় না তাকিয়ে বাহিরের ব্যাক্তিটাকে ভিতরে আসার অনুমতি দিয়েছিলো।কিন্তু সে তো ভেবেছিলো হয়তো সেটা তার মা শিউলি হক। যাই হোক নিজের দোষ কি সে নিজে কখনো স্বীকার করবে নাকি?
ইয়ালিনা:“কি বলতে চান? বলে দ্রুত আমার রুম থেকে বের হন!”
শেজাহান:“এবার আইছে পথে, হোয়াটএভার ..”
সে নিজের হাতে থাকা চেইনটি ইয়ালিনার সামনে ধরে বলল,,
——“ইজ দ্যাট ইউর?”
শেজাহানের হাতে নিজের চেইনটি দেখে চমকে উঠলো ইয়ালিনা। অতঃপর নিজের গলায় হাত দিয়ে সে বুঝলো তার গলায় চেইনটি নেই।সে শেজাহানের দিকে ফিরে বলল,,
——“হ্যাঁ এটা আমার! কিন্তু এটা আপনার কাছে কিভাবে?”
শেজাহান চেইনটি ইয়ালিনার হাতে দিয়ে বলল,,
——“কালকে রাতে যখন আমার উপর রাগ ছাড়তে ব্যস্ত ছিলে,তখনই এটা থেকে গিয়েছিলো।”
ইয়ালিনা দ্রুত চেইনটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,,
——“ওকে থ্যাঙ্কস! নাউ ইউ ক্যান গো আউট?”
শেজাহান বেশ অবাক হল ইয়ালিনার এমন আচরণে। মেয়েটা এমন কেন?কোথায় নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে তা নয়!আবার তাকে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলছে। যেন সে এখানে থাকলে মেয়েটার মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।তবে মনে হাজারটা প্রশ্ন চললেও শেজাহান আর কিছু না বলে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে রুমের দরজাটা শব্দ করে আটকে দিল ইয়ালিনা।শেজাহান চমকে তাকালো, এই মেয়েটা একটু বেশিই অদ্ভুত! যাই হোক মেয়েটাকে তার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিংই লেগেছে,ছাদে যাওয়ার পূর্বে ইয়ালিনার রুমের দিকে তাকিয়ে ফের একবার মুচকি হাসল শেজাহান।
এদিকে ছাদে একের পর এক হয়েই চলেছে নাচ,গান আর হইহুল্লোড়। কিছুক্ষণ আগেই একটা দারুন কাপল ডান্স পারফর্ম করেছে রিদিত আর আনয়া। আর সবার প্রথমে, সূচনাই তো হয়েছে নাহিয়ানের অদ্ভুত দারুন একটা পারফরমেন্সের মধ্য দিয়ে।আহ দেবের গান!ফারিনের একমাত্র ইমোশন।ইশ তার জামাইটাও যদি অমন দেবের একটা গান গাইতো না! আহা! কিন্তু তা কি আর সম্ভব নাকি? নির্ঝর আর দেব আকাশ আর পাতাল!
ফারিন যখন এসব চিন্তায় মগ্ন ঠিক তখনই নাহিয়ান আর শিশিরের আসনের সামনে থেকে কেউ একজন গেয়ে উঠলো,,
🎶 হেই ইউ লিসেন টু মি…..
ইউ আর মাই লাভ জানো তুমি…?🎶
পরিচিত কন্ঠে ফারিন চমকে তাকালো মঞ্চের দিকে, সঙ্গে সঙ্গে স্তম্ভিত সে,নির্ঝর? হ্যাঁ নির্ঝরই তো! নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলো না ফারিন। নিজের ডান হাত দিয়ে বাম হাতে সজোরে চিমটি কেটে সে বলল,,
——“আরে এটা তো সত্যি! আই হাই, মোর আনরোমান্টিক জামাই দেখি, রোমান্টিক হইছে!”
নির্ঝর ফারিনের দিকে ইশারা করে ডান্স করতে করতে ফের গিয়ে উঠলো,,
🎶 হেই ইউ লিসেন টু মি…..
ইউ আর মাই লাভ জানো তুমি…?
তুমি তুমি তুমি করে….জেগে থাকি রাত ভরে…
লাল নীল স্বপ্নের ভিড়… দুজনেই কাছাকাছি….
বালুচর জুড়ে আছি… হতে চাই একলা নিবিড়….
ও ফারু…ও ফারু…
আই লাভ ইউ….আই লাভ ইউ…
ও ফারু…ও ফারু…
আই লাভ ইউ….আই লাভ ইউ…🎶
ফারিন এবার বিস্ময়ের চরমসীমায় আরোহন করছে। নির্ঝর মধুর জায়গায় ফারু বলেছে এই কথাটা বিশ্বাসই হচ্ছে না তার! দ্যাট মিন্স, নির্ঝর সবার সামনে
ফারিনকে প্রপোজ করল ওএমজি….! ফারিন নিজেকে সামলাতে পারল না!! খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করলো তার! সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টাও করল না।এগিয়ে গিয়ে নির্ঝরের চারিপাশে ঘুরতে ঘুরতে ডান্স করতে লাগল আর গাইলো,,
🎶 কাটছে না দিন…তোর কথা না ভেবে…
ঘুম ভোরের আকাশ…তোর ছবি হাতরাবে….🎶
নির্ঝর ফারিনের হাতে ধরে নিজের দিকে টান দিল। ফারিন ফের গেয়ে উঠলো,,
🎶 মুখোমুখি ক্যানভাসে জল রঙে মন ভাসে…
পাল তুলে ইচ্ছে জাহাজ….. ছুটি ছুটি মন ওরে…
ছুটে যাব তোর ঘরে… তুই হলি আমার যে আজ!🎶
ফারিনের গান শেষ হতেই নির্ঝর মুচকি হেসে গেয়ে উঠল,,
🎶ও ফারু…ও ফারু…
আই লাভ ইউ….আই লাভ ইউ…
ও ফারু…ও ফারু…
আই লাভ ইউ….আই লাভ ইউ…🎶
ফারিন আর নির্ঝরের ডান্স শেষ হতেই মঞ্চে উপস্থিত হলো নিঝুম আর সৌজন্য। দুজনের চোখেই কালো রোদচশমা।সাউন্ড বক্সে ভীষণ জোরে জোরে বেজে উঠলো,,
🎶 Jaise 36 firte hain..
Mera wargi.. aur na honi ve..
Wargi.. aur na honi ve..
Tu Munda bilkul desi hai..
Main Katrina ton sohni ve…
Hayee.. main fed up ho gaiyein…
Mundian.. sun sun ke.. tere dukhde ve..
Mainu Kala chasma…
Mainu Kala Kala Kala Kala chasma…
Javhda ae…jachda gode mukhde te…🎶
শুরু হলো আরেকটি অসাধারণ ডান্স পারফরমেন্স।
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৫৮ (২)
হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে রাতের আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে যেতে লাগলো। ফারিন আর নিঝুম নাহিয়ান আর শিশিরকে আসন থেকে একপ্রকার জোর করে তুললো। অতঃপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নাহিয়ান আর শিশিরকে মাঝখানে রেখে সবাই শুরু করল ডান্স। সাউন্ড বক্সে জোরে জোরে বেজে চলল,,
‘Gallan Goodiyaan’সং।
এক স্বপ্ন ছোঁয়া পরিবেশ কেটে গেল মুহূর্তগুলো।