মাঝরাতের রোদ্দুর শেষ পর্ব
নওরিন কবির তিশা
পাঁচ-পাঁচটা বছর যেন চক্ষের পলকে মিলিয়ে গেছে।এই পাঁচ বছরে কত বসন্তের দখিনা বাতাস শিহরিত করেছে পত্র-পল্লব,আবার গ্রীষ্মের কাঠফাটা রৌদ্রে ঝরেছে ক্লান্তি। বর্ষার বারিধারা ধুয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সমস্ত মলিনতা, আর শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসতে দেখেছে মন। এই যে কত ঋতু এসেছে, আবার তার দিন ফুরিয়েছে, মানুষের জীবনও তেমনি অবিরাম চলেছে, কেবল সময়ের পঞ্জিকায় তার হিসেবটা পাল্টেছে।
প্রায় দুই মাস পর দেশের মাটিতে পা রাখল নাহিয়ান। বর্তমানে দেশের স্বনামধন্য একজন ব্যাবসায়ী সে। চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিজ সামলানোর পাশাপাশি সে প্রতিষ্ঠা করেছে এসএন গ্রুপস অফ কম্পানি,যা বর্তমান বাংলাদেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম।তবে মাস দুয়েক পূর্বে আরেকটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলো সে,যার দরুন আজ প্রায় ৬০ টা দিন দেশের বাইরে কাটাতে হয়েছে তাকে।
ইমিগ্রেশনের সকল কাজ শেষে,অ্যারাইভালস পেরিয়ে মিটিং পয়েন্টের দিকে তাকাতেই বিক্ষিপ্ত নয়ন জোড়া স্থির হলো তার। সেখানে অপেক্ষমান তার পরিবারের সকল সদস্য। তবে তার দৃষ্টি স্থির হলো কালো রঙা শাড়িতে আবৃত এক রমনী আর তার কোলে থাকা নিজের ছোট্ট রাজকন্যার দিকে।
এদিকে এতো দিন পর নাহিয়ানকে দেখে শিশিরের কোল থেকে নেমে তিন বছর বয়সী ছোট্ট নোশি পাপা,পাপা বলতে বলতে দৌড় লাগালো নাহিয়ানের দিকে। পুরো নাম নীরজা চৌধুরী নোশি।
তার ফেইরি স্ক্রিন আবৃত ব্ল্যাক কালার ফ্রকে,যার উপরের স্টোনগুলো মিটিং প্লেজের উজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করছে। হালকা লালচে চুলগুলো পিছনদিকে ছোট্ট ফ্রেঞ্চ বিনুনিতে আবৃত,বেবি হেয়ারগুলো সামনে এসে পড়েছে।দেখতে হুবহু নাহিয়ানের কার্বন কপি সে, প্রথম সাক্ষাতেই যে কেউ বলে দিতে পারবে এটা এসএন গ্রুপস অফ কম্পানি’র সিইও নাহিয়ান চৌধুরীর একমাত্র আদরের দুলালি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেয়েকে দৌড়ে আসতে দেখে নাহিয়ান নিজের হাতে থাকা লাগেজটা তার পিএ তাসরিফের কাছে দিয়েই ছুটে এসে কোলে তুলল তাকে। টুকরো টুকরো আদুরে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো তার ছোট্ট মুখশ্রী।নোশি এতদিন পর নিজের পাপাকে কাছে পেয়ে তার গলা জড়িয়ে মিষ্টি স্বরে ছোট্ট কন্ঠে বলল,,
——“তুমি এতদিন তোতায় ছিলে পাপা?”
নাহিয়ান মেয়ের মুখে আরেকবার চুমু দিয়ে বলল,,
——“পাপা একটু ব্যস্ত ছিলাম মাম্মাম!”
নোশি মুখ ফুঁলিয়ে বলল,,
——“তোমাল তিসের এত ব্যস তোআ তা হে?”
মেয়ের এমন কথায় হাসি সামলাতে পারল না নাহিয়ান। এইটুকু মেয়ের এত পাকা পাকা কথা! অবশ্য নোশি বয়সের তুলনায় একটু বেশিই পাকা কথা বলে!তার দিকে চেয়ে নাহিয়ান বলল,,
——“রাগ করেছ মাম্মাম?”
নোশি:“শুধু আমি না। মাম্মাও তোমাল উপল লাগ তলেছে!”
নোশির এমন কথায় নাহিয়ান একবার শিশিরের দিকে তাকালো।শিশির এখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। একবারের জন্যও তার দিকে তাকাচ্ছে না। নাহিয়ান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,
——“এটা তোমার মাম্মার অনেক পুরাতন অভ্যাস প্রিন্সেস! তার রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতেই আমি এত দূর এসেছি!”
ছোট্ট নোশি বুঝলো না পাপার এমন কথার মানে। বোকা দৃষ্টিতে তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নাহিয়ান মুচকি হেসে,একটা চকলেট তার হাতে দিয়ে বলল,,
——“এবার কি রাগটা কমেছে?”
নিজের প্রিয় চকলেট পেয়ে নোশি একগাল হাসলো। নোশির মুখে ও একটা বিউটি স্পট আছে, ঠিক শিশিরের মত। এই একটা জিনিসই মায়ের মতো তার। বাদবাকি হুবহু নাহিয়ান এর কার্বন কপি সে। নাহিয়ান তাকে কোলে করে নিয়ে এগিয়ে আসলো। একে একে সবার সাথেই কথা হলো তার। শুধু হলো না শিশিরের সাথে! হবেই বা কেমন করে? শিশির যে মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে চেয়ে আছে! নাহিয়ান নোশিকে নিঝুমের কোলে দিয়ে বলল,,
——“মাম্মাম, তুমি আজকে পিমনির সাথে যাও!”
নিঝুম অবাক হয়ে তাকালো নাহিয়ানের দিকে। তবে সে কিছু বলার আগেই পাশ থেকে নওরিফা খানম বলল,,
——“নিঝুর সাথে যাবে মানে? তুই বাসায় যাবি না?”
নাহিয়ান:“না মা একটা খুব ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।আগে সেটা সারি তারপর।”
নওরিফা খানম:“এখন কোনো কাজ নেই। কতদিন পর ফিরলি?চল আজকে বাসায় যাবি।”
নাহিয়ান:“ইটস আর্জেন্ট মা!”
নওরিফা খানম:“কোনো আর্জেন্ট ফার্জেন্ট কিছু নেই। বাসায় যেতে বলেছি যখন বাসায়ই যাবি!”
নাহিয়ান এবার ইমতিয়াজ চৌধুরীর দিকে চোখের ইশারা করে বোঝালো, নওরিফা খানমকে বোঝাতে। ইমতিয়াজ চৌধুরী নওরিফা খানমকে বললেন,,
——“বাসায় চলো রিফা! ও সময় মত চলে আসবে!”
নওরিফা খানম:“কিসের সময় মত?এতদিন পর এসেছে! তারপরেও কিসের এত ব্যস্ততা ওর?”
নাহিয়ান এবার নিজেকে সামলাতে পারল না। বেচারা সেই কখন থেকে চেষ্টা করছে মাকে বোঝানোর। কিন্তু নওরিফা খানম যেন পন করেছেন তিনি নাহিয়ানের কথা বুঝবেই না। শেষমেষ নাহিয়ান বলেই দিল,,
——“বউকে নিয়ে ঘুরতে যাব মা! এখন তুমি দয়া করে আমার মেয়েটাকে নিয়ে একটু বাসায় যাও।”
সকলের সামনে নাহিয়ানের আমার নির্লজ্জ কথা বার্তায় কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো নওরিফা খানম। ইমতিয়াজ চৌধুরী বলল,,
——“এজন্যই বলেছিলাম ছেলেকে বেশি ঘাঁটিওনা। চলো! না হলে তোমার যে ছেলে!না জানি আরো কত কি বলে বসবে!”
নওরিফা খানম, ইমতিয়াজ চৌধুরী আর নিঝুম বের হয়ে গেল। নোশিও লক্ষ্মী মেয়ের মত নিঝুমের সাথেই চলে গিছে। পিমনিকে হলে আর কাউকেই লাগে না তার। সবাই বের হয়ে যাওয়ার পর নাহিয়ান শিশিরের সম্মুখে এসে বলল,,
——“রাগটা কি একটু বেশিই হয়েছে ম্যাম?”
শিশির তার কথার জবাব না দিয়ে,গোমড়া মুখে বললো,,,
——“আমার রাগ দিয়ে আপনার কি আসে যায় মিস্টার? আপনার কাছে তো আপনার বিজনেসই সব তাই না? ঠিকমতো অনেকসময় কথাটা পর্যন্ত আমার সাথে বলার সময় হয় না আপনার!”
নাহিয়ান বুঝলে শিশিরের অভিমানের কারণ, অবশ্য এটা স্বাভাবিকই। এমনিতেই তার শিশিরবিন্দু একটু বেশিই অভিমানী, তার ওপর আবার ব্যস্ততার কারণে লাস্ট এক সপ্তাহে ঠিকমত কথা হয়নি তার সাথে। যদিও এটা নাহিয়ানের ইচ্ছা অনুযায়ী নয়,নোশির নামে বিদেশে একটা কোম্পানি ওপেন করতে চাচ্ছিলো সে,এজন্যই শেষ এক সপ্তাহ ভীষণ ব্যস্ততায় কেটেছে তার।
অবশ্য সেটাতে সে সফলও হয়েছে তবে এখন যে নিজের বউয়ের অভিমান ভাঙ্গাতে তাকে আরও দ্বিগুন কষ্ট করতে হবে সেটা তার ভালো করেই জানা। সে শিশিরের দিকে চেয়ে বলল,,
——“এই দেখো কান ধরছি, আর কক্ষনো এমনটা হবে না! প্রমিস!”
নাহিয়ান সত্যি সত্যিই দুই হাতে দু কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো।শিশির বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো, পুরো মিটিং প্লেস জুড়ে লোকজন গিজগিজ করছে। সবার অবাক দৃষ্টি তাদের উপর নিবদ্ধ। শিশির ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,,
——“কি করছেন টা কি?”
নাহিয়ান:“অভিমানী বউ টার রাগ ভাঙাচ্ছি!”
শিশির:“এক্ষুনি কান থেকে হাত নামান বলছি! আপনার কি কোনো কমনসেন্স নেই আশেপাশের লোকজন কি ভাববে?”
নাহিয়ান:“আশেপাশের লোকজন আমাকে ইম্পর্টেন্ট না ।আপাতত বউয়ের অভিমান ভাঙানো টা বেশি ইম্পর্টেন্ট!”
শিশির: “কি বললাম? কান থেকে হাতটা নামান!”
নাহিয়ান:“রাগটা কমেছে কি? সামান্যতম?”
শিশির বুঝলো এখন যদি সে না বলে তাহলে নাহিয়ান, এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে। এটা ভীষণ দৃষ্টিকটু লাগছে তার চোখে। হাজার হলেও এটা তার স্বামী। আর সবচেয়ে বড় কথা নাহিয়ান একজন সেলিব্রেটি পার্সন। এমন কোনো লোক নেই যে তাকে চেনে না। এভাবে যদি নাহিয়ান দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তার রেপুর্টেশনের কি হবে? শিশির দ্রুত বলল,,
——“হ্যাঁ হ্যাঁ কমেছে এখন হাতটা নামান!”
নাহিয়ান কান থেকে হাত নামিয়ে একগাল হেসে বলল,,
——“আলহামদুলিল্লাহ! তাহলে চলো বউ ঘুরতে যাওয়া যাক!”
শিশির:“কোথায়?”
নাহিয়ান:“যে দেশে চেনা জানা মানুষ কোনো নাই….. ইচ্ছে করে তোরে নিয়ে যাই….” তবে আপাতত বউ চলো কোনো এক নির্জন প্রকৃতি উপভোগ করে আসি!”
নাহিয়ানের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলল শিশির। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই তারা দেখতে পেল তাসরিফ ইতিমধ্যেই একটা বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছে সেখানে। নাহিয়ান কে তার বাইক বুঝিয়ে দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো তাসরিফ। নাহিয়ান মুচকি হেসে হেলমেটটা পরিয়ে দিল শিশিরকে। অতঃপর বাইক স্টার্ট দিয়ে দুই কপোত-কপতি মিলে এগিয়ে চলল এক অজানা গন্তব্যের দিকে।
খুলনায়……………
গাড়ি চলছে শহরের ব্যস্ততম সড়ক ধরে। ড্রাইভিং সিটে বসে দক্ষ হতে গাড়ি চালাচ্ছে নির্ঝর। পাশেই বসা ফারিন, কোলে দেড় বছর বয়সী ছোট্ট নিধি,পুরো নাম নিদ্রিতা চৌধুরী নীধি।বর্তমানে ফারিন ২৩ বছরের এক রমণী। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তবে শুধু বয়সটাই বেড়েছে তার, মানসিকভাবে এখনো সে ১৭ বছর বয়সী তরুণীই রয়ে গিয়েছে সে।
নিধী ঘুমাচ্ছে আপন খেয়ালে।ফারিন পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মেয়ের মাথায়, কখনো তাকাচ্ছে নির্ঝরের দিকে।পাঁচটা বছরে এই মানুষটার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। তবে এখনো রয়ে গেছে সেই প্রথম দিনের মতো যত্নটা, এখনো সে ফারিনকে ঠিক প্রথম দিনের মতই যত্ন করে,পড়তে পড়তে যখন ফারিন খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যায় তখন নির্ঝর নিজের হাতে খাওয়ায় তাকে।
সারাদিনের বিষণ্নতা শেষ সে যখন বিছানায় শরীর এলায়, তখন নির্ঝর নিজের নরম স্পর্শে আপন করে নেয় তাকে। নিজের ক্লান্তি শেষেও দিনশেষে নিধীকে সামলায় সে। একটা মেয়ের জীবনে এর থেকে বেশি আর কি বা প্রয়োজন? ফারিন মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নির্ঝরের দিকে, নির্ঝর নিজের ড্রাইভিং এ মনোনিবেশ করেই বলল,,
——“আমাকে না দেখে বইয়ের পাতায় একবার চোখ বুলাও, কিছুক্ষণ পরেই তোমার কোচিং এ টেস্ট আছে।”
নির্ঝরের কথায় ধ্যান ভাঙল ফারিনের। সে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলল,,
——“কিছু বলছিলেন?”
নির্ঝর তার দিকে চেয়ে বলল,,
——“বলছি যে ম্যাম, বইটা একটু দেখুন, কিছুক্ষণ পরেই আপনার কোচিংয়ে পরীক্ষা আছে আর আমরা সেখানেই যাচ্ছি। নিধিকেও তো রেখে আসলেন না।”
ফারিন মুচকি হেসে নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,
——“ও আসলে আজকে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তো, এজন্যই কান্না করছিলো আম্মুর কাছে যাচ্ছিল না। আর নিঝুমটাও তো নেই। আম্মু নিজেও অসুস্থ এজন্য আর রেখে আসিনি ওকে।”
নির্ঝর বুঝলো, আসলেও নিঝুমের অনুপস্থিতিটা অনেকটা ভোগাচ্ছে তাদের। নিঝুম থাকলে হয়তো নিধিকে সেই সামলাতো। কিন্তু কি আর করার?ঢামেকে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) চান্স পাওয়ার পর থেকেই তো সে নাহিয়ান মঞ্জিলের সদস্য হয়েছে। দুই তিন মাস অন্তর অন্তর হয়তো দুই একবার আসে। কিইবা করা যাবে একটা মেডিকেল স্টুডেন্টদের পক্ষে তো ঘুরে বেড়ানোটাও পসিবল না।হঠাৎই গাড়ির ব্রেক কষলো নির্ঝর। তারপর ফারিনের দিকে চেয়ে বলল,,
——“চলে এসেছি মিসেস!”
ফারিনের সাথে,সাথে সেও নামলো। কোচিং সেন্টার পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দিয়ে সেখানকার একজন টিচারের সাথে আলাপচারিতা শেষে,ফারিনের থেকে নিধিকে নিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলল,,
——“আমি নিচে ওয়েট করছি, মাথা ঠান্ডা করে পরীক্ষা দেবে কোনো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই নিধি আমার কাছেই থাকবে।”
ফারিন: “কিন্তু আপনার কলেজ…”
তৎক্ষণাৎ তার মনে পড়লো আজ শুক্রবার। শুধুমাত্র টেস্টের জন্যই তাদের কোচিংটা খোলা বাদবাকি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ বন্ধ। সে মুচকি হেসে বিদায় জানালো নির্ঝরকে।
শরতের নির্জন এক দুপুর গড়িয়ে যখন আবছা আলো চারপাশ ভরে তুলছিল, তখন শ্বেত শুভ্রতার এক সমুদ্রের কিনারায় এসে থামল নাহিয়ানের বাইক। শিশির বাইক থেকে নেমে হেলমেটটা খুলে মুগ্ধ নয়নে বিশ্লেষণ করতে লাগলো চারিপাশটা।
যতদূর চোখ যায়, শুধু কাশফুলের অফুরন্ত ঢেউ। বাতাসের এক মায়াবী ছোঁয়ায় সব ফুল একসঙ্গে দুলছে, মনে হচ্ছিল যেন সাদা পাখির পালক দিয়ে কেউ দিগন্ত পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে। আজ শুক্রবার হাওয়ায়,শ্বেত-শুভ্র সেই কাশবনের মাঝে জমেছে অসংখ্য রঙ্গিন কপতো-কপতির ভিড়।
শিশির মুগ্ধ নয়নে চারিপাশটা দেখতে দেখতে, এগিয়ে চলল নদীর তীরবর্তী বিশাল এক কাশফুলের সাম্রাজ্যে। এদিকে নাহিয়ান হেলমেট খুলতেই একদল তরুণ তরুণী ঘিরে ধরল তাকে। কেউ চায় ছবি তুলতে,কেউ বা চায় অটোগ্রাফ, শিশির হাঁটতে হাঁটতে ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে কাশফুলের বনটাতে, সে যখন নাহিয়ানের সাথে ফুলের সৌন্দর্য ভাগাভাগি করতে পিছনে ঘুরল তখনই দেখল নাহিয়ান সেখানে নেই।
শিশির বিক্ষিপ্ত নয়নে খুজতে লাগলো নাহিয়ানকে, তখনই তার চোখ গেল যেখানে তারা নেমেছিল ঠিক সেইখানটাতে,সেখানে জমায়েত হয়েছে এখানকার উপস্থিত প্রায় সকল তরুণ-তরুণীরা। কৌতূহলবশত শিশির দেখার চেষ্টা করল আসলে সেখানে হচ্ছেটা কি? তৎক্ষণাৎ তার চোখে পড়লো এক অস্বাভাবিক দৃশ্য,সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র রূপ ধারণ করল সে। ধুপধাপ পা ফেলে, ভিড় ঠেলে সে এগিয়ে গেল নাহিয়ানের দিকে। অতঃপর নাহিয়ানের আশে পাশে থাকা সবগুলো মেয়েকে একপ্রকারে ধাক্কা দিয়ে সে বলল,,,
——“হাউ ডেয়ার ইউ? তোদের সাহস কিভাবে হলো আমার স্বামীর কাছাকাছি আসার? আর একটা কেও যদি দেখেছিনা আমার নাহিয়ানের আশেপাশে, পুরো পুঁ’তে রেখে দেবো…!!”
শিশিরের এমন উগ্র আচরণে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়া মেয়েগুলো অবাক হলেও বউয়ের এমন জেলাসি দেখে ঠোঁট চেপে হাসছে নাহিয়ান।সবাই অবাক দৃষ্টিতে যখন শিশিরকে বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত তখনই পিছন থেকে একটা ছেলে বলে ওঠল,,
——“আচ্ছা স্যার এটাই কি আপনার সেই প্রাণনাশিনী, অর্থাৎ আমাদের শিশির ভাবি?”
প্রশ্নটা কে করেছে সেটা না দেখেই নাহিয়ান বলল,,
——“হ্যাঁ এটাই আমার প্রাণনাশিনী, আমার অর্ধাঙ্গিনী আমার বউ!”
অন্যান্য সময় হলে নাহিয়ানের এমন সম্মোধনে হয়তো লজ্জা পেতো শিশির। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভীষণ মেজাজ গরম হচ্ছে তার। সে ওই মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,,
——“শুনে নিয়েছিস? নাহিয়ানের বউ হই আমি!সো নজর নিচে রাখ! আর যদি কখনো ওর আশেপাশে দেখি না….!”
নাহিয়ান শিশিরকে সামলাতে বলল,,
——“হয়েছে বউ আর বলা লাগবে না।এমনিতেও ওরা বুঝে গিয়েছে যে তুমি আমার বউ!”
কথাটা বলতে বলতে নাহিয়ান শিশিরের গায়ে আলতো হাত বোলাতেই,নাহিয়ানের হাত এক ঝটকা মেরে সরিয়ে দিলো শিশির। নাহিয়ান অবাক হয়ে তাকাতেই শিশির বলল,,
——“ডোন্ট টাচ মি,আপনি তো একদম সরেই যান,ওরা না হয় আবেগের বশে কাজটা করে ফেলেছে। কিন্তু আপনি? নিজের বউ থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য মেয়েদের সাথে….! ছিঃ!”
নাহিয়ান বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শিশিরের দিকে। সে কখন কি করলো? সেই তো আরো সরে যেতে গিয়ে এখন আর নিজের বাইকের চাবিটা কোথায় ফেলেছে খুঁজে পাচ্ছে না। সে কিছু বলার আগেই শিশির তাকে ধাক্কা মেরে এগিয়ে চলল সামনের দিকে। নাহিয়ান কি করবে না করবে বুঝতে পারল না।
এদিকে শিশিরের কোনো কিছুতে কোনো খেয়াল নেই। রাগে অভিমানে চোখের কোনে জমেছে এক সমুদ্রসম নোনা জল। সে হাতে উল্টো তালু দিয়ে নিজের সর্বশক্তি ব্যবহার করে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি টুকু মুছে ফেলল। এরপর সামনের দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে নাহিয়ান জোরে গেয়ে উঠলো,,
🎶ওগো আমার সুন্দর মানুষ একটা কথা শোনো……
তুমি ছাড়া আমার যে নেই গতি কোনো……🎶
নাহিয়ানের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিছনে থাকা তরুণগুলো গেয়ে উঠলো,,
🎶ওগো আমাদের সুন্দর ভাবি একটা কথা শুনেন……
আপনি ছাড়া আমাদের স্যারের যে নেই গতি কোনো……🎶
পিছন থেকে ভেসে আসা এমন অদ্ভুত গানে শিশির না চাইতেও ঘুরে তাকালো, সঙ্গে সঙ্গে নাহিয়ান এগিয়ে এসে কান ধরে, হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো, শিশিরের সামনে। শিশির সেদিকে দেখেও না দেখার ভান করল। পিছন থেকে ছেলে মেয়েগুলো বলে উঠলো,,
——“মাফ করে দিন না ভাবি! আসলে আমরা বুঝতে পারিনি আপনি এতটা রেগে যাবেন!”
সকলের এত রিকুয়েস্টে মন গলে গেল শিশিরের। সে নাহিয়ানের দিকে ফিরে বলল,,
——“হয়েছেন এই নিন উঠুন এবার!”
নাহিয়ান উঠে দাঁড়াতেই সবগুলো ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে হুররে বলে চেঁচিয়ে উঠলো। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো শিশির।
সবাইকে যার যার মতো ছবি তুলতে ব্যস্ত। শিশিরের সাথেও বেশ সখ্যতা হয়েছে স্থানীয় কিছু বাচ্চা মেয়ের। তারা শিশিরকে আশপাশটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে, কখনো ছিড়ে এনে দিচ্ছে একঝাঁক কাশফুলের সাম্রাজ্য। শিশির তাদের সাথে কথার ছলে প্রায়শই মুচকি হাসছে যার দরুন তার বিউটি স্পটটা দৃশ্যমান হচ্ছে বারংবার। নাহিয়ান বিমোহিত নয়নের চেয়ে আছে তার দিকে।
ঠিক তখনই একদল ছেলে একটা গিটার এনে নাহিয়ানের হাতে দিয়ে বলল,,
——“স্যার তাহলে শিশির ভাবিকে নিয়ে একটা গান হয়েই যাক!”
অন্য কোনো বিষয় হলে হয়তো নাহিয়ান না করতে কিন্তু ব্যাপারটা যেহেতু শিশিরকে নিয়ে,তাই সে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,,
——“হয়েই যাক তাহলে!”
কিছুক্ষণ বাদে……….
শিশির কাশফুল গুলো নরম ছোঁয়ায় নিজেকে আবৃত করছে। চারিদিকে ভাসছে তার হাসির রিনরিনে শব্দ। হুট করেই তার কানে ভেসে আসে নাহিয়ানের গানের সুর,,
🎶 ফুরিয়ে যাক না সময় তোমাকে দেখে দেখে……
আবেগি হোক না জীবন সুখেরই গল্প লিখে…..
শুধু তোমায় নিয়ে আমি সাজাই…..
এ মনের সব জল্পনা…..
আমি তোমার হতে চাই এটা মিথ্যে কোনো গল্প না….🎶
নাহিয়ান তার চারিদিকে গিটার হাতে গানটি গাইতে গাইতে ঘুরতে থাকে। উপস্থিত সবাই অবাক চক্ষু মেলে তাকিয়ে থাকে তাদের এমন প্রেম পূর্ণ মুহূর্তটারর দিকে।
সু দীর্ঘ ২ ঘণ্টার টেস্ট শেষে, কোচিং থেকে বের হল ফারিন। অসুস্থতার কারণে আজ নেহাঅনুপস্থিত আর লিসা,আরা দুজন এখন দুই প্রান্তের মানুষ। তাদের আর খুলনায় চান্স হয়নি। লিসার চান্স হয়েছিলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর আরার ময়মনসিংহে। কি দারুন ফ্রেন্ডশিপ ছিল তাদের আর এখন আর তাদের সাথে দেখা পর্যন্ত হয় না।এসব ভাবতে ভাবতেই নিচ তলায় এসে পৌঁছে ফারিন।
হঠাৎ তার চোখ যায় অপেক্ষমান নির্ঝরের দিকে। সে ব্যস্ত নিধির সাথে দুষ্টামি করতে, কখনো টুকরা টুকরা চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে তার গাল,ছোট্ট নিধিও কি জানি ভেবে হেসে চলেছে খিলখিলিয়ে।ব্যাস মুহূর্তেই বিগত দুই ঘন্টার ক্লান্তি দূর হলো ফারিনের। মুচকি হেসে সে এগিয়ে আসলো নির্ঝরের দিকে। তাকে দেখে নির্ঝর নিধির সাথে খুনসুটি থামিয়ে বলল,,
——“টেস্ট কেমন হলো?”
ফারিন:“আলহামদুলিল্লাহ ভীষণ ভালো। কিন্তু এখানে তো দেখছি আমাকে ছাড়াই বাবা আর মেয়ে খুনসুটিতে মত্ত হয়েছে।”
নির্ঝর নিধির দিকে চেয়ে বলল,,
——“আমাদের দুষ্টামির জন্য মাম্মাম কে লাগে না তাই না মাম্মা?”
ছোট্ট নিধি হেসেই চলেছে তখন থেকে। অন্যদিকে নির্ঝরের এমন কথায় ফারিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,,
——“হয়েছে বুঝেছি,এখন চলুন আমার প্রচুর মাথায় যন্ত্রণা করছে!”
নির্ঝর:“চলো, কিন্তু বাসায় যাবে? আমি তো ভেবেছিলাম একটু…..”
ফারিন গাড়িতে উঠে বসতে বসতে বলল,,
——“সেটা না হয় অন্য কোনো একদিন যাব আজকে প্রচুর মাথা যন্ত্রণা করছে আমার। আর নিধির শরীরটাও ভালো না।”
নির্ঝর নিধিকে ফারিনের কোলে দিয়ে বলল,,
——“বাব্বা! এত ম্যাচিউর কবে থেকে হলে?”
ফারিন:“হয়েছি হয়েছি, যেদিন থেকে আপনার বাচ্চার মা হয়েছি সেদিন থেকেই হয়েছি!”
নির্ঝর ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,,
——“বাট আই মিস মাই ইমম্যাচিউর বউ!”
গাড়ি চলছে ব্যস্ততম সড়ক দিয়ে। হুট করেই ফারিনের দৃষ্টিগত হলো একটা আইসক্রিমের গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে সে নির্ঝরের উদ্দেশ্যে বলল,,
——“থামুন থামুন!”
ফারিনের এমন চিৎকারে তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামালো নির্ঝর। বিস্মিত কন্ঠে বলল,,
——“কি হয়েছে?”
ফারিন:“আইসক্রিম….”
কথাটা বলতে গিয়েও থমকালো ফারিন। কেননা কিছুদিন আগেই জ্বর থেকে উঠেছে সে। এখন যদি সে আবার নির্ঝরের কাছে আইসক্রিম খেতে চায় তাহলে নিশ্চিত বিনামূল্যে এক ঝুড়ি বকা শুনবে তার থেকে। তবে এখন আইসক্রিমটাও ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে তার। হাজার হলেও আইসক্রিম লাভার গার্ল বলে কথা! যে কোনো পরিস্থিতিতেই হোক আইসক্রিম তো তাকে খেতেই হবে!কি করবে না করবে ভাবতে ভাবতে হুট করেই সে বলল,,
——“ইয়ে মানে… নিধি আইসক্রিম খেতে চাচ্ছিল!”
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলল,,
——“হোয়াট?”
ফারিন:“কিসের আবার হোয়াট? নিধি বলছিল আইসক্রিম খাওয়ার কথা তাই বললাম। এখন যদি আপনার ইচ্ছা না করে তাহলে দিয়েন না!”
অতঃপর সে নিধির দিকে চেয়ে বলল,,
——“চল মা তোমার পাপা আইসক্রিম দিবে না!”
নির্ঝর ফারিনের এমন কথায় কপালে হাত ঢুকলো। সে খুব ভালো করেই জানে আইসক্রিমটা ফারিনেরই ইচ্ছে করছে! কিন্তু এই মুহূর্ত আইসক্রিম খাওয়া কি ঠিক হবে? সে যখন নিজের সাথে এক প্রকার তর্ক বিতর্কে তখন ফারিন দ্রুত বলল,,
——“এতসব কি ভাবছেন? আইসক্রিমের গাড়িটা তো চলে যাচ্ছে!”
নির্ঝর বুঝলো এই মেয়েকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হবে না। কি আর করার গাড়ি থেকে নেমে ফারিনের পছন্দের স্ট্রবেরি ফ্লেভারের দুইটা কোন আইসক্রিম কিনে আনল সে। ফারিন মহানন্দে গ্রহণ করলে তা। নির্ঝর স্বাস্থ্য সচেতন হলেও, ফারিনের এমন হাসিতে স্বাস্থ্য সচেতন বোধ যেন লোক পেল তার। সে নিজেও অন্য একটা আইসক্রিম ফারিনের সাথে চেয়ারস করে খেতে শুরু করলো।
——“রিশ বাবা এইটুকু নাও, দেখো আর এক চামচ আছে বাবা, কখন থেকে মাম্মা দৌড়ে চলেছে,কষ্ট হচ্ছে তো,এইটুকু নাও বাবা!”
কথাটা বলতে বলতেই চার বছর বয়সী দুরন্ত রিশভের পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে ২৪ বছর বয়সী এক রমণী। দুরন্ত রিশভ সোজা দুই তলার দিকে দৌড় দিয়ে বলল,,
——“আমি আর খেতে পারব না মাম্মা! বাকিটা তুমি খাও!”
আনায়াও পিছু করলো রিশভের। এই ছেলেকে নিয়ে হয়েছে যত জ্বালা, এত দুষ্টু!কখনো শান্ত থাকতে পারে না সে।রিশ দৌড়াতে দৌড়াতে রিদিতের কাছে এসে থামলো। ল্যাপটপে একটা জরুরী ক্লায়েন্ট কনফারেন্স শেষে সবে নিজের রুমের নরম সোফাটাতে গা এলিয়ে দিয়েছে রিদিত। ছেলেকে এমন হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসতে দেখে সে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,
——“কি হয়েছে পাপা?”
রিশ কিছু বলার আগেই খাবারের বাটি হাতে রুমে ঢুকলো আনায়া। রিশের দিকে চোখ রাঙিয়ে সে বলল,,
——“সেই কখন থেকে ডাকছে তোকে? আমার কি আর কোনো কাজ নেই? সারাদিন তোর পিছন পিছন ঘুরবো আমি? খেয়ে নে বলছি!”
মায়ের এমন শাসানিতে তে রিশ গিয়ে রিদিতের পিছনে লুকালো।রিদিত আনায়ার দিকে ফিরে বলল,,
——“কি হয়েছে এত রাগ করছ কেন?”
আনায়া তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,
——“কি হয়েছে মানে?আপনার ছেলেকে কখনো সামলিয়েছেন? পাজির পাজি হয়েছে একটা! কখনো যদি আমার একটা কথা শুনে!”
রিদিত:“হয়েছেটা কি?”
আনায়া: “সেই সকাল থেকে ওর পিছন পিছন আমি ঘুরছি ওকে খাওয়ানোর জন্য! আর ও সারা বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছে। এমন করলে আমি কিভাবে পারব বলুন?”
রিদিত:“ওহ এই ব্যাপার?”
সে রিশের দিকে ফিরে বলল,,
——“খেয়ে নাও পাপা, একটুকুই তো!”
রিশ তীব্র বেগে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,,
——“আমি খাব না মানে খাবোই না!”
আনায়া এগিয়ে এসে বলল,,
——“আপনি সরুন তো।ওর সাথে ভালো কথায় আর কাজ হবে না।”
আনায়া যেই না রিশের এগিয়ে গেল অমনি, সোফা থেকে উঠে এক ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিশ। আনায়াও তার পিছনে যেতে গেলেই পিছনে রিদিত তার শাড়ির আঁচলে এক টান দিল। ভারসাম্য হারিয়ে অনায়া পড়ে গেল রিদিতের কোলে। সে দ্রুত সেখান থেকে উঠতে গেলেই রিদিত তাকে আরেকটু কাছে টেনে দূরত্ব ঘুচিয়ে বলল,,,
——“পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছো তো দেখছি? তা সব সময় কি ছেলের খোঁজ খবরই রাখবে?নাকি একটু স্বামীর দিকেও নজর দিবে?”
আনায়া:“আপনার ছেলে যে বিচ্ছু হয়েছে! তাকে সামলাতে গিয়ে নিজের খোঁজখবরই রাখার সময় হচ্ছে না।”
রিদিত:“তাই বলে একবারও এই অসহায় স্বামীটার দিকে খেয়াল করবা না? দেখো সে তোমার অভাবে কতটা শুকিয়ে গেছে!”
আনায়া লাজুক হেসে বলল,,
——“তাই নাকি? তো আমি কি করতে পারি?”
রিদিত তার গলায় মুখ গুঁজে যেতে দিতে বলল,,
——“আপাতত কিছুক্ষণ তার সাথে থাকলেই হবে!”
আনায়া ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলল,,
——“কি করছেন কি?রিশ কোথায় গেল কি জানি আর রুমে দরজাটাও খোলা!”
রিদিত ততক্ষণে নিজের মুখটা আনায়ার গলায় সম্পূর্ণরূপে ডুবিয়ে দিয়েছে,ঘোর লাগানো কন্ঠে সে বলে উঠলো,,
——“এই প্রহরটা শুধু তোমার আর আমার আয়নিন! তাই এখন এদিকে কেউ আসবে না। আর রইল বাকি রিশের কথা, দেখো সে তার দাদুনের সাথে গল্প করছে।”
আনায়া:“কিন্তু!”
রিদিত:“উসসসস,,,, কোনো কিন্তু না।”
আনায়া থমকালো সেই সাথে থমকে গেল রুমের বায়ু প্রবাহ। কেবলএক জোড়া কপতো-কপতির উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দে মুখরিত হলো রুমটা।
ঘড়ির কাটায় রাত আটটা চলমান…..
কোচিং থেকে ফিরেই ভীষণ মাথায় যন্ত্রণা করছিল ফারিনের। কোনমতেই স্থির হয়ে থাকতে পারছিল না সে। পেইন কিলার খাওয়া সত্ত্বেও মাথা ব্যাথাটা যেন কমার নামই নিচ্ছিল না। প্রায় ঘন্টা তিনেক একটানা ঘুমিয়েছে সে। নিধি তার দিদার, আর ছোট দিদার সাথে খেলায় করছে। সেই সুযোগেই একটু বাইরের হাওয়া গায়ে লাগাতে ছাদে এসেছে সে।
নিধি বেশিরভাগ সময়ই শিউলি হকের কাছে থাকেন। কেননা শিউলি হক বাড়ির এত মানুষের মধ্যেও বড্ড একা। নিজের একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে এক প্রকার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। অবশ্য ইয়ালিনার এমন অসময়ে চলে যাওয়াটা মানতে পারেনি চৌধুরী আবাসনের কেউই…!! অমন তাজা একটা প্রাণের অকাল ঝরে পড়া…! তা কি কভু মানা যায়?
সেদিনের সেই সড়ক দুর্ঘটনা যেখানে গাড়িটা দুমড়ে মুচরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নিয়েছিল চৌধুরী আবাসনের একটি তাজা প্রাণ!!! কথাগুলো মনে পড়লে এখনো হৃদয় ভারাক্রান্ত হয় ফারিনের। বুক চিড়ে দীর্ঘনিঃশ্বাসেরা একযোগে বেরিয়ে আসে।ফারিন আর মনে করতে চায় না সেই দিনের কথা, স্মৃতির পাতা থেকে একপ্রকার মুছে ফেলার অদম্য প্রয়াস চালায় সে! তবুও সেসব চিন্তারা বারংবার হানা দেয়। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের পানে তাকালো ফারিন।
আজকের প্রকৃতিটা অসম্ভব সুন্দর। শরতের আকাশে আজ চাঁদ তারা আলো ছড়াচ্ছে পূর্ণোদ্যমে। চারিপাশ জুড়ে নিস্তব্ধ প্রকৃতি, কৃত্রিম আলোর মাঝে জোনাকির মৃদু আলোক ঝলকানি। হঠাৎই মনটা ভীষণ ভালো হয়ে উঠল তার। কেন যেন মনে হলো এমন একটা পরিবেশে প্রিয় মানুষটার সাথে এক কাপ আদা দেওয়া লাল চা ভাগ করতে পারলে মন্দ হতো না। যাইহোক!! পরিবেশটা গান গাওয়ার জন্য একদম পারফেক্ট লাগছে তার । নিজ মনে গুনগুনিয়ে সে গেয়ে উঠলো,,,
🎶আজকে হাওয়া ছন্নছাড়া….আজকে হাওয়া বেবাগী…
আজকের সময় খোশমেজাজি…..আজকের সময় সোহাগী..🎶
তার গানের কলিগুলো বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিছন থেকে ভেসে আসলো আরেকটা কন্ঠ,,
🎶 মাঝে মাঝে তোর কাছে… জেনে শুনে হেরে যাই!!
কিছু কথা বলে ফেলি…কিছু কথা ছেড়ে যাই….🎶
পরিচিত কন্ঠে পিছনে ঘুরতেই ফারিন দেখতে পেলো তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তার শ্যামপুরুষটা। হাতে দুইটা চায়ের কাপ। ফারিনকে দেখে এগিয়ে আসলো সে। আবারও সে গেয়ে উঠলো,,
🎶 অচেনা সকাল হোক… উদাসী বিকেল হোক…
বারে বারে মনে হয় তোর হাতে মরে যাই….🎶
ফারিনও মুচকি হেসে নির্ঝরের দিকে ফিরে গেয়ে উঠল,,,
🎶 মাঝে মাঝে তোর কাছে… জেনে শুনে হেরে যাই!!
কিছু কথা বলে ফেলি…কিছু কথা ছেড়ে যাই….🎶
নির্ঝর:🎶 তুই না এলে আর কি হবে আমার… সেসব কথা খুলতে গেলে কান্না পায়… যন্ত্রনা হাজার করছে পারাপার তোর দু চোখের তোর চিবুকের ব্যস্ততা……🎶
ফারিন:🎶 মাঝে মাঝে তোর কাছে… জেনে শুনে হেরে যাই!!
ওও…মাঝে মাঝে তোর কাছে… জেনে শুনে হেরে যাই!!
কিছু কথা বলে ফেলি…কিছু কথা ছেড়ে যাই….🎶
নির্ঝর:🎶 অচেনা সকাল হোক… উদাসী বিকেল হোক…🎶
ফারিন:🎶বারে বারে মনে হয় তোর হাতে মরে যাই….🎶
নির্ঝর মুচকি হেসে এগিয়ে আসলো তার দিকে,হাতের চায়ের কাপটা ফারিনে হাতে দিতেই;ফারিন সেদিকে চেয়ে উৎফুল্ল কন্ঠ বলল,,,
——“আদা চা?”
নির্ঝর চোখের ইশারায় বুঝালো হ্যাঁ!
ফারিন:“আপনি কি করে বুঝলেন,আমার আদা চা খেতে ইচ্ছা করছিল?”
নির্ঝর ফের চোখের ইশারায় বুঝালো এমনি! নির্ঝরের এমন ইশারায় মুচকি হাসলো ফারিন!ছাদের দোলনাটায় বসলো তারা। আকাশে বিশাল রূপালী থালার ন্যায় চাঁদ। হঠাতই ফারিন নিজের মাথা রাখলো নির্ঝরের প্রশস্ত কাঁধের উপর। যেন সেখানেই নিজের শ্রেষ্ঠ আশ্রয় খুঁজে পেল সে। নির্ঝরও মুচকি হেসে অতি যত্নে আপন করলো তার সহধর্মিনী কে।
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষেও একদণ্ডও ছুটি নেই তার। সারাদিন হাজারও ছোটা ছুটি শেষে এখন ফের পড়তে বসতে হয়েছে তাকে। আল্লাহই ভাল জানে কেন যে সে মেডিকেলে এডমিশন পরীক্ষা টা দিল? আর পরীক্ষা দিলে যে চান্স পেয়ে যাবে এটা জানলে হয়তো কখনোই সে মেডিকেল এডমিশন পরীক্ষাটাই দিত না। নিজের মনে এইসবই চিন্তা করছিল আর কপাল চাপড়াচ্ছিল নিঝুম..!
হঠাৎ তার ফোনে বেজে ওঠে মেসেজের টুংটাং শব্দ। বিরক্তি চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই ভেসে ওঠে,,
“আ মেসেজ র্ফম মিস্টার ইন্ট্রোভার্ট।”
মুহূর্তেই দলা পাকিয়ে থাকা কপালের চামড়া শিথিল হলো তার। হালকা হেসে মোবাইলটা হাতে নিয়েই মেসেঞ্জারে ঢুকলো সে। সকাল থেকে প্রায় ৫০ টার উপরে ম্যাসেজ এসেছে সৌজন্যের প্রোফাইল থেকে। তাকে একটিভ দেখে দ্রুত একটা মেসেজ লিখল নিঝুম।
“কি ব্যাপার মিস্টার ইন্ট্রোভার্ট? মিস করছেন নাকি? এতগুলো মেসেজ! ওএমজি।”
মেসেজ পৌঁছানোর সাথে সাথে ওই পাশ থেকে সৌজন্যে রিপ্লাই,,
“থাকো কই তুমি হ্যাঁ? সকাল থেকে কত মেসেজ দিলাম রিপ্লাই কোথায়?”
এ পাশ থেকে নিঝুমের টাইপিং,,
“আমি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট মিস্টার, সো আমার কাছে না মেসেজের রিপ্লাই দেওয়ার মতো অত সময় থাকে না।আর আপনি জানেন না আজকে ভাইয়া আসছে। কত কাজ ছিল জানেন?”
ওই পাশ থেকে সৌজন্য,,
“আইছে আমার মেডিকেল স্টুডেন্ট রে! আমার তো ইঞ্জিনিয়ারিং এর লাস্ট ইয়ারেও এত পড়াশোনা নেই যতটা তুমি মেডিকেলের ফার্স্ট ইয়ারে থেকে দেখাচ্ছ। ও হ্যাঁ শুনেছিলাম ভাইয়া আসছে! আমরাও কালকে আসার চিন্তাভাবনা করছি!”
নিঝুম,,“ইঞ্জিনিয়ারিং কোনো সাবজেক্ট হলো! একজন মেডিকেল অফিসারের কত দাম জানেন? আর আপনি যে ইঞ্জিনিয়ার হবেন তা আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে! আল্লাহর ওয়াস্তে কখনো তো দেখি না যে আপনি একটু পড়ছেন; সারাদিনই নেটে থাকেন!”
সঙ্গে সঙ্গে ওই পাশ থেকে রিপ্লাই,,
“বাজে কথা বন্ধ করো! আর হ্যাঁ তুমি কি বাসায়? আই মিন আজ তো শুক্রবার তো কোচিং নেই! সো টাইম আছে তোমার কাছে?”
নিঝুম,,“হ্যাঁ আজকে কোচিং নেই কিন্তু সেটা দিয়ে আপনার কি?”
“ফ্রি টাইম আছে তোমার কাছে?”
“না…হ্যাঁ! কিন্তু আমার ফ্রি টাইম দিয়ে আপনার কি?”
“ওকে তাহলে একটু নিচে এসো, আমি ওয়েট করছি। তোমাদের বাসার নিচে!”
“কি!!!আপনি বাসার নিচে?”
“হুম!”
“তো ভেতরে আসছেন না কেন?”
“এখন ভেতরে আসলে শিশির আপুকে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা এখন গেলে আর ভাইয়া, আন্টি আংকেল কেউই আমাকে আসতে দেবে না। তাই তুমিই আসো!”
“কিন্তু আপু যদি টের পায়?”
“পরের কথা পরে দেখা যাবে আগে নিচে তো এসো! মশার কামড়ে পা দুইটা ফুলে বোধ হয় 2 কেজি ওজন বেড়ে গেল আমার!”
“ওকে ওয়েট,আমি আসছি!”
নিঝুম দ্রুত নিজের বই খাতা বিছানার উপর থেকে সরিয়ে। ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
নিঃশব্দে গেট খুলে, বের হলো নিঝুম। দারোয়ান রমজান আলী চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাদ বাকি কেউ এখন গেটের কাছে নেই। তাইতো সহজেই বেরুতে পেরেছে সে। বের হয়ে নিঝুম দেখতে পায় হেলমেট মাথায় নিজের বাইকের হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সৌজন্য। তাকে দেখে নিজের মাথায় ওড়নাটা আরেকটু টেনে দিয়ে এগিয়ে আসে নিঝুম।
নিঝুম:“কি হলো এত রাতে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
সৌজন্য:“ও তুমি এসেছ, সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি!”
সে দ্রুত বাইকে বসে হেলমেটটা এগিয়ে দেয় তার দিকে। নিঝুম অবাক হয়ে বলে,,
——“এটা আবার কিসের জন্য?”
সৌজন্য:“দ্রুত এটা মাথায় দিয়ে বাইকে বসো, নতুন একটা রেস্টুরেন্টের ওপেনিং হয়েছে আজ,আমাদের ফ্রেন্ডের একটা মিউজিক শো আছে সেখানে।”
নিঝুম:“আপনাদের ফ্রেন্ডদের মিউজিক তো আপনি যান।সেখানে আমি গিয়ে কি করবো?”
সৌজন্য:“তোমার যাওয়া লাগবে মানে লাগবেই।আর কোনো কথা না দ্রুত ওঠো।”
নিঝুম মনের মাঝে চলমান ভীতিগুলো কিছুটা দমিয়ে একপ্রকার জোর করেই সৌজন্যের বাইকে চড়ে বসলো। মনে হাজারটা শঙ্কা কাজ করছে তার যদি কেউ দেখে ফেলে?তবে সে বসতেই দ্রুত বাইক টান দিয়ে তাকে নিয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল সৌজন্য।
এদিকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সবটাই লক্ষ্যপাত করছিল শিশির। সৌজন্য নিঝুমকে একসাথে যেতে দেখেও কিছু করল না সে। সৌজন্যরা চলে যেতেই নোশিকে ডাকার জন্য যেই না সে পিছন ঘুরতে যাবে তৎক্ষণাৎ পিছন থেকে তাকে জাপ্টে ধরল নাহিয়ান। তার কাঁধে অসংখ্য প্রেম পরশ এঁকে দিল! হঠাৎ তার এমন স্পর্শে কিছুটা কম্পিত হলো শিশির।তবে নাহিয়ান নিজের কার্যক্রম আবিরত রেখেই বলল,,
——“আচ্ছা বউ কেমন হয় যদি আমাদের পরিবারে নতুন আরেকজন সদস্য আসে?”
শিশির অবাক কণ্ঠে বললো,,
——“মানে?”
নাহিয়ান:“এই ধরো যদি আমাদের নোশির খেলার সঙ্গী হিসেবে তার একটা ছোট্ট বোন বা ভাই আসলো!”
শিশির বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো তার দিকে। তা দেখে নাহিয়ান বলল,,
——“কেন তুমি চাও না?আমাদের পরিবারে আরেকজন সদস্য আসুক!”
শিশির:“একদমই না!”
নাহিয়ান:“ওকে,নো প্রবলেম! তোমার ইচ্ছাটাই আমার জন্য ইম্পর্টেন্ট!”
নাহিয়ানের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী হঠাৎই মলিনতায় ঢেকে গেল। তা দেখে শিশির নিজের দুই পা নাহিয়ানের পায়ের উপর রেখে, সামান্য উঁচু হয়ে তার গলা জড়িয়ে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,
——“কারন আপনি আবারও বাবা হতে চলেছেন মিস্টার সিইও!”
নাহিয়ান বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো। দুই হাতে শিশিরের কোমর জড়িয়ে বলল,,
——“সিরিয়াসলি?”
শিশির মুচকি হেসে বলল,,
——“জ্বী!”
নাহিয়ান শিশিরের কোমড় জড়িয়ে তাকে সামান্য ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল,,
——“আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ বউ!”
শিশির ও মুচকি হেসে বলল,,
——“লাভ ইউ টু স্বামীজান!”
ঠিক তখনই রুমে প্রবেশ করলো নোশি। বাবা-মা কে এমন অবস্থায় দেখে সে অবাক হয়ে বলল,,
——“পাপা তুমি মাম্মাকে তেনো তোলে নিয়েছো? তোলে তো উতবো আমি!”
মেয়ের এমন কথায় মুচকি হাসলো শিশির নাহিয়ান দুজনেই। শিশির নাহিয়ানের দিকে চেয়ে বলল,,
——“দেখেছেন মেয়ে পুরোই আপনার মতই হিংসুটে হয়েছে!”
নাহিয়ান:“হুম দেখছি তো।”
শিশির:“নামান আমায়!”
নাহিয়ান:“আরেকটু রাখি!”
শিশির:“নোশি আছে!”
নাহিয়ান:“তাতে কি?”
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৬০
শিশির মুগ্ধ নয়নে তাকালো নাহিয়ানের দিকে।
শিশির:“কেন এত ভালবাসেন আমায়? মাঝে মাঝে আমার ভীষণ ভয় হয়, যদি আপনি হারিয়ে যান, সমাপ্তি ঘটে এই ভালোবাসার!”
নাহিয়ান তার কপালে দীর্ঘ প্রেম পরশ একে দিয়ে বলল,,
“তোমার আমার ভালবাসা এক কিনারাহীন সমুদ্দুর….সেই ভালোবাসার সাক্ষী হতে পারবে কেবলমাত্র…এক #মাঝরাতের_রোদ্দুর!”