মায়াকুমারী পর্ব ৫৮
মেহেরিন আনজারা
নিজেকে ধাতস্থ করে দ্রুত নিশুকে বুকের সঙ্গে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ধ্রুব। তার স্পর্শে নিশুর কাঁপন কিছুটা কমল।
“নিশু,কী হয়েছে?”
ধ্রুবর কণ্ঠে ব্যথা ও উদ্বেগ মিলেমিশে ঘুরছে। নিশু কিছু বলল না। চোখ-মুখ কেমন ফ্যাকাশে,নিঃশব্দ দুঃখে ভারাক্রান্ত। উপলব্ধি করল নিশুর ভিতরে কোনো অদৃশ্য ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
“ভয়ের কিছু নেই,চল।”
শান্ত করার চেষ্টা করল কিন্তু চোখের কোণে উদ্বেগের ছায়া লুকানো যায় না। নিশুকে পাঁজাকোলে তুলে ধ্রুব ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল। নিশু ঝিম মেরে আছে কিন্তু শরীরটা ধ্রুবর সঙ্গে পুরোপুরি মিলেছে,যেন সে বুঝে গিয়েছে এই মুহূর্তে তার নিরাপত্তা শুধু ধ্রুবর হাতে। গাড়িতে উঠল ওরা। ধ্রুব মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল,চোখে এক ধরনের দায়িত্ববোধ ও সংকল্প। নিশুর কোমল শ্বাস,হালকা কাঁপন- সবকিছু তার মনকে আরও শক্ত করল। বাসার গেটের সামনে পৌঁছাতেই ব্রেক কষল ধ্রুব। গাড়ি থেকে বেরোল ওরা। দ্যুতি আর বুশরাকে ইঙ্গিত করে বলল,”বাসায় যা তোরা। আব্বা-আম্মার খেয়াল রাখিস,দ্যুতি। আর নিশুমনি আমার সঙ্গে থাকুক। ওর বিশ্বাস নেই কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে বসে।”
মাথা নেড়ে দ্যুতি সম্মতি জানাল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“মনে করে ওকে ঔষধগুলো খাইয়ে দিও।”
“যা।”
বাসায় ঢুকল ওরা। ওদের দেখা অব্ধি তাকিয়ে রইল ধ্রুব। ধীরাজকে ফোন করে বলল,”ওদের দু’জনকে বাসায় পাঠিয়েছি। আব্বা-আম্মা সহ ওদের খেয়াল রাখিস। দ্যুতির দিকে নজর দিস,ও আপসেট আছে।”
সায় দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করল। নিশুকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল এবং স্টার্ট দিলো। হসপিটালে থাকাটা তার যেমন জরুরি তেমনি এই বিপদের মুহূর্তে বাসায় বাবা-মা,ভাই-বোন,স্ত্রীর সঙ্গে থাকাটাও জরুরি। কিন্তু সে অপারগ। মানুষ মাত্র একজন। কয়দিকে সামলাবে? হসপিটালে না থাকলে ধূসরের ক্ষতি করতে পারে ইফতেখার মির্জা। টাকা কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে-কোন ডাক্তার,নার্সকে ব্ল্যাকমেইল করে তার ভাইকে হ’ত্যা করতে কার্পণ্য করবে না মানুষটা। মানুষ স্বার্থের বেলায় অন্ধ,পিশাচ হয়ে যায়। ইফতেখার মির্জা তার ছেলে-মেয়ের জন্য সব করতে প্রস্তুত। যেমনটা প্রস্তুত সে-ও তার পরিবারের স্বার্থে।
গভীর রাত। হাসপাতালের লম্বা করিডোর নিস্তব্ধ,কেবল দূরের কোনো ওয়ার্ড থেকে শোনা যাচ্ছে অক্সিজেন মেশিনের টুকটুক শব্দ আর মাঝে মাঝে নার্সদের নরম পায়ের আওয়াজ। ছাঁদের নিচে ঝুলে থাকা সাদা বাতি এক ধরনের ম্লান,ঠান্ডা আলো ফেলছে করিডোরের মেঝেতে। কাচের জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়েছে ধ্রুবর কাঁধে। চাঁদ যেন দূরের কোনো অবাক দর্শক,সব নীরবতা দেখে যাচ্ছে। ধ্রুবর কোলে মাথা রেখে গুটিশুটি হয়ে রয়েছে নিশু। দীঘল,কালো চুলের ভাঁজে ভাঁজে আঙুল বুলিয়ে দিচ্ছে ধ্রুব। কখনো হালকা,কখনো অন্যমনস্ক হয়ে। বাইরে মৃদু হাওয়া বইছে। ঠান্ডা সেই হাওয়া এসে ওদের শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। ধ্রুবর আঙুলেও কাঁপন ধরাচ্ছে। দূরের কোনো বাগান থেকে কাঠগোলাপের ঘ্রাণ ভেসে এসে মিশে যাচ্ছে হাসপাতালের সাদা গন্ধে আর একটা অদ্ভুত,অচেনা ঘোর তৈরি করছে চারপাশে। হঠাৎ বুকের ভিতরটা টনটন করে ওঠে ধ্রুবর। নিশুকে আরেকটু কাছে টেনে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরল যেন এই অচেনা জায়গায় একমাত্র নিজের মানুষটিকে আঁকড়ে আছে। নিশুও দু’হাতে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরল। গালের পাশে আলতো করে চুমু খেল ধ্রুব। চুমু নয় যেন আশ্বাস,ব্যথা থেকে মুক্তির ছোট্ট ওষুধ।
“নিশুর বাচ্চা!”
“হুঁ!”
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে নিশু হালকা সাড়া দেয়,চোখের কোণে ঝিলিক দিয়ে ওঠে। ধ্রুব হাত তুলে নিজের খরশান চোয়ালে আঙুল বুলায়,কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,”পুরোপুরি আমার হবি কবে বল?”
“দশ বছর বয়সে তোমার জন্য কবুল বলার পর থেকে আমি শুধু তোমার। পুরোপুরি,সবটাই তোমার।”
বাইরে চাঁদের দিকে তাকায় ধ্রুব।
“আমার জন্য বউ সাজবি কবে?”
“সেজেছিলাম তো একবার।”
“দেখার আগেই তো তোর দেবরের কাঁধে চড়ে চলে গেলি।”
“ধুর! অসভ্য একটা।”
লাজুক হয় নিশু। লজ্জায় গালদুটো লাল হয়ে গেল। হেসে ফেলল ধ্রুব।
“মিথ্যা কী বললাম?”
“তোমার মাথা।”
করিডোরে নীরবতা জমে আছে। তাদের কথার ফাঁকে ফাঁকে যেন এই নিস্তব্ধতা শ্বাস নেয়।
“আর কত দূরে দূরে থাকবি?”
“তোমার কাছেই তো আছি।”
“দূরত্ব ঘুচাবি কবে?”
“যখন খুব করে চেয়েছিলাম,তখন তো চাওনি। ইগো দেখিয়েছ। এখন থাকো এইভাবে আর আফসোস করো।”
“নিশুর বাচ্চা!”
“একদম ভণিতা করো না।”
চুপ হয়ে গেল ধ্রুব। দু’জনের মধ্যেকার নীরবতা যেন হাসপাতালের দেয়াল ভেদ করে বাইরের রাতের গভীরে হারিয়ে যায়।
“পরিস্থিতি ঠিক হোক,সবাই সুস্থ হোক।
“তো কী করবে?”
“দূরত্ব ঘুচাব।”
“আমাকে তো দেখতে পারতে না। মুখও দেখতে চাওনি। এখন এত তাড়াহুড়ো কেন?”
“তুই আমার বউ।”
“আমার রূপের প্রেমে পড়েছ বুঝি?”
“তুই সুন্দরী নাকি!”
“কী বললে?”
চট করে বুক থেকে সরে সোজা হয়ে বসল নিশু। চোখের পাতা কেঁপে ওঠল।
“আমি সুন্দরী না?”
“তো কী?”
অভিমানে নিশুর চোখে জল এসে ভেসে ওঠে।
“তো আমার কাছে কী? যাও না তোমার ওই প্রেমিকা- এ্যানি,নীলির কাছে।”
“গেলে তো সহ্য করতে পারবি না।”
নিশুর চোখ থেকে টুপটুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল।
“না পারার কী আছে?”
“মায়া দিয়ে বেঁধে ফেলেছিস,নিশুর বাচ্চা!”
“শোনো,নাটক করো না।”
“প্রচুর জ্বালিয়েছিস তুই। তোর জন্য একরাতও ঘুমাতে পারিনি।”
“কী করেছি আমি?”
“কানের মধ্যে মাইক লাগিয়ে কাঁদতি। যা অভিশাপ দিয়েছিস সোজা হয়ে গিয়েছি।”
নাক টানল নিশু। হাত ধরতেই সরে গেল। মেয়েটা একটু বেশিই আহ্লাদী- অল্পতেই কেঁদেকেটে ভাসিয়ে ফেলে।
“সরো.. ছুঁবে না।”
তবুও জোর করে কাছে টেনে নিলো।
“তোকে না দেখে ভালোবেসেছি,নিশুর বাচ্চা। ভালোই হয়েছে আমার সামনে আসিসনি। দেখলে নয়ত আবার বলতি আমি রূপের পাগল।”
বাইরের রাত আরও গভীর হয়ে এলো। করিডোরের জানালায় জমে থাকা শিশিরের মতো তাদের দু’জনের কথা,নীরবতা আর স্পর্শ গলে গিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ধ্রুবর চোখে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে কিন্তু শান্তি দিচ্ছে। নিশুর গায়ে মিশে থাকা কাঠগোলাপের ঘ্রাণ যেন হাওয়ায় ভেসে এসে স্মৃতির মতো স্পর্শ করছে ধ্রুবর হৃদয়।
“আজকের এই রাত,চাঁদ,চাঁদের আলো,ফুলের সুবাস- সবই তোর আর আমার জন্য।”
নিশু কিছু বলতে পারল না।
“এই মুহূর্তটা যেন থেমে থাকে আজীবন।”
ধ্রুব হাতের আঙ্গুলগুলো নিশুর চুলের ভাঁজে বুলিয়ে দেয়,বুকের সঙ্গে আরও আঁকড়ে ধরে।
“ঠিক যেমন চাঁদের আলো সব অন্ধকার ভেদ করে,তেমনই আমি সব বাঁধা ভেদ করব,নিশু.. শুধু তোর জন্য।”
বাইরের হাওয়ায় কাঠগোলাপের সুবাস ছড়িয়ে যায়,যেন সময়ও থেমে গিয়েছে। হাসপাতালের সাদা দেয়াল আর করিডোরের নিস্তব্ধতা যেন এক মৃদু আলোর ক্যানভাস,যেখানে তাদের ভালোবাসা চিরন্তন হয়ে রঙে রঙে ফুটে উঠেছে।
“আজকের এই রাত,এই চাঁদ,আমাদের ভালোবাসা- সবই চিরস্থায়ী হোক। চিরন্তন হোক,নিশু.. আমাদের জন্য।”
সকালবেলা। হাসপাতালের করিডরে নীলাভ আলো ছড়িয়ে পড়ছে,যেন প্রতিটি দেয়াল,মেঝে আর ছাঁদ এক অদ্ভুত শান্তির আবরণে মুড়ে আছে। জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের প্রথম রোদ্দুর সাদা দেয়ালে দোল খাচ্ছে,হালকা ছায়া তৈরি করছে। বাইরে থেকে কাঠগোলাপের গন্ধ ভেসে আসছে কিন্তু এই সুগন্ধও যেন করিডরের নিস্তব্ধতায় কোনো উষ্ণতা দিতে পারছে না। বাতাসে শিশিরের আর্দ্রতা,পাখির কিচিরমিচির- সবই এখানে নিঃশব্দ,যেন অস্তিত্ব হারিয়ে গিয়েছে। ধ্রুব আর নিশু ধীরে ধীরে করিডরের শেষে এগোচ্ছে। ধ্রুবর চোখে ক্লান্তি,বুকের ভিতর দুশ্চিন্তার ভার। নিশুর হাত কেঁপে কেঁপে ধ্রুবর হাতের সঙ্গে জড়ানো। সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে,ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের- সিসিইউ ০৫ নম্বর কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াল। ধ্রুব নিশুর দিকে তাকাল; তার মুখ ফ্যাকাশে,কাঁপা ঠোঁট যেন কোনো অদৃশ্য প্রার্থনা উচ্চারণ করছে। নিশু নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না,চোখের কোণে জল জমেছে। হঠাৎ ভেতর থেকে কোলাহল। একজন নার্স দ্রুত বেরিয়ে এলো,চোখ আতঙ্কে বড়।
“ডাক্তার সাহেব! রোগীর পালস ড্রপ করছে.. শ্বাস থেমে আসছে!”
ধ্রুব আর নিশু হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। ভেতরের যন্ত্রপাতির তীক্ষ্ণ শব্দ- বীপ.. বীপ.. বীপ.. কেবল করিডরের দেয়ালেই না,মনে পর্যন্ত আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিলো। হঠাৎ শব্দটি দীর্ঘ হয়ে গেল,যেন এক অশনি সংকেত। ডাক্তাররা ছুটে এলেন। ভেতরের কক্ষ থেকে ভেসে এলো এক ভয়ানক গর্জন-
“অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে যাচ্ছে! ভেন্টিলেটর চেক করো,তাড়াতাড়ি! কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট- সিপিআর শুরু করো!”
একজন নার্স কম্পিত গলায় বলল,”প্রেশার একেবারে শূন্যের দিকে যাচ্ছে,ডাক্তার সাহেব!”
চট করে ধ্রুবর হাত আঁকড়ে ধরল নিশু। ধ্রুবর বুক ধড়ফড় করতে লাগল। মনে হলো,বুকের ভিতর থেকে রক্ত উঠে মাথায় চলে আসছে। ভেতরের ডাক্তার মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে,”চেস্ট কমপ্রেশন- ওয়ান,টু,থ্রি.. ডিফিব্রিলেটর আনো!”
তারপর বজ্রপাতের মতো শব্দ,”শক দাও!”
ধপ করে কেঁপে উঠল ভেতরের যন্ত্র। ধূসরের দেহও হয়তো লাফিয়ে উঠল কিন্তু বাইরে শুধু আতঙ্কে জমাট বেঁধে থাকা নিস্তব্ধতা। ধ্রুব আর নিশুর শ্বাস আঁটকে গেল। প্রতিটি শব্দ যেন তাদের আত্মার ভিতরেও ভয় ঢুকিয়ে দিলো। ভোরের হাসপাতালের শান্তি মুহূর্তের মধ্যে পরিণত হলো মৃত্যুভয়ের থিয়েটারে।
“শক দাও,সেকেন্ড টাইম!”
ডিফিব্রিলেটর আবারও বুকে লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ধূসরের দেহ ঝাঁকুনি খেয়ে উঠল। মনিটরের শব্দ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল,তারপর আবার ঝিকমিক করে উঠল,বীপ- বীপ- বীপ। নার্সরা হাঁপাতে হাঁপাতে ডাক্তারকে সাহায্য করছে। কারও মুখে রঙ নেই।
“স্যার,সাড়া দিচ্ছে না.. পালস এখনও নেই।”
“তৃতীয়বার প্রস্তুত করো! ওকে হাতছাড়া করা যাবে না!”
বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ধ্রুব-নিশু প্রতিটা শব্দে ভেঙে পড়ছে। নিশু ছটফট করতে করতে চিৎকার করল,”ভাইয়াকে বাঁচান! আল্লাহর দোহাই,আমার ভাইয়াকে ফিরিয়ে দিন!”
তার কান্নায় হাহাকার ছড়িয়ে পড়ল চতু্র্দিকে। নিশুকে আঁকড়ে ধরল ধ্রুব। শক্ত হয়ে থাকলেও সে নিজেই কাঁপছে। ছোট ছোট ডাক্তার-নার্সও থেমে তাকাচ্ছে,যেন নিশুর কান্না তাদের বুকের ভিতরেও কম্পন তুলছে।
“আল্লাহ.. আল্লাহ,ওকে বাঁচাও। আমার ভাইয়াকে বাঁচাও।”
ঠিক তখনই ডাক্তারের মরিয়া ও তীক্ষ্ণ কণ্ঠ ভেসে এলো,”থার্ড শক নাও!”
হঠাৎ ধূসরের দেহ কেঁপে উঠল। চারপাশে নিঃশ্বাস আঁটকে গেল। মনিটরে এক মুহূর্ত নিস্তব্ধতার পর ঝিকমিক করে উঠল এক ক্ষীণ রেখা। নিশু হু-হু করে কাঁদছে,ধ্রুব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। মনে হচ্ছে,ভোরের আলোও ম্লান হয়ে গিয়েছে,হাসপাতালের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে মৃত্যুভয়ের শীতল ছায়া। বাইরে পাখির কিচিরমিচির,শিশিরভেজা বাতাস সবই এখানে অর্থহীন। শুধু কান্না আর আতঙ্কে ভারি হয়ে আছে পরিবেশ। ভেতর থেকে ফের ডাক্তারের কণ্ঠে ভেসে এলো,”পালস.. সামান্য এসেছে! তবে এখনও স্টেবল না।”
নার্স দ্রুত রিপোর্ট করল,”স্যার,স্যাচুরেশন নামছে বারবার।”
ডাক্তার হাঁফ ছেড়ে বললেন,”চেষ্টা চালিয়ে যাও। ওকে ছাড়তে পারব না।”
ধ্রুবর শরীরের ভিতর দিয়ে হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল। চোখের সামনে যেন পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এসেছে। নিশু সিঁটিয়ে গিয়ে ধ্রুবর বাহু আঁকড়ে ধরল,ঠোঁটে থরথর কাঁপন,”ভাইয়া বাঁচবে তো?”
ধ্রুব কোনো উত্তর দিতে পারল না। কেবল মাথা নিচু করে মনে মনে বলল,”আল্লাহ.. তুমিই বাঁচাও।”
নিশু কেঁদেই চলেছে,কণ্ঠে ব্যথা,চোখে ভীতির ছায়া।
মায়াকুমারী পর্ব ৫৭ (২)
“আমার ভাইয়া! আমার ভাইয়াকে বাঁচাও! আল্লাহ,আমার আয়ু আমার ভাইয়াকে দাও। আমার আয়ু দিয়ে দাও,তবুও তুমি ওকে বাঁচাও!”
চট করে মাথা তুলে তাকাল ধ্রুব। নিশুর চোখ লাল,কণ্ঠ কেঁপে কেঁপে উঠেছে। ধ্রুব অনুভব করল,তার ভাইয়ের প্রতি নিশুর ভালোবাসা,ভীতি,নিঃস্বার্থ মমতা সবই তার হৃদয়কে শক্ত করে দিয়েছে।