মায়াকুমারী পর্ব ৩২
মেহেরিন আনজারা
ততক্ষণে আরো বেশ কিছু মানুষ জড়ো হলো। ওদের চারপাশে মানুষ ঘিরে ধরলো। হঠাৎই ভিড়ের মধ্য থেকে একটা হাত এগিয়ে আসলো নিশুর দিকে। অশ্লীলভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করলো অবশ্য নিশুর ওদিকে খেয়াল ছিল না। আকস্মিক ঘুষি পড়লো লোকটির মুখে। হতভম্ব হয়ে গেল সবাই। বিস্ফোরিত হয়ে তাকালো ওরা দু’জন। দেখলো একটা লোককে সমানে ঘুষি মারছে ধ্রুব। আতঙ্কে গলা শুকিয়ে এলো। কয়েকজন লোক ছাড়িয়ে নিলো লোকটিকে এবং পুলিশের হাতে সোপর্দ করলো। নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো ধ্রুব। সাহস কত! পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই ফিতা দেওয়া হলো কাটার জন্য। ওই ব্যপারে ভীত থাকলেও আনন্দে হাত কাঁপতে লাগলো দু’জনের। কখনো কি ভেবেছিল এমন কিছু হবে! বাকি পার্টনাররাও ওদের পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন। নারী বলে সম্মান দিয়ে ওদেরকে সামনে দিয়ে ফিতা কাটতে আহ্বান করলেন। ইমোশনাল হয়ে পড়লো নিশু এত সম্মান দেওয়ায়। অতঃপর রঙবেরঙের এক হাজার বেলুন উড়িয়ে সবাই মিলে কেঁচি ধরলো নিশু-দ্যুতির সঙ্গে। একসঙ্গে ফিতা কাটতে লাগলো।
“এই সর সর! ফিতা আম্বানি ফিতা কাটতাছে! হ্লার ঘরের হ্লারা সর কইতাছি!”
এমন একটা মুহূর্তে অনিককে আশা করেনি কেউ। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আসাদ সাহেব,ধ্রুব-ধূসরের। ভড়কায় নিশু-দ্যুতি।
“লাইট! ক্যামেরা! অ্যাকশন! ফিতা আম্বানি দ্রুত ফিতা কাটো!”
মেজাজ খারাপ হলো দ্যুতির। এটা এখন মজা করার সময়? ভীতসন্ত্রস্ত হয় নিশুও। মানইজ্জত সব শেষ! অনিক কি বুঝে না তার এইসব পাগলাটে কাজকর্ম ঠিক কতটা লজ্জাদায়ক দ্যুতির জন্য।
“এই তোরা কেউ হাসবি না পাপির দল! এটা বাংলাদেশের সেরা আম্বানি বংশের ভিডিও! চুপ! চুপ! একদম চুপ! ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দাঁতে দাঁত চাপলো ধ্রুব। ভিডিও করতে লাগলো অনিক। সে কি মুড! দ্যুতিকে ইশারা দিলো নিশু ফিতা কাটতে।
“ফিতা আম্বানি তাড়াতাড়ি ফিতা কাটো!”
শ্বাস আঁটকে রইলো দ্যুতি। পিএইচডি প্রাপ্ত একটা শিক্ষিত ছেলের এমন ইমম্যাচিওর বিহেভিয়ার নিতে পারলো না কেউই! দ্যুতি তো নয়ই! তার বাবা-ভাইদের সামনে সে ঠিক কতটা অপমানিত হচ্ছে বুঝতে পারছে না মানুষটা? ভরপুর একটা অনুষ্ঠান নষ্ট করে দিলো! ভীষণ কান্না পায় দ্যুতির। বুক ঠেলে কান্না এলো। নিশুর মুখখানিও মলিন হয়ে গেল। কেন এমন করছে অনিক! নিজেকে ধাতস্থ করে ফিতা কাটতেই ফুলবর্ষণ,আতশবাজি এবং বেলুন ফুটাতে লাগলো। ফিতা কেটে ভিতরে ঢুকে গেল ওরা। চোয়াল শক্ত করে অনিকের সামনে দাঁড়ালো ধ্রুব।
“ওরেম্মা! এটা কি স্বপ্ন দেখতেছি! স্বয়ং ইগো আম্বানি,সরি মাইকা বোবা আম্বানি,সরি মুডিবয় আম্বানি ধূৎ! দোস্ত কী নাম রাখতাম বলতো?”
“প্রথমটাই রাখ।”
“ওকে।”
“এই তোর লজ্জা নেই?”
“না।”
“তোর ভেতর নম্রতা,ভদ্রতা,সভ্যতা কিছুই নেই?”
“একদম নাই পাপির দল সরি ইগো আম্বানি।”
“ফাজলামো করছিস?”
“চেতিস না ইগো আম্বানি!”
চোয়াল শক্ত করলো ধ্রুব। আচমকা কলার চেপে ধরলো অনিকের।
“সিনক্রিয়েট করতে এসেছিস?”
“ইগো আম্বানি শোন,ভাবতাছি তোর বোনটাকে বিয়ে করবো।”
“সাট আপ!”
“এখন তোর বোনটাকে দিবি নাকি বউটাকে?”
দাঁত-মুখ পিষিয়ে চোয়াল শক্ত করে আরো জোরে কলার চেপে ধরলো।
“মুখ সামলে।”
“আমার কিন্তু দুজনকেই খুব পছন্দ! আমি কিন্তু মানব দরদী আর উদার মানুষ। ইশরে! কইতে শরম লাগে তো! বাই দ্যা ওয়ে,এবার তোর ইগো কমিয়ে হয় বোনটাকে আর না হয় বউটাকে বিয়ে দিয়ে আমার সম্মন্ধি হয়ে যা। তাহলে আমিও নম্র-ভদ্র-সভ্য চরিত্রে মণ্ডিত হয়ে তোকে দেখিয়ে দিবো ওখে!”
ভিতর থেকে দৃশ্যটি দেখলো দ্যুতি। এই না মারপিট লেগে এত সুন্দর অনুষ্ঠান আর না দিনটিই পণ্ড হয়ে যায়। ভীতসন্ত্রস্ত হলো,অস্থির অস্থির লাগছে! সারা শরীর কাঁপছে! কম্পিত হাতে পার্স থেকে ফোন বের কল দিলো ধ্রুবকে পিক করলো না। ওদের বাকবিতণ্ডা শোনা যাচ্ছে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে দ্যুতির। বুক ঠেলে ভীষণ কান্না পায় কিন্তু পারছে না আঁটকে রেখেছে। ব্লক খুলে লাগাতার কল দিলো অনিককে,সেও পিক করলো না। অসহ্য লাগছে দ্যুতির। ভয়ে ভয়ে কল দিলো ধূসরকে। ধূসর নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওদের সামনে। পিক করলো।
“ভাইয়া দাঁড়িয়ে রইলে কেন? বড় ভাইয়াকে থামিয়ে নিয়ে আসো। নয়তো আমি যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে চলে যাবো এখন।”
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো। এগিয়ে এলো ধূসর।
“ভাইয়া ওকে ছাড়ো,সিনক্রিয়েট করো না। ও হচ্ছে একটা পাগল! তারছিঁড়া!”
ছাড়িয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
“তোকে আমি দেখে নিবো মাইন্ড ইট!”
“আমিও তোর বোন কিংবা বউকে ভাগিয়ে নিয়ে যাবো।”
ততক্ষণে ভাইরাল হয়ে গেল পিকচার এবং ভিডিওগুলো। দেখতেই বাইক নিয়ে ছুটে এলো আবির। আবিরকে দেখতেই মেজাজ খারাপ হলো অনিকের।
“এই তুই ছ্যাঁছড়া আম্বানি না?”
চোয়াল শক্ত করলো আবির।
“মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ।”
“হ্লা তোর কী কাজ এখানে?”
“খুব বেড়েছো তুমি!”
হঠাৎ কল এলো। পিক করতেই চেঁচিয়ে উঠলো বুশরা।
“কী শুরু করলে তুমি?”
“কী করলাম গীতা?”
“ফাজলামো করছো কেন? মানসম্মান নেই তোমার?”
“চুপ কর গাধী!”
“পাগল-ছাগল!”
ঠিক সে-সময় চেম্বার থেকে বেরিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তানজিল। একটু দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে উঠে একটা গাছের পাতা ছিঁড়তেই,”প্রেম করেন ভালা কথা কিন্তু গাছের পাতা ছিঁড়েন এটা কোন ধরনের রোমান্স ভাই?”
চমকায় তানজিল।
“এক্সকিউজ মি কী বলছেন?”
“বয়রা আম্বানি!”
“কী বললেন?”
“বয়রা আম্বানি।”
“বয়রা আম্বানি! এক্সকিউজ মি! কী বলছেন আপনি এইসব?”
“হ্লার ঘরের হ্লা নাটক করোস?”
“হাউ ডেয়ার ইউ!”
“বাংলা কুত্তা ইংরেজি ঘেউয়ায়!”
দাঁতে দাঁত চাপলো তানজিল।
“সিরিয়াসলি আপনি এইসব কী বলছেন?”
“আমার হবু বউ ফুল ছিঁড়লে তোমার সমস্যা তুমি যে প্রেম করতে করতে পাতা ছিঁড়ো ওইটা সমস্যা না? ফিরিতে জ্ঞান দিতাছো?”
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো তানজিল।
“সিরিয়াসলি আপনি এইসব কী বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”
“কয়টা মাইয়ার লগে টাইম পাস করো?”
“এক্সকিউজ মি! কী বলছেন এইসব?”
“এই দুই-তিনটা ইংরেজি ছাড়া আর কিছু পারো না?”
মেজাজ খারাপ হলো তানজিলের।
“আপনি একটা পাগল!”
“আমার হবু বউ ফুল ছিঁড়লে তোমার এত সমস্যা ক্যান?”
“আশ্চর্য! কী বলছেন আপনি?”
“একটু আগে যে বললা,গাছের ফুল গাছে সুন্দর মনে নাই কিছু?”
চমকিত নয়নে তাকায় তানজিল। ও তারমানে এই কাহিনী! হবু বউ বলতে ঠিক কী বুঝতে পারলো না। ফের কল আসায় আর কিছু না বলে পিক করে হাঁটতে লাগলো।
“হ্লার ঘরের হ্লা! আমার বউ ফুল ছিঁড়লে তোর বাপের কী! ভাড়াটিয়া ভাড়াটিয়ার মতো থাকবি তা না ফাইজলামি করোস! সুন্দরী মাইয়া দেখলেই জ্বীভ লকলকায়!”
শুনতে পেয়ে চোয়াল শক্ত করলো তানজিল।
“ওর ভাই আরেকটা আছে কী জানি নাম! ও পরকীয়া আম্বানি! হ্লা বিবাহিত মেয়ে দেখলেই প্রেমে পড়ে। এবার সেটা যার বউই হোক! মনে করো আমার শালা বৌয়ের প্রেমে পড়ছে! হ্লা পরকীয়ার রাজা সরি প্রেমে পড়া আম্বানি সরি পরকীয়া আম্বানি।”
তখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটা। দ্যুতিদের বাসায় এলেন আদনীন ফেরদৌস। উনাকে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে পারলেন দিলরুবা খাতুন। হাসি মুখে আদর-আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। এক-দুই কথায় জানতে পারলেন নিশুকে উনার ভীষণ পছন্দ! ইনিয়ে-বিনিয়ে জানিয়ে দিলেন পুত্রবধূ করতে চান। তখনি মুখটা পাংশুটে বর্ণ ধারণ করলেও প্রকাশ করলেন না। আগ বাড়িয়েও তেমন কিছু বললেন না। নিশুর আসার অপেক্ষায় রইলেন এবং নানান গল্পগুজব করতে লাগলেন। ঠিক তখুনি উনাদেরকে অবাক করে এলেন তাহিয়া বেগম। উনাকে দেখতেই চমকালেও স্থির রইলেন। তাহিয়া বেগম ভণিতা না করে সোজাসুজি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। নড়েচড়ে বসলেন দিলরুবা খাতুন। কীভাবে যে সামলাবেন বুঝতে পারছেন না। তবুও মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। আজ হাঁটে হাঁড়ি ভাঙ্গবেন বলে পণ করলেন তিনি। এভাবে তো আর হয় না।
রাত তখন প্রায় সাড়ে আটটা। সেদিকের ঝুট-ঝামেলা শেষে ঠিক প্রথমবারের মতো আরো একবার গ্রাউন্ড ফ্লোরের শপটি উদ্বোধন করলো ওরা দু’জন। শপটির নাম,নিশুতি এন্ড দ্যুতিধারা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে আসাদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো নিশু। কখনো ভাবতে পারেনি রাজধানীর বুকে তার নামেও কিছু একটা থাকবে। হতে পারে সেটা তুচ্ছ কিছু তবুও অতীব আনন্দে খুব কান্না করলো নিশু। শান্তনা দিলেন আসাদ সাহেব। ভোজের আয়োজন করা হয়েছে গেস্টদের জন্য। ডাক পড়তেই সেদিকে যেতে বললেন। সায় দিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো নিশু। একটু আড়াল হয়ে চোখের জল মুছে স্বাভাবিক হলো। আচমকা টান পড়তেই চমকে উঠে পড়লো বুকে। ভড়কায় নিশু। মাথা তুলতেই দেখলো ধ্রুব। মুখে বাঁকা হাসি। কোমর পেঁচিয়ে ধরলো।
“কী শুরু করলে,ছাড়ো বলছি! ছাড়ো! কেউ আসবে দেখে ফেলবে!”
“দেখুক!”
ছোড়াছুড়ি করলো কিন্তু পারলো না শক্ত করে ধরে রাখলো। লাল টুকটুকে ঠোঁট দুটো দেখতেই আবারও চোখজোড়া চকচক করে উঠলো।
“এত সেজেছিস কেন?”
“কই সাজলাম?”
“সেজেছিস নিজের ইচ্ছায় আর এদিকে আমি ম’রে খুন হয়ে যাচ্ছি সেই খবর রাখিস!”
“কী বললে?”
ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। হতভম্ব হলো নিশু। উম উম করতে লাগলো। শব্দটা শুনতেই ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত ছুটে এলো ধূসর। ওদের ওমন অবস্থায় দেখতেই দ্রুত সরে গেল। কিছুই বুঝতে পারছে না তার ভাইয়ের। আশ্চর্য! ডিভোর্স না দিলে সোজা সংসার শুরু করবে তা না করে রাস্তা-ঘাটে,চিপায়-চাপায় কী যে শুরু করলো! মেজাজ খারাপ হলো। এইসব রোমান্স করার জায়গা! আজব! চতুর্দিকে তাকালো আদোও সিসি ক্যামেরা আছে কি-না! টেবিলে গিয়ে গম্ভীর হয়ে বসলো। মাথা নুয়ে ফোন চাপতে লাগলো। দ্যুতির ডাক পড়তেই ছেড়ে দিলো নিশুকে। ভীষণ রাগ হলো নিশুর।
“কী শুরু করলে যেখানে সেখানে চুমু খাচ্ছ! নির্লজ্জ!”
কোমর পেঁচিয়ে আবারও টান দিয়ে কাছে এনে দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে ধরলো। তর্জনী রাখলো ঠোঁটে। স্লাইড করতে লাগলো। চোখ বুজে ফেললো নিশু।
“তোমার ঠোঁট আর আমার ঠোঁট পারফেক্ট কম্বিনেশন! তাই যেখানে-সেখানে তোমাকে চুমু খেতে ইচ্ছে করে মায়াকুমারী!”
চমকিত নয়নে তাকায় নিশু। তুমি সম্বোধন করায় শ্বাস আঁটকে এলো। ছোট্ট একটা শব্দ অথচ তার পুরো হৃদপিণ্ডে তোলপাড় সৃষ্টি করে দিলো। পকেট থেকে লিপস্টিক বের করলো। ঠোঁটে লাগিয়ে দিতেই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।
“কোথায় পেলে?”
“আমার বউয়ের ইউজ করা জিনিস আমার কাছেই তো থাকবে তাই না!”
শ্বাস আঁটকে রইলো নিশু।
“বউ!”
প্রতিত্তোর করলো না।
“লিপস্টিকটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে!”
বাঁকা হেসে চলে গেল ধ্রুব। সোজা টেবিলে এসে গম্ভীর হয়ে বসলো। একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো ধূসর। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ধীরাজ বলল,”তোমার মুখে আবারও লিপস্টিক লেগেছে। তাড়াতাড়ি মুছো!”
কান গরম হয়ে গেল ধ্রুবর। নিজেকে ঠিক করে চেয়ারে এসে বসলো নিশু।
“এতক্ষণ কই ছিলি?”
“ওদিকে।”
“খাওয়া শুরু কর। তোদের জন্য অপেক্ষা করছি! বাসায় গিয়ে রোমান্স করতে পারবি।”
মাথা নুয়ে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো নিশু। একটু আগে একটা পোস্ট দিয়েছিল দ্যুতি। কমেন্টগুলো চেক করতেই চোখ আঁটকে গেল।
“ঢাকা শহরে কোনো আপু বা আন্টি আজ রাতে রিয়েল বা ফোন সার্ভিস লাগলে ইনবক্সে আসেন। আমি ফ্রী আছি।”
মেজাজ খারাপ হলো দ্যুতির। এইসব অভদ্র লোকদের জন্য ফেইসবুক ইউজ করা দিনকে দিন ট্রাফ হয়ে যাচ্ছে। সেও দাঁতে দাঁত চেপে রিপ্লাই দিলো,”যদি তোর মা-বোন নক করে বসে তাহলে তুই কি তাদের সার্ভিস দিবি নাকি তোর অন্য ফ্রেন্ডদেরকে কল করে বলবি কোনটা করবি বল বজ্জাত?তোরে পাইলে আমি ঝাড়ু দিয়ে পিটাবো!”
হঠাৎ ভিডিও কল এলো বুশরার। চটুল মেজাজে পিক করে গ্লাসের সঙ্গে মোবাইল রাখলো। স্ক্রীনে ভেসে উঠলো ওদের দু’জনের মুখ।
“কী করছিস তোরা?”
“ডিনার করছি তুই করবি?”
“দেশে থাকলে চলে আসতাম মিস করতাম না।”
“ভার্সিটি নেই?”
“আজ যেতে ইচ্ছে করছে না। আমার খুব মনখারাপ!”
“কেন?”
“তোদের সঙ্গে আমি নেই। একা একা এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না। মন চাচ্ছে পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে চলে আসি।”
“আর কয়টা দিনই তো!”
“একটা দিন এক বছরের মতো পার হচ্ছে আমার।”
মৃদু হাসলো ওরা।
“নিশুর কী খবর?”
“ভালো।”
“তোর সঙ্গে কে?”
“মেজ ভাইয়া।”
“কই দেখি!”
“এই তো!”
“অনেকদিন দেখি না দেখা তো!”
মুখ টিপে হেসে মোবাইল রাখলো ধূসরের সামনে। মেজাজ খারাপ হলো তার। গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো খেতে লাগলো। মন ভরে দেখতে লাগলো ধূসরকে। একপলক তাকাতেই মেজাজ খারাপ হলো। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। নাইটি পরে রয়েছে বুশরা তাও আবার ফিতা খোলা। এত কেয়ারলেস কেন যে মেয়েটা!
“নিশু ফোনটা সরা।”
“এই সরাবি না।”
চোয়াল শক্ত করলো ধূসর।
“রাগ দেখাচ্ছেন কেন?”
“ফোনটা সরা নিশু।”
“কেমন আছেন আপনি?”
প্রতিত্তোর করলো না।
“কী খাচ্ছেন? আপনি খুব সুন্দর করে খাবার খান। আপনাকে খাবার খেতে দেখে এখন আমারও খেতে ইচ্ছে করছে!”
নীরব রইলো ধূসর।
“আপনার টেম্পার সবসময়ই কি হাই থাকে নাকি আমাকে দেখলে কোনটা?”
“ফাজলামো না করে ড্রেস ঠিক করো।”
“দেখতে খারাপ লাগছে?”
“আয়নায় দেখো।”
“আপনিই তো আমার আরেক আয়না।”
“নিশু ফোন সরা।”
“এই সরাবি না।”
“সরা বলছি!”
“সরাবি না।”
“পাগলের বোন পাগলি।”
“আপনার জন্য।”
মিটিমিটি হাসতে লাগলো নিশু। খাবার অসমাপ্ত করে উঠে গেল দ্যুতি।
“কীরে খাবি না?”
“ওয়াশরুমে যাবো।”
“আচ্ছা,আমি আসবো?”
“না। ভাইয়া ওয়াশরুম কোন দিকে?”
“ওদিকে।”
সেদিকে এগিয়ে গেল দ্যুতি। বকবক করতে লাগলো বুশরা। কতশত প্রশ্ন করতে লাগলো নীরবে হজম করতে লাগলো ধূসর। এই মেয়ের আবার ব্ল্যাকমেইল করার বদঅভ্যাস রয়েছে। অনেকক্ষণ হলো ওয়াশরুমে গেল দ্যুতি কিন্তু ফিরলো না। খাবার রেখে সেদিকে এগিয়ে গেল নিশু। দেখলো কেউই নেই। চমকায় নিশু। অস্থির হয়ে খুঁজতে লাগলো। লক্ষ্য করলো শপিংমল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দ্যুতি। ছুটে দ্যুতিকে ফলো করতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে চতুর্দিকে তাকালো দ্যুতি। জানে এখানে কোথাও অনিক আছে। সত্যিই তাই! ফুটপাতে বাইকের উপর শুয়ে গান গাচ্ছে; ওর গ্যাংরাও ঠিক তেমন। এগিয়ে গেল দ্যুতি। আচমকা অনিকের মাথার তালুর চুলগুলো মুঠ করে ধরতেই ভড়কে উঠে লাফিয়ে উঠলো।
“কোন শালিরে!”
চোয়াল শক্ত করে তাকালো দ্যুতি। শান্ত তবে চোখ দিয়ে আগ্নেয়গিরি বেরুচ্ছে।
“তোমার চোখের মরণ ফাঁদে যেই দিয়েছি ডুব,
আর পারিনি উঠতে তলিয়ে গেছি খুব!”
দাঁতে দাঁত চাপলো।
“ওহে বালিকা! তুমি ময়দা মেখে গায়ের রং বদলালে কিন্তু মন তো বদলালে না! আমার চুল কেন ধরলে?”
“এখানে কী?”
“তুমি এত সন্দেহ করো কেন আমাকে? আমার বাকি গার্লফ্রেন্ডগুলো তো এমন করে না!”
“তোকে সন্দেহ করতে আমার বয়েই গেছে। এই তুই ভালো হবি না?”
চমকায় অনিক।
“মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ।”
“তুই যদি করোনা ভাইরাসের সময় মাস্ক ব্যবহার না করতি তাহলে আজ তোকে দেখা লাগতো না। এত ঝামেলা দেখতে হতো না। বল তখন মাস্ক কেন ব্যবহার করলি?”
“কী বললে?”
“ঠোঁটকাটা আম্বানি।”
“আর ভালো নাম পাইলা না?”
“আমাকে তখন কী বললি?”
“মিথ্যা বললাম কই! ফিতা কাটছো তাই ফিতা আম্বানি।”
হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো দ্যুতি।
“আচ্ছা তোরা কি বুঝিস না তোদের যে ছাপড়ির মতো লাগে?”
“একদম না।”
“মানুষ হবি কবে?”
“আশ্চর্য! আমি তো মানুষই।”
“তখন এমন করলি কেন?”
“কেমন করলাম?”
“আমার প্রেস্টিজ কেন নষ্ট করলি?”
“এত সাজসজ্জা করে কাকে দেখাতে এলে?”
“তোকে বলবো কেন?কে তুই?”
কলার চেপে ধরলো।
“একবার জিন্সের প্যান্ট পরলা কিছু বলিনি এখন আবার পাবলিক প্লেসে এত সেজেগুজে কেন এলে?”
“তাতে তোর বাপের কী?”
“অনেক কিছু।”
আরো জোরে কলার চেপে ধরলো।
“আমার পারসোনাল ব্যপারে ইন্টারফেয়ার করবি না ওকে!”
“একশোবার করবো।”
ছুটে এলো নিশু।
“দ্যুতি কী হচ্ছে এইসব?”
মায়াকুমারী পর্ব ৩১
“ওকে শিক্ষা দিবো।”
“পাগল নাকি এটা রোড। আরে মানুষ দেখছে তো!”
“দেখুক!”
“ছেড়ে দে। সিনক্রিয়েট করিস না প্লিজ।”
গুরুত্ব দিলো না।
“বল আমার ব্যপারে কেন নাক গলাস?”
“আমার ইচ্ছে হয়েছে।”